#তোমার_মাঝে_আমি 🌸❤ [I_Am_In_You]
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_২৩,২৪ ২৫ শেষ
⚘⚘ কিছুদিন পরে ⚘⚘
এখন আহিল হাঁটতে পারছে অসুবিধা হচ্ছে না তবুও ডক্টর বলেছেন একটু কম হাঁটা চলা করতে,,,আহিল শুধু এই কয়েক দিন আয়েশা কে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে,,,আয়েশা সত্যি ওকে এড়িয়ে চলছে কিন্তু কেনো…?? উত্তর টা জানা নেই আহিলের,,,
আজ আয়েশা ভর দুপুরে রেডি হচ্ছে,,,খাওয়া-দাওয়া সেরে আহিল রুমে আসতেই দেখলো আয়েশা কোথাও একটা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তাই আহিল আয়েশা কে জিজ্ঞেস করলো,,,
আহিল: আয়ু কোথাও বেড়াচ্ছ??
আয়েশা: হমম একটা বান্ধবীর বাড়ি যাচ্ছি,,
আহিল: কিন্তু এখন??
আয়েশা: হমম কেনো?? কি অসুবিধা??
আহিল: এই সময় যাচ্ছো তাই জিজ্ঞেস করছি,,,পরে গেলে হতো না??
আয়েশা: আহিল প্লিজ জেরা করা বন্ধ করো আর আমার ফ্রেন্ডের বাড়ি আমি যখন খুশি যেতে পারি ওকেই..??
আয়েশা কথাগুলো বলেই হনহন করে নিজের পার্স নিয়ে বেরিয়ে গেলো আর আহিল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো,,,কিন্তু ওদের কে যে আরো একজন দেখছে সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো,,,
আয়েশা বাস স্টপের সামনে দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎই আয়েশার সামনে একটা কালো গাড়ি এসে থামলো,,,গাড়ি টার কাঁচ গুলো কালো তাই কিছুই দেখা যাচ্ছে না,,ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটের দরজা ওপেন করতেই আয়েশা গাড়িতে উঠে বসলো আর সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করলো,,
আয়েশা: কেনো আমাকে এভাবে বিরক্ত করছিস ঋক??
ঋক: বিরক্ত?? আর আমি?? তাও আবার তোকে?? হা হা হা হা
আয়েশা: আই আম সিরিয়াস ওকেই??
ঋক: বাট আই ডোন্ট থিংক সো,,,লূক তুই যদি বিরক্ত হতিস তাহলে কি আর আমার সাথে মিট করতিস?? তুই আমার থেকে বিরক্ত নস বরং তোর বর মানে ঐ আহিলের থেকে বিরক্ত,,কি তাই তো??
আয়েশা: নিশ্চুপ
ঋক: চল আজকে তোকে একটু ঘুরাতে নিয়ে যাবো,,,
আয়েশা আর কিছু বললো না ঋক গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে গেলো,,,ঋক একটা বড়ো বাড়ির সামনে গাড়ি টা থামালো আর আয়েশা কে নামতে বললো,,,আয়েশা গাড়ি থেকে নামতেই ওর গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো কারণ জায়গাটা একদম নির্জন নিশ্চুপ,,,আয়েশার এবার ভয় লাগছে হুট করেই ঋক এসে আয়েশার কাঁধে হাত দিলো আর আয়েশা চমকে উঠলো,,
ঋক: আরেহ রিলাক্স,,,আমি তো!! ভয় পাচ্ছিস কেনো,,,চল ভিতরে চল তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে (বলেই বাঁকা হাসলো)
ঋক আয়েশা কে নিয়ে ভিতরে ঢুকতেই আয়েশা দেখলো পুরো বাড়ি টা অন্ধকার,,,এবার আয়েশা চুপ করে থাকতে পারলো না বলেই ফেললো,,,
আয়েশা: ঋক!! এটা কোথায় নিয়ে এসেছিস তুই আমায়??
আয়েশা ঋকের কোনো উত্তর না পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখল ঋক নেই আর সদর দরজা টা বন্ধ হয়ে গেলো,,,আয়েশা ভালো ভাবে লক্ষ্য করে দেখলো ঋক সদর দরজা টা ভেজিয়ে দিলো,,,
আয়েশা: র..ঋক তুই দরজা কেনো বন্ধ করছিস?? আমার কিন্তু এখানে ভালো লাগছে না আমাকে যেতে দে,,
ঋক: হা হা হা হা হা হা (বিকট শব্দ করে হাসতে থাকলো) তুই কি ভেবেছিস আমি তোকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য মিট করতে বলেছি,,,হা হা হা আরেহ এই ঋক নিজের স্বার্থ ছাড়া একটা পা ও ফেলে না
আয়েশা: ম..মানে!!
ঋক: বলছি বেবি বলছি আজকে তোকে সব বলবো,,,আফটার অল তোর শেষ দিন বলে কথা হা হা হা
আয়েশা: ক..কি বলছিস তুই এসব??
ঋক: এই যে তুই আহিলের অ্যাক্সিডেন্ট এর পর আমার সাথে লুকিয়ে চুরিয়ে কথা বলতি এটা তো আহিল জানে না তাই না!!?? এখন যদি আহিল জেনে যায় যে তুই আহিল কে মিথ্যে বলে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিস,,,তখন কি হবে..??
আয়েশা: নিশ্চুপ
ঋক: আমি তোকে কিছুদিন আগে মানে ঐ আহিলের বাড়ি ফেরার পর তোকে ফোন করে কি জানো বলেছিলাম…??
আয়েশা: আহিল অ্যাক্সিডেন্ট টা নিজের ইচ্ছায় করিয়েছে ওর লোক দিয়ে যাতে আমার বিশ্বাস অর্জন করতে পারে,,
ঋক: মিথ্যে!!
আয়েশা: মানে..!!
ঋক: মিথ্যে বলেছিলাম আমি,,,আহিল ইচ্ছে করে অ্যাক্সিডেন্ট করায়নি,,,অ্যাক্সিডেন্ট টা করিয়েছি আমি তাও আবার নিজে
আয়েশা: কিন্তু কেনো??
