তোমার_মাঝে_আমি 🌸❤ [I_Am_In_You] #লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল) #পর্ব_২০,২১,২২

0
220

#তোমার_মাঝে_আমি 🌸❤ [I_Am_In_You]
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_২০,২১,২২

মিঃ মুখার্জি: যা বলেছিলাম,,,এতো বড়ো শক টা মেনে নিতে পারেনি তাই অজ্ঞান হয়ে গেছে,,,সেন্স ফিরে আসবে কিছুক্ষণ পরেই,,,

অঙ্কুর: ডক্টর আহিল??

মিঃ মুখার্জি : হ্যাঁ ওনার ব্যাপারে কিছু ইনফরমেশন দিতেই আমি এসেছি,,

জ্যাক: কি ইনফরমেশন ডক্টর??

মিঃ মুখার্জি: পেশেন্টর ব্রেন ব্লাড সয়েলিং হচ্ছে,,,এটা যদি বেড়ে যায় তাহলে উনি মারা যাবেন,,আর বেড়ে যাওয়ার চান্সটাই বেশি কারণ পেশেন্ট মেডিসিনে রেসপন্স করছে না,,

আহিলের মা: তাহলে কি আর আমার ছেলে টাকে বাঁচানোর কোনো উপায় নেই??

মিঃ মুখার্জি: একটাই উপায় আছে,,

আয়েশার বাবা: কি উপায়??

মিঃ মুখার্জি: অপারেশন!

অঙ্কুর: কিসের অপারেশন??

মিঃ মুখার্জি: ব্রেনের অপারেশন,,,যেহেতু উনি মাথায় চোট পেয়েছেন তাই এই অপারেশন টা করলে ওনার ব্লাড সয়েলিং টা বন্ধ হতে পারে,,,২০% চান্স পেশেন্টর রিকভারি করার ২০% চান্স অপারেশন আনসাকসেসফুল হওয়ার,,,

জ্যাক: আর বাকি ৬০%??

মিঃ মুখার্জি: মেমরি লস,,,ওনার যদি মেমরি লস হয় তাহলে ওনার কিচ্ছু মনে থাকবে না,,,কিচ্ছু না,,

আহিলের মা: নাহ কোনো দরকার নেই অপারেশনের,,,আমার ছেলে যদি আমায় চিনতেই না পারে তখন কি লাভ??

মিঃ মুখার্জি: দেখুন আমি মানছি ডিসিশন নেওয়া টা টাফ তবুও একবার ভেবে দেখুন যদি অপারেশন না করা হয় তাহলে এমনি তেও আমরা ওনাকে হয়তো বাঁচাতে পারবো না,,,আর ২০% চান্স যেমন সাকসেসফুল হওয়ার তেমন আনসাকসেসফুল হওয়ার চান্স ও কিন্তু ২০%,,,আর মেমরি লস মানে তো এই না যে কোনদিন ওনার মেমরি ফিরবে না,,,চেষ্টা করলেই ওনার মেমরি কামব্যাক করতে পারে তাই ওনাকে বাঁচানোর জন্য এইটুকু রিস্ক আপনাদের নিতেই হবে,,,

আয়েশা: অপারেশন হবে ডক্টর,,,(আয়েশা আস্তে করে উঠে বসলো)

আহিলের মা: এসব তুই কি বলছিস মা?? আহিল তো মরেও যেতে পারে??

আয়েশা: অপারেশন টা না হলেও তো মরে যাবে,,,অপারেশন টা হলে যাও ক্ষীণ আশা থাকবে ওকে আবার ফিরে পাওয়ার অপারেশন না হলে সেটাও থাকবে না,,,ওর যদি মেমরি লস হয় তাহলে আমরা আমাদের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবো সবটা মনে করানোর,,,অন্তত ওকে দেখতে তো পাবো,,,

মিঃ মুখার্জি: আপনারা যদি রাজি থাকেন তাহলে আমি বন্ড পেপার নিয়ে আসছি সেটাতে আপনারা সাইন করলেই আমরা আজকে অপারেশন করবো,,,দেরী করতে চাই না আমরা

আহিলের মা: ঠিক আছে আমরা রাজি,,,

আহিলের মা বন্ড পেপারে সাইন করে দেওয়ার পরে আহিল কে ও.টি তে নিয়ে যাওয়া হয় আর কিছুক্ষণ পরেই ও.টি লাইট জ্বলে ওঠে,,,আহিলের মা আরোহীর কাঁধে মাথা রেখে চোখের জল ফেলছে,,,জ্যাক আরোহীর পাশেই বসে আছে হাঁটু তে ভর দিয়ে,,,আয়েশার বাবা-মা দুজনেই চুপচাপ রয়েছেন আর অঙ্কুর পায়চারি করছে আর বারবার ও.টি লাইটের দিকে তাঁকাচ্ছে,,,আর আয়েশা?? আয়েশা চোখ বন্ধ করে শুধু ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছে,,,

আফটার ২ আওয়ার’স ⏳⏳

ও.টি. লাইট অফ হয়ে গেলো আর ডক্টর বেরিয়ে এলো ডক্টর বেরিয়ে আসতেই সবাই বসা থেকে উঠে ডক্টরের কাছে চলে গেলো,,,আয়েশা ও চোখ খুললো আর সবার পিছনে দাঁড়িয়ে রইলো,,ওর হাত-পা ভয়ে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে,,,শরীর কাঁপছে কি খবর আসবে এটা ভেবে,,,আহিলের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে ও যে শেষ হয়ে যাবে,,,

জ্যাক: ডক্টর চুপ করে থাকবেন না,,,প্লিজ কিছু বলুন,,

ডক্টর: এখন আপাতত চিন্তার কোনো কারণ নেই,,,অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে কিন্তু

অঙ্কুর: কিন্তু??

ডক্টর: ওনার মেমরি লস হয়েছে কি না তা আমরা এখনো জানতে পারিনি,,,ওনার জ্ঞান ফিরলে জানা যাবে,,,পেশেন্টর জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করতে হবে এখন,,,

আরোহী: ভাইয়ার জ্ঞান কখন ফিরবে??

