প্রমত্ত_অঙ্গনা #আরোহী_নুর (২,৩

0
209

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#আরোহী_নুর
(২,৩

সোফাতে বসেই রাত কাটালো আঁখি,নিদ্রা অল্প মুহুর্তের জন্যও তার সাথী হলো না আজ রাতে,যাবে কোথায় সে,তার ভালোবাসার মানুষটাকেই নিয়ে নিলো অন্য কেউ সেখানে কক্ষের বড়াই সে করবে কিসে!আদ্রিশ তো তাকে কক্ষ থেকে তার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোই নিয়ে যাওয়ার সুযোগটা দেয় নি,হয়তো নতুন জীবন শুরুর তাড়ায় তা নিয়ে ভাবা বড় কিছু মনে করে নি।নতুন সুখের দোলায় পুরাতন টান মনে থাকার কোনো মানেও হয় তো নেই আদ্রিশের কাছে।তাই পাথরের মতোই সোফাতে বসে রাত্রী যাপন করল সে।সকাল প্রায় ৮ টার দিকে আদ্রিশের রুম থেকে দরজা খোলার শব্দ পেল আঁখি, প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আনতে হবে তাকে তার রুম থেকে,তাই বেহায়ার মতো এগিয়ে গেল সেদিকে,নক করতে গেলে দরজার ফাঁক দিয়ে চোখে গেল আদ্রিশ ওয়াসরুমে ঢুকছে গলায় তোয়ালে ঝুলিয়ে, শাওয়ার নিবে বুঝা যাচ্ছে,বিষয়টা মস্তিষ্কে নাড়া দিতেই খক করে উঠল আঁখির মন,কিছু আর না ভেবে রুমে প্রবেশ করল আঁখি,অগোছালো হয়ে শুয়ে আছে রিদিকা,শরীর ওর সাদা চাদরে ঢাকা,সেদিকে চোখ যেতেই হৃদয়ের ক্ষ**ত**টা কতো পরিমাণ বেড়ে গেল তার সেটা কোনো বাক্যে বলে বোঝানো দায়,তাও নিজেকে শ**ক্ত করলো আঁখি,এগিয়ে গিয়ে ওয়্যারড্রোবের ড্রয়ার থেকে ওর প্রয়োজনীয় কিছু নিয়ে রুম ত্যাগ করল।

শাওয়ার নিয়ে নীল রঙের একটা শাড়ি পরে চুল মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আসল রিদিকা,আসতে আসতে চোখ গেল ওয়্যারড্রোব এর উপর রাখা দুটি গিফট বক্সের উপর,দু’টোই একই রঙের গিফট পেপারে আবৃত।রিদিকা বেশ আগ্রহ নিয়ে সেই বাক্স দু’টি হাতে নিল, এদিকে সদ্য বিয়ে করা বউয়ের সকালের এমন মাতোহারা রূপে দিশেহারা হল তার স্বামী, পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো রিদিকাকে,ঘাড়ে জমে থাকা ফোঁটা ফোঁটা জল ঠোঁ**ট দিয়ে পান করতে লাগল, অতিলজ্জায় যেন নুয়ে পরছে রিদিকা।

″কি করছ এসব ছাড়ো!″

″ছাড়ার জন্য ধরি নি।″

″তুমিও না,অনেক সকাল হয়ে গেছে,তাছাড়া দরজাও খোলা,তাই এসব বন্ধ করো আর বলো এগুলো কি?″

″বোঝতে পারো না গিফ্ট এগুলো,খুলে দেখোতে পছন্দ হয় কি না।″

রিদিকার ঘাড়ে থুতনী রেখে বলল আদ্রিশ কথাটা,রিদিকা বেশ খুশি হয়ে প্রথম বাক্সটা খুলল,একটা কালো রঙের শাড়ি,রিদিকার কালো রং তেমন একটা পছন্দ না,তবে শাড়িটা সুন্দর, তাই অতিরিক্ত খুশি হয়ে আদ্রিশের গালে চুমু কেটে দিল।

অনেক সুন্দর হয়েছে গিফটটা,আপনি সত্যিই অনেক ভালো,তা ওপরটাতে কি?খুলে দেখি তাই না?

