মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤ #পর্বসংখ্যা_৪৫. #ফাবিয়াহ্_মমো . অংশ – শেষ .

0
195

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#পর্বসংখ্যা_৪৫.
#ফাবিয়াহ্_মমো .

অংশ – শেষ .

নিজের মৃ’ত্যুর পরোয়ানা শুনেও উত্তেজিত হলো না! যেকোনো সময়ই হানা দেবে দস্যুর মতো জানো’য়াররা! কি করে এমন তুমুল বৃষ্টির ভেতর তাদের সামাল দেবে সেটা নিয়ে ছক কষানো প্রচুর হিসেবী কাজ! এবার সে একা নয় মোটেই, সঙ্গে যে বসে আছে তাকে নিয়েই সমস্ত চিন্তা জেঁকে আছে। স্টিয়ারিংয়ে দুহাত চেপে স্থির দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছে মাহতিম আনসারী। তার ক্লান্তিকর মাথাটা কোনোভাবেই এমন পরিস্থিতিতে ঝিমিয়ে পরলে চলবেনা, শান্তভাবে পুরো খেলাটাই তাকে ঘুরিয়ে দিতে হবে। বাইরে বৃষ্টি, রাস্তা-ঘাট জনশূন্য, বৈরি আবহাওয়ার অজুহাতে গাড়ি চলাচল নগন্য। স্টিয়ারিং থেকে হাত নামিয়ে মুখটা এবার বামে ঘুরালো সে, দৃষ্টিটা তীক্ষ্ম করে ঠান্ডা কন্ঠে বললো,

– আমাকে যেতে হবে মেহনূর। আমি কখন ফিরবো জানি না, তোমাকে রেসোর্টে রেখে আসছি। কোনো ভয় নেই, সামিক এসে তোমাকে রেসোর্ট থেকে নিয়ে যাবে।

খটকা লাগলো বুকে। এমন ঝুম বৃষ্টির ভেতর মাঝ রাস্তায় থেমে কোথায় যেতে চাইছে? না, মন কিছুতেই মানছেনা। মেহনূর কিছুটা নাছোড়বান্দার মতো বললো,

– আমি যাবো না। আপনি কোথায় যাবেন?

অন্য সময় হলে উত্তর পেয়ে খুশী হতো মাহতিম, কিন্তু আজ খুশীর বদলে রাগের আক্রোশটা হামলে পরে মনে। মুখটা কঠোর করে বলে,

– প্লিজ আমার কথাটা চুপচাপ শোনো, একটু পরেই সামিক এসে তোমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাবে। কোনো টেনশন নেই। উলটো আমার সাথে থাকলেই বিপদ। আমি কাজটা শেষ করেই ফিরবো। কথা দিচ্ছি ফিরবো।

শেষোক্ত বাক্য শুনে আর স্থির থাকেনা মেহনূর। মনের ঝলমল উঠোনটায় হিংস্র পশুর মত দাপাদাপি করে বেড়াচ্ছে ভয়। গা কাটা দিচ্ছে ক্ষণেক্ষণে। মেহনূরের ভীতিগ্রস্থ মুখ দেখে নিজের কঠোর রূপটা গলিয়ে নিলো মাহতিম, কন্ঠ আর্দ্রের মতো কোমল করে বললো,

– তুমি কখনো আমার অবাধ্যতা করোনি, তো আজ কেনো করছো মেহনূর?

প্রশ্নের প্রেক্ষিতে চুপ রইলো মেহনূর। এটা সত্যি যে, এখন পযর্ন্ত সে কোনো কথায় অবাধ্যতা করেনি। মাহতিম যখন-যেভাবে বলেছে, মেহনূর চোখ বন্ধ করে সেগুলো বিশ্বাস করে পালন করেছে। মেহনূরের নিরবতা দেখে মুখ ঘুরালো মাহতিম, হাতের ব্ল্যাক ডায়ালের ব্রাউন ঘড়িতে চোখ রেখে সময়ের অঙ্কটা আবারও সচল মস্তিষ্কে হিসাব করে নিলো। ঘড়ি থেকে মুখ তুলে সামনে তাকাতেই গাড়িটা রিভার্স করে ঘুরাতে চললো, স্থির গাড়িটা যখন ডানে টার্ন করে রিভার্স হচ্ছিলো তখনই মেহনূর অস্থির হয়ে চিন্তিত দৃষ্টিতে দু’হাতে মাহতিমের বাহুটা জড়িয়ে ধরলো। সাদা শার্টের স্লিভটার নিচে নতুন ব্যান্ডেজের আস্তরণ থাকলেও মেহনূরের এখন সেই হুঁশ নেই, সে অস্থির-উৎকন্ঠায় পাগলের মতো বলতে লাগলো,

– আমি যাবো না, আপনি গাড়ি ঘুরানো বন্ধ করুন। আমি যাবো না বলেছি, আপনি জোর করেও ওখানে ফেলে আসতে পারবেন না। গাড়ি থামান।

