শিশির_ভেজা_শিউলি #পর্ব_১৫ #ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

0
445

#শিশির_ভেজা_শিউলি
#পর্ব_১৫
#ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না।কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)

নিস্তব্ধতা বিরাজমান।সুখনীড়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখগুলোতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একটু আগেও সবাই যেখানে হাসি মুখে সারপ্রাইজ প্ল্যান করছিল এখন কারো মুখে সেই হাসিটুকু নেই আর না আছে সারপ্রাইজ দেওয়ার কোনো ভাবাবেগ। এখন বাড়ির সাজসজ্জা বর্ণহীন মনে হবে। কিছুক্ষণ আগে মিসবাহ সূরাকে নিয়ে সুখনীড়ে আসে।প্রথমে আসতে চায়নি সূরা।পরে যখন মিসবাহ বলল মিজানুর সিকদার আর নুহাশ এখানেই আছে তখন না এসে পারেনা।সদর দরজায় ঢুকেই রঙ বেরঙের বেলুন, হরেক রকমের ফুল দিয়ে বাড়ী সাজানো দেখে সূরা একটু অবাক হয়। বেলুন দিয়ে ইংরেজি অক্ষরে লেখা ওয়েলকাম দেখে বুঝতে পারে সবাই তাকে সারপ্রাইজ দিতে এসব করেছে।মিসবাহর দিকে তাকালে সে চোখের ইশারায় সামনে সোফার দিকে তাকাতে বলে।সূরা মিসবাহর দৃষ্টি বরাবর তাকালে চোখ ছলছল করে ওঠে। সোফায় তার মা নিহারিকা সিকদার এবং ভাবি মীরা বসে আছে। সোফার পাশে দাঁড়িয়ে আছে পঞ্চপাণ্ডব দলের চারজন আর মেহের, অন্য সোফায় বসে আছে মাহমুদ সিকদার, মুনতাহা সিকদার, মিজানুর সিকদার ও নুহাশ। সূরা ডুকরে কেঁদে উঠে। নিহারিকা সিকদার মেয়েকে দেখে দৌড়ে আসেন মেয়ের কাছে। সূরার মধ্যে এখন হিতাহিত জ্ঞান নেই বললেই চলে। সে যে হুইলচেয়ারে বসে আছে তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই। নিহারিকা সিকদার কাছে আসলেই সূরা ঝাঁপিয়ে পড়ে মায়ের বুকে। আঁতকে উঠে সুখনীড়ে অবস্থিত সবাই। নিহারিকা সিকদার মেয়েকে বুকে আগলে মেঝেতে বসে পড়ে। ডুকরে কেঁদে উঠলো মা মেয়ে।সূরা ফোঁপাতে ফোঁপাতে কি বলছে কারো বোধগম্য হলো না। নিহারিকা সিকদার মেয়েকে বুকে আগলে নিয়ে শান্তনা দিচ্ছেন কম কাঁদছেন বেশি।বড্ড আদরের মেয়ে তার।তিন বছর মেয়েকে দেখেন না তিনি। মীরা এগিয়ে এসে সূরার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সূরার শান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। তিনবছর মাকে ছাড়া থাকা কম কষ্টের ছিলনা তার কাছে। মায়ের বুকে গুটিসুটি মেরে লেপ্টে রইলো সূরা। হঠাৎ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসলো তার। জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল সূরা। এতোক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে সবাই শক্ত খোলসে আবৃত সূরাকে দেখছিল। কঠিন ব্যক্তিত্বের অধিকারী মেয়েটিও আপন মানুষের সান্নিধ্যে অবুঝ বাচ্চা হয়ে যায়‌। হঠাৎ করেই সূরাকে জোরে শ্বাস নিতে দেখে ঘাবড়ে গেল সবাই। মিসবাহ দ্রুত গিয়ে সূরাকে ধরতেই লুটিয়ে পড়ল সে মিসবাহর বুকে। মিসবাহ কোলে তুলে নিল সূরাকে। গেস্ট রুমে নিয়ে শুয়ে দিল।পালস রেট চেক করল,বিপি চেক করে বুঝল ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেছে সূরার।প্যানিক এ্যাটাক হয়েছে।তখন থেকেই প্রায় আধাঘণ্টা হতে গেলো সূরার জ্ঞান ফেরার নাম নেই।সবাই সূরাকে ঘিরে বসে আছে। নিহারিকা সিকদার এখনো মেয়ের চিন্তায় কাঁদছেন। মিসবাহ আস্বস্ত করে বলল

