প্রমত্ত_অঙ্গনা #লেখিকা_আরোহী_নুর ১২,১৩

0
167

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
১২,১৩

কলির ম*রদেহ ফ্লোরে পরে আছে,নিষ্প্রাণ চোখ উন্মুক্ত, চারিদিকে র*ক্তে*র ছড়াছড়ি, দেয়ালে র*ক্ত দিয়ে বেশ বড় করে লেখা।

প্রমত্ত অঙ্গনা

কেসটা বিচলিত করল ইন্সপেক্টর জিসানকে,ছয় বছর আগে একজন পুরুষের লা*শে*র পাশে তার র*ক্ত দিয়ে একই নাম লেখা পাওয়া যায়,অনেক তদন্তের পরও সে অঙ্গাত খু*নি*কে এখনও খুঁজে পাওয়া যায় নি,এর দু’বছর পর তিনটে খু*ন হয় কয়েকদিন পর পর আর তাদের লা*শে*র পাশেও সেই একই নাম পাওয়া গিয়েছিল,র*ক্ত দিয়ে লিখা প্রমত্ত অঙ্গনা,আর আজ চার বছর পর আবারও লা*শে*র পাশে একই নাম বেশ চিন্তিত করল জিসানকে,কে এই প্রমত্ত অঙ্গনা!কেন সে এভাবে খু*ন করছে!আর এতো নিখুঁত তার কাজ যে কোনো প্রামাণ এখন অব্দি পুলিশ খুঁজে পায় নি তার বিরুদ্ধে।

কক্ষের বারান্দার এক কোণে অবস্থান নিয়েছে আদ্রিশ,আজ অনেক দিন পর হাতে আবারও সি*গা*রে*ট নিয়েছে,প্রতিটা নে*শা*ক্ত চুমুক মনে করিয়ে দিচ্ছে আঁখির স্মৃতি,আচমকা উৎফুল্ল হাসিতে তার গালে ফুটে উঠা সে টুলটা আজ খুব করে অধরে ছুঁয়ে দিতে মন চাইছে আদ্রিশের,চোখের সামনে ভাসছে আঁখির হুটহাট করে বেড়ানো দুষ্টুমিগুলো,কানে যেন বার বার বেজে উঠছে
খিলখিল করে মুক্তোঝরানো তার হাসির স্বর।আঁখির এভাবে আদ্রিশকে ছেড়ে নেওয়া মেনে নিতে পারছেই না সে।জীবনে যতই যে এসে যাক না কেন আঁখি যে তার জন্য আল্লাহ ব্যতীত সকল কিছুর উর্ধ্বে।আদ্রিশের জীবন জুরে এমন কিছু নেই যার স্পর্শ তাকে আঁখির কথা প্রতিনিয়ত মনে না করিয়ে দেয়। আঁখিকে ছাড়া একেকটা দিন হাজার বছরের সমান মনে হচ্ছে আদ্রিশের কাছে,আঁখিকে ফিরিয়ে তার আনতেই হবে,যতই যা অসাধ্য তাকে সাধন করতে হয় না কেন সে করবে ভেবে নিয়েছে।হঠাৎ পিছন থেকে তাকে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরল রিদিকা,আদ্রিশ সিগারেট ফেলে পাক ফিরে রিদিকাকে বিনা বাক্যে বুকে টেনে নিল,তার স্পর্শে আঁখির ছোঁয়া অনুভব করতে চাইল তবে ব্যার্থ হলো,আঁখির ছোঁয়া পৃথিবীর এমন কোনো নারী নেই যার সংস্পর্শে গিয়ে ভুলে যাবে আদ্রিশ।শান্ত গলায় বলল এবার।

আমি আঁখিকে খুব ভালোবাসি রিদিকা।

আঁখির হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তাটা পরে আদ্রিশের বাড়ির সামনা দিয়ে, ভালোবাসার মানুষটির বাসস্থানের সামনে দিয়ে যেতেও বুক কাঁপে আঁখির বার বার।কতটা হাস্যকর ব্যাপার, একসময় এটাই ছিল তার স্থায়ী ঠিকানা তার স্বপ্নের মহল,সে মহল আর সেই রাজপুত্র উভয়েই যে এখন অন্য নারীর রাজত্ব,কথাটা ভাবনায় আসলে বুক ফেঁটে কান্না নামে আঁখির,রোজ যাওয়ার সময় বাড়িটার উপর চোখ বুলিয়ে যায়,আজও সেদিকটায় যাওয়ার ক্ষনে চোখ উঁচিয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে বাড়িটার দিকে তাকাতেই চোখে গেল আঙ্গাঙ্গি করে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক আর রমণীর উপর,চোখে যেন ম*রি*চ পরল আঁখির,বুকের ভিতরটা চূ*র্ণ বি*চূ*র্ণ হয়ে গেল এক নিমিষেই, তড়িৎ বেগে কান্না এলে ঠোঁট চেপে তা দমাতে চাইল,চোখ সরিয়ে নিল তাড়াতাড়ি সেই নোংরা দৃশ্য থেকে,আদ্রিশ এতটা নিচে নামবে জানলে তাকে কখনও জীবনে জড়িয়ে নিত না,আজকে আঁখির তার বাবার বলা আদ্রিশকে নিয়ে কথাগুলো বড্ড মনে পরল,তার বাবা ডা.আশরাফ খান বলেছিলেন নোংরাকে কখনও পরিষ্কার করে রাখা যায় না,যার বংশে নড়চড় তার ভবিষ্যতে প্রজন্ম মজবুত হবে কেমনে,শুধু শিক্ষা কারো ডিএনএ পাল্টে দিতে পারে না,বংশের দোষ থেকেই যায়।কথাগুলো হারে হারে আজ মিলে যাচ্ছে আঁখির জীবনের সাথে,তবে না আদিল ভাইয়া তো এমন হন নি,ওর শরীরেও তো একই বংশের রক্ত,আসলে সবকিছুই ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভর করে,হয়তবা কাপুরুষ হতে বংশ লাগে না কয়েকটা লক্ষণই যথেষ্ট।এসব ভাবনার দখলে পরে রাস্তা কাটাতে লাগল আঁখির।

