খুব করে চাই তোকে পর্বঃ ৫ লেখিকাঃ লিজা

0
280

গল্পঃ খুব করে চাই তোকে
পর্বঃ ৫
লেখিকাঃ লিজা

হৃদ ভাইয়া আমাকে ভুল বুঝলো।ভাবলো আমি তাকে ঠকাচ্ছি।কিন্তু আমি যদি আজ এমনটা না করতাম তাহলে পরিস্থিতি সামলাতে পারতাম না।আপু আর মেঘ স্যারের সংসারটা ভেঙে যেতো।আমি অনেক খুঁজলাম হৃদ ভাইয়াকে কিন্তু কোথাও পেলাম না।আমি কখনো এমনটা করতেই পারি না।কেন বুঝলো না হৃদ ভাইয়া আমাকে? এখন আমি কোথায় খুঁজবো তাকে?

হসপিটালের কোথাও হৃদ ভাইয়া নেই।বাড়িতে ফিরেও পেলাম না।আমার খুব কস্ট হচ্ছে। কাউকে বোঝাতে পারছি না।এদিকে মেঘ স্যার আর আপু এসে প্রিয়ার জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে গিয়েছে।সাথে সায়ানের বাবা মাকে এনে আমার আর সায়ানের বিয়ের তারিখটাও ঠিক করে গিয়েছে।এই মুহূর্তে হৃদ ভাইয়াকে আমার যে খুব প্রয়োজন।আমি যেটা ভেবে এমনটা করেছি সেটাতো তাকে শুনতে হবে।

রাত অনেক হয়েছে আমার চোখে ঘুম নেই। হৃদ ভাইয়া এখনো বাড়ি ফেরে নি।খুব টেনশন হচ্ছে আমার।আমি বিছানা ছেড়ে উঠে হৃদ ভাইয়ার রুমে আসলাম।কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সেখানেই ঘুমিয়ে পরলাম।ঘুমের ঘোরে শুনতে পেলাম ওয়াশরুম থেকে কাতরানোর শব্দ শোনা যাচ্ছে। আমি ছুটে গিয়ে দেখলাম হৃদ ভাইয়া ওয়াশরুমে গুটিশুটি হয়ে ভেজা শরীরে বসে আছে আর শীতে কাতরাচ্ছে।তার মানে সারাদিন হৃদ ভাইয়া এখানেই বসে ছিলো?

আমি এগিয়ে আসলাম।হৃদ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বুঝতে পারলাম গায়ে খুব জ্বর।আমার স্পর্শ পেয়ে হৃদ ভাইয়া কেঁদে উঠলো।আমাকে বলল,

—“তুই আমাকে ভালোবাসিস না ফুল? আমিতো তোকে খুব ভালোবাসি।”

আমি বললাম,

—“কে বলেছে আমি তোমায় ভালোবাসি না? তোমাকেই শুধু ভালোবেসে এসেছি সারা জীবন আমি।বুঝতে শিঁখেছি ধরে আমার মনে শুধু তুমি।আমার ভুলের জন্য নিজেকে কেন কস্ট দিচ্ছো? একটাবার আমাকে বোঝানোর সুযোগ দাও।ওঠো, রুমে চলো।”