ডক্টর: এটা ডিপেনড করছে ওনার শরীরের অবস্থার ওপর আমার যতদূর মনে হয় ২৪ ঘন্টা তো লাগবেই,,,আমরা ওনাকে কেবিনে দিয়ে দেবো বাট এখন দেখা করতে পারবেন না,,জ্ঞান ফিরলে আমি চেক আপ করে আপনাদের পারমিশন দেবো,,,

অঙ্কুর: থ্যাংক ইউ ডক্টর,,,থ্যাংক ইউ সো মাচ,,

ডক্টর: আমাকে থ্যাংক ইউ বলার কিছু নেই এটা তো আমার কর্তব্য,,,থ্যাংক ইউ জানান ভগবান কে আর পেশেন্টর ওয়াইফ কে,,,উনি যদি এই টাফ ডিসিশন টা না নিতেন তাহলে হয়তো ওনাকে আমরা বাঁচাতে পারতাম না,,,

ডক্টর চলে গেলে আহিলের মা গিয়ে আয়েশা কে জড়িয়ে ধরে,,,তারপর অঙ্কুর ও,,,

অঙ্কুর: আশু আজকে তুই আরোহী আর আন্টী বাবা মা সবাই এখনি বাড়ি যাবে,,,এখানে আমি আর জ্যাক স্টে করবো,,

জ্যাক: ইয়াহ অবভিয়াসলি,,,আমি তোমাদের বাড়ি তে ড্রপ করে দেবো তারপর এখানে চলে আসবো

আয়েশা: নাহ আমি এখানে থাকবো,,,

অঙ্কুর: আমি বারণ করেছি একবার!(হাল্কা ধমক দিয়ে)

আরোহী: আমি বরং থেকে…(জ্যাকের দিকে তাকাতেই আরোহী চুপ করে গেলো জ্যাকের মুখ ভঙ্গি আর চোখ দেখে)

জ্যাক: ওকে সবাই চলো আমি ড্রপ করে দেবো,,,দেখতে দেখতে কিন্তু অনেক রাত হয়ে গেছে,,,

এরপর জ্যাক সবাইকে ড্রপ করে দিলো আর শেষে যখন আহিলের বাড়ি তে এলো তখন আয়েশা আর আহিলের মা গাড়ি থেকে নেমে গেলেও আরোহী ঘুমিয়ে পরে,,,জ্যাক আয়েশার দিকে তাকাতেই,,

আয়েশা: তুমি নিয়ে আসো ওকে,,(মুচকি হেসে)

জ্যাক একবার ঘুমন্ত আরোহীর দিকে তাকালো আর হাসলো তারপর গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে আরোহীর সাইডের দরজা খুলে ওকে আস্তে করে কোলে তুলে নিলো,,,বাইরে নিয়ে এসে পা দিয়ে দরজা টা বন্ধ করে হাঁটা ধরলো আরোহীর রূমের দিকে,,,মাঝে আরোহী একটু নড়ে উঠলেও আবার ঘুমিয়ে পরেছে,,,আরোহী কে শুয়ে দিয়ে জ্যাক আরোহীর দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে,,,

জ্যাক: অনেক দিন আগে যখন আহিল তোমার ছবি দেখিয়ে ছিল তখনি তোমাকে নিজের অজান্তে মন দিয়ে ফেলেছি,,,তারপর যখন তোমার সাথে প্রথম কথা বললাম তোমার ভয়েজ আমাকে ঘায়েল করেছিল,,,ভাবতেই পারিনি তুমি আমাকে ফোন করবে,,,জানি না তোমাকে কোনদিন নিজের মনের কথা বলতে পারবো কি না,,,তাই আজ যখন তুমি ঘুমিয়ে আছো তখনি বলছি,,,আই লাভ ইউ আরোহী আই রিয়েলি রিয়েলি লাভ ইউ,,,মে বি তুমি অন্য কাওকে ভালোবাসো ওর লাইক করো বাট আমি তোমায় কোনদিন সামনা সামনি এটা বলতে পারবো না কজ আমি তোমার ফ্রেন্ডশিপ টা হারাতে পারবো না,,,

এই কথাগুলো বলে জ্যাক আরোহীর হাতের উল্টো পিঠে আর কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে উঠে যেতে নিলেই আরোহী জ্যাকের কলার ধরে জ্যাক কে নিজের দিকে টেনে উঠতে না দিয়ে জ্যাকের কানে কানে বলে,,,

আরোহী: আই লাভ ইউ টূ মিঃ আমেরিকা আন্ড অলসো মিঃ ভীতুরাম,,,

জ্যাক তো পুরো হা হয়ে রয়েছে ঘটনাচক্রে,,,আর আরোহী মিটিমিটি হাসছে,,,জ্যাক উঠে বসে আরোহীর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সে দেখে আরোহী উঠে বসে জ্যাকের চোখের সামনে তুরি বাজালো আর জ্যাক জিজ্ঞেস করলো,,,

জ্যাক: তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে তাহলে??

আরোহী: তুমি যখন আমায় কোলে নিয়ে আসছিলে তখনি ঘুম ভেঙে গেছিলো আমার হিহিহি,,

জ্যাক আর কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না তাই কাচুমাচু মুখ করে মাথা চুলকালো আর আরোহী বললো,,,

আরোহী: এবার আপনি যান,,,ভাইয়ার কাছে থাকতে হবে তো নাকি??

