প্রমত্ত_অঙ্গনা #আরোহী_নুর ৪,৫

0
184

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#আরোহী_নুর
৪,৫

আঁখি আসতে নিলে হঠাৎ তার সামনে আদ্রিশ প্রকট হয়,তাকে দেখে ঘৃ**ণা**য় শরীর রিরি করে উঠল আঁখির, পাশ কেটে যেতে নিলে হাত পা*ক**ড়াও করল আদ্রিশ।

″এতটা পর হয়ে গেলাম যে আজ দেখেও না দেখার ভান করছ!″

″পর তো তুমি করে দিয়েছ আমি তো শুধু তা মেনে নেওয়ার প্রচেষ্টা করছি মাত্র।″

″কেন এমনটা করছ আঁখি,কারণ বশত আরেকটা বিয়েই তো করেছি,দিন রাত তো অন্য না*রীতে মেতে থাকি নি,প্রবিত্রভাবে একজনকে ঘরে এনেছি যে আমাদের কাঙ্ক্ষিত সুখটা এনে দিতে পারবে।ওকে মেনে নিয়েও তো জীবনে এগুতে পারি আমরা।এমনটা তো নয় যে কেউ কখনও দু’টা বিয়ে করে নি আর কারো দুই স্ত্রী কখনও একসাথে হয়ে থাকে নি।″

আদ্রিশের বলা কথাগুলো শুনে আঁখি হেসে উঠল বেশ শব্দ করে,অতঃপর জবাব দিলো।

″তুমি কোন যুগে আছো আদ্রিশ,বর্তমানে নারীদের যথেষ্ট মর্যাদা দেওয়া হলেও তোমাদের মত কিছু পুরুষের জন্যই
সমাজটা পুরুষ শাসিতই থেকে গেল।আমার তো এখন ডাউট হচ্ছে তুমি আদোও শিক্ষিত কি না,বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়লেও শিক্ষিতের হার নেই বললেই চলে আর তুমিই জ্ব**ল**ন্ত প্রমাণ কথাটার।হাত ছাড়ো, আমায় আজ অনেক কিছুই করতে হবে।″

″দেখ আঁখি আমি শুধু বিয়েটা বাচ্চার জন্য করেছি,তোমার অবস্থান আমার জীবনে কখনও কম হবে না,প্লিজ তুমি এমনটা করো না,আমি রিদিকাকে ওর কক্ষে পাঠিয়ে দিয়েছি, আমার কক্ষে শুধু তোমার অধিকার,আমরা দুজন ওখানে থাকব।″

″ইশ তুমি আমায় নিয়ে কত ভাব,কত বড় পাওনা পাইয়ে দিলে তুমি আমায় আমি তোমার ঋণ কিভাবে শোধব?″তাচ্ছিল্য করে বলল আঁখি কথাগুলো।

″এমনভাবে বলছ কেন তুমি আঁখি?

″তো আর কিভাবে বলব,আর ইউ সিরিয়াস আদ্রিশ,তুমি এখনও আশা করছ আমি তোমার সাথে থাকব।ছিঃ শ্যা**ম ওন ইউ।তোমার সাথে কথা বলারও কোনো আগ্রহ নেই আমার।

টান দিয়ে হাত ছাড়িয়ে আঁখি চলে যেতে নিলে জো*র করে আদ্রিশ তাকে পাজকোলে নিয়ে নিল।

″কি করছ আদ্রিশ ছাড়ো আমায়!ভালো হবে না বলে দিলাম।″

″ছাড়ব না তোমায় আমি যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে।তোমাকে আমার কাছেই থাকতে হবে, আমার কথা শুনতেই হবে।″

