মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤ #পর্বসংখ্যা_৪৫. #ফাবিয়াহ্_মমো . অংশ – ০১.

0
56

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#পর্বসংখ্যা_৪৫.
#ফাবিয়াহ্_মমো .

অংশ – ০১.

বজ্রপাতের নোঙ্গর যেনো কাঁপিয়ে তুলছে ভূমি! একের-পর-এক বজ্রধ্বনি বুকের ভেতর শেঁল বিঁধিয়ে দিচ্ছে! মেঘে-মেঘে ছুটছে বজ্রপাতের স্ফুলিঙ্গ, প্রকৃতি যেনো ক্রুদ্ধ হয়ে বিকট চিৎকারে ফেটে পরেছে, এমনই একটি কালো অন্ধকারে ঢাকা পরেছে সময়ের সন্ধিক্ষণ। ঘড়িতে ভোর ছয়টা বাজতে পাঁচটা মিনিট বাকি আছে, কিন্তু বাইরে নেই এক চিলতে আলো। আলোহীন প্রকৃতিটা কেমন বীভৎস-ভয়াবহ-গা কাঁপানো লাগছে, তা জানালার সরু ফাঁকটা দিয়ে দেখছে মেহনূর। ঘুমটা বজ্রপাতের প্রথম দুটো বাজের সময় ভেঙ্গে যায়, পাতলা হওয়া ঘুমটা আর চোখের কোটের আসেনি। বাবার বাড়িতে থাকলে ঘুমের ভেতরেই এক চিৎকার দিয়ে উঠে পরতো মেহনূর, কিন্তু আজ সেটা মাহতিমের উষ্ণ বুক পেয়ে হলো না। গুটিশুটি পাকিয়ে কচ্ছপের শক্ত খোলসের মতো উন্মুক্ত বুকটার মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলো তখন। মনের অস্থিরতা একটু স্বাভাবিক হলে হাতজোড়া আলগা করে মুখটা উপরে তুললো মেহনূর। না, মানুষটা এখনো ঘুমে মগ্ন। তাকিয়ে থাকতেই হঠাৎ ঠোঁট প্রসার করে মুচকি হাসলো মেহনূর, ঘুমন্ত মুখটাকে আরো কাছ থেকে, আরো নিবিড়ভাবে দেখার জন্য বালিশে মাথা উঠিয়ে রাখলো। মাহতিমের ব্যান্ডেজ খোলা হাতটা আস্তে করে টেনে এনে নিজের গায়ে রাখলো মেহনূর, কম্বলটা টেনে দিয়ে মাহতিমের পিঠের দিকটা ঢেকে দিলো। ক্লিন শেভের পরিষ্কার গালটায় দাড়ি নেই, প্রতিদিন ক্লিন শেভ করাটা তার প্রোফেশনাল কর্মের বৈশিষ্ট্য। ভোরবেলায় উঠাটা তার নিত্যদিনের শ্যাডিউল, আজই একটু চোখ বুজে শান্তির তন্দ্রায় ডুবে আছে। সেই পরিষ্কার গালটার প্রতি ক্ষুদ্র লোভ কাজ করলো মেহনূরের, এই বৃষ্টিমুখর নিরিবিলি মূহুর্তে লোভটা যেনো দেহ-মনে চন্ঞ্চলতা বাড়িয়ে দিলো। মাহতিমের তন্দ্রাচ্ছন্নের সুযোগ নিয়ে একটুখানি ছুঁয়ে দেওয়ার বাসনায় ডানহাতের আঙ্গুলগুলো অগ্রসর করলো মেহনূর, ঈষৎ কাঁপা-কাঁপা আঙ্গুলগুলো গালের পরিখায় রাখতেই পায়ের নখ-থেকে-মাথার চুল পযর্ন্ত শিউরে উঠলো তার। চোখ বন্ধ করে অন্তঃস্থলের অস্বাভাবিকতা প্রশমন করতে গিয়ে ছোট্ট ঢোক গিললো।

– আমার ঘুম কিন্তু তোমার চেয়েও পাতলা মেহনূর।

চকিত ভঙ্গিতে চোখ খুলে লজ্জায় হাত সরাতে নিলো মেহনূর, গাল থেকে যখনই হাত উঠাতে নিলো তখনই মাহতিমের বলযুক্ত হাতের কঠিন থাবা এসে মেহনূরের হাতটা আগের জায়গায় চেপে রাখলো। এবার তন্দ্রাচ্ছন্ন অভিনয় ছেড়ে স্বাভাবিক এবং ঘুমহীন চোখে তাকালো মাহতিম, সরাসরি মেহনূরের দৃষ্টিতে-দৃষ্টি তাক করে বললো,
– তোমার সামনে এ্যালিট ইউনিটের মানুষ শুয়ে আছে। স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং এ্যান্ড স্যালভেজ। তুমি আমার গায়ে হাত রাখবে আর আমি টের পাবো না?

