মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤ #পর্বসংখ্যা_৩১. #ফাবিয়াহ্_মমো .

0
115

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#পর্বসংখ্যা_৩১.
#ফাবিয়াহ্_মমো .

বন্দুকটার দিকে আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহনূর। চোখের সামনে এমন অস্ত্র দেখে হতভম্ব হয়ে আছে সে। নীতির মুখ থেকে ওমন বিবরণ শুনে মনের মধ্যে তীব্র ভয় কাজ করছে। যে মাহতিমকে এতোদিন দেখে এসেছে, সেই মাহতিম কিনা বন্দুক চালাতে দক্ষ! মেহনূর কোনোভাবেই বন্দুকটার সাথে মাহতিমকে মেলাতে পারছেনা। যতোবার ভাবছে মাহতিম একজন প্রোফেশনাল শ্যুটার, ততবারই চোখের সামনে কঠিন মূর্তির চেহারা ভাসছে। সেই কঠিন মূর্তির চেহারার সাথে কোনোভাবেই মাহতিমের হাসিখুশী মুখটা মানানসই না। নীতি কোনোরকমে নিজের হাসি আঁটকে আস্তে-আস্তে রুম থেকে চলে গেলো। মেহনূরকে একটুও বুঝতে না দিয়ে রুম থেকে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেলো। হতবাক মেহনূর তখনো সেই বন্দুকটার দিকে চিন্তার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, মাহতিমকে নিয়ে যতো কল্পনা-জল্পনা ছিলো সবকিছু গুলিয়ে ফেলছে। মেহনূর কৌতুহলের বশে বন্দুকটার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, দেয়ালে সেঁটে রাখা বন্দুকটার উপর আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করে। ওমনেই সে টের পায়, শরীরের উপর দিয়ে শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে, অদ্ভুত এক শিরশিরে ভাব সমস্ত শরীরে ভর করেছে। এটা যদি সাধারণ বন্দুক হতো, তবে অশান্ত মনকে হাবিজাবি বুঝিয়ে শান্ত করা যেতো। কিন্তু না, এটা মোটেই সাধারণ বন্দুকের কাতারে পরেনা, যেখানে পুরো বন্দুকটা দামী মেটাল দিয়ে তৈরি করা, সেখানে নানা প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও অশান্ত মনকে উলটাসিধা বুঝানো যায় না। মেহনূর থম মারা ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো, কালো রঙের বন্দুক থেকে ধীরে-ধীরে হাত নামিয়ে ফেললো। বুকভর্তি লম্বা নিশ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করার চিন্তা করলো। চোখদুটো বন্ধ করে ধীরেসুস্থে লম্বা শ্বাসটা টেনে নিচ্ছিলো মেহনূর, কিন্তু আকস্মিকভাবে যা হলো, তাতে প্রচণ্ড চমকে গিয়ে চোখ খুলে তাকালো মেহনূর। চোখের কোটর বিশাল বড় করে তৎক্ষণাৎ মাথা নিচু করে পেটের দিকে তাকালো। গাঢ় বেগুনি রঙের হাতাটা কনুইয়ের উপর ভাঁজযুক্ত থাকার জন্য বলিষ্ঠ হাতদুটো দেখা যাচ্ছে। সেই পেশিবহুল হাতদুটো পেছন থেকে আষ্টেপৃষ্টে ধরে রেখেছে মেহনূরকে, বাঁহাতের উপর বড় ডায়ালে ঘড়িটা ষ্পষ্ট দেখতে পেলো মেহনূর। ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকতেই পেটের উপর থেকে একটা হাত সরে গেলো। পেছন থেকে মাহতিমের উপস্থিতি পেয়ে নির্বাক হয়ে আছে মেহনূর, এই মূহুর্তে একটা কথাও মুখ ভেদ করে আসছেনা। মাহতিম সুকৌশলে মেহনূরের কাধ থেকে কেশগুচ্ছ সরিয়ে দিলো, ডান কাধটা আয়ত্ত করার জন্য চুলগুলো বাঁ-কাধের দিকে ঠেলে দিলো। উন্মুক্ত ডানকাধের দিকে চোখ বন্ধ করে থুতনি রেখে দিলো মাহতিম, আবারও হাতদুটো কোমরের কাছে এনে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো মেহনূরকে। এদিকে মাহতিমের এমন আকস্মিক কাজের জন্য মেহনূরের অবস্থা কাহিল হয়ে গেছে, গলায় যে ছাপ বসিয়ে দিয়েছে সেটাই এখনো মিটেনি। এখন যদি কিছু করে ফেলে লজ্জায় আর টেকা যাবে না। মেহনূর চুপ মেরে কাঠ হয়ে থাকলে মাহতিম তখন শান্ত কন্ঠে বললো,