″আমি বাধ্য নই তোমার কাছে, ছাড়ো আমায়।″

আদ্রিশ আঁখির কথায় কান না দিয়ে ওকে নিয়ে যেতে শুরু করল নিজের কক্ষের দিকে,এদিকে আঁখি নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টায় আছে,ড্রয়িংরুমে তখন বসে ছিল রিদিকা,সাথে সেখানে শুভ্রতাও ছিল,কাজের লোক সহিত ওরা দু’জন সবাই আদ্রিশের এমন কান্ড দেখছে,এদিকে আদ্রিশের চোখে যেন কাউকেই লাগছে না তার মাথায় এখন আঁখি ব্যতীত কোনো ভাবনাই নেই।তবে মুহুর্তটা মেনে নিতে পারছে না রিদিকা একদম,কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়াও করছে না,শুধু হাতের মুঠো শক্ত করে চোখের নো*না*জ*ল ত্যাগ করতে শুরু করেছে,বুকের ভিতরখানা বড্ড ক*ম্প*ন করছে রিদিকার,নিজের সদ্য বিবাহিত স্বামী অন্য নারীর পিছন পা**গ*ল হয়ে পরে আছে মানতে পারছে না রিদিকার ব্যাকুল মন,আদ্রিশ কক্ষের ভিতর ঢুকে দরজাটা সজোরে বন্ধ করল তার শব্দে পুরো শরীরে একটা ক*ম্প*ন দিয়ে উঠল রিদিকার,তারপরও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টায়ই থাকল সে।শুভ্রতা তাচ্ছিল্য করে বলল।

বি*না*শ*কা*লে বুদ্ধি বিকৃত হয় কিছু লোককে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না।অতঃপর শুভ্রতা স্থান ত্যাগ করে।রিদিকা বুঝতে পারে শুভ্রতা ওকে ইংগিত করে কথাটা বলেছে, তবে তারও কোনো জবাব দেওয়া জরুরি মনে করল না।

দরজা লাগিয়ে আঁখিকে নিজের কথায় আনার সমস্ত প্রচেষ্ঠা করছে আদ্রিশ।

″আঁখি তুমি জানো আমি তোমায় কত ভালোবাসি।তুমি আমাকে এভাবে পর করে দিলে আমি থাকতে পারব না।আর আমি তোমাকে আমায় পর করতেও দিব না,তোমাকে এখানেই থাকতে হবে জীবনভর আমার সাথে,আমাকে মেনে নিয়ে।″

″আঁখি আর যাই হোক শরীরের টা**)নে অন্যত্র গমণ করা পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী হয়ে থাকার কথা কল্পনাও করতে পারে না।″

″বলেছি তো বিয়েটা আমি বাচ্চার জন্য করেছি″

″এনাফ আদ্রিশ, আমাকে তুমি বোকা কবে থেকে ভাবতে শুরু করলে,ভুলে যেও না আমি একজন ডাক্তার,আজকাল নিজের বাচ্চা নেওয়ার হাজারটা পথ খোলা আছে, চাইলে আমরা সহজেই আমাদের বাচ্চা নিতে পারতাম কিন্তু না তোমার তো অন্য নারীর দেহে মো**হ ছিল।আচ্ছা তোমাকে কি কোনো ডাক্তার বলেছিল আমি মা হতে পারব না?কোনো টেস্ট করিয়েছিলে,ওহ মনে পরেছে আমরা তো টেস্ট করিয়েছিলাম তোমার বিয়ের আগেরদিনই,আর তুমি বাবা হবার জন্য এতটাই এক্সাইটেড ছিলে যে টেস্ট রিপোর্টেরও অপেক্ষা করো নি,হঠাৎ বিয়ে করে বউ নিয়ে উপস্থিত হলে,আর এখন বলছ বাচ্চার জন্য বিয়ে করেছ।এমনও তো হতে পারত সমস্যা আমার নয় তোমার,নয়ত কারোই কোনো সমস্যা নেই ঠিক সময়ে এমনিতেই বাচ্চা হত,কিন্তু তোমার তো তস সইছিল না নতুন না**রী**তে মত্ত হওয়ার।″