জ্যাক: হম আমি আসছি

আরোহী: ভাইয়ার খবর দিয়ো প্লিজ,,

জ্যাক: হম,,চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে,,বায় দ্য ওয়ে আমি ভীতুরাম নই (ভাব নিয়ে)

আরোহী: হিহিহিহি সে তো দেখতেই পেলাম সামান্য প্রপোস করতে ভয় পাও

জ্যাক: ভয় প্রপোস করতে নয়,,,ভয় টা তোমাকে হারানোর,,,যেটা আমি চাই না,,,তাছাড়া ইউ নো আমি কতো মেয়ের প্রপোসাল পেয়েছি (ভাব নিয়ে)

আরোহী: হুহ 😒😒 তাহলে আমার কাছে কেনো এসেছ?? যাও না যাও ঐ হুবুচুনিদের কাছে যাও 😠😠

জ্যাক: না বউ আমার তোমাকেই পছন্দ (টুপ করে গালে একটা চুমু দিয়ে দৌঁড় দিয়ে বেরিয়ে গেলো)

আরোহী জ্যাক চলে যাওয়ার পর গালে হাত দিয়ে হা হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো আর কিছুক্ষণ পর মৃদু হেসে আবার ধপ করে ঘুমিয়ে পরলো,,

আহিলের জ্ঞান ২৪ ঘন্টা পর ফিরেছে কিন্তু কথা বলার মতো অবস্থায় নেই তাই অঙ্কুর আর জ্যাক কিছু জানায়নি কাওকে,,,এক দিন বাদে দু-দিনের মাথায় আহিল কিছুটা সুস্থ বোধ করছে এবং কথাও বলতে পারছে,,তাই ডক্টর অঙ্কুর আর জ্যাক কে জানাতেই ওরা সবাই কে খবর দিয়ে দিলো,,,আয়েশা তো ছটফট করছিল এই খবর টা শোনার জন্য,,,যেমন খাঁচায় বন্দী পাখি খাঁচা থেকে বেরনোর জন্য ছটফট করে তেমন আয়েশার মন টাও আহিল কে দেখার জন্য ছট ফট করছে,,,,আয়েশা আর এক মুহুর্ত দেরী করেনি আরোহী আর আহিলের মা কে সঙ্গে করে নিয়ে রওনা দিয়ে দিয়েছে নার্সিংহোমের উদ্দেশ্যে,,,,

❤❤ ইন নার্সিংহোম ❤❤

আহিল কে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল তাই আহিল ঘুমিয়ে আছে,,,ডক্টর আর নার্স সবাই কে বলে দিয়েছে জানো বেশি উত্তেজিত না করে পেশেন্টকে,,,সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,,,কিছুক্ষণ পরই আহিল চোখ মেলে তাকালো আর ডক্টর জিজ্ঞেস করলো আহিল কে,,

মিঃ মুখার্জি: কি মিঃ আহিল এখন কেমন লাগছে?? ফীলিং বেটার??

আহিল: ইয়েস ডক্টর (আস্তে করে)

আহিলের মাথায় ব্যান্ডেজ করা পায়েও ব্যান্ডেজ আছে কিন্তু চাদর দিয়ে ঢাকা থাকায় দেখা যাচ্ছেনা,,,হাতেও চোট লেগেছে সামান্য জায়গায় তাই সেখানেও ব্যান্ডেজ করা,,,আহিলের মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে এসব দেখে আয়েশার মন টা কেমন ছ্যত করে উঠলো,,,কিন্তু মনের ভিতর ভয়টা জানো এখন বেশি উঁকি দিচ্ছে যদি ওর আহিল ওকে ভুলে যায় তখন??

এসব ভাবতে ভাবতেই আয়েশার ভাবনায় ছেদ পরলো ডক্টরের কথায়,,

মিঃ মুখার্জি: মিঃ আহিল দেখুন আপনার বাড়ির সবাই এসেছে

আহিল কিছুটা কপাল কুঁচকাল তাতে সবাই ভয় পেয়ে গেলো,,,আয়েশা চুপচাপ চোখ বুজে রয়েছে,,,

আহিল: আয়ু!

আয়েশা হুট করে চোখ খুললো নিজের কানকে হয়তো বিশ্বাস করতে পারছে না আয়েশা তাই কোনো সাড়া দিতে পারেনি আহিলের ডাকের,,এদিকে সবাই একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো এই ভেবে যে আহিলের সবটা মনে আছে,,

মিঃ মুখার্জি: থ্যাংক গড আপনার সব কিছু মনে আছে,,,

আহিল: নিজের জীবন কে কি করে ভুলবো (বিড় বিড় করে)

মিঃ মুখার্জি: নাও আপনারা ওনার সাথে কথা বলতে পারেন কিন্তু বেশি উত্তেজিত করবেন না ওনাকে,,

ডক্টর বেরিয়ে গেলে আহিলের মা আহিলের হাত ধরে কেঁদে ফেলে আর অঙ্কুর বলে,,

অঙ্কুর : কেমন আছিস এখন??

আহিল: বেঁচে গেছি এটাই তো ভাবতে পারছি না,,

জ্যাক: আহিল বাজে কথা রাখ আর বল এখন কেমন ফীল করছিস??

আহিল: মাচ বেটার,,

আহিল একটু মাথাটা হেলাতেই দেখলো অঙ্কুরের পিছনে দাঁড়িয়ে আয়েশা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর নিজের চোখের জল মুছছে বার বার,,,আহিল অঙ্কুর কে কিছু বলবে তার আগেই আরোহী বলে উঠলো,,

আরোহী: দা ভাই কি করে হলো এমন টা??

আয়েশার মা: আহ! এখন এসব কথা না বললেই নয়,,এসব কথা পরে হবে,,আগে আহিল কে পুরো পুরি সুস্থ হতে বাড়ি ফিরতে দে,,

আহিল: অঙ্কুর! তোর বোন কি তোর পিছনেই দাঁড়িয়ে থাকবে?? এখানে কি লুকিয়ে কাঁদার প্রতিযোগীতা চলছে?? নাকি আমি মোর গেছি তার কাছে?? (আহিল অভিমানের সুরে কথাটা বললো)

আয়েশা কে আর কে রাখে,,অঙ্কুর কে পাশ কাটিয়ে সোজা হেঁটে আহিলের বুকে ঝাপিয়ে পরলো,,,এখানে যে সবাই উপস্থিত তার খেয়াল নেই আয়েশার,,,ওর কাছে এখন সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার ওর আহিল কে ও ফিরে পেয়েছে,,,আয়েশার এমন কান্ড দেখে আহিল আলতো করে হাত টা আয়েশার পিঠে রাখলো হাতে সেলাইন থাকায় তাই একটু ব্যাথা লাগছে তাতে কি? আয়েশা কে ফিরে পাওয়ার সুখের কাছে এই ব্যাথা কিছুই না,,,আয়েশা এখনও কাঁদছে এই জন্য নিজের থুতনি আয়েশার কাঁধে রেখে ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,,,

আহিল: আর কতো কাঁদবে?? আমি ঠিক আছি আর এখানে শুধু তুমি আমি নেই বাকি সবাই আছে,,

আয়েশা আহিলের কথা শুনতেই ঝট করে আহিল কে ছেড়ে দেয় এদিকে সবাই ওদের কে দেখে মিটিমিটি হাসছে,,আয়েশা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো আয়েশার বাবা কোথাও নেই,,

আয়েশা: মা! বাবা কোথায়??