– মাকে অনেক বুঝালাম মেহনূর, কিন্তু সে রাজি হলো না। তোমাকে আঠারোর আগে ছোঁবো না জেনেও মা তোমাকে আলাদা রাখতে চাচ্ছে। ভেবেছিলাম হাতে থাকা এই দুদিন তোমাকে আগলে-আগলে রাখবো। কিন্তু এবারের জন্য সম্ভব হচ্ছে না, আমি বোধহয় ছয় থেকে সাত মাসের জন্য ফিল্ডে থাকবো। হতে পারে আরো দেরিতে আসতে পারি। তোমাকে একা-একা সবকিছু সামলাতে হবে মেহনূর, আমাদের সংসার সাজানোর দায়িত্ব সম্পূর্ণই তোমার।

মাহতিমের কথাগুলো শুনতে-শুনতে স্বাভাবিক হচ্ছিলো মেহনূর। মনের মধ্যে যে সংকোচগুলো মাথানাড়া দিয়ে উঠেছিলো, সেগুলো ধীরে-ধীরে কমতে লাগলো ওর। অনেকটা ধাতস্ত সুরে মাহতিমের উদ্দেশ্যে ছোট্ট একটা প্রশ্ন করলো,
– কবে আসবেন?

অত্যাশিত কিছু শোনার মতো চোখ খুলে তাকালো মাহতিম। সাথে-সাথে পেটের উপর থেকে হাতজোড়া সরিয়ে ফেললো। মেহনূরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তৎক্ষণাৎ শক্ত করে ওর দুকাধ ধরলো। আশ্চর্য দৃষ্টিতে হাসি দিয়ে বললো,
– আমি জলদি ফিরলে তুমি খুশী?

মাহতিমের উৎসুক চাহনির মাঝে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো মেহনূর। প্রশ্নের জন্য একদম মুখ খুললো না সে। মাহতিম কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে শেষমেশ কাধ থেকে হাত সরিয়ে ফেলে। মেহনূরের মুখটা দুহাতের মাঝে আবদ্ধ করে মুখটা ধীরে-ধীরে উঁচু করে তোলে। মেহনূরের উজবুক চাহনির মাঝে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকতেই স্বর নামালো মাহতিম, ঠোঁটে প্রাণখোলা হাসি ফুটিয়ে নম্র সুরে বললো সে,
– জলদি ফিরবো মেহনূর আফরিন। হাতে প্রচুর সময় নিয়ে আসবো। আমাকে যেভাবে পাগল বানিয়ে দিচ্ছো, সেটা শোধ তুলতে হবেনা?

মেহনূর এমন কথার প্রেক্ষিতে লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেললো। লোকটা এতোই খারাপ, এতোই অসভ্য, একটা সভ্য কথাকে ইচ্ছে করে অসভ্য বানিয়ে ছাড়লো।

.
মাহতিমের হাতে আর একদিন মাত্র সময় আছে। এবার যেভাবে ছুটি কাটালো, সেভাবে আগে কখনো কাটিয়েছে কিনা সন্দেহ। প্রতিবার চারদিনের মতো সময় নিয়ে বাড়ি ফিরে, সেই চারদিন বাড়ির বাইরে কাটিয়ে পুনরায় ফিল্ডে চলে যায়। এবার যেহেতু বেশিদিন কাটিয়েছে, সেক্ষেত্রে আগামী ছয়মাস পযর্ন্ত ছুটি আবদার করা যাবে না। মাহতিম পড়নের পোশাক পালটে হাত-মুখ ধুয়ে বিছানায় এসে বসলো। বিছানার মধ্যখান থেকে ফোন তুলে ফ্লাইটের জন্য টিকিট করছিলো। টিকিটের জন্য ওয়েবসাইটে ঢুকতেই দরজা খুলে চোরের মতো উঁকি মারলো তৌফ। মাহতিম সেদিকে একপলক তাকালো ঠিকই, কিন্তু বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করলো না। চোখ যেভাবে চোখ তুলেছিলো, ঠিক সেভাবে চোখ নামিয়ে পুনরায় ফোন দেখতে লাগলো। তৌফ ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিলেও ফোনের প্রতি মনোযোগ দেখে কিছুটা খটকা লাগলো। দরজাটা চাপাতে-চাপাতে কৌতুহল সুরে বললো,

