#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#পর্বসংখ্যা_৩৭.
#ফাবিয়াহ্_মমো .
শেষ অংশসংখ্যা .
নিশ্বাসটা যেনো গলার মধ্যে আঁটকে গেছে, চোখদুটোর অবস্থা বিষ্ময়ে অভিভূত। মেহনূর বিধ্বস্ত রুমটার ভেতর একপা-একপা করে এগুচ্ছে, ওমনেই নিশ্বাসের প্রখর যেনো ছ্যাৎ ছ্যাৎ করে বুকের পিষ্টনে আঘাত করছে। বিছানার চাদরটা অস্বাভাবিক আকারে দলা পাকিয়ে আছে, যেনো টেনেটুনে ছিঁড়তে চাওয়ার বাসনা ছিলো। ফ্লোরের উপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছেঁড়া বালিশের তুলা, টেবিলের উপর যে গ্লাস দুটো রেখেছিলো সেগুলো এখন চূর্ণবিচূর্ণ। স্বাভাবিক কায়দায় রেখে যাওয়া রুমটা একরাতের ভেতর লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। কে করেছে, কেনো করেছে কিচ্ছু মাথায় ঢুকছেনা, কেনো এসব হলো? মেহনূর জড়সড় মন নিয়ে বিছানার কাছে এসে দাঁড়ালো, ভীতশঙ্কিত চাহনি নিয়ে ধীরে-ধীরে ধ্বংসাত্মক অবস্থা দেখতে লাগলো। দেখতে-দেখতে যেই ভীতিপ্রবণ চোখদুটো আলমারির দিকে আঁটকালো, তখনই বিস্ফোরণ চাহনিতে মুখের উপর হাত চাপা দিলো মেহনূর। উন্মাদের মতোই হোক, বা অস্থিরচিত্তের মতোই, মেহনূর ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র কাঁচকণাকে উপেক্ষা করে দৌড়ে সেদিকে পা বাড়ালো। পায়ের তলায় নরম চামড়া ভেদ করে ক্ষুদ্র ধারালো কাঁচ টুকরো ঢুকলো, ব্যথায় চোখ খিঁচে আসলেও নিচের ঠোঁটটা দাঁতে কামড়ে হজম করলো। হাতদুটো দিয়ে পাগলের মতো আলামারির ভেতরটা হাতাপিতা করতে লাগলো মেহনূর, প্রত্যেকটা হ্যাঙ্কার সরিয়ে-সরিয়ে বেঁচে যাওয়া শাড়ির খোঁজ করতে লাগলো। সতেরটা শাড়ির একটা শাড়িও অবশিষ্ট নেই, সবগুলো শাড়ি নৃশংসভাবে কেটে ফেলা হয়েছে। তবুও উন্মাদের মতো বারবার দেখতে লাগলো মেহনূর, পায়ের তলায় যে কঠিন ব্যথা হচ্ছিলো সেটা কোনোভাবেই তোয়াক্কা করলো না। গুণে-গুণে সতেরটা শাড়ি দিয়ে লাগেজভর্তি করে দিয়েছিলো মাহতিম। যাওয়ার আগে একটা কথাই বলেছিলো, বয়সটা যখন আঠারোয় এসে পৌছাবেতখন আঠারো নাম্বার শাড়িটা সে নিজে এসে কিনে দিবে। তদ্দিন পযর্ন্ত সতেরটা শাড়ির সঙ্গেই যেনো দিনগুলো কাটতে থাকুক, কিন্তু আজকের এই ঘটনা সমস্ত কিছু চুরমার করে দিয়েছে। মেহনূর নিরুপায় হয়ে নিস্তেজ ভঙ্গিতে থেমে যায়, নষ্ট করা শাড়িগুলো ওভাবেই রেখে আলামারি থেকে ঘুরে দাঁড়ায়। প্রত্যেকটা অবস্থা দেখে চিল্লিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। যেদিন থেকে মাহতিম বিদায় হলো সেদিন থেকেই মনের ভেতর ভীতি ঢুকে গেছে। এই ভীতিটা দিনকে-দিন ভয়ানক আকারে বাড়ছে, শুধু বাড়ছে। কমার অবস্থা একদম নেই। মেহনূর বিকারহীন ভঙ্গিতে থম মেরে