ডুবেছি_আমি_তোমাতে #লেখিকা_Aiza_islam_Hayati পর্ব-০১

0
648

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#লেখিকা_Aiza_islam_Hayati
পর্ব-০১

চারপাশে রাতের ঘুটঘুটে এক অন্ধকার পরিবেশ তার সাথে এক নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।কিছু অন্ধকার পরিবেশ কিছু কিছু মানুষের মধ্যে ভয়ের উন্মেষ ঘটায়।কারো জীবনে হয়তো আজ ভয়ের উন্মেষ ঘটেছে,তাই আজ এক অন্ধকার অন্য এক অন্ধকারকে বি’না’শ করতে ব্যাস্ত।

জায়গায় জায়গায় র’ক্তে’র ছোপ ছোপ পড়ে যাওয়া এক দেহ ঝুলছে।ঝুলন্ত দেহের অধিকারী লোকটি আনুমানিক মাঝ বয়সী পুরুষ।লোকটির নাক দিয়ে অনবরত র’ক্ত বেয়ে মাথার বা পাশ ঘেঁষে ফ্লোরে পড়ছে,ঠোঁটের বা দিকে র’ক্ত জমাট বেঁধে আছে।লোকটির মুখ থেকে চাপা আ’র্ত’না’দ বেরিয়ে আসছে বারংবার।লোকটির ঠিক পাশে হলুদ রঙের বাল্ব ঝুলছে,বাল্বটি একবার জ্বলছে তো পুনরায় বন্ধ হয়ে আসছে।

লোকটির ঠিক সামনে কালো পোশাকধারী ঘর্মাক্ত বলশালী দেহের অধিকারী দুইজন পুরুষ দাড়িয়ে, তাদের দুজনের হাতে হকিস্টিক দুজনই হাঁপাচ্ছে তাদের মুখে ফুটে উঠেছে এক হিং’স্র’তা। দুইজনের মধ্যে একজন কিছুটা এগিয়ে এলো লোকটির সামনে অতঃপর লোকটির চুল হাতের মুঠোয় নিয়ে খিঁচে টেনে ধরলো, লোকটি পুনরায় চাপা আ’র্ত’না’দ করে উঠলো। লোকটির চুলের মুঠি নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে খিঁচে দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো, ” মেয়েগুলোকে পা’চা’র করে কোথায় পাঠানো হয়েছে বল? মুখ খুল অ’ধ’ম! যদি মুখ না খুলিস এতক্ষন যাবত যত্ত না তোর গায়ে আঘাত করেছি তার থেকেও বেশি আঘাত করবো,এখন তাও যদি তোর এই মুখ না খুলিস তোকে একেবারে শেষ করে ফেলবো।”

লোকটি ভারী নিশ্বাস ফেলে তার রক্ত জমাট ঠোঁট বাঁকিয়ে বিচ্ছিরি হেসে বলে,”তোরা আমাকে মে’রে ফেললেও আমি কিচ্ছু বলবো না তোদের।”

লোকটির চুলের মুঠি ছেড়ে দিল পিছিয়ে এসে ঘর্মাক্ত গায়ের সাথে লেপ্টে থাকা শার্ট এর উপরের কোর্ট খুলতে খুলতে বাঁকা হাসলো পুরুষটি।পাশে দাড়িয়ে থাকা পুরুষটিও এতক্ষনে তার গায়ে লেপ্টে থাকা কোর্ট টি খুলে পাশের চেয়ারে রেখে দিয়েছে।দুজন দুজনার শার্ট এর উপরের দিকের তিনটে বোতাম আনব্লক করে ফেললো।সাদা ধবধবে ফর্সা বুকের অনেকটা দেখা মিলছে,ঘর্মাক্ত শার্ট টি এমন ভাবে গায়ের সাথে লেপ্টে আছে যে দুই হাতের বাইসেপ্স এবং দুজনার সিক্স প্যাক অব্দি স্পষ্ট হয়ে আছে।ঘর্মাক্ত কপাল থেকে ঘাম গাল বেয়ে ঘেঁষে পড়ছে।দুজনের মধ্যে একজন বলে উঠে,”রাফি চল একে এর প্রাপ্য জায়গায় পাঠিয়ে দি।”

রাফি হকিস্টিক শক্ত করে ধরে বলে,”রুদ্র একে একটু অন্য ভাবে মারা যায়না?”বলেই রাফি থেমে পিছনে ফিরে বলে,”আচ্ছা আপনারা কী বলেন ম্যাম?”