– ও বন্ধু? এ্যানি সমস্যা? ইউ নিড হেল্প? তোমার মুরগী তো দেখি ছাদের রুমে শিফট হইছে।

মাহতিম সেদিকে তাকালো না, উত্তর পযর্ন্ত দিলো না। তৌফের কথা শুনে মন চাচ্ছে, কষিয়ে এক চড় লাগাতে! কিন্তু সেটা দমিয়ে রেখে শান্তভাবে বসে রইলো মাহতিম। তৌফ হেলেদুলে হেঁটে এসে মাহতিমের পাশে এসে বসলো। মাহতিম কি করছে সেদিকে দৃষ্টি ছুড়তেই কপাল কুঁচকে ফেললো। একবার মোবাইলের দিকে তাকালো, আরেকবার মাহতিমের দিকে তাকালো তৌফ। চোখের সামনে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপার দেখে অনেকটা চিল্লিয়ে উঠলো তখন,
– দোস্ত, তুই মেহনূরের কথা চিন্তা করলি না? কনফার্ম দিলি ক্যান? কি করলি দোস্ত এটা?

তৌফের চেঁচানো সুর শুনে সশব্দে নিশ্বাস ছাড়লো মাহতিম। ফোনটা অফ করে চুপ করে বসে রইলো সে। তৌফ তখন নির্বিকার ভঙ্গিতে মাহতিমের পানে তাকিয়ে আছে, কি বললে ব্যাপারটা অনুকূলে ফিরবে সে সম্পর্কে কিচ্ছু জানা নেই ওর। মাহতিমকে চুপচাপ দেখে তৌফ যেনো শান্ত হলো। জোরে একটা নিশ্বাস ছেড়ে মাহতিমের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো। বন্ধ ফোনটা বিছানায় রেখে স্বাভাবিক সুরে বললো,
– মেহনূর ফ্রি হয়নি, ঠিক না?

প্রশ্নটার শব্দতরঙ্গ স্বল্প হলেও মাহতিমের নিকট তীব্রভাবে ঠেকলো। মাহতিম সাথে-সাথে দুচোখ বন্ধ করে মাথা নুয়ে ফেললো। ফ্লোরের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরলো। তৌফ ওর অবস্থা দেখে কেমন প্রতিক্রিয়া দিবে, ভাবতে পারছিলো না। মৃদ্যুভঙ্গিতে নিশ্বাস ছেড়ে মাহতিমের প্রশস্ত পিঠটার উপর হাত উঠালো তৌফ। অনেকটা কোমল সুরে সরল কন্ঠে বললো,

– মাহতিম? তুইতো সবসময় বলোস, Every situation has a meaningful thing. তোর কি মনে হয়না সবকিছু সময়ের উপর ছাড়া উচিত? তাছাড়া ও তো মেয়ে মানুষ, ওর নিজেরও একটা থিন লাইন আছে। ওরে ওর মতো —

কথাটুকু শেষ না করতেই মাহতিম ওকে থামিয়ে দিলো। ঝুঁকানো মাথাটা স্বাভাবিক করে তৌফের দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো। চুলগুলো পাঁচ আঙ্গুলে পেছনে ঠেলে চোখ বন্ধ করে বললো,

– ওর সম্পর্কে কি জানিস তুই? তুই নিজেই আমাকে বল, এতোদিন যে থাকলি, ওর ব্যাপারে কি কি জানলি?

মাহতিমের এমন উদ্ভট প্রশ্নে সরুচোখে তাকালো তৌফ। চোখে ভীষণ কৌতুহল ফুটিয়ে আশ্চর্য কন্ঠে বললো,
– মানে? শালা এমন গাজাখুরি প্রশ্ন করোস ক্যান? ও তো সাদামাটা মেয়ে। গ্রামের সাধারণ পরিবার থেকে বিলং করে। ওর দাদাটা আবার চাল্লু চিজ, চুল পাকছে ঠিকই, রাগের তেজ কমেনাই। এখনো লুঙ্গি কাছা দিয়া চোর খেদাইতে পারবো।