রির্ভাস করতে গিয়েও বিরাট বাধা খেলো মাহতিম। শান্ত স্বভাবের মেহনূরকে বেশিরভাগ সময়ই নিরব থাকতে দেখেছে, দেখতে-দেখতে একটা অভ্যাসও হয়ে গেছে যে, মেহনূর তাকে নিয়ে কোনোদিনও মনের সুক্ষ্ম অবস্থা প্রকাশ করবে না। কিন্তু আজ এ কি দেখছে? তার সৌম্য বাহুটা খামচে ধরে বাধা দিচ্ছে? মাহতিম ধীরেসুস্থে গাড়িটা আকস্মিক দূর্ঘটনা থেকে বাঁচানোর জন্য নিরাপদ সাইডে পার্ক করলো। লতার মতো জড়িয়ে ধরা বাহুটাকে মেহনূরের কবল থেকে না ছাড়িয়ে উলটো তার গালটা ডানহাতে ছুঁলো। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে আশ্বস্ত সুরে বললো,

– আমার কিচ্ছু হবে না মেহনূর। প্লিজ লক্ষ্মী মেয়ের মতো আমার কথাটা শোনো, তুমি রেসোর্টে থাকো। আমি কাজটা শেষ করেই আসছি। দেরি করবো না।

ভয় জড়ানো চোখে ঢোক গিললো মেহনূর, মাহতিমের দিকে সহজ চাহনিতে তাকিয়ে বললো,

– ফোনে কি বলেছে? আপনি মিথ্যা বলবেন না। আমি দেখেছি আপনি কলটা কাটার পরপরই আমাকে রেখে আসতে চাইছেন।

মাহতিম স্বগোতক্তির মতো করে বললো,
– ওসব দিয়ে তোমার কাজ নেই। তুমি রেসোর্টে যাচ্ছো এটাই ফাইনাল। আর একটা বাড়তি কথা বলবে না।

কথার পিঠে কথা বাড়ালো না মাহতিম, চুপচাপ অন্যহাতে গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে ফেললো। মেহনূর বাহুটা ছেড়ে দিয়ে অমত ভঙ্গিতে নির্জীব চাহনিতে বললো,

– আপনি আমাকে এখানেই ফেলে দিন। আমি নিজ দায়িত্বে রেসোর্টে যেতে পারবো। আমার জন্য আপনার গাড়ি ঘুরিয়ে পেট্রোল খরচ করে রেসোর্ট ফিরতে হবে না।

গম্ভীর নিরব মুখটা নিমিষের ভেতর আরো গম্ভীরতায় মিলিয়ে উঠলো, গাড়ি স্টার্ট দিলো ঠিকই, কিন্তু সেটা রিভার্স সিস্টেমে না নিয়ে সোজা পথে চালাতে লাগলো। নিস্তেজ অবসন্ন ভঙ্গিতে সিটে বসলেও মেহনূরের তটস্থ মন মাহতিমের উপর পরে রইলো, কলে নিশ্চয়ই এমন কিছু শুনেছে যার জন্য সে মেহনূরকে রেসোর্টে রেখে আসতে চাইছিলো। মেহনূর কারণটা জানার জন্য হালকা একটু কেশে নিজের জড়তা কাটিয়ে বললো,

– আপনাকে কলে কি বলেছে? কেনো আপনি রেসোর্টে রেখে আসতে চাইলেন?

মাহতিমের কান দিয়ে দু’বাক্যের দুটো প্রশ্ন ঢুকলেও তার চোখ তখন ডানদিকের লুকিং মিররে পেছনের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত। পেছন থেকে কেউ ফলো করছে কিনা এটা এখনো আঁচ করা যাচ্ছে না। লুকিং মিরর থেকে চোখ সরিয়ে ফের সামনের দিকে তাকালো মাহতিম, পায়ের নিচে থাকা প্যাডেলটা মৃদ্যু চাপ দিয়ে গাড়ির স্পিডটা আরেকধাপ বেড়ে ফেললো। উত্তর না পেয়ে চন্ঞ্চল মনটা মেহনূরকে ছটফট করে তুললো, মেহনূর আবার তাগাদা দিয়ে জিজ্ঞেস করতে নিলে কঠিন এক ধমক দিলো মাহতিম, গরম সুরে বললো,

– তোমার শুনে লাভটা কি? কেনো জানার জন্য লাফাচ্ছো? মনে-মনে এটা ভাবছো নাকি তোমাকে রেসোর্টে ফেলে আরেকজনের কাছে যাচ্ছি?

