ডুবেছি_আমি_তোমাতে #লেখিকা_Aiza_islam_Hayati #পর্ব_০৭

0
159

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#লেখিকা_Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_০৭

মুগ্ধতার মুখের পানে আহির চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।

মুগ্ধতা আবার বলে উঠে,” ভাই বলেছি এত্ত টুকুতেই এই অবস্থা।আরেহ ভাই কী খারাপ কিছু নাকি ভাই বলতেই পারি।আর দেখ ভাই আমার মুখ থেকে তুই আর ভাই শব্দটা বেশি বের হয় বলেছি তো।আর বাচ্চাদের মত গাল ফুলিয়ে রেখেছেন কেনো।কী করছেন এইসব আমাকে সরি বলার সুযোগটা তো দিন।গাল ফুলিয়ে ধরছেন না ফোন,না দেখছেন টেক্সট।”

আহির গাল ফুলিয়ে বলে ,” আমি রাগ করি গাল ফুলাই নাক ফুলাই যা করি তাতে আপনার তো কিছু যায় আসে না।”

“আলবাদ যায় আসে।আমার উপর কেউ রাগ করলে ছোট থেকেই আমার খুব বিরক্ত লাগে।লায়ানা যখন আমার উপর রাগ করতো দিতাম এক থাপ্পড়।”বলেই আহিরকে ছেড়ে মুগ্ধতা টেবিল থেকে পানি নিয়ে ঢক ঢক করে খেয়ে নেয়।” পানি খাওয়া শেষে আবার চট করে দাড়িয়ে বলে,”ভাই তোর তো কপাল ভালো যে তোকে আঙ্কেল বলিনি আমি তো হঠাৎ হঠাৎ যে কাউকে আঙ্কেল বলে ফেলি।আপনাকে তো আর আঙ্কেল বলি নি।”

“পানি আমি পানি খাবো।” বলেই আহির টেবিলের মধ্যে রাখা জার থেকে গ্লাসে পানি নিয়ে নিজের চেয়ারে বসে ঢক ধক করে খেয়ে নেয়।

মুগ্ধতা এগিয়ে গিয়ে চেয়ারের হাতলে দুই হাত রেখে পুনরায় আহিরকে ব্লক করে নেয়।মৃদু স্বরে বলে,”বলুন রাগ ভেঙ্গেছে আপনার?”

“এই আপনি আসার পর থেকে আমাকে একেকটা শক দিয়ে যাচ্ছেন।আমি তো দেখা যাচ্ছে হার্ট অ্যাটাক করে ফেলবো তারপর কী হবে আমার।”

“কী হবে একটা হার্ট সার্জারিয়ান যদি হার্ট অ্যাটাক করে বেশি না একটু অসুস্থ হবে আবার ঠিক হয়ে যাবে।আর কোনো মানসিক সমস্যা হলে নাহয় এই সাইকোলজিস্ট মুগ্ধতা সারাজীবন আছে আপনার জন্য।”

মুগ্ধতার কথা শুনে আহিরের এক দফা কাশি শুরু গিয়েছে।মুগ্ধতা টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে আহিরের দিকে এগিয়ে দেয়।আহির পানি একেবারে শেষ করে ফেলে। তাও কাশি কমছে না,মুগ্ধতা আহিরের পিঠ মালিশ করে দিতে দিতে বলে,”ঠিক আছেন?”

আহির কাশতে কাশতে বলে,”মুগ্ধ আমাকে কী আজ মেরে ফেলার ধান্দায় এসেছো নাকি।”

“কেন কী করলাম আমি? আমি তো কিছু করিনি।”

মুগ্ধ এখনও আহিরের পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আহির আরো এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয়।চেয়ারে গা এলিয়ে দেয়।আহির মৃদু কন্ঠে বলে,”মুগ্ধ দূরে সরে দাড়াও নাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে এই আহিরকে কেউ বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না, নিশ্চিত হার্ট অ্যাটাক করবে।”

মুগ্ধতা সরে দাড়িয়ে বলে,”উফ আপনি যে কী শুরু করেছেন।কী হয়েছে এমন যে হার্ট অ্যাটাক করবেন? এত্ত মানুষের হার্ট সার্জারি করা ব্যাক্তি নিজে হার্ট অ্যাটাক কেনো করবে?

