তুমিময়_প্রাপ্তি🍁 #পর্ব_৩ #মেহরিন_রিম

0
511

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৩
#মেহরিন_রিম
_প্রেম জেগেছে আমার মনে বলছি আমি তাই, তোমায় আমি ভালোবাসি তোমায় আমি চাইইই…
আয়নার সামনে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে প্রপোজ করার প্রাকটিস করছে ইশা। এবার লজ্জা পাওয়া বাদ দিয়ে ইমোশনাল লুক নিয়ে আয়নার সামনে হাটু গেড়ে বসে ড্রেসিং টেবিলে থাকা লোসন এর বোতলটা সামনে ধরে বলল,
_এই হৃদয়ে কলম দিয়ে লিখেছি এক চিঠি,
সেই চিঠিটি বলছে আজ,আমি তোমায় ভালোবাসি।..

এবার উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা ভাব নিয়ে বলল,
_আমি তোমাকে আমার জীবনে প্রবেশ করার প্রস্তাব দিচ্ছি। তুমি কি তা সাদরে গ্রহণ করবে?

না এটাও পছন্দ হলো না ইশার। মুখ ফুলিয়ে খাটে বসে একা একাই বলল,
_ধুর,একটাও ভালো হচ্ছে না। এভাবে প্রপোজ করলে তো তোর প্রেম শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে ইশা। কিন্তু আমি করবো টা কি!

কিছুক্ষন ভেবে উৎসাহিত হয়ে তুড়ি বাজিয়ে বলল,
_আইডিয়া, চিঠি লিখলেই তো হয়। তাহলে আমার মুখেও বলতে হবে না,আবার প্রপোজ ও করা হয়ে যাবে। বাহ বাহ, কি বুদ্ধি আমার। আই এম প্রাউড অফ মি ইশা..

কথাটা বলেই টেবিল থেকে নিজের সবচেয়ে পছন্দের ডায়েরী টা নিয়ে এলো ইশা। তারপর গুগল থেকে সার্চ করে একটা লাইন লিখতেই তার খুশি গায়েব হয়ে যায়। পৃষ্ঠা টা উঁচু করে চোখের সামনে ধরে বলে,
_আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম,আমার যে এত সুন্দর হাতের লেখা। এই বিশ্বসেরা হাতের লেখা দেখে তো নিরব ভাইয়া কিছু না পড়েই রিজেক্ট করে দেবে। না না, চিঠির আইডিয়া বাদ।

শেষপর্যন্ত নিজের একটাও প্ল্যান পছন্দ না হওয়ায় বিছানার উপর মনমরা হয়ে বসে পড়ে ইশা। নিরব তার থেকে প্রায় ৩ বছরের বড়,এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার এ পড়ে সে। একই কলেজে পড়ে তাড়া, সিনিয়র এর সাথে এমনিতে বেশ সখ্যতা রয়েছে ইশার। একই কলেজে পড়ায় ইশা অনেক আগে থেকেই চেনে নিরব কে। আর সেই থেকেই নিজের মনে নিরবকে নিয়ে এক অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে তার। যদিও ফাইজা বলে এগুলো মোহ,কদিন পড়েই কেটে যাবে। তবে ইশা তা মানতে নারায,তার মতে এটা একদম সত্যিকারের ভালোবাসা। ইশার ভাষায় “টুরু লাভ”।

ইশা ভীষণ মিশুক হওয়ায় সকলের মতো নিরবও তার সাথে বেশ ভালো ব্যবহার করে,তবে তার মাঝে বাড়তি কিছুই নেই। এতদিন কিছু না বললেও এখন ইশা উতলা হয়ে উঠেছে নিরব কে প্রপোজ করার জন্য, কিন্তু কিভাবে বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না। সিরিয়াস মোমেন্ট এ হেসে ফেলার স্বভাব তার আগে থেকেই আছে, যদি প্রপোজ করতে গিয়ে হেসে ফেলে তাহলে কি হবে? এসব ভেবে বাড়বার এগোতে গিয়েও পারছে না ইশা।

_শেষ হলো আপনার প্রাকটিস?
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে প্রশ্নটা করলো ফাইজা। ইশা এক নজর ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলল,
_কেউ তো আর আমাকে হেল্প করবে না,তাহলে জিজ্ঞেস করার কি প্রয়োজন?

ফাইজা মুচকি হেসে বলল,
_আচ্ছা এখন আমার দোষ তাইনা? কাল যে চ্যালেঞ্জ করলি,তার কি হবে?

ইশা ফাইজার সামনে দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করে বলল,
_হ্যা হ্যা মনে আছে। বলেছি যখন তা আমি করেই ছাড়বো। আজ না হোক কাল,কাল না হলে পরশু..

ফাইজা দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলল,
_করিয়েন আম্মা, কিন্তু বর্তমানে ঘড়ির দিকে তাকালে ভালো হতো। স্কুলে কি যাওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি আমি চলে যাবো?

ইশা একনজর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
_আয়হায়, এত দেড়ি হয়ে গেছে। জাস্ট দশ মিনিট ওয়েট করো,আমি পনেরো মিনিট এ রেডি হয়ে আসছি।

কথাটা বলেই নিজের ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুম এ চলে গেলো ইশা। ফাইজা পিছন থেকে চেঁচিয়ে বলল,
_টাইম নেই ইশা,জলদি আসিস।

_হুম হুম…

____
_বুঝলাম তুই মেয়েটাকে শাস্তি দেওয়ার প্ল্যান করছিস। কিন্তু কি শাস্তি দিবি তুই ওকে? পিচ্চি একটা মেয়ে,একটু ভুল ই নাহয় করেছে।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজের চুল সেট করছে আদৃত। সায়ান এর কথা শুনে একবার তার দিকে তাকিয়ে হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলে,
_জানিনা..