“ছোট আম্মু সুর ঠিক আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে। চিন্তা করোনা।”

নিহারিকা সিকদার ছলছল চোখে তাকালেন মিসবাহর দিকে। কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলেন

“বাবা আমার মেয়েটা তো ঠিকই ছিল। আমার হাসি খুশি মেয়েটা ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।আমি মা হয়ে কিছু করতে পারছিনা।এই সমস্যা তো ছিল না আমার মেয়ের।কি থেকে কি হয়ে গেল।”

ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি। একজন মায়ের হৃদয় নিংড়ানো হাহাকারে সবার বুক ভারি হয়ে উঠেছে।একজন মা-ই জানে সন্তানের কষ্টে কতোটা বুক পুড়ে তার। সন্তানের মুখের হাসির জন্য পৃথিবীর সব মা প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেতে সর্বদা প্রস্তুত থাকেন।একজন মায়ের কাছে সন্তান কখনো বেশি হয়না আর না তাদের লালন-পালন করতে কষ্ট সাধ্য মনে হয়। কিন্তু কিছু কিছু সন্তানের কাছেই মা ভারি হয়ে ওঠে। বাসায় পোষা প্রাণীর জন্যেও তাদের এক আকাশসম মায়া। কিন্তু মায়ের জন্য না থাকে মায়া আর না থাকে মায়ের প্রতি দায়িত্ব।যে মাকে তারা অবহেলা করে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে সেই মা শত কষ্টেও তাদের বুকে আগলে রাখে। প্রকৃতি তখন হয়তো হাহাকার করে বলে ওঠে “সন্তান তুমি নিষ্ঠুর, তুমি কলঙ্কিত।কি জবাব দিবে তুমি তোমার রব কে? হায়! আফসোস। তুমি তোমার জন্মদাত্রী মাকে ঘরের এক কোণে জায়গা দিতে ব্যর্থ কিন্তু একবার দেখ এই মা তোমাকে দশ মাস দশ দিন পেটে লালন পালন করেছে। অসহনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করে তোমাকে পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছেন।এই ঋণ শোধ করবে কিভাবে তুমি? কলঙ্কিত সন্তান তুমি।” মায়ের কষ্ট কেউ কি বোঝে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া।নাহ্! কেউ বোঝে না।ছলছল চোখে মিজানুর সিকদার নিজের অর্ধাঙ্গিনীর কাছে এগিয়ে গেলেন। মাথায় হাত রেখে শান্ত স্বরে বলে উঠলেন

“কেঁদো না নিহা। আমাদের সুর আবার আগের মতো হয়ে যাবে দেখো। সামনে তো ওর সেমিস্টার ফাইনাল। পরীক্ষা শেষ হলে আমি আমার সুর কে নিয়ে ভালো জায়গা থেকে ঘুরে আসবো।ওর একটু রিফ্রেশমেন্টের দরকার।”

রাফি কৌতুহলী হয়ে বলল “কিন্তু সূরার এই অবস্থা কেন আঙ্কেল? আগে তো প্যানিক এ্যাটাক হয়নি।”

দিয়া বলল “নাহ্ রাফি।সূরার এর আগেও এমন হয়েছে।হয়তো এতো বেশি না। কিন্তু অনেক দিন দেখেছি দুঃস্বপ্ন দেখে ওকে প্যানিক করতে।”

মিসবাহ কন্ঠে খাদ নামিয়ে বলল “প্যানিক এ্যাটাক হচ্ছে ভীতি ও উদ্বেগের তীব্র অনুভূতি।যদি কেউ তার জীবনে ঘটেছে এমন কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন বোধ করে অথবা কঠিন বা মানসিক চাপযুক্ত কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় তখন প্যানিক এ্যাটাক হতে পারে।”