″আঁখি….″

″ব*লিও*ম ডাউন আদ্রিশ,আমি কোনো অ*ব*লা বউ না যে তোমার ধ*ম*কে ভ*য় পেয়ে চুপসে যাব।জানো সেদিন যখন ড.আদৃতকে হারিয়ে গিয়েছিলাম আর যখন তুমি আমায় সামলেছিলে তখন ভেবেছিলাম ভালোই হয়েছে ড.আদৃত চলে গেছেন,না হলে তোমার মত পার্ফেক্ট কেউ কিভাবে পেতাম,যে আমায় এত ভালোবাসে,উনি আমার ভালোবাসার মর্ম দেন নি বাচ্চামো ভেবে হয়ত আর তুমি আমায় পা*গ*লের মত ভালোবেসেছ।কত গর্ব করতাম তোমাকে নিয়ে আর আজ সেই ভালোবাসার কথা ভাবতেও লজ্জা হয় আমার,ছিঃ কেন আমি তোমায় ভালোবেসেছিলাম,এটা তো জরুরি ছিল না যে একজনকে ভুলতে অন্যজনের সা*হা*রা নিতে হবে।যে দিনটার কথা ভেবে একসময় মনে তৃপ্তি পেতাম সেই দিনটার কথা ভেবে এখন শুধু ঘৃ**ণা হয়।কেন সেদিন ড.আদৃতের জায়গায় তোমাকে কল্পনা করতে শুরু করেছিলাম,কেন সেদিন উনার মত একজন আদর্শ ব্যক্তির পরিবর্তে তোমার মত একটা কা**পু*রুষ কপালে জুটেছিল।″

″আঁখি….″

আঁখির মুখে আদৃতের কথা শুনে আদ্রিশের মাথায় র**ক্ত চরে গেল মুহুর্তে, আঁখিকে যে সে কখনোই অন্য কারো সাথে কল্পনাও করতে পারে না আর আদৃতের সাথে কোনো মুল্যেই না,তাই অতি রা**গে আঁখির উপর হাত উঠাতে গিয়েও থেমে যায় আদ্রিশ।

র**ক্তচ**ক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে নির্ভয়ে আঁখি আদ্রিশের দিকে।

কি হলো আদ্রিশ থেমে গেলে কেন?উঠাও হাত,দিয়ে দাও কাপুরুষতার প্রমাণ।

আদ্রিশ হাত নামিয়ে চোখ নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল,তবে রা**গে এখনও ফুঁ*স*ছে।

তোমার সাথে আর আমার কোনো কথা নেই,কথা বলতে হলে আর আদালতে কথা বলতে এসো,ডিভোর্স পেপার রেডি কালকেই মুক্ত করব তোমায়।

কথাটা বলে আঁখি যেতে গেলে আবারও তার হাত পা*ক*ড়াও করে আদ্রিশ,তবে এবার বেশ নরমভাবে ধরল আর মৃদ্যু স্বরেই বলল।

আমাকে প্লিজ ছেড়ে যেও না,একটা সুযোগ দাও অন্তত।

এবার আর আঁখি নিজেকে সামলাতে পারল না,পিছন ফিরেই আদ্রিশের গাল বরাবর একটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দিল।থা*প্প*ড় টা এত জোরালো ছিল যে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা সকলের কানে স্পষ্ট গেল,ঘরের সকল লোক তাদের ঝগড়ার আওয়াজে ততক্ষণে কক্ষের বাহিরে উপস্থিত হয়েছিলেন,মা রোহানা মজুমদার একপাশে দাঁড়িয়ে আঁচলে মুখ ঢেকে চোখের জল ফেলছেন,শুভ্রতা তার তিন বছরের ছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, রিদিকা একপাশে দাঁড়িয়ে শুধু হাতে হাত মলছে,কাজের লোকগুলো ও সেখানে দাঁড়িয়ে।এদিকে আঁখি প্র*খ*ড় এক জবাব দিল।