ঋক: কারণ আহিল আমার পথের কাঁটা তাই
আয়েশা: পথের কাঁটা মানে??
এই প্রশ্ন টা করতেই পিছন থেকে একটা কণ্ঠর স্বর শোনা গেলো আর আয়েশা পিছন ফিরে তাকাতেই দেখলো সিঁড়ি দিয়ে একটি লোক নেমে আসছেন,,,মুখটা স্পষ্ট হলো তখন যখন সে আয়েশার সামনে এসে দাঁড়ালেন,,
আমি বলছি!!
আয়েশা: ক..কা..কাকামনি!!
আয়েশার কাকা : হ্যাঁ আমি!!
আয়েশা: তুমি এসব করিয়েছ?? কিন্তু কেনো??
আয়েশার কাকা: আজ তোকে সব প্রশ্নের উত্তর দেবো,,,প্রথম থেকে শুরু করা যাক!! কি বলিস ঋক??
ঋক: অফ কোর্স ড্যাড (পাশে দাঁড়িয়ে)
আয়েশার কাকা: আমি যখন ধরা পরে যাই আমার বাবার (আয়েশার দাদু) কাছে ড্রাগস ব্যবসা নিয়ে তখন বাবা আমায় ত্যজপুত্র করে দাদা (আয়েশার বাবা) কে সব সম্পত্তির মালিক করে দেয় যা আমার রাগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়,,কিন্তু আমার দাদা আমায় এতই ভালোবাসত যে আমার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ না করে আরো বাবা কে লুকিয়ে সম্পর্ক রাখলো আর আমি ও প্লান বানিয়ে ফেললাম যে এই সুযোগ আমার সম্পত্তি নিজের করে নেওয়ার,,,ব্যাস যেই ভাবা সেই কাজ আস্তে আস্তে ঋক কে আমি তোর আর অঙ্কুরের মাঝে প্রবেশ করালাম সব ঠিকঠাক চলছিল হুট করে কোথা থেকে অঙ্কুরের বন্ধু ঐ আহিল টপকে পরলো,,,আমার প্লানে বাধা হয়ে দাড়ালো,,,আমি কিছু প্লান করবো তার আগেই জানতে পারলাম যে আহিল অঙ্কুরের বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছে এবার হয়তো অফিসেও চলে যেতে পারে তাই আমি ঋক কে সরিয়ে নিলাম তোদের মাঝখান থেকে,,,এরপর শুনলাম আহিলের দিদি আনিকা কে নাকি অঙ্কুর ভালোবাসে,,বিয়ে করতে চায়,,,ব্যস মেঘ না চাইতেই জল,,আমাকে আর কিছু করতেই হলো না ভেবে নিলাম আরেকটা প্লান,,,
আনিকা আর অঙ্কুরের মাঝে এজ্তা থার্ড পারসন নিয়ে এলম কিন্তু আয়েশা তোর এই দাদা টা একটু বেশী বউ কে বিশ্বাস করে তাই আনিকার সাথে ওর মেল ফ্রেন্ডের ক্লোসনেসের এডিট করা ইমেজে অঙ্কুরের কিছুই গেলো এলো না ও বরং গিয়ে আনিকা কে সবটা বললো আর আনিকা বলে দিলো যে ওটা মিথ্যে,,,প্লান আনসাকসেসফুল হয়ে গেলো আমাদের,,,তাই এবার আমরা একটু উল্টে দিলাম প্লান টা,,,অঙ্কুর অবিশ্বাস করেনি তো কি হয়েছে আনিকা তো অঙ্কুর কে অবিশ্বাস করতেই পারে? ব্যাস মিলে গেলো আমার কথা!! অঙ্কুরের পি.এ. যেই না অঙ্কুর কে জড়িয়ে ধরে কান্না কাটি করলো আর নিজের দুঃখের কথা অঙ্কুর কে বললো অঙ্কুর আনিকা কে মিথ্যে বলতে লাগলো আর ওর পি.এ.র প্রব্লেম সলভ করতে থাকলো,,,ও বেচারা কি আর জানতো ওর পি.এ. আমাদের হাতের পুতুল আমরা যেটা বলছি ও সেটাই করছে,,,এরপর ওদের মধ্যে ঝামেলা লাগলো আর সেই জন্য আনিকা গেলো ছাদে আমি এমনই একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম ঋক অনেক আগেই বাড়ির কাজের লোক কে দিয়ে অঙ্কুরের ঘরে পেন ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছিল যার জন্য আমি সবটা দেখতে এবং শুনতে পাচ্ছিলাম,,,
ঋক: এরপরে আমি আর ড্যাড মাস্ক পরে ছাদে গেলাম অঙ্কুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিল,,,তোর বাবা নিজের ঘরে ছিলো আর তোর মা রান্নাঘরে,,,রাস্তা পুরো পরিস্কার,,,আমরা ছাদে উঠলাম আর আনিকা দাঁড়িয়ে ছিলো ছাদের মোটা পাঁচিলের উপর,,,ওয়াহ!! কি কপাল আমদের স্বয়ং ভগবান চেয়েছিল আমরা সাকসেস হই আমাদের প্লানে তাই তো আনিকা নীচে না দাঁড়িয়ে থেকে পাঁচিলের উপর দাঁড়িয়ে ছিলো,,,আমি আর ড্যাড গেলাম কিন্তু যেতে না যেতেই আনিকা ঘুরে তাকালো বাট মুখ দেখতে পাইনি আমরা ওকে সুযোগই দিইনি পাঁচিল থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে ধাক্কা মেরে দিয়েছি কিন্তু বেটা ঐ অঙ্কুর সে সময় এসে পরলো,,,