আয়েশার মা: এখানেই তো…ওমা সে কি কই গেলো?? এক্ষুণি তো এখানে ছিলো,,

অঙ্কুর : সেটাই তো! বাবা তো এখানেই ছিলো তাহলে কোথায় গেলো??

আমি এখানে!

কণ্ঠর স্বর শুনে সবাই দরজার দিকে তাকাতেই আতকে উঠলো! সবাই ভাবছে এটা কি করে সম্ভব? আহিল তো পুরো জমে গেছে………………………
,
[ ফিরে আসবো আগামী পর্বে 🌹]

#তোমার_মাঝে_আমি 🌸❤ [I_Am_In_You]
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_২১

আয়েশার বাবার কন্ঠ শুনে পিছনে দরজার দিকে তাকাতেই সবাই আতকে ওঠে,,,অঙ্কুর এক কদম পিছিয়ে যায় আর আহিল এক দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে,,,নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না আহিল,,,কারণ আয়েশার বাবা একা আসেনি ওনার বাম পাশে চুরিদার পরিহিত একটি মেয়ে এসেছে,,,মেয়েটিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওড়না দিয়ে মুখ পেঁচিয়ে রেখেছিল,,,ওড়না টা সেভাবেই রয়েছে,,,,মেয়েটি আর কেউ নয় আহিলের দিদি আর অঙ্কুরের স্ত্রী,,

” আনিকা ”

আয়েশার বাবা আর বেশি দেরী না করে সঙ্গে সঙ্গে আনিকা কে ভিতরে নিয়ে গিয়ে দরজা টা লক করে দিলো,,,আর আনিকা আস্তে আস্তে অঙ্কুরের দিকে এগিয়ে গিয়ে আহিলের দিকে তাকাতেই আয়েশা উঠে গেলো আর আনিকা সেই দেখে আহিলের পাশে গিয়ে বসলো আর আহিলের গালে হাত ছুঁয়ে বললো,,,

আনিকা: কেমন আছিস ভাই!?

আহিল কিছু বলছে না শুধু একভাবে তাকিয়ে আছে আনিকার দিকে,,,চোখ দিয়ে সমানে জল পরছে,,,আহিল আনিকা যে হাত দিয়ে ওর গাল ছুঁয়ে রয়েছে সেদিকে তাকালো আর হাতের দিকে তাকিয়ে চোখ বুজ্তেই মনে পরে গেলো আনিকা তো মরে গেছিলো,,,সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখ খুলে আনিকা কে প্রশ্ন করলো,,,

আহিল: এটা কি করে সম্ভব?? আমার দি তোহ…

আহিল কে থামিয়ে দিয়ে আয়েশার বাবা বললেন,,

আয়েশার বাবা: মারা যায়নি,,,আহিল তোমার দিদি আনিকা মারা যায়নি এটা শুধু একটা ছল ছিলো,,

আয়েশা: মানে?? কি বলছো টা কি বাবা তুমি এসব?? তুমি যদি সব জেনেই থাকতে তাহলে আমাদের কেনো বললে না?? আমার দা ভাই কে কেনো বললে না?? তুমি একবার দেখো দা ভাইয়ের অবস্থা টা (অঙ্কুরের দিকে ইশারা করে)

আয়েশার বাবা: অতো টা সহজ ছিল না রে মা সব কিছু,,,আনিকা কে আমি অনেক কষ্টে বাঁচিয়েছি,,,ঋক ওকে মারতে চেয়ে ছিলো আর আমি নিশ্চিত আহিল কে ও ঐ মারতে চেয়েছে,,,

আয়েশা: হ্যাঁ বাবা,,

আহিল: মানে? আয়ু তুমি দেখেছো ঋক কে??

আয়েশা: হমম,,,আমি যখন গাড়ি টার দিকে তাকিয়েছিলাম তখনই বুঝছিলাম ওটা ঋকের গাড়ি কারণ সেদিন মলের পিছনে যখন দেখা হয়েছিল আমাদের তখন ও আমাকে বলেছিল ওটা ওর গাড়ি,,,

আয়েশার বাবা : যেদিন আনিকা ছাদ থেকে পরে যায় আর নার্সিংহোমে ভর্তি থাকে সেইদিন আমি আর অঙ্কুর আনিকা কে দেখে বাড়ি চলে যাচ্ছিলাম,,,হঠাৎই আমার মনে পরে আমার ডক্টরের সাথে কিছু কথা আছে সেটা বলতে আমি কথা বলতে যাই আর অঙ্কুর কে বাড়ি চলে যেতে বলি,,,আমি যখন কথা বলতে যাচ্ছিলাম তখনই শুনি ঋক ফোনে কথা বলছে কিছুটা কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে যেতেই ওর প্লানের কথা শুনতে পাই,,,ও বলছিল,,

ঋক: হ্যাঁ আমি রেডি আনিকা কে মারার জন্য,,

——

ঋক: কিন্তু তোমার কাজ টা মনে আছে তো?? সিসি টিভি ক্যামেরা টা এক্ষুনি অফ করো তুমি তারপর আমি কেবিনে ঢুকব,,,এতে শুধু দেখা যাবে লাস্ট অঙ্কুর গেছিল,,,