ছিলো, আস্তে-আস্তে বাস্তবিক অবস্থায় ফিরে এলে পায়ের তলাটা যেনো বিষিয়ে উঠলো। ফ্লোরে ধপ করে বসতে পারলে শান্তি পেতো মেহনূর, কিন্তু কাঁচের টুকরো দিয়ে ঘরভর্তি ছড়িয়ে আছে তখন। শাড়ির কুচিগুলো ডানহাতে খাবলে একটু উঁচু করে তুললো শাড়িটা, অন্যহাত দিয়ে শাড়ির আচঁলটা মুঠো করে ধরে রইলো। ধীর কদমে এগুতে-এগুতে বহুকষ্টে ছাদের পরিখা পার করলো। এরপর সিড়ি ধরে নিচে নামতেই ব্যথাতুর কন্ঠে ‘ মা ‘ বলে ডেকে উঠলো মেহনূর। ডাকটা যে বেশিদূর যায়নি এবং কারোর কানেই পৌঁছনোর কথা না সেটা বুঝতে পারলো মেহনূর, কিন্তু গলা উঁচিয়ে যে কাউকে ডাকবে সেটাও তীব্র যন্ত্রণার কাছে পরাস্ত হয়ে যাচ্ছে। রজনীর রুম থেকে পরিষ্কারের কাজ শেষ করে সাবু খালা পান চিবাতে-চিবাতে বের হচ্ছিলো, জিহবা দিয়ে উপরপাটির দাঁতগুলো বুলিয়ে নিতেই সিড়ির দিকে দৃষ্টি পরলো। ভ্রুঁ খানিকটা কুঁচকে অনেকটা কৌতুহলের সাথেই সেদিকে এগিয়ে গেলো, মেহনূরের যন্ত্রণাকাতর মুখ দেখে ওর দিকে আপাদমস্তক তাকিয়ে বললো,
– ও বউ, তোমার মুখ এমুন লাল হইয়া আছে ক্যা? কুনোহানে বিষ-ব্যাথা করতাছে নি? তোমার অবস্থা যে আমার কাছে ভালা ঠেকতাছে না।
মেহনূর খিঁচুনি দেওয়া চোখদুটো পিটপিট করে খুললো, অনেক কষ্টে ঢোক গিলতেই আবারও চোখ খিঁচুনি দিয়ে মাথানত করে বললো,
– পায়ে কাঁচ ঢুকেছে খালা। আমি ঠিকমতো হাঁটতে পারছিনা, খুব জ্বলছে।
‘ হায়, হায় ‘ আর্তকন্ঠে চিল্লিয়ে উঠলো সাবু খালা। ঢলঢলে দেহটা নিয়ে দ্রুত সে মেহনূরের হাতটা শক্ত করে ধরলো। মেহনূরের একটা হাত নিজের কাধের উপর টেনে নিতেই চিন্তিত কন্ঠে বললো,
– বউ কামডা তুমি ঠিক করলা? এহন যদি আফায় আমারে ইচ্চামতু বকে তাইলে আমার কি হইবো কওতো দেহি? ইশশি রে, কাঁচ ঢুকলে যে কি ব্যথা! বউ একটু ধৈইর্য্য ধরো, আমি এহুনি তোমার ব্যথা কমায়া দিতাছি।
সাবু খালা কথায় যেমন চটপট, কাজের বেলাতেও পটুতা দেখিয়ে দিলো। মেহনূরের মতো পাতলা দেহী মানুষকে সে একাই ধরে-ধরে কোনো কষ্ট ছাড়া মাহতিমের নিয়ে গেলো। বিছানায় বসিয়ে দিতেই মাথায় রঙচটা আচঁলটা ঠিক করে ব্যান্ডেজের সরন্ঞ্জামাদি এনে মেহনূরের মুখোমুখি হয়ে বসলো। স্যাভলনের মুখটা তিন আঙ্গুলে ঘুরাতে-ঘুরাতেই বললো,
– পা দুইটা আস্তে কইরা কোলে তুলো বউ।
মেহনূর দাঁত-মুখ শক্ত করে পাদুটো সাবু খালার কোলের উপর তুললো। খুলে রাখা স্যাভলনের চ্যাপ্টা বোতলটা একপাশে রেখে ছিলো সাবু খালা, খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে পায়ের তালুটা দেখতেই ব্যথিত দৃষ্টিতে বলে উঠলো,
– বউ গো, যেই সর্বনাশ করছো এই সর্বনাশের কথা যুদি বড়বাবায় জানে, আমারে না ধুইয়া ফালাইবো! এইডা কি করলা কও দেহি? ক্যামনে তুমি সর্বনাশডা করলা?