পুরোনো কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ রেখে জঘন্য খোঁচাটা দিলো মাহতিম। সুক্ষ্ম খোঁচাটা খেয়ে চমকানো দৃষ্টিতে কয়েক মিনিট স্তম্ভ রইলো মেহনূর। এর চেয়ে জঘন্য খোঁচা সত্যিই আর হয় না। মেহনূর ভয়ের বিষাদযুক্ত দেয়াল ভেঙ্গে স্তম্ভিত গলাতেই বললো,

– কলের ঘটনায় যদি আপনার ক্ষতির গন্ধ না পেতাম, আমি জীবনেও আপনাকে পালটা প্রশ্ন করতাম না। আপনি যে আমার সাধারণ প্রশ্নে বিরক্ত হন আগে জানলে চুপ থাকতাম।

মাহতিম নির‍্যুত্তর, তার দৃষ্টি বারবার লুকিং মিররের দিকে চলে যাচ্ছে, দক্ষ হাতে দাপটের সাথে গাড়ি আগাচ্ছে বৃষ্টির মধ্যে। অন্যহাতে ফোনটা দিয়ে কাউকে কল করলো সে, কাধের সাথে ফোনটা কানে চেপে গাড়ি চালাতে-চালাতে কাগজ-কলম জোগাড় করলো। মেহনূর ড্যাবড্যাব করে সবকিছু দেখতে থাকলেও কৌতুহলে মনের অবস্থা কুণ্ঠিত হয়ে আছে, প্রশ্ন করারও অবস্থা নেই। একই সাথে এতোগুলো কাজ কিভাবে সামলাচ্ছে এই সুন্দর-মার্জিত লোকটা? কি করে সম্ভব এসব? গাড়ি চালাচ্ছে, কথা বলছে, কাগজে-কলমে খসখস করে যাচ্ছে, মনোযোগ দিয়ে লুকিং মিররে তাকাচ্ছে, একটার-পর-একটা কাজ ক্রমাগত করে যাচ্ছে, তবুও কোনোকিছু এলোমেলো ভাবে করছে না, একদম ঠিকঠাক ‘ ওয়েল ম্যানার্ড ‘ স্টাইলে করছে। এমনটা বিশেষ ট্রেনিংপ্রাপ্ত লোকেরাই যে করতে পারে তার জলন্ত প্রমাণ মেহনূর সাক্ষাৎ দৃষ্টিতে দেখতে পারছে। মেহনূরকে উপেক্ষা করে কলে কথা বলতেই স্টিয়ারিংয়ের উপর কাগজ ঠেসে কলম চালাতে লাগলো মাহতিম, মেহনূর একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলো কাগজে অনেক কিছু সাংকেতিক ভাষায় লিখে যাচ্ছে সে। লেখাগুলো তার মতো সাধারণ মানুষের মাথায় জীবনেও ঢুকবে না। মাহতিম থেমে-থেমে গম্ভীর গলায় বলছে,

– এখনো সেইফ জোনে আছি।

ওপাশ থেকে উত্তর,
– স্যার, আপনি ডান দিকের মাটির রাস্তাটা ধরুন। ওদিকের রাস্তাটা কেউ ইউজ না করলেও ওটা শর্টকাট হবে। সেইফলি আসতে পারবেন।

মাহতিম কলমটা রেখে কাগজটায় চোখ বুলিয়ে বললো,
– ডানদিকের রাস্তাটা মেইবি হান্টেড রোড। ওখানে প্রেমে ব্যর্থ এক ছেলে সুইসাইড করেছিলো বলে ওই রাস্তা দিয়ে কেউ আসে না তাইতো?

মাহতিমের কথা শুনে ভিড়মি খেলো লোকটা। কি আজব! এতো ডিটেলস তো সে নিজেও বের করেনি। ছোট্ট করে উত্তর দিলো,
– জ্বী স্যার, ওটা হান্টেড। আপনি প্লিজ ডানদিকের ওই রোড ধরেই আসুন। ওটাই আপনার জন্য সেফ হবে। বাঁদিকের রাস্তা দিয়ে গেলেই বিপদ!

মাহতিম ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঠেলে দিয়ে বললো,

– আমার ক্যালকুলেশন মোতাবেক, ডান-বাম, সামনে-পিছে সবখান দিয়েই আঁটকা পরতে যাচ্ছি। ওদের ট্রেক ডাউন করা ছাড়া আমার হাতে সেকেন্ড অপশন নেই। ডেন্ঞ্জার জোন থেকে বের হলে ইনফর্ম করবো, রাখি।

শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা হতে যাচ্ছে, বৃষ্টির ঢলটা হালকা একটু কমে এলেও সামনে আসছে ঘোর বিপদ! মাহতিমের কথাবার্তা শুনে মেহনূরের অবচেতন মন বিপদের সর্তকবার্তা দিয়ে ফেলেছে। জীবনে এই প্রথম প্রতিকূল অবস্থায় পরতে যাচ্ছে, মন তীব্র উৎকন্ঠায় উচাটন করছে। কি হবে সামনে? মাহতিম খারাপ পরিস্থিতি দেখেও হেসে কথা বললো? গাড়ির সিটে পিঠ ছেড়ে দিয়ে নিজেকে শান্ত করার উছিলায় জানালার কাঁচের সাথে মাথা ঠেকিয়ে দিলো মেহনূর, গুড়ুম-গুড়ুম করে আকাশ ডেকে কাঁচের জানালাটা দফায়-দফায় বৃষ্টির পানি আছড়ে অস্বচ্ছ থেকে স্বচ্ছ হচ্ছে। প্রকৃতির সাথে বৃষ্টির রফাদফার দৃশ্য দেখার জন্য জানালার বাইরে চোখ রাখলো মেহনূর, স্বাভাবিক চাহনিতে ভেজা গাছপালাগুলোর বৃষ্টিস্নান অবস্থা দেখতেই হঠাৎ চোখ থমকে গা শিউরে উঠলো! গাড়ির স্পিড আরো বেদম গতিতে বেড়ে যাচ্ছে এদিকে, মেহনূর ভালো করে স্পষ্ট চোখে দেখার জন্য লুকিং মিররে চোখ দিতেই ভয়ে জানালা থেকে সরে এলো। মুখ ঘুরিয়ে মাহতিমের দিকে তাকাতেই দেখলো, ইতিমধ্যে বিচক্ষণ দৃষ্টিতেও সেই লোমহর্ষক ঘটনাটা ধরা পরে গেছে। মূলত এ কারণেই বেড়ে যাচ্ছে গাড়ির স্পিড। মাহতিমের শক্ত-কঠোর-তেজী মুখটা দেখে চোখ বন্ধ করে মাথা নামালো মেহনূর, আতঙ্কে স্বরটাও অতল স্তরে নিচে নামিয়ে বললো,

