প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি #সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী #পর্ব_১৬

0
301

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_১৬
,
গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের রাস্তায় চলা গাড়ির দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে শশী। গাড়ি তার নিজ গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। একটা মানুষ যে কিনা তার থেকে অনেক অনেক দূরে তবুও কত সহজ ভাবে একটুও বিচলিত নাহ হয়ে আমাকে বোঝালো। এই সাহস টা ওর প্রয়োজন ছিলো এমন একটা মানুষ প্রয়োজন ছিলো যে কিনা সব সময় ছায়া হয়ে পাশে থাকবে। কাছে না থেকেও অনুভব করাবে তুমি এগিয়ে যাও আমি তোমার পাশেই আছি। এতোসব ভাবনার মাঝেই গাড়ি গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। শশী শাহানারার হাত ধরে আস্তে আস্তে ভিতরে নিয়ে গেলো। রাত তখন প্রায় শেষের দিকে, এতো সব কিছু হওয়ার পরে ওখানে থাকার কোনো মানেই হয় নাহ এই জন্য রাতেই বেরিয়ে পড়েছে। সমুদ্র আর ফোন দেয়নি শাহানারা কয়েকবার ফোন দিয়েছিলো কিন্তু অপর পাশ থেকে বন্ধ আসছে। এমনটা যে এই প্রথম তা নয় শাহানারা একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ফোন কেটে সেই রাতেই শশী আর জয় কে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। বাসায় ঢুকে শশী শাহানারাকে তার রুমে দিয়ে এসে নিজেও রুমে চলে গেলো। মাথাটা ভীষণ বেথ্যা করছে।

সকালে নিচে কথার আওয়াজ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেলো শশীর। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, সিঁড়ির উপর থেকেই দেখলো শাহানারা কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। শশী সেই পযন্ত যাওয়ার আগেই কথা শেষ হয়ে গেলো। শাহানারা ফোন রেখে শশীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল, রোদ্র ফোন দিয়েছিলো তোর কথা জিগাস করলো কিন্তু তুই ঘুমিয়ে ছিলি বিধায় ডাকতে নিষেধ করলো ও। আয় এখানে এসে আমার কাছে বসতো। শশী গিয়ে শাহানারার পাশে বসতেই ওনি শশীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন শশী কিছু একটা ভেবে শাহানারাকে জিগাস করলেন।

আচ্ছা আন্টি ওই যে সেদিন যে মহিলাটা এসেছিলো ওনি কে?

শশীর কথায় শাহানারার মুখটা মলিন হয়ে গেলো তিনিও শুকনো হেসে বলল, সে অনেক কথা তোকে একদিন সময় করে বলবো না হয় এখন হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আমি দেখি রান্নাঘরে যাই।
,,,,,,,,,,,,,,,,
তুমি কি আমার সাথে এক জায়গায় যেতে পারবে?

বইঘরে বসে শশী একটা বই পড়ছিলো তখনি জয় এসে কথাটা বলল শশী মাথা উঁচু করে জয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জিগাস করল, কোথায়?

এইতো সামনেই আমার একটা বন্ধুর বাসায় ও ফোন দিয়ে বলল ওর বাসায় যেতে ওর কাছে আমার একটা জিনিস আছে সেটাই আনতে যাবো তুমি যাবে?

হ্যাঁ যাবো চলো।

শশী জয়ের হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে শাহানারাকে জানিয়ে দুজনে চলে গেলো। যেহেতু বাড়িটা পাশেই তাই ওরা আর গাড়ি নেয়নি। গেট পেরিয়ে মেইন রাস্তায় উঠতেই জয় শশীর হাত ছেড়ে বলল, এই তুমি আইসক্রিম খাবে? দাঁড়াও এখানে আমি তোমার জন্য আনছি।

শশী ভয় পেয়ে জয়ের হাত চেপে ধরে বলল, এই না না তুমি রাস্তা পাড় হয়ে ওদিকে যেও না। দেখছো না কত গাড়ি চলছে তুমি এতো লাফালাফি না করে চলো তোমার বন্ধুর বাড়ি যায়।

তুমি এতো ভয় পাও কেনো বলোত আর আমি হলাম জয় যেকিনা বড় হয়ে বড় ভাইয়ার মতো অনেক বড় অফিসার হবো তাই এসব ছোটোখাটো বিষয়ে ভয় পেলে চলবে নাহ৷ আর বড় ভাইয়া আমাকে বলেছে বাড়িতে এখন কেউ নেই শুধু আমি আছি তাই আমাকেই সবটা দেখে রাখতে হবে। তুমি ভয় পেয়ো না দেখবে আমি এই যাবো আর এই আসবো।

