স্নিগ্ধ_প্রিয়া #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_১৮

0
342

#স্নিগ্ধ_প্রিয়া
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_১৮

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

সময়ের প্রবাহমান গতিতে বয়ে গেছে কিছুটা সময়। কেটে গেছে প্রায় সপ্তাহখানেক। ভালোই শীত পড়তে শুরু করেছে চীনের প্রাকৃতিতে। ঘন কুয়াশার আবরনে যেন ছেয়ে গেছে চারদিকটা। আবার মাঝে মাঝে সূর্যের দেখা মিলে। হয়তো কয়েকদিনে তুষারের বর্ষনও শুরু হয়ে যাবে। পূর্বাশা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তুষার বর্ষনের। বাংলাদেশে সাধারণত তুষারপাত দেখা যায় না। তাই প্রথমবারের মতো তুষারপাত দেখার জন্য মেয়েটার ভিতরে যেন একটু বেশিই উত্তেজনা কাজ করছে। সর্বক্ষন যেন জানালার বাইরে তুষার দেখার জন্য মুখিয়ে থাকে সে। এ কয়দিনে অবশ্য পূর্বাশার সাথে তেমন একটা দেখা হয়নি জায়ানের। দেখা হয়নি বললে ভুল হবে পূর্বাশা দেখা দেয়নি তাকে। যে পথে দেখেছে জায়ান দাঁড়িয়ে আছে সে পথে আর সে যায়নি। যে স্থানে দেখেছে জায়ান আছে সে স্থান এড়িয়ে চলেছে মেয়েটা।

এদিকে টানা এক সপ্তাহ পূর্বাশাকে না দেখে জায়ানের অবস্থাও নাজুক হয়ে পড়েছে। হৃদয়ে উথাল পাতাল ঝড় উঠেছে যেন তার। এই কয়দিনেই যেন মনে হচ্ছে কতশত বছর সে দেখে না পূর্বাশাকে। মেয়েটার মধ্যে কি আছে জানা নেই তার সে শুধু জানে পূর্বাশা নামক মেয়েটাকে না দেখে সে থাকতে পারছে না সে আর। মেয়েটিকে ছাড়া তার ভালো লাগছে না, শান্তি পাচ্ছে না কোথাও। মনে একটু শান্তির জন্য হলেও পূর্বাশাকে একটা পলক দেখা তাই তার। জায়ানের মস্তিষ্ক তাকে বারবার সাবধান করছে পূর্বাশার থেকে, বলছে তুই দূরে থাক পূর্বাশার থেকে। বহু বছর আগের সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করিস না তুই। কিন্তু মন মানতে চাইছে না কোনো ভাবেই। সে পূর্বাশাকে চাইছে। ভীষনভাবে চাইছে। পূর্বাশাহীনা জায়ানের হৃদয়টা হাহাকার জুড়েছে যেন। ভালো হোক খারাপ হোক অন্তত দুই চারটা কটু বাক্য শোনাতে হলেও তার পূর্বাশাকে চাই। তৃষামটাও সেদিনের পর আর কথা বলেনি তার সাথে। যদিও দু’জনের কাজকর্ম থাকা খাওয়া সব আগের মতোই আছে শুধু দুজন দুজনের সাথে কথাটাই বন্ধ করেছে।জায়ানও নিজের থেকে আর কথা বলেনি। সেও ইগো দেখিয়ে কথা না বলেই থেকেছে। কিন্তু এখন? আর যে পারছে না সে। মন আর মস্তিষ্কের যুদ্ধে জিতে গেল মন। জায়ান আর পারলো না পূর্বাশাকে না দেখে তার থেকে দূরে থাকতে। তাই নিজের ক্লাস রেখে জায়ান গিয়ে দাঁড়ালো পূর্বাশার ক্লাসের সম্মুখে। যদি একটা বার দেখা পাওয়া যায় মেয়েটার।

