#মৃগতৃষ্ণা
#পর্ব:০৯
রফিক এখনো রাজবাড়ী ফেরেনি রাত ঘনিয়ে এলো। ওরা সবাই এবার ভাগ হয়ে গ্রামে খুজতে লাগলো রফিককে। কিন্তু না কোথাও রফিকের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। হেমন্তির হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে দুশ্চিন্তায়, সিরাজের হাত শক্ত করে ধরে আছে করুন চোখে চেয়ে আছে আর বলছে রফিক কে পাবো তো সিরাজ?
সিরাজের চোখে মুখেও দুশ্চিন্তার ছাপ সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।তবে সেটা ও বুঝতে না দিয়ে বললো আরে এত চিন্তা করার কি আছে? ও কি ছোট বাচ্চা নাকি যে হারিয়ে যাবে হয়তো কোথাও গিয়েছে আবার ফিরে আসবে তুই শান্ত হ এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
দিগন্ত আর সোফিয়া খুজছে গ্রামের উল্টো দিকে।তবে কেউ কারো সাথে তেমন কথা বলছে না নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে ওদের মাঝে। সোফিয়া এবার বলে উঠলো দিগন্ত কি হইয়াছে তোমার? আমার সাথে কথা বলিবে না?
দিগন্ত মুখে একটা চাপা হাসি নিয়ে বলল কেন কথা বলবো না আপনার সাথে মিস.সোফিয়া? আমার আসলে রফিকের জন্য বড্ড দুশ্চিন্তা হচ্ছে।কোথায় যে গেলো কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা। আমি যখন কক্ষে গেলাম গিয়ে দেখলাম ও কি যেন ভাবছে, কোনো বিষয় নিয়ে হয়তোবা দুশ্চিন্তায় ছিলো।কিন্তু তখন আমারও মনটা খারাপ ছিলো তাই নিজেকে সামলাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। ওর চিন্তা মাথাতেও আসেনি আমার।আমি ওকে তখন যদি জিজ্ঞেস করতাম কিছু তো বলতো কিন্তু নাহ তেমনটা আমি করিনি।
সোফিয়া বললো তুমি চিন্তা করোনা দিগন্ত দেখিবে ঠিক রফিককে খুজিয়া পাইবো আমরা।
– আপনার কথাই যেন সত্যি হয় মিস সোফিয়া।
রাতের অনেকটা সময় অতিবাহিত হলেও রফিককে পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রামে এত রাতে মেয়েদের বাড়ীর বাইরে থাকাটা লোকেরা পছন্দ করে না।তাই সিরাজ আর দিগন্ত গ্রামের মধ্যে আরও কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে তারপর বাড়ী যাবে আর সোফিয়া ও হেমন্তিকে রাজবাড়ী পাঠিয়ে দিল।
হেমন্তি ভেবেই চলেছে রফিকের কথা, সুলায়মান এখনো বাড়িতে ফেরেনি তাই তার কাছে কিছু বলাও যাচ্ছে না। রাতও অনেক হয়েছে। হেমন্তি আর সহ্য করতে পারছেনা, ও দৌড়ে জুলেখার কক্ষের সামনে গেলো হাঁপাতে হাঁপাতে দরজায় টোকা দিলো। ভেতরে থাকা জুলেখা চমকালো এমন সময় তো কেউ কক্ষে আসেনা সুলায়মান ছাড়া কিন্তু কে এসেছে জিজ্ঞেস করতেই ওপাশ থেকে কাঁপা কাঁপা কন্ঠের জবাব এলো আমি, আমি হেমন্তি।
জুলেখা হেমন্তিকে ভেতরে আসার অনুমতি দিবে কিনা বুঝতে পারছেনা কারন সুলায়মানেরও এমন সময় আসার কথা, যদি কোনোভাবে ওরা মুখোমুখি হয়ে যায় তবে বিপদে পড়তে পারে কিন্তু আবার এও ভাবলো সুলায়মান তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন লোক। কারো উপস্থিতি ঠিক সে আন্দাজ করতে পারবে, কোনোমতেই সে ধরা দেবে না।
জুলেখার মুখ থেকে ভেতরে আসুন বাক্যটা বের হতে না হতেই হেমন্তি কক্ষের ভেতরে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল। অস্থির হয়ে এলোমেলো পা ফেলে জুলেখার পালঙ্কের সামনে এসে দাড়িয়ে বললো বেগম জুলেখা মি.সুলায়মান বাড়ীতে প্রবেশ করেই তো আপনার কাছেই প্রথমে আসে তাই উনি এলে বলবেন অতীব জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে তার সাথে। দয়া করে উনি এলেই মেহমানশালায় পাঠিয়ে দিবেন।
জুলেখা হেমন্তির অস্থিরতা দেখে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে??