– পেছন থেকে তিনটা গাড়ি ধাওয়া করছে —

বন্ধ এসির গাড়িতে জোরে নিশ্বাস ছাড়লো মাহতিম। যেই কারণে এই বোকা জীবকে রেসোর্টে রেখে আসতে চাইছিলো, সেটাই এখন ফলতে যাচ্ছে। এরপর যেই দৃশ্যগুলো পরপর দেখবে, সেগুলো দেখার পর কি মেন্টালি ট্রমায় চলে যায় কিনা সন্দেহ! ‘ সামান্য গাড়ি দেখেই ভয় পাচ্ছো, ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া দেখলে কি করবে? ‘ কথাটা মনে মনে আওড়ালো মাহতিম। রুদ্ধ পরিস্থিতিটা বাগে না আনলেও একটা হাত বাড়িয়ে মেহনূরের নত মুখটা উপরে তুললো, হিসেবী মূহুর্ত থেকে কয়েক সেকেন্ডের সময় ছিনিয়ে এক লহমায় মেহনূরের দুঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো মাহতিম। দুম করে বুকের ভেতর কড়াঘাত লাগতেই শিউরে উঠলো মেহনূর। সেই শিউরে উঠা কাঁপা অবস্থার ভেতর উষ্ণতার হাতটা খোলা পিঠের উপর আলতো পরশে ছুঁয়ে দিতে লাগলো ওর, ডানহাতে এখনো গাড়িটা চালাচ্ছে মাহতিম। মেহনূরের ভয়াক্রান্ত চোখ থেকে সমস্ত ভয় যেনো নিজের হাসি-হাসি দৃষ্টি দিয়ে শুষে নিলো সে, ওই অল্পক্ষণ সময়টুকুতে ছোট্ট কন্ঠে বললো,

– কোনো ভয় নেই মেহনূর।

হাসিমাখা দৃষ্টিদুটোর চাহনিতে নিজেকে মিলিয়ে নিলো মেহনূর। মধ্যবর্তী দূরত্ব যেনো দুই ইন্ঞ্চির মতো, নিশ্বাসের উষ্ণতা যেনো আশ্বাসের ছোঁয়ায় মুখের উপর ছুঁয়ে যাচ্ছে। মেহনূর চোখ বন্ধ করে মাহতিমের ক্লিন শেভ গালটায় নিজের কপাল ঠেকিয়ে দিলো, মাহতিম এই ফাঁকে আবার সামনে তাকিয়ে ড্রাইভের বিধিটা দেখে লুকিং মিররে তাকিয়ে নিলো। হঠাৎ একটু-একটু করে টের পেলো তার বাঁহাতের তলায় থাকা পিঠটা গরম। বেশ ভালোই গরম বলা চলে। পাঁচ আঙ্গুলের থাবা দিয়ে অনাবৃত পিঠটা আবৃত করে কিছুটা চিন্তিত গলায় বললো মাহতিম,

– জ্বর আসছে কেনো? ঔষুধ যে দিয়েছিলাম খাওনি?

মেহনূর উত্তর দেওয়ার অবস্থাতে নেই। প্রাণপণে চাইছে আজ এই মানুষটার যেনো কিচ্ছু না হোক। মনের যেই মূখ্য স্তরটা যার সাথে বেঁধে গেছে সেটাতে কিছুতেই ভাটা না পরুক। মাহতিম আস্তে করে হাতটা সরিয়ে এনে মেহনূরকে সিটে ঠেলে দিলো, ব্যাঘাত খেয়ে মেহনূর চোখ খুলে তাকাতেই মাহতিম লুকিং মিররে পেছনের অবস্থা দেখতে-দেখতে হঠাৎ গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,

