কাব্যের_বিহঙ্গিনী #পর্ব_১৫ #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

0
444

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_১৫
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

“তার আকাশে মেঘ জমলে আমার আকাশ অন্ধকার হয়। হায় এ কেমন বিষন্নতা?”

পোস্ট টা মাত্রই করা হয়েছে বিহঙ্গিনীর কাব্য আইডি থেকে। মেহবিন এমনিই ফোন স্কল করছিল হুট করেই পোস্টটা সামনে আসলো। মেহবিন বুঝতে পারলো আজকের পোস্ট এর জন্য এরকম পোস্ট করা হয়েছে এই আইডি থেকে। মেহবিন কমেন্ট করলো,,

“এটাই এক অর্ধাঙ্গের বৈশিষ্ট্য।”

ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো,,

“আমারটা না হয় বুঝলাম কিন্তু তোমার এতো কিসের বিষন্নতা বিহঙ্গিনী?’

তাকে শুধু এই মানুষটিই তার হাল জিজ্ঞেস করে। উত্তর দেওয়া টা তার কাছে কঠিন হলেও ,এটা দেখে সে সবসময় মুচকি হাসে। মেহবিন মুচকি হেসে সাদাত হোসাইন এর একটা কবিতা লিখলো।

“আমি ভীষণ একলা থাকা মানুষ
আমি ভীষণ আমার ভেতর থাকি।
যত্ন করে খুব খেয়ালে রোজ
আমি’টাকে আমার ভেতর রাখি।

আমি ভীষণ অভিমানের মেঘ
আমি ভীষণ ক্লান্ত একা ভোর।
কষ্টগুলো রোজ জমিয়ে ভাবি
সুখগুলো সব থাকুক না হয় তোর।

আমি ভীষণ মন খারাপের দিন
আমি ভীষণ কান্না মাখা রোদ।
অশ্রুগুলো বর্ষা জলে ভাসাই
ঋণগুলো সব না হয় হল শোধ।

আমি ভীষণ স্মৃতির খেরোখাতা
মলাট জুড়ে হাজার আঁকিবুঁকি।
আমি ভীষণ একলা থাকা মানুষ
‘আমি’টাকে আমার ভেতর রুখি।

~ সাদাত হোসাইন

বরাবরের মতো এবারও ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো না। কিন্তু মেহবিন এবার আর চুপ করে রইলো না। সে আরো একটা কমেন্ট করলো।

“আমি হাড়িয়েছি আমার সব প্রিয় জিনিস কে। তবুও আমি এগিয়ে যাই সামনে কে জানে আবার কোন জিনিস প্রিয় হয়ে যায়।”

এখন ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো,,

“সারাজীবনের জন্য প্রিয় জিনিসকে হারানোর শোক বড়। না সাময়িক সময়ের জন্য হারানোর শোক বড়।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে লিখলো,,,

“নিঃসন্দেহে সারাজীবনের জন্য প্রিয় জিনিসকে হারানোর শোক বড়। সাময়িক সময়ের জন্য হারালেও কিছুটা অপেক্ষা করলে সেই জিনিস টা পাবেন। আপনি যাই করুননা কেন? একটা সময়ের পর আপনার অপেক্ষার অবসান হবে। কিন্তু সারাজীবনের জন্য হারালে আপনি যতই অপেক্ষা করুন সেটা আর পাবেন না। তাকে দেখার তৃষ্ণায় আপনার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে তবুও তাকে দেখার সুযোগ পাবেন না। তাকে একটু ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য ছটফট করবেন তবুও একটু ছুঁতে পারবেন না। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত তার জন্য অপেক্ষা করবেন কিন্তু এ অপেক্ষার শেষ হবে না। ভেতরে ভেতরে তার অপেক্ষা করতে করতে নিঃশেষ হয়ে যাবেন তবুও শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে তাকে পাবেন না। তখন আপনার মস্তিষ্ক জুড়ে একটাই কথা ঘুরবে ইশশ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে যদি তাকে দেখতে পারতাম।”

“সেই জন্যই তো সারাজীবনের জন্য যাতে হারাতে না হয় তাই সাময়িক সময়ের জন্য হাড়িয়েছি।”

“না হাড়ান নি একটু সঙ্গ ছেড়েছিলেন শুধু। তবে ছিলেন তো সবসময় আমার সাথেই। হয়তো একটু দূরে।”

“সামনে শুক্রবার তৈরি থেকো তোমায় নিয়ে ঘুরতে যাবো। তবে হ্যা তুমি তোমার কালো বোরকা হিজাব নিকাব পরে এসো সাথে সেই ক্যাপ।”

মেহবিন মুচকি হেসে লিখলো,,

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

ব্যস কথোপকথন শেষ। মেহবিনের মুডটা এখন বেশ ভালো। যদিও তার কাব্য তার জন্য সেই মুডটা ভালো করার জন্যই পোস্ট করেছিল।

____________

“নেত্রী কাল তো খুব বলেছিলে সব পড়াশোনা শেষ তাহলে আজ কি হলো?”

