গল্পঃ খুব করে চাই তোকে
পর্বঃ ৬
লেখিকাঃ লিজা
হৃদ ভাইয়াকে নিয়ে চুপিচুপি বাড়িতে ঢুকলাম আমি।কাকিমণি তখন বাড়ির ডুবলিকেট চাবিটা দিয়েছিলো আমায়।এইজন্য তেমন অসুবিধা হয় নি।এতো রাতে বাড়ির সকলেই ঘুম।কোন রকম শব্দ না করে হৃদ ভাইয়াকে তার রুমে নিয়ে আসলাম।বিছানার উপরে বসিয়ে পা থেকে জুতা খুললাম।হৃদ ভাইয়াকে বললাম,
—“তুমি একটু বসো।আমি তোমার জন্য লেবুর সরবত নিয়ে আসছি।”
কথাটা বলে চলে যেতে লাগলে আমার শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরে চোখ মুখ ছোট্ট করে বলল হৃদ ভাইয়া,
—“ফুল তুই শাড়ি পরেছিস?”
আমি এগিয়ে এসে হৃদ ভাইয়ার পাশে বসলাম। মুখের কাছে একটু ঝুঁকে বললাম,
—“হুমমম।কেমন লাগছে আমায়? কাকিমণি নিজের হাতে আমাকে আজ সাজিয়ে দিয়েছে।শুধু তোমার জন্য। যেন তোমার চোখ অন্য কোনো মেয়ের উপর না যায়।”
হৃদ ভাইয়া আলতো হাতে আমার মুখে নিজের আঙুল বুলাচ্ছে।আমাকে বিরবির করে বলছে,
—“তোকে তো পরীর মতো লাগছে ফুল।”
কথাটা বলে আমার ঠোঁটে একটা চিমটি কাটলো।আমি আহ্ করে উঠলাম।উঠে দাড়িয়ে বললাম,
—“তুমি বসো।আমি তোমার জন্য লেবুর সরবত আনছি।”
কথাটা বলে হৃদ ভাইয়াকে রুমে রেখে রান্নাঘরে আসলাম।হৃদ ভাইয়ার জন্য লেবুর সরবত করে রুমে এসে দেখি সে ঘুম।মাথার কাছে গ্লাসটা রেখে পাশে বসলাম আমি।হৃদ ভাইয়ার চুলের ভাজে হাত রেখে বললাম,
—“কাল সকালে তুমি ঘুম থেকে উঠে দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে।তোমার আমার মধ্যে আর কেউ আসবে না হৃদ।কখনো কস্ট পেতে দেবো না তোমাকে আমি।আপু যে ভুল করেছে সেটা আমি করবো না।”
হৃদ মিটমিট করে চাইলো।দু’হাতে আমার মুখটা ধরে ফিসফিসিয়ে বলল আমায়,
—“ফুল তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।”
আমি হেসে উঠলাম। হৃদের নাকটা টেনে ধরে বললাম,
—“ঘুমাও নি এখনো? ওঠো, লেবুর সরবত টুকু খেয়ে নাও।নেশা কেটে যাবে।”
হৃদ উঠে বসলো। আমার কোমর টেনে ধরে ঘারে নাক ডুবিয়ে বলল,
—“তোর নেশা আমি কাটাতেও চাই না কখনো।”
আমার পেটে হাত রেখে অনেকক্ষণ ধরে শক্ত করে জড়িয়ে আছে হৃদ।আমার পিঠে বুক মিশিয়ে কানের কাছে আস্তে করে বলছে,
—“তোকে আমি খুব ভালোবাসি ফুল।তুই নিজেও জানিস না আমি তোকে কতোটা চাই।”
আমি মুখটা ঘুরিয়ে বসে হৃদের শার্টের কলারটা টেনে ধরে বললাম,
—“এতো ভালোবাসো তাহলে প্রিয়ার কাছে কেন গিয়েছিলে?”