*****

ক্ষানিকটা সময় গড়ালো। পূর্বাশা প্রতিদিনের মতো যথাসময়ে বের হলো ক্লাস থেকে। ক্লাসরুমের দরজার কাছে আসতেই সে দেখা পেল জায়ানের। হৃদয় ভারী হলো পূর্বাশার। মনে পড়লো সেদিনের ঘটনাগুলো, সেদিন জায়ানের বলা প্রতিটা তিক্ত বাক্য। তার চরিত্র নিয়ে বলা কথাগুলো। পূর্বাশা উল্টো ঘুরলো কিন্তু তাতে লাভ হলো না কোনো। এই তিন তলা থেকে নিচে নামার ঐ একটা পথই খোলা রয়েছে তার জন্য। ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো পূর্বাশা। জায়ানের সম্মুখ থেকেই যাবে সে, তাতে যা হওয়ার হোক। সোজা সম্মুখের দিকে দৃষ্টি হাঁটা ধরলো পূর্বাশা। মেয়েটাকে আসতে দেখেই একটু নড়েচড়ে দাঁড়ালো জায়ান। কিন্তু পূর্বাশাকে পাত্তা দিতে দেখা গেল না তাকে। এমনকি তার দিকে একবার তাকালোও না, উল্টো তার পাশ কাটিয়ে চলে গেল। হৃদয়ের ঝড় যেন বাড়লো জায়ানের। কপালে ভাঁজ পড়লো গুটি কয়েক। মেয়েটা কি তাকে এড়িয়ে গেল? এত বড় সাহস এই মেয়ের? হাত উঠালো জায়ান ভাবলো পিছন থেকে ডাক দিবে পূর্বাশাকে কিন্তু নিজের ইগোর কাছে হেরে গিয়ে আর পিছু ডাকলো না মেয়েটিকে।

****

সর্বদা চলমান সময়ের কাঁটা টিক টিক করে জানান দিচ্ছে দুপুরের সময় হয়ে এসেছে। আকাশে অবস্থানরত সূর্যটাও নাচতে নাচতে চলে এসেছে মাথার উপরে। দুপুরের খাওয়ার সময় হয়েছে। সবাই ভীর জমিয়েছে ক্যান্টিনে। জায়ান, চ্যাং আর তৃষাম খাবার নিয়ে বসেছে এক টেবিলে। চ্যাং আর তৃষাম খাওয়াও শুরু করে দিয়েছে ইতমধ্যে। শুধু খাবারের দিকে মনযোগ নেই জায়ানের। সে ঘাড় ঘুরিয়ে শুধ এদিক ওদিক দেখছে। ক্যান্টিনের আনাচে কানাচে কোথাও দেখা নেই পূর্বাশার। তবে কি এখনও আসেনি মেয়েটা? কারো কাছে যে জিজ্ঞেস করবে তাও পারছে না। জায়ানকে খেতে না দেখে তার পানে ভ্রু কুঁচকে তাকালো চ্যাং, বলল – খাবার সামনে রেখে এদিক ওদিক ঝাক মারছিস কেন? সমস্যা কি?

জায়ান যেন বিরক্ত হলো চ্যাং এর কথায়। ক্যান্টিনে ঢোকার দরজাটার পানে দৃষ্টি জারি রেখেই সে বলল – তোরা খা। আমার খাওয়ার সময় হলে আমি খাব।

চ্যাং আর কথা বাড়ালো না। নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিল সে। জায়ানের তাকিয়ে রইলো দরজার পানি। কিঞ্চিৎ সময় পরই ক্যান্টিনের দরজা গলিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো পূর্বাশা, সেনজেই সুজা আর জেফি। এবার যেন স্বস্থি পেল জায়ান। যাক মেয়েটা এসেছে অবশেষে। একটু নড়েচড়ে বসলো সে। ভাবলো তৃষাম হয়তো তাদের কাছে ডাকবে পূর্বাশাকে কিন্তু সে ডাকলো না। নিরাশ হলো জায়ান। হয়তো সেদিনের ঝামেলার রেশ ধরেই তাদের কাছে আজ পূর্বাশাকে ডাকলো না তৃষাম। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল জায়ান। যাক না ডাকুক অন্তত মেয়েটা তার আশেপাশে তো আছে, সে তাকালেই মেয়েটাকে অন্তত চোখের দেখা হলেও দেখতে তো পারবে সেই অনেক। কিন্তু সেই অনেকটা বোধহয় আর কপালে সইলো না জায়ানের। তার এই প্রশান্তির মধ্যে আ’গু’ন লাগতে ক্যান্টিনে উপস্থিত হলো ইয়ান। পূর্বাশাকে দেখেই তার দিকে এগিয়ে গেল সে। বসে পড়লো পাশে, হাসিমুখে শুধালো – কি করছো? খাচ্ছো নাকি?

