মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤ #পর্বসংখ্যা_৪০. #ফাবিয়াহ্_মমো .

0
71

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#পর্বসংখ্যা_৪০.
#ফাবিয়াহ্_মমো .

সোল্লাসে মেতে উঠলো আনসারী নিবাস। কেউ বুঝতে পারেনি, ভাবতে পারেনি, মাহতিম হুট করে সকলের মাঝে ফিরে আসবে। যেখানে আসার কথা ছিলো ছয়টা মাসের ব্যস্ত জীবন কাটিয়ে, সেখানে চারটা মাসের হাড়ভাঙ্গা ক্লান্তি শেষে আচমকা সে ফিরে এসেছে। মাহতিমের আগমনে পুরো বাড়ির আবহাওয়া আনন্দমেলায় রমরমা, তবুও দুটি মানুষের মন যেনো ভার হয়ে আছে। রজনী ও অনামিকা এবার যেনো সুযোগের অবস্থা দেখে রসালো ঠোঁটে হাসলো। এদিকে মাহতিম আসতে-না-আসতেই দলবলকে খবর দেওয়ার মতো মহৎ কাজটা করে ফেলেছে। এবারও সে বাড়ির বাইরে বেড়ানোর পরিকল্পনা করে রেখেছে। মারজা এ নিয়ে কোনো দ্বিধা প্রকাশ করলেন না। তিনি জানেন, ছেলে এবারও তার কোনো কথা শুনবে না। মাহতিম যেহেতু বেড়ানোর এহলান করেই দিয়েছে, তার মানে যতো ঝড়বৃষ্টি হোক না কেনো, সে যথাসময়ে সবকিছু রেডি করে ফেলবে, একইসাথে বন্ধুদল এবং ভাইবোনেরা ঠিকই যথাসময়ে হাজির হয়ে যাবে। পরদিন ভোরের আলো ফুটতে-না-ফুটতেই সকলের আসার খবর আসতে লাগলো। মেহনূর একের-পর-এক খবর শুনে আশ্চর্যে হতবাক! বাড়িতে আসতে দেরি, অথচ বাড়ির হুল্লোড় ফিরতে দেরি হলো না। মারজাকে ঔষুধ খাইয়ে হাত-মুখ ধুয়ে নিচে নামলো মেহনূর, রাতে মাহতিমের সাথে থাকা সম্ভব হয়নি। সে নিজেই মেহনূরকে মারজার রুমে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিয়েছে, কেনো দিয়েছে মেহনূর সেটা জিজ্ঞেস করেনি। সকালের নাস্তার আয়োজনটা সিরাজ কাকা ও সাবু খালা সামলাচ্ছে। রান্নাঘরের সবকিছু কতদূর এগিয়েছে সেটা দেখার জন্য সেখানে উপস্থিত হলো মেহনূর, পরোটার তলায় একটুখানি তেল ঢেলে মেহনূরের উদ্দেশ্যে বললো খালা,

– ও বউ তুমি উইঠা গেছো? যাক ভালা হইলো। তুমি এট্টু এইনে খাড়াও তো দেহি, আমি যাইয়া এট্টু কফিডা দিয়া আহি। রজনী ভাবী হেই কহন চাইছে, এট্টু খাড়াও এইহানে। আইতাছি।