হৃদ ভাইয়া মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,

—“না।আমার আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না।প্রথমে নূর আর এখন তুই।তোকে আমি কেন বিয়ে করেছিলাম জানিস? কারণ তোকে আমি হারিয়ে ফেলতে চাই নি।নূর আর আমি দুজন দুজনকে ছোটবেলা থেকেই ভালোবেসে এসেছি।নূরের জন্য কত মাইর খেয়েছি স্কুলে।ক্লাসে নূর যেদিন পড়া করতো না সেদিন আমি পড়া হলেও দাড়িয়ে ওর সাথে মাইর খেয়েছি।ওর কস্টটা অনুভব করতে।নূর যেদিন হোম ওয়ার্ক করতো না সেদিন ক্লাসে আমিও আমার অংক খাতাটা ব্যাগ থেকে বের করতাম না।কড়া রৌদ্দুরে ওর সাথে কান ধরে দাড়িয়েছি যেন ও নিজেকে একা ফিল না করে।যখন নূর আমাকে বলতো ভালোবাসি তখন ও যা চাইতো তাই এনে দিতাম।কিন্তু যখন মেঘকে চেয়ে বসলো আমি অনেক ভেঙে পরেছিলাম।নূর আমাকে বলেছিলো মন থেকে কখনো ওভাবে ভালোবাসে নি।মেঘকে যেদিন দেখেছে সেদিন থেকেই ভালোবাসার আসল মানেটা বুঝতে শিঁখেছে। মেঘের জীবনে একটা অন্য মেয়ে ছিলো।নূর সবসময় মন মরা হয়ে থাকতে।ঠিক মতোন খেতো না।নিজের যত্ন নিতো না।কারও সাথে হাসি মুখে কথাও বলতো না।আমি মেঘের কাছে গিয়ে নূরের খুশি চাইলাম। মেঘ আমাকে অনেক অপমান করেছিলো।ওতো অন্য একটি মেয়েকে ভালোবাসতো।যখন আমি জানতে পারলাম মেয়েটি ভালো না।শুধু মাত্র টাকার লোভে মেঘের সাথে রিলেশন করছে।তখন আমি সব প্রমাণ জোগাড় করে মেঘের সামনে রাখলাম। মেঘ আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হলো।আমাকে বন্ধু মানলো।আমিই তখন মেঘ আর নূরকে এক করার চেস্টা করলাম।ওদের একসাথে দেখা করানো।দুজনকে দুজনের জন্য যোগ্য প্রমাণ করা সব কিছু আমি করেছি।প্রচন্ড হতাশায় থাকতাম আমি।একদিন বাড়িতে এসে তোর এই নিরীহ মুখটা দেখলাম। আমার প্রতি তোর এতো কেয়ারিং সেদিন প্রথম আমার ভালো লাগাতে পরিণত হলো। ধীরে ধীরে তোকে ভালোবাসতে চেস্টা করলাম যেন নূরকে ভুলতে পারি।আর আজ আমি তোকে এতোটা ভালোবেসে ফেলেছি যে তোকে ছাড়া গোটা দুনিয়াটা আমার কাছে শূন্য লাগে।আমি মরে যাবো তোকে না পেলে ফুল।তুই যত ইচ্ছা কস্ট দে আমায়।শুধু আমার সাথে থাক।একটু ভালোবাস আমায়।প্লিজ ফুল কখনো বলিস না অন্য কাউকে ভালোবেসি।

কথা বলতে বলতে চোখ বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো হৃদ ভাইয়ার।আমি হৃদ ভাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,

—“আমি আপুর মতোন নই।তুমিই আমার প্রথম ভালোবাসা আর এখন আমার স্বামী। কোনোকিছুর বিনিময়ে তোমাকে আমি কস্ট দেবো না।”

হৃদ ভাইয়াকে ধরে উঠিয়ে ভেজা কাপড় খুলে বিছানায় এনে শুইয়ে দিলাম।কম্বলটা টেনে দিয়ে তোয়ালে দিয়ে মাথার চুল মুছতে লাগলাম। হৃদ ভাইয়ার শীত যেন তীব্র হতে লাগলো।এতো জ্বর কি করবো বুঝতে পারছি না।উঠে আমার রুম থেকে কম্বল আনতে পা বাড়াতে হৃদ ভাইয়া পেছনের থেকে আমার হাতটা ধরে বসলো।আমাকে বলল,

—“আমায় ছেড়ে আর এক মুহূর্তের জন্য ও দূরে জাস না ফুল।”

আমি গেলাম না।কম্বলের ভেতরে এসে হৃদ ভাইয়াকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।জানতে চাইলাম,

—“তোমার কি খুব শীত করছে হৃদ ভাইয়া?”