——

আয়েশার বাবা: আমি এই শুনে কিছুটা ঘাবড়ে যাই কি করবো ভেবে না পেয়ে ডক্টরের কাছে যাই আর সব টা বলাতে উনি বলেন পুলিশ কে কল করতে কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হতে পারে ভেবে আমি আর ডক্টর চুপচাপ আনিকার কেবিনের কাছে যাই আর বাইরে থেকে দেখি ঋক আনিকার অক্সিজেন মাস্ক টা খুলে দিয়েছে,,,ঋক বেরিয়ে আসবে ঠিক ঐ সময় আমরা সরে যাই দরজার সামনে থেকে আর ও চলে যাওয়ার পর কেবিনে গিয়ে অক্সিজেন মাস্ক টা আবার লাগিয়েদি,,,এরপর যখন আমরা সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করি তখন দেখি সত্যি কোনো কিছুই রেকর্ড হয়নি,,,ঋকের যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আমরা কেবিনে ঢোকায় সেটাও রেকর্ড হয়নি,,,আমি আর কিছু বলিনি সেদিন চুপচাপ বাড়িতে চলে আসি আর ভাবতে থাকি ঋক কেনো করছে এমন?? আনিকা মরেনি এটা জানতে পারলে তো আবার চেষ্টা করবে ওকে মারার তাই তখনই আমার মাথায় আসে যে আমি আনিকা কে লুকিয়ে রাখবো,,,

আয়েশা: কিন্তু এটা কি করে সম্ভব??

আহিল: ডক্টর তো বলেছিল যে দি আর বেঁচে নেই,,,

আয়েশার বাবা: সেটা তো ডক্টর তোমার বেলাতেও বলেছিল আহিল! আসলে আমি ডক্টর কে বলেছিলাম ওটা বলতে,,,আমকে সেদিন রাতেই ডক্টর জানায় যে আনিকার জ্ঞান ফিরে গেছে এবার আর ওর অক্সিজেন বা কিছুর অতটা প্রয়োজন হবে না,,,তখন ওভাবে অক্সিজেন মাস্ক খোলার কারণে আনিকা রেসপন্স করতে পেরেছে আর এটা একটা মিরাক্কেল,,,অবশ্য এমন টা না হলেও আমি ঠিক কোনো একটা ব্যবস্থা করে আনিকা কে লুকিয়ে রাখতাম,,,আমি ডক্টর কে ফোন করে বলি যাতে সকাল বেলায় তোমাদের সবাই কে ডক্টর বলে যে ” আনিকা মারা গেছে ” আমার কথা মতো ডক্টর এমনই বলে তোমাদের আর আমার সুবিধা হয় যখন আহিল সেই কথাটা শুনে সেন্সলেস হয়ে,,,আর শেষকৃত্যের সময় আমি আনিকা কে সরিয়ে দি,,,

অঙ্কুর: কিন্তু আয়েশা আরোহী আর আন্টী তো ছিলো! তাহলে কি করে আনিকা কে সরালে তুমি?

আহিলের মা: আমার সাহায্যে!

আহিল: মম তুমি ও??

আহিলের মা: হ্যাঁ,,,আমি যদি না জানতাম তাহলে আনিকা কে বাঁচানো সম্ভব হতো না,,,শেষকৃত্যের সময় আয়েশা কে আমি তোর অসুস্থতার বাহানা করে তোর কাছে পাঠিয়ে দি আর আমাদের কোনো আত্মীয় স্বজনদের ও রাখি না আনিকা কে চুল্লি তে দেওয়ার সময়,,,ঐদিক দিয়ে আয়েশার বাবা অঙ্কুর কে সরিয়ে নিয়ে যায় কিছুক্ষণের জন্য আর সেই মুহুর্তেই আমি আর আরোহী আনিকা কে সরিয়ে দিয়ে ডক্টর কে বলেদি যাতে অন্য ডেড বডি আনিকর জায়গায় শুয়ে দেয়,,,,এই পুরো প্লান টা যেদিন রাতে আনিকার জ্ঞান ফিরেছিল সেইদিনই আয়েশার বাবা আমায় জানায় আর আমিও সায় দি ব্যাপারটাতে,,,

আহিল: শুধু তুমি না,,আরু ও তো জানতো,,,আমায় কেনো জানালে না মম? আমি কি দোষ করেছিলাম??

অঙ্কুর: আহিল আমি ও হয়তো অনেক বড়ো দোষ করেছিলাম তাই আমাকে ও জানানো হয়নি (অভিমানের সুরে আনিকার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে)

আরোহী: এমন টা নয় ভাইয়া,,আমরা জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার যখন জ্ঞান ফিরলো তখনই তুমি আমেরিকা চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে,,আর আঙ্কেল ও ফোন করে বললো যাতে আমরা কিছু না জানাই এখনি,,,ভাইয়া কে জানালে অঙ্কুর ভাইয়া জানতো আর অঙ্কুর ভাইয়া জানলে ঋক তাই আমরা কেউ রিস্ক নিতে পারিনি,,,

আনিকা: ভাই তুই আমার উপর রেগে আছিস??

আহিল: তোকে ফিরে পেয়েছি এটাই অনেক আমার কাছে,,ভাবতে পারিনি তোকে ফিরে পাবো দি,,

আনিকা আহিল কে জড়িয়ে ধরলো,,,আহিল ও মোটামুটি জড়িয়ে ধরলো কিন্তু হাতে ক্যানোলা লাগানো থাকায় একটু ব্যাথা লাগছে,,,আনিকা আহিল কে ছাড়তেই আয়েশা ওর বাবা কে জিজ্ঞেস করে,,

আয়েশা: বাবা! আনিকা বৌদি কোথায় ছিলো এতদিন??

আরোহী আয়েশার বাবা আর আহিলের মা একে অপরের দিকে মুচকি হাসলো আর আনিকা ও আয়েশার দিকে এগিয়ে গিয়ে হাসলো,,,আড় চোখে তাকালো অঙ্কুরের দিকে,,অঙ্কুর মুখ ফিরিয়ে নিলো,,আনিকা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে অঙ্কুরের অভিমান হয়েছে,,,শুধু অভিমান না অভিমানের পাহাড় জন্মেছে,,,কেনই বা জন্মাবে না? প্রায় কয়েক বছর আনিকা কে ছাড়া রয়েছে ও,,

আয়েশা: কি হলো তোমরা এমন হাসছো কেনো??