আমাকে আমার আসল রুপে আসতে বাধ্য করো না আদ্রিশ,স্বামী হিসেবে যথেষ্ট সম্মান করেছি তোমায় আমি সবসময় আর ডিভোর্সের আগ অব্দি তা রক্ষা করার সুযোগটা দিবে আশা করি।নয়ত তোমার ভালো জ্ঞান আছে আমার ক্ষমতা সম্পর্কে।তোমার মত ১০ টা আদ্রিশ একা সামলে নেওয়ার ক্ষমতা রাখি আমি ভুলে যেও না কথাটা।

অতঃপর দরজা খোলে ছাঁদের পানে ছুটতে শুরু করল আঁখি,আদ্রিশ আবারও ছুটে গেল তার পিছন,আঁখি ছাঁদের দরজা লাগিয়ে নিল তার ভিতর থেকে,বাহির থেক বেশ কয়েকবার লা**থি দিল সে দরজায় আদ্রিশ তারপর ওটা ভাঙতে না পেরে চি**ৎ*কা*র করে বলতে লাগল।

তোমাকে আমি কখনোই ছাড়ব না আঁখি,তোমাকে মৃত্যুর আগ অব্দি আমার সাথেই থাকতে হবে,এখন আমি বিয়ে ১ টা করি বা ১০০ টা,তুমি আমার ছিলে আর আমারই থাকবে দেখে নিও।

তারপর সেখান থেকে সোজা বাড়ির বাইরের দিকে বেড়িয়ে গেল আদ্রিশ।রিদিকা শুধু তাকিয়ে দেখল ওদের সমস্ত কার্যকলাপ।

আঁখি ছাঁদের দরজার গায়ে লুটে পরে চিৎকার করে কাঁদছে।

কেন আল্লাহ, কেন এমন লোককে আমার জীবনে আনলেন?যদি আমাকে এতই ভালোবাসত তবে অন্যের মোহে পরল কিভাবে,সত্য ভালোবাসা তো এমন হয় না।আমার কিশোরী মনের প্রথম প্রেম ছিলেন ড.আদৃত,তাকে তো খুব করে চেয়েছিলাম কিন্তু পেলাম না তার বদলে আপনি আমায় আদ্রিশ দিলেন,ড.আদৃতকে ভোলতে গিয়ে তাকে মন দিলাম বা**ধ্য হয়ে আর আজ যখন ওর ভালোবাসায় পা**গল হয়ে ওকে হারানোর ভ*য়ে সব ছাড়লাম তখন কেন ও এমনটা করল?কই ও জীবনে আসার পর তো আমি কখনো কারো দিকে সেভাবে তাকাই নি,কারো প্রতি আকৃষ্ট হই নি,এমনকি ড.আদৃতের কথাও আর দ্বিতীয় বার ভাবি নি,তবে ও কেন এমনটা করল?শরীরের টান কি ভালোবাসার থেকেও বড় হয়।কেন এমন হল রাব্বুল আলআমিন?কেন?কি এমন পাপ করেছিলাম যে তার সাজা আজ এভাবে পেতে হল আমায়।কিভাবে সে আশা করতে পারে আমার কাছ থেকে যে তার পাশে আমি অন্য নারীকে মেনে নিই।যেখানে অন্য পুরুষের অল্প কথাও আমার মুখে কখনই সে মেনে নেয় না।কেন?আজ নারী হয়ে জন্ম নেওয়ায় কি আমার এ হাল?নারী রূপে জন্ম নেওয়া কি ভুল?

চলবে……

প্রমত্ত অঙ্গনা
(০৫)

