মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❣ #পর্বসংখ্যা_৩১. #ফাবিয়াহ্_মমো . অংশ ০২.

0
82

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❣
#পর্বসংখ্যা_৩১.
#ফাবিয়াহ্_মমো .

অংশ ০২.

পুরো বাড়ির মধ্যে শব্দহীন অবস্থা বিরাজ করছে। দূর থেকে অস্পষ্ট সুরে ব্যাঙের ডাক ভেসে আসছে। রাতের সময়গুলো হুবহু গ্রামের মতো না লাগলেও সাদৃশ্য ব্যাপার দেখা যাচ্ছে। কোলাহলযুক্ত ব্যস্ত শহরটা ঘুমের চাদরে ঢেকে আছে এখন। আকাশে দেখা যাচ্ছে ঝাপসা-ঝাপসা ধোয়া, সেই ধোয়া কি শীতের সূচনা, সে সম্পর্কে বলতে পারছেনা মেহনূর। ছাদের রেলিংয়ে দুহাত রেখে রাতের আকাশে তাকিয়ে আছে সে। দীঘল চুলগুলো আজ কেউ বেধেঁ দেয়নি, একদিনের এই তারতম্য দেখে নিজের প্রতি ভালোই অযত্ন কাজ করছে। ছাদের ডানদিকটা এখন শয়নকক্ষ হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে, সেই নির্বাচনের পুরো কার্যাদি মাহতিম নিজে করেছে। মারজার একটা সিদ্ধান্তের উপর মাহতিম এখনো রেগে আছে, সেই রাগ কোনোভাবেই মায়ের সামনে দেখিয়ে বেড়ায়নি। নিজের সদ্য বিবাহিত বউকে আলাদা রাখার মতামতে গম্ভীর মুখে সায় দিয়েছে মাহতিম। মা-ছেলের এমন অদৃশ্য রেষারেষিতে বিচ্ছিন্ন ভাবে ছাদের রুমটায় থাকতে হচ্ছে মেহনূরের। এ নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই তার, মলিন মুখটা নিয়ে সবসময়ের মতো আজও মাথানিচু করে রেখেছে সে। বিশাল ছাদটার ডানদিকে বড় একটা রুম আছে, রুমটা মাহতিমের একান্ত রুম হিসেবে বিবেচ্য হলেও বর্তমানে সেটা মেহনূরের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। মারজা এ নিয়ে প্রচুর বিরোধিতা করলেও একটুও লাভ হয়নি। মাহতিমের কথার উপর দু’কথা ফলাতে পারেননি তিনি। মাহতিমও কাট-কাট গলায় ঠাট বজায় রেখে বলে দিয়েছে, যে পযর্ন্ত মেহনূরের উপযুক্ত বয়স হবেনা, সে পযর্ন্ত ছাদের রুমটাই ওর আসল রুম। সেখানেই ও থাকবে-খাবে-সব করবে, কিন্তু অন্য রুমে শিফট হতে পারবেনা। যদি শিফট করাই লাগে তাহলে মাহতিমের রুমেই ফিরে আসুক। মারজা এমন কথা শুনে কিছুটা ক্রোধগ্রস্থ থাকলে পরক্ষণে শান্ত হয়ে যান। ছেলের উপর থেকে রাগ সরিয়ে শান্তভাবে বুঝান, পরিস্থিতির দিকে চিন্তা করে মাহতিমকে ব্যাপারটা খুটিনাটি দেখিয়ে দেন। মাহতিম সব শোনার পর আর কোনো কথা বলেনি। চুপচাপ রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে চলে গিয়েছে, এদিকে সবার সঙ্গে খেতে বসা মেহনূর প্রচণ্ড অস্বস্তি নিয়ে খাওয়া শেষ করেছে। সবাই যখন যার-যার রুমে ঘুমের রাজ্যে মগ্ন, তখন মেহনূরের চোখে ঘুম নেই। রুমটা যতোই বিলাসবহুল হোক না কেনো, মন পরে আছে গ্রামের ভিটেতে। সেই ছোট্ট রুম, ছোট্ট জগতের মাঝে। মেহনূর ছাদের রেলিং থেকে হাত সরিয়ে ধীরে-ধীরে পিছাতে থাকে, আকাশের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ছাদের মেঝেতে নিবদ্ধ করে। রুমের দিকে যাওয়ার জন্য সম্পূর্ণরূপে ঘুরে দাড়ায়, সেদিকে এগুতে-এগুতে একপর্যায়ের রুমের সামনে চলে আসে। স্বচ্ছ কাঁচের দরজাটা থাইগ্লাসের মতো ডানে টেনে ভেতরে ঢুকে। নিরবে হেঁটে এসে আয়নার সামনে দাড়ায় মেহনূর, নত করে রাখা দৃষ্টিদুটো আস্তে-আস্তে উপরে তুলে তাকায়। নতুনের মতো