মাহতিমের প্রসঙ্গ আসতেই খিঁচুনি দেওয়া চোখদুটো খুলে তাকালো মেহনূর, এদিকে পাকা হাতে তুলো ছিঁড়ে ঘা পরিষ্কার করছে সাবু খালা। ব্যথায় যেনো বিদ্যুতের মতো টনটন করে বাজছে মেহনূরের,হাঁটুর উপর খামচে রাখা হাতটা আরো শক্তভাবে খামচে নিয়ে রুষ্ট গলায় বললো সে,
– খালা, আপনার কাছে অনুরোধ, আপনি ভুলেও উনার কাছে কিছু বলবেন না। আমার কথাটুকু মান্য করুন, উনি শুনলে তুলকালাম কাণ্ড বাঁধিয়ে দিবেন।
কাঁচের ক্ষুদ্র কণাটা এইফাঁকে দু’আঙ্গুলের নখ দিয়ে টেনে বার করলো সাবু খালা, আচমকা ব্যথায় অস্ফুট সুরে শিউরে উঠলো মেহনূর। চোখদুটো বন্ধ করে ঠোঁট গোল করে সশব্দে নিশ্বাস ছাড়তেই সাবু খালা সেখানে তুলা চেপে বললো,
– তোমার এই অবস্থার কথা আমার কওন লাগতো না। তোমার দুই নাম্বার জামাই গিয়া আসল জায়গায় পাচার কইরা দিবো।
চট করে চোখ খুলে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালো মেহনূর। চিকন-চিকন ভ্রুঁদুটো কপালে ভাঁজ ফেলে দিলো। হাঁটুর উপর খামচে ধরা হাতটা ধীরে-ধীরে শিথিল হতে থাকলে সাবু খালা ওর দিকে দৃষ্টি তুলে বললো,
– ওই পাকনারে থামান যাইতো না বউ। বড়বাবার কাছে ঠিকই লাগায়া দিবো। তার চেয়ে তোমারে ভালা বুদ্ধি দেই শোনো, তুমি এহুনি বড়বাবারে ফুন দিয়া ঘটনাডা কইয়া দেও। তাইলে আর সমিস্যা হইবো না।
মেহনূর মুখ ফুটে কিছুই বললো না, ওইমূহুর্তে স্থির হয়ে চুপ থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এমনেতেই রুমের অবস্থা দেখে মাথাটা ভোঁ ভোঁ করছে, তার উপর দ্বিতীয় দুশ্চিন্তায় মগ্ন হলে সর্বনাশটা ঠিকই হবে। পাদুটো সাদা ব্যান্ডেজে ঢেকে দিয়ে রক্তাক্ত তুলাগুলো ডাস্টবিনে ফেললো সাবুখালা, ফিরে এসে মেহনূরের সামনে বসতেই একগাদা প্রশ্ন ছুঁড়ে বসলো। পড়নে বাটিকের সবুজ শাড়ি, সবুজের উপর কমলা রঙের গোল-গোল ছাপ, ব্লাউজটা বাহুদুটোর উপর টাইট ফিটিং হয়ে চিপসে আছে, পেটের ভূড়িটাও বেশ স্বচক্ষে বোঝা যায়। পানের রসে ঠোঁটদুটো টকটকে লাল, দাঁতও লালবর্ণে লেপ্টে আছে, ‘ আনসারী নিবাসে ‘ প্রায় পনেরো বছর যাবৎ বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করছে, চালচলন এবং দেহের স্থূলতা দেখে বয়সের কোঠা অনুমানের বাইরে। মেহনূর অনেকক্ষণ যাবৎ চুপ থেকেও সাবু খালা খোচাখুচির প্রশ্ন থেকে রেহাই পেলো না, ভীতিকর পরিস্থিতিটা যথাসম্ভব সংক্ষেপেই বলে দিলো মেহনূর। সাবু খালা এতো বড় ঘটনা শুনে কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখালো না, উলটো ঝিম মেরে কিছুক্ষণ অন্যমনষ্ক হয়ে বসে রইলো। মেহনূর ভেবেছিলো সাবু খালা এই ঘটনা শুনে এলাহীকাণ্ডের মতো বাড়ি মাতিয়ে তুলবে, নিজেই এদিক-ওদিক না তাকিয়ে মাহতিমকে ফোন করে বসবে। অথচ চরম আশ্চর্যের ব্যাপার, সে কিছুই করলো না। শান্ত-স্থির হাবভাব দেখে মেহনূরের মনটা খটমট করতে লাগলো, নিশ্চিতরূপে বলা যায় সাবু খালার নিঃশ্চুপের পেছনে বিরাট কোনো কারণ লুকিয়ে আছে। মেহনূর মারজার জন্য খোঁজ করলো, এদিকেও সে জানতে পারলো মারজা খুব সকালের দিকে ডাক্তারের কাছে চেক-আপ করতে গিয়েছে। মেহনূরকে তিনি সঙ্গে নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু রজনীর জন্য নাকি নেননি। অন্যদিকে হাতমুখ ধুয়ে পরিপাটি হয়ে বড়ভাইয়ের রুমে আসে মাহদি। সবসময়ের মতো আজও সে মাহতিমের রুমে মেহনূরকে পেয়ে যায়, কিন্তু পায়ের দিকে দৃষ্টি যেতেই পুচকে দেবরের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হয় মেহনূর। অনেকটা নিরুপায় হয়েই মাহদির কাছে সব কথা বলে দেয়, এতেও মাহদির গভীর কৌতুহলের জায়গাটা তৃপ্তি পায়নি। মেহনূরের সরল মস্তিষ্ক যেখানে গোলকধাঁধার নিয়ম ধরতে পারতোনা, সেখানে বড়ভাই মাহতিমের সাথে উঠ-বস