ম**দ্য পান করে বেশ রাতে ফিরেছে আদ্রিশ,নে**শা এত চড়েছে সোজা হয়ে হাঁটতে পারছে না সে।হেলেডুলে কোনোরুপ হেঁটে নিজের কক্ষ অব্দি পৌঁছাল,অগোছালো হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে রিদিকা,উপুড় হয়ে শুয়ে আছে শাড়ি অনেকটা বিচ্যুত হয়ে পিঠের নিচের অংশটা বেশ ভেসে আছে,সাথে পেটের অনেকটা অংশও বেড়িয়ে আছে,হুট করে কক্ষে ঢুকেতেই সেই নে*শা*ক্ত পুরুষের চোখ পরল তার উপর যা তাকে আরও নে**শা**ক্ত করে তুলল,কিছু আর না বলে সোজা গিয়ে রিদিকার পি*ঠ থেকে পে*ট অব্দি হাত বুলিয়ে নিয়ে গেল,ওপর হাতে রিদিকার কাঁধের উপর থেকে চুল সরিয়ে তার ঘা*ড়ে নাক ডুবিয়ে দিল।স্বামীর হঠাৎ এমন ছোঁয়া তাকে যেন মুহুর্তেই প্রায় উ*ন্মা*দ করে তুলল,অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেন খুশিতে নেচে উঠল,দিনশেষে যে তার স্বামী তার কাছেই ফিরে এসেছে।অদ্ভুত শিহরণ খেলা করছে তার সমস্ত শরীর জোরে,এদিকে নে**শা**ক্ত স্বরে বলছে আদ্রিশ।

আমি জানতাম আমার ফুলপরি দিনশেষে আমার কাছে ফিরবেই,সে যে শুধুই আমার,কে ভালোবাসবে বলো তোমাকে আমার মত,জীবনে যেই এসে যাক তোমার অবস্থান সবসময় আলাদাই থাকবে আমার কাছে।আজ তোমাকে এভাবে ভালোবাসবো যে কখনও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা মাথায়ও আসবে না,আ*দ*রে ভরিয়ে দিব তোমায় আমি আজ।

কথাগুলো কর্ণপাত হতেই শরীর জ্ব**লে উঠল রিদিকার,অতি ক্ষো**ভে খামছে ধরল বিছানার চাদর,তবুও কিছু বলছে না,স্বামীর এই আদরের ভাগটা ছাড়তে চায় না রিদিকা,ঘাড়ে চুমু খেতে খেতে তাকে নিজের দিকে ফেরালো আদ্রিশ,চেহারায় চোখ যেতেই কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেল সে,চট করে উঠে বসল রিদিকার উপর থেকে,ঝটফট জেরা করল তাকে।

″তুমি এখানে কি করছ!আঁখি কোথায়?″

″আঁখি এ রুমে আর আসেও নি,ছাঁদ থেকে সোজা মায়ের রুমে ঢুকেছিল,ওখানেই আছে।″

মৃদ্যু স্বরে উত্তর দিলো রিদিকা আর কোনো কথা বাড়াল না আদ্রিশ উঠে গেল মায়ের রুমের দিকে,দরজাতে ধা*ক্কা*নো শুরু করল,গ**র্জে গ**র্জে বলছে।

দরজা খুলো আঁখি,দরজা খুলো বলছি।

আঁখি তার শাশুড়ির কোলে মাথা গুঁজে শুয়ে আছে,শুভ্রতা তার পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলাচ্ছে,আঁখি মানা করেছে দরজা না খোলে দিতে তাই শুভ্রতা আর দরজা খোলে দেয় নি।

এদিকে আদ্রিশ চিৎ**কা**র করে বলছে,কত লুকাবে আঁখি আমার থেকে?কত দূরে থাকবে?ঘুরে ফিরে তোমায় আমার কাছেই আসতে হবে,দেখে নিও।

তখন সেখানে আগমণ ঘটল আদিলের,আদ্রিশের বড় ভাই,বেশ গম্ভীরতা নিয়েই বলল আদিল।

আদ্রিশ তোর কি হি*তা*হিত জ্ঞান হ্রাস পেয়েছে?পা*গ*ল হয়ে আঁখিকে বিয়ে করলি।খেয়াল আছে তোর– ওকে জীবনে পেতে কত সাধনা করতে হয়েছে তোকে,তোর ওর জন্য ছটফট দেখে আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম আল্লাহ যেন তোকে তোর সুখ আঁখিকে পাইয়ে দেন,অবশেষে তুই আঁখিকে পেলি।আমার মনে হল পৃথিবীতে আর একটা সত্য ভালোবাসার জয় হল,কিন্তু কী করলি তুই রিদিকার মোহে পরে আঁখিকে কষ্ট দিলি,আর এখন আবার ওর শান্তিটাও নষ্ট করছিস,নতুন একজনকে যখন জীবনে জরিয়েছিস তখন পুরাতন টানে পরে থেকে কি লাভ,আঁখিকে ওর মত থাকতে দে।

