কাব্যের_বিহঙ্গিনী #পর্ব_১৪ #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

0
363

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেহবিন নওশি আর তাজেলকে নিয়ে বাড়ি এলো। বাড়ির সামনে আসতেই দেখলো কিছু লোকজন । এগুতেই মেহবিন বুঝতে পারলো ওর জন্যই এসেছে। সবাই মেহবিন কে অনেক দোয়া করলো আর ওর প্রশংসা করলো। মেহবিন সবাইকে বিদায় দিয়ে দেখলো সাইমা দাঁড়িয়ে আছে। তাজেল আর নওশি বাড়ি চলে গেছে আগেই। মেহবিন সাইমাকে ঘরে নিয়ে বসালো। তারপর বলল,,

“কিছু বলবে সাইমা?”

সাইমা মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আপনে আগে থেকেই জানতেন যে আমার বোনরে শামীম ভাই তার ভোগের বস্তু বানাইছিল?”

“আগে থেকেই না দু’দিন আগে জেনেছি। তবে তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না শামীমের সর্বচ্চো শাস্তি হবে। আর তোমার কথাও কেউ জানবে না।

“আমার কথা বাদ দেন। আপনে জানেন বড় আপা শামীম ভাইরে পছন্দ করতো আমারে কইছিল কিন্তু হেই পছন্দের মানুষটাই বড় আপার সবথেকে বড় জিনিসে আঘাত করছে। ওর মানতে খুব কষ্ট হইছে তাই না।”

“তুমি তো শামীম কে ভাই মানতে সবকিছু ঘটার পর তোমার মানতে কি সহজ হয়েছিল। যেখানে তোমার সহজ হয়নি সেখানে তোমার বড় বোন কিভাবে সহজে মানতে পারতো। তাই তো নিয়তির কাছে হার মেনে নিয়েছে।”

“বড় আপার সময় যদি আপনে থাকতেন তাইলে আমার বড় আপারে আর মরা লাগতো না। হয়তো বড় আপার মতো আমিও মরতাম কিন্তু আপনের লাইগা আমার বাচার নতুন আলো দেখতাছি।”

“তোমার মায়ের অবস্থা কেমন এখন?”

‘মা তো শুইনাই অজ্ঞান হয়ে গেছিল। তার কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরছে এহন আর কিছু কইতেছে না একদম চুপ হইয়া গেছে।”

“তোমার এখন তোমার মায়ের কাছে থাকা উচিত সাইমা। তাকে তোমার দরকার হয়তো তোমাকে দেখেই তোমার বড় আপার কথা ভুলে থাকতে পারবে।”

“আমি এহন কি করুম আপা?”

“কি করবা মানে কি পুরোনো ভুলে সব নতুন করে শুরু করবা।”

“চাইলেই কি সব ভোলা যায়?”

“না ভোলা যায় না তবে ভুলে থাকার চেষ্টা করতে হবে। তোমার এখনো অনেকটা পথ পারি দেওয়া বাকি সাইমা। তোমার মা বাবার জন্য হলেও সব ভুলে তাদের নিয়ে নতুনভাবে বাঁচতে হবে। দরকার হলে এই তিক্ত স্মৃতি ভোলার জন্য জায়গা পরিবর্তন করো। কিন্তু হ্যা তোমার জীবনে যা ঘটেছে সেটায় তোমার কোন দোষ নেই। কিন্তু তোমার দোষ না থাকলেও সাফার তোমাকেই করতে হবে।”

“হ আব্বায় কইছে আমরা এনে আর থাকুম না শহরে বা অন্য কোন জায়গায় চইলা যামু। হের লাইগাই আপনার কাছে আইছি।”

“নতুন জায়গায় গিয়ে নতুনভাবে সব শুরু করো তোমার জন্য অনেক শুভকামনা রইল।”

মেহবিনের কথায় সাইমার চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। ও বলল,,

“আমি কোনদিন ও বিয়ে করুম না আপা। আমার জীবনের সাথে কাউরে জড়াইতে পারুম না।

“আরে আরে তোমার বয়স কতো এখনি বিয়ের চিন্তাভাবনা করছো। এখনো অনেক সময় বাকি?