করতে-করতে মাহদি এসব নিয়ে যথেষ্ট তৎপর হয়েছে। আজও সে গোড়ার দিকটা ধরার জন্য মেহনূরকে নাস্তা খাওয়ার নাম করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়, ট্রাউজারের ডান পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফোনের অস্তিত্বটা দেখে নেয়, এরপর সোজা ছাদের রুমটায় চলে আসে মাহদি। দরজার পর্দাটা ডানহাতে সরিয়ে ভেতরে ঢুকতে নিলে চোখ ছানাবড়া অবস্থায় থমকে যায়, এক-এক করে সবক’টা জিনিসে চোখ বুলিয়ে তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ফোন বের করে। আজ কোনোভাবেই অস্থির হলে চলবে না, যথাসম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টায় মাহদি অনুভব করলো তার পাদুটো কাঁপছে। ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা। তবুও মনের উপর সাংঘাতিক জোর খাটিয়ে কলটা ডায়ালে ফেললো মাহদি, কোমরে ডানহাত রেখে কানে ফোন ঠেকালো তখন। পরপর দুটো রিং যেতেই ওপাশ থেকে রিসিভ হলো কলটা, মাহদি তৎক্ষণাৎ ত্রস্তভঙ্গিতে বলতে শুরু করলো,
– আপু, ভাইয়া সবাই শোনো, প্লিজ শোনো, আজ বাড়িতে মা নেই। মা সম্ভবত ইকবাল আঙ্কেলের কাছে গিয়েছে। আমার বউয়ের রুমটা একদম তছনছ করা, আমি মাত্র দেখেছি। ওর পায়ে দেখলাম সাবু খালা ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। আমি কি কর —
কথাটা বলতে যেয়ে আঁটকে গেলো মাহদি। ভয়টা যে ওকেও কঠিনভাবে কাবু করে ফেলেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। মাহদি শুষ্ক ঠোঁটে জিভ বুলিয়ে লম্বা-লম্বা নিশ্বাস টানতে লাগলো, গলাটা ভেজানোর জন্য বরফ ঠান্ডা পানি দরকার। বরফ কুচি ছেড়ে দেওয়া পানি ঢকঢক করে গিললে হয়তো খরতপ্ত গলাটার তৃষ্ণা মিটবে। মাহদির কথা মাঝপথে থামার পর কলের ওপাশ থেকে একযোগে চিল্লিয়ে উঠলো আটজন,
– মাহদি তুই ঠিক আছিস?
আটটা গলা একসাথে চিল্লানোর জন্য চমকে উঠলো মাহদি, তাড়াতাড়ি কান থেকে ফোনটা একটু দূরে সরাতে বাধ্য হলো। কানটা আরেকটু হলে ঠিকই কালা বানিয়ে ছাড়তো ওরা, মাহদি সাথে-সাথে বিরক্তিতে মুখ ভার করে বললো,
– তোমাদের কতোবার বলবো এভাবে চিল্লাবে না? আমি ভয় পেয়ে যাই জানো না? আমি ঠিকই আছি, আমি মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম। সাবু খালাকে রুম পরিষ্কার করতে বলে এলাম। আমি কি করবো বুঝতে পারছিনা, রজনী মামী অনাকে নিয়ে কালরাত থেকে ফুসুর-ফাসুর করছে। আমি দূর থেকে কিচ্ছু শুনতে পাইনা। আজ মা’ও নেই এখন কি করবো মাথায় ঢুকছেনা।
হোয়াটসঅ্যাপের গ্রুপ কলে একত্র হয়েছে সবাই। সৌভিক অফিসের মিটিং বাদ দিয়ে মাহদির কল ধরে আছে, তৌফ মুখে ব্রাশ ঢুকিয়ে কথা শুনছে, সিয়াম গাড়ি ড্রাইভ করতে-করতে কানে ফোন চেপে আছে, নীতি লেকচার এ্যাটেন্ড করা বাদ দিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসেছে, প্রীতি ক্যান্টিনে বসে আধা খাওয়া চা রেখে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে, সাবির শোয়া থেকে না উঠলেও সজাগ হয়ে গেছে, সামিক আপাতত কাজহীন তাই তার সমস্যা হয়নি, ফারিন ফোনের নেটওয়ার্কটা ঠিকঠাক পাওয়ার জন্য জানালার বাইরে ফোন ধরে আছে, ফোনের স্পিকারটা লাউডে দেওয়া। মাহদির বিরক্তি মেশানো কন্ঠ শুনে সবার আগে চেঁচিয়ে উঠলো তৌফ। ব্রাশটা মুখ থেকে বের করে চেঁচানো সুরেই বললো,
– তুই যে আমার বুকপিন্ডটা খত’ম করার তালে আছোস জানা আছে? তোর কল দেখলেই আমার কলিজা ভয়ে থপথপায়।
তৌফের কথা শুনে এবার ফারিন ভ্রুঁ কুঁচকালো। তৌফের অস্ফুট ভঙ্গির তোতলামি শুনে ফারিন স্পষ্ট গলায় বললো,
– তুমি এমন ‘ ওয়া ওয়া ‘ করে তোতলাচ্ছো কেনো? তোমার কি ভয়ের চোটে মৃগী ব্যারাম ধরলো? আর বুকপিন্ড কি শব্দ? কি আজেবাজে বকছো তুমি?