হেমন্তি উত্তর দিল রফিককে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।
– হয়তো গ্রামে ঘুরতে বেড়িয়েছেন উনি।
– পুরো গ্রাম তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি রফিককে।কিন্তু কোথাও পায়নি।এখনো খুঁজছে সিরাজ আর দিগন্ত।
– ওহ। এমনও তো হতে পারে যে উনি হয়তো এখান থেকে চলে গেছে বাড়িতে।
– না না বেগম জুলেখা। রফিক এমন ছেলে না যে কাণ্ডজ্ঞানহীনের মতো কাউকে কিছু না বলে বাড়িতে ফিরে যাবে। তাছাড়া ওর ব্যাগ ও কক্ষেই রয়েছে।
– ঠিকআছে আমি জনাবকে না হয় পাঠাবো।তবে আপনারা শান্ত হোন। রফিকের ঠিক কোনো না কোনো খোঁজ পাওয়া যাবে।
হেমন্তি এবার চলে যেতে নিলে জুলেখা বলে আপনি কি রফিককে অনেক ভালোবাসেন?
হেমন্তি থমকে দাঁড়ালো, বেগম জুলেখা কি বলছে এসব? মনে মনে বলল।
– হঠাৎ এই প্রশ্ন যে?
– না এমনি করলাম, রফিক নিখোঁজ হওয়ায় আপনার চোখ মুখে চিন্তা ও বেদনার ছাপ। চাহনিও করুন, ভালোবাসা থাকলেই কেবল এমন হয়।তাই বললাম আর কি!
-হ্যা ভালোবাসি।শুধু আমি নই আমরা সবাই ওকে ভালোবাসি। রফিক আমাদের বন্ধু।
এই বলেই হেমন্তি সেখান থেকে চলে এলো মেহমানশালায়।
সিরাজ আর দিগন্তের আসার কোনো নাম নেই রাতও গভীর হচ্ছে।
হেমন্তি আর অপেক্ষা করতে পারছেনা, আবার দৌড়ে চলে এলো রাজবাড়ীর সদর দরজায়। কিছুক্ষণ সেখানেই বসে রইলো হেমন্তি। একটু পরেই আগমন ঘটলো সুলায়মানের। সুলায়মানকে দেখেই হেমন্তি বলতে শুরু করলো রফিকের কথা, অনেক এলোমেলো শব্দ ঠিক করে গুছিয়ে সবটা বলে উঠতে পারছেনা।সোফিয়া এসে সুলায়মানকে বুঝিয়ে সবটা বললো।
হেমন্তি যেন তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বসে আছে মাথায় শুধু ঘুরছে খারাপ কিছু হলো না তো ওর সাথে।
সুলায়মান তার প্রহরী দের গ্রামের মধ্যে খুঁজতে পাঠালেন।ওদেরকে আস্বস্ত করলেন যদি রফিক এখানেই থাকে তবে ঠিক তাকে খুজে বের করা হবে।
সিরাজ -দিগন্ত রাজবাড়ী ফিরে এলো খালি হাতে, রফিকের কোনো খোঁজ পাওয়া গেলোনা। প্রহরী রাও জানালো তারা পুরো গ্রাম খুজেও রফিককে পায়নি।
এখন মধ্যরাত ওরা সবাই একই কক্ষে বসে আছে। দুশ্চিন্তায় দু চোখের পাতা কেউ এক করতে পারছে না।
হেমন্তির কপালের রগ দপদপ করছে, প্রচন্ড মাথাব্যাথায় ছটফট করছে মেয়েটা। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।
সিরাজ হেমন্তির মাথাব্যথা করছে বুঝতে পেরে কপালের দুইদিকে হাত দিয়ে মালিশ করে দিচ্ছে খুব যত্ন করে সেদিকে হেমন্তির কোনো খেয়াল নেই সে আনমনে ভেবেই চলেছে।তবে এতে অনেক আরাম পাচ্ছে মেয়েটা কখন যে ঘুমের ঘোরে তলিয়ে গেলো বুঝতেই পারেনি। দিগন্ত সোফিয়াও বসে বসে ঘুমোচ্ছে শুধু জেগে আছে সিরাজ।
সিরাজের কেন যানি এই সবকিছুর পেছনে রাজবাড়ীর প্রধান সুলায়মানের উপর সন্দেহ হচ্ছে কারন রফিক নিখোঁজ হওয়ায় আগ মূহুর্ত পর্যন্ত রাজবাড়ীর কাউকে সন্দেহ করছিলো বাচ্চা চুরির জন্য।
কাকডাকা ভোরে হেমন্তি হঠ্যাৎ চিৎকার করে উঠে, ওর চিৎকারে দিগন্ত ও সোফিয়াও জেগে গেলো। সিরাজ জিজ্ঞেস করতে না করতেই হেমন্তি হুট করে সিরাজের বুকে আশ্রয় নিলো কি যেন স্বপ্নে দেখেছে সে তাই ভয়ে কুকড়ে আছে।সিরাজ তার দুহাত দিয়ে হেমন্তিকে ছাড়িয়ে রাগী কন্ঠ নিয়ে বললো কি হয়েছে হেমন্তি তুই এমন বাচ্চাদের মতো করছিস কেনো বলতো? কি হয়েছে টা কি তোর?