আদ্রিশের বলা কথাটায় শরীরে জ্ব*ল*ন শুরু হল রিদিকার,স্বামীর মুখে অন্য নারীর নাম– হোক না সে তার প্রথম স্ত্রী, স্বামী তো তারও,স্বামী ভাগ কোন নারী অন্যকে দেয়!জ্ব*ল*নে*র ভাবনা ধামাচাপা দিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল রিদিকা।

আদ্রিশ আবারও বলল।

আসলে রিদিকা ওকে কতটা ভালোবাসি আমি জানি না,শুধু জানি ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না,দম বন্ধ লাগে আমার,ও কোনো মতেই ফিরে আসতে চাইছে না,কিন্তু আমিও হার মানব না,ওকে যে ফিরতেই হবে,তুমি দেখে নিও ও আসবে।

রিদিকা এবার মুখ উঁচিয়ে আদ্রিশকে বলল।

″এতই যখন ওকে ভালোবাসো তবে আমায় কেন আনলে জীবনে? কেউ সতী*নে*র ভাগ মেনে নেয় না,আমি তো তাও মেনে নিয়েছি আঁখির কথা ভেবে কারণ আমি ওকেও যথেষ্ট ভালোবাসি,একসাথে তো থাকতেই পারতাম,কিন্তু ও তো হিং*সে করে চলে গেল আমায়,এতে আমার বা তোমার তো কোনো দোষ নেই।

″খবরদার যদি ওকে হিংসুটে বলেছ তো।ভুলে যেও না ও আমার প্রথম স্ত্রী, আমার মনের রানী,ওর বিরুদ্ধে কোনো একটা শব্দও সহ্য করব না আমি।″

আদ্রিশ বেশ রেগে গিয়ে রিদিকাকে নিজ থেকে ছাড়িয়ে দিল,কর্কশ স্বরে কথাগুলো শুনিয়ে চলে গেল,রিদিকা বেশ অবাক হলো আদ্রিশের ওর সাথে করা এমন আচরনে, আজ দেড় বছর ধরে আঁখি আদ্রিশের সাথে থাকছে রিদিকা,কই কখনও তো আঁখির সাথে এমন আচরণ করতে দেখে নি আদ্রিশকে,আঁখি বরং অনেক রাগ অভীমাণ করত আদ্রিশের সাথে কিন্তু আদ্রিশ সে তো সর্বকালের বিবাগী ছিল আঁখির,তার রাগ অভীমাণ অনায়াসে মেনে নিত,কতো আদর ভালোবাসা ছিল তার আঁখির প্রতি,তবে রিদিকার ক্ষেত্রে তা কেন মিলছে না!রিদিকাও তো তার স্ত্রী আঁখির ন্যায়,তবে কেন বেদাবেদ?সেদিন আদ্রিশের সামনে আঁখি মারল রিদিকাকে কিন্তু আদ্রিশ তো তাকে তেমন কিছু বলল না।আর আজ রিদিকার বলা আঁখির বিরুদ্ধে অল্প একটা শব্দও সহ্য হলো না আদ্রিশের।

আঁখি আদ্রিশের ডিভোর্সের খবর মিডিয়াতে চলে গেছে,কাজে পৌঁছানোর পর থেকে অনেক জবাবদিহিতার সামনে পরেতে হয়েছে আঁখিকে,চারিদিকেই খবরটা ছড়াছড়ি পেয়ে গেছে অল্পসময়ে,তবে উক্ত বিষয় থেকে বেশি চিন্তিত করছে আঁখিকে অন্য কিছু,কলি তো মারা গেছে তবে খবরটা কে ফাঁস করল।কলির মৃত্যু সংবাদের আতঙ্ক এখনও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় নি ,উপর থেকে এসব,সকাল হতে না হতেই ফেসবুকেই কলির মৃ*ত্যু সংবাদ পায় আঁখি।যতটুকু আঁখি জানে কলি খবরটা ফাঁস করে নি,তবে কে করল এমনটা?প্রশ্নটা বড্ড বিরক্তি নিয়ে এলো আঁখির মস্তিষ্কে।

কলির মৃ*ত্যু এদিকে আঁখি আর তার বিচ্ছেদের ব্যাপার যা নিয়ে এখনও তাদের নিজেদের মধ্যেই কথা হয় নি ভালো করে তা মিডিয়ার চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়াল,ইতিমধ্যে আশপাশের লোক সমালোচনা শুরু করে দিয়েছে বিষয়টা বড্ড লজ্জার লাগছে আদ্রিশের কাছে।কে ফাঁস করল তবে ব্যাপারটা?কলি তো মা*রা গেছে তার মৃ*ত্যু*র ১৬ ঘন্টা পর খবর বের হয়েছে,তবে এমনও হতে পারে খবরটা কলি আগে তার স্টাফকে দিয়ে রেখেছিল আর তারাই খবরটা ফাঁস করেছে এমন ভাবনা এলো আদ্রিশের মনে,কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো কলিকে মারল কে!তাও তার কক্ষের দেয়ালে প্রমত্ত অঙ্গনা লিখা পাওয়া গেছে,আদ্রিশ অনেক সময়ই আদর করে আঁখিকে প্রমত্ত অঙ্গনা বলে ডাকত,কারণ আঁখি আদ্রিশকে নিয়ে বেশ পা*গ*লা*মি করত তাই,কিন্তু তার আঁখি কারো খু*ন করতে পারে না জানে আদ্রিশ,তবে সেই প্রমত্ত অঙ্গনা আসলে কে?