ফারিনের ত্যাড়ামো ধরনের প্রশ্ন শুনে ক্ষেপে উঠলো তৌফ। গলাটা হাই ভলিউমে উঁচু করে গজগজ সুরে বললো,
– মুখে ব্রাশ নিয়া তারপর কথা বলতাছি বুঝছোস? হাদা কোথাকার, মাথায় সামান্যতম বুদ্ধি নেই। সকালে মানুষ কি করে হ্যাঁ?
তৌফের ক্ষেপাটে ভঙ্গির সুর শুনে ওপাশ থেকে নিরব রইলো ফারিন। নিরব ছিলো সবাই, কারণ হঠাৎ ফোনের মধ্য থেকে ‘ গড়গড় ‘ জাতীয় শব্দ শোনা যাচ্ছে। ফারিন-সহ সবাই তখন কপাল কুঁচকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে, তার আগেই ফারিন হামেশার মতো আগ বাড়িয়ে বললো,
– এই শব্দ কি ফ্লাশের না? ছিঃ ছিঃ তৌফ ভাই তুমি হাই কমোডে —
ফারিনের কথা শেষ না হতেই ছোঁ মেরে কথা টান দিলো সৌভিক। যথেষ্ট সংযত গলায় স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো,
– আমি জরুরী মিটিং ছেড়ে তোদের দুটোর বকবক শুনতে আসিনি। মাহদি চটপট বলতো আর কি কাহিনী হয়েছে? আমি কি ছুটি নিয়ে সেখানে আসবো? তোর কি খুব অসুবিধা হচ্ছে? তুই কি আর দুটো দিন ম্যানেজ করতে পারবি না?
এবার সৌভিকের কথার প্রেক্ষিতে মুখ খুললো মাহদি। যেই কথা বলতে নিবে ছাদের খোলা দরজার দিকে সর্তক দৃষ্টি চলে গেলো ওর। কিছু একটা তীক্ষ্মদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতেই তাড়াতাড়ি কল কেটে ফোন পকেটে ঢুকালো। আজ যেহেতু মা নেই, এই সুযোগটা কি হাতছাড়া করবে ওরা? আদৌ কি হাতছাড়া করার পরিকল্পনা করেছে? ছাদের দিকে কেউ যেনো এগিয়ে আসছে, এগিয়ে আসার জোরদার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। শব্দটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে এখন। খোলা ছাদের উপর তখনই বয়ে চললো দমকা হাওয়া। বাতাসে মাহদির কমলা টিশার্টটা হালকা মতোন উড়লো, মাথার ঝিলমিল করা চুলগুলো বাতাসের দোলায় কপালের উপর আছড়ে পরলো। দুটো কুন্ঞ্চিত ভ্রু’র নিচে একজোড়া সর্তক চাহনি এমন কিছু দেখলো, ওই চোখদুটো রাগে জ্বলজ্বল করে উঠলো আবার।
.
শীতের খোলসে ঢাকা পরেছে প্রকৃতির নান্দনিক রূপ। গ্রামের আনাচে-কানাচে শীতের ভরা মৌসুম। পড়ন্ত বিকেলের সূর্যটা তেজ হারিয়ে পশ্চিমে হেলে পরেছে, অরুণশক্তি নিস্তেজ হয়ে শীতের প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। গ্রামের মানুষরা গায়ে চাদর জড়িয়ে নিত্যকর্মে নেমেছে। কেউ-কেউ অলসতাকে সাঙ্গ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে বেকার। মোল্লাবাড়ির মুখরোচক ঘটনাটা এতোদিনে চাপা পরে গেছে, সবাই ব্যস্ত হয়ে পরেছে অন্য বাড়ির সমালোচনা নিয়ে। কাঠের ইজিচেয়ারে ক্যাচ ক্যাচ করে শব্দ হচ্ছে এখন, শব্দটা নিস্তব্ধ রুমটায় ভূতুড়ে কায়দায় ঘুরপাক খাচ্ছে। রুমে একটি মাত্র জানালা খোলা আছে, সেই জানালা দিয়ে যতটুকু আলো প্রবেশ করছে তা অন্ধকার হ্রাসের জন্য যৎসামান্য। চাপিয়ে রাখা দরজায় ঠকঠক করে শব্দ হলো, ইজিচেয়ারটা সহসা থমকে যেতেই ক্যাচক্যাচ শব্দটা আর হলো না। বাইরে থেকে আগত মানুষটা কান খাড়া রেখেছিলো, অবিরাম শব্দটা থেমে গেলে সে আধ-ভেজানো দরজা ঠেলে দিলো। দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিতেই আধো-আধো অন্ধকার ফুঁড়ে বাঁদিকে দৃষ্টি গেলো লোকটার, গলা খাকাড়ি দিয়ে ইঙ্গিত দিতেই গম্ভীর সুরে এবার ইজিচেয়ার থেকে উত্তর চলে এলো,