একটু থেমে মিসবাহ আবার বলল
“প্যানিক এ্যাটাক কোনো ক্ষতি সাধন করবে না। ওই মুহূর্তে অসম্ভব মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে ওই অনুভূতি এক সময় চলে যায়।এর জন্য দরকার কাছের মানুষের সান্নিধ্য, ভালোবাসা,পাশে থাকার আশ্বাস। সাধারণত শ্বাসকষ্ট, অবচেতন হওয়ার অনুভূতি, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘাম, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, অশ্রুসিক্ত হওয়া এই উপসর্গগুলো দেখা যায়। আমাদের উচিত সুরকে এটা বোঝানো যেকোন পরিস্থিতিতেই আমরা আছি ওর পাশে। নয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে। সূরা হয়তো ডিপ্রেশড থাকতে থাকতে সুইসাইড এটেম্পট করবে ”

শেষের কথাটা বলতে মিসবাহর কন্ঠ কাঁপে। বুকের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে যায়। মাহমুদ সিকদার ছেলের কাধে হাত রাখলেন। ছেলের জন্য চিন্তা হচ্ছে তার।সূরার সামান্য থেকে সামান্য বিষয়েও যার এতো উদ্বিগ্নতা, উৎকণ্ঠা সে ছেলে যখন সূরার ভয়ানক অতিত সম্পর্কে জানবে তখন কি নিজেকে শক্ত রাখতে পারবে নাকি বিষাদের বিষাক্ত ছায়া ঘিরে ধরবে তাকে। বাবার চিন্তিত মুখোস্রি দেখে শুকনো হাসলো মিসবাহ।চোখের ইশারায় বুঝালো সে ঠিক আছে।তাকে যে ঠিক থাকতে হবেই।

★★★★★★

সময়ের সাথে সাথে বয়ে চলে মানুষের জীবন। বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্ৰাম করে যেতে হয়। এর জন্য হয়তো বলা হয়েছে সময় নদীর স্রোতের মতো কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সুখনীড়ে আসা আজ এক সপ্তাহ পার হয়েছে। এই কয়েকদিন সবাই সূরার পাশে পাশে ছিল। সবার অতি যত্নে সূরার নিজেকে রাজকন্যা মনে হয়। অথচ একদিন ভিখারির মেয়ে বলে কতো অপমান সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু সে নাকি জমিদার কন্যা। ভাবা যায়। তাচ্ছিল্য হাসে সূরা। এই কয়েকদিন মীরা, নিহারিকা সিকদার আর মুনতাহা সিকদার তার সাথে ঘুমিয়েছে। রাতে কখন কি দরকার হয় তাই। সূরা খেয়াল করেছিল তারা ঠিক মতো ঘুমায় না রাতে তার খেয়াল রাখার জন্য। তাই আজ আর কাউকে রুমে রাখেনি সূরা। সবাইকে একপ্রকার জোর করেই নিজেদের রুমে পাঠিয়েছে। নিহারিকা সিকদার বার বার বলে গেছেন সমস্যা হলেই যেনো তাকে ডাকে। সূরাও মাকে আস্বস্ত করেছে। সূরা আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ তাই তারা দ্বিমত করেনি ওকে একা রাখতে। এই কয়দিন রুম থেকে বের না হওয়ায় মিসবাহর মুখোমুখি তাকে হতে হয়নি। চাতক পাখির মতো সূরার চোখ চেয়ে আছে ওই কঠোর মানবটাকে দেখার জন্য। কিন্তু নিজের অনুভূতি মানতে নারাজ এই নিষ্ঠুর রমনী। সূরার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দেয় ঘুমের রাজ্যে যখন সে পারি জমায় তখন কেউ তাকে দেখে তার চক্ষুশীতল করে। তাই আজ না ঘুমিয়ে জেগে আছে সে। লহমায় দরজা খুলার হালকা শব্দে সজাগ হয় সূরা। কিয়ৎক্ষণ পরে নিজের ব্যান্ডেজে আবৃত পায়ে কারো হাতের স্পর্শে নড়ে উঠে সে। হাত বুঝি গুটিয়ে নিল ব্যক্তিটি। ঘরে পিনপতন নীরবতা। লহমায় নিজের মুখোস্রীতে কারো ভারি নিঃশ্বাসের বিচরনে শ্বাসরোধ হয়ে আসে রমনীর। অপর ব্যক্তিটি ফিসফিসিয়ে বলে

“ঘুমাও নি কেন সুরজান?”