আহির শান্ত হয়ে বলে,” জানি না।”

” আচ্ছা শেষ একটা প্রশ্ন রাগ ভেঙ্গেছে?”

” আই এম সরি মুগ্ধ দুইটা কারণে।প্রথমত কোনো স্পেসিফিক কারণ ছাড়া রাগ কর বসেছিলাম।আমার রাগ বেশি মাই ছোট ছোট কারণে মাঝে মাঝে খুব রেগে যায়।আর দ্বিতীয়ত সরি আপনাকে তুমি করে বলে ফেলেছি।”

” তুমি বলা স্বাভাবিক। তুমি করে বলতে পারেন।ইটস ওকে রাগ ভেঙ্গেছে যখন টাটা বায় বায়।” বলেই মুগ্ধতা আহিরের কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

আহির বড় এক নিশ্বাস ছেড়ে কপালের ঘাম হাতের উল্টো পিঠে মুছে বলে উঠে,” আরো কয়েকটা শক খেলে আহির তুই নিশ্চিত অ’ক্কা পেয়ে যেতি।অ’ক্কা পেয়ে গেলে আর তোর নেচে গেয়ে লাফাইতে লাফাইতে বিয়ে করার ইচ্ছাটা পূরণ হতো না।”

.
মুগ্ধতা লিফট দিয়ে নেমে নিচ তলায় এসে পরে।রিসেপশন এর সামনে অগ্রসর হওয়ার জন্য পা বাড়াতে নিলেই নওশাদ এসে মুগ্ধতার হাতে একটি ব্যাগ ধরিয়ে দেয়।মুগ্ধতা নওশাদ কে কিছু জিজ্ঞেস করবে সেই মুহূর্তে আচমকা মুগ্ধতার ফোনে টুং করে আওয়াজ হয়।মুগ্ধতা ফোন হাতে নিয়ে দেখে আহির ম্যাসেজ করেছে।

ম্যাসেজ আহির বলেছে,” অনেক বলেছো মিস মুগ্ধ এইবার নওশাদ এর দেয়া ব্যাগটিতে রাখা কোল্ড ড্রিঙ্ক টা খেয়ে মাথা ঠান্ডা করে ফেলো।এইটা আমাদের অফিস এর স্পেশাল কোল্ড ড্রিঙ্ক।”

মুগ্ধতা ম্যাসেজ এর উত্তরে বলে, ” এটার কোনো দরকার ছিল না।আমি ঠিক আছি।আপনাকে একটা শক দিতে পারলে ভালো হতো।”

সাথে সাথে আহির উত্তর দেয়,”এত্তক্ষণ কী কম শক দিলে?”

মুগ্ধতা আবার ম্যাসেজ এর উত্তরে বলল,”আরেহ সেরকম শক না।ভয় আরকি আপনি যে শক এ আছেন সেটা থেকে বের হওয়ার জন্য আরেকটা শক দেয়ার দরকার ছিল।”

আহির মুগ্ধতার ম্যাসেজ এর উত্তরে বলে”এমন শক দিতে থাকলে আমি তো পাগল হয়ে যাবো মুগ্ধ।”

“সমস্যা নেই আমি আছি না,সাইকোলজিস্ট প্রয়োজন পড়লে আমাকে বলবেন আমি বড় সরো পাগলের সাথে আপনাকে বেঁধে রাখবো।আপনি তাদের পাগলামি দেখে নিজেও ভুলে যাবেন যে আপনি কখনো পাগল হয়ে ছিলেন।আর থ্যাংক ইউ”

মুগ্ধতার ম্যাসেজটি দেখে আহিরের ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটে উঠে।

.
পিএস ইন্ডাস্ট্রি থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে বসার পর থেকে লায়ানা চুপ করেই বসে আছে।মুগ্ধতা লায়ানার চুপ করে থাকা আর সইতে না পেরে বলে উঠে,”এই মাইয়া তুই এমন মুখ লটকায়া রাখসোস কেন?এমন চুপ করে কেনো আছিস।”

লায়ানা জানালার বাইরে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মুগ্ধতার দিকে তাকায়।মুগ্ধতা চরম বিস্ময় নিয়ে লায়ানার মুখ নিজের দুই হাতে আগলে নিয়ে বলে,” এই তুই কান্না কেনো করছিস? ওই আহনাভ কিছু বলেছে তোকে?তোকে কান্না করানোর সাহস কী করে হয় ওর।”

লায়ানা মুগ্ধতাকে জড়িয়ে ধরে বলে,” কেউ আমাকে কিছু বলেনি বনু।”

মুগ্ধতা লায়ানার পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,” তাহলে কাঁদছিস কেনো?”