একটু মুখটা এগিয়ে নিয়ে এসে বললাম,
—“মদও খেয়েছো।গন্ধ বের হচ্ছে তোমার মুখ থেকে।”
লেবুর সরবতটা নিয়ে হৃদের হাতে দিয়ে বললাম খেতে।হৃদ ডগডগ করে পুরো সরবতটা খেয়ে নিলো।আমি বললাম এখন তুমি ঘুমাও।আমি রুমে যাচ্ছি। হৃদ ঘুরিয়ে আমাকে বিছানায় নিয়ে আসলো।আমি বললাম,
—“আমাকে রুমে যেতে দাও হৃদ।এখানে ঘুমাতে পারবো না আমি।সকালে আমাকে রুমে না পেলে মা অনেক ঝামেলা করবে।”
কে শোনে কার কথা।হৃদকে কতোবার বাঁধা দেওয়ার চেস্টা করলাম আজ।কিন্তু ও নাছরবান্দা।একটা কথাও শোনে না।পাগলের মতো সারা গালে কিস করে যাচ্ছে।শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে ব্লাউজের হুকগুলোও খুলে ফেলেছে। এখন আর ওকে বাঁধা দিতে ইচ্ছে করছে না আমার।তাই সমার্পন করে দিলাম নিজেকে ওর মাঝে।
সকালে ঘুম ভাঙলে হৃদকে নিজের বাহুডোরে মুখ গুজে শুয়ে আছে দেখতে পেলাম। হৃদের পিঠে হাতটা চেপে ধরে ওকে ঘুরিয়ে শুইয়ে দিলাম বালিশে। বুকের উপরে শুয়ে থুতনিতে ঠোঁটের আলতো পরস দিয়ে চলেছি আমি।এমন সময় হৃদের ঘুম ভাঙলো। মাথাটা চেপে ধরে আস্তে করে চোখ মেলে তাকালো আমার মুখের দিকে।আর মুহূর্তের মধ্যেই এক ধাক্কায় আমাকে খানিকটা দূরে সরিয়ে দিলো।কেন এমনটা করলো কিছুই বুঝতে পারলাম না।হৃদ আমার হাতটা টেনে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,
—“তুই আবার কাল রাতে আমার রুমে এসেছিস? তোকে আমি বলেছি না আমার কাছে না আসতে?”
হৃদের কথা শুনে আমি থমকে আছি।হৃদকে বললাম আমি,
—“এসব কি বলছো তুমি হৃদ।তুমিই তো কাল আমাকে যেতে দিলে না।তোমার কি কাল রাতের কোনো কথাও মনে নেই?”
হৃদ এবার রাগি দৃস্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
—“কি মনে রাখবো আমি? তোর নস্টামিগুলোর কথা? সায়ানের সাথে পার্টিতে না গিয়ে কোথায় গিয়েছিলি কাল রাতে তুই? নাকি সায়ানের কাছ থেকে রাতের চাহিদাটুকু মেটাতে পারিস নি বলে আমার কাছে এসেছিস? তোকে ভালোবাসাটাই আমার জীবনের মস্ত বড় একটা ভুল।তোর চেয়ে তো প্রিয়া মেয়েটা শতগুণে ভালো।”
আমি হৃদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।প্রচন্ড রাগ পাচ্ছে আমার।হৃদ আমাকে দরজার দিকে ইশারা করে চলে যেতে বললে আমি ওর বুকের পশমে খুব জোরে একটা টান দিয়ে বললাম,
—“ইয়ারকি পেয়েছো? রাতে ভালোবেসে সকালে বলবে সব ভুলে গেছো? প্রিয়ার সাথে আমার তুলনা করছো? প্রিয়ার কথায় পার্টিতে গিয়েছো আমি আছি কিনা দেখতে।অথচ একটাবার বাড়িতে এসে দেখও নি আমি আছি কিনা।আবার আমাকে নস্টা মেয়ে বলো।তুমি নিজে কি? কি করছিলে প্রিয়ার রুমের মধ্যে দরজা বন্ধ করে? তখন আমি না গেলে…”
—“একদম মিথ্যা বলবি না।নিজেকে ঠিক প্রমাণ করতে একদম প্রিয়াকে জড়িয়ে কিছু বলবি না আমায়।”
—“ও তাই? আমি বললে দোষ? আর তুমি যা ইচ্ছা তাই বলে যাবে? তোমার বিচার তো আমি কাকিমণির কাছে দেবো।”
—“তোর যা ইচ্ছা কর।শুধু আমার সামনে থেকে এখন চলে যা।কিছু মনে করতে পারছি না আমি।যা এখান থেকে।”
আমি হৃদকে ধাক্কা দিয়ে বিছানার সাথে দুই কাঁধে শক্ত করে চেপে ধরে ওর পেটের উপরে উঠে বসলাম।তারপর বললাম,
—“কোথাও যাবো না আমি।তোমাকে মনে করতেই হবে কাল রাতের কথা।”
হৃদ মুখটা এক সাইটে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,
—“কিছু মনে পরছে না আমার।সর ফুল।”
—“কি সরবো? বলো আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলবে তারপর সরবো।আজ আমিও দেখবো তুমি কিভাবে আমায় ইগনোর করো।কাল সারাদিন জ্বরে বিছানায় পরে ছিলাম।একটুও আসো নি দেখতে।তারপরও ভেবেছি তোমার রাগ কিভাবে ভাঙাবো।আর তুমি ভেবেছো আমি পার্টিতে গিয়েছি।”
—“তুই পার্টিতে যাস নি?”
—“না।আমাকে তো মিনি ফোন করে জানিয়েছিলো তুমি প্রিয়ার সাথে ড্যান্স করছো।সেটা শুনেই তো গেলাম।”
—“তাহলে সায়ান? ও কেন আসে নি পার্টিতে?”