ট্রে-তে চটপট কফির মগটা রেখে চুলাটা মৃদ্যু আঁচে কমিয়ে সাবু খালা চলে গেলো। বৃদ্ধ সিরাজ একে-একে সব নাস্তা প্রস্তুত করে অন্য কাজের জন্যে বেরিয়ে পরলো। মেহনূর সবকিছু ঠিকঠাক দেখে অন্য চুলায় চায়ের পানি বসালো, সকাল-সকাল মারজাকে এক কাপ আগুন গরম চা না দিলে তিনি মুখ ফুলিয়ে বসে থাকেন। মেহনূর বাদে অন্য কারোর হাতে চা খেতে তিনি যথেষ্ট নারাজ। সারি সারি তাক থেকে চাপাতার বয়াম নিয়ে গোল ঢাকনাটা ঘুরাতে-ঘুরাতে খুলতে লাগলো মেহনূর, চুলার কাছে চায়ের দুটো কাপ এবং দুধ-চিনি রেখে দিলো। পরিষ্কার ছাঁকনি দিয়ে চায়ের কালচে লিকারটা কাপে ঢেলে নিতেই চামচ দিয়ে দুধ মিশিয়ে নিলো, চিনির পরিবর্তে মারজার কাপে জিরো সুগারের ছোট্ট ট্যাবলেট ছেড়ে দিলো। পুনরায় যখন চায়ের কাপে চামচ নাড়াতে ব্যস্ত হলো, তখনই দমকার হাওয়ার ন্যায় পিঠের উপর উষ্ণসূচকের লহমায় চমকে উঠলো মেহনূর। সমস্ত শরীরের সাথে-সাথে হাতটা শিউরে উঠতেই আঙ্গুলের ডোর থেকে ফসকে গেলো চামচটা, তখনই টস করে চামচটা কাপের গায়ে শব্দ করে উঠলো। চোখদুটো আচ্ছন্নের মতো তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে এলে পেছন থেকে একজোড়া হাতের আগমন টের পেলো মেহনূর। হাতদুটো ধীরগতিতে কোমরের দুধার থেকে ধেয়ে এসে পেটের উপর বেষ্টন করে ধরলো। দফায়-দফায় অধরযুগলের ছোট্ট-ছোট্ট পরশ যেনো পিঠের পরিখায় ছাপিয়ে দিতে উন্মত্ত ছিলো। ক্রমে মেহনূরের হাতদুটো মুঠো হয়ে গেলো। জানালার গ্লাস গলে সোনালী সূর্যের আলোটা পাতার ফাঁকফোঁকর দিয়ে ঝাঁঝরা হয়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করছিলো, স্নিগ্ধ সকালের মনোহর পরিবেশ যেনো নিরব সাক্ষী হয়ে সব দেখতে লাগলো। রুদ্ধপ্রায় নিশ্বাসে চোখদুটো খুললো না মেহনূর, মনের উপর বশীভুত অবস্থার জন্য দেহের উপরও চন্ঞ্চলতার উচ্ছাস এসে ভর করছে। শক্ত করা মুঠোদুটোর আঙ্গুল আস্তে-আস্তে আলগা করলো মেহনূর, কাপের কাছ থেকে হাত নামিয়ে পেটের উপর থাকা হাতযুগলের উপর আস্তে করে রেখে দিলো। কোনোমতে আধো-আধো গলায় স্বর নামিয়ে ঘোরাক্রান্ত মানুষটার উদ্দেশ্যে বললো,

– এটা রান্নাঘর, ছেড়ে দিন না।

পিঠের উপর কার্যসাধন করা মাহতিম নিঃশব্দে হেসে ফেললো তখন। মেহনূরের কন্ঠ যে ভীতু বনে গেছে সেটা আন্দাজ করে ঠোঁটে প্রগাঢ় হাসি ফুটিয়ে তুললো। নিশ্বাসের অবস্থা প্রখর হয়ে গেছে, বারবার পেটের উঠা-নামার জন্য নিজের হাতদুটোও সমান তালে উঠা-নামা করছে। মেহনূরকে ছেড়ে দিয়ে যদি নিজের দিকে ঘুরানো হয়, তাহলে সে কি লজ্জায় মাহতিমের দিকে তাকাতে পারবে? অতি লজ্জায় তার ছোটোখাটো মুখটা কি রক্তজবার মতো লাল হয়ে যাবে না? এইযে আদুরে ভঙ্গির আচরণগুলো করলো, ছোট ছোট স্পর্শে ছুঁইয়ে দিলো, এসবের ব্যতিরেকে সে কি লজ্জায় বুঁদ হবেনা? মুখটা নিজের দিকে ঘুরাতে নিলে, চোখদুটোয় দৃষ্টি মিলাতে নিলে, তখন কি দুহাতে লজ্জামাখা মুখটা তাড়াতাড়ি ঢাকবে না? মাহতিম মনের মধ্যে অজস্র কথা ভাবতে থাকলে পিঠের উপর থেকে ঠোঁট সরিয়ে আনলো, তার নিচু করা মাথাটা উপরে তুলতেই মেহনূরের ডানকাধে থুতনি ছেড়ে দিলো। সদ্য শেভ করা ক্লিন গালটা সন্তপর্ণে মেহনূরের ডান গালে ছুঁইয়ে দিতেই চোখ বন্ধ করে বললো,
– এটা যদি আমাদের রুম হতো, তখন কি আগলে রাখতে?