আয়েশার কাকা: তাতে কি?? ধরতে তো পারেনি আমাদের!! আমরা দুজন ছিলাম আর ও একা,,ও নিজের বউ কে বাঁচাবে নাকি আমাদের ধরবে?? হা হা হা ব্যাস আনিকা ছাদ থেকে পরে কোমায় চলে গেলো আর আমি ঋক কে ফোন করে বলে দিলাম যাতে আনিকার কেবিনে ঢুঁকে ওর অক্সিজেন মাস্ক টা খুলে দেয় তাতে সব দোষ গিয়ে পরবে অঙ্কুরের ঘাড়ে,,,কারণ শেষ বার অঙ্কুর আনিকার কেবিনে ছিলো যা সিসি টিভি ক্যামেরা তে উঠেছিল এরপরের ঘটনা টা যখন ঘটেছে তখন তো আমি সিসি টিভি ক্যামেরা অফ করে দিয়েছিলাম হা হা হা! ঋক যা যা করেছে সবই লুকিয়ে আর মাস্ক পরে যাতে ধরা না পরে,,,
ঋক: আর এই সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ টা আহিল কে আমরা পাঠালাম আর বিশ্বাস করালাম যে অঙ্কুর ওর দিদি কে মেরেছে,,,ছাদ থেকে যখন পড়েছিল তখন ও অঙ্কুর ছিল আর কেবিনেও শেষবার অঙ্কুর ছিলো কিন্তু অবাক ব্যাপার আহিল কোনো রিয়াক্ট না করেই আমেরিকা চলে গেলো,,,এরপর আমি তোর নামে বিষিয়ে দিতে লাগলাম আহিল কে যাতে ও আর কোনদিন তোর আর তোদের পরিবারের সাথে কোনো সম্পর্ক না রাখে কিন্তু ও বেটা রাগের চোটে এসে তোকে বিয়ে করে পুরো খেলাটা বিগড়ে দিলো,,,
আয়েশার কাকা: কুল ডাউন মাই সন,,,এতে তো কোনো লাভ হয়নি আহিল কিছুই বুঝতে পারেনি আমাদের প্লানের ব্যাপারে,,,
ঋক: ইয়াহ,,,বরং আমার সাথে তোকে দেখে আমার কথা বিশ্বাস করে তোকে অবিশ্বাস করে গেছে হা হা হা! তুই ও অবিশ্বাস করতিস আহিল কে যদি না ঐ জ্যাক এসে তোকে রিয়া আর আহিলের খবর দিতো,,,তাও তো শেষ মেস তো তুই ও অবিশ্বাস করেই ফেললি আহিল কে,,,বাপ রে বাপ কি ভালোবাস যাতে কোনো বিশ্বাসই নেই
ঠাস!!
আয়েশা ঠাস! করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো ঋকের গালে আর বলতে লাগলো,,,
আয়েশা: লজ্জা করে না তোর এসব নীচ কাজের কথা নিজের মুখে গর্ব করে বলতে?? এই থাপ্পড় টা তো সেইদিন কেই তোকে মারা উচিত ছিলো যখন তুই আমায় জরিয়ে ধরে ছিলিস,,,ছিহ! কেনো করেছিস এসব বল?? কেনো??
ঋক: তোর এতো বড়ো সাহস তুই আমার গায়ে হাত তুললি?? তোকে তো আমি…(আয়েশার কাকা থামিয়ে দিলো)
আয়েশার কাকা: সম্পত্তির জন্য করেছি বললামই তো,,,আমার ভাগ আমার থেকে কেড়ে নিতে পারেনি বরং নিজের ভাগ টাও আমায় দিয়ে দিয়েছে তোর বাবা,,,আনিকার মৃত্যুর পির আহিল চলে গেলো বিদেশে আর আমি নিজের গার্ডদের পাঠিয়ে দিলাম তোদের বাড়িতে তুই তো গেছিলি কলেজে তাই কিচ্ছু জানতে পারিসনি,,,তোর বাবা কে ভয় দেখালাম যদি প্রপার্টি আমার ছেলের নামে করে না দেয় তাহলে তোকে জানে মেরে দেবো,,এই শুনতেই তোর বাবা আর দাদা রাজি হয়ে গেলো আর প্রপার্টির পেপার এ সাইন করে দিলো কিন্তু তুই টের পেলি না,,,কি করে পাবি তোর ফিরে আসার আগেই তো আমরা গায়েব,,,তোর যখন বিয়ে হয়ে গেলো তখন সব সময় তোদের বাড়িতে আমাদের গার্ড থাকতো পাহারা দিতো জানো তোকে বা আহিল কে কিছু জানাতে না পারে,,,
আয়েশা: তোমাকে তো আমার কাকামনি বলতেও ঘৃণা করছে,,,কি করে এতটা নীচে নামতে পারলে তুমি?? একবার ও বিবেকে বাঁধল না?? যে দাদা তোমায় এতো ভালবাসলো ত্যজপুত্র করে দেওয়ার পরেও তোমার সাথে সম্পর্ক রাখলো তারই ফায়দা নিলে তুমি?? সম্পত্তি তো পেয়ে গেছো তাহলে এখন কি চাই কেনো আহিল কে মারতে চেয়েছিলে আর আমাকেই বা কেনো নিয়ে এসেছো এখানে??
আয়েশার কাকা: আরেহ সম্পত্তি পেয়ে গেলে তো হয়েই যেতো,,,কিন্তু পুরোপুরি আর পেলাম কই,,,তোর বাবা সম্পত্তি সব তোর আর তোর দাদার নামে করে রেখেছিল আর কিছুটা রেখেছিল ঋকের নামে হাহ! যা না রাখলেও চলতো যাই হোক এখন তো সব আমার ছেলের হবে,,,আর তাতে তোর সাইন লাগবে চটপট করে ফেল তো! আমি ভেবেছিলাম আহিল মরলে বেশী সুবিধা হবে তাই ওকে মারতে বলেছিলাম বাট এখন দেখলাম না মরাতে ও কোনো যায় আসেনি,,,সাইন টা কর জলদি
আয়েশা: কক্ষনো না আমি কক্ষনো সাইন করবো না,,
এই বলেই আয়েশা পিছন ফিরে যেতে নিলো আর ঋক আয়েশার হাত ধরে টেনে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো
ঋক: তুই সাইন করবি না তোর ঘাড় করবে,,আমাকে চড় মারা তাই নাহ!
বলেই আয়েশা কে চড় মারার জন্য হাত তুললো আর আয়েশা মুখ ঘুরিয়ে নিলো………………..