আহিলের মা: আয়েশা তোর মনে আছে তোকে একটা ঘরে যেতে আমি বারণ করেছিলাম!

আয়েশা: হ্যাঁ ঐ তো…(একটু থেমে) তার মানে এতদিন বৌদি তোমাদের বাড়িতে ছিলো!! (অবাক হয়ে)

অঙ্কুর: ওয়াট!!

আহিল: মানে টা কি??

আহিলের মা: হমম ওকে আমি নিজের কাছেই রেখেছিলাম,,ওর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে বেশ অনেক দিন সময় লেগেছিল,,,লাগবে নাই বা কেনো কেউ যদি এভাবে ওকে মারার চেষ্টা করে তো এমনটাই হবে,,

আয়েশা: কিন্তু বৌদি তুমি ছাদ থেকে ঝাঁপ কেনো দিয়েছিলে??

আনিকা আয়েশার প্রশ্ন শুনে করুন চোখে অঙ্কুরের দিকে তাকায় আর দেখে অঙ্কুর ও অসহায় চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,,আনিকা চোখ সরিয়ে নিয়ে আয়েশার দিকে তাকায় আর বলে,,,

আনিকা: আমি ইচ্ছে করে ঝাঁপ দিনি রে বোন,,

আয়েশা: কিহ!?

আরোহী: হ্যাঁ বৌমনি দি ভাই ইচ্ছে করে এমন কিছু করেনি,,,দি ভাই কে ধাক্কা মেরেছিল কেউ একজন,,,দি ভাই সুস্থ হওয়ার পরেই আমাদের বলেছে,,,

অঙ্কুর: কে ধাক্কা দিয়েছে??(চোখ মুখ শক্ত করে হাত মুঠ করে বললো)

আয়েশার বাবা: তুই শান্ত হ,,,আনিকা দেখতে পাইনি মুখটা,,

আনিকা: মুখে মাস্ক ছিলো আমি দেখতে পাইনি তাই 😔😔

এতক্ষণ ধরে এতোকিছু কথা হলো কিন্তু আহিল কোনো কথা বললো না,,আর জ্যাক ও না,,,জ্যাকের তো অবস্থা খারাপ,,,জ্যাক মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে আহিলের পায়ের কাছে বসে পরলো আর সেই আরোহী ফিক করে হেসে দিলো,,,

আয়েশার মা: কি হলো তোমার বাবা??

জ্যাক: বাবা রে বাবা 🥴🥴 এতো প্ল্যানিং প্লটীং সার কে উপার সে জা রাহা হেইন রে বাবা 🥴🥴

আরোহী: কেউ একে অ্যাসাইলামে পাঠাও 😂😂

জ্যাক: হুহ 😒😒 এই আহিল তুই কি ভাবছিস রে?? তোর ও আমার মতো অবস্থা নাকি?? 🤭🤭

আহিল : নিশ্চুপ

অঙ্কুর: আহিল! তোর মাথায় কি চলছে বলতো?? কি প্লান করছিস তুই?

জ্যাক: আহিল প্লান করছে 😳😱

আহিল প্রতি উত্তরে শুধু বাঁকা হাসলো আর সবার দিকে তাকিয়ে হাতের নখগুলো পর্যবেক্ষণ করতে করতে বললো,,,

আহিল: গেম ইস ওন 😏

[ ফিরে আসবো আগামী পর্বে 🌹]

#তোমার_মাঝে_আমি 🌸❤ [I_Am_In_You]

#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)

#পর্ব২২

আহিল রিস্ক নিয়ে ডক্টর কে বলে সেইদিনই ডিসচার্জ নিয়ে নিলো আর বাড়ি ফিরে এলো কিন্তু নিজের বাড়িতে না আয়েশাদের বাড়িতে,,,আয়েশাদের বাড়িতে এখন কোনো গার্ড নেই তাই আহিল ঠিক করেছে ও বাড়িতেই থাকবে আর আরোহী আহিলের মা জ্যাক এরা সবাই আহিলের বাড়িতে,,,অঙ্কুর বারন করেছিল আহিল কে এতটা রিস্ক নিতে কিন্তু আহিল তো আহিলই শোনেনি কথা,,,বাড়ি ফেরার সময় সারা রাস্তায় আনিকা অঙ্কুরের সাথে কথা বলতে চেয়ে ছিলো কিন্তু অঙ্কুর সেই সুযোগ দেয়নি,,,তাই বাড়ি ফিরে আহিলের সাথে দেখা করে অঙ্কুরের ঘরের দিকে পা বাড়ায়,,,

আজ অনেকদিন পর আনিকা এই বাড়িতে পা রেখেছে,,,সময় অনেকটা কেটে গেলেও সব কিছু একরকম রয়েছে,,,আনিকা ভয়ে ভয়ে অঙ্কুরের ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল গিয়ে দেখলো অঙ্কুর ওয়াশরূম থেকে মাথা মুছতে মুছতে বের হচ্ছে,,,আনিকা মনে মনে হাসলো কারণ অঙ্কুরের এটা পুরোনো স্বভাব কোথাও থেকে এসে শাওয়ার নেবে সে যতই শীতকাল হোক না কেনো,,,কোনো সময় এটা বাদ যায় না,,,আনিকা চুপ করে দাঁড়িয়ে অঙ্কুর কে দেখছে আজ কতদিন পর অঙ্কুর কে দেখছে ও,,,এসবের মধ্যেই অঙ্কুরের ডাকে আনিকার ঘোর কাটলো,,,

অঙ্কুর: কিছু বলতে চাও?? ওরম চোরের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো??

আনিকা: আব,,হ্যাঁ আসলে,,,এই এক মিনিট আমি চোর!!😠😠 (ভিতরে এসে)

অঙ্কুর: ওরম লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলে কেনো চোর না হলে??

আনিকা: দ,,দে,,দেখছিলাম ক,,কো,,কোথায়

অঙ্কুর: তোহ! কি করছিলে?