লজ্জায় নিজেকে আড়াল করতে চাইছে মেহনূর। এতো লজ্জা, এতো চাপা অবস্থা নিয়ে এই মানুষটার সামনে দ্বিতীয়বার পড়া যাবে না। তার মুখে তো কিছু আঁটকায় না, তন্মধ্যে কখন কি বলে ফেলে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। মেহনূর ঢোক গিলে চোখ খুলে দরজার বাইরে দৃষ্টি দিলো, কেউ এখনো দেখেনি দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়তেই পেটের উপর থেকে চাপযুক্ত বন্ধনটা ঢিলে হয়ে গেলো। কাধ থেকে ভারী থুতনিটা সরে যেতেই চুলার একটু পাশে ঠিক ডানদিকটায় উঠে বসলো মাহতিম। ঠান্ডা হয়ে আসা চা-টা ফের গরম দেওয়ার জন্য চুলায় বসালো মেহনূর, একবারের জন্যও সে মাহতিমের দিকে চোখ তুলে তাকালো না। একটু আগের চনমনে ভাবটা এখনো দেহের শিরায়-শিরায় দোল খেয়ে ঘুরছে, যদি চোখের ভাষায় সেটা ধরা খেয়ে যায় তাহলে ঘোর বিপদ আসন্ন! মাহতিম মিচকি-মিচকি হাসিতে মেহনূরের কাণ্ডকারখানা দেখতেই সরল গলায় বললো,
– ম্যাডাম, আপনার হাতের এক কাপ চাই। মেহেরবাণী করে যদি মাহতিম আনসারীর খায়েশটা পূরণ করতেন, তাহলে পুরো নেভি টিম আপনাকে কুচকাওয়াজের সংবর্ধনা দিতো।

চুলার টগবগে চায়ের দিকে তাকিয়ে থাকতেই হঠাৎ মাথা নিচু করে হেসে দিলো মেহনূর। শব্দহীন ভঙ্গিতে হাসতে থাকলে হাসি-হাসি চোখ তুলে মাহতিমের দিকে তাকালো, এক পশলা প্রাণবন্ত হাসি দিয়ে বললো,
– দিচ্ছি।

ফিরতি উত্তরটা শুনে আশ্চর্য হতে গিয়ে হেসে ফেললো মাহতিম। একটু হলেও হোক, মেহনূরের বরফতুল্য জড়তা দিনকে-দিন সময়ে-সময়ে উষ্ণ সাহচর্যে গলতে শুরু করেছে। মাহতিম চুপ করে হাসিমুখে মেহনূরের দিকে তাকিয়ে রইলো। ধোয়া উঠা চা-টা দু’বার দু’দফায় গরম করে দুটো কাপে ঢেলে নিলো মেহনূর, একটা কাপের তলায় পিরিচ দিয়ে সেটা মাহতিমের দিকে এগিয়ে দিলো। বাড়িয়ে দেওয়া কাপটার দিকে একপলক তাকালো মাহতিম, পরক্ষণে মেহনূরের দিকে তাকিয়ে পলকহীন দৃষ্টিতে বললো,