[ ফিরে আসবো আগামী পর্বে 🌷]
#তোমার_মাঝে_আমি 🌸❤ [I_Am_In_You]
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_২৪
আয়েশা: কক্ষনো না আমি কক্ষনো সাইন করবো না,,
এই বলেই আয়েশা পিছন ফিরে যেতে নিলো আর ঋক আয়েশার হাত ধরে টেনে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো
ঋক: তুই সাইন করবি না তোর ঘাড় করবে,,আমাকে চড় মারা তাই নাহ!
বলেই আয়েশা কে চড় মারার জন্য হাত তুললো আর আয়েশা মুখ ঘুরিয়ে নিলো…কিন্তু ঋক চড় টা মারতে পারলো না আয়েশা কে তার আগেই ঋকের হাত কেউ একজন ধরে নিলো,,,
আয়েশা মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে রাখায় দেখতে পায়নি কে ঋকের হাত ধরেছে কিন্তু হুট করেই কেউ আয়েশা কে হেঁচকা টান মেরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় আর আয়েশা আস্তে করে বলে ওঠে,,
আয়েশা: আহিল!
আহিল বাম হাতে আয়েশার কোমর জড়িয়ে ধরে আছে আর ডান হাতে ঋকের হাত ধরে রয়েছে,,,ঋক তো পুরো ঘাবড়ে গেছে আহিল কে দেখে,,,আহিল আয়েশা কে ছেড়ে ঋকের হাতটা পুরো মুচড়ে ধরে লাথি মেরে ফেলে দিলো মাটিতে,,,আয়েশার কাকা কিছু বলতে যাবে আহিল কে তার আগেই আহিল পকেটে হাত দিয়ে ঠোঁটে বাঁকা হাসি হেসে বললো,,,
আহিল: আ আ এখন আপনি কিছু বলবেন না কাকা বাবু শুধু দেখবেন আর শুনবেন,,
আহিল এটা বলতেই পিছন থেকে শব্দ এলো ঋক আস্তে করে উঠে পিছনে তাকালো আর ওর বাবা ও তাকালো দেখলো ওদের যে ভাড়া করা গুন্ডা গুলো আছে তাদের একেক টা ছিটকে পরছে মাটিতে আর ওদের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো অঙ্কুর হাতে হকি স্টিক নিয়ে,,,অঙ্কুর বেরিয়ে আসতেই জ্যাক একটা গুন্ডা কে মারলো আর ভিতরে এলো,,,ভিতরে এসে দুজন হকি স্টিক এক হাতে নিয়ে আরেক হাতের তালুতে মারতে লাগলো আর মৃদু হাসতে লাগলো এই দেখে আহিল বললো,,,
আহিল: কি কাকা বাবু কেমন লাগছে?? ভালো তো!!
ঋক: ত..তুই এখানে এলি কি করে??
আহিল: কেনো?? তুই তো নিয়ে এলি আমায়
ঋক: আমি কেনো নিয়ে আসবো তোকে আমি তো শুধু আয়েশা কে নিয়ে এসেছি,,
আহিল: হ্যাঁ তো আয়েশার সাথে আয়েশার ফোন ছিল আমি লোকেশন ট্রাক করে চলে এলাম আবার কি??
ঋক: শিট!!
আহিল: আরেহ ভাই দুঃখ পাস না বড়ো বড়ো কাজে এমন ছোট ছোট ভুল হয়েই থাকে,,কিহ তাই তো কাকা বাবু?? হা হা হা (আহিল এর সাথে অঙ্কুর আর জ্যাক ও হাসলো)
আয়েশার কাকা: তুমি হাঁটছো কি করে?? তোমার তো পা ঠিক হয়নি এখনো,,
আহিল: ওকে ওকে নাও বি সিরিয়াস গাইস,,এবার আসল কথায় আসি (চোয়াল শক্ত করে) এতদিন আপনারা গেম খেলেছেন (আয়েশার কাকা আর ঋকের কাছে গিয়ে) নাও মাই টার্ন
আয়েশার কাকা: মানে??
আহিল গিয়ে একটা সোফায় বসলো পায়ের উপর পা তুলে আর বললো
আহিল: অঙ্কুর! শুরু করি তাহলে??
অঙ্কুর: একদম! শুভ কাজে দেরী করতে নেই,,
আহিল: এতক্ষণ তো আপনার আর ঋকের কথা শুনলাম এবার আপনারা আমার কথা শুনুন,,
আয়েশার কাকা আর ঋক অবাক হয়ে গেলো আহিলের কথা শুনে কারণ ওরা তো আয়েশা কে সব বলেছে তাহলে আহিল কি শোনার কথা বলছে?? আহিল বলার আগে ঋক বলে উঠলো,,
ঋক: এসব করে কি প্রমাণ করতে চাইছিস তুই খুব ভালো?? আয়েশার কাছে ভালো সাজতে চাইছিস?? আয়েশা অনেক আগেই জানে যে তুই বিশ্বাসঘাতক,,,
আহিল: কথাগুলো যে ভুল বলে ফেললি,,,হ্যাঁ বাট এটা ঠিক বলেছিস যে আয়েশা জানে কেউ একজন বিশ্বাসঘাতক কিন্তু সেটা আমি না সেটা তুই,,,
ঋক: মানে??
আহিল: এখনো বুঝলি না?? তাহলে শোন,,,এই যে তুই আমার অ্যাক্সিডেন্ট এর কিছুদিন পর রোজ আয়েশা কে ফোন করে আমার নামে উল্টো পাল্টা বলতিস তার একটাও আয়েশা বিশ্বাস করেনি উল্টো সবটা এসে আমায় বলেছে,,,কেনো জানিস?? কারণ আয়েশা সেইদিন কেই তোকে দেখে ফেলেছে যখন তুই আমায় গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মেরেছিস,,,ফল্ট তোর কজ তুই মলে আয়েশা কে তোর গাড়ি দেখিয়েছিলিস আর সেইদিন আমাকে ধাক্কা মারার আগে আয়েশা তোকে দেখে ফেলে,,,
ঋক: সেটা কি করে সম্ভব আমি নিজের চোখে দেখেছি যে তোর আর আয়েশার মধ্যে কিছু ঠিক ছিলো না,,,আয়েশা তোকে এড়িয়ে চলছিল,,,
আহিল: আমি দেখিয়েছি তাই দেখেছিস দেট সেট,,
ঋক: মানে? কি বলতে চাইছিস তুই??