“বনু আমি কী আহনাভের মায়ায় পড়ে চরম ভুল করছি?আহনাভ কী সবসময় ওর অতীত কেউ ভালোবাসবে?আমি আহনাভ কে আজ জোর করেছি আমার সাথে ওর অতীত শেয়ার করার জন্য।আমার জো’র’জ’ব’স্তি’তে আহনাভ সব বলে আমাকে।আহনাভ লিলীমা নামে একটি মেয়েকে পাগলের মত ভালোবাসতো কিন্তু ওই লিলীমা আহনাভকে তিন চার মাস ঘুড়িয়ে শেষে বলে আহনাভের যোগ্যতা নেই লিলীমাকে ভালোবাসার কারণ আহনাভের বাবা তখন সামান্য এক অফিসের কর্মচারী ছিল আর আহনাভ ছিল বেকার।আহনাভ বলেছিল একটা মানুষের থেকে কী বেশি তুমি টাকাকে ভালোবাসো লিলীমা? লিলীমা উত্তরে বলেছিল টাকা কেই বেশি ভালবাসতে হয়।টাকা না থাকলে জীবন অচল তাই তোমার মত বেকার কে ভালোবেসে লাভ নেই।”

লায়ানা থেমে গিয়ে আবার বলা শুরু করে,” বনু আহনাভ মেয়েটাকে সত্যি পাগলের মত ভালোবাসেরে।মেয়েটার এমন ব্যাবহারের পর আহনাভ অস্বাভাবিক আচরণ করা শুরু করেছিল তারপর ধীরে ধীরে আহির সামলায় আহনাভকে।জানিস বনু আহনাভ এইসব বলার সময় আমি ওর চোখের কোণে পানি দেখেছি।মেয়েটাকে সত্যি ভালোবাসে বলেই ওই মেয়েটার কথা বলতে গিয়েও আহনাভের চোখে পানি চলে আসে।যেইদিন আমি আহনাভ কে দ্বিতীয় বার দেখি ডিনার ডেট এর দিন ,সেইদিনই রাফিকে লাগিয়ে দিয়েছিলাম ওর বিষয়ে খুঁটি নাটি সব ইনফরমেশন বের করতে।তার পরের দিনই রাফি আমাকে এসে ওর অতীত সম্পর্কে সব জানায়।কিন্তু আজ আহনাভের মুখ থেকে শুনার এক ইচ্ছা হলো আমার তাই এত্ত জোর করলাম।ভালোবাসা কী অদ্ভুত বনু,একজন ভালোবেসে ঠকে গিয়ে ভালোবাসায় বিশ্বাস করে না আর আমি তার মায়ায় পড়ে গিয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছি তার জন্য।

মুগ্ধতা লায়ানার পিঠে থাপ্পড় দিয়ে বলে,”এই মাইয়া তুই না স্ট্রং এইটুকু তে তো ভ্যা ভ্যা করে কান্না করিস কেন।একদম চুপ কর, অতীত নিয়ে তো মানুষ সারাজীবন বাঁচে না।তুই তো সবসময় বলসি তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবি তো এত্ত ভাবার কী আছে আহনাভ না মানলে ওকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবি।”

লায়ানা হেঁসে দেয়।

মুগ্ধতা বলে,”এখন তো তিন টা বাজে তো চল ব্লু বেরিতে গিয়ে খেয়ে দেয়ে আজ একটু ঘুরাঘুরি করি দুজন।”

লায়ানা মুগ্ধতাকে ছেড়ে দিয়ে সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বলে,”ঠিক বলছিস।আমার অনেক খুদা লেগেছে রে।ওই হোয়াইট ডায়মন্ড এর সাথে ঝগড়া করে আমার হাফ এনার্জি এমনি শেষ হয়ে গিয়েছে।শাকচুন্নি লিলীমার জন্য ওই বজ্জাতের চোখের কোণে পানি দেখে বাকি এনার্জিও শেষ হয়ে গেসে।ওই আহনাভ কী সাঙ্ঘাতিক মায়ায় ফেলেছে আমায়,চোখের পানি দিয়ে পুরো নরম বানিয়ে ফেলতে পারে আমাকে।”