চকচকে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পেয়ে গুমর ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে। সারাদিন সবার সাথে শান্তভাবে চললেও রাতের এমন নিরিবিলি মূহুর্তে প্রচণ্ড অসহায় লাগছে। মনের মধ্যে আছড়ে পরছে একের-পর-এক ঝড়, সেই ঝড়ের ঝাপটায় নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে মনের ছোট্ট পরিধিটা। মেহনূর কোনোভাবেই নিজেকে আর সামলাতে পারলো না, ওই আয়নার সামনে তাকিয়ে থেকে ঝরঝর করে চোখের অশ্রুধারা ছেড়ে দিলো। শান্ত নেত্রদুটো অশ্রুবন্যায় টলটল করে উঠলো তখন, গালের নরম পরিখা বেয়ে অশ্রু পরতে লাগলো তার। নিঃসঙ্গ সময়গুলো ভীষণ যন্ত্রণা দিচ্ছে ওকে, যন্ত্রনা অনুভবের জায়গাটা চ্ছিন্ন-বিন্ন হয়ে যাচ্ছে মেহনূরের। অবধারায় পরতে থাকা অশ্রুগুলো দারুণ তেজে ঝরতে লাগলো, এবার নিস্তব্ধ রুমটা ফিসফিস শব্দে মুখর হলো। সেই ফিসফিস আওয়াজটা রুমের বাইরে যেতে পারলো না, শহরের বুকে ছুটে চলা বাতাসটা মিলিয়ে দিলো সেই শব্দগুলো। দোতলার রুমের শুয়ে থাকা মাহতিম কোনোক্রমেই সেই শব্দগুলো আচঁ করতে পারলো না। মেহনূরের কন্ঠনালী থেকে নিঃসৃত প্রতিটি চাপাকষ্ট দেয়ালের শক্ত জমিনে ধাক্কা খাচ্ছে, ধাক্কা খেয়ে প্রতিফলিত হয়ে রুমের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। মেহনূর অশ্রুপূর্ণ চোখ খুলে আবার আয়নার দিকে তাকালো, তেজালো কান্নার গতিটা কমতে-কমতে হেচকির তালে এসে ঠেকলো। অনবরত হেচকি তুলার জন্য কেঁপে-কেঁপে উঠছে মেহনূর, চোখের অবস্থা শান্তরূপ ছেড়ে অশান্ত আকার ধারণ করেছে এখন। আয়নার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে শাড়ির আচঁলটা মুঠোবন্দি করলো তখন, আবদ্ধ আচঁলটুকু উপরে উঠিয়ে কম্পমান হাতে চোখের সিক্তভাব মুছলো। দু’চোখ থেকে অশ্রুর শেষ অস্তিত্বটুকু মুছে চুপচাপ ভঙ্গিতে বিছানায় উঠে বসলো। থাই গ্লাসের দরজাটা ওভাবেই খুলে রেখে বালিশে মাথা রাখলো, দরজা দিয়ে প্রচুর বাতাস ঢুকছে। দরজায় ঝুলানো হালকা নীলের পর্দাটা থাইগ্লাসে বারি খাচ্ছে। মেহনূর সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতেই বৃথা চেষ্টা হিসেবে চোখের পাতা বুজলো। বিছানায় টান হয়ে শুতেই পেটের উপর হাতদুটো রেখে দিলো। মাথার উপর চলতে থাকা ফ্যান, সেই সঙ্গে বাইরের হিম হাওয়া এসে তন্দ্রাচ্ছন্ন করে দিলো ওকে। মেহনূর হালকা মতোন ঘুমের ঘোরে ডুব দিলে হঠাৎ থাইগ্লাসের দরজা খোলার শব্দ হয়। শব্দটা এমনভাবে হচ্ছে, যেনো কেউ সর্তকভাবে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকার চিন্তা করছে। মেহনূর ঘুমের ঘোরে বদ্ধচোখে কপাল কুঁচকে ফেলেছে, ব্যাপারটা বাস্তব না-অবাস্তব সে বিষয়ে বুঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু বুঝার সাপেক্ষ বেশি না হতেই চোখের পাতা খুলে তাকালো। ওমনেই ধড়পড় করে শোয়া থেকে উঠতে নিলো মেহনূর, কিন্তু অর্ধেক মতোন উঠতেই কারো আজ্ঞাদেশ এসে পরলো। মেহনূর ছোট্ট একটা ঢোক গিলে পিটপিট তাকিয়ে থাকতেই তৎক্ষণাৎ বিছানায় দ্বিতীয় ভর এসে যুক্ত হলো। মেহনূর কনুইয়ে ভর দিয়ে শোয়া থেকে উঠতে নিয়েছিলো, আজ্ঞাদেশ শুনতেই ওইভঙ্গিতে কনুইয়ে ভর রেখে মাহতিমের তাকিয়ে রইলো। মাহতিম ওর অবস্থ দেখে হাসি দিয়ে বললো,