আহিল: তুই যখন অঙ্কুরের অ্যাক্সিডেন্ট করাস সেসময় অঙ্কুর নার্সিংহোমে ছিলো আর আমাকে ওর বাড়িতে আসতে বলে একটা কাগজের মাধম্যে,,,আমি ওদের বাড়িতে এসে দেখি সব গুন্ডা টাইপের লোক মেঝেতে পরে রয়েছে কারণ তাদের অঙ্কুরের মা ঘুমের ওষুধ দিয়ে দিয়েছিল চায়ে আর সেই ফাঁকেই আমি তোর সব কীর্তিকলাপ জানতে পারি আর ভেবেনি কি করে তোকে ধরব,,,রিয়া যে তোর সাথে যুক্ত সেটা আমি সেদিনই বুঝেছিলাম তারপর প্রমান ও পেলাম,,,কিন্তু জানতে পারলাম যে রিয়া কে তুই জাস্ট ইউস করিস [ আগের পর্ব গুলো পরে নেবেন ওখানে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা রয়েছে,,যেইদিন আয়েশা আর আহিল সবটা জেনেছিল সেই দুটো পার্ট পরে নেবেন ] তোর গার্ড গুলো অঙ্কুরের বাড়িতে ছিল তাই তাদের মধ্যে যে হেড তাকে ধরলাম আর জানতে পারলাম ও একজন কে খবর দেয় এখান কার আর সে তোকে সব ডিটেইলসে জানায়,,,পৌঁছে গেলাম তার কাছে আর সেদিনই কিনে নিলাম তাকে আমি জানতাম একদিন না একদিন ওর প্রয়োজন হবে আমার আর ঠিক তাই হলো,,
ঋক: মানে ঐ ভিডিও গুলো সব মিথ্যে??
আহিল: নাহ!! নাটক,,,ওগুলো সব নাটক,,,তুই ফোন করার পর আমি আর আয়েশা নাটক করতাম,,,আমি আয়েশার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতাম আর ও আমায় এড়িয়ে চলতো,,,আর এগুলো ভিডিও করে তোর লোক তোকে পাঠাত,,আর আমার পা যে ঠিক হয়ে গেছে এটা তোকে ভিডিও পাঠাতে ভুলে গেছি তাই জানতে পারিসনি আর কি 😅😅
ঋক দাঁত করমড় করে আয়েশার দিকে তাকাতেই আয়েশা বাঁকা হাসলো আর আহিলের দিকে তাকালো সেই দেখে আহিল বললো,,,
আহিল: এই যে তুই স্ক্রিনের পিছনে বসে সব কাজ করতিস না! এটাই তোর কাল হলো আজ যদি তুই নিজে খবর নিতিস লোক না লাগিয়ে তাহলে হয়তো এইদিন টা তোকে দেখতে হতো না,,,আরে কাকা বাবু!(আয়েশার কাকা কে উদ্দেশ্য করে) আপনি চুপ করে আছেন যে?? আহা হা হা এতক্ষণ কথা বললেন আমার দি কে কি সুন্দর প্লান করে মারলেন সেই গল্প বললেন,,,ঋক কে কাজে লাগিয়ে আমাকে আর আয়েশা কে আলাদা করার গল্প বললেন তাহলে এখন চুপ কেনো??
আয়েশার কাকা: তুমি সব শুনলে কি করে??
আহিল : ওহ হো! দেখেছেন আমি তো এটা বলতেই ভুলে গেছিলাম,,,ভালো হয়েছে মনে করিয়ে,,,আসলে আমি বাইরে গাড়িতে বসে ছিলাম যখন ঋক আয়েশা কে নিয়ে ভিতরে ঢুকল শুধু আমি না জ্যাক আর অঙ্কুর ও ছিলো আমার সাথে,,,আয়েশা ভিতরে আসতেই ঋক দরজা দিতে যায় আর সেই ফাঁকেই আয়েশা আমাকে ফোন করে আর আমি ফোন টা রিসিভ করে আমার কল রেকর্ডার টা ওন করেদি,,,যাতে পরে আপনাদের মিষ্টি মিষ্টি কথা গুলো শুনতে পাই,,,
এইবার আয়েশার কাকা আর ঋক বুঝতে পারলো যে আহিল কি করে সব জানতে পারলো,,,ঋক ভাবছে কেনো ও আয়েশার থেকে ফোন টা কেড়ে নিলো না তাহলে হয়তো ধরা পড়ত না আজকে,,,
আহিল: ভাই আমি জানি তুই কি ভাবছিস,,ভেবে লাভ নেই আয়েশার ফোন কেড়ে নিলেও ওর কাছে ক্যামেরা আছে সেটাতে আমি জেনে যেতাম সব,,,অ্যাকচুয়লী কি বলতো তোরা আমায় একবার বোকা বানাতে পেরেছিস তা বলে যে বারবার পারবি এটা ভেবে বড়ো ভুল করে ফেলেছিস,,,আচ্ছা ওয়েট তোদের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে,,,হেই কাম ইন!!(দরজার দিকে তাকিয়ে)
অঙ্কুর আর জ্যাক সরে গেলো আর ওদের পিছন থেকে বেরিয়ে এলো আনিকা আর আনিকার পিছন পিছন আহিলের মা আয়েশার বাবা-মা আর আরোহী,,,আনিকা কে দেখে ঋক আর ওর বাবা তো পুরো থ হয়ে গেছে,,
আয়েশার কাকা: আ..আনিকা! এটা কি করে সম্ভব?
ঋক: আমারা তো ওকে মেরে ফেলেছিলাম!!