হৃদ ভাইয়া আমাকে ঘুরিয়ে আমার উপরে এসে শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে গলায় নাক ডুবিয়ে বলল,

—“আমাকে আর ভাইয়া বলিস না।নাম ধরেই ডাকিস।”

আমি চোখ বন্ধ করে বললাম,

—“আজ সত্যি মনে হচ্ছে আমি তোমার স্ত্রী।তুমি বিয়েটা ওভাবে না করলে এই ফিলটা আর আমার প্রতি তোমার এই পাগল করা ভালোবাসাটা আমি বুঝতাম না হৃদ।”

প্রচন্ড শীতের সকাল।হৃদ ভাইয়ার কম্পিত শরীর।ঘড়িতে টিক টক শব্দ।মাথাটা ভার ভার লাগছে আমার।শরীরে দূর্বলতা জানান দিচ্ছে।কোনো শক্তি নেই নড়াচড়া করবার।হৃদ ভাইয়ার মাথাটা আলতো করে আমার বাহুডোর থেকে সরাতে নিলে ঘুম ঘুম চোখে মুখটা তুলে চাইলো আমার মুখের দিকে।চোখদুটো ছোট্ট করে আমার গালে হাত রেখে বলল,

—“একি ফুল তুই আমার কাছে?”

হৃদ ভাইয়া ঝট করে আমার কপালে হাত রেখে বলে উঠলো,

—“তোর তো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।কাল রাতে তুই আমার কাছে কেন ঘুমিয়েছিলি?”

আমি হৃদ ভাইয়ার বুকে হাত রেখে উঠে বসার চেস্টা করলাম।আমাকে টেনে তুলে পিঠে বালিশ ঠেকিয়ে কম্বলটা শরীরে টেনে দিলো।আমি দু’চোখে সবকিছু ঝাপসা দেখতে লাগলাম।হৃদ ভাইয়া বলে উঠলো,

—“আমাকে ঠকিয়ে, আমার ভালোবাসাকে অপমান করে আবার আমার কাছে আসার মানে কি হয় তোর?”

আমি ভাবলাম এটা কি বলছে হৃদ ভাইয়া? মুখের দিকে তাকিয়ে মুখটা মলিন করে বললাম,

—“এসব তুমি কি বলছো হৃদ? কাল রাতে তুমি আমায় ভালোবাসলে।আদর করলে।তোমার কি মনে নেই?”

হৃদ ভাইয়া আমার দু’ কাঁধে হাত শক্ত করে রেখে রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে বলল,

—“আমি তোকে আদর করেছি? কই মনে নেই আমার। আর যদি করেও থাকি জ্বরের ঘোরে করেছি।কিন্তু তুই যেটা করেছিস সজ্ঞানে।আমি তোকে তার জন্য কখনো ক্ষমা করতে পারবো না।কস্ট দিয়েছিস আমায়।তোরা দুই বোন একদম এক।ভালোবাসা তোদের কাছে শুধুই খেলা। তোকে তো আমি ভিন্ন ভেবেছিলাম ফুল।তাহলে এমনটা কেন করলি আমার সাথে? ভরা হসপিটালের সকলের সামনে বলে ফেললি ওই ছেলেটাকে তুই ভালোবাসিস।ছেলেটাকে বিয়ে করবি।আর আমাদের বিয়েটা? ওটার কথা তোর তখন মনে ছিলো না? রাতে কেন আসলি আমার কাছে? আমি কিছুতেই কাল রাতে তোকে কাছে টানতাম না যদি আমি সুস্থ থাকতাম।”

আমি হৃদের হাতটা টেনে ধরলাম।অসহায় দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,

—“এভাবে বলছো কেন আমায়? কস্ট দিচ্ছো আমায়?এই তুমি আমায় ভালোবাসো? দেখছো জ্বরে আমার গা পুড়ে যাচ্ছে।তারপরও এমন ভাবে কথা বলছো আমার সাথে?

—“জ্বরে তোর গা পুরলে আমি কি করবো? তোকে তো আমি বলিনি শরীরে শরীরে জ্বর বাঁধাতে।”

—“হৃদ তুমি কিন্তু অনেক বলছো।এবার কিন্তু সত্যি এই রুম থেকে চলে যাবো আমি।আর কক্ষনো আসবো না তোমার কাছে।”

হৃদ ভাইয়া গম্ভীর ভাবে মুখ করে পরে আছে।বাইরে থেকে মা আর কাকিমণি ফুল বলে চিৎকার করে চলেছে।কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করে হৃদের রুমের দরজার কাছে এসে কাকিমণি বলে উঠলো,