জয়ের কথা শুনে শশী মুচকি হাসলো জয় শশীর হাত ছেড়ে দিয়ে আইসক্রিম আনতে চলে গিয়েছে আর যাওয়ার আগে বড়দের মতো গম্ভীর স্বরে বলেও গিয়েছে যেনো এখানেই চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে ভুলেও যেনো রাস্তায় না উঠে। শশীও বাধ্য বাচ্চার মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়েছে। শশী দূরে জয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে তখনি ওর পায়ের কাছ ঘেঁষে একটা কার এসে থামলো। শশী ভয়ে খানিকটা পিছিয়ে গিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো কার থেকে সাদা পাঞ্জাবি পড়া একটা সুদর্শন যুবক নেমে আসছে। শশী চোখ ফিরিয়ে আবার জয়ের দিকে তাকালো জয় ততক্ষণে ওখানে দাঁড়িয়েই খাওয়া শুরু করেছে।

আম সরি আমি দেখতে পাইনি আপনার কোথাও লাগেনি তো?

অপরিচিত কন্ঠ শুনে শশী তাকালো দেখলো সেই গাড়ি থেকে নামা লোকটাই। না না আমি ঠিক আছি সম্যসা নেই।

সামনে থাকা লোকটা কিছু বলার পূর্বেই জয় দৌড়ে এসে শশীর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, কিছু হয়েছে? যা জিগাস করার আমাকে করুন। আর তুমি তোমাকে না বলেছি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলবা নাহ এই নাও তোমার আইসক্রিম আর চলো আমার সাথে।

ডানহাতে আইসক্রিম আর বামহাতে শশীর হাত ধরে চলে গেলো জয়। আগত ব্যাক্তি তার চোখ থেকে চশমাটা খুলে সেদিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবার চেষ্টা করলো। যেনো সে অনেক বড় কিছু ভুলে যাচ্ছে কিন্তু সেটা কী?
,,,,,,,,,,,,
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে আরো তিনটে মাস এর মধ্যে সমুদ্র আর আসেনি। রোদ্রেও সাথেও প্রতিদিন কথা হয় আর সমুদ্রের সাথে মাঝে মধ্যে। শশী হাজার কথা বলতে চাইলেও সমুদ্রের গম্ভীর স্বরে হ্যালো শুনলেই সবটা কেমন এলোমেলো হয়ে যায় কথাগুলো সব হারিয়ে যায়। পরিক্ষার রেজাল্ট দিয়ে দিয়েছে আরো মাস দুয়েক আগে, এর মধ্যে গ্রামেও বেশ কয়েকবার গিয়েছে শশী। শাহানারা এখানকার একটা কলেজে শশীকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। আর আজকে কলেজ থেকে পিকনিকে যাওয়ার দিন, শশী ভেবেছিলো যাবে নাহ কিন্তু শাহানারা বলল যেতে তাহলে সবটা দেখাও হবে আবার ভালোও লাগবে। শাহানারা অবশ্য অনুমতি দেওয়ার আগে সমুদ্রের কাছে শুনেছিলো, সবটা শোনার পর সমুদ্র কিছু বলেনি শুধু জিগাস করেছিলো কোথায় যাবে? প্রতিউত্তরে শাহানারা বলেছিলো খাগড়াছড়ি। ব্যাস এরপর শুধু সমুদ্র একটা কথায় বলেছিলো সেটা ছিলো আচ্ছা ঠিক আছে। শশী বাসের জানালার কাছে বসে বাইরে মুখ দিয়ে বসে আছে। এখনো বাস ছাড়েনি একটু পরেই ছাড়বে। ধপ করে পাশে কারো বসার শব্দে শশীর হুশ ফিরলো তাকিয়ে দেখে ওর ক্লাসমেট। শশী আবার জানালার বাইরে তাকালো তার এসব মোটেও ভালো লাগছে নাহ। বাস ছেড়ে দিয়েছে বেশ
কিছুক্ষণ আগে বাইরে থেকে শো শো করে বাতাস এসে চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে। পাশে বসে থাকা মেয়েটার নাম মিলি এতোক্ষণ বকবক করে এখন হা করে ঘুমাচ্ছে। শশী একবার সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে শাহানারা কে কল দিলো।

হ্যাঁ কতদূর রে তোরা?