মেহবিনের কথায় তাজেল দাঁত কেলিয়ে বলল,,

‘আমি তো পড়ছিলাম ডাক্তার কিন্তু কি কও তো আমার মাথা আমারে ধোকা দিছে।সে মনে রাহে নাই।”

“ধোকা কাকে বলে নেত্রী?”

মেহবিনের কথায় তাজেল ওর দিকে তাকালো আর বলল,,

‘আমি তো জানি না কিন্তু এইডা বুঝি। আমার বাপ আমারে একবার কইছিল আমার মায় নাকি তারে ধোঁকা দিয়া চইলা গেছে। এনে তো আমার পড়াও চইলা গেছে তাই কইলাম। মানে হইলো, চইলা যাওয়া মানেই ধোঁকা দেওয়া ঠিক আছে না ডাক্তার।”

তাজেলের এমন কথায় মেহবিন কিছু বললো না এই টুকু বয়সে ওকে ধোকার মানে টা সে শেখাতে চায় না। তখন তাজেল একটা দাত কেলানি দিয়ে বলল,,

“তুমি আমারে সত্যি মারবা ডাক্তার?’ এই দেহো আমার দাঁত কেলানি কি সুন্দর।”

তাজেলের কথায় মেহবিন হাসলো আর বলল,,

‘তোমার দাঁতে পোকা হইছে বুঝছো নেত্রী। তাই এতো দাঁত কেলানোর দরকার নেই।”

“তুমি হাচা কথা কইতাছাও নাকি ডাক্তার? খাইছে আমি তো এহন ভালো মতো খাইতে পারুম না।

“নেত্রী তুমি না একটা,,

“কি আমি?”

“একটা কিউটের ডিব্বা।”

“আমি তো মানুষ তুমি ডিব্বা পাইলা কই। তোমার চোহে সমস্যা হইছে তুমি ঠিকমতো চোহে দেহো না তোমার চোহের ডাক্তার দেহান লাগবো। তুমি মানুষরে ডিব্বা দেখতেছো।

মেহবিন এবার একটু বেশিই হাসলো। আর বলল,,

“হইছে নেত্রী তুমি মানুষ। আমার তোমাকে ডিব্বা বলা উচিত হয় নি।

“আইচ্ছা ঠিক আছে। তুমি এহনো আমারে মারবা নাকি ডাক্তার?”

“না! তুমি ঠিক বলেছিলে তোমাকে আমি মারতেই পারবো না।”

“তাইলে কানে ধরাইবা? আমার কান কিন্তু এহনো বিষ (ব্যাথা)।

“তাও করবো না।”

“তাইলে কি করবা?”

‘কিছুই করবো না। তবে হ্যা তুমি এখন আমার সামনে বসে পুরো পড়া মুখস্থ করবা এটা তোমার শাস্তি।”

“তাইলে আমারে চকলেট দিবা?”

“সব পড়া হলে দেব।”

‘আইচ্ছা তাইলে পরতেছি।”

“যদি না দিতাম তাহলে কি করতে?”

“এখন ব্যাগটা নিয়া পলাইতাম।”

“হুম হুম অনেক হয়েছে এখন পড়।

তাজেলের পড়া শেষ হলে মেহবিন ওকে চকলেট দিল। আজ দুজনেরই বন্ধ তাই দশটার দিকে পরতে এসেছিল তাজেল। তাজেল যেতে নিলে মেহবিন বলল,,

“নেত্রী তুমি কিন্তু কিছু ভুলে যাচ্ছো?”

তাজেল একটা হাঁসি দিয়ে বলল,,

“আসসালামালাইকুম?”