অতঃপর রিদিকা ওপর উপহার খুলতে গেলে তাতে বাঁধা দিল আদ্রিশ।

ওটা তোমার জন্য নয়।

আমার জন্য নয় মানে!পানসে মুখ করে বলল রিদিকা।

ওটা আঁখির জন্য।

″ওর জন্যও এনেছ?″

″হুম,কেনো?বউ তো শুধু তুমি একা নও আমার,আঁখিও তোমার সমান ভাগীধারিতে আছে বুঝতে পারছ মায়াবতী।তা রেডি হয়ে নিচে চলে আসো দু’জন ব্রেকফাস্ট করে বাইরে বেড়াতে যাব।

কথাগুলো বলে রিদিকার গালে চু**মু দিয়ে উপহারটা হাতে নিয়ে রুম ত্যাগ করলো আদ্রিশ।মুহুর্তেই রিদিকার চেহারাতে যেনো কা**লো মেঘ এসে জড়ো হলো,কিছু না বললেও মুঠো শক্ত করে তিক্ত কিছু অনুভুতি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো।

হাসপাতালে যাওয়ার আগে রোজ সকালে নিজের হাতে ব্রেকফাস্ট বানিয়ে সবাইকে খাওয়ানো আঁখির রোজকার অভ্যেস,কাজের লোক থাকলেও এসব করতে ওর ভালোই লাগে,তাই আজও তার ব্যতীক্রমে গেল না কিছু,অতি স্বাভাবিক হয়ে সবার জন্য ব্রেকফাস্ট বানাল,ওর হাবসাব দেখে কেউ বলতে পারবে না যে ওর জীবনে এত কিছু হয়ে গেছে।আঁখির কথা ভেবে তো কাজের লোকগুলোরও চোখ থেকে জল শুকোয় না সেদিকে আঁখি এতোটা স্বাভাবিক কেউ কিভাবে তা মেনে নিবে,আঁখি নাস্তা সাজিয়ে কাজের লোকদের বলল সবাইকে ডেকে নিয়ে আসতে আর নিজে হাঁটা ধরলো ঘরের বাইরের দিকে।

আঁখির লাগানো গোলাপের চারাতে আজ ফুল ফোটেছে এতেদিন পর,খারাপ লাগার মধ্যেও যে এক ভালোলাগার দোলা গায়ে মেখে গেল ফুলগুলোর সতেজ রূপ নজরে আসতেই,ঠোঁটের কোণে ঠাই পেলো কিঞ্চিৎ হাসি,কিন্তু অল্পক্ষণে তাও উদাও হয়ে গেলো যখন আঁখি দেখতে পেলো সতেজ দু’টি গোলাপের ঠিক মধ্যেখানে একটা আ**ধম**রা গোলাপ,সতেজ দু’টি গোলাপের মধ্যে এই আ**ধম**রা গোলাপটাকে কেমন জানি বেমানান লাগছে,কু**ৎসি**ত এই গোলাপটা বাকি দুইটা সতেজ গোলাপের সৌন্দর্য নষ্ট করে তুলছে,ঠিক যেন রিদিকার মতো সেই গোলাপটাও সুন্দর সেই গোলাপ দয়ের সুন্দর জীবনের মধ্যাকার বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে,বড্ড ইচ্ছে করল আঁখির সেই কুৎ**সিত গোলাপটাকে ছিঁ*ড়ে ফেলতে তার বোঁটা থেকে, পায়ের তলায় পিষে ফেলতে তাকে।কিন্তু পরক্ষণেই ভাবনায় অন্য ধারণা ধরা দিলো তার,এখানে কি শুধু সেই কু**ৎসিত গোলাপেরই সব দোষ,সেই সতেজ দু’টি গোলাপ তো ওর পাশে না থাকলেও পারতো,ওরা তো নিজেরা পারতো আলাদা অবস্থান নিয়ে ফুটে উঠতে,জীবনে কু*ৎ**সিত কোনো ছায়া পরতে না দিতে।ভাবনার এ জগৎ থেকে বেড়িয়ে আসতে সক্ষম হতে পারছে না আঁখি,সব অনুভতি তার কেমন জানি গুলিয়ে গেছে আজ,হঠাৎ করে সেখানে কারো উপস্থিতি টের পেল,পিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেলো আদ্রিশ একটা গিফ্ট বক্স হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মুখ ভর্তি হাসি,ভালো করে খুঁটিয়ে দেখল আঁখি তার প্রেমিক পুরুষকে,অন্য নারীর নিকট থেকে আসার প্রত্যক্ষ প্রমাণ হয়ে যে দাঁড়িয়ে আছে সে।মাথার চুল এখনও বেশ ভেজা দেখাচ্ছে,হাতে ঘাড়ে খামচির স্পষ্ট দাঁগ বুকের জ্ব**ল**নের পরিমাণ আরও তে**জি করলো আঁখির।আঁখির সুপ্ত এই অনুভুতির আর কোনো খোঁজ করতে মনোনিবেশ করতে চাইল না আদ্রিশ,বরং হাসিমুখে বললো।