″স্যার আপনি তো এবছর তিনজন নতুন সার্জন নিতে চেয়েছিলেন আমাদের হাসপাতালে, তাই তো বেস্টদের লিস্ট চাইলেন,আর এখন যে সবার থেকে খ্যাত–যে আমাদের হাসপাতালের জন্য গর্ব হয়ে দাঁড়াবে তাকেই আনতে চাইছেন না।ডা.আঁখি ব্যতীত বাকি যে কাউকেই আপনি সিলেক্ট করে নিলেন!কেন স্যার?

″আমাকে কাজ শিখাতে এসো না ডা.রায়হান,ভুলে যেও না আমি সবার সিনিওর, হাসপাতালের ওনার।″

″সরি স্যার,কিন্তু ন্যায় আর সত্যের শিক্ষা আপনার কাছ থেকেই পাওনা আমার,আপনি আমার গুরু,আমি আপনার অনেক সম্মান করি,কিন্তু এ বিষয়ে আপনার সাথে মত মেলাতে পারলাম না আমি,তাই দুঃখীত।ব্যক্তিগত জীবনকে কখনও প্রোফেশনাল লাইফে না জরানোর শিক্ষা আপনিই দিয়েছেন,সেটা এখন আপনি নিজে ভুলে গেলে বাকিরা কি শিখবে স্যার আপনার কাছ থেকে?আপনার হাসপাতাল আপনার যা ইচ্ছে তাই করবেন আমি তো শুধু আমার মতামত জানালাম।চলি স্যার আমার ডিউটি আছে।″

কথাগুলো বলে চলে গেলেন ডা.রায়হান,ধাতব মুর্তির ন্যায় সেখানে দাঁড়িয়ে রইলেন ডা.আশরাফ খান।

আঁখি আদ্রিশের বিচ্ছেদ হতে চলেছে খবরটা জানতে পেয়ে অবাকের শীর্ষে পৌঁছাল আদৃত,পরিষ্কার জানানো হয়েছে সেখানে– লয়্যার আদ্রিশ রাহমান প্রথম স্ত্রীর অমতে দ্বিতীয় বিয়ে করে নেন যার ফলস্বরূপ তার প্রথম স্ত্রী ডা.আরশিয়া আনজুম আঁখি তাকে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন,বর্তমানে উনি স্বামীর ঘর থেকে আলাদা অবস্থান করছেন।খবরটা শুনে যেন আদৃতের পায়ের নিচ থেকে মাটি বিচ্যুত হয়ে গেল।নিজের কানে ও চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না আদৃত,যার সুখের জন্য নিজের জীবন অন্ধকারে ভরে নিল আজ সে দুঃখের সাগরে ভাসছে,ভেবেই র*ক্ত জ্বলে উঠল আদৃতের,ইচ্ছে করল এখনই গিয়ে আদ্রিশের প্রাণ নিজ হাতে নিয়ে নিক।সাহস হল কি করে আদ্রিশের তার সুখপাখিকে পী*ড়া দান করার,না, পারল না আদৃত নিজেকে সংযত করতে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বেড়িয়ে গেল বাড়ি থেকে,পিছন থেকে মা ডেকে উঠলেন।

″আদৃত বাবা আমার কোথায় যাচ্ছিস?″

″ল*ম্প*ট কে তার জায়গা দেখিয়ে দিতে।″

ছেলেকে কখনও এমন রুপে বা এমন কথা বলে কোথাও বেরুতে দেখেন নি শায়েলা মির্জা,অত্যন্ত শান্ত আর গম্ভীর চরিত্রের অধিকারী আদৃত,কিন্তু আজকে যেন কোনো আলাদা এক আদৃতকে দেখতে পেলেন উনি।

মেয়ের বিষয়ে নিউজ দেখে ব্যাথাপূর্ণ হলো বাবার মন,এই ভয়েই যে মেয়ের সেই আবদার মেনে নিতে নারাজ ছিলেন উনি,কলিজার টুকরার গায়ে ফুলের টোকারও ভয় যে এখনও সেই বাবার হৃদয়ে সমপরিমাণ রয়ে গেছে,সন্তানেরা মা বাবাকে পলকেই পর করে দিতে পারলে বাবা মা যে কখনও পারেন না তাদের জীবন থেকে মুছে ফেলতে।

আদ্রিশ বেশ চিন্তিত হয়ে বসে আছে,কাজে আসলেও মন লাগছে না তার,হঠাৎ কেউ সেখানে প্রবেশ করলে চোখ তুলে তাকালো,ছয় বছর পর ডা.আদৃতকে দেখে চমকে গেল সে,আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল।

″ডা.আদৃত আপনি,ছয় বছর পর?″

″হ্যাঁ আমি,হয়ত আল্লাহই আমাকে এখানে আনিয়েছেন আঁখি সুখে আছে আমার এই ভ্রুমটা ভেঙে দেওয়ার জন্য।″