– ভেতরে আসো জহিরুল।
খুবই নিঃশব্দ কায়দা বজায় রেখে ভেতরে ঢুকলো জহিরুল। অনেকটা চোরের মতোই ভেতরে প্রবেশ করলো। কোনো বিশেষ আজ্ঞা না পেলেও নিজ দায়িত্বে দরজাটা ভেতর থেকে ছিটকিনি-বদ্ধ করে দিলো। ইজিচেয়ারে দুলতে থাকা মানুষটা ছিটকিনি লাগানোর আওয়াজ পেতেই চোখ কাঠিন্য করে তাকালো, ততক্ষণে জহিরুল সামনে এসে হাজির। ঘিয়ে রঙের পান্ঞ্জাবীটার ডানপকেটে হাত ঢুকালো সে, সঙ্গে-সঙ্গে দুটো খামে বদ্ধ চিঠি সামনে ধরলো হান্নান শেখের। কাঠিন্য দৃষ্টিদুটো বাড়িয়ে দেওয়া হাতের দিকে স্থির এখন। একবার খামদুটোর দিকে তাকালো হান্নান শেখ, আরেকবার দৃষ্টি তুলে জহিরুলের দিকে তাকালো। মার্জিত শব্দে কঠোর আভাসে জিজ্ঞেস করলো জহিরুলকে,
– চিঠি আসার কথা মাঝ রাতে। এখন এসেছে কেনো?
জহিরুল নতমুখে আমতা-আমতা করে বললো,
– চাচাহুজুর, এই ব্যাপারে আমিও কিছু কইতে পারিনা। শফিক্কা আমার হাতে দুইডা চিঠি গুইজা দিয়া কয়, তাত্তাড়ি আমনের হাতে দিতে।
প্রচণ্ড সংকীর্ণ মনে কপাল কুঁচকে গেলো হান্নান শেখের। তিনি নিজেই যেটা নিয়ে ভয়ে-ভয়ে ছিলেন সেটা সম্ভবত ফলতে শুরু করেছে। হান্নান শেখ খামদুটো হাতে নিয়ে উলটে-পালটে দেখতে লাগলেন, ছোট্ট একটা প্রশ্ন জুড়ে জহিরুলকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন,
– তোকে কেউ আসতে দেখেছে?
–
জহিরুল ‘ না ‘ ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে নিজের প্রস্তুত উত্তরটা জানিয়ে দিলো,
– না চাচাহুজুর, কেউ দেহে নাই। সুজলা ভাবী গোয়ালঘরে দুধ দুয়াইতাছে। বাকিরা যার যার রুমে কাম করতাছে। আমি চোখ ফাঁকি দিয়া ঢুইক্কা গেছি।
হান্নান শেখ জহিরুলকে বিদায় দিয়ে এবার খাম নিয়ে বসলেন। ইজিচেয়ারে পিঠ লাগিয়ে মৃদ্যুভঙ্গিতে দুলতে লাগলেন। একটা খামের উপর আরবী হরফে কিছু লিখা ছিলো, বিশেষ খামটা আগে ছিঁড়ে উপুড় করতেই ভেতর থেকে ফস করে কোলে পরলো চিঠিটা। চিঠিটার ভাঁজ খুলে চোখ বুলাতেই চোখের কোটর আশ্চর্যভাবে বড় বড় হয়ে গেলো, ইজিচেয়ারে দোল খাওয়াটা বন্ধ হয়ে গেলো হান্নান শেখের। ঠোঁট নাড়িয়ে চিঠির শব্দগুলো নিঃশব্দে পড়তেই বুকের রক্তস্রোত যেন টালমাটাল হচ্ছিলো। কিংকর্তব্যবিমূঢ় ভঙ্গিতে চিঠির পাতায় গোটা-গোটা শব্দগুলো আবার পড়তে লাগলেন, ফের পড়তে লাগলেন, বারবার পড়লেন, বহুবার পড়লেন। চিন্তায়-দুশ্চিন্তায় চোখ বুজে ফেললে তিনি মনে-মনে আওড়াতে লাগলেন চিঠিটা,
‘ মাহতিম আনসারী পিছু ছাড়েনি কালাম সরদার। ও সবার চোখে বাজেভাবে ভেলকি মে’রেছে। জীবিত থাকলে গুরুতর সমস্যায় পড়বেন। দ্রুত মৃ’ত্যু-সংবাদ ধার্য করুন। ‘
.