″আরে আঁখি,তোমার গাছে দেখি ফুল ফোঁটেছে,অনেক খুশি হয়েছো না তুমি?তা নাও তোমার খুশি আরও দ্বিগুণ করে দিই।এই নাও গিফ্ট তোমার জন্য এনেছি।তোমার কালো রঙের শাড়ি অনেক পছন্দ না?এটাতে একটা কালো রঙের শাড়ি আছে।এটা পরে রেডি থেকো, আজকে তো সরকারি ছুটি আছে সন্ধ্যায় তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাব।″

″হুম ভালো,তা রিদিকাকে নিবে না।ও ও তো এখন তোমার স্ত্রী। ″

″ওকে নিয়ে এতো ভেবো না তো তুমি, আমি এখন যাব ওকে নিয়ে বেড়াতে,তারপর সন্ধ্যায় তোমাকে নিয়ে।এবার যাও শাড়িটা পরে আসো দেখি কেমন লাগে তোমায়।″

″লজ্জা করে না আদ্রিশ তোমার?তুমি যে হিতাহিত জ্ঞানহীন আগে জানলে কখনো তোমার জালে পা ফেলতে আসতাম না।ছিঃ, তোমাকে বেশি কিছু বলতে চাই না শুধু একটা কথা বলবো।
কখনো একসাথে দুই নৌকায় চড়া সম্ভব হয় না,দুইটা নৌকা নিয়েই ডোবার সম্ভাবনা থাকে,কথাটা মাথায় রেখো।পথ ছাড়ো আমার কাজ আছে অনেক।″

″তোমার মনে হয় না তুমি একটু বেশি রিয়াক্ট করছো আঁখি?″

″শুকরিয়া করো শুধু রিয়াক্ট করেছি অন্য কিছু এখন অব্দি করি নি,নইলে এখন নতুন বউয়ের সাথে না থেকে জেলে ক**য়ে**দি**দের সাথে থাকতে।ভ*য় পেয়ো না কে**স করবো না তোমার উপর আমি,কারণ কোনো সাজা দিয়ে তোমার ভুলের পরিমাণটা করানো যাবে না, তোমার সাজা তো সেদিন যথার্থ হবে যেদিন নিয়তি তোমাকে তোমার টা ফিরিয়ে দিবো আর আমি নয় তো কোনো অবলা আর না তো কোনো বে**হা*য়া যে দিনশেষে বিশ্বাস ঘা**তক ও স্বার্থপরের প্রেমে গড়াগড়ি খাব।এখানে আছি কিছু নির্দিষ্ট কাজে,কাজ শেষ হলেই আমি চলে যাবো আর কাল সকাল অব্দি ডিভোর্স পেপারও চলে আসবে চিন্তা করো না।″