পূর্বাশা বিরক্ত হলো। তার ভীষণভাবে বলতে ইচ্ছে হলো না খাবার সামনে নিয়ে হা-ডু-ডু খেলছি। কিন্তু সে বলতে পারলো না তেমন কিছুই। নিতান্তই চাপা এবং ভদ্র স্বভাবের মেয়ে সে। নিজের ভদ্রতা বজায় রাখতে সে সৌজন্যসূচক হাসলো একটু, বলল – জ্বী।

– আমরা বসি তোমাদের টেবিলে।

পূর্বাশার বিরক্তি বাড়লো। ইতমধ্যে বসে তো পড়েছেই। এখন আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে? সে যদি এখন না বলে দেয় তবে কি চেয়ার ছেড়ে উঠে যাবে নাকি এ? ভিতরে ভিতরে বিরক্ত হলেও এবারও মুখে প্রকাশ করলো না মেয়েটা, মুখে সে নম্র কন্ঠে বলল – আচ্ছা।

এতক্ষন স্বস্থি পাওয়া হৃদয়টা এবার যেন খেই হারিয়ে বসলো জায়ানের। ক্রোধে দপ দপ করে জ্বলে উঠলো মাথাটা। তার দিকে মেয়েটা ফিরে পর্যন্ত তাকায় না অথচ ঐ ছেলেটাকে কি সুন্দর পাশে বসিয়ে খাচ্ছে। টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে। কিছু একটা বলতে উদ্যত হলো পূর্বাশাকে। কিন্তু পরক্ষনেই সেদিনের কথা মনে পড়তে থেমে গেল সে। সেদিন যে ঝামেলা করেছিল সেই আগুনেই এখনও জ্বলছে এর মধ্যে যদি আবার ঝামেলা করে তাহলে তো রক্ষেই থাকবে না। তাই মনের আগুন মনের ভিতরে চেপেই বসে রইলো জায়ান। চোখের সম্মুখে দাঁতে দাঁত চেপে দেখতে রইলো পূর্বাশাকে ইয়ান নাম ঐ বদ ছেলেটার সাথে।

_____________________________________

সন্ধ্যা নেমেছে ধরনীতে। চারদিকে অন্ধকারের হালকা আবরন পড়েছে কেবল। পাখিরা সারাদিন নিজেদের খাবারের খোঁজকে অব্যহতি জানিয়ে ঘরে ফেরার তাড়া লাগিয়েছে। ঠিক এমন সময়ে প্রবল ঝংকার তুলে বেজে উঠলো তৃষামের মোবাইলটা। এই সন্ধ্যার দিকে আবার কে কল করেছে? ভ্রু কুঁচকে এলো তৃষামের। কলটা ধরে লাউড স্পিকারে রেখেই কথা শুরু করলো সে। জায়ান ছাড়া রুমের কেউ বাংলা না বোঝায় তৃষামের সুবিধাই হয়েছে। যখন তখন লাউড স্পিকারে বাংলাদেশের মানুষের সাথে কথা বলা যায়। আর এই সময় জায়ানও নেই রুমে। তাই অতটা না ভেবেই সে কলটা লাউড স্পিকারে দিয়েছে। কলটা ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো এক পুরুষালী কন্ঠস্বর। কিছুটা উদগ্রীব কন্ঠে সে বলল – পূর্বা আপু কল ধরছে না কেন তৃষাম ভাইয়া।

– হয়তো ব্যস্ত আছে তাই।

– কিসের ব্যস্ত? আমি কল দিলেই শুধু ধরে না এ ছাড়া সবার কল ধরে। আসলে পূর্বা আপু একটুও ভালোবাসে না আমাকে।

তৃষাম একটু মজা নিতে চাইলো। এই পলাশটাকে ক্ষ্যাপাতে তার বেশ লাগে। কিছুটা সিরিয়াস ভঙ্গিতে সে বলল – আসলেই পলাশ পূর্বা তোকে একটুও ভালোবাসে না। তোকে তো মনেই করে না একদম।