.
দিনের ব্যস্ত নগরী যেন মিথ্যে মুখোশ পরে থাকে। রাতের শহরের চেহারাটাই আসল।রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে আছে চারপাশ,রাস্তার ল্যাম্প স্ট্যান্ড গুলো অন্ধকারকেই যেনো সায় দিতে চাইছে ।রাস্তার ল্যাম্প স্ট্যান্ড গুলোর আলো জ্বলছে তো বন্ধ হচ্ছে।

রাহমান,অঙ্কুর,অজয় ও আমজাদ চারজনকে চেয়ারে বেঁ’ধে রাখা হয়েছে।রুদ্র রাফি আর তাদের সামনে বসে থাকা মেয়ে দুইটি সেইদিন রাতে ক্লা’ব থেকে চারজনকে আনার পর এই তিনদিনে পৃথিবীতে থেকে ন’র’কে’র স্বাদ দিয়ে দিয়েছে ।

চারজনকে ই’লে’ক’ট্রি’ক বা’র্ন দেয়ার ফলে শরীরের প্রত্যেকটা স্থানে ক্ষত কালচে হয়ে স্পষ্ট হয়ে আছে।আমজাদের পায়ের মধ্যে গরম পানি ঢে’লে দেয়ায় পা পুরে লাল-কালচে রং ধারণ করে আছে।অঙ্কুর ব্যা’থা’য় অ’জ্ঞা’ন হয়ে আছে তার হাত কে’টে ফে’লা’র কারণে।

তাদের চারজনের সামনে বসে আছে মেয়ে দুইটি।মেয়ে দুইটির মধ্যে একজন আমজাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,”আর কত?বলে দে এইবার নাহলে বুঝতেই পারছিস তোদের শেষ পরিণতি কী হতে পারে।”

বলতে বলতে মেয়েটি মুখের মাস্ক খুলে ফেললো।রাহমান চরম বিস্ময় নিয়ে বলল,” রুহানা তুমি!তুমি তো একজন বড় অ্যাকট্রেস।রুহানা আমাদের সাথে এমন কেনো করছো তুমি।”

সোফায় বসে থাকা মেয়েটি তার মাস্ক খুলে ফেলে,উঠে দাড়িয়ে বলে,”তোদের কেনো আটকে রেখেছি তোরা জানিস না?”

আমজাদ দুর্বল কণ্ঠে বলে,”এই মেয়ে তুমি কে?”

“আমি নিশি তোর যম বুঝলি।”বলেই নিশি এগিয়ে গিয়ে আমজাদের গাল টিপে ধরে।আমজাদ অস্পষ্ট স্বরে ‘আহ’ বলে উঠে।

একই ভাবে আমজাদের গাল টিপে ধরে রেখে নিশি বলে,”মুখ যদি না খুলিস তোকে তো আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।” বলেই পকেট থেকে ছুরি বের করে আমজাদের পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসে বলে,”জানিস এই ছুরি দিয়ে তোর পায়ের শিরা কেটে দিলে মাত্র পাঁচ সেকেন্ড লাগবে তোর অ’ক্কা পেতে।”

আমজাদ শুকনো ঢোক গিললো।নিশি ছুরিটা আমজাদের পায়ের শিরায় চালাতে নিবে সেই মুহূর্তে আমজাদ চেঁচিয়ে বলে উঠে ,”আমি বলব বলব প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও।”

রাহমান,অজয় দুজনে অবাক হয়ে দুর্বল দৃষ্টিতে আমজাদের দিকে তাকিয়ে বলে,” কী বলছিস বলে দিবি!”

আমজাদ পুনরায় চেঁচিয়ে বলে উঠে,”হ্যা আমি বলবো প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও।”

রুহানা বলে,”তাহলে বল।”

আমজাদ বলা শুরু করে,”আমি আমার বস কে এই অব্দি দেখিনি তার সম্পর্কে শুধু মাত্র আমার জানার মধ্যে রয়েছে সে কানাডা থাকে।ঐখান থেকেই সব পরিচালনা করছে।বসের সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানে তুষার।তুষার বাংলাদেশেই আছে কিন্তু কোথায় আমার জানা নেই।বস প্রথমে তুষার কে সব কাজ দিয়ে থাকে তারপর তুষার আমাদের লোকদের কাজ গুলো বুঝিয়ে দেয়।”

রুহানা রুদ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,”রুদ্র এদের শে’ষ করে ফেলো।”

আমজাদ চিৎকার করে বলে উঠে,”আমি তো সব বলে দিয়েছি তাহলে কেনো আমাদের মা’রা হবে?”