অবাক হয়ে ঢোক গিললো মেহনূর, বিষ্মিত চাহনিটা স্থির রেখে ভয়ার্ত সুরে বললো,
– জ্বী।

মাহতিম চোখাচোখি দৃষ্টিটা অটল রাখা অবস্থায় মেহনূরের হাতটা এনে ঠোঁটের উপর রাখলো। হাতটায় গাঢ় করে ঠোঁটযুগলের অদৃশ্য সীলমোহর ছাপিয়ে দিতেই ধীরাজ কন্ঠে বললো,
– তুমি কি আমাকে এখন পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারো? আমাকে নিয়ে কোনো সন্দেহ বা শঙ্কা উঁকিঝুঁকি করে?

কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাহতিমের হাতের বলয় থেকে ইচ্ছে করে হাত সরালো মেহনূর, মাহতিম অপ্রতিভ দৃষ্টিতে চোখ করতেই মেহনূর পুনরায় মাহতিমের গাল স্পর্শ করলো। চোখ দৃষ্টি অকুণ্ঠ রেখে মুখটা এগিয়ে নিলো। বুকের অকুল চিন্তার নিশ্বাসটা শব্দ করে ছাড়তেই মলিন হাসিতে বলতে লাগলো,

– আপনি কি জানেন, আমি যে নিজেকে পছন্দ করিনা? আমার স্বভাব-চরিত্র নিয়ে এতো গালমন্দ শুনেছি যে এখন নিজের প্রতি এখন ধিক্কার আসে। কেউ যদি বলে ‘ তুমি এটা পারবেনা ‘, তখন আমিও মনে-মনে বিশ্বাস করে ফেলি ‘ আমি সত্যিই ওটা পারবো না ‘। কোনোদিন কারো কথার খেলাফ করিনি, প্রতিবাদ করা আমার ভালো লাগে না। আপন মানুষদের কথায় কিসের প্রতিবাদ করবো বলুন? তাদের প্রতিবাদ করলে যে নিজের কপালেই দুঃখ জুটে! তবুও সত্য হলো আমার জীবনটায় আঠারোটা বছর হলেও আমার জীবনে আঠারোটা মানুষ নেই। আমি লেখাপড়া শেখা এক মূর্খ, যে কিনা গুছিয়ে কথা বলতে জানেনা। সবাই আমাকে নিয়ে নাক ছিটকায়, কারো-কারো কাছে আমি বিরক্তির মানুষ। জানেন, আমি চুপ থাকলেও সব বুঝি। কোনো মেয়ে যদি বাচাল হয় তাহলেও সমস্যা, কম কথা বললেও সমস্যা, স্বাভাবিক থাকলেও কোনো-না-কোনো সমস্যা তাকে ধরবেই। দিনশেষে একটা মেয়ের বিরুদ্ধে আরেকটা মেয়েই আঙ্গুল তুলে কথা বলে। পুরুষের চোখ যদি ছুঁচালো হয়, তাহলে মহিলাদের ঠোঁট ছুঁড়ির মতো ধারালো। হয়তো আমার ঠোঁট ধারালো নেই বলে আমি সকলের কাছে অযোগ্য। আর আপনি একটা অযোগ্যকেই বিয়ে করেছেন, আমার মতো কুচ্ছা শোনা মেয়ের প্রতি তো —

তীব্র ঝাঁকুনি খেয়ে কথা বন্ধ হয়ে গেলো কন্ঠটার! ভূকম্পনের মতো পুরো শরীর কেঁপে উঠতেই নিশ্বাস যেনো কুণ্ডলী পাকিয়ে গলায় বিঁধলো! একফোঁটা নিশ্বাসের জন্য দুহাতের মুঠোতে চাদরটা মোচড়ে এলো, গলা-মাথা-কপাল যেনো ঘেমে উঠার মতো অবস্থা! দম বন্ধ হওয়ার অসহন যন্ত্রনায় শিউরে উঠতেই হঠাৎ গম্ভীর গমগমে সুরটা চাপা ক্ষোভের সঙ্গে ছিটকে এলো,

– ঠিক এভাবেই দম বন্ধ করে মেরে ফেলবো। একদম নিশ্বাস নিতে দেবো না। ঠিক তেঁতাল্লিশ মিনিটের ভেতর তোমার নিশ্বাস ফুরিয়ে যাবে। তুমি আমার সামনে কোন্ স্পর্ধায় এ ধরনের কথা বলার সাহস দেখাও? তুমি কি আমাকে ভয় পাও না? আমার অবস্থা কি হবে ভেবেছো?