– হেড ডাউন,

মেহনূর কথাটা না বুঝে উজবুকের মতো তাকিয়ে থাকলে মাহতিম নিজেই মেহনূরের মাথাটা ধরে লহমায় নিচে ঝুঁকিয়ে দিলো। মূহুর্তের ভেতর কান তাক লাগানো শব্দ ভেসে আসতে থাকলে গাড়িও সাপের মতো এঁকেবেঁকে চালাতে লাগলো মাহতিম! বৃষ্টির ঢলটা কমে এলেও বাতাসের সাথে প্রাণচাঞ্চল্যকর শব্দগুলো ছুটে আসছে! পেছন থেকে একের-পর-এক গুলির সাইরেন বাজলেও গাড়ির এলোমেলো গতির জন্য একটাও নিশানা মতো লাগলো না। মেহনূর চোখ-মুখ খিঁচে কানে দুহাত চেপে থাকলেও স্পষ্ট শুনতে পেলো মাহতিম তাচ্ছিল্যের হাসিতে বলছে,

– আমিতো এদের পাক্কা খেলোয়াড় ভেবেছিলাম, এরা তো দেখি বেহুদা টার্গেট ছুঁড়তে এক্সপার্ট।

কথাটা শুনে কানে হাতচাপা অবস্থায় চোখ খুললো মেহনূর। মাথাটা আগের জায়গায় তুলতেই দেখলো, মাহতিম নিজের একটা হাত পায়ের কাছে নামিয়ে কালো প্যান্টটা খানিকটা উঠিয়ে কালো মোজার কাছ থেকে কিছু বের করছে। অনুমানের ভিত্তিতে ভাবলো বস্তুটা বেশ ভারী। নিমিষের ভেতর তিন আঙ্গুলের কঠোর কব্জায় একটানে পিস্তলটা বের করলো মাহতিম, পিস্তলটার মুখে সরু চোঙার মতো কয়েক ইন্ঞ্চির লম্বা বস্তুটা ফিট করতেই মেহনূরের দিকে একপলক তাকালো, হাসলো, হাসি ঠোঁটেই বললো,

– টানা দশ মিনিট পর তোমার এপিসোডে ফিরছি মেহনূর। তোমার এপিসোডে তো চুমু আছে। মিস করতে চাচ্ছি না।

বোকার মতো তাকাতেই কিছুটা ক্ষুদ্ধ অনুভব করলো মেহনূর। ‘ অসভ্য, এক নাম্বার অসভ্য! ঠোঁটে কিচ্ছু আঁটকায় না! ‘ কপাল কুঁচকে মনে-মনে বিড়বিড় করে মুখটা অন্যদিকে ঘুরালো মেহনূর। এদিকে দুহাতের স্লিভদুটো কনুইয়ে টেনে মাথাটা পেছনে ঘুরালো, চোখের চাহনি সর্তক, হাতের মধ্যে পিস্তল। মেহনূরের অভয় মন বুঝতে পেরেছে এখুনি পালটা এ্যাকশনটা রটতে যাচ্ছে, চলমান গাড়িটা একই স্পিডে বহাল রেখে গাড়ির ভেতর থেকে টার্গেট করলো মাহতিম। এক চোখ বন্ধ করে লক্ষবস্তুর দিকে পিস্তল তাক করতেই প্রোফেশনাল স্টাইলে থেমে-থেমে চারটা শব্দহীন গুলি ছুঁড়লো, ওমনেই তীব্র আর্তনাদে হাহাকার চিৎকার ভেসে আসলো পেছন থেকে, ধাম-ধাম করে ভারী বস্তুর আছড়ে পরার শব্দ শোনা গেলো, বৈদ্যুতিক খাম্বাগুলো যেভাবে আকস্মিক শব্দে ব্লাস্ট হয়ে যায় ঠিক তেমন।মেহনূর তীব্র শব্দের কৌতুহল দমাতে না পেরে দ্রুত মাথাটা পেছনে ঘুরায়, গাড়ির পেছন গ্লাসটায় চারটা গোল-গোল নতুন ছিদ্র দেখা যাচ্ছে, দূরের গাড়িগুলোর অবস্থা দেখে মেহনূর রীতিমতো হতভম্ব! সে একবার মাহতিমের দিকে আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকালো, আরেকবার সেদিকে দৃষ্টি ছুঁড়ে পেছনে দেখলো! শেষের গাড়িটার চাকা ব্লাস্ট হয়ে আগুন ধরে গেছে, তার একটু আগে থাকা গাড়িটা ডানদিকে কাত হয়ে আছে, সবার আগে থাকা গাড়িটার ড্রাইভার সিটেই ‘ স্পটডেথ ‘ এর শিকার! মেহনূর অকল্পনীয় চাহনিতে মাহতিমের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো, সুচতুর হাতে যে চারটা গুলি ছুঁড়েছে একদম কাটকাট স্টাইলে তিনটা গাড়ি খালাস! মাহতিম ততক্ষণে পুর্বের ফর্মে ফিরে গাড়ির চালাতে ব্যস্ত, দূরবর্তী গাড়ির দূর্দশার দিকে এক ঝলক চোখ বুলিয়ে মেহনূর পাংশু মুখে বললো,

– আপনার গু’লির আওয়াজ হলো না কেন?