তৌফের আবোলতাবোল যুক্তি শুনে বিরক্ত হলো মাহতিম। বিরক্তি ভাবটা সাইডে ফেলে আপাতত মোদ্দাকথায় আসলো,
– ওর ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে তোরা কেউ জানিস না। ওর দাদা, হান্নান মোল্লা সলিড একটা মানুষ। উনার মতো নির্ভেজাল মানুষ, তুই হাজার খুঁজলেও পাবি না। উনি যে শেফালীর মতো ধুরন্ধর মহিলাকে এখনো থাকতে দিয়েছে, এটা ওই মহিলার ভাগ্য বলা চলে। ওই মহিলা যা যা করেছে, ওই তথ্য যদি শুনতে পারিস, তাহলে থুথু করবি। আমি যদি হান্নান নানার জায়গায় থাকতাম, ওই মহিলার যা দশা করতাম পুরো গ্রাম সাক্ষী থাকতো। আমিযে কতোটা ধৈর্য্য নিয়ে চুপ ছিলাম, এটা জাস্ট আল্লাহ্ জানে। খালি মেহনূরের কথা চিন্তা করে এতোদিন শান্ত ছিলাম। পরশু যেহেতু চলেই যাচ্ছি, যাওয়ার আগে ওই মহিলার কাহিনী রফাদফা করে যাবো।

মাহতিমের কথা শুনে তৌফ কিছুক্ষণ চুপ মেরে রইলো। মেহনূরের পরিবার সম্বন্ধে কি এমন জানতে পেরেছে সেটা জানার জন্য আকুপাকু করছিলো। সেই আকুপাকুর রেশ দীর্ঘ না হতেই মাহতিম তখন উঠে দাঁড়ালো। ট্রাউজারের পকেটে দুহাত গুঁজে ডানদিকের খোলা জানালার কাছে যেতে লাগলো। হালকে নীলের কার্টেনগুলো বাইরের হাওয়ায় উড়ছে, মাহতিম সেখানে দাড়ানোর সাথে-সাথে কার্টেনগুলো দুধারে ঠেলে দিলো। পূর্ণচন্দ্রের আকাশে দৃষ্টি রেখে কঠোর ভঙ্গিতে বললো,

– শেফালীর পুরো নাম, হামিদা বিনতে শেফালী। এই মহিলার মা নেই, বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে বউ নিয়ে সংসার করছে। ওই বউয়ের চরিত্র খারাপ, একসময় আক্কাস চেয়ারম্যানের সাথে গভীর সম্পর্ক ছিলো। শেফালী ওর দূর-সম্পর্কীয় খালা জমিলার কাছে বড় হয়েছে। ওই খালাও আহামরি সচ্চরিত্র মহিলা না। লোকেমুখে শোনা যায়, এই জমিলা রাতের বেলায় বাড়ি থাকতো না, কোথায় যেতো ওই তথ্য তোর জানার দরকার নেই। হান্নান নানার মেজো ছেলে কোনো মাস্টার-ফাস্টার না, ওইটা এক নাম্বার নেশাখোর। একসময় জুয়ারিদের সাথে চব্বিশ কাটতো, ওই নেখাখোর এখন রাঙ্গামাটিতে আছে। ওখানে টুকটাক স্মাগলারের কাজ করে। হান্নান নানা নিজের মেজো ছেলেকে ত্যাজ্যপুত্র বলে দিয়েছে, এর জন্য ভুলেও শেফালীর সাথে দেখা করতে পারেনা। শেফালীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো, আর শেফালীই নিজের কুকীর্তি ঢেকে মোল্লা বাড়ির বউ হয়েছিলো। শেফালীর একটাই উদ্দেশ্য ছিলো, ওটা ছিলো সম্পত্তির লোভ। তার উপর মেহনূরের দাদী খুব বড়লোক পরিবার থেকে এসেছিলো। ওর দাদীর যতো সম্পত্তি ছিলো সবই নানার নামে, আর নানার নামে মানে ইন-ফিউচারে সেটা তিন ছেলের নামে। এই খবর যখন জানতে পারে, তখন শেফালী কাদা খেয়ে হলেও মেজো ছেলেকে ফাঁসায়, বিয়ে করে, আরো নানা কাহিনী করে, সেগুলো জেনে লাভ নেই। মেহনূর যখন চারমাসের ছিলো, তখন এই মহিলার কোলে তখন ছয়মাসের সুরাইয়া। মেহনূর এই বংশের সবচেয়ে সুন্দরী বাচ্চা ছিলো, সবাই বলতো ও নাকি মরহুম দাদীর রূপ নিয়ে এসেছে। শেফালী এটা সহ্য করতে পারেনি, হিংসার জ্বালায় মেহনূরকে পানিভর্তি বড় বোলের মধ্যে শুইয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু মেহনূরের নসিব ভালো ছিলো, ও বেঁচে যায়। আর হাস্যকর ব্যাপার হলো, এতোকিছু হওয়ার পরও হান্নান নানা ওই মহিলাকে মাফ করে দেয়। কাহিনি এখানেই শেষ না, আরো কাহিনী আছে। এই বংশের বড় ছেলে কে জানিস? সুজলা মামীর ছেলে হচ্ছে বড় ছেলে, ওর নাম শাওন। শাওন, শানাজ, সাবা এরা সহোদর ভাইবোন, বাট ইন্সিডেন্টলি শাওন বর্তমানে কানাডাবাসী। আর শেফালীর যে একটা ছেলে আছে ওটা জানতিস?