– কনুই ব্যথা হয়ে যাবে, শুয়ে পরো।

‘ হ্যাঁ ‘ সূচকে মাথা দুলালো মেহনূর। পুনরায় বালিশে মাথা ঠেকিয়ে শুলো। মাহতিম ওর দিকে একধাপ এগিয়ে ডানহাতটা পাশে থাকা টেবিলল্যাম্পের দিকে বাড়িয়ে দিলো, স্বাভাবিক কপালটা ক্রমান্বয়ে চিন্তাযুক্ত হতে-হতেই চট করে টেবিলল্যাম্পটা সাদা বাতিতে জ্বলে উঠলো। ঠিক তখনই মাহতিমের চোখের সামনে মেহনূরের মুখটা পরিষ্কার হয়ে উঠলো, মাহতিম যেভাবে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে, সেটা একদমই সাধারণ ভঙ্গির তাকানো না। ওই চোখের চাহনি বারবার ঘুরছে, সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, সরু দৃষ্টিতে কপাল কুঁচকাচ্ছে আরো। মেহনূর ভয়ে জড়সড় হয়ে গুটিয়ে গেলে মাহতিম টেবিলল্যাম্পের ওখান থেকে হাত সরিয়ে ফেলে। মেহনূরের দিকে মুখ নামিয়ে মেহনূরের বাদিকে হাত রাখে। বালিশের উপর বাহাতের ভর রেখে শুয়ে থাকা মেহনূরের মুখোমুখি হয়। সেই সন্দেহপ্রবণ দৃষ্টিটা ছুড়ে দিয়ে মেহনূরের গালটায় ডানহাতটা রাখে। গালের উপর মাহতিমের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে আকস্মিকভাবে চোখ বন্ধ করে মেহনূর, সেকেন্ডের মধ্যে আবার চোখ খুলে তাকায়। মাহতিমের তীক্ষ্ণ চাহনিটা ধীরে-ধীরে নরম হচ্ছে, সেই নরম ভাব যতো তীব্র হচ্ছে, মেহনূরের জমাটবদ্ধ কান্নাটা বাইরে প্রকাশের জন্য নিংড়ে আসছে যেনো। মাহতিম অনেকক্ষণ চুপ করে ছিলো ঠিকই, এবার যেনো সুরটাও কোমল করে বললো,
– হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে?

সেই কোমল সুরটুকু কানে যেতেই ভেতরের সমস্ত জড়তা ধূলোয় উড়িয়ে দিলো। চোখ ছাপিয়ে মাহতিমের সামনেই অশ্রুক্লিষ্টে নত হলো মেহনূর, ঠোঁটদুটো ভেতরে গুটিয়ে দুপাটি দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরলো তখন। নাক ফুলিয়ে কান্না করতেই পুরো মুখ লালচে হয়ে উঠলো ওর, নাকের ডগাটা আবার লালবর্ণে গাঢ় হলো। মেহনূরের কান্নারত মুখটার দিকে তাকিয়ে থেকে ওষ্ঠযুগল এগিয়ে নিলো মাহতিম, চোখবন্ধ করে নাকের লালচে অংশটুকুতে স্পর্শ বসিয়ে গাঢ় চুমু খেলো। মেহনূরের গালটা ছেড়ে দিয়ে ওর ডানহাতটা ধরলো, হাতটা টেনে এনে নিজের ঘাড়ের উপর রাখলো মাহতিম। তখন স্পর্শমুক্ত করলো মেহনূরকে, সুকৌশলে বামহাতটাও একইভাবে ঘাড়ে টেনে আনলো। মেহনূর কিছু টের পাওয়ার ভঙ্গিতে তৎক্ষণাৎ অশ্রুজড়িত চাহনিতে তাকালো। তাকাতে দেরি, ওমনেই একজোড়া পেশীয় হাত এসে মেহনূরকে শূন্য তুলে নিলো, ঘটনার প্রেক্ষিতে মেহনূর ভয়ংকর ভাবে চমকে উঠবে, সেই সুযোগের পূর্বেই মাহতিম চলতে শুরু করলো। মাহতিমের দিকে ঠিক তাকাতেই গলা ভিজিয়ে প্রশ্ন করলো মেহনূর। প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে চাপা ভাবেই বললো,
– কোথায় যাচ্ছেন?