মাহতিম পিস্তলটা আগের জায়গায় রাখতে-রাখতে বললো,

– ইটস অল এবাউট টেকনিক। সাইলেন্সার লাগিয়েছি। গুলি ছুঁড়লে আওয়াজ হবে না। এখন আবার প্রশ্ন কোরো না কিভাবে ওদের জায়গা মতো গু’লি করলাম। এসবের উত্তর দিলে নিজেকে নিয়ে বড়াই করা হবে, যেটা আমি পছন্দ করি না।

উত্তর শুনে মুচকি হাসলো মেহনূর। চিন্তার ক্লেশগুলো মন থেকে ঝেঁটিয়ে সীটে গা হেলিয়ে দিলো। এতোক্ষণ যা টের পায়নি, গ্রাহ্য করেনি সেটাই এখন শিউরে-শিউরে দিলো তাকে। বৃষ্টির কবল থেকে বাঁচতে পারেনি বলে হিংস্র জ্বরের ছোবল খেয়েছে মেহনূর। গতরাতে মাহতিম ঔষুধ খাইয়ে দিলেও সেটার ডোজ কাজে দেয়নি একটুও। চোখের পাতা বন্ধ হওয়ার জন্য আনচান করছে, হাত-পা’ও বেশ কাঁপছে, গ্রীষ্মের মতো তপ্ত বায়ুটা দেহের শিরায়-উপশিরায় চলাচল করে বাড়ছে ক্রমশ। অদ্ভুত এক মূর্ছার ভেতর তলিয়ে যেতে লাগলে চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে উঠলো, এরপর ধূসর হলো, এরপর আরো ধূসর হলো, এরপর ধূসর রঙটা রঙ পালটে কালো রঙে টপকে গেলো। কালো রঙে আসাটা যেনো মস্ত এক ভুল, নিজের দেহের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণের স্নায়ুটাকে আস্তে করে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। স্নায়ুটা একটুও সজাগ হলো না। তবুও চূড়ান্ত মূর্ছায় যেতে যেতে হালকা মতোন শুনলো কেউ তার নাম বলে চেঁচাচ্ছে, যেনো বারবার কাতর ধ্বনিতে চিৎকার করছে, ‘ মেহনূর চোখ খুলো, চোখ খুলো। প্লিজ চোখ খুলো না — ‘

.
সন্ধ্যাহ্নিক সময় চলছে, দখিনা হাওয়ায় শীতের সোল্লাস। রুমটা শীতের শীতলতায় ছুঁয়ে গেলেও ইজিচেয়ারে দোল খাওয়া মানুষটার মাথা গরম। দাঁতের নিচে অনেকক্ষণ যাবৎ সতের পদের মশলা দেওয়া পানটা চিবাচ্ছেন, পানের রসে ঠোঁট টকটকে লাল। কতগুলো পান মুখে দিয়েছেন সেটা অগণ্য। মেজাজের অবস্থা খুবই খারাপ, যেকোনো সময় ঠাস করে বজ্রপাতের মতো বিষ ফলা বসাতে পারে, যেটা হবে খুবই বিপদজ্জনক। বাড়িতে এতোগুলো মানুষ থাকলেও সবার সাথে অভিনয়ের শিল্পটা শানিয়ে যাচ্ছে, নিজেকে বাড়াবাড়ি রকমের সাধু বানাতে গিয়ে মাঝে-মাঝে ভালোই সমস্যায় ফাঁসেন। একটু আগে খবর এসেছে তার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে, সবকটা গাড়ির অবস্থা তছনছ। পুলিশের হাতে ধরা পরার আগেই বেঁচে যাওয়া লোকরা নিরাপদে সটকে গিয়েছে, যারা ঘটনাস্থলে ম-রেছে তাদের জলন্ত আগুনে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। এমন কঠোর পরিকল্পনা থেকে কিভাবে নিস্তার পেলো হান্নান শেখের মাথায় ঢুকছেনা। গাড়িটার ঠিকঠাক মতো জায়গায় গুলি ঠুকেও আগুন ধরাতে পারলো না? উলটো নিজেরাই গুলি খেয়ে কাত হয়ে মরলো? হান্নান শেখ ইজিচেয়ার থেকে উঠে গায়ে মোটা শাল জড়িয়ে নিলেন, সন্ধ্যার সদ্য নেমতন্ন কুয়াশার ভেতর তিনি কাউকে না জানিয়ে বেরিয়ে গেলেন। পেছন থেকে মাহমুদা অবশ্য জিজ্ঞেস করেছিলো, কিন্তু হান্নান শেখ সেটার যোগ্য উত্তর দেননি। গায়ে পায়জামা-পান্ঞ্জাবি পরা মুরুব্বী চেহারার গণমান্য হান্নান শেখ গায়ে শাল চেপে হাতদুটো পিছমোড়া করে নির্বিঘ্ন পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন। গ্রামের মেঠো পথটার উপর ঘাসের কিশলয়গুলো নিষ্প্রাণ হয়ে আছে, গাছে-গাছে বির্বণ পাতা।কুয়াশার ঠান্ডা পেয়ে প্রকৃতির প্রাণ যেনো কাতর হয়ে পরেছে, ঠান্ডার নিবেদন যেনো প্রাণে কুলাচ্ছে না। মসজিদ পথে ফেরা অনেক মুসল্লীর সাথে সাক্ষাৎ দেখা হলেও মনে-মনে তিনি অন্য পরিকল্পনা করছেন। খাঁচার পাখি যদি খাঁচায় আনা হয়, তাহলে পাখির টানে কি পুরুষ পাখি ফিরবে না? যদি পুরুষ পাখিটা ফিরে আসে তখন তো… এটুকু ভাবতেই হাঁটা থামিয়ে আকাশে তাকালেন হান্নান শেখ। নিষ্পাপ মুখে খুবই বিশ্রী হাসি দিয়ে হো-হো করে হেসে উঠলেন।
.