প্রশ্নটা করে জানালা থেকে ঘুরলো মাহতিম। জানালার দিকে পিঠ দিয়ে পকেট থেকে দুহাত বের করলো, বুকের উপর হাতদুটো ভাঁজ করে একপেশে হাসি দিয়ে বললো,

– ওর নাম সিফাত, ওটাও আরেকটা লম্পট। ওটাকে গা ঢাকা দিয়ে বাচানোর জন্য মিশরে পাঠিয়ে দিয়েছে।এখন মেবি গভমেন্ট হাসপাতালের সুইপার, আগে প্রাইমারি স্কুলের সুইপার ছিলো। আরো শুনবি?

তৌফ বিশাল বড় ঢোক গিলে হতভাগা দৃষ্টিতে বললো,
– তুই এগ্লা কবে করলি দোস্ত? মানে, এই কাজটা যদি সরকারের লিগা করতি, কি পরিমাণে ইনকাম করতি চিন্তা আছে?

এবার মাহতিম ফিক করে হেসে দিলো। হাসতে-হাসতে বললো,
– বারোটা মাসের মধ্যে দশটা মাস বাইরেই থাকি, আমার কন্ট্রিবিউশনটা জায়গামতো ঠিকই আছে। দেশেরটা দেশের জন্য, নিজেরটা নিজের জন্য।

তৌফ ওর কথার হেয়াঁলিটা বুঝতে পারলো না। ভ্রুঁদুটো ভীষণ কুঁচকে প্রশ্ন গলায় বললো,
– বুঝিনাই, আবার বল।

মাহতিম হাসি থামিয়ে আগের মতো স্বাভাবিক হলো। কিন্তু কথার মাঝে আবারও হাসতে-হাসতে বলতে লাগলো,

– শেফালীর ভাষ্যমতে, মেহনূরের কপালে কোনোদিন বিয়ের ভাগ্য জুটবে না। যদি কখনো হয়েও যায়, সে বিয়ে নাকি ভেঙ্গে যাবে। আমি কথাটা শুনলাম, প্রচুর হাসলাম, এরপর ডিসাইড করলাম, দরকার পরলে হাত-পা বেধেঁ হলেও মেহনূরকে তুলে আনবো। তবুও ওই শেফালীর সামনে ওকে রাখবো না। কিন্তু ওই মহিলা আমার সাথে পল্টি মারতে গিয়ে উলটো নিজের ফাঁদে ধরা খায়। সুরাইয়ার সাথে কথা উঠানো তো দূর, আমি আরো সুন্দর মতো একচান্সে মেহনূরকে পেয়ে গেলাম।

খুব কষ্টে কথাগুলো শেষ করলো মাহতিম। আঁটকে রাখা হাসিটা পুরো রুমের মধ্যে ছড়িয়ে পরলো। মাহতিমকে ওরকম ভাবে হাসতে দেখে তৌফ যেনো মলিন চাহনিতে তাকালো। এক বন্ধু প্রিয়তমাকে অর্জন করে আত্ম খুশীতে হাসছে, আরেক বন্ধু আকাঙ্ক্ষীত প্রিয়দর্শনীকে দূরে রেখে বদ্ধ রুমে কষ্ট পাচ্ছে। দুজনের কতো মিল, তবুও সেই মিলের মধ্যে আকাশ-পাতাল অমিল।

– ‘ চলবে ‘

#FABIYAH_MOMO

( নোটবার্তা : আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। নিজের ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য গল্প দিতে দেরি করেছি। তন্মধ্যে বোর্ড পরীক্ষার জন্য অনিয়মিত হলেও চেষ্টা করবো পরীক্ষা শেষে আবার নিয়মিত হওয়ার। সবাইকে আমার তরফ থেকে সামাহীন, অজস্র ভালোবাসা। 💜 )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here