এই_মন_তোমারি #পর্ব_১৬ #লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

0
189

#এই_মন_তোমারি
#পর্ব_১৬
#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন
-” চুমু খাবে মেয়ে?”

-” না।”

-” তাহলে এতো মোচড়ামুচড়ি করছো কেনো? দেখছো তো আমি তোমার উপকার করছি। তোমার চুলগুলো আঁচড়ে দিচ্ছি।”

-” আমার সুড়সুড়ি লাগছে সুন্দর ব্যাডা মানুষ। আপনার উপকারের কোনো দরকার নেই আমার। আমি আমার নিজের চুল নিজে আঁচড়ে নিতে পারবো।”

-” সকালের ঘটনা মনে আছে তো তোমার?
তুমি যদি ঠিকভাবে আমাকে আমার কাজ করতে না দাও, তাহলে কিন্তু আমি তোমাকে চুমু খাবো।আর সেটা কাঁধে বা গলায় নয় , সোজা তোমার ঠোঁটে।”

-” সূরা তৎক্ষণাৎ শাফায়াতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, হায় আল্লাহ ! তাহলে আমি কি পোয়াতি হয়ে যাবো?”

-” সূরার এমন বোকা কথা শুনে কাশি উঠে যায় শাফায়াতের।সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, চুমু খেলে কেউ প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় না গাধা।”

-” হু আপনি বলবেন আর আমি বিশ্বাস করবো? মোটেও না। আমি তো সিনেমায় দেখেছি নায়ক জসিম আর নায়িকা শাবানা রাতে চুমু খেতো আর সকালে’ই শাবানা গলগল করে বমি করে ভাসিয়ে দিয়ে ,মাথা ঘুরে ঠাস করে নিচে পড়ে থাকতো। তারপর ডাক্তার এসে বলতো,আপনি মা হতে চলেছেন।”

-” শাফায়াত সূরার লম্বা চুলগুলো হাতে পেঁচিয়ে ধরে বললো, দেখো মেয়ে এমনিতেই আমার মাথা গরম হয়ে আছে। তুমি এসব ফালতু কথা বলে আমার মাথা আরো গরম করে দিও না। তোমার জন্য নাপিতের সামনে মাথা কা’টা গেছে আমার।এখন যদি আর একটা বাজে কথা বলো আমি তোমার লম্বা চুলগুলো কে’টে আর্মি ছাঁট করে দিবো।”

-” আমার চুল কাটবেন না দয়া করে।আমি আপনার সব কথা শুনবো।”

-” এইতো গুড গার্ল। অতঃপর শাফায়াত সূরা কে একটা চেয়ারের উপর বসিয়ে একটা প্যাকেট খুলে উকুননাশক তেল বের করে একটা ছোট বাটিতে ঢেলে নিয়ে সূরার চুলে তেল দিয়ে সুন্দর করে ম্যাসাজ করে দিলো। ব্যাপার টা বেশ ভালো লাগলো সূরার । আবেশে তার চোখ বন্ধ হয়ে এলো।তার বাবার সাথে কাটানো দিনগুলো মনে পড়ে গেল।তার বাবাও ঠিক এইভাবে সূরার মাথায় তেল দিয়ে ম্যাসাজ করে দিতো। পুরোনো কথা মনে পড়তে’ই সূরার চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।সে শাফায়াতের আড়ালে চোখের পানি মুছে ফিসফিস করে বললো, আপনি এতো ভালো কেন পুলিশ?কথাটা কর্ণপাত হলো না শাফায়াতের।সে সূরার চুলে তেল দিয়ে চুল আঁচড়ে দেওয়ার সময় তার চুলে উকুন ভেসে উঠলো। শাফায়াত সূরার মাথা থেকে উকুন তুলে সূরার হাতে দেওয়ার সময় শফিকুল দেওয়ান রুমে প্রবেশ করে। তিনি এই দৃশ্য দেখে বললো,

-” ছিঃ শাফি !এটা তোর মতো একজন পুলিশ অফিসারের কাম্য নয় । তুই এই গাইয়া মেয়ের মাথা থেকে উকুন বেছে দিচ্ছিস। তুই যে আমার ছেলে ভাবতেই আমার লজ্জা লাগছে। মেরুদণ্ডহীন পুরুষ মানুষ তুই। এমনিতেই আমি টেনশনে আছি তোর বিয়ের ব্যাপার টা নিয়ে। লোকজন না জেনে যায় এই ব্যাপারে। কিন্তু তোর তো দেখছি কোনো মাথা ব্যথা নেই। তুই গাইয়া মেয়েটার সাথে এক ঘরে, এক বিছানায় থাকছিস , তার সেবা যত্ন করছিস , এখন তো আবার তার মাথার উকুন ও বেছে দিচ্ছিস। বাহ্ ! এই তুই একজন পুলিশ অফিসার?”

-” আপনি বারবার পুলিশ অফিসার তুলে প্রশ্ন কেন করছেন বাবা? পুলিশ অফিসার আমি বাসার বাইরে। কিন্তু বাসায় আমি একজন সাধারণ মানুষ।আর মানুষ হয়ে অন্য একজন মানুষের সেবা করাও একটা ডিউটির মধ্যে পড়ে।”

-” তুই আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিস শাফি? এই গাইয়া মেয়ের জন্য তুই আমার মুখে মুখে তর্ক করছিস? তুই আর তোর মধ্যে নেই শাফি। আমার কি মনে হয় জানিস? মেয়েটা তোকে কালো যাদু করেছে।”

-” আমি আপনাকে আগেও বলেছি বাবা , আর এখনো বলছি, মেয়েটা আমার দায়িত্ব। আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করছি।আপনার মতো আমি ও তাকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নেই নি ,আর না নিতে পারবো।”

-” দেখ শাফি! তোর বয়স টা আমি ও পার করে এসেছি।কোনটা দায়িত্ব, কোনটা ভালোবাসা সেটা তোর থেকে আমার শিখতে হবে না শাফি?”