“আমি বিয়ে করলে তারে ঠকানো হইবো। তাই আমি বিয়া করুম না।

“ঠকানো কাকে বলে জানো যেটা তুমি নিজ ইচ্ছায় অন্যায় করো কিন্তু কাউকে না বলে লুকিয়ে করো ধোকা দাও যা তোমার করা উচিৎ না। তোমার সাথে যা হয়েছে তা খারাপ হয়েছে এখানে তোমার দোষ নেই।পৃথিবীতে সবার দৃষ্টিভঙ্গি একরকম নয়। আমি এটা বলবো না তুমি একেবারে তাকে না জানাও বরং তাকে জানাও। যদি সেরকম কাউকে পাও যে তোমার সবটা জেনে তোমাকে নিজের করতে চায় তবে তাকে বাঁধা দিও না। আর বিয়ে করাটা ফরজ। প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে বিয়ে না করে মারা গেলে তোমাকে এবং তোমার মা বাবা কে বিচার দিবসের দিন অবশ্যই জবাব দিতে হবে। তাই এই চিন্তা কে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল নতুন জায়গায় নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাও। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে ভালো কিছু হবে। তবে একটা কথা সবসময় মনে রেখো আল্লাহ দেখছেন সবাইকে তিনি তার বান্দাদের ছাড় দিলেও ছেড়ে দেন না কখনো। ভালো থেকো নিজের ও তোমার মা বাবার খেয়াল রেখো।”

“আমি কি আপনারে জরায় ধরতে পারি ডাক্তার আপা।”

মেহবিন হেঁসে মাথা নাড়ালো সাইমা মেহবিন কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো আর বলল,,

“আপনে অনেক ভালো আপা একদম আমার বোনের মতো আমারে বোঝাইলেন। আপনে যা যা করলেন আমাগো লাইগা এই জন্য আমরা সারাজীবন ঋনি থাকমু। আপনার অনেক ভালো হোক আপা।”

মেহবিন সাইমাকে শান্ত করলো আর বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিল। মেহবিন একদম একা এখন মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ওর এই একাকিত্ব কবে ঘুঁচবে এটা ও নিজেও জানে না। মাঝে মাঝে ওর একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় ওর জীবনটা এমন কেন? কিন্তু কোথাও থেকে কোন উত্তর আসে না। ভাবতে ভাবতে তখনি মেহবিনের ফোনটা বেজে উঠলো। দেখলো চেয়ারম্যান সাহেব এর ফোন ও ফোন উঠিয়ে সালাম দিল,,

“আসসালামু আলাইকুম!”

ওপাশ থেকে মিশু উত্তেজিত কন্ঠে সালামের জবাব দিল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম! বন্ধু! বন্ধু!

“মিশুমনি কি হয়েছে?”

“বাবার না কি যেন হয়েছে খুব জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে তুমি আসো না প্লিজ।”

“কখন থেকে? আর বাড়ির সবাই কোথায়?”

মিশু কান্না করতে লাগলো আর বলতে লাগলো,,

“সবাই তো নিজেদের ঘরে। আমি বাবার রুমে আসতেই দেখলাম বাবা জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। আমি ডাকলাম বাবা কথা বলতে চাইলো কিন্তু কথা বলতে পারলো না। বাড়ি তো বাজপাখিও নেই আমি কি করবো? পরে বাবার ফোন দেখতে পেয়েই তোমায় ফোন দিলাম।”

“মিশুমনি কান্না করে না। আমি এখনই আসছি তুমি বাড়ির বাকি সবাইকে ডাকো।”

মেহবিন যেভাবে ছিল সেভাবেই দৌড়ে বেরিয়ে গেল।বাড়ি থেকে এক দৌড়ে সে সোজা চেয়ারম্যান বাড়িতে গিয়েছে এমনিতেও পাচ দশ মিনিটের পথ ছিল ও দৌড়েই সে বাড়িতে পৌঁছে গেল। চেয়ারম্যান সাহেব এর ঘরের সামনে যেতেই ও শুনতে পেল,,