রুহানা দাঁতে দাঁত পিষে বলে,” জানিস না কেনো?এই অব্দি কত মেয়েকে ধ’র্ষ’ণ করেছিস আদও জানিস?ওই ধ’র্ষি’তা মেয়ে গুলোকে নির্মম ভাবে মেরে কোথায় কোথায় মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছিলি তোদের আদও মনে আছে?এই অঙ্কুর ওই মেয়ে গুলোকে মাটি চাপা দিয়েছে নিজের হাতে তাইতো ওর দুটো হাতই কে’টে ফে’লে’ছি?কত মেয়েকে পা’চা’র করেছিস এই অব্দি কত্ত মেয়ের জীবন ন’ষ্ট করেছিস তোরা।আর পুলিশের হাতে তোদের তুলে দিয়ে লাভ নেই তোরা ঐখান থেকে বেরিয়েও আবার একই কাজ করবি।”

রাহমান চেঁচিয়ে বলে,”ছেড়ে দে আমাদের। বস তোদের শে’ষ করে ফেলবে দেখেনিস।”

“কে কাকে শে’ষ করবে তা পরবর্তীতে দেখা যাবে।রুদ্র রাফি কাজ তোমাদের কাজ শুরু করো।ওই মেয়ে গুলো যেমন নিজেদের প্রাণের ভিক্ষা চেয়েও এদের থেকে নিজেদের সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারেনি তেমনি এদের এমন ভাবে মৃ’ত্যু দাও যেনো এরা প্রতি মুহূর্তে আর্তনাদ করে প্রাণের ভিক্ষা চায়।”বলেই নিশি বেসমেন্ট ত্যাগ করে সাথে রুহানাও।

…..

সকাল থেকে দুপুর অব্দি আহির লায়ানাকে অসংখ্য বার ফোন করে ফেলেছে।লায়ানার ফোন ধরার নাম গন্ধ নেই।শেষে আহির মুগ্ধতাকেই ফোন করে দেয়,দুই তিনবার রিং হতেই মুগ্ধতা ফোন রিসিভ করলে আহির বলে,

” আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছো মুগ্ধ?”

” ওয়ালাইকুম আসসালাম।আলহামদুলিল্লাহ বিন্দাস আছি।আপনি কেমন আছেন?ওহ সরি ভুল প্রশ্ন আপনার আশে পাশের মানুষ কেমন আছে?”

“আমি কেমন আছি না হয়ে আমার আশ পাশের মানুষ কেমন আছে তা কেনো ??”

“কারণ আপনি যেই পরিমাণে বদের হাড্ডি আপনার হালচাল জিজ্ঞেস না করে তাদের করা দরকার।আপনি তাদের বেশি বিরক্ত করবেন আর নিজে ভালোই থাকবেন তাই আরকি।”

“তুমি আমাকে সত্যি এমন ভাবো!ঠিক আছে সমস্যা নেই।আমার আশে পাশে যেমন আমার পিএ নওশাদ এর কথা বরং বলি সে একদম ভালো নেই আমি কারণ সকাল থেকে আমি তার অনেক খাতির দাড়ি করেছি তাও সে নাকি ভালো নেই। বুঝো ভালো মানুষের দিন নাই।”

“হুঁ বুঝি বুঝি।আপনি কি টাইপ এর খাতির দাড়ি করতে পারেন সেটাও বুঝি।এখন বলেন ফোন কোন কারণে দেয়া হয়েছে।”

“আসলে আমি সকাল থেকে হায়াকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি হায়ার ফোন সুইচ অফ বলছে কেনো?হায়া ঠিক আছে?”