—“হৃদ দরজা খোল।সকাল থেকে ফুলকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।বাড়িতে কোথাও নেই।আমাদের টেনশন হচ্ছে খুব।”

কথাটা শুনতেই হৃদ উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।কাকিমণি হৃদকে আমার কথা বলতে বলতে রুমের মধ্যে তাকিয়ে দেখলো হৃদের বিছানায় আমি।কাকিমণি ভেতরে আসতেই আমি কম্বলটা শরীরে ভালোভাবে টেনে জড়িয়ে নিলাম। হৃদ কড়া শব্দে উল্টোদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল,

—“ওকে এখান থেকে নিয়ে যাও মা।আর কখনো যেন ও আমার সামনে না আসে।”

কথাটা বলে হৃদ রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগলো।কাকিমণি আটকালো হৃদকে। মাকে এগিয়ে আসতে দেখে রুমের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে আমার কাছে আসলো।আমাকে জিজ্ঞেসা করলো,

—“এটা তোরা কি করেছিস ফুল? তোদের দুজনের বিয়ে ঠিক।তারপরও তোরা নিজেরা ছিঃ।

হৃদ কিছু বলতে নিলে কাকিমণি হৃদকে কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলো।কড়া শব্দে বলল,

—“লজ্জা করে না তোর? মেয়েটার সাথে সারা রাত কাটিয়ে মায়ের সামনে দাড়িয়ে বলছিস আর কখনো তোর সামনে যেন না আসে?”

আমি কাকিমণির কথাটা শুনে কেঁদে উঠলাম। কাকিমণি এগিয়ে এসে আমায় ধরে দেখলো গায়ে খুব জ্বর।তাই নরম গলায় বললো,

—“আমার ভাবতে কস্ট হচ্ছে হৃদ আমার সন্তান।কিন্তু ফুল তুই? তোর মা জানলে কতোটা কস্ট পাবে বুঝতে পারছিস?”

হৃদ এগিয়ে এসে কাকিমণিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,

—“মা বিশ্বাস করো আমি সত্যি এমন কিছু করতে চাই নি।ফুলই এসেছিলো রাতে আমার কাছে।আমার তো জ্বরে কোনো হুশ ছিলো না।যদি তোমার কাছে এটা অসম্মানের লাগে তাহলে বলবো ফুল আমার স্ত্রী।আমি ওকে বিয়ে করেছি।তাই এটা নিয়ে তুমি খারাপ কিছু ভাবতে পারো না।”

কাকিমণি একবার হৃদ আর একবার আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

—“আমার অবাক লাগছে তোর কথা শুনে। তোরা বিয়েও করেছিস? এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিজেদের মধ্যে নিয়ে নিলি? আমরা কি কিচ্ছু না? আমাদের একটাবার জানানোর প্রয়োজন বোধ করলি না?”

এমন সময় মা এসে দরজার কাছে দাড়িয়ে হৃদকে আর কাকিমণিকে ডাকতে লাগলো।কাকিমণি কিছু একটা ভেবে হৃদকে কড়া শব্দে বললো আমাকে নিয়ে জানালা দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে।আমায় নিয়ে রুমে রেখে আসতে।হৃদ না চাইতেও কাকিমণির কথায় বাধ্য হয়ে আমাকে কোলে করে রুমে নিয়ে আসলো।আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চলে যেতে নিলে আমি হাতটা টেনে ধরে বললাম,

—“এই তোমার ভালোবাসা? এই ভালোবাসাটা হারানোর ভয়ে কাঁদছিলে কাল তুমি?”