হেমন্তি ভাঙা ভাঙা গলায় বলে উঠল আমি স্বপ্নে দেখলাম রফিক রফিক আর নেই আর আমি মি., মি.সুলায়মানের পায়ে পরে বলছিইই ও ওর লাশটা অন্তত আমাদের নিয়ে যেতে দিন খুব খুব করে মিনতি করছিলাম। এইটুকু বলেই হাঁপিয়ে গেলো হেমন্তি। সিরাজ হেমন্তির গালে তার দুহাত দিয়ে তার দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে বললো তুই যা দেখেছিস সেটা একটা দুঃস্বপ্ন বুঝলি আর কিচ্ছু নাহ।এমনটা হবেই না তুই দেখে নিস।
হেমন্তি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো সি সিরাজ ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয় আর আ আমিতো স্বপ্নটা ভোরেই দেখলাম।
– ধুর পাগলি। সব তোর মনের ভুল। যদি কুসংস্কারই মানবি তবে বিদ্যা অর্জন করার প্রয়োজন কি ছিলো বলতো?
সবসময় এই কথাটা হেমন্তি সিরাজকে বলতো আর আজ সেটা হেমন্তিকেই শুনতে হচ্ছে।
সবার মধ্যেই একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে রফিক নিখোঁজ হওয়ায় পর থেকে। রাজবাড়ীর মেহমানশালা আনন্দের আভা রূপ নিয়েছে নিস্তব্ধতায়।
রাজবাড়ীর ঠিকানায় একটা চিঠি এলো রফিকের নামে। যেহেতু রফিক নেই তাই তার চিঠি সিরাজ নিয়ে নিলো। চিঠিটা এসেছে৷ রফিকের গ্রাম থেকে হয়তো ওর বাবা-মা পাঠিয়েছেন। সিরাজ চিঠিটা এনে রফিকের পালঙ্কের উপর রেখে দিলো। হেমন্তি বললো চিঠটা খুলতে কিন্তু সিরাজ বললো কারো ব্যাক্তিগত জিনিসে হাত দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু হেমন্তি বারন শুনলো না চিঠিটা খুলে চোখ বুলাতে লাগলো –
” রফিক আমি তোমার আম্মা বলছি, কিছুদিন হলো আমার মনটা কেমন যেন কু গাইছে জানিনা চিঠিটা তোমার কাছে কবে পৌছাবে কিন্তু যেদিনই দেখবে সাথে সাথে বাড়ি ফিরে আসবে। আমার মন যে মানছে না বাবা। তোমার বন্ধুদেরও বলে দিও আমি ওদেরকেও চলে আসতে বলেছি। তুমি সাবধানে থেকো। আমি কোনোদিন তোমাকে কোনোকিছুতে না বলিনি আর বলবোও না তবে এবার তোমার ভ্রমণ আমার হৃদয়ে ব্যকুলতার সৃষ্টি করেছে।এবার তুমি বাড়ি ফিরলেই আমি হেমন্তির পিতা-মাতার সঙ্গে তোমাদের বিবাহের আলোচনা সেরে নিবো। আমি চিঠিতে আর তেমন কিছু বলছি না তবে তুমি ফিরে এসো সাবধানে। আল্লাহ ভালো রাখুক তোমাদের।
ইতি তোমার প্রানপ্রিয়
আম্মা।”
চিঠি লেখার সময় অনেক অস্থিরতা নিয়ে লিখেছেন উনি তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অনেক ব্যকুলতা নিয়ে তিনি লিখেছেন। সন্তানের কিছু হলে মায়েরা তা আগেই আন্দাজ করতে পারে। হেমন্তির চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে ঠোঁট দুটো কাঁপছে ভীষণ রকম। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। মনে মনে ভাবতে থাকে তবে কি সেদিন রফিক মজা করেনি বরং সত্যি সত্যিই বলেছিলো যে সে তাকে ভালোবাসে।হয়তো মায়ের কাছে বলেছিলো তার মনের কথা। রফিকের কিছু হয়ে গেলে কি জবাব দেবে ওর আম্মার কাছে।