দেখো ভাইয়া,এটা আমার জীবন, আঁখিও আমার স্ত্রী আর রিদিকাও,আমার যা ইচ্ছে তাই করব, আমি আমার জীবনে কারও হস্তক্ষেপ সহ্য করব না।কথাটা মনে রেখ।

কথাগুলো বলে আদ্রিশ আবার রুমের দিকে হাঁটা ধরল।

নির্বাক হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে রইল আদিল,বড় ভাই হলেও আদ্রিশকে কিছু বলার বা কথা শুনানোর কোনো অধিকার নেই তার।বেকারত্বের অ**ভি*শা**প যে এমন-ই ভ*য়া*বহ যা বহণ করা সবার পক্ষে সম্ভবপর হয় না।যার খেয়ে পরে আছে স্ত্রী সন্তান নিয়ে তাকে কেমনেই বা শা*সা*বে আদিল,ভাবলেও যেন লজ্জা লাগে।

শাশুড়ির কোলে মাথা রেখে ঠোঁট কামড়ে কান্না করছে আঁখি,শাশুড়ি আর জা দু’জনেরই চোখ খালি নেই,জল যে তাদেরও চোখ আজ ছাড়বে না হয়ত পণ নিয়েছে।আঁখি নামক মেয়েটা যে কখনোই তাদের জা বা শাশুড়ি মনে করে নি, দিয়েছে মা ও বোনের দরজা,তাই আজ তার এই দূ*র্দি*নে আপন সে সম্পর্কের টানে জল ছাড়ছে না তাদেরও চোখ।শাশুড়ি এবার কাঁদতে কাঁদতে আঁখির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।