পিসিটা বহুক্ষণ যাবৎ অন করা, সেটা বন্ধ করার প্রয়োজন হয়নি। রুমের ভেতরটা নীলাভ আলোয় স্বল্পোজ্জ্বল হয়ে আছে, থাইগ্লাসটা খুলে রাখা। জানালার দুপাশে জড়ো করে রাখা পর্দাগুলো বাতাসে উড়ছে, সেই সঙ্গে অনুভব করিয়ে দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। কফি মেকার থেকে মোটা পেটের মগটায় ঢকঢক করে কফি ঢালছে নোমান, কফির অবস্থা দেখে মুখ কুঁচকে রেখেছে। কালো পানীয়টার মধ্যে চিলতেখানি চিনির কণা পরেনি, না পরেছে এক চামচ দুধ। মাঝারি সাইজের কফি মগটায় পাঁচ চামচ কফি পাউডার মেশানো হয়েছে, দ্রবণটা হয়েছে কুচকুচে কালো। গন্ধে এতো বেশি তিক্ততা ছড়াচ্ছিলো, না-জানি খেতে কেমন জ’ঘন্য হয়! তবুও নাকি জঘন্য পানীয়টা বসের জন্য তৈরি করাই লাগবে, নইলে কি অবস্থা করে দিবে কে জানে। ছোট্ট একটা আয়তাকার ট্রের উপর সদ্য বানানো কফিটা রাখলো, ট্রে’টা দুহাতে ধরে উক্ত রুমটার দিকে যেতে লাগলো নোমান। রুমের দরজাটা যদিও পুরোপুরি খোলা, তবুও সে সৌজন্যতা কায়েম করে দরজায় নক করলো। নীলাভ বাতিতে আলোকিত রুমটা দেখে কেমন জানি গা ছমছম করলো নোমানের। বাতাসের শোঁ শোঁ ধ্বনি অদ্ভুত ভাবে উত্থাল করছে, রুমের দিকে তাকালে মনেহয় মৃত্যুপুরীর রাজ্য, পিসিটা কেমন নির্বিকার ভাবে জ্বলে আছে, মনে হচ্ছে রুমটার সমস্ত অন্ধকার দেখে খুশীতে মত্ত। নোমান এবার খুব সাবধানী গলায় ডাক দিলো,
– স্যা-স্যার,
গলাটা যেনো কেঁপে উঠলো নোমানের, কেনো কেঁপে উঠলো সে জানে না। সে যথেষ্ট সাহসী ব্যক্তি, প্রচুর দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ড করার রের্কডও তার আছে। এতোকিছুর পরও এই একটা ব্যক্তির কাছে আসলে তার সকল সাহস কোণঠাসা হতে বাধ্য। পিসির সামনে মুখোমুখি অবস্থায় থাকা রকিং চেয়ারটা নড়েচড়ে উঠলো। একনিমিষেই সেটা পিসির দিক থেকে মুখ সরিয়ে নোমানের দিকে ঘুরে গেলো, নোমান অবশ্য চমকালো না। গতরাতে এরকম দৃশ্যের অভিজ্ঞতা আরো একবার হয়েছে, তাই আজ সে উদ্যোগী ভঙ্গিমায় সচেতন। নোমান অবস্থা দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্বে আরেকদফায় ডেকে উঠলো,
– স্যার? স্যার, আপনার কি মাথাব্যথা করছে?
প্রশ্ন করার পর কয়েক মিনিট নিরব রইলো, এর পরপরই নিরবতা চ্ছিন্ন করে ভারী গলায় বললো মাহতিম,
– মগটা টেবিলে রেখে বিদায় হও। লাইট জ্বালাতে যাবে না।
নোমান যথা আজ্ঞাসূচকে ভেতরে ঢুকলো, রকিং চেয়ারের পাশে এসে টেবিলে রাখলো মগটা। ঘাড়টা ডানে ঘুরিয়ে একপলক চেয়ারে হেলান দেওয়া ব্যক্তিটার দিকে তাকালো, সে চোখ বন্ধ করে একটা হাত ভাবুক স্টাইলে হ্যান্ডেল রেখে ঠোঁটের কাছে আঙ্গুল রেখে দিয়েছে। নোমান আবার প্রশ্ন করলো,
– স্যার রাগ না করলে একটা কথা বলি? আপনি একটু ঘুমোন স্যার। ছেঁচল্লিশ ঘন্টা ধরে আপনি কম্পিউটারের সামনে বসে আছেন। আপনার চোখ খুব লাল হয়ে গেছে।
কথাটুকু শেষ করে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো নোমান। ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি রেখে চাপা হতাশার নিশ্বাস ছেড়ে দিলো। ঠোঁটের কাছ থেকে আঙ্গুল সরিয়ে স্বাভাবিক হলো মাহতিম। মগের হ্যান্ডেলটা দু’আঙ্গুলে পেঁচিয়ে টেবিল থেকে তুলে নিলো সেটা, নিচের ঠোঁটটার কাছে মগ এনে গভীর করে এক চুমুক দিলো। তিক্তস্বাদের আভাস কোনোভাবেই মুখের উপর প্রকাশ পেলো না, চোখ বন্ধ করে বহুক্ষণ পর জবাব দিলো মাহতিম,