হৃদ ভাইয়ার চোখে রাগ স্পষ্ট। চোখের চাহনি দেখে আমি ভয়ে হাতটা ছেড়ে দিলাম।সঙ্গে সঙ্গে হৃদ ভাইয়া মুখটা ঘুরিয়ে চলে গেলো আমার রুম থেকে। কিছুক্ষণ পর মা আসলো আমার রুমে।আমাকে দেখে জানতে চাইলো আমি কোথায় ছিলাম। আমি লেপের মধ্যে থেকে শুধু মুখটা বের করে দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললাম ওয়াশরুমে ছিলাম।মা কপালে হাত রেখে বুঝলো আমার গায়ে খুব জ্বর তাই আর কিছু বললো না।

সারাদিন রুমে থেকে সন্ধ্যার দিকে জ্বর খানিকটা কমেছে অনুভব করলাম।নূর আপু ফোন করে বলেছে আপুর বাড়িতে নিউ ইয়ার পার্টি।রাতে অনেক মজা হবে।সায়ানও আসবে।আমাকে তো আসতেই হবে।আমি না বলে দিয়েছি।একই তো হৃদ রেগে আছে আমার উপর।ওর রাগ না ভাঙিয়ে পার্টিতে গিয়েছি শুনতে পারলে আরও রেগে যাবে।আমি বসে বসে ভাবছি কিভাবে হৃদের রাগ ভাঙানো যায়।এতো ভালোবাসে আমায় অথচ রাগ করলে সেটা স্বীকার করতে চাই না।

রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই। মিনির ফোন আসলো।মিনি আমাকে বলল পার্টিতে নাকি হৃদ গিয়েছে। আর প্রিয়ার সাথে ড্যান্সও করছে।আমার প্রচন্ড রকমের রাগ হচ্ছে এখন।যার কস্ট হবে বলে আমি পার্টিতে গেলাম না।সে প্রিয়ার সাথে পার্টিতে গিয়ে ড্যান্স করছে? আমি রুম থেকে বেড়িয়ে রান্নাঘরে সোজা ঢুকলাম। মিজাজ এতোটা খারাপ ফ্রিজ থেকে সব সবজি বের করে আপন মনে কেটে চলেছি।কাকিমণি রান্নাঘরে এসে এটা দেখে আমার কাছে জানতে চাইলো,

—“ফুল এভাবে সবজি কেন কাটছিস?”

আমি অন্য মানুষ্ক হয়ে ফিরে তাকাতে আমার হাতটা একটুখানি কেটে গেলো।কাকিমণি আমার হাতে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে বলল,

—“কি হয়েছে ফুল? তুই এমন পাগলামি কেন করছিস?”

আমি অসহায় দৃষ্টিতে কাকিমণির দিকে তাকিয়ে বললাম,

—“তোমার ছেলে আমাকে হুট করে নিয়ে বিয়ে করেছে।বিয়ের আগের মুহূর্ত অবদি আমাকে বলেও নি বিয়ে করবে।হঠাৎ এসেই ভালোবাসি বলেছে।কখনো বুঝতে দেয় নি আমার প্রতি আগে কোনো অনুভূতি ছিলো।কাল সারাটা রাত ভালোবাসার কথা বলেছে।আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছে।সকাল হতেই বলছে আমি কেন রাতে তার রুমে এসেছি।আর এখন আপুর বাসায় পার্টিতে প্রিয়ার সাথে ড্যান্স করছে।যার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে।কোথায় ভেবেছিলাম বিয়েটা ভেঙে যাবে।কিন্তু না।তোমার ছেলে ঠিক করেই নিয়েছে আমার উপর জেদ দেখিয়ে প্রিয়াকে বিয়ে করবে।এখন তুমি তোমার ছেলের বিচার করও কাকিমণি।আমি ওর অবহেলা আর নিতে পারছি না।”

কাকিমণি আমাকে ঘুরিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

—“তুই কি হৃদকে খুব ভালোবাসিস ফুল?”

আমি মাথা কাত করে হ্যাঁ অর্থ বুঝালাম। কাকিমণি বলল,

—“তাহলে তুই পার্টিতে যা।হৃদকে বোঝা।বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আই।যদি না বোঝে আমি তো আছি।কথা বলবো আমি হৃদের সাথে।”

আমি বললাম,

—“কিভাবে যাবো আমি? মা এতো রাতে বের হতে দেবে না।”

কাকিমণি বলল,

—“তুই চুপি চুপি বের হ।তোকে খুঁজলে আমি না হয় বলে দেবো তুই রুমে ঘুমাচ্ছিস।যেতে দিবো না তোর রুমে।আমি সঠিক সময় বুঝে তোর মাকে হৃদ আর তোর কথাটা বুঝিয়ে বলবো।এখন সবটা জানলে কস্ট পাবে তোর মা।”

আমি একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লাম।রেডি হয়ে কাকিমণির সাহায্যে বাড়ি থেকে বের হলাম।আপুর বাড়িতে এসে হৃদকে খুঁজছি।মিনি আর নিশির সাথে দেখা হলো।ওরা বলল,

—“তুই আসবি জানলে সায়ান ভাইয়া আসতো ফুল।”

আমি বললাম,

—“আমার জন্য সায়ান কেন আসবে?”