ডিভোর্সের কথা শুনে আদ্রিশের বুকটা কেমন কম্পন করতে শুরু করলো।হুটহাট জবাব দিল।

″আমি তোমাকে ডিভোর্স দিব না।″

″কেনো তা শুনতে পারি?″

″কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি,তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না,তুমি আমার অভ্যেসে পরিণত হয়েছে,এমন এক অভ্যেস যাকে চাইলেও বদলাতে পারবো না কখনো আমি।″

″বদলে তো তুমি ফেলেছ আদ্রিশ অনেক আগেই।এখন তার প্রতিদান আমায় দিতে হবে।আর আমি তার থেকে কখনো পিছপা হব না চিন্তা করো না।″

আদ্রিশতের পাশ ঘেষে তাকে তাচ্ছিল্য করে চলে আসলো আঁখি।

শুভ্যতা আঁখির ভাসুরের স্ত্রী, আঁখির সাথে জা এর কম বোনের সম্পর্কই তার বেশি।ও কখনো ভাবে নি আদ্রিশ এমনটা করে যাবে আঁখির সাথে,যে জায়গাতে ও অনেক সময় বেশ অভিমাণ করতো তার স্বামীর সাথে,আদ্রিশ আঁখিকে এত ভালোবাসে,ওর জন্য কত ভাবে,সব কিছুতে ওকে সাপোর্ট করে,ওর কিছু হয়ে যাওয়ার আগে ঘর মাথায় তুলে ফেলে,ওর জন্য কত না স্যারপ্রাইজ প্লান করে,নিজের স্বামীকে আদ্রিশের কাছ থেকে এসব কিছু শিখে নেওয়ার অভি**মা**নী আবদার করত শুভ্যতা,আদ্রিশ এমন কিছু করে যাবে কখনো কল্পনাতেও ভাবে নি কেউ।কাল রাতে নিজের স্বামীকে ঝাপটে ধরলো শুভ্রতা,ক্ষমা চাইলো তার কাছে।খুব করে চাইলো সে যেনো কখনো আদ্রিশের মত না হয়।ও যেভাবেই আছে শুভ্রতার কাছে তার সবকিছু, সে যে আঁখির মতো এত শ**ক্ত মানসী নয়,এমন কিছুর বিপরীতে নিজেকে যে সামলে নেওয়া তার ক্ষমতার বাইরে।তার স্বামী তখন তাকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিল,তাকে ভরসা দিল তার কাছে তার স্ত্রী পৃথিবীর এক অমুল্য সম্পদ।বাগানের দোলনাতে বসে আছে আঁখি,একধ্যানে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে,অনেক সাহস করে শুভ্রতা এলো তার সাথে কথা বলবে বলে।আঁখির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ এক নিশ্বাস ফেললো শুভ্রতা,আঁখির সাথে কথা বলারও যে ভাষা হারিয়ে গেছে সে।এমন এক অবস্থায় কাউকে সান্ত্বনা স্বরুপ কিছু বলতে যাওয়াও হাস্যকর বলে মনে হয় শুভ্রতার কাছে।কোনো নারী তার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারে না কখনো,এমন কিছু স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেওয়া নারীদের মহীয়সী নারী ব্যতীত কোনো উপাধী হয়ত মানাবে না।তাই শুভ্রতা চাইলেও যে আঁখির সাথে কথা বলার সামর্থ্য জুটিয়ে উঠতে পারছে না,কি করবে সে বা তার স্বামী, শ্বাশুড়ি।হ্যাঁ ওদের তিনজনের কাছেই আদ্রিশের থেকে আঁখির মর্ম বেশি হলেও তিনজনই আদ্রিশের কাছে এক প্রকার বা**ধ্য।

চলবে…..