অস্থির অবস্থায় উত্তেজিত হয়েছিলো মেহনূর, মাহতিমের কথা শুনে সেই অবস্থা থেকে একদম পরিশ্রান্ত হয়ে গেলো। নিশ্বাসের জন্য আরেকবার মুখ উঁচাতেই প্রশিক্ষণ সম্পণ্ণ হাতের থাবাটা ঢিলা করলো মাহতিম। ছাড়া পেয়ে মুখ হা করতেই চোখ খিঁচুনি দিয়ে লম্বা নির্মল শ্বাস টানলো, ঢোক গিলে গলাটা ভিজিয়ে চোখ খুলে তাকালো মেহনূর। বিশাল দেহের শক্তপোক্ত শরীরটা এখন তার দেহের উপর ঝুঁকে আছে। তার তীক্ষ্ণদৃষ্টির প্রতি একটুও ভয় না পেয়ে চোখে-চোখ রেখে কিন্ঞ্চিৎ হাসি দিয়ে বললো,

– পেতাম। সেই ভয়টা আপনিই দূর করে দিয়েছেন। এর জন্য কেবল আপনি দায়ী।

মাহতিম এখনো গম্ভীর, মুখে ছোট্ট কথা অবধি নেই। একটু থেমে পুনরায় হেসে বললো মেহনূর,

– আপনি আমাকে কোনোদিন মারবেন না। যদি মেরেও ফেলেন তাতে আমার আফসোস — ,

মুখ থেকে কথা লোপাট করলো মাহতিম। তেজপূর্ণ কন্ঠে দৃঢ়তার সাথে বললো,

– আমার অবস্থাই বেহাল হয়ে যাবে। আমি থাকতে পারবো না।

গুড়ুম-গুড়ুম করে আকাশ ডেকে উঠলো, বৃষ্টির সাথে একঝাঁক দমকা হাওয়া ঢুকে পরলো নিরব রুমে। ঠান্ডার প্রখরতাকে জানান দিয়ে ফর্সা হতে লাগলো ঘুটঘুটে কালো আকাশটা। মাহতিম ভারী নিশ্বাস ছেড়ে মুখটা নিচে নামাতে লাগলো তখন, একটা হাত দিয়ে আদর করে ধরলো মেহনূরের গালের আস্তরণ। স্বেচ্ছায় আঁখিপল্লব বন্ধ করলো মেহনূর। নিজের উৎসুক হৃদয়কে সমুখে বাড়িয়ে দিয়ে স্বল্প সময়ের উষ্ণতার জন্য উন্মুখ হলো। কিছুক্ষণ পরেই দুচোখের পাতায় উন্মাদের মতো অধরকার্যের প্রগাঢ় চাপ অনুভব করলো মেহনূর।
.
বন্ধুর বাড়িতে উঠে দারুণ যন্ত্রনার শিকার হয়েছে সামিক। এখানে হুট করেই পানির মটরটা নষ্ট হয়ে সবাইকে কঠিন ভোগান্তিতে ফেলেছে। শহরে বিদ্যূৎ-পানি-গ্যাস তিনটির জন্য হাহাকার অবস্থা থাকে, গ্রামে এসব না থাকলেও বিকল্প এবং আদিযুগের ঐতিহ্য রীতিতে দিব্যি কেটে চলে। নাওয়া নেই সেই গতকাল থেকে, হাতমুখ ধোয়ার জন্য প্লাস্টিক বালতিতে বৃষ্টির জমা করা পানি দিয়ে কাজ চালিয়েছে। সবচেয়ে বেশি গোমড়া হয়ে আছে রজনী। একটু পরপর কঠিন গলায় সামিককে এসপার-ওসপার করে ধুয়ে দিচ্ছে, গলার তেজ শুনে দুঠোঁট চেপে হাসছে মাহদি। রজনী যেই চোখ পাকিয়ে তাকায় ওমনেই নাদান বাচ্চার মতো ‘ আমি ফিডার খাবো ‘ ভঙ্গিতে মারজার দিকে তাকায়। মারজার অস্থির বিপন্ন মন আরো বিপর্যস্ত হয়ে কঠিন ধমক লাগায়। মায়ের বকুনি খেয়ে এবার উদাস হয়ে যায় মাহদি। সবার বকাবকি ইচ্ছামতো শুনতে পারবে মাহদি, শুধু মা আর ভাইয়ের বকা শুনলে নেতিয়ে যায়। যেই বাসায় ওরা অতিথি হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে সেখানে খেলনা তো নেই, উলটো খেলার সঙ্গীও নেই। ফারিন যা একটু সঙ্গ দিতো, এখন সে দরজা আঁটকে প্রীতির সাথে চুটিয়ে ঘুম দিচ্ছে। ট্যূরের উছিলায় কেউ গেমসের খেলার জন্য মাহদিকে ফোন দিচ্ছে না, বারান্দায় গিয়ে গ্রিল ধরে বাইরে তাকালো মাহদি। থুতনিটা গ্রিলের উপর বসিয়ে ভাই আর ভাবীকে মিস করছিলো সে। তারা দুজন মানুষ যতোই তাকে বকা দিক, দিনশেষে কখনো তাকে একা ফেলে যায়নি। মাহতিম যতই ব্যস্ত ব্যক্তিসম্পন্ন কর্মকর্তা হোক, একবার বাড়ি ফিরলে সেই সব কষ্টের দিনগুলো একদম ভুলিয়ে দিয়ে যায়। মেহনূর কোনোদিন মাহদিকে না খাইয়ে নিজে খেয়েছে বলে এখনো মনে করতে পারে না মাহদি। মেহনূরকে যতখুশি তত ‘ বউ, বউ ‘ করে ডাকে, এতে একটুও বিরক্ত হয়না মেহনূর, উলটো হাসি দিয়ে পিঠ একটা আদুরে চাপড় মারে। হতাশার নিশ্বাস ফেলে ঘোলাটে আকাশে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো সে,

– তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো ভাইয়া। আমার কিছুতেই মন টিকছে না। জলদি আসো, জলদি আসো।

চোখ বন্ধ করে দু’মিনিট শান্ত থাকলো মাহদি। ঝমঝম বৃষ্টির আওয়াজটা নিরবে অনুভব করলো। ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ভেজা টাইলসের উপর আনমনে এঁকেবেঁকে চিত্র কষতে লাগলো। চোখ খুলে ডান পা দিয়ে একই কাজ করতে-করতে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে নিচে তাকালো মাহদি। হঠাৎ একটা দৃশ্য দেখে ডানপা থামিয়ে সেটা আরো মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো। দারোয়ানের বাথরুম থেকে টিনের দরজাটা একটু ফাঁক করে উঁকি দিয়ে আছে সিয়াম। মাথাটা উঁকি দেওয়ার পাশাপাশি ডানহাতে সবুজ বদনাও দেখা যাচ্ছে। চাল ধোয়া পানিটা যেনো বদনায় না পরুক তার জন্য হাতটা টান-টান করে বাইরে এগিয়ে ধরেছে। বৃষ্টির পানি দিয়ে বদনা ভর্তি? হোহো করে গলা ফাটিয়ে হেসে দিলো মাহদি। তার হাসি এখন দেখে কে! বাথরুমে গিয়েও বেচারা আধা কাজ শেষ করে বদনা ভর্তি করতে নেমেছে। মাহদি হাসতে-হাসতে গ্রিল ছুঁয়ে-ছুঁয়ে ফ্লোরে ধপাস করে বসে পরলো। হাসির তোড়ে ফ্লোর থাপড়াতে-থাপড়াতে হাসতে লাগলো। একটু শান্ত হলে পেট চেপে আবার উঠে দাঁড়ালো মাহদি, আবার একই দৃশ্য দেখতে হোহো করে হেসে গ্রিলে কপিল ঠেকিয়ে দিলো।