আনিকা : আব,,আমি কিছু ব,,বলতে চাই

অঙ্কুর : তারাতাড়ি বলো আমার সময় নেই

আনিকা: কি এমন রাজকার্যে যাবে হ্যাঁ??😒😒

অঙ্কুর: সেটা জেনে তোমার লাভ নেই তুমি তোমার কথাটা বলো আর বেরিয়ে যাও,,একা থাকতে দাও আমায়

অঙ্কুর এতো সময় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা মুছতে মুছতে কথা বলছিল আনিকার দিকে ফিরেও তাকায়নি,,,আনিকা প্রথম থেকে কিছু না বললেও শেষের কথা টা শুনে খুব কষ্ট পেলো নিজের অজান্তেই চোখে জল চলে এলো,,এদিকে আয়না দিয়ে সবকিছুই দেখতে পাচ্ছে অঙ্কুর,,

আনিকা: কেনো যাবো আমি?? এটা তো আমার ও ঘর (চোখ মুছে)

অঙ্কুর: ওহ রিয়েলি?? (আনিকার সামনে ফিরে) এতদিন কোথায় ছিলো তোমার এই ঘর?? নিজের বাড়িতেই তো ছিলে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করোনি তোমরা,,,আড়ালে এতো কিছু করে গেছো আর আমি শুধু ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেয়ে গেছি,,,প্রতিটা মুহুর্তেই শেষ হয়ে গেছি এই ভেবে যে তোমাকে আর কোনদিন ফিরে পাবো না,,আমি মা আহিল আর আয়েশা বাদে সবাই জানে আর আমরা জানি না,,,আমি তোমার হাসবেন্ড হয়ে জানি না কেনো বলতে পারো?? কি দোষ করেছিলাম আমি যে এই সব কিছু আমি জানতে পারলাম না?? নাকি অধিকার টা অন্য কাওকে দিয়ে দিয়েছো এতদিনে?? (প্রচন্ড রেগে টাওয়াল টা বিছানায় ছুড়ে ফেলে দিলো)

আনিকা: অঙ্কুর!!! কি বলছো তুমি এসব??

অঙ্কুর: ভুল কিছু বলেছি বলে তো মনে হয় না,,(কোমরে দু-হাত দিয়ে)

আনিকা: হ্যাঁ ভুল বলছো,,,তুমি এভাবে আমার কথা না শুনে এতো কথা বলতে পারো না,,,আমার কথাটা বলা হয়ে গেলেই আমি চলে যাবো ডিস্টার্ব করবো না তোমায়,,

অঙ্কুর: নিশ্চুপ

আনিকা: আমার পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রায় ১৫ দিন লাগে,,,সুস্থ হওয়ার পর পরেই তোমাকে আর ভাই কে প্রথম খুঁজি আর দেখা করতে চাই কিন্তু মা কে সেটা বলতেই মা আমাকে বলে যে বাবা (অঙ্কুরের বাবা) নাকি অনেক আগেই ফোন করে বলেছে যে আমি জানো তোমাদের বাড়ি না আসি কারণ টা হলো ঋক,,,আমাকে মা বললো ঐ ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই নাকি ঋক কিছু একটা করেছিল তাই বাবা তোমাকে আর আয়েশা কে জানাতে পারেনি আর মা ও ভাই কে কিছু জানায়নি কারণ ভাই জানলেই এ দেশে চলে আসবে আর রাগের মাথায় কি করে বসবে তখন হিতে বিপরীত হয়ে যাবে,,এটাই বলার ছিলো আমার যে শুধু তুমি নও আমিও প্রতি মুহুর্তে কষ্ট পেয়েছি আহিল বাড়ি ফিরেছে তার পরেও আমি ওর কাছে যেতে পারিনি,,,আয়েশার কাছে যেতে পারিনি,,,এতটা কাছে থেকেও বহু দুরে ছিলাম আমি,,

আনিকা চোখ মুছে চলে পিছন ফিরে চলে যেতে নিলেই অঙ্কুর আনিকার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে আর এক হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে দাঁড়ায়,,,আনিকা অঙ্কুরের দিকে তাকিয়েও চোখ নামিয়ে নেয় আর অঙ্কুর এক হাত আনিকার গালে রেখে মাথাটা উঁচু করে কপাল ঠেঁকিয়ে বলতে থাকে,,,

অঙ্কুর: আ’ম সরি আনু,,তুমি জানো না যখন শুনে ছিলাম তুমি আর নেই আমার কি অবস্থা হয়েছিল মনে হচ্ছিল নিজের দোষে তোমায় হারিয়ে ফেললাম,,আ..র ক..কো..কোনদিন ত..তোমায় ফিরে প..পাবো ন..না

আনিকা চোখ বুজেই বুঝতে পারছে অঙ্কুর কাঁদছে তাই জন্য ওর কথা গুলো কেঁপে যাচ্ছে,,,আনিকা চোখ খুলে দেখলো অঙ্কুর চোখ বুঝে রয়েছে আর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে,,,আনিকা চোখ টা মুছিয়ে দিলো অঙ্কুরের আর জড়িয়ে ধরে অঙ্কুর কে বললো,,

আনিকা: আই মিস ইউ সো মাচ

অঙ্কুর: আই অলসো (আনিকার কাঁধে মুখ গুজে) প্রমিস করো আর কোনদিন এভাবে ছেড়ে যাবে না!!

আনিকা: নেভার

অঙ্কুর আনিকা কে সামনে এনে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে আবার জড়িয়ে ধরলো আর আনিকা জিজ্ঞেস করলো,,

আনিকা: অঙ্কুর! ঋক কেনো এমন করছে আর কি এমন করেছিল যে বাবা আমায় তোমাদের কাছে আসতে দিলো না এভাবে লুকিয়ে রাখলো??