প্রমত্ত অঙ্গনা
(৩)

কালো শাড়িটা পরে বেশ সেজেগুজে বসে আছে রিদিকা নতুন স্বামীর সাথে বাইরে বেড়াতে যাবে বলে কথা,আয়নায় নিজেকে দেখে যে নিজেরই প্রেমে মত্ত হচ্ছে, বার বার নিজেকে খুঁটিয়ে দেখছে আয়নাতে, সেই ক্ষণেই আদ্রিশ প্রবেশ করল কক্ষে,গিফ্ট বক্সটা এনে টেবিলের উপর রেখে বিছানাতে চিৎ হয়ে শুয়ে পরল,চেহারাতে মলিন একটা ভাব একবারও তাকাল না রিদিকার দিকে যে তার আশায় সেজেগুজে বসে আছে, রিদিকা কত সুন্দর করে শাড়ি পরেছে, বেশ সাজগুজ করেছে আদ্রিশ এসে ওর রূপে মোহিত হবে বলে,ওর তারিফে পঞ্চমুখ হবে বলে,আ**দ**রে ভরিয়ে দিবে বলে তাকে কিন্তু হল না তার ভাবনার মত কোনো কিছুই,আদ্রিশ মুহুর্তে সবকিছুতে জল ঢেলে দিল,বেশ অভিমান হল তাতে রিদিকার,মুখ ঘুমরো করে বসে রইল আদ্রিশ উঠে ওকে এভাবে দেখলে ওর অভিমান ভাঙাতে ছুটে আসবে বলে তবে হল না তার কিছুও,আদ্রিশ চিৎ হয়ে শুয়েই রইল ছাঁদের দিকে দৃষ্টি স্থীর রেখে,গভীর কিছু ভাবনান মোহিত সে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রিদিকার অভিমানটা আরও প্রখড় হল তাই উঠে এগিয়ে গেলো আদ্রিশের কাছে, আদ্রিশের একগালে হাত রেখে ওর মুখখানা নিজের দিকে করে নিয়ে বলল।

কী?এতো সুন্দর করে সাজলাম আর তুমি দেখছও না,ভাল লাগছে না বুঝি দেখতে আমায়?

আদ্রিশ রিদিকার কথার উত্তর না দিয়ে বলল।

আমরা হয়ত বিয়ে করে ঠিক করি নি রিদিকা।

কথাটা রিদিকার ভিতর অল্পক্ষণে ছা**ড়**খা**ড় করে দেওয়ার সামর্থ্য রাখলো তাও নিজেকে সামলে নিল রিদিকা,বেশ স্বাভাবিক হয়ে বলল।

″এমনটা কেনো বলছ তুমি?″

″দেখো রিদিকা আমি জানিনা কখন কিভাবে আমি তোমায় ভালোবেসে গেছি,আঁখি পরে তুমি প্রথম মেয়ে যার প্রতি আমি আলাদা এক টান অনুভব করেছি,কিন্তু কথাটা যেভাবেই হোক আসল কথা হল আঁখির পরে।আঁখি আমার জীবনের প্রথম নারী,ওকে পাওয়ার জন্য আমি কী কী করেছি তা শুধু আমি জানি,ওর জায়গা কখনো কেউ নিতে পারবে না,তুমিও না।তোমার প্রেমে পরেছি যখন থেকে বোঝতে পারলাম তোমাকে নিজের কাছে রাখার চেষ্টা করতে থাকি,তোমাকে অবৈধ ভাবেও পেতে চাই নি তাই বিয়ে করে পেতে চেয়েছি তোমায়,এজন্য একটা না একটা কারণ খোঁজতাম,অবশেষে বাচ্চার কারণ পেলাম,কিন্তু যাই হোক যার জন্যই হোক এটাই সত্য আঁখির অবস্থান আমার জীবনে সব থেকে আলাদা,তোমাকে বিয়ে করার কারণ খোঁজেছি তবে আঁখিকে হারানোর কোনো কারণ আমি মেনে নিব না।আমি ওকে হারাতে পারব না।″