_জানিস না মানে? দেখ আদি শুধু শুধুই ঝামেলা করিস না, ছেড়ে দে ওকে।

_এত দরদ দেখাতে হবেনা,নাহয় তোর কপালেও দুঃখ আছে।

সায়ান আর কিছু না বলে সোফায় বসে তার ফোনটা হাতে নিলো। হঠাৎ তার চোখেমুখে খুশির আভা ফুটে উঠলো। উচ্চস্বরে বলল,
_আদিইইই…

আদৃত বিরক্তিসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
_এমন মেয়েদের মতো চেঁচাচ্ছিস কেন?

_আরে মেরে ভাই, ব্যাপারটাই তো এমন।

_কি এমন ব্যাপার শুনি..

_পূর্ণ ফিরে আসছে।

আদৃত সামান্য হেসে বলল,
_হুয়াট? সিরিয়াসলি!

_ও নিজেই তো মেসেজ করেছে ” আই এম কামিং”

_আমিতো ভেবেছিলাম ও ওখানেই সেটেল হয়ে যায় কিনা। কোথায় কোথায় যে থাকে তাই তো জানা যায় না।

সায়ান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
_কেন থাকে সেটাও তো জানিস তুই।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আদৃত। অত:পর খাটের উপর থেকে নিজের জ্যাকেটটা তুলে গায়ে জড়িয়ে নিলো সে। নিজের টেবিল থেকে নিজের সানগ্লাস টা পড়ে চাবি ঘোড়াতে ঘোড়াতে বেড়িয়ে গেলো। সায়ান ও গেইট লক করে লিফট এ উঠে পরলো।

____
স্কুল ছুটি হয়েছে কিছুক্ষন আগে। একঘণ্টা পর ব্যাচ থাকায় ইশা,মোহনা আর বাড়িতে ফেরে না। একঘণ্টা স্কুলেই থেকে গল্প করে,তারপর ব্যাচ শেষ করে একেবারে বাড়িতে যায়। ইশা,মোহনা মর্নিং শিফট এ পড়ায় তাদের ছুটি হওয়ার পর ই ডে শিফট এ কলেজ এর ক্লাস শুরু হয়। তাই এই সময়টাতে সিনিয়রদের সাথেও আড্ডা দিতে পারে।

তবে আজকে নিরব কে না দেখতে পেয়ে ইশা হাটতে হাটতে বলল,
_নিরব ভাইয়া কোথায় বল তো? আজ দেখলাম না একবারো।

মোহনা চিপস খেতে খেতে বললো,
_জুথি আপু বলছিল আজকে নাকি নিরব ভাইয়া আসবেনা কলেজে।

_কেন?

_কোনো একটা ইম্পরট্যান্ট কাজে যাবে শুনলাম।

_ওহ..

_পানি দে না দোস্ত।

ইশা নিজের ব্যাগ থেকে বোতল টা বের করে দেখলো একটুও পানি নেই তাতে। মোহনার দিকে বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
_ফিল্টার থেকে নিয়ে আয় পানি যাহ।

_আচ্ছা তুই দাঁড়া আমি আসছি।
কথাটা বলেই মোহনা পানি আনতে চলে গেলো। ইশা সেখানেই দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটতে শুরু করলো।

____
কলেজ এর সামনে বাইক পার্ক করে নেমে দাঁড়ায় সায়ান আর আদৃত। আদৃত আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো ওর দিকে অনেকেই তাকিয়ে আছে,হেলমেট টা এখনো খোলেনি সে। আদৃত বুঝতে পারলো এখানে হেলমেট খুললে তার আর ভিতরে যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তাই বাইক থেকে চাবিটা খুলে হেলমেট পড়েই সে ভিতরে যেতে লাগলো।
লাকটাও হয়তো আদৃতের পক্ষেই ছিলো। গেইট দিয়ে ঢুকতেই নজর পড়ে ইশার দিকে, তার সম্পূর্ন খেয়াল ফোনের দিকে। গতকাল সিভিল ড্রেস এ যতটা পিচ্চি লাগছিল আজ স্কুল ড্রেস এ তার চেয়েও বেশি ছোট মনে হচ্ছে ইশাকে। আদৃত হেলমেট এর ভিতরেই বাঁকা হেসে পা বাড়ায় সেদিকে।

ইশা ফোনের দিকে তাকিয়ে কিছুটা সামনে এগোতে যাবে তখন ই আদৃত তার সামনে এসে দাঁড়ায়। ইশা সামনের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে পাশ থেকে যেতে নিলে আদৃত আবারো তার সামনে চলে আসে। ইশা এবার ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকায়,তবে হেলমেট পড়া থাকায় চিনতে পারে না। ইশা এবারো কিছু না বলে পাশ থেকে যেতে নিলে আদৃত হাত বাড়িয়ে দিয়ে তার পথ আটকে দেয়।

মেজাজ টা বিগড়ে যায় ইশার। রেগে গিয়ে আদৃতের সামনে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
_কী সমস্যা ভাই? বারবার পথ আটকাচ্ছেন কেন আমার? আমি কিন্তু…

_পুলিশ ডাকবে? ডাকো…

#চলবে

[গল্পটা এখন পর্যন্ত আপনাদের কেমন লাগছে অবশ্যই জানাবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here