কপালে হাত স্পর্শ করে জ্বরটা পরোখ করলেন মারজা। এখনো কমেনি। পারদ স্কেলে একশো পাঁচ উঠেছে, মাথাটা ধুইয়ে দেওয়ার পরও জ্বর নামেনি। মাহমুদার কাছ থেকে বারবার সতর্ক বার্তা পেয়েছিলো এই জ্বর নিয়ে, সামান্য ঠান্ডা লেগেই মেহনূরের কঠিন জ্বর বাঁধে এ নিয়ে হুঁশিয়ার করা সত্ত্বেও আজ ছেলের গাফিলতিতে এই দশা হলো। কি দরকার ছিলো ওমন বৃষ্টির মধ্যে ভিজিয়ে-ভিজিয়ে গাজীপুর নেওয়ার? পথে কোনো ছোটোখাটো হোটেলেই নাহয় কিছু সময়ের জন্য থাকতো! কক্সবাজার এসেও তিনি স্বস্তি অনুভব করছেন না, সবাইকে সুস্থ-সমেত পেয়েও মনের খচখচানি কমেনি উনার। চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় কাউকে আজীবনের জন্য হারাতে যাচ্ছেন, তাকে কোনোদিন ফিরে পাবেন না তিনি। কেনো এমন কঠিন অবস্থায় পরেছেন শত চেষ্টা করেও উত্তর মেলেনি। জ্বরতপ্ত মেহনূরের মুখ লাল হয়ে উঠেছে, ঠোঁট ফ্যাকাশে, চোখ বন্ধ, হাতদুটো যেনো রুগ্ন হয়ে গেছে। শাড়ি পালটে দিয়ে ঢিলেঢালা সাদা কামিজ পরিয়ে দিয়েছেন, সঙ্গে ঢিলা ধরনের পায়জামা, বুক পযর্ন্ত কম্বল টেনে দেওয়া। হঠাৎ হোটেল রুমের দরজায় ‘ ঠকঠক ‘ করে নক করলো কেউ, মারজা সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে অনুমতি জ্ঞাপনে বললেন, ‘ কে? ‘। বাইরে থেকে বাচ্চা স্বরে উত্তর এলো, ‘ মা, আমি মাহদি। ‘। মারজা ভেতরে আসতে বলে মেহনূরের কপালে নতুন পট্টি লাগাতে উদ্যত হলেন, মাহদি সোজা বিছানায় উঠে মেহনূরের দিকে উদাস চোখে তাকালো, দৃষ্টি তুলে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

– জ্বর কমেনি মা?

মারজা ভারী নিশ্বাস ছেড়ে মলিন কন্ঠে বললেন,

– না রে বাবা, কমার নামই নিচ্ছে না। এমনেই শরীরে কিছু নেই, এই জ্বর যে কি অবস্থা করে দিলো। এখন ডাক্তার কই পাই?

মাহদি একটা হাত এগিয়ে মেহনূরের গরম হাতটা আষ্টেপৃষ্ঠে ধরলো। কাঙ্ক্ষিত কথাটা আস্তে-আস্তে মাকে শুনিয়ে বললো,
– মা, ভাইয়া বলেছে গা স্পন্ঞ্জ করে দিতে। তাহলে নাকি জ্বর নামবে, আর —

মারজা ভ্রুঁ কুঁচকে চোখ রাঙিয়ে ক্ষেপাটে গলায় বললেন,

– তোর ভাই কি এখন আমাকে শেখাতে আসছে? ওর কি জীবনে জ্বর হয়নি? ওর জ্বর কি আমি নামাইনি? আমার হাতে বড় হয়ে এখন আমাকে টোটকার খবর দিচ্ছে? ওকে আমার সামনে আসতে বলিস! অধমটাকে ঠাটিয়ে চড় না মা-রলে বুকে শান্তি পাবো না। এবার ঠিকই চড় মা-রবো।

মায়ের বিদঘুটে রাগ দেখে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে কেটে পরলো মাহদি। না-জানি আবার ভাইয়ার রাগ এসে নিজের উপরই পরে। মা’তো হাতের কাছে যা পায়, তা দিয়েই বেধড়ক মার লাগায়! মাহদি হাঁপাতে-হাঁপাতে দম ফুরিয়ে গোলআড্ডার চৌকাঠে এসে হাজির। নীতি-প্রীতি-ফারিনসহ সবাই হোটেলের করিডোরের শেষ মাথায় বারান্দায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। মাহদি হাঁপানো অবস্থা দেখে আড্ডার মধ্য থেকে গলা তুললো ফারিন,

– কিরে বিট্টু, কুকুরের মতো জিহবা নাচিয়ে হাঁপাচ্ছিস কেন? কোত্থাকে ছুটে এলি?