“এটা কি সঠিক হয়েছে নেত্রী? তোমাকে বলছি সালামের ভালোভাবে উচ্চারণ না হলে সেটার অর্থের বিকৃতি হয়ে যায়। যদিও অজান্তেই হয় মানুষ বুঝতে পারে না তবে এর এই ভুলের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত, একজন আরেকজনকে বদদোয়া দিচ্ছি। একজন আরেকজনের ধ্বংস, ক্ষতি, অকল্যাণ কামনা করছি।
সওয়াবের বদলে পাপের বোঝা ভারি হচ্ছে।

-যেমনঃ আমরা প্রতিদিন অনেককেই এভাবে সালাম দিতে শুনি যে,
১) স্লামালাইকুম
২) আস সালামালাইকুম
৩) সেলামালাইকুম
৪) আসলা মালিকুম ইত্যাদি

যার অর্থ শান্তির পরিবর্তে গজব, অশান্তি কিংবা শাস্তি কামনা করা হয়।

আবার উত্তর দেয়ার সময়ও শোনা যায় ভুল শব্দের ব্যবহার। যেমনঃ
১) অলাইকুম সালাম
২) অলাইকুম আস-সালাম
৩) আলিকুম সালাম ইত্যাদি
যার উত্তরেও গজব,অশান্তি কিংবা শাস্তি কামনা করা হয়।
নাঊজুবিল্লাহি মিন জালিক।
আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবু ইলাইহি।

অনেকেই ভুল করে তাই আমাদের সঠিক টা জানতে হবে নেত্রী।এর সহীহ উচ্চারণের প্রতি গুরুত্ব দেয়া জরুরি। কমপক্ষে এতটুকু বিশুদ্ধ উচ্চারণ অবশ্যই জরুরি, যার দ্বারা অর্থ ঠিক থাকে। সালামের সঠিক উচ্চারণ হলো,,

“আসসালামু আলাইকুম” অর্থ আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।”ওয়ালাইকুমুস সালাম” অর্থ আপনার ওপরেও শান্তি বর্ষিত হোক। এভাবে শুদ্ধ ভাবে করতে হবে নেত্রী।”

সবশুনে তাজেল বলল,,

‘আসসালামু আলাইকুম। এবার ঠিক আছে।”

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। মাশাআল্লাহ এবার ঠিক আছে।”

“আল্লাহ হাফেজ ডাক্তার।”

“আল্লাহ হাফেজ নেত্রী।”

তাজেল চলে গেল। মেহবিন আস্তে আস্তে তাজেল কে সব শেখাচ্ছে। নামাজ ও পরতে বলেছে দাদির সাথে। ও বলেছে আস্তে আস্তে শিখে ফেলবে।

_____________________

“তো বল তো একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে এরকম আচরণ করলি কিভাবে? আচ্ছা আমায় একটা কথা বলতো শুধুমাত্র নিজেদের খায়েশ মেটানোর জন্য তোরা মেয়েদের সাথে এরকম করতি না আরো কোন কারন আছে। যা জানিস ভালোই ভালোই বলে দে তাহলে আর তোদের ঐ শরীরে হাত দেব না।”

মুখর শামীম আর ওদের বন্ধুদের কে এসেই মেরেছে। এখন শান্ত হয়ে বসে ওকে এ কথা জিজ্ঞেস করল। মুখরের কথায় শামীম চোখ তুলে তাকিয়ে বলল,,

‘আমরা নিজেদের জন্যই এসব করছি।”

‘তাহলে সহজেই মেনে নিলি তোরা। কালকে না বললি তোদের ফাঁসানো হয়েছে। তা রাতে কি নিশাচর এসেছিল নাকি?

নিশাচর নামটা শুনতেই সবগুলো চমকে উঠলো। শামীম আমতা আমতা করে বলল,,

“নিশ্ শশাচর কে?”

মুখর হেঁসে বলল,,

“তোদের ইলজিক্যাল ফাদার?”

তখন এস আই বলল,,

“স্যার ইলজিক্যাল ফাদার কি?”

‘নিশাচর তো ওদের বায়োলজিক্যাল ফাদার না কিন্তু বাবার মতো ওদের এ কাজে ঢুকিয়েছে তাই আমি নাম দিলাম ইলজিক্যাল ফাদার।”

“স্যার আপনিও না।”

‘আমি কিছুই না। তো শামীম বল কতো বছর ধরে নিশাচরের সাথে কাজ করিস। আর এতে তার লাভই বা কি হয়।”

‘আমি চিনি না নিশাচর কে। আমি জানি না তার সম্পর্কে।”

‘তারমানে নিশাচর নামে কেউ একজন তো আছে তাইনা।”

এ কথা শুনে শামীম একটা ঢোক গিললো তা দেখে মুখর বলল,,

‘কিরে আছে তো কেউ একজন নিশাচর নামে তাই না। আচ্ছা সেসব বাদ দে এখন বল তোরা না হয় মেয়েদের ধর্ষণ করে নিজেদের খায়েশ মেটাতি কিন্তু ওরা আত্মহত্যা করলে নিশাচরের কি লাভ হতো?

“আমরা জানি না।’

“না জানলে কেমনে হবে ভাই?”