– বাহাত্তর ঘন্টা খাটতেও সমস্যা নেই নোমান। অসুস্থ হবো না। শুধু মাথাটা একটু ঝিমঝিম করবে এর বেশি কিছু হবেনা। তোমার কাজ না থাকলে একটু পিসির সামনে বসো। আমি কফিটা ততক্ষণে শেষ করে নেই।
বলতে-বলতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলো মাহতিম। মাথাটা আসলেই যন্ত্রণা করছে। নির্ঘুম দশা যে কতটা অসহ্যকর সেটা ফিল্ডে ফিরলেই বুঝা যায়। মাহতিমের নির্দেশ মতো রকিংচেয়ারে বসলো নোমান। ইতিমধ্যে আন্দাজ করে ফেলেছে, নির্ঘাত কোনো গুরুত্বপূর্ণ নিউজের জন্য অপেক্ষা করছে তার বস। এতো খাটাখাটনির পেছনে যেই গূঢ় রহস্য লুকিয়ে আছে, সেটা কিছুক্ষণের মধ্যে বেঁফাস হতে বাকি নেই। মাহতিম ধীরগতিতে হাঁটতে-হাঁটতে জানালার কাছে এসে দাঁড়ালো, ট্রাউজারের লেফট পকেট থেকে ফোন বের করে কল বসালো, ধোয়া উঠা কফিতে চুমুক দিতেই বাঁকানে রিসিভ হওয়ার টিউন শুনতে পেলো। চুমুক শেষে মগ নামাতেই ঝারি লাগিয়ে বললো,
– কিরে ব্যাটা, রিসিভ করতে এতো টাইম লাগলো কেন? থাকিস কোথায়? তোর ভাবী আম্মার খবরটা চটপট দে। আবার যদি ‘ আমার বউ, আমার বউ ‘ করতে দেখি, থাপড়ে দাঁত তুলে আনবো।
ওপাশ থেকে গাঁইগুই করতে-করতে শেষে রাগ দেখিয়ে বললো,
– নিজে খেয়াল রাখতে জানো না? আমাকে শাষাচ্ছো কেনো? সারাদিন তো ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে সময় কাটাও আমার অবস্থা কি করে বুঝবে?
কফিতে চুমুক দিতে গেয়ে ফিক করে হেসে ফেললো মাহতিম। হাসতে-হাসতে আকাশের দিকে অন্যমনষ্ক হয়ে বললো,
– হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিস। আমিতো ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে দিন কাটাই। খুব আরামে কাটছে।
মাহতিমের মুখটা না দেখেও কন্ঠের ধাত শুনে চুপসে গেলো মাহদি। কথাটা আসলেই এভাবে বলা ঠিক হয়নি। সে তো জানেই তার ভাই শুধু-শুধু দূরে গিয়ে থাকছেনা, বাধ্য না হলে কেউ দূরে থাকতে চায়? মাহদি গুমোট অবস্থার ভেতর সকালের ঘটনাটা ব্যক্ত করবে কিনা চিন্তায় পরে গেছে। ভাবতে-ভাবতে শেষে প্রচণ্ড দ্বিধা নিয়ে বলতে শুরু করলে হঠাৎ বিকট উল্লাসে ‘ স্যার এক্ষুনি আসুন ‘ বলে চেঁচিয়ে উঠলো নোমান। গরম কফিতে কেবল চুমুক দিতে নিয়েছিলো মাহতিম, ওমন ভড়কে দেওয়া চিৎকার শুনে কফির আগুনতুল্য তাপটা ঠোঁটে লেগে গেলো ওর। সাথে সাথে ঠোঁটটার জ্বলুনির কমানোর জন্য দুপাটি দাঁত দিয়ে চেপে ধরলো জায়গাটা। কলটা অজান্তেই কেটে দিলো মাহতিম। কি থেকে কি হলো সেটা বুঝার আগেই কঠিন মেজাজে পিছু ঘুরে তাকালো। নোমান এই প্রথম বসের রাগ উপেক্ষা করে আশ্চর্য কন্ঠে হড়বড় করে বলতে লাগলো,
– আপনার ইমেইল চলে এসেছে স্যার। জলদি এদিকে আসুন, এক্ষুনি এদিকে আসুন। দেখে যান আপনার ইমেইল কোত্থেকে এসেছে। স্যার আপনি প্রচণ্ড খুশী হয়ে যাবেন, আপনার এ্যাফ্রড ভেস্তে যায়নি।
– চলমান .
#FABIYAH_MOMO .
( #নোটবার্তা : সামনে কি হতে যাচ্ছে? )