″আপনি কি বলতে চাইছেন ডা.আদৃত?″

আদৃত এবার অতিরিক্ত রাগে এগিয়ে গিয়ে আদ্রিশের কলার চেঁপে ধরে বলল।

″সহজ ভাষায় বুঝিস না,তাই না?তুই ভালোয় জানিস আদ্রিশ আঁখিকে নিয়ে আমি কতটা সিরিয়াস,ভুলে যাস নে সেদিন আঁখি সামনে না এলে তোর হাত উপরে ফেলতাম আমি আঁখির হাত ধরে টান দেওয়া নিয়ে,যেটা শুধু অল্প একটা কারণ ছিল।সে জায়গাতে আঁখির পাশে তোকে মেনে নিয়েছি শুধু আঁখির সুখের কথা ভেবে,কিন্তু ভুলে যাস নে আমি সেই আদৃত,এখনও আঁখিকে ততটাই ভালোবাসি,ওর গায়ে ফুলের আঁচড়ও সইব না আমি।″

″ডা.আদৃত আপনি কিন্তু লিমিট ক্রস করছেন,শক্তি শুধু আপনার শরীরে নেই আমারও আছে,আপনার সম্মান করছি বলে ভাববেন না ভয় পেয়ে আছি,আঁখি আমার স্ত্রী, আর আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আপনি কথা না বললেই খুশি হবো।″

কথাটা কানে যেতেই ধাক্কা মেরে আদ্রিশকে ফ্লোরে ফেলে দেয় আদৃত,বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠে।

এখনই দেখিয়ে দিতে পারতাম কার গায়ের জোর কত বেশি তবে তোর মতো কা*পু*রু*ষের গায়ে হাত তুলে আমি নিজের হাত নষ্ট করতে চাই না।আর কথা রইল আঁখির, পেয়ে যার মর্ম করতে পারিস নি তাকে ফিরে পাওয়ার আশা কি করে রাখিস।আঁখিকে দ্বিতীয়বার ফিরে পাওয়ার ভ্রমে পরে থাকিস না,ভালো হবে না তোর জন্য।

আদৃত চলে আসলো সেখান থেকে,আদ্রিশের ভিতর তোলপাড় হতে শুরু হলো,আদৃত ফিরে এসেছে এখন যদি সে আবারও আঁখির মন জয় করে যায় তখন কি হবে আদ্রিশের!না,এতোকিছুর বিনিময়ে এতো সাধনার পর আঁখিকে পেয়ে আদ্রিশ তাকে হাতছাড়া করবে না কোনো কিছুর বিনিময়েও।

পাহাড় পরিমাণ দুঃশ্চিতা নিয়ে একটা সার্জারি সেরে এসে বসল আঁখি,হাসপাতাল টা ছেড়ে দিবে ভাবছে,আর সেই রাস্তা দিয়ে আসার সক্ষমতা নেই তার।পারবে না মনের এমন দূরাবস্থা রোজ মানিয়ে নিতে,সকালের সেই দৃশ্যটা বার বার চোখে ভাসছে আঁখির।এমন কতশত সকালের শুরু এভাবে হতো আঁখির তা শুধু সেই জানে।

একদিন সকালবেলা আঁখি কক্ষের বারান্দার প্রান্তে দাঁড়িয়ে রাস্তায় গাড়ি চলাচল দেখছিল,সহসা তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদ্রিশ,বেশ অভিমান নিয়ে আঁখি নিজে থেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে তাকে,আদ্রিশ এদিকে তার ঘাড়ে পা*গ*লে*র মতো চু*মু দিয়ে যাচ্ছে।

″ছাড়ো আমাকে আদ্রিশ।″

″সারারাত আদর করতে দাও নি,এবার আর ছাড়ছি না তোমায়,কতো সরি বলার পরও ছাড় দিলে না তুমি আমায়,তবে আর নয় অভিমান,অনলি ভালোবাসা।″

″স্মোক কারিদের ভালোবাসি না আমি।″

″আমায় তো বাসো? ″

″না।″

″এমনটা বলো না বুকে বড্ড পীড়া অনুভব হয় ফুলপরি।″

″হুম আমার তো বুকে কখনও কোনো পীড়া হয় না,আমি তো রোবট, অনুভুতিহীন।″

″আরে এমনটা কেন বলছ,বললাম তো ছেড়ে দিব একদম,আর ভুলেও হাত লাগাব না ওসবে,ভেবে দেখে আগে দিনে চারটে খেতাম আর এখন ছয় মাসে একটা,তোমার জন্য কতো বড় পরিবর্তন ঘটিয়ে নিলাম আমি,তুমি কি খুশি নও।″

″না,পুরোপুরি ছাড়তে হবে।″

″একটু সময় তো দাও।″

″ওকে দিলাম,ততদিন যতদিন তুমি আমার পাশে না এসে থাকতে পারবে।″

″ও মা এ কি বলে,এমনটা হলে তো এই ক্ষনেই সি*গা*রে*টের বংশ নাশ করলাম জীবন থেকে।চলো এবার ভালোবাসায় ভরিয়ে দেই তোমায়।″

অতঃপর আদ্রিশ আঁখিকে পাজকোলে নিয়ে কক্ষের পানে হাঁটা দিল,দুষ্টামিতে আঁখি মোচড়ামুচড়ি করছে আর হাসছে।

কি করছো আদ্রিশ ছাড়ো,আরে কাজ আছে তো,আল্লাহ এই কোন পাগল জুটল আমার কপালে।ছাড়ো আদ্রিশ।হা হা হা

চলবে………

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(১৩)