‘আমাদের শুধু বলা হতো মেয়েকে তুলে তার সর্বনাশ করতে। এর জন্য আমাদের টাকাও দিতো আর ড্রাগস ও দিতো যা আমাদের প্রয়োজন।”

“তারমানে তোর ড্রাগ এডিক্টেড।”

“হ সেই কলেজে ওঠার পর থেইকা। তারপরেই তো আমার অন্ধকার জগতে পা রাখা শুরু যদি একজন ভালো মানুষই হইতাম তাইলে কি এইগুলা করতে পারতাম। তবে আপনে বিশ্বাস করেন আমরা নিশাচর রে দেহিনাই কোন দিন। খালি নাম শুনছি আর হেই আমাগো মালিক। আর এতে তার কি লাভ এইডাও আমরা জানি না।”

মুখর ওদের আরও কিছু জিজ্ঞাসা করে বাইরে বের হয়ে নিজের কেবিনে আসলো । ওদেরকে প্রচুর মেরেছে মুখর। তারপরেও ওদের দেখে ওর ইচ্ছে করছিল ওদের মেরে ফেলতে। একটা ধর্ষকের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। ওদের যাতে ফাঁসি হয় এর সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে মুখর। কিছুক্ষণ পর মুখরের ল্যান্ড ফোনে একটা কল এলো ও ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো,,

“কি ইন্সপেক্টর কি খবর?”

মুখর হেঁসে বলল,,

‘আমি ভেবেছিলাম আপনি ফোন দিবেন। এতোক্ষণে নিশ্চয়ই খবর পেয়েছেন আপনার ছেলেপেলেদের ধরে আনা হয়েছে। অবশ্য খোঁজ তো রাখবেনই হাজার হোক তাদের ইলোজিক্যাল ফাদার বলে কথা।’

“ইলোজিক্যাল ফাদার আবার কি?”

“কিছু না শুধু আমার দেওয়া একটা নাম নিশাচর।”

“আমি ওদের জন্য তোমায় ফোন দিইনি।”

“তাহলে কিসের জন্য ফোন দিয়েছেন?”

‘এই তোমার খোঁজ নেওয়ার জন্য ধীরে ধীরে তোমার উপদ্রব বেড়েছে তাই জন্য।”

“আমাকে ভয় পাচ্ছেন নাকি নিশাচর?”

তখন ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শোনা গেল। আর কিছুক্ষণ পর শোনা গেল,,

“নিশাচর নাম আমার আমি ভয় পাই না ভয় দেখাই।”

“আমি কিন্তু এখনো ভয় পাইনি।”

“একটা গুলি খেয়েও মন ভরেনি তাহলে?”

“দশটা খেয়ে মরে গেলেও বোধহয় মন ভরবে না। আমার মন তো আবার বিশাল বড় এতসহজে ভরে না।”

“আমার সাথে মজা করছিস?”

‘না তো আমি তো সত্যি কথা বলছি। যাই হোক আপনি হুট হাট করে তুই সম্পর্কে যান কেন বলুন তো? এমন ভাবে কথা বলেন বোধহয় আপনি আর আমি বন্ধু।”

‘আমি তো বন্ধু তোকে বানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই হলি না।”

“পুলিশ কখনো ক্রিমিনালের বন্ধু হতে পারে না।”

“এই ইন্সপেক্টর মুখ সামলে!!”

“আমি তো মুখ সামলেই কথা বলছি আপনার এতো জ্বলছে কেন বলুন তো।”

‘তুই যতো যাই করিস না কেন? শামীমের থেকে আমার কোন খবর পাবি না কারন ওরা কখনো দেখেই নি আমাকে আর আমার সম্পর্কে জানেও না।”

‘আমি কখন বললাম আমি ওদের কিছু করে আপনার ব্যাপারে জানবো। আপনার ব্যাপারে তো আমি জানি শুধু আপনাকে চিনি না। যেদিন চিনবো না সেদিন এমন ভাবে ধরবো তুই চাইলেও নিজেকে আড়াল করতে পারবি না।”

‘আগে চিনে তো দেখা তারপর না হয় ধরার প্রশ্ন আসবে?”

“খুব বেশিদিন এখানে আসা হয়নি তাতেই তোর দুজন মাথাকে বের করা শেষ। এরপরেও তোর এতো এটিটিউড?”