ওরা হেসে উঠে বলল,

—“সায়ান ভাইয়ার মতো এতো সহজ সরল একটা ছেলে।যে সারা জীবন বইয়ের মাঝে মুখ গুজে রেখেছে।সে তোকে পছন্দ করে বিয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে।আর তোর জন্য পার্টিতে আসতে পারবে না?”

আমি বললাম,

—“সায়ান আসুক বা না আসুক হৃদ আমার স্বামী। ওর জন্য এসেছি এই পার্টিতে আমি।কোথায় হৃদ? তোরা দেখেছিস ওকে?”

নিশি বলল,

—“মেঘ ভাইয়া আর প্রিয়ার সাথে উপরে যেতে দেখেছি।”

আমি তাকিয়ে দেখতে পেলাম মেঘ স্যার সিঁড়ি থেকে নামছে।সাথে হৃদ আর প্রিয়া নেই।ওদের সামনে আর এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে আমি ছুটে মাঝ সিঁড়িতে গিয়ে মেঘ স্যারের সামনে দাড়িয়ে বললাম,

—“হৃদ কোথায় স্যার?”

মেঘ স্যার যেন আমার কথা এড়ানোর চেস্টা করলো।আমাকে বললো,

—“একি ফুল তুমি? নূর তো ইমার্জেন্সি কারণে হসপিটালে আছে।তুমি ইনজয় করো পার্টিতে।”

মেঘ স্যারের কথায় কোনো প্রতি উত্তর না দিয়ে আমি উপরে উঠতে লাগলাম। মেঘ স্যার আমাকে আটকানোর চেস্টা করলো।আমার মনে সন্দেহ জাগলো।ছুটে উপরে আসলাম আর সবগুলো রুমে হৃদ আর প্রিয়াকে খুঁজতে লাগলাম। একটা রুমের দরজার সামনে এসে ভেতর থেকে হৃদের কন্ঠে শুনতে পেলাম।হৃদ বলছে,

—“ফুল অনেক খারাপ হয়ে গেছে।নস্ট হয়ে গেছে ফুল।আর যাই হোক তুমি ফুলের থেকে ভালো।”

এটুকু শুনতে আমার কাঁধে মেঘ স্যারের হাত পরলো।মেঘ স্যার হেসে উঠে বলল,

—“শুনে নিয়েছো এবার? হৃদ তোমাকে কতোটা অপছন্দ করে।তোমাকে অন্যের সামনে খারাপ বলে।এরপরও হৃদের কাছে যাবে।হৃদতো চাই এখন প্রিয়ার সাথে সময় কাটাতে।তাই বলছি ওদেরকে ওদের মতো থাকতে দাও।সামনেই ওদের বিয়ে।”

এমন সময় ভেতর থেকে প্রিয়ার কন্ঠ শুনতে পেলাম।প্রিয়া বলে উঠলো,

—“ঠিকই বলেছো হৃদ।ফুল নস্ট হয়ে গেছে।নূর ভাবি বলল তো ফুল পার্টির জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছে।অথচ দেখও পার্টিতে সবাই আছে শুধু ফুল নেই।তোমাকে বললে তো বিশ্বাস করো না।এসে দেখলে তো ফুল নেই পার্টির কোথাও।ফুল সায়ানের সাথে পার্টি করছে।হোটেলে।যদি জানতাম কোন হোটেলে তোমাকে বলতে পারতাম।নিজে গিয়ে দেখে আসতে।”