“আমি ঠিক সময় না আসলে কি হতো তুমি বুঝতে পারছো ভাইয়া? মিশু তো কিছু বুঝতেই পারছিল না। ইনহেলার টা ঠিক সময়ে না পেলে কি হতো বলো তো। তোমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা সেটা তো তুমি জানো ওটা কাছাকাছি রাখতে পারো না সবসময়।”

তখন শেখ শাহনাওয়াজ আস্তে আস্তে বললেন,,

“আরে এখন ঠিক আছি তো। আর কতো বলবি আমজাদ? এতোদিন পর বাড়িতে এলি একটু ভালো ভালো কথা বল।”

সব ঠিক আছে দেখে মেহবিন কথা না বলে পেছনে ঘুরতে নিল তখন আরবাজ বলল,,

“আপনি না বাড়ি চলে গেলেন। আবার এখন এ বাড়িতে মিশু ঠিক আছে তো?”

আরবাজের কথায় মেহবিন অপ্রস্তুত হয়ে গেল। ও বলল,,

“আসলে মিশুমনি ফোন দিয়েছিল চেয়ারম্যান সাহেব এর নাকি শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। ও কি করবে বুঝতে পারছিলো না। তাই আমাকে ফোন দিয়েছিল এখানে এসে বুঝলাম আমার কোন দরকারই নেই তাই চলে যাচ্ছিলাম।”

মেহবিন আর আরবাজের কথা শুনে তখন শেখ বাড়ির সকলে শেখ শাহনাওয়াজ এর ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। মিশুও বেরিয়ে এলো আরবাজ কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগে মিশু বলল,,

“ও বন্ধু তুমি এসেছো? জানো বাবা এখন ঠিক হয়ে গেছে কাকা ইনহেলার দিয়ে দিয়েছে। আমি তো বুঝতেই পারছিলাম না কি করবো । কাকা বলল কাকা না এলে নাকি কি জানি হতো?”

তখন শেখ আমজাদ বলল,,

“ও কে?”

“ও হলো আমার বন্ধু কাকা। আমি ওকে ফোন দিয়েছিলাম আসার জন্য।

মেহবিন বলল,,

“আমি ডক্টর মেহবিন।”

“ওহ আচ্ছা আমি ডক্টর আমজাদ। মিশু তাহলে একজন ডাক্তারকেই ফোন করেছিল।”

তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“মিশু তোমার বন্ধুকে একটু পাঠিয়ে দাও তো।”

তার কথা শুনে মেহবিন ভেতরে ঢুকলো পেছনে আরবাজ আর মিশু ও ঢুকলো।আরবাজ এতোক্ষণ বাড়ি ছিল না। মেহবিন বের হওয়ার পর কিছু ইম্পোর্টেন্ট কাজ পরতেই চলে গিয়েছিল তাই ও জানেনা কি হয়েছিল। মেহবিন ঢুকতেই দেখল শেখ শাহনাওয়াজ আধশোয়া হয়ে বসে আছেন। মেহবিন জিজ্ঞেস করল,,

“এখন কেমন লাগছে চেয়ারম্যান সাহেব?”

শেখ শাহনাওয়াজ মুচকি হেসে বললেন,,

“ভালো।”

“কিছু বলবেন? না মানে সন্ধ্যে হয়ে আসছে তো বাড়ি যেতে হবে।”

“আমার জন্য এতো তাড়াতাড়ি এসেছেন দেখে ভালো লাগলো হয়তো দৌড়ে এসেছেন ।পাঁচ মিনিট বসে জিরিয়ে নিন পানি খান। তাছাড়া এখানে আপনার লাভ হবে তো,

“রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন রোগীকে দেখতে যায়, সে জান্নাতের ফলমূলে অবস্থান করতে থাকে।” জিজ্ঞেস করা হলো, জান্নাতের ফলমূলে অবস্থান করা কি? তিনি বললেন, “এর ফলমূল সংগ্রহ করা।”
(মুসলিম ২৫৬৮)