আজকে দ্বিতীয়বারের মতো আদ্রিশকে ডিভোর্স পেপার পাঠাল আঁখি,ব্যাথার পরিমাণ তার সেদিনের তুলনায় এক চুলও কম ছিল না,আজও হাতে কাগজটা নিয়ে বুকে প্রচন্ড কম্পন অনুভব করল,তবুও বুকে আত্মসম্মান নামক পাথর রেখে কাগজটা আবারও পাঠিয়ে দিল আঁখি।

আঁখি তার পক্ষের উকিল পাঠিয়েছে আদ্রিশের কাছে।লয়্যার আরিফুল ডিভোর্স পেপার টা বের করে আদ্রিশের সামনে রেখে বললেন।

দেখুন মি.আদ্রিশ আপনিও একজন লয়্যার,আপনি ভালোয় জানেন ডিভোর্স হতে সর্বক্ষেত্রে দু’পক্ষেরই মতামত প্রাধান্য পায় না,বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে কেউ যদি তার স্বামী বা স্ত্রীর সাথে থাকতে না চায় তবে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে সে তাকে ডিভোর্স দিতে পারবে অপরপক্ষের মতামত না থাকলেও,এতে যদি নিজেদের মধ্যে কথা বলে বিষয়টার মিমাংসা না হয় তবে সে ব্যাপারটা আদালত অব্দি পৌঁছায়,মিস আঁখি আপনার সাথে থাকতে মানসিকভাবে প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছেন না,আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন তাই উনি আপনাকে অনায়াসে ডিভোর্স দিতে পারেন,আগের বার উনি সাইন করে আপনাকে ডিভোর্স পেপার দিয়েছিলেন,আপনি তা ছিঁড়ে দিলেন,কিন্তু আপনি ভালোয় জানেন ওটা অনুলিপি ছিল,যার ফলস্বরূপ আপনার বিরুদ্ধে উনি আইনত পদক্ষেপ নিতে পারেন উনি,তাও উনি আপনাকে একটা সুযোগ দিলেন,এখানে উনি আবারও তার একটা অনুলিপি পাঠিয়েছেন,আপনিও সই করে দিবেন উনি আশা রেখেছেন,তাও যদি আপনি আগের মতো কিছু করার চিন্তায় থেকে থাকেন তবে আপনি ভুল করছেন,আইন সম্পর্কে আপনি ভালো জানেন,ডিভোর্স টা এমনিতেই কার্যকর হবে।আমি না হয় চলি,আপনি যথেষ্ট সময় নিন,ভেবে দেখুন বিষয়টা,আশা করি সাইন করে রাখবেন।

লয়্যার আরিফুল চলে গেলে ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে বেশ দুঃশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কাগজটার দিকে আদ্রিশ,যেখানে আঁখির সাইন স্পষ্ট, কি করে পারল আঁখি সাইন টা করে দিতে, আদ্রিশ কি আদোও পেরে উঠবে সাইন করতে,কই কথাটা ভেবেই তো তার বুক কাঁপছে,যে আঁখিকে না পাওয়ার শোকে একসময় ম*র*তে বসেছিল সেই আঁখিকে কি পারবে নিজে থেকে দূর করতে!কি করে পারবে তাকে ছাড়া বাঁচতে!

ডুবে গেছে এক বিষাদের সমুদ্রে আঁখি,সব কিছু যেন একসাথেই মাথায় ভর করে গেছে,আদ্রিশের বিশ্বাসঘাতকা,আদৃতের হুট করে ফিরে আসা,কলির আচমকা মৃত্যু, সাথে তার ব্যক্তিগত খবর মিডিয়াতে চলে যাওয়া,আশপাশের লোকের সমালোচনা,এর উপর ডিভোর্স পেপার আবার পাঠানো,ভালোবাসার মানুষের সাথে বিচ্ছেদ,আদ্রিশের সাথে তার সুন্দর সেই সম্পর্কের সমাপ্তির সূচনা,এতো কিছু একসাথে কেউ কেমনে মেনে নিতে পারে,উক্ত পীড়া সহনীয় মাত্রা পেরিয়ে গেছে আঁখির,মাথা প্রচন্ড ধরেছে তাই একটা ওষুধ খেয়ে শুয়ে পরেছে বিছানায়,তবে ঘুম আসছে কোথায়,হঠাৎ মনে পরল তার বাবার কথা।তার বাবা তাকে প্রায়ই বলতেন।

আঁখি,মাই প্রিনসেস,তুই শুধু আমার মেয়ে না আমার অহংকার হতে হবে তোকে,যার সামনে শত পুরুষকেও হার মানতে হবে,যাকে জয় করতে হবে পৃথিবীর সকল অসাধ্য সাধন করার সক্ষমতা,সেই ধৈর্য্য আর সাহসিকতা তোর মধ্যে থাকতে হবে,যাতে আমি মাথা উঁচু করে বলতে পারি তুই আমার সন্তান, আমার মেয়ে।

বাবার এ কথাটা মনে পরায় হঠাৎ করেই যেন সীমাহীন এক ধৈর্য্য ও শক্তির যোগান হলো,মনে কোথা থেকে একটা প্রশান্তির ছোঁয়া বিরাজমান হলো,মনে প্রচন্ড এক টান পরল আঁখির,বাবা মায়ের স্মৃতি যখন এতো প্রশান্তি দিতে পারে তবে তাদের সংস্পর্শ কতটা প্রশান্তি দিতে সক্ষম হবে।খুব লোভ হলো আঁখির আবারও মা বাবার ভালোবাসা পাওয়ার,তবে তা আদোও সম্ভবপর কখনও হবে কি না কে জানে,কিন্তু নিজেকে আজ আটকাতে পারছে না আঁখি,তাদের পাশে যাওয়ার ক্ষমতা আঁখির নেই তবে দূর থেকে তাদের একপলক দেখে আসবে ভেবে নিয়েছে।যেই ভাবনা সেই কাজ,উঠে গেল আঁখি।