″এতই যখন ওকে ভালোবাসো তবে আমাকে কেন বিয়ে করলে?আমি তো জোর করি নি তোমায়।″

″এটাই তো ভুল করেছি।″

কিছু না বলে চোখের জ*ল ফেলতে শুরু করলো রিদিকা এবার।নতুন বউয়ের আঁখির জলে বেশ হয়**রা**ন হয়ে উঠল শোয়া থেকে আদ্রিশ।

কি করছ এসব রিদিকা? কেঁদো না প্লিজ।আমারই ভুল হুটহাট এমন কিছু করে যাওয়া ঠিক হয় নি আমার,কিন্তু যা হবার হয়ে গেছে।তুমি ভয় পেয় না আমি তোমাকে ছাড়ব না,আর না তো আমি আঁখিকে ছাড়তে পারব,তোমরা দু’জনেরই আলাদা গুরুত্ব রয়েছে আমার জীবনে।তাই কান্না বন্ধ করো,আর হ্যাঁ আজ থেকে তুমি তোমার আগের রুমে থাকবে,এই রুমে একমাত্র আঁখির অধিকার,কাল রাতে তোমাকে এখানে আনাও আমার ঠিক হয় নি।না জানি কোথায় থেকেছে আঁখি সারারাত,অন্য কোনো রুমে থাকে নি এটা জানি আমি।তুমি তোমার রুমে থাকবে আজ থেকে, আমার রুমে আঁখি থাকবে আমার সাথে।

এগুলো যেন কথা নয় ই**ট**পা**ট**কে**ল ছিল যা ছুঁড়ে দিল আদ্রিশ রিদিকার বুকে।ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রিদিকা আদ্রিশের দিকে,চোখে জল ভরে আছে তার।

প্লিজ লক্ষিটি কান্না করো না,আমি তোমাকে এভাবে আঘাত করতে চাই নি,কিন্তু অবস্থা বোঝতে পারছ তো,তুমি দেখো খুব জলদি আঁখি তোমাকে মেনে নিবে তখন আর কোনো কষ্ট থাকবে না।তোমার সব জিনিসপত্র তো তোমার রুমেই আছে,এখানে যা এনেছ আমি কাজের লোকদের দিয়ে তোমার রুমে পাঠিয়ে দিব।আর এখন আর বাহিরে যাওয়ার মুড নেই আমার,শাড়িটা পাল্টে নাও কেমন।

তারপর উঠে বেড়িয়ে গেল আদ্রিশ কোথাও।রিদিকা অতি স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে রইল তার যাওয়ার পানে,তবে হাতের মুঠো শক্ত করে বিছানার চাদর খাঁমছে ধরল।

পাশে কেউ বসেছে এইমাত্র বোঝতে পারল আঁখি তাই আকাশের তরফ থেকে চোখ হটিয়ে পাশে তাকাল,দেখতে পেল শুভ্রতাকে,ভিতরে জ্বলন্ত আ**গু**ন ধামাচাপা রেখে নরম স্বরে বলল।

″আরে আপু তুমি?কিছু চাই?গল্প করতে আসছ বুঝি?″

″তুমি কি মানুষ না অন্য কিছু আঁখি?এত কিছুর পর এত স্বাভাবিক ব্যবহার করছ কিভাবে?তুমি তো এমন নও,ওই প**শু দের এক ইশারাতে উ**প**ড়ে ফেলার ক্ষমতা রাখো তুমি।তবে কেন এমন করছ বলো!″

″প্রথমত রিদিকা ওকে কি সাজা দিব,নিজের জন যদি ঠিক না থাকে তবে অপরের দো**ষ খোঁজা যৌক্তিক দেখায় না আপু,হ্যাঁ চাইলে আমি আমার পক্ষে ন্যায়টা নিয়ে আসতে পারি তবে তাতে যে তোমাদের সাথে অ**ন্যা**য় হবে সেটা ভেবে দেখেছ।আমি এতটা স্বার্থপর হতে পারি না আপু। ″

