এই_মন_তোমারি #পর্ব_১৭ #লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

0
210

#এই_মন_তোমারি

#পর্ব_১৭

#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-“শাফায়াত বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বিরক্তি তে এপাশ ওপাশ করতে লাগলো।সে বুঝে উঠতে পারছে না বিরক্তির কারণ।সে নিজের চুল টেনে ধরে বললো, তার মানে আমার সব বিরক্তির কারণ কি ঐ গাইয়া মেয়েটা? উফ্ এই বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়েটা আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। কিছুতেই আমাকে শান্তি দিচ্ছে না। এতো দিন আমার সাথে থেকে আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছে, আর আজ আমার দূরে থেকেও আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। ধ্যাত আমি কেনো ভাবছি ঐ বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়েটার কথা। আমি তো নিজেই চেয়েছি ও আমার থেকে দূরে থাকুক। এজন্য সকালে মেয়েটা কে ভয় দেখিয়েছি। মেয়েটা আমার সাথে নেই, আমার তো খুশি হবার কথা। আমার শান্তি করে ঘুমোনোর কথা। অথচ আমি না পারছি মেয়েটার কথা ভুলতে,আর না পারছি শান্তি করে ঘুমোতে। মনটা বড্ড অশান্ত লাগছে আমার।তাহলে কি বাবার কথায় সত্যি হয়ে গেল। আমার মন কি ঐ বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়েটার হয়ে গেল?না ! না । এটা কিছুতেই হতে পারে না। ও গড! আমি কেন ভাবছি মেয়েটার কথা? সে তো আমাকে ছেড়ে দিব্যি ভালো রয়েছে। আমি যে রাতে খাই নি , সে খেয়াল ও নেই তার।হু আবার আমাকে তার স্বামী বলে দাবি করে।শুনেছি বাঙ্গালী মেয়েরা নাকি স্বামী কে অনেক ভালোবাসে , শ্রদ্ধা করে। স্বামী না খেয়ে থাকলে স্ত্রী ও নাকি খায় না। কিন্তু মেয়েটা তো ঠিকই খেয়েছে।আরে আমি না হয় তাকে স্ত্রী হিসেবে মানি না। কিন্তু সে তো আমাকে স্বামী হিসেবে মনে প্রাণে মেনে নিয়েছে তাই না? সে কিভাবে পারলো আমাকে ছেড়ে নিজে খেয়ে নিতে? ধ্যাত আমি আবারো ভাবছি মেয়েটার কথা? আমি আর একবার ও মেয়েটার কথা ভাববো না বলে শাফায়াত বিছানার এপাশ ওপাশ করতে লাগলো। কিন্তু ঘুম যেন তার সাথে আজ লুকোচুরি খেলছে। কিছুতেই তার চোখে ঘুম ধরা দিতে চায়ছে না। শাফায়াত বিছানা থেকে উঠে কিছুক্ষণ বসে থেকে ও নিজেকে শান্ত করতে পারলো না।এক পর্যায়ে সে বিছানা থেকে নেমে গুটিগুটি পায়ে নাজমা দেওয়ান এর রুমের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।সে ভেবেছিলো হয়তো সূরা ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু শাফায়াত দরজার সামনে এসে দেখলো রুমের লাইট এখনো অফ হয় নি।তার আম্মি , সূরা দুজনেই জেগে রয়েছে। নাজমা দেওয়ান এর হাতে খাবারের প্লেট রয়েছে।তার চেহারার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে সে কোনো কিছুর জন্য বিরক্ত হয়ে আছে সূরার উপর। সে বিরক্তি নিয়ে বললো,

-” অনেক রাত হয়েছে।খেয়ে নে মা।সেই সন্ধ্যায় একটু জাও ভাত খেয়েছিস। ক্ষুধা লাগে নি তোর?”

-” লেগেছে। কিন্তু আমি খাবো না মা। আপনি বললেন পুলিশ রাতে খায় নি। পুলিশ না খেলে আমি ও খাবো না। শ্বশুর আব্বা রাগ করে খায় নি বলে আপনি ও খান নি। আবার সুন্দর ব্যাডা মানুষ ও রাগ করে খায় নি,তাহলে আমি কেন খাবো মা?”