.
থেমে-থেমে বৃষ্টি হচ্ছে আজ। শীতে মুড়িয়ে আছে সাদামাটা দিনটা। কম্বলের পশমতুল্য উষ্ণতার ভেতর নতুন বউ নিয়ে ঘুমিয়ে আছে নোমান ইকবাল। এবার বসের অজুহাতে সেও কিছুদিন ছুটি পেয়েছে। বাড়ি ফিরতেই নানা টেনশনের ভেতর দিয়ে পরিবারের চাপাচাপিতে বিয়েটা করতে নারাজ ছিলো। শেষমেশ হামেশার মতো তার বসের কাছে পরামর্শ চাইলো নোমান। তার বিশ্বাস, তার বস মাহতিম আনসারীর কাছে সব ধরনের সমাধান পাওয়া যায়। লোকটার মাথায় যেনো উপস্থিত বুদ্ধির মেশিন ফিট করা আছে, যখনই কোনো বিপদ দেখে জাস্ট কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ করতেই এমন একটা পরিকল্পনা করে যা বর্ণনাতীত! এবারও বসের পরামর্শ মোতাবেক বিয়েটা করেই ফেলেছে নোমান। রক্ষণশীল পরিবারের ছেলে বলে বড়সড় আয়োজন করে বিয়ে করেনি। কিন্তু এখন বিয়েটা করে মনেহচ্ছে, আহা স্বর্গীয় সুখ! তার বসকে এখন একশো-একটা চুমু দিতে ইচ্ছে করছে। লোকটা কি জম্পেশ বুদ্ধিই না দিলো! তার মানে তার বস মানুষটা যতোই শুকনো মুখে গম্ভীরভাবে চুপ থাকুক, দিনশেষে তারও অভিজ্ঞতা আছে। বউকে জড়িয়ে ধরে আরো আয়েশ করে ঘুম দিলো নোমান, হঠাৎ বিপ্ বিপ্ করে তার ফোনটা ভাইব্রেট হয়ে উঠলো। আরামের শয্যা ছেড়ে ফোন ধরতে অলসতা কাজ করছিলো, একটানা পাঁচটা ভাইব্রেট কল কেটে যেতেই ষষ্ঠ নাম্বারের সময় বউয়ের ঠ্যালা খেয়ে উঠলো নোমান। কলটা ঘুম-ঘুম চোখে না দেখে রিসিভ করলো, মুখভর্তি গালি থেকে একপ্রস্থ গালি ছুঁড়ে বললো,

– ওই হা-লা, কে রে তুই? এমন বে-টাইমে কল দিলি কোন্ কলিজা দিয়ে?

ওপাশ থেকে চিবিয়ে-চিবিয়ে বললো কেউ,

– তোমার কলিজা আমি পারা দিয়ে ধরবো নোমান। স্ক্রিনে চোখ লাগিয়ে দেখো কে আমি।

চোখ কচলাতে গিয়ে হাত থেমে গেলো নোমানের। কথা শুনে বুকের ভেতর ধুকুর-পুকুর করছে। বড় করে ঢোক গিলে কান থেকে ফোন নামালো নোমান। স্ক্রিনে তাকিয়ে ‘ M.A.B. ‘ স্পষ্ট করে অক্ষর তিনটা দেখতে পেলো। মাহতিম আনসারী বস! ভয়ে-ভয়ে কানে ফোন ঠেকিয়ে ভীত কন্ঠে বললো,

– হ্যা-হ্যালো বস,

ওপাশ থেকে ক্ষেপে গিয়ে বললো মাহতিম,

– বউ হয়েছে বলে আমার সাথে গালাগালি? এগুলো কেমন ধরনের আচরণ নোমান? তোমার কি এখন লম্বা বিরতি দরকার? প্রয়োজন হলে জানাও, আমিও সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

নোমান তাড়াতাড়ি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করে মাফ চাইলো। ভুলটা তার নিজের বলে অনেকবার ক্ষমার বাক্য খরচ করলো। মাহতিম এখন ঘ্যানঘ্যাননি শোনার মানসিকতায় নেই বলে সংক্ষেপে তার জন্য একটা গাড়ি পাঠানোর কথা বললো। নোমান যথা আজ্ঞার মতো নির্দিষ্ট ঠিকানায় গাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করে জিপটার তদারকির জন্য নিজে রওনা দিলো। সূত্র মোতাবেক নক্ষত্রবাড়ি রেসোর্টে পৌঁছলো একটা গাড়ি, জিপটা কর্তৃপক্ষের কাছে রেখে নোমানের ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলো মাহতিম। আগত গাড়িটায় চড়ে বৃষ্টির মধ্যেই সামিকের বন্ধুর বাসার দিকে রওনা দিলো সে। মেহনূর জানালার কাঁচ নামিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছে, মুখের উপর বৃষ্টির ছাঁট খেয়ে থেমে-থেমে হাসছে। পলকে-পলকে নজর দিচ্ছে মাহতিমের বিচক্ষণ চোখ। এতোদিন পর ফ্যাকাশে বিষণ্ণ চেহারায় হাসির লালিমা ফুটেছে, হাসির উচ্ছলতায় প্রাণবন্ত সুমিষ্ট মুখটায় মায়া ছাপিয়ে দিয়েছে, ভেতরের গুমোট-শক্ত আবরণটা নিঃশেষ হয়ে গুছানো-নরম মনোচিত্তে ফিরিয়ে দিয়েছে। একদিকে যেমন মেহনূরের সাথে সম্পর্কটা সহজ করে এনেছে, তেমনি মেহনূরের অন্তর থেকে জানতে পেরেছে কঠিন সত্য। শোনার পর মাহতিম যেনো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো, পরের বাক্যগুলো কিচ্ছু শুনতে পায়নি সে। স্টিয়ারিং চেপে একপলকের জন্য বামে তাকালো মাহতিম, মুখটা ড্রাইভে ফিরিয়ে এনে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,