সিরাজ এবার হেমন্তির হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে পড়া শুরু করলো, কিছুক্ষণের জন্য সিরাজও থমকে গেলো।কি জবাব দেবে ওর আম্মার কাছে।
পার হয়ে গেলো আরও দুইদিন।এখনো রফিকের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।ওরা সবাই সুলায়মানকে অনেক করে বলছে যাতে রফিক কে খুজে আনার কোনো ব্যবস্থা করে। সুলায়মানও আস্বস্ত করে সে তার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবে বলে।যে করেই হোক রফিককে খুঁজে এনে দেবে।
বিকেলে সোফিয়া আর দিগন্ত সরোবরে পদ্মপুকুরে গেলো।দুজনে সিড়ি ভেঙে নিচে নামলো, নিচের সিঁড়িতে পানি উঠেছে, পা ভিজিয়ে রেখেছে সোফিয়া।
দুশ্চিন্তা করতে করতেও সবাই ক্লান্ত। হেমন্তি মনমরা হয়ে শুয়ে আছে আর সিরাজ কি যেন ভেবে চলেছে আনমনে। সোফিয়া একাই আসতে চেয়েছিলো কিন্তু দিগন্ত আসতে দেয়নি কারন বিপদ কোথায় কিভাবে ওৎ পেতে আছে তা জানা নেই।
আজকে যেন পদ্ম গুলোও মনমরা হয়ে আছে, ফুলের মধ্যে অন্যদিনের মতো সৌন্দর্য দেখা যাচ্ছে না।
অনেকক্ষণ পা চুবিয়ে রেখে সোফিয়া বললো চলো দিগন্ত মেহমানশালায় ফিরিয়া যাই।কিছুতেই মনকে শান্ত করিতে পারিতেছি না মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়েই যাইতেছে।পদ্মপুকুরে আসিয়াও মনকে স্থির রাখিতে পারিতেছি না। পদ্মগুলোও যেন আমাদের দুশ্চিন্তার ভার লইয়াছে মনে হইতেছে।
সোফিয়া এবার উঠে চলে যেতেই নিবে ঠিক তখনই খেয়াল করে পানিতে কারো মাথার চুল দেখা যাচ্ছে। প্রথমে দেখে বোঝা না গেলেও কিছুক্ষণ ভালো করে তাকিয়ে সোফিয়া দেখলো কারো মাথার চুল এটা। আচমকাই জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে নিচের সিঁড়ি থেকে উপরের সিঁড়িতে উঠে গেলো লাফ দিয়ে। দিগন্ত কিছু বুঝে ওঠার আগেই সিরাজ আর হেমন্তি দৌড়ে রাজবাড়ীর পদ্মপুকুরে চলে এলো।
দিগন্ত ভেবছে হয়তো বর্ষাকাল তাই সাপ দেখে ভয় পেয়েছে। তাই ও সোফিয়াকে শান্ত করতে বলে উঠলো আরেএএএ আপনি ভয় পাবেন না আমি আছি তো সাপ কিছু করবে না। চলুন উঠে আসুন।
সোফিয়ার দৃষ্টি পুকুরের টলটলে পানির ওপরে। বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সোফিয়া। সিরাজ আর হেমন্তি এসে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?