-” এবার কিন্তু তোর পিঠে খুন্তির মার পড়বে সূরা। খাওয়ার ব্যাপারে আমি শাফি, নুজাইফা কেও ছাড় দেই না।খাবারে অনিয়ম করলে আচ্ছা করে কান মলে দেই। এখন কিন্তু তোর সাথে ও সেটা করবো, যেটা শাফি , নুজাইফার সাথে করি।”

-” মার খাওয়ার অভ্যাস আছে আমার মা।চাচির সংসারে থাকতে প্রতিনিয়ত মার খেতে হয়েছে।আপনি মারেন মা। আমি সয়ে নিতে পারবো ।”

-” নাজমা দেওয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার চোখ যায় দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা শাফায়াতের দিকে। তিনি শাফায়াত এই সময়ে তার রুমে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, তুই এতো রাতে আমার রুমে?”

-” শাফায়াত কি বলবে বুঝতে না পেরে মাথা চুলকে আমতা আমতা করে বললো, আম্মি আসলে হয়েছে কি?”

-” হ্যাঁ বল কি হয়েছে?”

-” আসলে আম্মি আমার নীল রঙের একটা ফাইল খুঁজে পাচ্ছি না।”

-” তোর ফাইল তোর আলমারিতে থাকে। আমার রুমে কিভাবে আসবে?”ফাইলের নিশ্চয় হাত পা গজিয়ে যায় নি যে তারা হেঁটে হেঁটে আমার রুমে চলে আসবে। আমার রুমে তোর কোনো‌ ফাইল টাইল নেই ।যা ভাগ এখান থেকে।”

-” থাকতেও তো পারে আম্মি।এই যে দস্যি মেয়েটা সারাক্ষণ আমার রুমে ট‌ইট‌ই করে ঘুরে বেড়ায়।হতেও পারে মেয়েটা আমার রুম থেকে ফাইল এনে কোথাও ফেলে দিয়েছে।”

-” শাফায়াতের কথা শুনে সূরা চেঁচিয়ে বললো, সব মিছে কথা মা। আমি কারো কোন ফাইলে হাত দেই নি।আর হাত দিবো কিভাবে মা? আমি তো লুলা হয়ে আছি। পুলিশ শুধু শুধু আমার নামে বদনাম করছে।”

-” শাফায়াত তৎক্ষণাৎ সূরার দিকে তেড়ে এসে বললো, এই মেয়ে তুমি একদম চুপ থাকবে। তুমি যতো নষ্টের গোড়া। তোমার জন্যই সব হয়েছে।”

-” আমি কি করলাম পুলিশ?”

-” শাফায়াত সূরার হাত ধরে বললো , তুমি আমার সাথে রুমে চলো। তুমি যেহেতু ফাইল হারিয়েছো সেহেতু তোমাকে’ই ফাইল খুঁজে দিতে হবে।”

-” নাজমা দেওয়ান তৎক্ষণাৎ শাফায়াতের হাত ছাড়িয়ে বললো, ও কোথাও যাবে না।”

-” কেনো আম্মি?”

-” রাত প্রায় এগারোটা বাজতে চলেছে। তুই খাস নি বলে মেয়েটা এখনো খায় নি , মেডিসিন নেয় নি।তুই রুমে যা‌।আমি সূরা কে ভাত খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে তারপর তোর রুমে গিয়ে ফাইল খুঁজে দিবো।”

-” নাজমা দেওয়ান এর কথা শুনে শাফায়াত নিজেকে নিজেই গালি দিয়ে বললো, তুই শুধু শুধু বাচ্চা মেয়েটাকে ভুল বুঝলি।তোর জন্য মেয়েটা না খেয়ে বসে আছে তার তুই কি না? ছিঃ ছিঃ এটা তোর কাম্য নয় শাফি।”

-” কি হলো যা? তুই ও গিয়ে কিছু খেয়ে নে।রাতে না খেয়ে থাকতে হয় না শাফি।”