এটুকু শুনেই আমি রুমের দরজাটা খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেললাম।তাকিয়ে দেখলাম প্রিয়া হৃদের খুব কাছে।শার্টের কলারটা মুঠোয় টেনে নিয়ে ওর মুখের খুব কাছে মুখটা রেখে আছে।আমি এই দৃশ্য দেখে এগিয়ে এসে প্রিয়াকে টেনে এনে কষিয়ে একটা চড় মারলাম। প্রিয়া ছিটকে পরতে লাগলে মেঘ স্যার প্রিয়াকে ধরে বসলো।প্রিয়া গালে হাত দিয়ে কেঁদে উঠে মেঘ স্যারকে বলল,

—“ভাইয়া আমি বলেছিলাম হৃদের সাথে একটু একা সময় কাটাতে চাই।নতুন বছর একান্তে হৃদের মুখ দেখে শুরু করতে চাই।তাহলে তুমি থাকতে ফুল কিভাবে এখানে আসতে পারলো।

মেঘ স্যার ঘুরে এসে বলল,

—“তোমার সাহস হয় কিকরে আমার বোনের গায়ে হাত তুলার?”

আমাকে মারবার জন্য হাত উঁচু করলে আমি হাতটা ধরে বসলাম।মেঘ স্যারের চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,

—“আপনাকে যে সম্মান টুকু করতাম তা আপনার বোনের জন্য এসব নোংরা কাজ করে শেষ করে দিয়েছেন স্যার।আমি এটাও ভুলে যেতে বাধ্য হবো আপনি আমার বোনের স্বামী।যা পারেন আপনি করেন।আমি হৃদকে ছাড়বো না।হৃদ বললেও না।আপুর জন্য হৃদ অনেক কস্ট পেয়েছে।এটা শোনার পরও হৃদকে আমি আরও কস্ট পেতে দেবো? কিছুতেই না।হৃদ আমার স্বামী। আর আমারই থাকবে সারা জীবন। আপনার বোনের আবদার পূরণ না করে।আপনার বোনকে কিভাবে সঠিক পথে আনবেন সেটা ভাবুন।”

কথাটা বলে হৃদের দিকে ঘুরে তাকালাম। চোখ মুখ ছোট করে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছে হৃদ।আমি কাছে এসে ওর মুখটা ধরে বুঝতে পারলাম মদের গন্ধ বের হচ্ছে মুখ থেকে।আমি বললাম,

—“হৃদ তুমি মদ খেয়েছো?”

হৃদ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে হেসে উঠলো।আমি হৃদের হাতটা আমার কাঁধে বাঁধিয়ে বললাম,

—“বাড়িতে চলো হৃদ।”

পাশ থেকে প্রিয়া কেঁদে উঠে বলল,

—“ভাইয়া কিছুক্ষণ পরই বারোটা বাজবে।আমার হৃদকে চাই।হৃদের মুখ দেখে আমি নতুন বছর শুরু করবো।আর হৃদও আমাকেই দেখবে।প্লিজ ভাইয়া কিছু একটা করও।”

প্রিয়ার বাইনা শুনে মেঘ স্যার হাত জোর করে আমাকে বলল,

—“প্লিজ ফুল আমি কোনো অশান্তি চাই না।তোমার কাছে অনুরোধ করছি আমি হৃদকে রেখে যাও।আমার বোনের জন্য আমি সব করতে পারি।তুমি যতো টাকা চাইবে ততো টাকা দেবো।”

আমি ওদের পাত্তা না দিয়ে হৃদকে নিয়ে আসতে লাগলাম। ওরা এবার মুখের কথায় না পেরে জোড় করে হৃদকে আমার থেকে ছাড়াতে চাইলো।হৃদকে নিয়ে রুম থেকে বের হতেই আমি ওদেরকে বাইরে থেকে লক করে দিলাম।দরজার ওপাশ থেকে ওরা চিৎকার করতে লাগলো খোলার জন্য। আমি শুনলাম না। চলে আসলাম ওদের দিকে ঘুরে না তাকিয়ে।

চলবে,,,,

পরবর্তী পর্বের জন্য সবাই লাইক/কমেন্ট আর ফলো দিয়ে একটিভ থাকুন 🔥❤️
পেইজ – নিবেদিতা ❤️

পর্ব ৬
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=999468758127956&id=100041945238687&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here