—“সায়ান পার্টিতে যাবে? ওর মতো একটা ছেলে পার্টিতে যেতে পারে বলে তোমার মনে হয়? আর ও গেলেও আমার কি? তুমি জানো না আমি তোমায় ভালোবাসি?”
—“ভালোবাসিস? আমাকে? তাহলে হসপিটালে সকলের সামনে যে বললি সায়ানকে ভালোবাসিস?”
—“ওটা সত্যি না।ভুল করেছি আমি আর কতোবার বলবো?”
হৃদ উঠে বসলো।আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
—“ছরি ফুল।”
—“সব মনে পরেছে তোমার?”
—“না।তবে তুই আমায় ভালোবাসিস এটা জেনে আমার আর কোনো রাগ নেই।আমি তোকে আবার বিয়ে করবো সকলকে জানিয়ে।”
—“আচ্ছা হয়েছে।আমি এখন রুমে যাবো।আজ আবার মা আমাকে রুমে না পেলে ঝামেলা হয়ে যাবে একটা।”
হৃদ আমাকে ছেড়ে দিলো।আর রেডি হয়ে থাকতে বললো।আজ আমাকে সাথে করে হসপিটালে নিয়ে যাবে বলে।
বিছানার উপরে অনেকগুলো ড্রেস এলোমেলো করে রেখেছি।আয়নার সামনে দাড়িয়ে একটা একটা করে তুলছি আর ভাবছি কোনটায় আমাকে ভালো লাগবে।কোনটা পড়বো আজ বুঝতে পারছি না আমি।এদিকে মা এসে সকাল সকাল আমার রুমের অবস্থা দেখে শুরু করে দিয়েছে তার বকুনি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম আটটা বাজতে চললো।হৃদ নির্ঘাত আমাকে এবার ফেলে রেখে চলে যাবে।তাড়াহুড়ো করে আমি এক ছুটে ওয়াশরুমে চলে আসলাম।খুব দ্রুত ভাবে সাওয়ার নিলাম।পরক্ষণে মনে পরলো ড্রেস আনতে ভুলে গেছি।রুমে মা বসে রয়েছে। মাকে বললাম,
—“মা।বিছানার উপর থেকে যেই ড্রেসটা তোমার ভালো লাগে সেইটা আমাকে দাও।”
মায়ের কোনো সাড়া শব্দ নেই।আমি ওয়াশরুমের দরজাটা হালকা একটু খুলে মুখ বের করে দেখলাম হৃদ দাড়িয়ে আছে। হাতে একটা লাল ড্রেস।ও চোখের ইশারায় পুরো রুমটা দেখিয়ে বলল আমায়,
—“কি করেছিস রুমের অবস্থা?”
হাতে থাকা ড্রেসটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
—“লাল রংটা তোকে পরলে ভালো লাগবে।”
আমি খুশি খুশি ড্রেসটা হাতে নিলাম অমনি মায়ের কন্ঠ কানে এলো।মা আমার রুমের দিকেই আসছে।বলছে,
—“আমাকে ডেকেছিস ফুল?”
আমি একটানে হৃদকে ওয়াশরুমের মধ্যে নিয়ে আসলাম।মা রুমে আসলে বলে উঠলাম,
—“ভুলে গেছি কেন ডেকেছিলাম।তুমি যাও মা।আবার ডাকলে এসো।”
মা বলল,
—“আমি এখানে বসেছি তুই বের হ।যদি আবার দরকার পরে।তোকে গুছিয়ে দিয়ে তারপর যাবো।”
কথাটা বলে বিছানার উপরে পরে থাকা এলোমেলো কাপড়গুলো গুছাতে লাগলো মা। হৃদের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি বুঝতে পারছি আমার জন্য ওর দেরি হচ্ছে। তার উপর ভিজেও গিয়েছে।আবার চোখের চাহনি দেখে ভয়ও লাগছে আমার।তখন যদি ওকে ভেতরে না আনতাম মা ওকে আমার রুমে দেখলে সমস্যা হয়ে যেতো।কিভাবো বোঝাবো ওকে এটা? মুখটা এগিয়ে কানের কাছে এনে ফিসফিসিয়ে বললাম,
—“হৃদ তোমার কি রাগ হচ্ছে আমার উপর? রাগ না হলে বলো আমার ভয় করছে।দেখও আমি তো প্রতিদিন লেট করি।তুমি একদিন লেট করলে তেমন একটা সমস্যা হবে না তোমার।”
কথাটা শেষ না হতে হৃদ আমার মাথাটা দু’হাতে শক্ত করে চেপে ধরলো।আমি ভয় পেয়ে কিছু বলে উঠতে লাগলাম তখনি হৃদ আমার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁট দিয়ে বন্ধ করে দিলো।আমি কিছু বলতেও পারছি না।সেটা দেখে হৃদ আমাকে ছেড়ে দিলো।ঠোঁটে আঙুল রেখে ফিসফিসিয়ে বলল,
—“কথা বলিস না।”
আমি হৃদের আঙুলটা ঠোঁটের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে শার্টের কলারটা খামচে ধরে মুড়িয়ে বললাম,
—“তুমি আমার উপর রাগ করো নি তাহলে?”