-” শফিকুল দেওয়ান এর চিৎকার চেঁচামেচি শুনে নাজমা দেওয়ান কিচেন থেকে হাত মুছতে মুছতে উপরে এসে বললো , কি হয়েছে? চিৎকার চেঁচামেচি করছো কেন? মনে হচ্ছে বাসায় যেনো ডাকাত পড়েছে।”

-” চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ যতোক্ষণ শুনতে পেয়েছো , ততোক্ষণ নিশ্চয় এটাও শুনতে পেয়েছো কেন চিৎকার চেঁচামেচি করছি?”

-” হ্যাঁ শুনতে পেয়েছি দেখেই এসেছি।শাফি ভুল তো কিছু করে নি।শাফি আর যায় হোক তোমার মতো অমানুষ নয়। তুমি কোনোদিন আমাকে বুঝেছো বলো? না কোনদিন আমার কোনো কাজে হেল্প করছো। কোনদিন তো এক গ্লাস পানি ঢেলে ও খাও নি। এমনকি আমার প্রেগন্যান্সির সময় টাতে তোমাকে আমার পাশে পাই নি। অথচ এই সময় টাতে সব মেয়েরা চায় তাদের স্বামী তার পাশে থাকুক।তাকে সময় দিক,তাকে বুঝুক। কিন্তু তুমি মনে করো মেয়েদের কাজে সাহায্য করলে পুরুষের জাত চলে যায়‌।তারা মেরুদণ্ডহীন হয়ে যায়। অথচ স্ত্রীর কাজে সাহায্য করা , তাদের সাথে খুনসুটি তে মেতে থাকা , হাসিঠাট্টা করা সুন্নত। অবশ্য তুমি তো নামাজ কালাম’ই পড়ো না।তোমাকে আর হাদিসের কথা বলে কি লাভ?ম’রা’র তো কোনো ভয় নেই তোমার।থাকলে কি আর একটা পবিত্র সম্পর্ক ভাঙ্গার জন্য সবসময় নিজের ছেলেকে ফোর্স করতে পারতে?”

-” তুমি কিন্তু অনেক বেশি কথা বলছো নাজমা।”

-” তোমাকে বেশি কথা আমি কখনো কোনোদিন ও বলি নি।এই বাড়ি ,ধন দৌলত সব আমার নিজের হ‌ওয়ার পরেও আমি কিন্তু কখনো নিজের বলে দাবি করি নি।যদি বেশিই বলতাম তাহলে তোমার মতো অমানুষের সংসার করতাম না। কিন্তু আমি সেসব কিছুই করি নি।কারণ কি জানো? আমার কাছে টাকা পয়সার থেকে সম্পর্কের মূল্য অনেক বেশি। কিন্তু তোমার কাছে সম্পর্কের কোনো মূল্যে নেই।”

-” নাজমা দেওয়ান এর কথার পিঠে শফিকুল দেওয়ান কোনো কথা না বলে চুপচাপ তার রুমে চলে গেল।তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে নাজমা দেওয়ান ও কিছু না বলে চোখের পানি মুছে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।সে রাতে আর কারো খাওয়া হলো না। অবশ্য নাজমা দেওয়ান ডাইনিং টেবিলে সবার খাবার গুছিয়ে রেখে এসেছিলেন। কিন্তু কেউ’ই খেতে আসে নি। শাফায়াত নিচে ডিনারের জন্য গিয়ে দেখে যেরকম খাবার সেরকম ই রয়েছে।যা দেখে সে নিজেও রুমে চলে এলো।সব কিছুতে কেন জানি তার বিরক্ত লাগছে। শাফায়াত বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বিরক্তি তে এপাশ ওপাশ করতে লাগলো।সে বুঝে উঠতে পারছে না বিরক্তির কারণ।সে নিজের চুল টেনে ধরে বললো, তার মানে আমার সব বিরক্তির কারণ কি ঐ গাইয়া মেয়েটা? উফ্ এই বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়েটা আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। কিছুতেই আমাকে শান্তি দিচ্ছে না। এতো দিন আমার সাথে থেকে আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছে, আর আজ আমার দূরে থেকেও আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। ধ্যাত আমি কেনো ভাবছি ঐ বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়েটার কথা। আমি তো নিজেই চেয়েছি ও আমার থেকে দূরে থাকুক। এজন্য সকালে মেয়েটা কে ভয় দেখিয়েছি। মেয়েটা আমার সাথে নেই, আমার তো খুশি হবার কথা। আমার শান্তি করে ঘুমোনোর কথা। অথচ আমি না পারছি মেয়েটার কথা ভুলতে,আর না পারছি শান্তি করে ঘুমোতে। মনটা বড্ড অশান্ত লাগছে আমার।তাহলে কি বাবার কথায় সত্যি হয়ে গেল। আমার মন কি ঐ বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়েটার হয়ে গেল?”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।।

পরের পর্ব :https://www.facebook.com/100086452137176/posts/275232652035137/?app=fbl

আরো একটা মিষ্টি প্রেমের গল্প :https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=268504499374619&id=100086452137176&mibextid=Nif5oz

আমার গ্ৰুপ : নূনের গল্প সাম্রাজ্য-Nuzaifa Nun ❤️নূনের গল্প সাম্রাজ্য-Nuzaifa Nun ❤️নূনের গল্প সাম্রাজ্য-Nuzaifa Nun ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here