একটা জিন্স প্যান্টের সাথে হুডি পরে নিল,চুলগুলো খোঁপা করে কাঠি দিয়ে আঁটকে নিল,তারপর বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে,বাবার দেওয়া সেই বাইকটা বের করল,মা বাবার ঘর থেকে আর কিছু সাথে করে নিয়ে না আসলেও বাইকটা ঠিকই নিয়ে এসেছিল,তার বাবার স্মৃতি হিসেবে,মা বাবার কাছে সন্তানদের এতো আত্মসম্মান খুঁজতে নেই আঁখির মতামত,যেহেতু প্রাণটাই উনাদেরই দান,আদ্রিশের বাড়ি থেকে আসার পরদিন লোক পাঠিয়ে বাইকটাও আনিয়ে নিয়েছিল আঁখি,তিন বছর পর আজ আবারও তাতে চড়ার ইচ্ছে জাগল আঁখির,বেশ খুশি মনে চড়ে বসল তাতে,চওড়া এক হাসি দিয়ে বাইক স্টার্ট করল,লক্ষ্য খান ম্যানশন,ভিতরে না গেলেও বাহির থেকে দেখে আসবে নিজের জন্মস্থান, পারলে জন্মদাতা পিতা মাতা ও তার বাকি পরিবারের সদস্যদেরও।আজ তিন বছর পর আবারও সেই রূপে রাতের শহরে রাইড করতে বের হয়ে খুব ভালো লাগছে আঁখির।

আজ হাসপাতাল থেকে বেশ রাত করে ফিরছেন ডা.আশরাফ খান,সাথে আজ গার্ড আনেন নি,এমারজেন্সিতে হাসপাতালে থাকাও পরতে পারে ভেবে তাদের পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।আদৃত আজ নিজে থেকেই উনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল।অনেক দিন পর তার আশরাফ স্যার এর সাথে দেখা,যথেষ্ট সম্মান ও শ্রদ্ধা করে উনাকে আদৃত,এমারজেন্সিতে আদৃত আজকে উনার সাথেই ছিল,এমারজেন্সি পর আদৃতকে উনি আর যেতে দেননি,নিজে তাকে বাড়ি ড্রপ করবেন বলে।আদৃতের বাড়ি ডা.আশরাফ খানের বাড়ি যাওয়ার রাস্তার মধ্যেই পরে তাই।বর্তমানে আদৃত আর আশরাফ খান গাড়িতে বসে আছেন,আশরাফ খান আদৃতকে নিজের হাসপাতালে জয়েন হবার প্রস্তাব সরাসরিই দিয়ে দিলেন।

আদৃত মাই ভয়,তুমি সর্বকালের সেরাদের তালিকায় ছিলে আমার শিষ্যদের মধ্যে, তাই আমি তোমাকে আমাদের হাসপাতালের একজন সার্জন হিসেবে নিয়োগ করাতে ইচ্ছুক,এ বিষয়ে তোমার কি মতামত?

আদৃত উত্তরে কিছু বলবে তার আগেই গাড়িটা থেমে গেল।

কি হয়েছে মফিজ?

স্যার মনে হয় টায়ারে কোনো সমস্যা হয়েছে,আমি দেখছি।

আশরাফ রায়খানকে কথাটা জানিয়ে গাড়ি থেকে নিচে নামতেই কোথা থেকে তিনজন মাস্ক পরা লোক এগিয়ে এলো,হাতে তাদের ধারালো ছু*রি,একজন ছুরিটা এনে ড্রাইবারের গলা বরাবর ধরল,বাকি দু’জন গাড়ির দু’দিকে গিয়ে আদৃত আর আশরাফ খানকে বেরুতে বলল।তারা রাস্তায় কিল ফেলে গাড়ি আটকাতে সফল হয়েছে।

এই বের হো দু’জন, আর যার যার কাছে যা আছে সব দে।

আশরাফ খান আর আদৃত দুজনই বুঝতে পারলেন এরা ছিনতাই কারী,গাড়ি থেকে নেমে পরলেন তারা দু’জন।আশরাফ খান বললেন।

দেখো তোমরা আমাদের কাছে কিছুই পাবে না,আমরা টাকা বহণ করছি না,সোনা গহনা কিছু নেই আমাদের কাছে,বাকি কার্ডগুলো নিয়ে গিয়েও তোমাদের কোনো লাভ হবে না।

ওই বুড়া বেশি কথা বলিস কেনো?চুপচাপ যা আছে বের কর।নয়তো এখনই পেটে ছু*রি ঢুকিয়ে ফুটো করে দিবে,হাতের ছুরি দেখিয়ে আশরাফ খানকে ভয় দেখালে তার হাত ধরে এক টান দিয়ে পিছনে মুড়ে ভেঙে দেয় আদৃত,সাথে সাথেই লাথি দিয়ে ড্রাইবারের পিছনের জনকে ফেলে দিল,পাশের জন এসে আদৃতের উপর ঝাপিয়ে পরল।আদৃত তিনজনকে সামলাতে লাগল আর ডা.আশরাফ খানকে বলল ড্রাইবারকে নিয়ে গাড়ির ভিতর ঢুকে চলে যেতে,এদিকে আশরাফ খান কি করবেন কিছু ভেবে পাচ্ছেন না,এভাবে আদৃতকে রেখে যাওয়া ঠিক বলে মনে হচ্ছে না উনার,উনি সাথে সাথে পুলিশকে ফোন করলেন,হঠাৎ একজন আদৃতের অগোচরে আশরাফ খানের উপর হামলা করবে ঠিক তখন তার হাত পাকড়াও করে কেউ একজন,এক ঘুষিতে তাকে নিজের জন্মদাতার পাশ থেকে বেশ দূর করে আঁখি,দীর্ঘ তিন বছর পর নিজের কলিজার টুকরোকে আবারও এই রুপে দেখে নয়ন ভরে এলো আশরাফ খানের,বাবার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে আঁখি বলল।