– চিনিটা যদি চেখে দেখতেন, আমার মতো ব্যস্ত মানুষটার কষ্টটা একটু কমে যেতো।

কথাটার ইঙ্গিত বুঝতে একটুও সময় লাগলো না, চট করে পুরোনো দিনের স্মৃতিকথা মনে পরলো। সেই রাতেরবেলা সবাই যখন ঘুমের রাজ্যে নাস্তানাবুদ, তখন একাকী রান্নাঘরে চায়ের পসরার সামনে হাজির হয়েছিলো এই অ’সভ্য খ্যাত লোকটা। সেদিনও একই কায়দায় এক কাপ চায়ের ফরমাশ করেছিলো সে, বুদ্ধির উপর ভেলকি দিয়ে মেহনূরের চুমুক বসানো কাপে সে নিজেও ঠোঁট লাগিয়ে চুমুক দেয়, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা কৌতুহল কিশোরীর কাছে নিজের আর্দ্র অনুভূতি ব্যক্ত করে লোকটা। আজও এই লোকটা তার কাছে মনের রুদ্ধ-দ্বার খুলে আবদারের বায়না চেয়ে বসেছে। মেহনূর ইতস্তত ভঙ্গিতে নত মাথায় কাঁচুমাচু করতে থাকলে হঠাৎ মেহনূরের পেছনে থাকা দূরবর্তী দরজায় দৃষ্টি থমকে গেলো মাহতিমের। সাবু খালা রান্নাঘরে ঢুকবে কিনা সেটা নিয়ে হাঁশফাঁশ করছিলো, তার এদিক-ওদিক করা দ্বিধাপূর্ণ দৃষ্টি যখন একজোড়া তীক্ষ্ম দৃষ্টির পানে পানে পরলো, সে ভয়ে ভূত দেখার মতো শিউরে উঠে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো, তাড়াতাড়ি করে নিজেকে স্বাভাবিক করার ধান্দায় জোরপূর্বক হাসি ছুঁড়ে দিলো। কিন্তু আফসোস, লাভ হলো না। ওই তীক্ষ্ম দৃষ্টি তার ধারালো-ভয়াবহ চাহনি দিয়ে ভেতরের ক্ষেপাটে ভঙ্গিটা এমন ভাবে প্রকাশ করলো, সাবু খালা এক সেকেন্ডও দাঁড়ানোর স্থিতিতে রইলো না, ভীতিগ্রস্থ মুখ নিয়ে তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলো। এদিকে মেহনূর নিজের প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থাটা কোনোমতে কাটিয়ে চায়ের কাপে ঠোঁট চেপে দিলো, ছোট্ট এক চুমুক দিয়ে মাহতিমের দিকে ঠেলে দিলো কাপটা। মেহনূর লজ্জাহত অবস্থার জন্য চোখ তুলেনি, যদি একবার চোখ তুলে মাহতিমের দিকে তাকাতো, ভয়ে হয়তো সহজলভ্য আচরণটা আর কখনোই দেখাতে পারতো না মেহনূর।

.

দিনের আলোটা নেভার কৌশলে কমলাবর্ণের চাকাটা পশ্চিমে এখন ডুবো-ডুবো করছে। সূর্যের তেজীভাব হ্রাস পেয়ে ঠান্ডা বাতাসের ঢল নেমেছে। প্রকৃতির মাঝে দেখা যাচ্ছে বেগুনি আকাশের দারুণ আদিখ্যেতা, সেই আকাশে ডান ঝাপটে নীড়ে ফিরছে পাখিদের ব্যস্ত দল। কিছু কুচকুচে কাক কুৎসিত ডাকে ‘ কা কা ‘ করছে, বাতাসের জোরালো ঝাপটা খেয়ে গাছের পাতারা কল্লোল করছে এখন। দ্বিগ্বিদিক ছেয়ে যাচ্ছে নিরবতার চাদর, শহুরের হুল্লোড় কমতে-কমতে কয়েকটা হর্ণের বাজনা শোনা যাচ্ছে। টাইলসে বাঁধাই করা পরিষ্কার ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে মাহতিম, তার পাপড়িভরা নয়নদুটো আকাশের উপর ন্যস্ত। আজ বাইরে যাওয়া হয়নি বলে চুলের উপর জেলের আস্তরণ পরেনি, জেলহীন চুলগুলো বাতাসের সান্নিধ্য পেয়ে থেমে-থেমে উড়ছে। গাঢ় বাদামী রঙের শার্টটা এখন কালো হুডির নিচে ঢেকে আছে, বুকের কাছে হুডির চেইনটা লম্বালম্বি করে খোলা। ওই চেইন খোলা অংশ দিয়ে দেখা যাচ্ছে ভেতরের বাদামী শার্ট, শার্টটার প্রথম বোতামটা খোলা থাকার কারণে বাতাসের ঝাপটা লেগে বুকের কিন্ঞ্চিত অংশ উন্মুক্ত হয়, আবার বাতাসের ঝাপটা কমে গেলে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। পরশু দিন কক্সবাজার যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করেছে মাহতিম, তার ফিল্ডের মূল ঘাঁটিটা চট্টগ্রাম শহরে। সেখান থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কতবার ঘিয়েছে সেটা অবশ্য বেহিসেব। এবার পরিবার নিয়ে বেড়িয়ে আসার চিন্তাটা পাকাপোক্ত করেছে শুধুমাত্র মেহনূরের জন্য, মেহনূর আজ পযর্ন্ত বাড়ির গন্ডি পেরিয়ে প্রকৃতি দেখেনি। মাহতিম হিমেল হাওয়ার ওই সাঁঝের মায়ায় চোখ বন্ধ করলো, মানসপটের সাদা ক্যানভাসে রঙতুলি চালিয়ে বেশ রঙিন ছবি তৈরি করলো, সেখানে মেহনূর নামক হাস্যোজ্জ্বল কিশোরীর চোখে-মুখে লজ্জার ছাপ, পড়নে সোনালী পেড়ে লাল টুকটুকে শাড়ি, নাকে বিয়ের সাজের মতো সোনালী রঙের গোল নোলক, মাথাটা টিকলী সমেত অলঙ্কৃত, হাতভর্তি বধূর সাজের মতো ভারী-মোটা চুড়ি। রঙবেঙরের ফুলের মাঝে সুসজ্জিত ছোট্ট ঘরে নূপুরের পদধ্বনিতে আগমন করবে মেহনূর আফরিন। লম্বা ঘোমটার আড়ালে যার সমস্ত রূপ আবৃত থাকবে সেদিন। দীর্ঘদিনের অপেক্ষা, উৎকন্ঠা শেষে তীব্র আকাঙ্ক্ষিত দিনটায় স্বপ্নচারিনীর মেহেদি রাঙা হাতদুটো অধিকারের আবেশ খাটিয়ে নিজের হাতে পুড়ে নিবে। মেহেদির সুক্ষ সৌন্দর্যের উপর গাঢ় চুম্বনের ওষ্ঠজোড়া চেপে রাখতে দিবাক্ষণ প্রস্তুত যেনো, লজ্জায়-ভালোবাসায় দুরুদুরু করা বুকটায় একটু সাহস ভরে চোরা নজরে তার প্রাপ্তবয়স্ক সুদর্শণ পুরুষটাকে প্রাণভরে দেখবে মেহনূর, হঠাৎ দুজনের মাঝে চোখাচোখি হতেই…