আহিল: ঠিক যতটা প্লান করে আমার দি কে মারার চেষ্টা করেছেন আপনারা,,,আমার শ্বশুরমশাই আর মা ঠিক ততটা প্লান করেই আমার দি কে বাঁচিয়েছে,,,কি শ্বশুর মশাই বলুন আপনার ভাই কে যে আপনি ও আপনার ভাইয়ের থেকে কম যান না (আয়েশার বাবা কে উদ্দেশ্য করে)
আয়েশার বাবা একটু হেসে বলা শুরু করলো কি করে আনিকা কে বাঁচিয়েছেন আর কি করে ওকে সেভ রেখেছে,,,
আয়েশার কাকা: ওহ তার মানে আমরা জেনে যাবো বলে অঙ্কুর আয়েশা আর বৌদি (আয়েশার মা) কে কিছু জানাওনি
আয়েশা বাবা: হ্যাঁ আনিকার মৃত্যু হয়েছে জানার পরের দিনেই ঋক আমাদের বাড়িতে ব্ল্যাকমেল করতে চলে এলো আর ওরম গার্ড দের কথা জানালো তাই আমি খুব সাবধানে আয়েশা যখন ফিরলো তখন আহিলের মা কে একটা কল করে জানিয়েদি যাতে আনিকা কে আমাদের বাড়িতে আসতে না দেয় আর আহিল কে কিছু না জানায় কারণ এতে আয়েশার ক্ষতি হতে পারে,,,আযেশা জানতো পর্যন্ত না ওর আশে পাশেই সব সময় ওর শত্রুরা ঘোরা ফেরা করছে আমাদের প্রত্যেক টা পদক্ষেপে নজর রাখছে,,,তাই আমি আর জানানোর সময় পেলাম না অঙ্কুর আয়েশা আর ওদের মা কে,,,
আহিল: তোহ সব ক্লিয়ার তো?? সবাই সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন নিশ্চই?? আমি আপনাদের প্লানে সাকসেসফুল হতে দিয়েছি তাই আপনারা আজ এখানে নাহলে পারতেন না,,এতদিন আপনারা গেম খেলছিলেন ভেবেছিলেন আপনারা ছাড়া আর কেউ গেম খেলতে পারে না তাই আপনাদের ভুল টা ভাঙালাম,,,দেখিয়ে দিলাম যে কে কি পারে আর কে কি পারে না,,
জ্যাক: এবার মামাবাড়ি যাওয়ার পালা
অঙ্কুর: একদম! ইন্সপেকটর আপনারা আসুন,,
অঙ্কুরের ডাক পরতেই ইন্সপেকটর ভিতরে চলে এলো,,,আয়েশার বাবা আর ঋক কিছু বলতে পারলো না কারণ আয়েশাদের কাছে সব রকম প্রমান আছে,,,ওদের হাতে বাঁচার আর কোনো উপায় নেই,,,
ঋক কে নিয়ে যাচ্ছিল সেই সময় আহিল শুধু বললো,,,
আহিল: হাতটা শুধু মুচড়েছি ভাঙিনি আজ শরীর ভালো থাকলে প্রাণে বাঁচতে পারতি না,,
আহিল গিয়ে আয়েশার পাশে দাঁড়ালো আর ওর কাঁধে রেখে মুচকি হাসলো এদিকে জ্যাক আর অঙ্কুর ও হাত থেকে হকি স্টিক টা ফেলে দিলো,,,অঙ্কুর আনিকার কাঁধে হাত রাখলো আর জ্যাক আরোহী কে চোখ মারলো,,,এরপর ওরা সবাই বেরিয়ে গেলো………………………….,
[ ফিরে আসবো আগামী পর্বে 🌹]
#তোমার_মাঝে_আমি 🌸❤ [I_Am_In_You]
#লেখিকা_আয়েশা (কোয়েল)
#পর্ব_২৫
#সমাপ্তি_পর্ব
একদিন পর 🌹
সেইদিন ঋক আর ঋকের বাবা কে অ্যারেস্ট করে পুলিশ আর রিয়ার ও শাস্তি হয়,,,আহিল চাইলে ঋক কে নিজের হাতে শাস্তি দিতে পারতো কিন্তু নিজের হাতে আইন নেয়নি কারণ এটা হয়তো ওকে আয়েশার থেকে দুরে সরিয়ে দিতো যা আহিল কোনো মতেই মেনে নিতে পারবে না,,,আহিল বুদ্ধি করে সবটা সামলেছে ফিরিয়ে দিয়েছে অঙ্কুর কে তার অফিস আয়েশার বাবা কে তার বাড়ি,,,অঙ্কুর আর আনিকার সম্পর্ক টাও ঠিক হয়ে গেছে কোনো বিবাদ ভুল বোঝাবুঝি নেই আছে শুধুই ভালোবাসা আর বন্ডিং কিন্তু আহিল আর আয়েশা?? তাদের মধ্যে কি সব ঠিক হয়েছে?? আদৌ কি হবে??
🌸❤
আহিল নিজের ঘরে বসে ম্যাগাজিন পড়ছে,,,চোখ টা ম্যাগাজিনে থাকলেও মনটা আয়েশার কাছে পরে রয়েছে,,,আয়েশার সাথে আহিল যেটা করেছে তার জন্য আহিল এখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারেনি আহিল জানে আয়েশা ওকে ক্ষমা করে দিয়েছে কিন্তু আহিলের মনে একটু হলেও খচখচ করে যে কি করে ও আয়েশা কে ভুল বুঝলো,,,একটা রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে আহিলের এটা আর এই রোগের ওষুধ একমাত্র আয়েশার কাছে আছে,,,আয়েশার সাথে একটু সময় কাটালেই হয়তো সবটা ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু আয়েশার সেই সময় কই সে তো বাড়ি ফেরার পর আনিকা আরোহী এদের সাথে গল্পে মেতে রয়েছে,,,আনিকার সাথে ভিডিও কলে আর আরোহী তো বাড়িতেই থাকে,,,সেদিনই আহিল আয়েশা কে নিয়ে নিজের বাড়ি চলে এসেছে,,,
আহিল এসব ভাবতে ভাবতে ম্যাগাজিন টা রেখে ব্যালকনি তে চলে গেলো আর একটা সিগারেট ধরালো,,,কিছুক্ষণ সিগারেটের দিকে তাকিয়ে থেকে যেই না টান দিতে যাবে ওমনি কোথা থেকে আয়েশা এসে ওর হাত থেকে সিগারেট টা ফেলে দিলো,,,আহিল আয়েশার দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো আর রেলিংয়ে হাত দিয়ে ভর করে দাঁড়িয়ে বললো,,,
আহিল: এখন আসার সময় হলো?? না এলেই পারতে সারাদিন যখন আরু আর দির সাথে কথা বলে কাটাও তখন এইসময় টা বাদ দিলে কেনো,,,আরুর ঘরেই ঘুমাতে তোমার যে একটা ঘর আছে সেটা তো তুমি ভুলেই গেছো আর সেখানে যে একটা মানুষ থাকে তার তো কোনো মূল্য নেই তাই….