মেহবিন কিছু বললো না চুপ করে বসে রইল। আরবাজ শেখ শাহনাওয়াজ এর ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলো। তার হুট করেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল তখনই মিশু আসে। মেহবিন কে ফোন করে সবাইকে ডাকে তখনই শেখ আমজাদ বাড়িতে ঢোকেন মিশুর কথা শুনে দৌড়ে এসে শেখ শাহনাওয়াজ কে ইনহেলার দেন তারপরে উনি কিছুটা সুস্থ বোধ করেন। পাঁচ মিনিট পর মেহবিন উঠেই বলল,,

“এবার আমি বাড়ি গেলাম চেয়ারম্যান সাহেব। আমি ভেবেছিলাম আমাকে হয়তো দরকার পরবে তাই তাড়াতাড়ি এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম আমাকে আপনার প্রয়োজন নেই। এসেছিলাম কিন্তু প্রয়োজনের খাতিরেই তাই প্রয়োজন যখন নেই তাহলে সেখানে থাকার কোন মানে হয় না। আসছি নিজের খেয়াল রাখবেন।”

” দুঃখিত!”

মেহবিন শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“কেন?”

“কিছু না আপনি বাড়ি যান সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়!”

মেহবিন কোন কথা না বলে চলে গেল। শেখ শাহনাওয়াজ ওদিকে তাকিয়ে রইলেন। আরবাজ ও আর সুযোগ পেল না কিছু বলতে। দরজা দিয়ে বেরুতেই মুখরকে দেখতে পেল। ওদের থানায় রেখেই কাগজকলম এর কাজ শেষ করে এসেছে এখন শামীম অসুস্থ তাই জিজ্ঞাসাবাদ কাল করবে। মেহবিন এগিয়ে গেল মুখরের দিকে। মুখর হেঁসে মেহবিনের হাতে কতোগুলো ফল গুঁজে দিয়ে বলল,,

“আজ কিন্তু দেখা হয়েছিল কিন্তু ফুল দেওয়ার সুযোগ হয়ে উঠেনি। তোমার বাড়ির দিকে গিয়েছিলাম কিন্তু তুমি বাড়ি ছিলেনা। তাই এগুলো সাথে নিয়েই আসছিলাম। কে জানতো ফুলগুলো তার মালিকের কাছে ঠিক পৌঁছে যাবে তাই তো না পরে গিয়ে আমার পকেটেই অবস্থান করছিল।”

“আমরা কোথায় অবস্থান করছি এটা ভেবেও আপনার ফুল দেওয়া উচিৎ নয় কি মিস্টার মুখর শাহরিয়ার?”

“আমার ওতো ভাবাভাবির সময় নেই। আমি শুধু আমার কথা রাখবো।”

“আপনি এমন কেন?”

“কেমন?”

“একটা পাগল! যাই হোক এখন এখানে একসাথে দাঁড়িয়ে কথা বলাটা সেফ নয়। আসছি আল্লাহ হাফেজ।”

“ওকে আল্লাহ হাফেজ।ফি আমানিল্লাহ।”

“ইনশাআল্লাহ।”

মেহবিন চলে গেল মুখর ও বাড়িতে ঢুকলো। তারপর ওখানে গিয়ে আরবাজের থেকে জানতে পারলো শেখ শাহনাওয়াজ অসুস্থ হয়ে পরেছিল তাই মেহবিন এসেছিল। মুখর আর আরবাজ দুজনে ফ্রেশ হয়ে নিল। নিচে আসতেই মুখর দেখলো আরবাজের মামা আর কাকা ওর দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে। মুখর এ দৃষ্টির মানে বুঝলো না। হুট করে আরিফা জামান এর ভাই আরিফ জামান বলল,,

“তাহলে তুমিই আমাদের থানার নতুন ওসি?”

মুখর মুচকি হেসে বলল,,

“জি আঙ্কেল।”

“আসলে আমি বাড়ি থাকলেও কাজ নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকতাম। যে তোমার সাথে পরিচয় হয়ে উঠতে পারে নি। আর তাছাড়া তেমন দেখাও হয় নি।”

“সমস্যা নেই আঙ্কেল। যে মানুষ কাজ কে ভালোবাসে তার কাছে তার কাজটাই সবার উর্ধ্বে।”

মুখরের কথা শুনে আরিফ জামান হাসলো আর বলল,,

“তা যা বলেছো। আমি হলাম আরিফ জামান আরবাজের মায়ের ভাই মানে আরবাজের মামা।”

“ওহ আচ্ছা আপনি কি কাজ করেন মামা?”