″মানুষ কতটা মহান হলে এমন অবস্থায়ও অন্যের কথা ভাবতে পারে,তোমার মত ভালোদের কপালে আল্লাহ তায়ালা ভালো রাখেন।যা হয় ভালোর জন্যই হয়,আদ্রিশ তোমাকে ডিজার্ভ করে না,তুমি দেখো আল্লাহ তোমার ভাগ্যে ভালো কিছু রাখবেন।″

উত্তরে কিছু বললো না আঁখি,মাথা রেখে শুয়ে পরল শুভ্যতার কোলে,নিজের আপন কোনো বোন নেই আঁখির,শুভ্রতাকে সবসময় নিজের বড় বোন মেনে এসেছে,শুভ্রতার কোলে যেন মাতৃ কোলের ভালোবাসার অনুভুতি পেলো আঁখি।আবেগ এইবার আর আটকাতে পারল না দু’হাতে মুঠো করে আঁকড়ে ধরল শুভ্রতার কাপড় আর শব্দ করে কেঁদে উঠল।হেচঁকি টেনে টেনে বলছে।

কেন রে আপু?কেন ও এমনটা করল?কী কমতি ছিল আমার ভালোবাসায়,ওর জন্য তো সব ছেড়েছি আমি,সব করেছি আমি,কখনো ওর অসুবিধে হোক এমন জিনিস করি নি তবে সে কিসের অভাবে অন্যত্র গমণ করল?কেন আপু বলো না?তুমি না বলতে আমি বড় ভাগ্যবতী,কপাল গুণে একটা স্বামী পেয়েছি, আমার জন্য পাগল,এমন স্বামী সবার হওয়া চাই,সবার কপালে এমন স্বামী জুটে না।তবে কি হল আমার এই কপালের?কোথায় গেল ওর সব ভালোবাসা?এটাই কি ছিল ওর ভালোবাসা?একেই কি বলে ভালোবাসা? বলো না আপু?বলো না?ও আপু বলো না?

অতি আবেগে পা**গ**লের মতো কান্না করে এসব বলছে আঁখি,আঁখির মাথায় হাত রেখে ঠোঁট কা**ম**ড়ে কেঁদে চলেছে শুভ্রতা,কি উত্তর দিবে সে।আঁখিকে বলার মতো শান্তনা স্বরুপ কোনো ভাষাই নেই শুভ্রতার কাছে।

দখিনা হাওয়ায় দোলছে গাছগাছালি,আজকে হাওয়া বেশ প্র*ব*ল,বাড়ির পিছনের দিকের একটা অংশের ইজি চেয়ারে বসে আছে আঁখি,বিকেলের এই দিকটায় এখানে এসে বসে বাগানের হরেক রকম ফলের সৌন্দর্য উপলব্ধি, ফুলের সুবাসে মন ভরে নেওয়ার অভ্যেস যে আঁখির প্রায় দিনের।এখানে কতো স্মৃতি জমে আছে আঁখির আদ্রিশের সাথে।
মনে পরলো এমনই এক দিনের কথা।

একদিন বিকেলে এখানে এসে বসতেই চোখ লেগে যায় আঁখির,এদিকে কো**র্ট থেকে ফিরে আঁখিকে ঘরে না পেয়ে চে**চাঁ**মে**চি**তে ঘর মাথায় তু*লে ফেলেছিল আদ্রিশ,মুখে একটাই বুলি ওর ফুলপরি কোথায়।ফুলপরি ডাকটা আঁখিকে আদর করে দিয়েছিলো আদ্রিশ,কারণ আঁখির ফুল খুব প্রিয়,আঁখিকে চোখে হারাতো সে হরদম,সেদিন খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসে ঘুমন্ত অবস্থায় পায় আঁখিকে আদ্রিশ।টান দিয়েই তাকে কোলে উঠিয়ে নেয় আর গালে দিয়ে দেয় ভালোবাসার পরম,আচমকা এমনকিছু হয়ে যাওয়ায় হক**চ*কি**য়ে ঘুম থেকে জেগে উঠে আঁখি।অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে আদ্রিশকে।