মাহতিম এমন উদ্ভট প্রশ্ন শুনে ফিক করে হাসলো। মেহনূরের দিকে দুষ্টু হাসিতে তাকিয়ে জবাব দিলো,
– বুঝো না কোথায় যাচ্ছি?

মেহনূর সাথে-সাথে কান্না ভুলে চকিত দৃষ্টিতে তাকালো। আবারও সেই ভয়মিশ্রিত গলায় বললো,
– আপনি দয়াকরে আমাকে নামিয়ে দিন। আপনার রুমে নিয়ে যাবেন না। মা দেখতে পেলে খুব কষ্ট পাবেন, আপনি দয়াকরে আমাকে নামান।

মাহতিম এতোক্ষন হাসির ছলে সবকিছু নিলেও এবার মেহনূরের কথা শুনে শক্ত চাহনিতে তাকালো। সিড়ির মাথায় হাঁটা নামিয়ে কাঠিন্য সুরে বললো,

– ‘ আপনার রুম ‘ আবার কি? ওটা তোমার রুম, অবশ্যই আমাদের রুম। ফার্দার যদি তোমার মুখ থেকে ‘ আপনার ‘ শব্দ শুনি, তোমার খবর আছে।

মাহতিমের শাসানো বাণী শুনে চুপটি মেরে গেলো মেহনূর। আর কোনো শব্দ উচ্চারণ করলো না সে, মাহতিম ওর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে হাঁটা দিলো গন্তব্যের দিকে। সিড়ির প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করে নিচে নামলো মাহতিম, নিজের রুমের দিকে নিয়ে চললো মেহনূরকে। রাত জেগে সিওসি খেলে হাই তুলতে-তুলতে দরজা খুললো মাহদি। ঘুমে ঢুলু চোখে সামিকের ফোনটা ফেরত দিতে বেরুলো, বড় হাইটা হাতের উলটোপিঠে চাপা দিতে তুলবে ঠিক তখনই চোখের সামনে মাহতিমের অবস্থা দেখতে পেলো। মেহনূরকে চেপেচুপে কোলে নেওয়ার দৃশ্য দেখে চমকানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, হাইয়ের জন্য আর হাত চাপা দিতে মনে থাকলো না। বড় ভাইয়ের এমন কাণ্ডকারখানা দেখে আশ্চর্য ভঙ্গিতে বলতে লাগলো মাহদি,

– আবার বাটপারি! দাড়াও মায়ের কাছে লাগাচ্ছি। তখন তোমার ফোন চেয়েছিলাম, তুমি দাওনি না? এবার দেখো কি করি!

মাহদি কটমট রাগে যেই গলা ছেড়ে চেঁচাবে, তখনই পেছন থেকে মুখ চেপে ধরলো তৌফ। মাহদি গোঙানির মতো শব্দ করতে থাকলে তৌফ তাড়াতাড়ি ওকে টেনে এনে রুমের ভেতরে ঢুকালো। দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে মাহদিকে বিছানার উপর ছেড়ে দিলো, মাহদি হাপড়ের মতো নিশ্বাস নিতেই তৌফের দিকে তাকালো। স্বল্প সময়ের মধ্যে দুজনই বেশ হয়রান হয়ে গিয়েছে, মাহদিকে টেনে আনতে গিয়ে প্রচুর ক্লান্ত লাগছে তৌফের। তৌফ কোমরে দুহাত রেখে জোরে-জোরে নিশ্বাস নিতেই ভ্রুঁ কুঁচকে ক্রুদ্ধভাবে বললো,

– তোরে কি গুড়া কৃমি কামড়ানি দিছিলো? পেটের মধ্যে নাড়াচাড়া দেয়? কি কাহিনী করতে নিছিলি? তোরে তো বাথরুমের ফ্লাশে চুবানো দরকার ফাজিল কোথাকার!