– হ্যালো আনসারী, একা একা এখানে কি করছো? খারাপ লাগছে নাকি? কোম্পানি দিবো?

রঙিন কল্পচিত্রে কেউ যেনো কালো ঢেলে দিলো। সেই কালির গাঢ়তা এতোই প্রকট হলো, কোনোভাবেই পুরোনো চিত্রটা ফিরে পেলো না মাহতিম। চোখের বন্ধ কপাটটা খুলে সঙ্গে-সঙ্গে ডানে ফিরে তাকালো, ঠিক পাশাপাশি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনামিকা। মধ্যবর্তী দূরত্ব দেখে রাগে নিজেই খানিকটা দূরত্ব করে পিছিয়ে গেলো মাহতিম, রেলিং থেকে হাত সরিয়ে ধীরেসুস্থে ট্রাউজারের দু’পকেটে হাত গুঁজে ফেললো। অনামিকার পোশাকে একবার চোখ বুলিয়ে ঘেন্নায় অন্যদিকে মুখ ফেরালো। অনামিকা হাতদুটো ভাঁজ করে লাস্যময়ী হাসি ছুঁড়ে বললো,

– অনেষ্টলি স্পিকিং আনসারী, ডে-বায়-ডে ইউ আর গেটিং হ্যান্ডসাম। মাশল ফুলে তো দেখি হার্টবিট মিসের অবস্থা করে ফেলেছো। তা তোমার ফিগার দেখে তো আমারই প্রেম পাচ্ছে, ওর কি একটুও প্রেম পায় না?