গাড়িতে ঢুকে গাড়ি লক করো বাবা,এদের তোমার মেয়েই সামলে নিবে।কথাটা বলে ছোটে গেল আঁখি তাদের দিকে,আদৃত তাদের সাথে লড়াইয়ে ব্যস্ত,একজন আদৃতকে ছুরিঘাত করতে আসলে আঁখি তার আশাতে পানি ঢালে,হাত মুড়ে ভেঙে দেয় তার,তখনই আদৃতের নজর যায় আঁখির উপর,আঁখির এই রূপটা আবারও দেখতে পেয়ে আদৃতের মনে প্রশান্তি ছেঁয়ে গেল,বেশ অবাকত্ব নিয়ে তাকিয়ে আছে আঁখির দিকে।এদিকে আঁখি তাকে হুটহাট বলল।

এই যে আমাকে এভাবে দেখাদেখির অনেক টাইম পাবেন বর্তমানে এদের দিকে খেয়াল দেন,আমি না হলে এখনই পরে মা মা বলে চিল্লানী দিতেন।

বরাবরের মতো আঁখির কথায় হাসি আসলেও হাসল না আদৃত,মারপিটে মন দিলো,একসময়কার কারাতে চ্যাম্পিয়ন আদৃত, আর আঁখি যাকে তার বাবা দশ পুরুষের সমতুল্য এক নারী হিসেবে গড়ে তুলেছেন,এমন কোনো দেশ নেই যেখানে তিনি তার একমাত্র মেয়েকে ঘুরতে নিয়ে যান নি,বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের আত্নরক্ষা কৌশল তিনি শিখেয়েছেন মেয়েকে,শারীরিক ও মানসিক কোনো দিক থেকেই মেয়েকে অক্ষম রাখতে নারাজ ছিলেন আশরাফ খান,আঁখির সকল সফলতার পিছনেই রয়েছে তার বাবার অবদান।আজ মেয়েকে নিজের ঢাল স্বরূপ পেয়ে সুখে চোখে জল চলে এসেছে আশরাফ খানের,একাই একটা মেয়ে তিনজনের উপর ভারী পরেছে,অবশেষে তিনজনকে মেরে কুপকাত করল আঁখি আদৃত,গাড়ির ডিঁকিতে দড়ি ছিল তা বের করে তিনজনকেই পাশের গাছের সাথে বেঁধে নিল দু’জন, ড্রাইবার ততোসময়ে টায়ার পাল্টাতে লেগে গেছে,আশরাফ খান এখনও দাঁড়িয়ে আছেন গাড়ির বাহিরে,আঁখি এবার ছোটে গেল বাবার কাছে,বর্তমানে তার ভিতর দ্বিধা দন্দ্ব কাজ করল না আর,বাবাকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা মাথায় চাপল।বাবার হাত পা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে অস্থির হয়ে বলল।

বাবা তুমি ঠিক আছো তো?

তিনটে বছর পর আজ মেয়ের মুখে বাবা ডাক শুনে প্রাণটা জুরিয়ে গেল আশরাফ খানের,তবুও দম্যের কাছে হার মেনে গেলেন উনি,মুখ ফিরিয়ে বললেন।

আমাদের ব্যাক্তিগত কোনো সম্পর্ক নেই ডা.আঁখি,আপনি তা ভালো জানেন,আশা করি আমাদের সম্পর্ক শুধু প্রফেশনালই থাকবে।

বাবার মুখে এমন পর করা কথা মেনে নিতে পারল না আঁখি। ঠোঁট চেঁপে কান্না দমানোর চেষ্টা করল,চোখ তার জ্বলে টইটম্বুর হলো, যা লক্ষ্য করলেন আশরাফ খান,গম্ভীর হয়ে বললেন।

কান্না দূর্বলদের প্রতিক,তাছাড়া আপনি ভালো ফাইটার,ওয়েল ডান,কিপ ইট আপ।

বাবার মুখে নিজের জন্য প্রসংশা বাক্য আঁখির জীবনের সব বিষাদ যেন মুছে দিল নিমিষেই। যে বাবা কখনও আঁখির প্রশংসা করেন নি উক্ত বিষয়ে,যতই দক্ষতা দেখাত সে তার বাবাকে তার বাবা সন্তুষ্ট হতেন না,বলতেন এর থেকেও ভালো করা যায়,যাতে অনেক সময় মন খারাপ হতো আঁখির,আজ অবশেষে তার অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটেছে ভেবেই চোখে জমে থাকা বিষাদময় জল সুখের আশ্রুরূপে ঝরে গেল।আশরাফ খান এবার আদৃতের উদ্দেশ্যে বললেন।

″আদৃত আমি পুলিশকে ফোন করে দিয়েছি উনারা আসছেন ততসময় আমাদের এদের দেখে রাখতে হবে।″