আয়েশা: চুপ!! (আহিলের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে) একটু শ্বাস নাও জল খাও তারপর বলো,,,রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেনের মতো বলেই চলেছ,,,
আহিল জানো আরো বেশী রেগে গেলো আয়েশার কথায় আর আয়েশা তো বেশ মজা পাচ্ছে কারণ আহিলের কথায় বুঝতে পেরেছে যে আহিলের অভিমান হয়েছে,,
আহিল: দরকার নেই জল খাওয়ার নাই দরকার আছে শ্বাস নেওয়ার,,,শ্বাস টা সারাজীবনের মতো বন্ধ হয়ে গেলেই ভালো,,,
আয়েশা: আহিল!! কি সব বাজে কথা বলছো বলো তো??
আহিল: নিশ্চুপ (পিঠ দিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো রেলিংয়ে)
আয়েশা আস্তে করে আহিলের কাঁধে হাত রাখলো আর এক হাত দিয়ে আহিলের গালে হাত রেখে বলল,,,
আয়েশা: আহিল যা হয়েছে ভুলে যাও আমি চাই না ওসব কথা মনে রাখতে,,,আমি তো অনেক আগেই তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি তাহলে কেনো তুমি এখনো ঐসব পুরোনো কথা মনে করে বসে আছো?? (আহিলের কাঁধে মাথা রেখে)
আহিল: কি করে ভুলবো আয়ু! বিয়ের রাতে আমি তোমার সাথে যেটা করেছি সেটা তো ক্ষমার যোগ্য নয় আর তারপর আমি তোমার গায়ে হাত তুলেছি এসব ভাবলেই তো ম…
আয়েশা: চুপ করতে বললাম তো!! হমম মানছি ভুল করেছ সেটা তো শুধরে নেওয়াও যায়,,
আহিল: কি করে!?(আয়েশা কে এক হাতে জড়িয়ে)
আয়েশা আহিলের বুকে মুখ গুঁজে রইলো এতে অবশ্য আহিল উত্তর পেয়ে গেছে তবুও সেটা আয়েশার মুখে শুনতে চায় তাই বললো,,,
আহিল: কি হলো বলো??(মুচকি হেসে)
আয়েশা: উমম তুমি জানো (আহিলের বুকে কিল মেরে)
আহিল: আরেহ! আমি জানলে তোমায় জিজ্ঞেস করতাম?? আমি সত্যি জানি না,,
আয়েশা: বিয়ের দিন রাতে তুমি আমাকে কাছে টেনে নিয়েছিলে ঠিকই কিন্তু তাতে কোনো ভালোবাসা ছিলো না,,শুধু অভিমান ছিল,,আমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নেওয়া যায় না আহিল?? সব কিছু নতুন করে শুরু করা যায় না যেখানে শুধু ভালোবাসা থাকবে অন্য কোনো কিছু নয়,,,
আহিল আয়েশা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আর বললো,,,
আহিল: আই উইল প্রমিস ইউ আমাদের মাঝে আর কোনদিন কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না,,,শুধু ভালোবাসা থাকবে,,,#তোমার_মাঝে_আমি থাকবো আর #আমার_মাঝে_তুমি
আয়েশা ও আহিল কে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে আর আহিলের চোখ গেলো ওদের দরজার বাইরে আর আহিল আয়েশা কে ছেড়ে ওর দিকে তাকাতেই আয়েশা আহিল কে কানে কানে কিছু একটা বললো আর আহিল আয়েশার দিকে একটু রেগে তাকিয়ে বললো
আহিল: ওয়াট!!
আয়েশা একটু ঘাবড়ে গেলো আহিলের এমন রিয়াক্ট করায়,,আহিল বললো,,
আহিল: জ্যাক! চোরের মতো বাইরে থেকে উঁকি ঝুঁকি না মেরে রূমে আয় (রেগে)
জ্যাকের মাথায় তো আকাশ ভেঙে পরলো ও ভেবেছিল নিজেকে ফুল প্রিপিয়ার করে আহিলের সামনে যাবে আরোহীর আর ওর ব্যাপারে কথা বলতে আর তার আগে আয়েশা কে দিয়ে বলে পাঠিয়েছে যাতে আয়েশা আহিল কে ম্যানেজ করে রাখে,,কিন্তু এখন তো আহিলের গলা শুনে মনে হচ্ছে আশায় জল পরে গেছে,,,
আহিল: ভিতরে আসতে বলেছি আমি তোকে!!(জোরে)
জ্যাক ভিতরে ঢুকে আসতেই আয়েশা বললো,,,
আয়েশা: আহিল আমার কথাটা শো…
আহিল: চুপ! আমি তোমার কাছ থেকে কিছু শুনতে চাই না,,,জ্যাক কতদিন থেকে চলছে এসব??(জ্যাক কে উদ্দেশ্য করে)
জ্যাক চোখ বন্ধ করে একটা নিশ্বাস নিয়ে আহিলের চোখে চোখ রেখে বলতে শুরু করলো,,,
জ্যাক: আহিল তুই প্রথম যেদিন আরোহীর ছবি দেখিয়েছিলি আমাকে আমেরিকা তে তখনই আমার আরোহী কে ভালো লাগে আর তারপর রোজ তোর ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে ওর আইডি তে গিয়ে ওর আইডি স্টক করি,,,আস্তে ফীল করি আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি আর তখনই ও আমাকে নিজে ফোন করে আসতে বলে এখানে,,,আর এখানে এসে ওকে আমি নিজের মনের কথা জানাই যখন অঙ্কুরের অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল,,,সি অলসো লাভ মি,,,উই লাভ ঈচ অদর (এক টানে বলে গেলো)
আহিল: ওহ!
জ্যাক আহিলের শুধু ওহ! শুনে আহিলের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো আর বললো,,
জ্যাক: আই রিয়েলি রিয়েলি লাভ হার,,,আ..