সূরার ভ্রু কুঁচকে গেল। এই লোক বুঝলো কি করে যে সে ঘুমায়নি। পিটপিট করে তাকালো সূরা। মিসবাহ কে অতি নিকটে দেখেও বিচলিত হলো না সে। তাকিয়ে রইল ওই সুদর্শন পুরুষের মুখোস্রির দিকে। নিজের চক্ষুশীতল করছে কি সে। জানা নেই তার। সূরা মুচকি হেসে বলল

“রাতের আধারে পরনারীর ঘরে মাকহুল সিকদার মিসবাহ? জমিদার বংশের পরম্পরা বুঝি বজায় রাখার চেষ্টা।”

মিসবাহ বাঁকা হেসে বলে “যে আমার হৃদয়হরনী, চক্ষুশীতল কারিনী সে কিভাবে পরনারী হয় ইনশিরাহ্ সূরা? সে তো আমার একান্ত ব্যক্তিগত নারী।”

“মরিচিকার পেছনে ছুটে জীবন এবং সময় নষ্ট না করাই ভালো ডাক্তার। দিনশেষে শূন্য হাতে ফিরতে হবে যে।”

“সুরজান নামক শূন্যতা ঘিরে ধরুক আমায়। আমি সেই শূন্যতার মাঝেই পরিপূর্ণতা খুঁজে নিব।”

সূরা চোখ বন্ধ করে নেয়। এই মানুষটার হৃদয়াসিক্ত অনুভূতি তাকে বেসামাল করে দেয়। শক্ত খোলসে লুকিয়ে রাখা অনুভূতি বাক্স বন্দি থাকতে নারাজ। সূরা ক্ষীন স্বরে বলে

“চলে যান ডাক্তার। পাথরে যে ফুল ফোটে না।”

মিসবাহ ফিসফিসিয়ে বলে “আমার সুরজান কি পালাতে চাইছে? এতো ভীতু সে? কিন্তু বোকা রমনী কি জানে পালাতে চাইলেই পালাতে পারবে না সে।”

সূরা আমতা আমতা করে বলে “আমি আপনার থেকে পালাতে যাবো কেন?”

মিসবাহ শব্দ করে হাসে। সূরা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। এই লোক কি পাগল হয়ে গেল। হাসির মতো কি এমন কথা বলল সে। মিসবাহ বলে

“আমি কি একবারও বলেছি তুমি আমার থেকে পালাতে চাইছো?”

সূরা প্রশ্নাত্মক চাহনিতে তাকায়। মিসবাহ ক্ষীন স্বরে বলে “অনুভূতির থেকে পালাতে চাইছো তুমি। কিন্তু ইনশিরাহ্ সূরা কি জানে সে অনুভূতি লুকাতে ব্যর্থ।”

সূরার চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ে। মিসবাহ্ দেখে তার সুরজান কে। সে যাকে নিষ্ঠুর রমনী বলে আখ্যায়িত করে সেই রমনী কি সত্যি নিষ্ঠুর নাকি প্রকৃতি তাকে নিষ্ঠুর হতে বাধ্য করেছে। সূরা অস্ফুটস্বরে বলে

“আমাকে লোভ দেখাবেন না ডাক্তার। বড্ড লোভী আমি। আমি আপনাকে কোনো দিন ক্ষমা করবোনা ডাক্তার। আমার জীবনে আরও আগে কেন আসলেন না? এখন যে আমার কাছে আপনাকে দেওয়ার মতো কিছুই অবশিষ্ট নেই। নিঃস্ব আমি। চলে যান ডাক্তার।”

মিসবাহ কিছু না বলেই বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। সূরা ফুঁপিয়ে উঠে। দরজার এপাশ থেকে মিসবাহ শুনে প্রেয়সীর হাহাকার। বুকের বা পাশে হাত বুলায় সে। চিনচিনে ব্যথায় বিষিয়ে তুলেছে তনু মন। মিসবাহ বিরবিরালো