ফারিনকে কড়া একটা ধমক দেওয়ার সাধ জাগলো মাহদির। কিন্তু বড় ভাইয়ের সামনে মুখ খুললে যদি ধাম করে পিঠ বাজায়? সে চিন্তা ঝেড়ে ফেলে চুপচাপ একটা খালি চেয়ার টেনে বসতে-বসতে বললো,

– মা বলেছে, ভাইয়াকে জুতা দিয়ে জুতিয়ে জুতিয়ে মা-রবে।

মাহদির কথা শুনে সবাই ফিক করে হাসতে নিলো, ওমনেই অশনী সংকেতের আঁচ ধরতে পেরে হাসি থামলো সবার। ঠোঁট কামড়ালো নীতি-প্রীতি, দাঁত শক্ত করলো সামিক-তৌফ-সৌভিক, মাথা নুইয়ে ফেললো সাবির, মিছেমিছি পানির গ্লাস তুলে ঢকঢক করে মুখভর্তি করলো সিয়াম। সবাই চোখে-চোখে ইশারা করলো, ‘ পেছনে এমন খামোশ অবস্থা কেনো? সে কি শোনেনি? ‘। সবার পেছনে বারান্দার রেলিংয়ের উপর গুমর মুখে বসে আছে মাহতিম, হাতদুটো বুকের কাছে ভাঁজ করা। চোখ থেকে সবটুকু আনন্দ ঝলসে এবার রাগান্বিত অবস্থা। চোখাচোখি ইশারার কথোপকথনটা ভালোই ধরতে পেরেছে, এদিকে সিয়াম কতদূর পানি গড়ালো সেটা দেখার জন্য পানিভর্তি ফোলা মুখে মাথা ঘুরালো, মাহতিমের রাগে চুপসানো মুখ দেখে ‘ ভু ভু ‘ করে মুখবর্ষণ করলো সিয়াম। মুখবর্ষণের সম্পূর্ণ পানি যেয়ে পাশে থাকা নীতির গায়ে পরলো। সবাই নীতির ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা দেখে দম ফাটা হাসিতে ফেটে পরলো, সিয়াম কোনোভাবেই হাসি থামাতে পারলো না। তৌফ হাসতে-হাসতে পা থেকে স্লিপার খুলে ‘ জুতিয়ে জুতিয়ে মা-রবে ‘ স্টাইলে অভিনয় করে দেখালো। অভিনয় দেখে পেট ব্যথা করে হাসতে লাগলো সবাই। অন্যদিকে টগবগ-টগবগ করে রাগের তরল ফুটছে মাহতিমের। না পারছে ধরে কয়েক দফা মার লাগাতে, না পারছে জোরেসোরে ধমক দিতে! বাধ্য হয়ে রেলিং থেকে নেমে হৈ-হুল্লোড় থেকে চলে গেলো মাহতিম। নেভি ট্রাউজারের পকেটে দুহাত গলিয়ে অন্যমনষ্ক ভঙ্গিতে হাঁটতে-হাঁটতে লিফটে ঢুকলো, পুরো লিফটে কেবল একটা মেয়েই ছিলো তখন। বিচ থেকে ঘুরে আসার ইচ্ছায় গ্রাউন্ড ফ্লোরের বাটনে বৃদ্ধাঙ্গুল চাপ দিলো মাহতিম, আড়চোখে টের পেলো মেয়েটা বেশি সুবিধার না। পড়নের শাড়িটাও অশালীন ভাবে পরে আছে। মেয়েটা ঠিক বাঁদিকে দাঁড়িয়ে আছে, বারবার পা-থেকে-মাথা পযর্ন্ত লাস্যময়ী চাহনিতে চোখ বুলাচ্ছে, ঠোঁটটাও বুঝি অশ্লীল কায়দায় খানিকটা কামড়ালো। মাহতিম এমন ভান ধরে দাঁড়িয়ে আছে যেনো কিছুই দেখতে-বুঝতে পায়নি। মেয়েটা হঠাৎ আস্তে করে হাতটা কালো সাইডব্যাগে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। সাথে-সাথে আরো সতর্ক হলো মাহতিম! মেয়েটা কি পি’স্তল বের করার চিন্তায় আছে? লিফটে কি মাহতিমের জন্যই অপেক্ষা করছিলো?

চলমান .

#FABIYAH_MOMO .

#নোটবার্তা : পর্বটা বড় করার উদ্দেশ্যেই গতকাল না দিয়ে আজ দিলাম। দুঃখ প্রকাশ করছি কাল অপেক্ষায় রাখার জন্য। আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি পাঠক। আপনাদের প্রতিক্রিয়াপূর্ণ মন্তব্যের জন্য আবারও অপেক্ষায় রইলাম।❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here