অঙ্কুর: ঋক কিসের জন্য এমন করছে তা আমার ও অজানা কিন্তু তুমি তো জানো ওর আর আমাদের কি সম্পর্ক,,,

আনিকা: হম ও তো তোমার কাকার ছেলে

অঙ্কুর: হমম,,,ও শুধু তোমাকে মারতে চাইনি আহিল আর আয়েশার মধ্যেও ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করেছে,,,আর তোমার যাওয়ার পর ঋক আমাদের প্রপার্টি অফিস সব কিছু নিজের নামে করে নেয় ঠকিয়ে আর আমাদেরকে পুরোপুরি নজর বন্দী করে রাখে যাতে কাওকে কিছু না জানাতে পারি,,

আনিকা: (অঙ্কুরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে) আয়েশা আর ভাইয়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করেছে মানে??

অঙ্কুর: হমমম,,,ইতিমধ্যে অনেক কিছু হয়ে গেছে,,(বেডে গিয়ে বসলো)

এরপর অঙ্কুর সব কিছু বললো আনিকা কে শুরু থেকে,,,আহিলের বিদেশ থেকে ফিরে আযেশা কে হুট করে বিয়ে করা তারপর আহিলের সব সত্যি জানা সব কিছু,,,

আনিকা: ওহ! তার মানে আমাদের মধ্যে যেই ভুল বোঝাবুঝি টা হয়েছে সেটাতেও ঋকের হাত থাকতে পারে

আনিকার কথাটা শুনে অঙ্কুর অবাক হয়ে চমকে আনিকার দিকে তাকালো আর আনিকা বললো,,,

আনিকা: হতেই পারে অঙ্কুর,,,তুমি আমাকে ভুল বোঝোনি বাট আমি তোমাকে ভুল বুঝে ছিলাম তাই আমাদের ঝগড়া ও হয় কিন্তু সেটা সামান্য,,,সব ঠিক ও হয়ে যেতো,,,ঋক ফেইল হচ্ছিল নিজের প্লানে আর তাই আমাকে মারতে চেয়েছিল মে বি,,

অঙ্কুর: বাট এতে ওর লাভ টা কি?? কেনো করছে এসব??

আনিকা: লাভ তো নিশ্চই আছে কেউ শুধু শুধু এসব করবে না,,,মে বি তোমাদের প্রপার্টির জন্য এই পুরো প্লান টা এইজ….(অঙ্কুর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে থামিয়ে দিলো)

অঙ্কুর: শশশশ!থাক না এখন এসব কথা (আনিকা কে নিজের কাছে টেনে) এতদিন পর তোমায় নিজের কাছে পেয়েছি,,প্লিজ এসব কথা নিয়ে কোনো আলোচনা নয়,,,এইসময় টা শুধু আমাদের (আনিকার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে)

আনিকা এতদিন পর অঙ্কুরের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে,,,ঠোঁট গুলোও কাঁপছে আনিকার,,,আনিকা শক্ত করে অঙ্কুরের হাত খামচে ধরলো,,,অঙ্কুর বুঝ্তে পারলো আনিকা সম্মতি দিয়েছে তাই আনিকার কপালে আলতো করে চুমু দিলো তারপর দু-গালে দুটো চুমু দিয়ে আনিকার ঠোঁটের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটের ভাঁজে নিয়ে নিলো,,,

আয়েশা আহিলের পাশে বসে আহিলের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে আর আহিল চুপচাপ শুয়ে আছে চোখ বুজে,,আয়েশা ভেবেছে আহিল ঘুমিয়ে পরেছে তাই আয়েশা আলতো করে আহিলের কপালে চুমু দিলো আর সঙ্গে সঙ্গে আহিল চোখ খুলতেই আয়েশা চমকে গেলো,,

আয়েশা: এই তুমি ঘুমাওনি??🤨

আহিল: নাহ 😁 (দাঁত কেলিয়ে) এতো সুন্দর একটা চুমু পেলাম,,,শালা আগে জানলে এতো খাটতাম নাকি,,অ্যাক্সিডেন্ট করে ব,,

আয়েশা: আহিল প্লিজ (আহিল কে থামিয়ে) এসব বাজে কথা বন্ধ করো তুমি

আহিল: আচ্ছা সরি আর বলছি না বাট চুমু টা কপালে কেনো দিলে গো 😐

আয়েশা: এই দিয়েছি ভাগ্য ভালো হুহ 😏 এছাড়া কোথায় দেবো 🤨

আহিল: এখানে (ঠোঁট টাকে উঁচু করে 😗)

আয়েশা আহিলের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে গেলো,,,ওদের দুজনের ঠোঁট প্রায় ছুঁই ছুঁই করছে তখনই আয়েশা আহিলের নাকের মধ্যে একটা আলতো করে কামড় দিয়ে উঠে দে দৌঁড়,,,

আহিল: আউচ!! আমার নাক (নাক ডলতে ডলতে) এটা কিন্তু চিটিং ☹😭

আয়েশা: বেশ করেছি (বুড়ো আঙুল আর জিভ দেখিয়ে চলে গেলো 😝)

আহিল: আজ ধরতে পারছি না বলে (অসহায় মুখ করে 🥺) আপনা টাইম আয়েগা 😒

🌹

এরপর বেশ কিছুদিন চলে গেছে,,,আয়েশা আহিল কে এ কদিন বেশ যত্ন করেছে সেবা করেছে যার জন্য আহিল প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছে কিন্তু পা টা পুরোপুরি ঠিক হয়নি হাঁটতে এখনো কষ্ট হয় সামান্য,,,আয়েশা এ কয়েকদিন আহিল কে বেশ জ্বালিয়েছে কিন্তু কাছে আসেনি ইদানিং আয়েশা একটু পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে আহিলের থেকে,,,আহিল কিছু বলতে গেলে এড়িয়ে যাচ্ছে,,,কাওর সাথে ফোনে কথা বলছে কিন্তু আহিল আসলেই ফোন রেখে দিচ্ছে আর আহিল কিছু জানতে চাইলে বলছে এমনি বান্ধবী ফোন করেছে,,,আহিলের খটকা লাগতে শুরু করেছে কিন্তু চুপ করেই আছে একবার যেই ভুল করেছে দ্বিতীয় বার সেই ভুল করবেনা…………………….
[ ফিরে আসবো আগামী পর্বে 🌹]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here