হৃদ মাথা নাড়ালো।আমাকে ঘুরিয়ে নিয়ে পেছনের থেকে ভেজা চুলগুলো সরিয়ে দিলো।পেটে হাত রেখে কাছে টেনে নিয়ে আমার পিঠের সাথে নিজের বুকটা মিশালো।আমার কাঁধে নাক ঘেঁষতে লাগলো।আমি রুমের দরজায় শব্দ পেয়ে বুঝতে পারলাম মা বেড়িয়ে গেছে।হৃদকে সরিয়ে দিয়ে ঘুরে তাকালাম। সাওয়ার বন্ধ করে বললাম,
—“এখন তুমি যাও।মা রুমে নেই আবার আসার আগে পালাও।”
হৃদ মাথা নাড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।আমি ভেজা ড্রেসটা বদলে হৃদের দেওয়া ড্রেসটা পরলাম। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলাম কাকিমণি আর হৃদ দাড়িয়ে আছে।রুমের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ।হৃদ ভেজা শরীরে এখনো দাড়িয়ে আছে আমার রুমে।কাকিমণি আমাকে দেখে বলে উঠলো,
—“তোরা কি শুধরাবি না? কি শুরু করেছিস এটা? আমার জায়গায় যদি তোর মা চলে আসতো তাহলে? তোদের এসব দেখে কতোটা কস্ট পেতো তোর মা বুঝতে পারছিস? একটু ধৈর্য নেই তোদের মধ্যে?”
আমি আর হৃদ মাথাটা নিচু করে আছি।কাকিমণি আবার বলল,
—“আমি আজই তোর মায়ের সাথে তোদের কথাটা বলবো।অনেকবার বলতে চেয়েও বলবো বলবো করে আর বলা হয়ে ওঠে নি।তবে আজ অবশ্যই বলবো।”
কাকিমণি হৃদকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—“রুমে গিয়ে কাপড়টা বদলে নাও।নইতো ঠান্ডা লেগে যাবে।”
হৃদ কোনো কথা না বলে চলে গেলো।কাকিমণি এগিয়ে এসে আমাকে বলল,
—“তুই তো জানিস তোর মায়ের মনে কতোটা কস্ট।তোর বাবা জীবিত থেকেও নেই।তোর মাকে ছেড়ে চলে গেছে বারো বছর হয়েছে।তারপরও কিভাবে তোদের দুই বোনকে মানুষ করেছে তা আমি জানি।তোদের বাবার স্বপ্ন ছিলো তোদেরকে ডাক্তার করবার।এখন তোর বাবা না থাকলেও সেটার জন্য নিজের গহনা, বাবার দেওয়া সম্পত্তি সব বিক্রি করে দিয়েছে তোর মা।আজ তোরা যা সব তোদের মায়ের জন্য।তোর মা তোর বাবাকে এখনো খুব ভালোবাসে ফুল।জানিস, এক বছর আগে হৃদের বাবা যখন মারা যায় তখন তোর মাই আমাকে সামলেছিলো।এমন কিছু করিস না যেন তোর মা কস্ট পাই।আমি আজ তোদের ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলবো কিন্তু তোরা বাড়ির মধ্যে আজ আর এমন কোনো পাগলামি করিস না।হৃদ ছেলে মানুষ ও বুঝবে না।তাই তোকে বললাম।”
কথাগুলো বলে কাকিমণি বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।
ব্রেকফাস্ট টেবিলে হৃদ এসে বসলে আমি উঠে দাড়ালাম। ডগডগ করে সরবত টুকু খেয়ে দেরি হচ্ছে বলে বেড়িয়ে আসলাম। হৃদের গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছি।হৃদ এসে গাড়ির দরজা খুলে অবাক হলো।আমাকে দেখে বলল,
—“বাবাহ এমন ভাব নিয়ে বের হলি তখন মনে তো হচ্ছিল ক্লাস ছুটে যাচ্ছে।”
আমি বললাম,
—“ফাস্ট ক্লাসটাই তো তোমার।ছুটলেও বা কি।তুমি তো আমার সামনে।”
হৃদ হেসে উঠে গাড়িতে এসে বসলো।আমি সিট বেল খুলে হৃদের দিকে এগিয়ে এসে ওর কাঁধে মাথা রাখলাম। হৃদ এক ধমক দিয়ে বলল,
—“রাস্তাঘাটের পথ।দূর্ঘটনা হয়ে যেতে পারে।সিট বেল বাঁধ।”
আমি মাথা নাড়িয়ে সরে এসে সিট বেল বেঁধে নিয়ে বসলাম।