অনায়াসে কথাগুলো বলে দিয়ে টসটসে চোখে আপাদমস্তক দেখতে লাগলো অনামিকা। একদিন এই যুবা পুরুষের উপরই নিয়ন্ত্রণ হারাতে বসেছিলো সে, হারাতে গিয়ে নিজের সম্রন্ত্র ব্যক্তিত্বের উপর এমন অপঘাত খেলো সেটার মাশুল এখনো মনের মধ্যে দগদগে হয়ে আছে। অনামিকার তেরছা খোঁচায় ক্ষেপার পরিবর্তে বাঁকাহাসি দিলো মাহতিম। দৃষ্টিদুটো অনামিকার দিকে স্থির রেখে পায়ে-পায়ে একদম নিকটে এগুতে লাগলো, এমন দৃশ্য দেখে লাস্যময়ী হাসিটা উবে গিয়ে এক লহমায় আতঙ্কগ্রস্থ দৃষ্টি ধারণ করলো। আতঙ্কের আভাসটা অনামিকার চোখে-মুখে ফুটে উঠলে বাঁকা হাসিটা গাঢ় করে একদম কাছে গেলো মাহতিম, মাথাটা নিচু করে অনামিকার দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে কয়েক মিনিট তাকিয়ে থাকলো। অনামিকা যেনো নিজের মধ্যে নেই, সে আবারও অতীতের ভুলের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে। যেই কড়া পারফিউমের ঘ্রাণে দেহের ভেতর নিভু-নিভু কোষগুলো উত্তেজনায় উদ্দীপ্ত হয়ে যেতো, যেই চাহনিতে দৃষ্টি পরলে নিজের বিবেক-আবেগ কাজ করতো না, যেই বাঁকা ঠোটের হাসি দেখলে বুকের ধুকধুকনি নিশ্বাসের ব্যাঘাত ঘটাতে তটস্থ থাকতো, আজ ফের একই অবস্থা হচ্ছে। অনামিকা কন্ঠ গুলিয়ে ফের তোতলামি ভঙ্গিতে সুর ধরেছে,

– ইইইউ আআর গিভিং মি ডেডে’ন্ঞ্জা’রারাস লুলু’ক মাহতিতিম, প্লিপ্লিপ্লিজ ডোন্ট ডু দ্যাদ্যাট..

মাহতিম চওড়া করে হেসে দিলো। নিচু গলায় ক্ষো’ভ দেখিয়ে বললো,
– ইউ আর জাস্ট এ্যা ভা’লগার! আমি সেদিনও তোমায় ঘৃ’ণা করতাম, আজও তোমায় প্রচণ্ড বেশি ঘৃ’ণা করি। তুমি আমার মেহনূরের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবে, ওর আশেপাশেও যদি তোমার নোং’রামির ছায়া ভিড়তে দেখি, গতবার যেই হাল করেছিলাম, এবার একদম নৃ’শংস অবস্থা করে ছেড়ে দিবো। তোমার চৌদ্দগোষ্ঠীর একটাকেও আমি মাহতিম ভয় পাই না। পলিটিক্যাল পাওয়ার কতো খাটাতে পারো, খাটাও। আমিও মুখে চিড়া ভিজিয়ে তামাশা দেখবো না। চুপ আছি, তার মানে নিশ্চয়ই এটা না, আমি কিছুই করতে জানিনা। আমার মা’কে তোমরা উলটা-সিধা যতোই বুঝাও, আমার আচরণ কোন্ পর্যায়ে জ’ঘন্য হতে পারে সেটা একবার প্রমাণ পেয়েছো। এবার যদি ধরি, খু’ন করে এমন জায়গায় পাঠিয়ে দিবো, সারা জনম খুঁজলেও লা’শের অস্তিত্ব খুঁজে পাবেনা।

বিক্ষোভে ফেটে পরা বাক্যগুলো শশব্যস্তে ছুঁড়ে দিলো মাহতিম। নিচু করা মাথা স্বাভাবিক করে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো, বিদ্যুপৃষ্ঠের মতো শক্ত থাকা অনামিকা থরথর ঠোঁটে স্থির চোখে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। চোখের উপর টলটলে অশ্রুর জোয়ার দেখে একই স্টাইলে আরেকদফা বললো মাহতিম,

– তোমার রজনী ফুপিকে বিশেষ ভাবে সর্তক সংকেত দিয়ে দিও। বলে দিও, যেই হাত দিয়ে আমার বুকের উপর মোচ’ড়ানোর সাহস দেখিয়েছে, ওইহাত আমি সুস্থ রাখবো না। চললাম!

পকেট থেকে দুহাত বের করে মাথায় হুডির টুপিটা এক ঝটকায় টেনে নিলো মাহতিম। ছাদ থেকে বেরিয়ে যেতে-যেতে হঠাৎ দরজার মুখে দাঁড়িয়ে পরলো, কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে শেষে মুখ ঘুরিয়ে স্বাভাবিক এবং সংযত কন্ঠে বললো,

– ট্যূরে যদি ঘাপলা করতে দেখি, একেবারে সমুদ্রের মধ্যেই অস্তিত্ব গেঁ’ড়ে দিয়ে আসবো। লাস্ট এলার্ট!

চলমান .

#ফাবিয়াহ্_মমো .

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here