– মেহনূর, যদি তোমার দাদাভাই আমাকে বিয়ের ব্যাপারে ‘ না ‘ করে দিতো, তখন কি তুমি আমায় ফিরিয়ে দিতে?

এমন অদ্ভুত কথা শুনে ঠোঁট থেকে হাসি মিলিয়ে গেলো, জানালা থেকে মুখ ঘুরিয়ে ডানে তাকাতেই মাহতিমের দিকে তাকালো। হতভম্ব দৃষ্টিতে বললো,

– আপনি কেমন প্রশ্ন করলেন?

মাহতিম তাড়া দিয়ে বললো,

– উত্তরটা শুনতে তো দোষ নেই। তাছাড়া এখন তুমি আমার বউ। তোমার দাদা হাজারবার মাথা ঠুকলেও তো তোমাকে ফিরিয়ে দেবো না।

মেহনূর এমন অপ্রস্তুত প্রশ্ন শুনে অনেক সময় যাবৎ কথা বললো না। জানালার কাঁচটাও উঠিয়ে দিলো সে, ভেজা হাতটা আঁচলে মুছতে-মুছতে তার ঠোঁটের হাসিটুকুও যেনো ছিনিয়ে ফেললো কেউ। মেহনূর দীর্ঘক্ষণ যাবৎ মৌন পালন করে নির্লিপ্ত সুরে বললো,

– আপনাকে ফিরিয়ে দিতাম।

বিকট আওয়াজে চলন্ত গাড়িটা জোরালো ভাবে থেমে গেলো! হুট করে এরকম ব্রেক কষাতে পেছন থেকে অন্য একটা গাড়ি পাশ কেটে যেতে-যেতে ‘ খান* পোলা চোখ কি আকাশে তুইলা চালাস ‘ বলে জঘন্য একটা গালি দিলো। মাহতিম গালিটা শুনলো কিনা ঠাহর করা গেলো না, দু’হাত দিয়ে স্টিয়ারিংটা শক্ত করে ধরে আছে সে, চোখদুটো বন্ধ দৃষ্টি নিচের দিকে ঝুঁকানো তার। সীটবেল্ট বাঁধার সুবিধায় কোনোরকম ক্ষতি বা ব্যথা পায়নি পায়নি মেহনূর, কিন্তু ভয়ের যেই গোলাটা চোখের সমুখে দেহের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে টের পেলো সেটা বীভৎস! ফোন বাজার আওয়াজে সম্বিৎ ফিরে পেয়ে পকেট থেকে ফোন বের করলো মাহতিম, চোখদুটো তখনও নিদারুণ যন্ত্রনায় বন্ধ। কলটা আন্দাজমতো রিসিভ করে কানে চাপলো মাহতিম, ওপাশ থেকে অত্যন্ত চিন্তিত এবং অস্থির গলায় বললো,

– হ্যালো আনসারী স্যার, প্লিজ ক্লাইন্ডলি আমার কথাটা শুনুন! আপনাকে ওরা ট্রেক করার ফর্দ করে ফেলেছে। আপনি এলার্ট থাকুন, দ্যা আর ভেরি ডেন্ঞ্জারাস স্যার! ওরা সংখ্যায় কতজন আপনার পেছনে লেগেছে আমরা কেউই ইনফরমেশন পাচ্ছি না। আপনাকে যেখানেই পাবে সেখানেই ওরা মা-র্ডার করে ফেলবে স্যার!

– চলমান

#FABIYAH_MOMO .

#নোটবার্তা : চার্জ না থাকায় দেরি হলো। দুঃখ প্রকাশ করছি 💔

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here