আজ সবগুলো ক্লাস করেছি।প্রিয়া শাকচুন্নিটা আজ আসে নি।খুব আনন্দ লাগছে।আসল আনন্দ হচ্ছে কাকিমণি মায়ের সাথে কথা বলবে এইজন্য।সব ওয়ার্ডে যেয়ে পেশেন্টদের সাথে গল্প করছি, খোঁজ খবর নিচ্ছি।লাঞ্চ টাইম হতেই হৃদের কথা মনে পরলো।আমি ছুটে হৃদের কেবিনে আসলাম।দেখলাম হৃদ বেড়িয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম তোমার সাথে লাঞ্চ করবো ও বলল কাকিমণি কিছু গহনা বানাতে যাবে আমাদের বিয়ের জন্য তাই কাকিমণিকে নিয়ে জুয়েলারির শপে যাচ্ছে। আমাকেও যেতে বলল আমি বললাম জাবো না।এখানে আনন্দই হচ্ছে তুমি যাও।আজ আমি ভরপুর আনন্দ করবো।হৃদ বলল,
—“ঠিক আছে আনন্দ কর।রাতে মা কাকিমার সাথে আমাদের কথাটা বলবে।তারপর ধুমধাম করে আমরা আবার বিয়ে করবো।”
হৃদের মুখে বিয়ের কথাটা শুনে মনে পরলো মিনি, নিশিকে এখনো বলা হয় নি।হৃদকে বিদায় জানিয়ে মিনি, নিশির কাছে এলাম। ক্যান্টিনে একটা টেবিলে বসে মিনি আর নিশিকে বলতে লাগলাম হৃদ কতোটা রোমান্টিক। ওরা আমার মুখের দিকে হা হয়ে শুধু শুনছে।তৎক্ষনাৎ নূর আপুর চিৎকার শুনতে পেলাম। চিৎকার করে পুরো হসপিটালের সকলকে ডাকছে।সকলে ছুটে গেলাম। দেখলাম আপু কাঁদছে। আপুকে বসিয়ে শান্ত হতে বললাম। আপুর কান্না যেন থামছে না।আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।আর বলছে,
—“ফুল হৃদ আর কাকিমণির গাড়িটা এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।”
কথাটা শুনে আমি যেন বড়সড় একটা ধাক্কা খেলাম। কিছুতেই যেন বিশ্বাস করতে পারছি না।আপু আবার বলল,
—“কাকিমণি আমাকে কিছু একটা বলার জন্য ফোন করেছিলো।শোনার আগেই কলটা কেটে যায়।কিছুক্ষণ পর অন্য একজন ফোন করে বলে গাড়িটা এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।আর দুজনের অবস্থায় গুরুতর। আমার নাম্বারটা কল লিস্টের প্রথমে ছিলো তাই আমাকে জানিয়েছে।”
আপুর কথার শেষে এ্যাম্বুলেন্স এসে গেছে বলল একজন ওয়ার্ড বয়।আমি শুনে যেন সহ্য করতে পারছি না এ্যাক্সিডেন্টের কথাটা।মাথার মধ্যে পুরো দুনিয়াটা ঘুরছে।কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না কিছু।শুধুই হৃদের নামটা মুখে আসলো।হৃদ বলে একটা চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।যখন জ্ঞান ফিরলো।কেবিনে আমার বেডের পাশে মাকে দেখতে পেলাম। আমাকে চোখ খুলতে দেখে মা এগিয়ে এসে কেঁদে উঠে বললো,
—“তোর কাকিমণি আর নেই ফুল।হৃদের অবস্থাও তেমন ভালো না।কিছুদিন পরেই ছেলেটার বিয়ে হবার কথা ছিলো।না জানি প্রিয়া মেয়েটার কি হবে? অপারেশন থিয়েটারের সামনে যেভাবে পাগলামো করছে।হৃদের কিছু হলে মনে হয় ডাক্তারদেরই মেরে ফেলবে।”
মায়ের আর কোনো কথা শোনার মতো পরিস্থিতি আমার নেই।আমার চোখদুটো আবার বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।পাশেই নূর আপু ছিলো।মনে হলো আমাকে ইনজেকশন দিয়েছে।
টানা তিনদিন পর জ্ঞান ফিরলো আমার।চোখ খুললে চোখের সামনে আপুকে দেখতে পেলাম।আমাকে উঠে বসতে দেখে রিপোর্টের উপর থেকে চোখ সরিয়ে নিলো আপু।আমার দিকে এগিয়ে এসে রিপোর্টটা আমার সামনে রাখলো।আমার দু’ কাঁধে হাত রেখে উঠিয়ে বসালো আমাকে।আমি একটু সজাগ হলে হৃদের কথা মনে পরলো।অমনি আমি বেড থেকে নামতে চাইলাম।আপু বাঁধা দিলো আমায়।উঠে গিয়ে কেবিনের দরজাটা আস্তে করে বন্ধ করে এসে আমার সামনে দাড়ালো।রিপোর্টটা উঠিয়ে আমার সামনে ধরে বলল,
—“এই রিপোর্টটা বলছে তুই প্রেগনেন্ট ফুল।আমি জানতে চাই তোর সন্তানের বাবা কে? সায়ান নাকি হৃদ?”