“ছোট খাটো একটা ব্যবসা করি।”

“ওহ আচ্ছা!”

তখন শেখ আমজাদ বললেন,,

“আমাকে বোধহয় একবারও দেখো নি?”

“জি আঙ্কেল তবে আরবাজের থেকে আপনার ব্যাপারে শুনেছি। আপনি তো অনেক বড় একটা দায়িত্ব নিয়েছেন। পুরো একটা হাসপাতাল আপনি চালান।”

মুখরের কথায় লোকটা হেঁসে বললেন,,

“এগুলো সব ভাইয়ার কিন্তু ভাইয়া চেয়ারম্যান পদে আসীন হয়েছে দেখে আমাকেই সব করতে হচ্ছে আপাতত। কতোবার ভাইয়াকে বললাম এসবের দরকার নেই আমি ডাক্তার এতেই চলবে তুমি তোমাদের হাসপাতাল দেখো কিন্তু কে শোনে কার কথা।”

তখন শেখ শাহনাওয়াজ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,,

“কখনো কখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক সিদ্ধান্ত গ্ৰহন করতে হয় বুঝলি।”

“তুমি আবার নিচে আসতে গেলে কেন ভাইয়া?”

“আমি এখন সুস্থ এখন বেশি কথা না।”

“আচ্ছা তুমি বসো। শুনলাম তুমি নাকি ঐ মেহবিন মেয়েটাকে ঐ বাড়িতে থাকতে দিয়েছো? আবার শুনলাম নুপুরকে নাকি মিশু বাদ দিয়ে ওকে রেখেছে।”

“হুম মেয়েটার যোগ্যতায় সে সবকিছু পেয়েছে। যাই হোক এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে চাচ্ছি না।”

“মেয়েটার যোগ্যতা তো আছেই না হলে সরকারী হাসপাতালের ডক্টর বাবুলের পোল খুলতে পারে। আবার আজকের বিষয়েও শুনলাম শামীমের পুরো ঠিকুচিগোষ্টি বের করেছে আবার কয়েকদিন আগে মেরেছেও।”

শেখ শাহনাওয়াজ হেঁসে বললেন,,

“সে হচ্ছে জলন্ত আগুনের এক অগ্নিকন্যা। তাকে দূর থেকে উজ্জ্বল মনে হলেও কাছ থেকে মারাত্বক। তাকে দূর থেকে দেখাই উত্তম কাছে গেলে ঝলসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”

তার কথায় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। আরবাজ আর মুখর হাসলো। তখন মিশু বলল,,

“আমার বন্ধু অগ্নিকন্যা বাবা?”

শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“হুম শুধু খারাপ মানুষের সাথে। এমনিতে তো তোমার বন্ধু একটা ফুল যার সুবাসে সুবাসিত করে অন্যদের কে।”

“ওহ্ আচ্ছা। তাহলে তো আমার বন্ধু ফুল এরপর থেকে আমি আমার বন্ধুকে ফুল বলে সম্বোধন করবো।

বলেই মিশু আরবাজ এর সামনে গিয়ে বলল,,

“চকলেট দাও বাজপাখি তুমি আজ কাজে বাইরে গিয়েছিলে। আমার জন্য চকলেট আনার কথা ছিল।”

আরবাজ হেঁসে বলল,,

“আমি আনিনি মনে ছিল না।

মিশু আরবাজের চুল ধরে ঘুরাতে লাগল আর বলল,,

“কেন আনোনি তুমি ? তুমি জানতে না আমি অপেক্ষা করবো। পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি প্রতিদিন একটা করে আমার জন্য চকলেট আনে তুমি কেন আনলে না‌।

“আরে ভাই ছাড় আমি এনেছি এমনিই মজা করছিলাম।”

কথাটা শুনে মিশু হাসলো আর ছেড়ে দিল তখন আরবাজ বলল,,

“পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি কি তোকে আজ চকলেট দিয়েছে?”