তৌফের কথা শুনে দারুণভাবে ক্ষেপে উঠলো মাহদি। বিছানা থেকে নেমে সোজাসুজি দাঁড়িয়ে পরলো সে। তৌফের দিকে চোখ রাঙিয়ে বেশ কাট-কাট ভাবে জবাব দিলো,

– মা আমাকে বড় একটা রিসপন্সসিটি দিয়েছে, মা বলেছে ভাইয়া যেনো কোনোভাবেই আমার বউয়ের রুমে না যায়। যদি যায়, তাহলে তাড়াতাড়ি খবর দিয়ে দিতে।

মাহদির বড়-বড় কথা শুনে তৌফ বাঁ ভ্রুটা উঁচিয়ে তাকালো। মুখের ভাবটা তৎক্ষণাৎ তিরিক্ষি করে গমগম কন্ঠে বললো,
– ওই দাড়া, দাড়া এক মিনিট! তুই আগে রিসপন্সলিবিটি বানান কর! এখুনি কইরা দেখাবি, না পারলে এমন এক থাপ্পর মারুম, গালে হাত দিয়া দুইরাত কাঁদবি।

তৌফের কথায় নাক ফুলিয়ে তাকালো মাহদি। দু’পা এগিয়ে এসে বেশ ভাব নিয়ে বললো,
– তুমি যে ভাইয়ার পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেছো, আমি কিন্তু এটা জেনে গিয়েছি। যদি এটা ভাইয়ার কানে লাগাই তো —

কথাটুকু বলে বদমাইশি হাসি দিয়ে থেমে গেলো মাহদি। সেই হাসিটুকু প্রসার করে ভ্রুঁ নাচাতে থাকলো। তৌফ ওর অবস্থা দেখে ভয়ে জমে গেলো, এতো বড় গোপন তথ্য কিভাবে জেনে গেলো সে ব্যাপারে একদমই চিন্তা করতে পারছেনা সে। তৌফের শুষ্ক মুখটা দেখে মাহদি আরো একগাল হাসলো, হাসতে-হাসতে তর্জনী তুলে রাস্তা থেকে সরে যেতে ইশারা করলো। তৌফ রেগেমেগে বিরক্ত নিয়ে তাকালে মাহদি আবার হাসি দিয়ে বিনা শব্দে ঠোঁট নাড়িয়ে বললো, ‘ পা-স-পো-র্ট ‘। তৌফ বাধ্য হয়ে রাস্তা থেকে সরে গেলে মাহদি হেঁটে-হেঁটে দরজার দিকে চললো। তৌফ রাগত ভঙ্গিতে ওর পশ্চাৎদেশ বরাবর লাত্থিসূচকে পা তুললে, ঠিক তখনই মাহদি পিছু ফিরে তাকালো। ধরা পরার ভয়ে তাড়াতাড়ি নিজেকে পরিস্কার করতে পায়ের ব্যায়াম দেখিয়ে বললো,
– তাকাস ক্যান? ব্যায়াম করি। পা-টা যে কি ব্যথা গো বাবা! মুভটা দিয়ে মালিশ করা দরকার।

তৌফের মিথ্যা কথাটা ঠিকই ধরলো মাহদি। কিন্তু মুখে সেটা ভাইয়ের মতো স্পষ্ট করে বললো না। মাহতিমের প্রতিরূপ আচরণ দেখিয়ে শান্ত পায়ে বেরিয়ে গেলো। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, মারজার রুমে সে গেলো না। নিজের রুম থেকে বের হয়ে সামিকের রুমে গেলো, কিন্তু সেখানেও কিছু বললো না। তৌফ সবটা ব্যাপার হতভাগার মতো পর্যবেক্ষণ করতেই নিজের মনে উচ্চারণ করতে লাগলো,

– যেমন ইলিশ, তেমনি দুই জাটকা। কেউ কারোর চেয়ে এক ইন্ঞ্চি কম না। কিন্তু আর যাই কর্, মাহতিমের ব্যাপারে কিচ্ছু বলিস না ব্যাটা। ভুলেও আপাতত কিচ্ছু বলিস না।

– ‘ চলবে ‘

#ফাবিয়াহ্_মমো .
#FABIYAH_MOMO .

( নোটবার্তা : খাপছাড়া পর্ব দেওয়ার জন্য দুঃখিত 💔 )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here