মুহূর্তে আমার চোখ বেয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।আমি পেটে হাত রেখে বললাম,
—“আমি প্রেগনেন্ট? হৃদের সন্তান!”
আপু আমাকে ধরে ঝাঁকিয়ে বললো,
—“যদি তোর আর হৃদের সম্পর্কটা এতোই গভীর হয়ে থাকে তাহলে সেদিন কেন বলেছিলি হসপিটালের সকলের সামনে তুই সায়ানকে ভালোবাসিস?”
আমি আপুর মুখের দিকে তাকালাম। আপুকে বললাম,
—“তোমার জন্য। তোমার আর মেঘ স্যারের সংসারটা বাঁচাতে।কিন্তু সেটা শুধুই অভিনয়। আমি পারবো না হৃদকে ছাড়া থাকতে।আমার হৃদ কেমন আছে আপু?”
আপু সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।কেঁদে উঠে বলল,
—“আমি জানতাম আমার বোন এমন কিছু করতে পারে না। যেটা অসম্মানের।অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস তাই না? হৃদকে তুই এতো ভালোবাসিস আমাকে একটাবার বলার প্রয়োজন মনে করলি না? আমি তোকে সেদিনও জিজ্ঞাসা করেছিলাম হৃদকে ভালোবাসিস কিনা।তুই কেন বললি না আমাকে? আমি যদি জানতাম এতো বড় একটা অন্যায় কখনো করতাম না তোর সাথে।আমার কাছে মেঘ যতোটা ইমপটেন্ট তুইও ঠিক ততোটাই ইমপটেন্ট।মেঘ যদি সত্যি আমাকে ভালোবাসে কিছুতেই আমাকে ছাড়বে না।কিন্তু ওর সাথে থাকবো বলে তোর জীবনটা নষ্ট করবো এটা কিভাবে ভাবলি তুই? হৃদ তোর।ওকে আমি তোর জীবনে ফিরিয়ে দিবো কথা দিচ্ছি।”
আমি আপুর হাতদুটো শক্ত করে ধরে বসলাম। আপুকে বললাম,
—“আমার হৃদ সুস্থ আছে তো?”
আপু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ অর্থ বোঝালো।আমাকে আপু কিছু বলতে যাবে এমন সময় আপুর ফোনটা বেজে উঠলো। ফোন রিসিভ করে কথা বলে আপু আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
—“এখন আমার একটা সার্জারি অপারেশন আছে।তুই বিশ্রাম নে।আমি অপারেশন শেষে তোকে হৃদের কাছে নিয়ে যাবো।”
আমি বললাম,
—“এতোক্ষণ আমি অপেক্ষা করতে পারবো না আপু।আমি ওকে না দেখে থাকতে পারবো না।ওর কেবিনটা কোথায় বলো আমি গিয়ে দেখা করছি।”
আপু আমাকে বলল,
—“হৃদ হসপিটালে নেই ফুল।হৃদের জ্ঞান ফেরার পর প্রিয়া অনেক জেদ ধরে হৃদকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছে।হৃদের পুরো টিটমেন্ট মেঘ নিজে করছে।আমি শুধু হসপিটাল সামলাচ্ছি।”
আপুর মুখে এ কথাটা শুনে আমি আর বসে থাকতে পারলাম না।উঠে দাড়িয়ে হাত থেকে একটানে সেলাইয়ের সুচ ছাড়িয়ে নিলাম। আপুকে বললাম,
—“আমার হৃদ প্রিয়ার কাছে? আমি হৃদের কাছে যাবো।ও বাড়িতে আমি হৃদকে আর এক মুহূর্ত থাকতে দেবো না।আমি ফিরিয়ে আনবো আমার হৃদকে।”