আহিল: সেটা আগে আয়েশা জানলো তারপর আমি?? (জ্যাক কে থামিয়ে) এখন তোর কাছে আমার থেকে আগে আয়েশা হয়ে গেলো?? আমি তোর বন্ধু আর আমিই আগে জানতে পারলাম না ওয়াও ব্রিলিয়ান্ট!! তোর কি মনে হয় আমি জানলে তোকে আরুর থেকে দুরে সরিয়ে দিতাম?? এতটা খারাপ ও মনে হয় আমি না!!(অভিমান কণ্ঠে)
জ্যাক: ব্রোহ! আ’ম সরি (আহিলের কাঁধে হাত রেখে) আমি ভেবেছিলাম তোকে বলবো বাট সময় পাইনি য়ার,,,
আহিল: হাহ! তোর সাথে আমি আরুর বিয়ে দেবো না 😒
জ্যাক: ক..কেনো (কাঁদো কাঁদো মুখে)
আহিল: আমি তো কুলুর বলদ,,,যা গিয়ে কোনো চালাক পণ্ডিতের বোন কে বিয়ে কর (ভাব নিয়ে)
আয়েশা তো হেসেই দিলো আহিলের কথা শুনে এদিকে জ্যাক বেচারা নিজের কথায় নিজে ফেসে গেছে,,,জ্যাক বললো,,
জ্যাক: না ভাই,,,তুই তো আমার ভাই তুই কি করে কুলুর বলদ হবি তুই তো আমার থেকে অনেক চালাক আমি শোয়া সের হলে তুই পাতি শের,,,হিহিহি
আহিল: কি বললি?? 😡😒
জ্যাক রে আর কে দেখে ও দিছে দৌঁড় আর আহিল ও গেছে ওর পিছন পিছন এদিকে আয়েশা তো হেসে হেসে মরে যাচ্ছে,,
❤❤ পরেরদিন ❤❤
জ্যাক আর আরোহীর কথা সবাই কে জানিয়ে দিয়েছে আহিল,,,সবাই রাজি ওদের সম্পর্কে কিন্তু ওদের বিয়ের আগে বিয়ে হবে আহিল আর আয়েশার,,আহিল আয়েশা কে যেভাবে বিয়ে করেছে তাতে কেউ ছিল না জাস্ট আ রেজিস্ট্রি ম্যারেজ ছিলো তাই আহিলের পরিবার আর আয়েশার পরিবার দুজনের মতে ওদের ধর্ম মতে বিয়ে হবে,,,
❤
বেশ জাঁক জমক করে আহিল আর আয়েশার বিয়েটা হয়ে গেলো,,,আয়েশা নিজের ফুলশয্যা ঘরে বসে রয়েছে বউ সেজে,,,আজ আয়েশার মনে কোনো ভয় নেই কোনো সংকোচ নেই,,,কিন্তু আয়েশা ভাবছে আহিল এখনো আসছে না কেনো?? এতো রাত হয়ে গেলো আহিল কোথায়?? এটা ভাবতেই আয়েশার মনে হলো রূমে কেউ এসেছে আর হুট করে আয়েশার ঘরে যা আলো জ্বলছিল তা নিভে গেলো,,,আয়েশা একটু ভয় পেয়ে গেলো ও আস্তে করে ডাকলো,,
আয়েশা: আ..আহিল!!
এটা বলতেই কেউ আয়েশার চোখ টা বেঁধে দিলো একটা কালো কাপড় দিয়ে কিন্তু বাঁধার সময় আয়েশা আহিলের স্পর্শ পায় যার জন্য আয়েশা চোখ বেঁধে দেওয়ার পর বলে,,
আয়েশা: আহিল কি করছো??
আহিল: শশশশ!!
কিছুক্ষণ পরেই আয়েশার নাকে একটা মিষ্টি সুভাষ ভেসে এলো আর সে সময় আহিল আয়েশার চোখ টা খুলে দিলো আর আয়েশা তাকাতেই দেখলো,,,পুরো ঘর সুগন্ধি মোমবাতির আলোতে ভরে উঠেছে,,,আয়েশা ঘরে এসেই দেখেছিল অনেক মোমবাতি রাখা কিন্তু কেনো রাখা সেটা এখন বুঝলো,,
আহিল: আমার সাথে আসো
আহিল আয়েশার হাত ধরে একটা দরজার কাছে নিয়ে গেলো যেটা আহিলের ঘরের মধ্যেই,,,আহিল ঘরে ঢুঁকে লাইট জ্বালিয়ে দিতেই আয়েশা দেখলো পুরো ঘরে শুধু ছোট ছোট আয়েশার ছবি আর সেসবের মাঝে বড়ো করে আয়েশা আর আহিলের বিয়ের ছবি টানানো,,,আয়েশা সেই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর আহিল আয়েশা কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বললো,,,
আহিল: পছন্দ হয়েছে আয়ু!!
আয়েশা: ভীষণ!!
আহিল আয়েশা কে সামনে ফিরিয়ে আয়েশার দু-গালে হাত রেখে কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে বললো,,,
আহিল: এখনকার সময় টা শুধু আমাদের,,,আই ক্যান্ট কন্ট্রোল (আয়েশার কানে কানে)
আয়েশা লজ্জা পেয়ে মুখ লুকালো আহিলের বুকে আর আহিল জড়িয়ে ধরলো আয়েশা কে তারপর কোলে তুলে নিলো আয়েশা কে আর পা বাঁড়ালো ঘরের দিকে,,,আজ থেকে শুরু হবে আহিল আর আয়েশার নতুন জীবন যেখানে থাকবে না কোনো সংশয় কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকবে শুধুই ভালোবাসা ❤❤
~~~~~~ 🌸❤
সমাপ্তি
আপনার লেখা গল্পের অপেক্ষায় থাকি। গল্পটা সুন্দর, এর আগে ‘একদিন তুমি ও ভালবাসবে’ গল্পটা পড়েছি, তখন থেকেই আপনার লেখা ভাল লেগেছে। আশা করি আপনার লেখা আরও গল্প পড়তে পারব।
Thank you 😍