“আমার সকল অনুভূতি, উৎকণ্ঠা, দোয়ায় শুধু তুমি আছো সুরজান। কিন্তু হায় আফসোস! তোমার কোথাও আমি নেই। নিঃস্ব তুমি, অতৃপ্ত এই আমি। আমার সকল অতৃপ্তি তুমিময় নিঃস্বতায় মিলে মিশে একাকার হয়ে যাক। পরিপূর্ণ হয়ে উঠি তুমি আমি‌। তুমিময় পরিপূর্ণতা গ্ৰাস করুক এই আমায়।”

★★★★★★

গ্রীষ্মের খরতাপে অতিষ্ট মানব জীবন। শুধু যে মানবজীবন তা নয় ধরনীর বুকে প্রত্যেকে এই তাপদাহে বিরক্ত। সূরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সূর্যের দিকে তাকালো। কিন্তু একি বেশিক্ষণ কোথায় তাকিয়ে থাকতে পারলো। ছোট ছোট চোখ করে অন্যদিকে তাকালো সে। বিরক্ত লাগছে তার। একটু উপরে হাত তুলে সূর্যের তীক্ষ্ণ রশ্মি থেকে নিজের মুখোস্রি আড়াল করার মিথ্যা প্রয়াশ চালালো সে।আজ পরীক্ষা ছিল তার।আর একটা পরীক্ষা দিলেই তারা এই সেমিস্টার শেষ করে চতুর্থ বর্ষে পদার্পন করবে।মা-বাবার সাথে সুখনীড়ে কিছুদিন ছিল সে। সূরার বাবা-মা, ভাই-ভাবি এবং মিসবাহর বাবা-মা, মেহের সবাই মিলে সূরার দাদাজানের কাছে গেছে কিছুদিন আগে। সূরার দাদাজান মোজাম্মেল সিকদার হঠাৎ অসুস্থ হওয়ার কথা শুনে তারা গ্ৰামে যায়। সূরার পরীক্ষা তাই যাওয়া হয়নি।সূরার পরীক্ষা পরে ঠিক করেন গ্ৰামে যাবে সূরা আর মিসবাহ্। এখন সূরার পরীক্ষা শেষ হওয়া বাকি।আর তাছাড়া মিসবাহ্ ছুটিও পাবেনা পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত। দাদাকে দেখেনি সূরা। শুধু একবার ফোনে কথা হয়েছিল। দাদাজানের ভালোবাসা পাবে ভেবে সূরা আনন্দিত ঠিকই কিন্তু আবার গ্ৰামে যেতে হবে ভেবে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছে তার। কিন্তু আর কতোদিনই বা পালিয়ে বেড়াবে সে।আর সে তো নিজের গ্ৰামে যাচ্ছে না। আজ প্রায় মাস পেরিয়ে গেল মিসবাহকে দেখে না সূরা। সেদিন রাতের পর আর সুখনীড়ে থাকেনি সে। সবাই বারন করলেও সূরা মানতে নারাজ। অগত্যা সূরার জেদের কাছে হেরে যায় সকলে। মিসবাহ এই কয়েকদিন আর সামনে আসেনি তার। সূরার খারাপ লাগলেও সে চায় দূরে থাকতে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সূরা।এতো গরমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে বিরক্ত লাগছে তার।দিয়া আজ সিহাবের সাথে গেছে শপিংয়ে ।রাফি, জিহাদ গেছে কোনো এক কাজে।রিক্সার জন্য অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত সে। সব রিক্সাচালক কি আজ অবরোধ করছে বুঝতে পারেনা সূরা । বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে গেল সূরার।

“মিষ্টি পরী?”

হঠাৎ এমন সম্বোধনে হকচকিয়ে যায় সূরা। পেছনে তাকিয়ে দেখে…

চলবে…….

(আজকের পর্বটা একটু বেশি বড় হয়ে গেছে। পাঠক পাঠিকাদের রেসপন্স পায়না। নতুন লেখিকা নতুন পেজ হিসেবে ফলোয়ার কম জানি কিন্তু কেমন হচ্ছে একটু জানাবেন প্লিজ। বুঝতে পারছি না গল্পটা টানবো নাকি শেষ করে দিব।)পাশে থাকবেন। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here