″এদের জন্য আমরা আছি স্যার,আপনি চলে যান,রাত অনেক ঘনিয়েছে।″

″তুমি তো সাথে গাড়িও আনো নি,পুলিশ এসে যাক আমরা নাহয় একসাথেই যাব।″

″তার আর কোনো প্রয়োজন হবে না স্যার।আমি বাড়ি থেকে গাড়ি আনিয়ে নিব,নয়ত আঁখি তো আছেই।″

আদৃতের কথায় অনেকটা ভ্রু উঁচিয়ে তাকাল আঁখি আদৃতের দিকে কিন্তু বেশি সময় না তাকিয়ে থেকে আঁখি বলল।

″তার প্রয়োজন হবে না ডা.আদৃত,আমি একাই এদের দেখে রাখব আপনি চলে যান।″

আঁখির বাবা চাইলেন না মেয়েকে এভাবে নির্জন একটা জায়গায় একা রেখে চলে যেতে কিছু বা*জে লোকের সাথে,তাই আবার বললেন।

″না আমি ঠিক আছি এখানে,একসাথে যাব ডা.আদৃত।″

″স্যার আপনি চলে যান,আমরা দেখে নিব ব্যাপারটা।″

হ্যাঁ বাবা,দুঃখীত স্যার আপনি চলে যান,আমি না হয় উনাকে ড্রপ করে দিব।

আঁখি আদৃতের সাথে বর্তমানে সায় মেলানোর কোনো ধান্দায় ছিল না,কিন্তু এতো রাতে এমন জায়গায় বাবার প্রাণেরও অনিশ্চয়তা মেয়ে চায় নি,তাই আমতা করে কথাগুলো বলে গেল।

না যেতে চাওলেও আঁখি আর আদৃতের জোরাজুরিতে পরে গেলেন আশরাফ খান, মেয়ের সামনে তাকে নিয়ে উনার মনের দূর্বলতা ধরা পরে যাওয়ার ভয়ে যেতে মন মানিয়ে নিলেন।আদৃতকে ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেলেন,যাবার আগে আড়চোখে নিজের সন্তানকে প্রাণভরে একনজর দেখে নিলেন।

আঁখি আদৃত তাকালো একে ওপরের দিকে,চোখে চোখ পরতেই দু’জনই অসস্তিতে পরে চোখ নামিয়ে নিলো তাড়াতাড়ি।

ব্যাথার্ত হৃদয় নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করল আদ্রিশ,আঁখিকে ছাড়লে নিঃস্ব হয়ে পরবে সে,কিন্তু তাকে নিজের করেও রাখবে কেমনে?

বাড়িতে প্রবেশ করতেই রিদিকা এগিয়ে এসে তার ব্যাগটা নিলো,তাকে কক্ষে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বসতে বলে নিজে তার খাবার আনতে ব্যস্ত হলো।

আদ্রিশ কক্ষে এসে ফ্রেস হয়ে নিল,বিছানায় বসতেই রিদিকা খাবার নিয়ে এল তার জন্য।

তার মুখে এক লোকমা ভাত মেখে তুলে দিতে গেলে আদ্রিশ জিজ্ঞেস করল।

″তুমি খেয়েছ রিদিকা?′

″হুম কবেই খেয়ে নিয়েছি,তুমি খেয়ে নাও।″

কথাটা শুনে আদ্রিশের মনে পরল আঁখির কথা।এমন অনেক রাতেই দেরি করে ঘরে ফিরত আদ্রিশ,তবে তা যতই রাত হোক না কেন আদ্রিশ ব্যতীত কখনও খাবার মুখে নিত না আঁখি,আদ্রিশের জন্যই অপেক্ষা করত,সে কি রাগ আর অভীমান করত মধ্যরাতে তার সাথে তার ফুলপরি দেরিতে ঘরে ফিরা নিয়ে,অতঃপর পাল্টা অভিমানে যখন আদ্রিশ না খেয়ে ঘুমোতে যেত তখন আদ্রিশকে টেনে তুলে মুখে জোর করে খাবার তুলে দিত,আদ্রিশও তখন সব অভিমান ভুলে খেয়ে নিত আর নিজেও খাইয়ে দিত তার প্রিয়তমাকে।সে ক্ষণটা কি আদোও আর কখনও ফিরবে তার জীবনে?প্রশ্নটা ভয় ও দুরাশা উভয়ের জানান দিয়ে যাচ্ছে, যাতে রিদিকার হাতে খাওয়ার মনোভাবই ফুরিয়া যায় আদ্রিশের,আঁখির জায়গায় আজ সে রিদিকাকে এভাবে মেনে নিতে পারছে না,কিন্তু কেনোই বা পারবে না!সে তো রিদিকাকেও ভালোবেসে পাশে রাখার চেষ্টা করেছে,আর রিদিকা তো তার পাশে আছেই,তবে কেনো ওকে আঁখির মতো মেনে নিতে পারবে না সে?অনেক চেষ্টা করেও রিদিকার হাতে আর খেতে পারল না আদ্রিশ,তাই এবার বলল।

খাব না রিদিকা,খাবারটা রেখে তুমি চলে যাও,আমার যখন ইচ্ছে হবে খেয়ে নিব।

চলবে……..

অনেকেই প্রশ্ন করেছেন প্রমত্ত অঙ্গনা মানে কি।প্রমত্ত মানে পা*গ*ল বা উন্মাদ,অঙ্গনা মানে নারী,সহজ ভাষায় প্রমত্ত অঙ্গনা মানে পা*গ*ল নারী,বা সাইকো গার্ল/লেডি। আসসালামু আলাইকুম সবাইকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here