“এতো বছরের গড়া সাম্রাজ্য তুই কি ভেবেছিস এতো সহজেই ভেঙে যাবে নারে আমি অত সস্তা নই।”

“সেটা তো সময় বলে দেবে তুই সস্তা না দামী।’

বলেই মুখর ফোন কেটে দিল। ল্যান্ড লাইনে ফোন করে বলে ও লোকটার ট্রেস করতে পারছে না। মুখর এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করলো।

_________________

রাতে খাবার টেবিলে মুখর জানালো ও বাসা ভাড়া পেয়ে গেছে পুলিশ স্টেশনের কাছে কালই ওখানে চলে যাবে সে। প্রথমে শেখ শাহনাওয়াজ আপত্তি করলেও পরে মুখরের কথায় মেনে নিয়েছে । মুখর চলে যাবে শুনে মিশুর মন খারাপ হলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে মুখর আরবাজ কে নিয়ে নিজের ঘরের চলে গেল। কালকেই চলে যাবে সে। মিশুও গেল ওদের পেছনে ও গিয়ে বলল,,

“পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি তুমি সত্যি আমাদের বাড়ি থেকে চলে যাবে?”

মুখর হেঁসে মিশুকে একটা চকলেট দিয়ে বলল,,

“হ্যা যাবো তবে তোমার সাথে মাঝে মাঝেই দেখা করে যাবো।”

“তুমি যদি চলে যাও। তাহলে আমায় চকলেট দেবে কে প্রতিদিন রাতে খাবার খাওয়ার পর?”

“আরবাজ দেবে ওর কাছে চকলেট পাঠিয়ে দেব আমি তোমার জন্য। আবার আমি যখন আসবো তখন নিয়ে আসবো তোমার জন্য।”

“তুমি চলে গেলে আমার খারাপ লাগবে তো।’

“উহু বেশি খারাপ লাগবে না তোমার বন্ধু আছে তো! তোমার সাথে ফোনে প্রতিদিন কথা বলে । আবার তার বন্ধের দিন ও তো তোমার সাথে সময় কাটাবে বলেছে।”

‘তবুও সে তো বন্ধু আর তুমি তো পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি।”

মিশুর কথায় আরবাজ আর মুখর দু’জনেই হাসলো। আরবাজ বলল,,

‘মন খারাপ করিস না মিশু। মুখর আসবে তো মাঝে মাঝে।”

“হুম। তুমি খুব ভালো পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি।”

‘তুমিও খুব ভালো মিশু।”

মিশু হাসলো তারপর চকলেট খেতে খেতে বেরিয়ে গেল। আরবাজ আর মুখর কিছু কাজ করে ঘুমিয়ে গেল।
____________

সামনে শুক্রবার চলে এসেছে মেহবিন সকাল সকাল নয়টায় গোসল করে এসে রোদে বসলো। এগারোটার দিকে বিহঙ্গিনীর কাব্য চলে আসবে। কিছুক্ষণ এটা সেটা ভাবলো। তারপর সময় দেখে রেডি হতে গেল। কালো বোরকা হিজাব নিকাব মাথায় কালো ক্যাপ পরে সব তালা দিয়ে রাস্তায় আসলো। রাস্তায় আসতেই দেখলো একটা কালো গাড়ির সামনে কালো পাঞ্জাবি, কালো মাস্ক আর ক্যাপ পরিহিত ব্যক্তি গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটাকে চিনতে তার একটুও ভুল হলো না। তাকে দেখে মেহবিনের মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো। মেহবিন এগিয়ে গেল লোকটা তাকে দেখে ডান হাতটা বুকের বাঁ পাশে রাখলো তা দেখে মেহবিন হাসলো। মেহবিন তার সামনে দাঁড়িয়ে হেঁসে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম।”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম ইয়া হাবিবি। মাশাআল্লাহ আপনাকে একদম রানীর মতো লাগছে বিহঙ্গিনী।”

“শুকরিয়া আপনাকেও কোন রাজার থেকে কম লাগছে না কাব্য।”

“আয় হায় তোমার মুখে কাব্য নামটা কি যে সুন্দর লাগে। কাব্য নামটা হয়তো তোমার নামকরনে রাঙানো বলে।”

মেহবিন মুচকি হেসে ব্যাগ থেকে কয়েকটা চিঠি বের করলো আর সামনের মানুষটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,,

“আমার অবসরে আপনাকে নিয়ে লেখা কাব্য।”

কাব্য মুচকি হেসে চিঠিগুলো গাড়িতে রেখে সেখান থেকে বড় একটা লাল গোলাপের তোরা দিয়ে বলল,,

“আপনাকে এত প্রেমময়ী কে হতে বলেছিল বলুন তো? যার প্রতিটা সাক্ষাতই আমাকে নতুন করে প্রেমে পড়ার অনুভূতি দেয়।”

~চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here