তৃষামের কথার মধ্যে কক্ষে প্রবেশ করলো জায়ান। আগে বা পরে কি বলেছে বা কি হয়েছে কিছু না শুনলেও এটুকু তার কানে ভালোই পৌঁছেছে “পূর্বা তোকে একটুও ভালোবাসে না।” কাকে ভালোবাসে না পূর্বাশা? কলিজাটা কেঁপে উঠলো জায়ানের। তবে কি পূর্বাশার বয়ফ্রেন্ড আছে কোনো। বুকের মধ্যে যেন নিমেষেই হাহাকার শুরু হয়ে গেল তার। হারানোর ভয়ে যেন জর্জরিত হয়ে পড়লো মুহুর্তে। তার মুখ দেখবে না কিংবা যার থেকে দূরে যাবে বলে তার এত কিছু তাকে হারানোর ভয়ে উতলা হয়ে পড়েছে এখন সে। যেভাবে কক্ষে প্রবেশ করেছিল সেভাবেই আবার বেরিয়ে গেলো জায়ান। ব্যস্ত পায়ে চলে এলো পূর্বাশার হোস্টেলের সম্মুখে। কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে পূর্বাশার সাথে দেখা করবে কিভাবে? দেখা না করলে মেয়েটার সাথে একটু কথা না বলতে পারলে আজ আর শান্তিও পাবে না সে। পকেট হাতরে নিজের মোবাইলটা বের করলো জায়ান। পূর্বাশাকে কল করতে নিয়েও আটকে গেল সে, এই মুহূর্তে কল করতে কেমন যেন ইতস্তত লাগছে তার। কিঞ্চিৎ সময় নিল জায়ান। ক্রমেই যেন অস্থির হয়ে পড়ছে তার ভিতরট। ধুরো ইগো আর ইতস্ততবোধ চুলোয় যাক। জায়ান কল লাগালো পূর্বাশার নাম্বারে। জায়ানের নাম্বারটা পূর্বাশার মোবাইলে সেইভ করা ছিল না। তাই সে চিনতেও পারেনি। কলটা ধরলো পূর্বাশা।‌সালাম দেওয়ার আগেই ওপাশ থেকে শোনা গেল জায়ানের কন্ঠস্বর। বেশ ইতস্তত কন্ঠে সে বলল – একটু বাইরে আসবেন?

জায়ানের কন্ঠস্বর চিনতে তেমন একটা অসুবিধা হলো না পূর্বাশার। চমকালো সে। এই লোক তাকে কল দিয়েছে কেন? আবার কোনো অপমান করার উদ্দেশ্য আছে নাকি এর? থাকতেও পারে। ভারী হলো পূর্বাশার কন্ঠস্বর। ভারী কন্ঠেই বলল – কেন?

– একটু প্রয়োজন ছিল

পূর্বাশা একবার ভাবলো যাবে না। পর মুহুর্তে আবার ভাবলো হয়তো জরুরী কিছু বলার আছে নয়তো এভাবে কল করে এই সময়ে তো এই ছেলের তাকে ডাকার কথা নয়। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল পূর্বাশা, বলল – আসছি।

ক্ষানিক সময়ের মধ্যেই পূর্বাশা বাইরে এলো। জায়ান তাকে হোস্টেল থেকে বের হতে দেখেই এগিয়ে গেল তার দিকে। শান্ত কন্ঠেই শুধালো – কেমন আছেন?

– জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?

জায়ান ভালো খারাপ কিছুই বলল না। সরাসরিই প্রশ্ন করলো – ইয়ানের সাথে আপনার এত কি?

পূর্বাশার দৃষ্টি তীক্ষ্ম হলো। এই লোক আবার এইসব কথা বলতে তাকে এখানে ডেকে এনেছে? মেয়েটা শক্ত কন্ঠেই বলল – সেই কইফিয়ত আমি আপনাকে দেব না।

দাঁতে দাঁত চাপলো জায়ান, বলল – তাহলে কাকে দিবে?

পূর্বাশা শক্ত চোখে তাকালো জায়ানের পানে। এতকিছুর পরও এই লোক আবার এসেছে তার সাথে রাগ দেখাতে? এর কথা শুনে এখানে আসাটাই তার ভুল। পূর্বাশা পিছন ঘুরলো। হাঁটা দিল হোস্টেলের পানে, রুক্ষ কন্ঠে বলল – আসছি আমি।

জায়ানও ছুট লাগালো পূর্বাশার পিছু পিছু। তাকে থামানোর জন্য পিছন থেকে হাত টেনে ধরলো মেয়েটার। হাতে স্পর্শ পেতেই পূর্বাশা পিছন ঘুরে তাকালো। ঠাস করে একটা থাপ্পর লাগিয়ে দিল জায়ানের ফর্সা গালে। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল – আপনার সাহস হলো কি করে আমার হাত ধরার, আমাকে স্পর্শ করার। একটা চরিত্রহীন, খারাপ, বাজারি মেয়ের হাত ধরতে লজ্জা করলো না আপনার?

চলবে…….

ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি লিংক –
https://www.facebook.com/profile.php?id=100090661336698&mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v

গ্রুপ লিংক –
https://www.facebook.com/groups/233071369558690/?ref=share_group_link

[ আহরাব ইশতিয়াদ এবং নিশিতা জুটির উপর লেখা আমার প্রথম উপন্যাস “স্নিগ্ধ প্রেয়শী” পড়ে নিন বইটই অ্যাপে, মাত্র ৪০ টাকা। বইয়ের লিংক এবং কিভাবে কিনবেন পেয়ে যাবেন কমেন্ট বক্সে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here