″তুমি?″

″হ্যাঁ আমি,কখন থেকে পা**গ*লে**র মতো খুঁজছি আর তুমি আয়েশ করে এখানে ঘুমুচ্ছো।″

″আরে একটা সার্জারি শেষ করে এসে বেশ ক্লান্ত লাগছিল।এখানে এসে বসতেই কখন চোখ লেগে গেল বোঝতে পারি নি।″

″তাহলে এই কথা,এখনি দূর করছি ক্লান্তি।″

আহ্লাদী করে কথাটা বলে আঁখির ঠোঁ**টে**র পানে এগুতে লাগে আদ্রিশ,তখন ই সেখানে শুভ্রতা এসে যায়।ওকে দেখেই আদ্রিশ থেমে যায় আর আঁখি তো লজ্জায় নেই।

ইশ আমিও আসার টাইম পেলাম না।আমি কিছু দেখি নি তোমরা চালিয়ে যাও।

মুখ ঢেকে কথাগুলো বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো শুভ্রতা,আঁখি বেশ লজ্জা পেয়ে বলল।

″তুমিও না,শুভ্রতা কি ভাববে এবার আমাদের নিয়ে?কোল থেকে অন্তত নামাতে পারতে।″

কে কি ভাবলো তাতে আমার কি?আমি আমার বউকে আদর করব কাউকে তোয়াক্কা করব কেন?দশ টা না পাঁচ টা না আমার একটা মাত্র বউ।

অতঃপর আঁখির অ*ধ*রে অ*ধ*র মিলিয়েই দিয়েছিল আদ্রিশ,সেদিনের কথা মনে পরতেই চোখ দিয়ে আবার জ*ল নামল,মুছে নিল আঁখি তা সযতনে।তখনি ফোন বেজে উঠল আঁখির,রিসিভ করল সে ফোনটা।

আসসালামু আলাইকুম।

ওয়ালাইকুম আসসালাম।

জি বলুন,

ম্যাম আপনার ডি*ভো*র্সে*র কাগজ রেডি,কাল সকালে পৌঁছে যাবে আপনার কাছে।

ধন্যবাদ,কাল সকালে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব পাঠিয়ে দিবেন।

অবশ্যই ম্যাম।

আর হ্যাঁ কথাটা যেনো মিডিয়াতে না যায়।

আমি সেদিকে পুরো খেয়াল রাখব ম্যাম আপনি চিন্তা করবেন না।

ঠিক আছে,আল্লাহ হাফেজ।

আল্লাহ হাফেজ।

কলটা কেটে দিল আঁখি,কতোই না ভালোবাসা ছিল তাদের সম্পর্কে।এমন একটা সম্পর্ক কখনো ভাঙবে কেউ কল্পনাও করে নি।স্কুল কলেজের সেরা জুটি ছিলো আঁখি আদ্রিশ।,কলেজের সবাই একনামে তাদের জুটিকে জানত,দ্রিশঁখি জুটি।বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা কোনোকিছুতেই তাদের জুরি ছিল না কেউ।তাদের বিচ্ছেদ হয়েছে জানলে হয়ত অনেকেরই বিশ্বাস হবে না,কেউ তো মজা বলে হেসে ফেলবে।

উঠে দাঁড়াল আঁখি এবার,এই বাড়িতে তার শেষ সময় এসে গেল অবশেষে, তিন বছরের গড়া সংসারের এক রাতে বিদায়ের ব্যবস্থা করা অনেক বড় ক*ঠি*ন এক জিনিস বলে মনে হচ্ছে আঁখির।

চলবে…….

আরোহী নুর……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here