কথাগুলো বলতে বলতে কেবিনের দরজা খুলে ছুটতে লাগলাম বাইরের দিকে।আপু আমাকে পেছনের থেকে ডাকলো।কিছু বলতে চাইলো আমায়। আমি না শুনেই চলে আসলাম। সার্জারির কারণে আপু পেশেন্টের কথা ভেবে হসপিটালের গেইট পর্যন্ত এসে থেমে গেলো।আর আমি অটোতে উঠে চলে আসলাম আপু আর মেঘ স্যারের বাড়িতে।
খুব জোরে চিৎকার করছি হৃদের নাম ধরে ডেকে।ভেতরে এসে দেখতে পেলাম খাবার টেবিলে হৃদ বসে আছে।এক লোকমা ভাত মুখে দিয়ে খুব জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে হৃদ।প্রিয়া আমার কন্ঠ শুনে পিছনে ঘুরে আমাকে দেখতে পেলো।আমাকে কিছু না বলে হৃদের দিকে এগিয়ে গেলো।হৃদকে বলল,
—“এই সব খাবার আমি নিজের হাতে বানিয়েছি।তোমাকে খেতেই হবে হৃদ খেতেই হবে।”
হৃদ খুব জোরে নিশ্বাস নিতে নিতে বলল,
—“অনেক ঝাল খেতে পারবো না আমি।”
প্রিয়া হৃদের মুখটা শক্ত করে ধরে মুখের মধ্যে ঠেসে ঠেসে খাবার ভরে দিয়ে বলতে লাগলো,
—“তোমার জন্য আমি হাত পুড়িয়ে সকাল থেকে রান্না করেছি।তুমি খাবে।যতো ঝাল হোক তোমাকে খেতেই হবে আমার রান্না।”
আমি তাকিয়ে দেখলাম হৃদের সারা মুখে ভাত লেপটে আছে।হৃদের খুব কস্ট হচ্ছে। আমি আর এক মুহূর্ত দেড়ি না করে।এগিয়ে গিয়ে প্রিয়াকে টেনে কষিয়ে দু’গালে কয়েকটা চড় মারলাম। প্রিয়াকে বললাম,
—“দেখতে পারছিস না আমার হৃদ কস্ট পাচ্ছে। এতো ঝালের তরকারি খাই না আমার হৃদ।তারপরও তুই ওকে জোর করে খাওয়াচ্ছিস?”
প্রিয়া ভাইয়া বলে চিৎকার করে উঠলো।কেঁদে উঠে ভাইয়া বলে ডাকতে লাগলো।আমি হৃদের সামনে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বললাম পানি খাও হৃদ।হৃদ গ্লাসটা আমার হাত থেকে টেনে নিয়ে পাগলের মতো পানি খেয়ে চলেছে। তবুও যেন হৃদ শান্ত হচ্ছে না।খুব জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে আর বলছে ঝাল! ঝাল!
প্রিয়াকে সরিয়ে দিয়ে চেয়ার টেনে হৃদের সামনে বসলাম আমি। হৃদের মুখটা দুই হাতে আকড়ে ধরে ওর ঠোঁটে খুব শক্ত করে চুষে নিলাম।সারা মুখে যেখানে যেখানে এটো লেগে আছে চুষে নিয়ে বললাম,
—“এখনও ঝাল লাগছে হৃদ।”
হৃদ আমার মুখের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালো।কিছুক্ষণ তাকিয়ে আমাকে কিছু না বলেই এক ধাক্কায় চেয়ার থেকে নিচে ফেলে দিয়ে বলল,
—“কোথা থেকে এসেছে এই মেয়েটা?”
আমি অবাক চোখে হৃদের দিকে তাকালাম।হৃদ এমন কেন করলো বুঝতে পারলাম না।মেঘ স্যার আর সায়ান সিঁড়ি থেকে নিচে নামলো।সায়ান আমাকে নিচে পরে থাকতে দেখে উঠিয়ে দাড় করিয়ে বলল,
—“এর নাম ফুল।খুবই ভালো মেয়ে।আমার হবু স্ত্রী। প্রিয়া যেমন তোমার হবু স্ত্রী।”
হৃদ রাগি দৃস্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
—“ভালো না অভদ্র।এই মেয়েটাকে তুমি বিয়ে করতে চাইছো?”