“না ”

“তাহলে শুধু আমাকে মারলি কেন?”

“সে তো আমায় প্রতিদিন খাবারের পরে একটা করে চকলেট দেয়। সেই জন্যই তো এখন কিছু বলি নি।”

“ওহ আচ্ছা তোর চকলেট আমার টেবিলের ওপর।”

“আচ্ছা!”

মিশু ওপরে চলে গেল। তখন জিনিয়া, মুনিয়া আর আরিফ জামান এর মেয়ে নিসা বলল,,

“ভাইয়া তুমি রোজ রোজ শুধু মিশু আপুর জন্য চকলেট আনো। এখানে তো আমরাও আরো চারজন থাকি তাই না। ”

“তোরা আর ও কি এক হলি নাকি । তোরা বুঝদার আর ও অবুঝ।”

“এখন তোমার চকলেট খাওয়ার জন্য পাগল হতে হবে নাকি আরবাজ ভাইয়া।”

নূপুরের কথা শুনে আরবাজ আর মুখর রেগে গেল। আরবাজ রেগে বলল,,

“কাল কি বলেছিলাম আমি ঐ ওয়ার্ডটা !!”

আরবাজের কথায় সবাই ভয় পেল নুপুর বলল,,

“সরি সরি মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। আমি সত্যি এটা বলতে চাই নি।”

“এরপরে যদি আমি আর একবার শুনি নূপুর তাহলে সেটাই হবে তোর এই বাড়ির শেষ দিন। আর জিনিয়া মুনিয়া নিসা তোদের জন্যেও চকলেট এনেছি ওগুলো ফ্রিজে রেখে দিয়েছি গিয়ে দ্যাখ আছে।”

তখন জিনিয়া বলল,,

“এখন না আমরা বরং পরে নিয়ে নেব।”

আরবাজ আর কিছু বললো না। ও মুখর কে নিয়ে চলে গেল।

_______________

মেহবিন বাড়ি এসেই দেখতে পেল ওর কেচিগেইট আটকানো এটা দেখে অবাক হলেও বারান্দায় এসে বুঝলো আরবাজ এসেছিল কারন বারান্দায় চকলেট রাখা। সেই কেচিগেইট আটকে রেখে গেছে হয়তো।
মাগরিবের আজান দিচ্ছে মুয়াজ্জিন সাহেব। মেহবিন আজানের জবাব দিয়ে ওযু করে মাগরিবের নামাজ আদায় করে নিল‌। সবশেষে জায়নামাজেই শুয়ে রইলো মেহবিন। তার কিছু ভালো লাগছে একা একা সব করে হাঁপিয়ে গেছে সে । জায়নামাজেই চোখ বন্ধ করে রইল কিছুক্ষণ পর কারো আওয়াজ শুনতে পেল মেহবিন ।

“ঐ ডাক্তার বাইরে আসো তো একটু?”

মেহবিন বাইরে বেরিয়ে দেখলো তাজেল আর একজন মহিলা দাঁড়িয়ে। একে সে চেনে তাজেলের দাদি সে। মেহবিন বাইরে এলে তাজেল বলল,,

‘আইজ দাদি ভিজাইনা পিঠা বানাইছে তাই তোমার লাইগা নিয়া আইছি।”

মেহবিন মুচকি হেসে বাটিটা নিল আর বলল,,

‘ধন্যবাদ নেত্রী! তা তুমি খেয়েছো তো?

“হ খাইছি মজা হইছে অনেক। তাই তো তোমার লাইগা নিয়া আইলাম তুমি এর আগে এই ভিজাইনা পিঠা খাইছো?”