এই তো আন্টি প্রায় চলে এসেছি সামনে থেকে হয়ত গাড়ি চেঞ্জ করবে পাহাড়ি রাস্তায় এসব বাস উঠবে নাহ। তাই জন্য হয়ত অন্য গাড়ি নিবে সেটাই তো বলল আমি ওতোকিছু জানি নাহ ওরা বলল তাই আর কি।

আচ্ছা সাবধানে থাকিস। ও তোকে তো বলতে ভুলেই গেছি সমুদ্র সপ্তাহ খানিক আগে ফোনে বলেছিলো ওনাকি খাগড়াছড়ি তে আছে। এখনো আছে কিনা জানি নাহ থাকলে ভালোই হতো আমার চিন্তাটা একটু কমতো।

সমুদ্রের কথা শুনতেই বুকের মধ্যে কেমন ধক করে উঠলো, কথা শেষ করে ফোন রেখে শশী মনে মনে ভাবছে সত্যিই সমুদ্র এখনো ওখানে আছে? আর থাকলেই বা কি ওর সাথে দেখা হবে নাকি। পরক্ষণেই আবার মনে মনে বলল ইস যদি দেখা হতো কতদিন লোকটাকে দেখে নাহ। নিজের এমন নিলজ্জ ভাবনায় নিজেরই কেমন রাগ হলো। এসব কিছু ভাবতে ভাবতেই দুচোখে ঘুম নেমে আসলো, তবে কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি নাহ মিলির ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম থেকে উঠে দেখি বাসের প্রায় সবাই নেমে গেছে এখান থেকে গাড়ি চেঞ্জ করতে হবে। শশীও তড়িঘড়ি করে নিজের ব্যাগটা নিয়ে নেমে গেলো। তারপর ছাঁদ খোলা ছোট ছোট গাড়িতে করে তাদের নাকি যেতে হবে, এই গাড়ি শশী কখনো দেখেনি তাই নামও জানে নাহ। মিলির হাত ধরে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসল, দ্রুত বেগে গাড়ি সামনের দিকে চলতে শুরু করলো। ছেলে মেয়েরা বেশ উচ্ছাসিত তাদের সাথে কারো কারো বাবা মা কিংবা ভাই বোনরাও এসেছে। তবে শশী একায় এসেছে শাহানারা এতোদূরে জার্নি করতে পারবে নাহ আবার জয়ের পরিক্ষা চলছে। তবে তিনি কলেজে সকল স্যার ম্যামকে বলে দিয়েছেন শশীর খেয়াল রাখতে। শশী অবাক হয়ে আশে পাশের দৃশ্য দেখতে লাগলো, এক মুহুর্তের জন্য যেনো মনে হলো ও ওদের হিজলতলী চলে এসেছে। দুপাশে কত গাছ জন জঙ্গল আর উঁচু উঁচু পাহাড়ের গাঁয়ে ছোটো ছোটো ঘর। বেশ খানিকক্ষণ চলার পর গাড়ি থেমে গেলো শশী চিন্তিত মুখ করে সামনে তাকাতেই মিলি বলল, এখান থেকে বাকি পথ আর্মিরা দিয়ে আসবে। সামনেই ওদের ক্যাম্প, হয়ত কোনো সম্যসা এই জন্য ওনারা দিয়ে আসবে। আর্মির কথা শুনতেই শশীর হাঁসফাস লাগতে শুরু করল। গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই দেখলো ওদের মতো আরো অনেকেই গাড়ি থামিয়ে হাঁটাহাটি করছে। শশী একটু এগিয়ে গিয়ে দেখলো আর্মির পোশাক পড়া কয়েকজন সামনে থেকে গাড়ির ড্রাইভারদের সাথে কথা বলছে। শশীর অবাধ্য চোখ দুটো সমুদ্র কেই খুঁজতেছে কিন্তু সে কোথায়? যতটা সময় শশীরা ওখানে ছিলো শশী আশে পাশে দেখার নাম করে শুধু সমুদ্র কেই খুঁজেছে কিন্তু পায়নি৷ হয়ত ওনি এখান থেকে চলে গেছে, হতাশ হয়ে শশী আবার গাড়িতে গিয়ে বসল কে জানে আবার কখন কোথায় সেই গম্ভীর লোকটার সাথে দেখা হবে।

#চলবে?

আজকের পর্বটা খুবি বাজে হয়েছে, আসলে আমি শব্দ হারিয়ে ফেলেছি কি লিখবো কোথা থেকে শুরু করবো বুঝতে পারছি নাহ। লেখাগুলো সাজাতে পারছি নাহ তাই জন্য এমন এলোমেলো হয়ে গেছে। আর দেরি হওয়ার জন্য সরি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here