“লায়ানা এক গুরুত্বপূর্ণ কাজে আছে তাই ফোন সুইচ অফ।ওর সাথে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা থাকলে আমাকে বলে দিতে পারেন।”

“আসলে কাল হায়া ডিজাইন এর মেইন প্রজেক্ট ফাইলে সাইন করে দিয়ে ফাইল গুলো দিয়ে গিয়েছে কিন্তু ওর সাথে তো দেখাই হলো না।আজ হায়ার সাথে ডিজাইন এর একটা বিষয় নিয়ে আমার আর আহনাভের সাথে মিটিং ছিল।আমার পিএ হায়ার পিএ রাফিকে ফোন দিলে রাফি ফোন তুলছে না হায়াও ফোন ধরছে না।”

“আমার মনে হয় না আজ লায়ানা কোনো মিটিং অ্যাটেন্ড করতে পারবে।লায়ানা ফিরলে আপনাকে ঠিক জানিয়ে দিবে।”

” ঠিক আছে।” আহির থেমে গিয়ে আবার বলে,”
জানো মুগ্ধ আমার মা পুরো তোমার ফ্যান হয়ে গিয়েছে।তোমাকে নিয়ে যা আলাপ আলোচনা সর্বক্ষণ।”

“ওহ ওহ আমাকে নিয়ে ফ্যান হওয়ার কী আছে।আমি তো উল্টো আন্টির ফ্যান হয়ে গিয়েছি আমার মায়ের পর সেকেন্ড লেডি দেখলাম যে অনেক সুইট কিউট।আমি আন্টির সাথে দেখা করবোই একদিন।আর আহনাভ ভাইয়ের আম্মুকেও আমার খুব ভালো লাগে।”

“ভালোই তো।তাহলে চলে আসো একদিন আমাদের বাড়ি।মা আর বড় মা খুব খুশি হবে তোমাকে দেখে।”

“হুঁ আসবো একদিন ইন শা আল্লাহ।” বলে থেমে পুনরায় বলে,” তাহলে রাখি।” বলেই ফোন কেটে দেয় মুগ্ধতা।

.
আহনাভ অফিসের কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় শুটিংয়ে চলে যায়।আজ শুটিংয়ে ওলি যতবার আহনাভের গায়ে ইচ্ছেকৃত ভাবে ঢলে পড়তে চেয়েছে আহনাভ চট করে দূরে সরে গিয়েছে।শুটিং শেষে ওলি আহনাভের সাথে কথা বলতে আসলে আহনাভ এড়িয়ে গিয়েছে।ওলি কে দেখলেই যেনো লায়ানার দেয়া সাঙ্ঘাতিক থ্রেট মনে পড়ে যায় আহনাভের।

.
রাতের শহরটা অবাধ্য শিশুর মতোই জেগে থাকতে চায়। নিয়ন আলোয় স্নিগ্ধ হয়ে ঢুলু ঢুলু চোখে যেন ঘুম কাটাতে চায়।রাতের এই অন্ধকার শহর যেনো শত মানুষের কষ্ট তার অন্ধকারে ঢেকে রেখেছে।

আহনাভের গাড়ি হাইওয়ের উপর দিয়ে যাচ্ছে। ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে আছে আহনাভ।শুটিং শেষ করে ওলি কে এড়িয়ে কোনো ভাবে বেরিয়ে এসেছে আহনাভ।গাড়ি তমাল চালাচ্ছে।আহনাভের দৃষ্টি রয়েছে জানালা ভেদ করে বাহিরের দিকে।

আহনাভের গাড়ির পাশ দিয়ে হঠাৎ একটি বাইক চলে যায়।আহনাভ চমকে যায়।বাইকটি মিডিয়াম স্পিডে গিয়েছে,কিছু মুহূর্তের জন্য মনে হয় সে লায়ানাকে দেখেছে ওই বাইকটি চালিয়ে লায়ানা যাচ্ছিল,লায়ানাকে কেমন যেনো দেখাচ্ছিল।

আহনাভ তমাল এর দিকে তাকিয়ে বলে, ” তমাল দ্রুত গাড়ি চালাও ঐযে সামনের ওই কালো বাইক টিকে আটকাও।ফাস্ট তমাল।”

তমাল গাড়ি দ্রুত গতিতে ছুটিয়ে নেয়।ফুল স্পিডে চালিয়ে কালো বাইক টির সামনে গিয়ে গাড়ি থামায়।বাইকটির সামনে আচমকা গাড়ি এসে থামায় বাইকটি কোনো রকমে ব্রেক কষে থেমে যায়।

চলবে।

ভুল ত্রুটি হলে আশা করি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here