প্রিয়া এগিয়ে এসে হৃদকে ধরে টানতে লাগলো।হৃদকে সিঁড়ির দিকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
—“তোমার ওষুধের সময় হয়ে গিয়েছে হৃদ। রুমে চলো তোমাকে আমি নিজের হাতে ওষুধ খাইয়ে দেবো।”
হৃদ প্রিয়াকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলল,
—“তোমার হাতে আমি ওষুধ খাবো না।আর না তোমার মতো একটা অভদ্র মেয়েকে আমি বিয়ে করবো।আমার বাড়ি কোথায়? প্লিজ আপনারা আমাকে দিয়ে আসুন।নয়তো আমাকে ঠিকানা দিয়ে দিন।আমি নিজে চলে যাচ্ছি। এখানে আমি আর থাকবো না।”
আমি বুঝতে পারলাম না হৃদ এমন ভাবে কেন কথা বলছে? হৃদকে কিছু বলতে যাবো তখন সায়ান আমার হাতটা টেনে ধরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে একটা রুমে নিয়ে এসে ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।আমার গালে একটা কষিয়ে চড় মেরে বলল,
—“তোমার সাহশ কি করে হয় হৃদের সন্তানকে নিজের গর্ভে ধারণ করবার? তোমাকে আমি ভালোবাসি।তোমাকেই বিয়ে করবো।আমি সবাইকে বলেছি এই সন্তানটা আমার।শুধু আমার পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে এই সন্তানটাকে নষ্ট করতে হবে।তোমার মাও আমার সিদ্ধান্তে রাজি হয়েছিলো।শুধু তোমার বোন নষ্ট করতে দেয় নি।আমি তোমাকে চাই কিন্তু হৃদের কোনো অংশ আমাদের জীবনে থাকুক সেটা আমি চাই না।”
সায়ানের কথা শুনে আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।সহজ সরল মুখটার পেছনে সায়ানের এই নোংরা রূপটা ছিলো? আমি সায়ানের দিকে তাকিয়ে বললাম,
—“তুমি এতোটা নোংরা সায়ান? হৃদ আমার স্বামী। আমার গর্ভে হৃদের সন্তান।এটা জেনেও তুমি এই নোংরা খেলাটা খেললে? এইজন্য বোধহয় আমার জ্ঞান ফিরলে আমার কাছে মা ছিলো না।না জানি কতোটা কস্ট পেয়েছে মা।ছোটবেলা থেকেই মা আমাদের দুই বোনকে এমন শিক্ষায় বড় করেছে।না জানি কি ভেবেছে।কিভাবে বোঝাবো আমি এমন কোনো কাজ করতে পারি না।হৃদের আর আমার সম্পর্কটা পবিত্র।”
সায়ান আমাকে টেনে ধরে বলল,
—“হৃদের স্মৃতি শক্তি নেই। এই এক্সিডেন্টে হৃদ মাথায় প্রচন্ড রকমের আঘাত পেয়েছে।তোমার সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে হৃদ।হৃদের মনে তুমি নেই।ভালো এই হবে তোমার মন থেকেও হৃদকে মুছে ফেলো।”
—“কি বললে তুমি? হৃদের স্মৃতি নেই?”
—“না নেই।আর না কখনো আসবে।হৃদের টিটমেন্টের সব দায়িত্ব যে এখন আমার কাজিন মেঘের হাতে।মেঘ কিছুতেই হৃদের স্মৃতি ফিরে আসতে দেবে না।”
—“আমি এটা হতে দেবো না।আমি তোমাদের সফল হতে দেবো না।”
—“সফল তো আমরা হবোই। তোমার এবোশনও হবে।এখন এইখানে।তারপর আজই আমাদের বিয়ে হবে।”
সায়ান চিৎকার করে ডা.মেঘ স্যারের নাম ধরে ডাকলো।আমি সায়ানকে ধাক্কা দিয়ে রুমের দরজা খুলে ছুটে নিচে নামলাম।হৃদ নিচে থাকায় সায়ান থেমে গেলো।আমি এসে হৃদকে বললাম,
—“হৃদ দেখও ওরা আমাদের সন্তানকে মেরে ফেলতে চাচ্ছে।”
সায়ান এবার এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে টেনে সিঁড়ির দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
—“এসব কি বলছো ফুল? তোমার মাথাটা সত্যি গেছে।চলো উপরে গিয়ে ঠান্ডা মাথায় বসে কথা বলি।”
সায়ান ডা.মেঘ স্যারকে ইশারায় উপরে আসতে বললো। সেটা দেখে সায়ানকে ধাক্কা দিয়ে আমি হৃদের কাছে আবার আসলাম। হৃদের পা জড়িয়ে ধরে বললাম,
—“এমনটা হতে দিও না হৃদ।আমাদের সন্তানকে ওরা মেরে ফেলতে চাইছে কিছু করও।”
হৃদ পা ছাড়িয়ে উঠে দাড়ালো।রাগি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
—“আমি এখানে থাকতে চাই না।বলেছি আমার বাড়ির ঠিকানাটা দিতে।এতো নাটক দেখতে ইচ্ছে করছে না আমার।”
হৃদ আর কিছু বলতে যাবে মেঘ স্যার একটা ইনজেকশন পেছনের থেকে এনে হৃদের ঘাড়ে ঢুকিয়ে দিলো। হৃদ আস্তে করে ফ্লোরে ঢুলে পরলো।সায়ান এবার নিজের শক্তি দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমি চিৎকার করছি। এখনও হৃদকে ডাকছি।উঠতে বলছি এমন সময় মিনি, নিশির সাথে আবির চৌধুরীর কন্ঠ শুনতে পেলাম। আবির চৌধুরী হলো প্রিয়া আর ডা.মেঘ স্যারের বাবা।
চলবে,
পেইজ – নিবেদিতা ❤️
পর্ব – ৭ (শেষ পর্ব)
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=999744621433703&id=100041945238687&mibextid=Nif5oz