সোফিয়া তার হাতের আঙুল দিয়ে পদ্মফুলের মাঝে ভেসে থাকা চুলের দিকে তাক করে দেখালো।
হেমন্তি আর সিরাজ নিচে নেমে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো শুধু চুল বোঝা যাচ্ছে আর কিচ্ছু দেখা যাচ্ছেনা।তবে চুলগুলো যেহেতু ছোট ছোট তাই বলাই যায় এটা কোনো পুরুষ মানুষ। হেমন্তির কলিজা কেঁপে উঠলো। সিরাজ যেহেতু ভালো সাঁতার জানে তাই সে দিক পাঁচ না ভেবেই লাফ দিয়ে নেমে পড়লো পানিতে। চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে টেনে তুলে নিয়ে এলো নিচের সিড়িতে। জামা- কাপড় দেখে বোঝাই যাচ্ছে এটা রফিক।
আকাশে মেঘ জমেছে গুরুম গুরুম আওয়াজে চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে দিনের বেলাতেই। বাজ ও পড়বে বলে মনে হয়।
সিরাজ উল্টো হয়ে থাকা মানুষটাকে ঘোরালো নিশ্চিত হওয়ার জন্য। হ্যা এই মানুষটা আর কেউ না বরং রফিক, হেমন্তি দাড়িয়ে থাকা থেকে বসে পড়লো ধপ করে। সিরাজ আর দিগন্ত রফিকের লাশটাকে জরিয়ে ধরলো খুব শক্ত করে। রফিক বন্ধু কি হইছে তোওওর? কথা বলছিস না কেন বলতো।ওঠ ওঠ না রেএএএ
শ্রাবনের ধারার মতো অশ্রু ঝড়ে পড়ছে সবার চোখ থেকে। হেমন্তির কানে বাজতে থাকে রফিকের আম্মার চিঠিতে লেখা কথাগুলো। যেদিন চিঠি পাবি সেদিনই ফিরে আসবি।
রফিকের এমন মৃত্যু মেনে নেওয়াটা হয়তো খুব কষ্টের তবুও মেনে নিতে হবে। চেহারা ও সারা শরীর নীল বর্ণ ধারন করেছে রফিকের।কিন্তু কথা হলো রফিক সাঁতার কাটতে পারে তার এভাবে পানিতে ডুবে মরা আরও বিস্ময় রহস্যময়।
একটু পরেই বৃষ্টি নেমে গেলো, রফিকের লাশ সিরাজ আর দিগন্ত ধরাধরি করে রাজবাড়ীর ভেতরে এনে রাখলো। প্রতিদিনের ন্যায় আজও সুলায়মান রাজবাড়ীতে নেই। সে কোথায় গেছে জানা নেই তবুও ওরা সবাই অপেক্ষা করতে থাকে সুলায়মানের। কারন আজকের মধ্যে রফিককে নিয়ে রওনা না দিলে লাশ হয়তো ওদের গ্রামে নিতে নিতে পঁচে যাবে।
হেমন্তি এখন আর কাঁদছে না। নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে রফিকের দিকে একদম চেনা যাচ্ছেনা মানুষটাকে। ওদের বন্ধুত্বের সময়কালে কোনোদিন এতো কথা কাটাকাটি হয়নি এবারের মতো।রফিক হয়তো ওর শেষ সময়টা এভবে না কাটালেও পারতো।
বিধাতা ওর আয়ু এত কম দিয়েছেন! কিন্তু মায়ায় জরিয়েছেন অনেক বেশি।
লাশ দেখতে গ্রামের সবাই ভীড় জমিয়েছে। আফসোস করছে অনেকেই, কেউ কেউ বলছে এই সরোবরের অনেক কাহিনি আছে দেখতে যতটা সুন্দর এর ভয়বহতা তার চেয়েও ভয়ংকর।
হেমন্তি যন্ত্রমানবের মতো বসে আছে, চুলগুলো হাওয়ায় উড়ছে। হেমন্তির মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এলো “সুন্দরের আরেক নাম ভয়ংকর ” যে জিনিস যতটা সুন্দর সে জিনিস ততটাই ভয়ানক।
একজন বৃদ্ধা বলে উঠল হ এই পদ্মপুকুরে তো ভয়ংকর কোনো আত্মার বাস। জনাব সুলায়মানের চাচারেও তো চুবায় মারছিলো এই পদ্মপুকুরে। তিনদিন পর হের লাশ পাওন গেছে তারপর থেকা কেউ তেমন রাজবাড়ীর পদ্মপুকুরে আসেনা।
চলবে,,,,
#লেখা: মুন্নি ইসলাম
[ গল্পটি ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করে পাশে থাকবেন। চাইলেও এক দিনে দুইটা পর্ব দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। পড়তে বেশিক্ষণ সময় লাগেনা তবে লিখতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। তবে আমি চেষ্টা করবো যত তারাতারি গল্প দেওয়া যায় সময় নিয়ে না লিখলে বানান অনেক ভুল হয়।ধন্যবাদ সবাইকে]