-” আমার খেতে ইচ্ছে করছে না আম্মি।”

-” আমি তো সূরার জন্য পাতলা খিচুড়ি আর ডিম করেছি। কিন্তু তুই তো পাতলা খিচুড়ি খাস না।তোর ঝরঝরে খিচুড়ি পছন্দ। তুই বরং নিচে গিয়ে খাবার নিয়ে আয় ।আমি সূরাকে খাইয়ে দিয়ে তোকে ও খাইয়ে দিবো।”

-” একদিন পাতলা খিচুড়ি খেলে কিছু হবে না আম্মি।আমি না হয় আজ পাতলা খিচুড়ি’ই খেলাম।”

-” শাফায়াতের কথায় নাজমা দেওয়ান খুব খুশি হন।তিনি এক লোকমা খাবার সূরার গালে দিচ্ছেন অন্য লোকমা শাফায়াতের গালে। শাফায়াত সূরা দুজনে তৃপ্তি সহকারে খাবার খাচ্ছে এমন সময় নুজাইফা এসে বললো, বাহ্ আম্মি বাহ্ । নিজের ছেলে ছেলের ব‌উ কে খাইয়ে দিচ্ছেন ,আর আমি যে না খেয়ে আছি সেদিকে কারো খেয়াল নেই। আপনার ছেলে ছেলের বউ আপনার আপন হয়ে গেল আম্মি? আমার কথা এভাবে ভুলে গেলেন আম্মি?”

-” শাফায়াত দেখলো নুজাইফা বেশ রেগে আছে। চোখে পানি টলটল করছে। শাফায়াত নুজাইফা কে আরো রাগিয়ে দিতে বললো, তুই কবে আমাদের আপন ছিলি বল তো? তুই সত্যিই আমাদের নিজেদের কেউ না।তোকে তো আমরা ব্রীজের তলা থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম।”

-” নুজাইফা দৌড়ে এসে শাফায়াতের বুকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মেরে বললো, তুমি আমাদের পরিবারের কেউ না।তোমাকে তো আমরা বেদের মেয়েকে চাল দেওয়ার বিনিময়ে কিনে এনেছিলেন।”

-” শাফায়াত নুজাইফা কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো, তাহলে তো আমি তোর ছোট তাই না।”

-” হ্যাঁ আজ থেকে আমাকে আপু বলে ডাকবে।”

-” যথা আজ্ঞা মহারানী ।”

-” নাজমা দেওয়ান এর তার ছেলেমেয়েদের খুনশুটি দেখতে বড্ড ভালো লাগছে। নাজমা দেওয়ান তিন জনের মুখেই খাবার তুলে দিচ্ছেন। তিনি শাফায়াত কে পাতলা খিচুড়ি তৃপ্তি সহকারে খেতে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন।যে ছেলেটা পাতলা খিচুড়ি দেখলে নাক ছিটকায় সে আজ পাতলা খিচুড়ি তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে ব্যাপার টা বেশ ভালো লাগে নাজমা দেওয়ান এর ।তিনি মনে মনে বললেন , আমি জানি শাফি সূরা একটু একটু করে তোর মনের মালকিন হয়ে যাচ্ছে।সূরার শূন্যতা তুই উপলব্ধি করতে পেরেছিস। আর তাই তো ফাইলের বাহানায় সূরা কে নিজের কাছে নিয়ে যেতে এসেছিস। কিন্তু আমি সূরা কে যেতে দিবো না। তুই আগে সূরা কে পুরোপুরি উপলব্ধি কর।সূরার মনটা আগে তোর হোক। তুই যেদিন পুরোপুরি বুঝতে পারবি সূরার মন টা যেনো সূরার নয়, মনটা তোরি , সেদিন আমি নিজে সূরা কে তোর হাতে তুলে দিবো।।

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

** আরো একটা মিষ্টি প্রেমের গল্প

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=272024625689273&id=100086452137176&mibextid=Nif5oz

আমার গ্ৰুপ : নূনের গল্প সাম্রাজ্য-Nuzaifa Nun ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here