তোকে চুপ করানোর ক্ষমটাটুকুও আমি রাখি না রে মা,স্বামীর দেওয়া ক্ষ**ত**টা কতটুকু পী**ড়া দেয় তা শুধু একটা স্ত্রীই জানে,জানিস যেদিন একটা মহিলা দ্বারে একটা ৪ মাসের ছেলে সন্তান নিয়ে এসে বলল ওটা আমার স্বামীর অংশ আর সে না কি আমার স্বামীর অ*বৈ*ধ সম্পর্কের সাথি তখন বুকটা কতটুকু পরিমাণ কেঁপে উঠেছিল তা শুধু আমি জানি,তারপর সেদিনই তোর শ্বশুর মেয়েটিকে বিয়ে করেন,আমার তো কান্না ছাড়া কোনো উপায় ছিল না,আমার শ্বাশুড়ি মা সেদিন আমায় বলেছিলেন,ছেলে মানুষ না কি এমনই হয়,১০০ জায়গায় মুখ দেওয়া না কি তাদের স্বভাব, তাতে ঘর ছেড়ে স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ায় না কি মেয়েদেরই অসম্মান, কোথাও জায়গা হয় না,মা বাবারও তেমন সম্পত্তি ছিল না তাই আর বাপের বাড়িও যাই নি,পরে ছিলাম এখানে শত জ্ব**লা মেনে নিয়েও।ওই মেয়েটা প্রায়ই নিজে থেকে ঝ*গ*ড়া করত আমার সাথে,তারপর উনার কাছে আমার নামে উল্টাপাল্টা বলত আর উনি আমায় অনেক মা*রতে*ন,তাও পরে থাকতাম দুইটা বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে, কিন্তু হঠাৎ একদিন জানতে পারি আমার স*তী*নের জ**রা**য়ু তে ক্যা*ন্সার ধরা পরছে,শারীরিক সম্পর্ক করতে পারে না আর,এতে ওদের মধ্যে প্রায়ই ঝ*গ*ড়া হত,তারপর থেকে উনি আর ওর পাশেও যেতেন না আমার সাথেই থাকতেন বেশিরভাগ সময়,তাছাড়া বাইরেও উনার অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল জানতাম আমি,সবকিছুর পরও চুপ করে থাকতাম,হঠাৎ একদিন আমার স*তী*ন ইশিতা মা*রা যায়,ওর মৃত্যুর ৬ দিন আগে ওর ছেলেটা মা*রা যায় পানিতে ডুবে,মৃ*ত্যু*র আগে আমি ইশিতার অনেক পরিচর্যা করি,কিন্তু উনি ওর মুখ দেখতেও চাইতেন না তখন,ইশিতা ম**রা**র ৬ মাস পর উনার একটা এ*ক্সি*ডে*ন্ট হয় যাতে তিনি প্যারালাইস্ড হয়ে যান,সব কিছুতেই অক্ষম, শুধু কথা বলতে পারতেন,তারপরও আমি উনাকে কখনও অস*ম্মা*ন করি নি আর না তো উনার পরিচর্যায় কোনো কমতি রেখেছি,অবশেষে উনিও একদিন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন,মৃ*ত্যু*র আগ মুহুর্তে ক্ষমা টা চেয়ে নেন আমার কাছ থেকে।হয়ত তুই ভাবছিস ঘটনাটা আমি তোকে কেন বললাম!হয়ত তোকে বোঝাতে চাইছি যে–যাই হোক স্বামীকে মেনে নেওয়া উত্তম,এটাই মেয়েদের কর্ম, আমিও আমার শাশুড়ির মত তোকে সব মেনে নেওয়া বাণী শোনাবো, তবে সেটা ভুল ভাবছিস মা,আমার শাশুড়ি নিজেই আমার শ্বশুরের তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন,যে অন্যের কেঁড়ে নেয় সে কি জানে হারিয়ে যাওয়ার মর্ম,উনি মারা গেছেন তাই উনার কোনো দূর্নাম করতে চাই না আমি আর,শুধু বলব তুই চলে যা মা,নিজের জীবন আবার গুছিয়ে নে সুন্দর করে,কে**স কর ওই প**শু**টার নামে,এমন হাল কর ওর যাতে কখনও কোনো স্বামী স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোনো নারীর দিকে চোখ তোলার কথা ভাবতেও ভ**য় পায়।

আঁখি এবার চোখের জল মুছে উঠে বসে বলল।

মা গো,আমি ধন্য যে শ্বাশুড়ি রূপে তোমার মত এক জননী পেয়েছি,আমি আদ্রিশের জন্য মা–বাবা, ভাই, পরিবার সব ছেড়ে এসেছি,তবে আদ্রিশের মনে সেই আসল জায়গাটা করতে না পারলেও পরিবার রূপে তোমাদের পেয়েছি তাতেই আমি সন্তুষ্ট,আমি সফল।আর কথা রইল আদ্রিশের উপর কে**স করার,মা গো সারাজীবন তো ক**ষ্ট*ই করেছ,এই বয়সে তোমার কোনো কষ্ট হোক আমি চাই না,আল্লাহ সব দেখে নিবেন।

তাই বলে তুই ওই প*শু*কে ছাড় দিবি।

কে বলেছে ছাড় দিব মা,সুযোগে পেলে নিশ্চয়ই শো*ধ*টা নিব।তবে কে**স করে তোমাদের জীবন অনিশ্চয়তায় ফেলব না আমি,আদ্রিশ যে এই সংসারের খুঁটি সেটা ভুললে তো চলবে না,আর ও উকিল বিষয়টা মিডিয়াতে গেলে ওর আমার দু’জনেরই নাম খারাপ হবে সাথে আমাদের পরিবারদেরও তাই সবকিছু মাথায় নিয়ে চলতে হবে আমায়।তাছাড়া আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেন না জানোই তো।

তোমার মত মেয়েকে আদ্রিশ হাতে পেয়েও হারালো,ওর জন্য তো কোনো ধরনের প্রাশ্চিত্যও কম হবে না তুমি দেখে নিও।

আঁখিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে কথাটা বলল শুভ্রতা।

আদ্রিশ বিছানায় চিৎ হয়ে পরে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করছে।

তোমাকে আমি ছাড়ব না আঁখি,তোমাকে পেতে আমি কি কি করেছি তা শুধু আমি জানি,আমি তোমাকে হারাতে পারি না।তুমি আমারই থাকবে।

হঠাৎ কপালে কারো আলতো স্পর্শে চুপ করে গেল আদ্রিশ,চোখ খুলে দেখতে পেলো রিদিকা।স্বাভাবিক স্বরেই বলল।

″তুমি এখানে কি করছ?বলি নি তোমার কক্ষে যেতে?″

″আঁখি তো আর এখানে আসছে না,তাই আমার এখানে থাকতে ও তো সমস্যা নেই।″

″এটা আঁখির কক্ষ,ও এখানে থাকুক না থাকুক এখানে অধিকার ওরই থাকবে।″

″আর আমার অধিকারের কী?″

″ভুলে যেও না রিদিকা তুমি দ্বিতীয় জন আমার জীবনে,যতই প্রাধান্য তুমি পাও না কেন,তোমার অবস্থান আর অধিকার আঁখির পরই থাকবে।″

রিদিকার অভিমান আর অধিকার নিয়ে বলা কথাটার উত্তরে আদ্রিশ এভাবে ক**ঢ়া জবাব দিবে আশা করে নি সে,তাই এবার বেশ শব্দ করেই কেঁদে দিলো,আদ্রিশ অল্প বিরক্তি নিয়ে বলল।

দেখো রিদিকা এখানে কেঁদে কোনো ফায়দা নেই,আমি তোমাকে বলেছি আমি তোমাকে ছাড়ব না,আমার জীবনে তোমারও যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে,প্লিজ কান্না করো না,আমি ড্রিং**ক করেছি,নিজেকে আয়ত্তে রাখতে পারছি না,তোমার সাথে দূ*র্ব্য*ব*হা*র করতে চাই না,প্লিজ চলে যাও আমার প্রয়োজন মনে হলে নিজে তোমার কাছে আসব।এখন চলে যাও তুমি।

রিদিকা আর কিছু না বলেই সেখান থেকে ছুটে আসল।আদ্রিশ আবার চোখ বন্ধ করে বালিশে শায়িত হলো।

ফজরের নামাজ পড়ে কুরআন তেলাওয়াত করে নিল আঁখি,শ্বাশুড়ির কক্ষেই রাত্রী যাপন করল আজ সে,আজ আর কান্না করল না,পুরাতন গ্লানি মুছে দেওয়ার দিন আজ,আজ সে দূর্বল পরলে চলবে না।

সকাল ১০ টা হতে না হতেই ডিভোর্স পেপার হাতে চলে আসলো আঁখির,চারিদিকেই আঁখির বেশ নাম ডাক,ক্ষ*ম**তা*র বশে ডিভোর্স পেপারটা এত তাড়াতাড়ি করিয়ে নিতে পারল,তি**ক্ত এই টানটা বেশি সময় আর রাখবে না আঁখি,মুছে দিবে তা এক মুহুর্তেই,সাইনের জন্য ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিতেই হাত কাঁপতে লাগল আঁখির,ধীরে ধীরে গড়ে তুলা ভালোবাসার এক অট্টালিকা এক মুহুর্তে কিভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারবে আঁখি,তাতে যে প্রচুর সাহস আর ক্ষমতার প্রয়োজন,কিন্তু আঁখি তো ভিতু বা দূর্বলদের দলের কারো মধ্যে পরে না,তবে সে কেন পিছপা হবে আজ।না তাকে হার মানলে চলবে না,তাকে আত্নসম্মানের এ লড়াইয়ে জিততেই হবে।অতঃপর আর ভাবতে চাইল না সে,হাতে উঠিয়ে নিল কলম।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here