‘খেয়েছিলাম অনেক ছোট বেলায় তারপর আর খাইনি।”

“ওহ আইচ্ছা তোমায় মায় বোধহয় পিঠা বানাইতে পারে না।”

তাজেলের এই প্রশ্নে মেহবিন একটু থমকে গেল। কিন্তু এরপর একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,,

‘আমার মা আমার ছোটবেলাতেই মারা গেছে নেত্রী।”

মেহবিনের কথায় তাজেল কিছু বললো না। তাজেলের দাদি বলল,,

‘মন খারাপ কইরো না কারো মা বাপ সারাজীবন বাইচা থাকে না। সবারই একদিন আল্লাহর কাছে ফেরত যাওয়া লাগবো মানুষ মরনশীল। তুমি পিঠা খায়া নিও। আইজকা আসি‌।”

“আচ্ছা সাবধানে যাইয়েন দাদি।”

তখন তাজেল বলল,,

‘আমার দাদি তোমার দাদি লাগে ডাক্তার?

‘কেন নেত্রী তোমার সমস্যা নাকি আমি যদি তোমার দাদিরে দাদি ডাকি।”

“না না কোন সমস্যা নাই‌। আমার দাদি মানে তোমার দাদি। আমার নওশি আপা মানে তুমি নওশি আপার আপা।”

তাজেলের কথা শুনে মেহবিন হাসলো। মেহবিন তাজেলের গাল ধরে বলল,,

‘তুমিও না নেত্রী যাও এখন বাড়ি যাও গিয়ে পরতে বসো। কাল যদি পরা না হয় তাহলে কিন্তু আমি স্কেল দিয়ে বাড়ি মারবো।”

তাজেল হেঁসে বলল,,

“পারবা না মারতে ডাক্তার। আমি যদি একটা দাঁত কেলানি দিই তুমি আর মারতেই পারবা না আমারে।আমার হাঁসি যে সুন্দর তুমি জানো।”

তাজেলের কথায় মেহবিন কখনোই না হেঁসে পারে না। তাই হেঁসে বলল,,

“না মারতে পারলাম কিন্তু কান ধরে দাঁড় করিয়ে তো রাখতে পারবো।”

“আমার কান অনেক বিষ (ব্যাথা) ডাক্তার। কানে হাত দেওয়া যাইবো না।”

“নেত্রী তুমিও না এতো বাহানা করছো কিন্তু বলতে পারছো না ‘ডাক্তার কাল আমি পরে আসবো। তুমি মারার বা কান ধরে দাঁড় করানোর সুযোগই পাবে না। তা না করে তুমি কিসব করছো।”

“আরে ডাক্তার তোমার লগে মজা নিলাম। আমার পড়া শেষ। আইজ তো ছুটি আছিল আমি পরা শেষ কইরা রাখছি।”

‘তুমি আমার সাথে মজা নিলা ঠিক আছে। কাল শুধু একটু ভুল হোক তারপর দেখাবো মজা কাকে বলে।”

“তুমি কিছুই করতে পারবা না। যহন দেখুম হইতেছে না তহনি ব্যাগ নিয়া পলামু।”

“তবে রে!”

“দাদি তাড়াতাড়ি নও ডাক্তাররে দিয়া বিশ্বাস নাই মারতেও পারে।”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

“হ্যা মারতেও পারি। দাদি নেত্রীকে নিয়ে সাবধানে যাবেন।”

তাজেল আর ওর দাদি চলে গেলো। মেহবিন ঘরে এসে ঢাকনা উঠালো চারটে পিঠা দিয়েছে। মেহবিন মুচকি হেসে একটা পিঠা খেল। আর বলল,,

“যাদের মা নেই তারা অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হয়।”

________________

‘যাদের চোখে যখন প্রচুর বর্ষন চলে তখন সবাই দেখে। কিন্তু যাদের চোখে বর্ষন হয় না অথচ বুকে অসহ্য যন্ত্রনা হয় কিন্তু মুখে থাকে স্নিগ্ধ হাঁসি তখন বুকের ঐ অসহ্য যন্ত্রনাটা কারো চোখে পড়ে না।”

নোটিফিকেশন এর আওয়াজ পেয়ে ফোনটা চেক করতেই মুখরের সামনে কাব্যের বিহঙ্গিনী পেজের নতুন পোস্টটা দেখা গেল। মুখর পোস্ট টা দেখেই পুরো থমকে গেল।

~চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here