রাফি থামতেই এক মেয়েলি কণ্ঠের হাসি ভেসে আসে।ঝুলে থাকা লোকটির কর্ন কুহরে মেয়েলি হাসির শব্দ যেতেই লোকটি তার চোখ খুলে ঝাপসা চোখে দেখার বৃথা চেষ্টা করতে লাগে।মেয়েটি যেই সীমানায় দাড়িয়ে আছে হলুদ বাল্বের আলো তাকে ছুঁয়েও যেনো ছুঁতে পারছে না।মেয়েটির পাশ ঘেঁষে ঠিক সামনে হলুদ বাল্বের আলোয় আরেকজনের ছায়া মূর্তির অবয়ব স্পষ্ট হয়ে উঠলো।মেয়েটি সামনে এগিয়ে আসে তার পাশের ছায়া মূর্তির অবয়ব এর অধিকারীও সামনে এগিয়ে এলে,ঝুলে থাকা লোকটি চোখ খুলে পুনরায় ঝাপসা চোখে পলক ফেলে দেখার প্রয়াস চালিয়ে যায় কয়েকবার পলক ঝাপটাতেই স্পষ্ট ভাবে দেখতে পেলো।রুদ্র,রাফি বাদে দুইজন মেয়েকে আবিষ্কার করলো।লোকটি মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই মেয়ে দুইটি রাফি ও রুদ্রর হাত থেকে হকিস্টিক নিয়ে লোকটিকে এ’লো’পা’থা’ড়ি মা’র’তে মা’র’তে ঝাঁঝে ভরা কণ্ঠে দুইজন চেঁচিয়ে বলে,”মেয়েদের দেশের বাহিরে পা’চা’র করিস সাহস কত্ত বড় তোদের,তাদের বিক্রি অব্দি করে দিস।আবার ড্রা’গ’স পা’চা’র করিস,সেই ড্রা’গ’স স্কুল পড়ুয়া বাচ্চাদের হাতে ধরিয়ে দিস। যারা তোদের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে প্রতিবাদ জানায় তাদের নি’র্ম’ম ভাবে হ’ত্যা করিস তোদের কী হাত কাপে না।বল তোদের পুরো গেং টা কে চালাচ্ছে বল অ’ধ’ম।তোদের তো বাঁ’চা’র’ই অধিকার নেই।” ঝুলন্ত লোকটি ব্যাথায় ভুবন কাঁপানো চিৎকার দিয়ে উঠলো তবুও মুখ ফুটে কিছু বলল না।

মেয়েদুটি থেমে যায় হকিস্টিক হাতের থেকে ফেলে দেয়,দুইজনের মধ্যে একজন রুদ্রর কাছে এগিয়ে এসে বলে,”রুদ্র এর মুখ থেকে কথা বের হবে না এই আবর্জনাকে বাঁচিয়ে রেখে আর কোনো লাভ নেই।ওর এই নেতিয়ে পড়া শরীরটিকে আমার পোষা বাঘের খাঁচায় রেখে আসো ওকে খু’ব’লে খা’ওয়ায় জন্য আমার পোষা বাঘটি যথেষ্ট।”
.

ব্যাস্ত শহরে ভোরের আলো ফুটতেই মানুষ তার কর্মস্থলে ছুটতে শুরু করে।ঋতু যখন শীত এই সময়টিতে সূর্যের আলোতে কোনো তেজ নেই,রাস্তার পাশে সারি সারি গাছ গুলোতে তেমন সবুজ রঙের তেজটিও যেনো থাকে না, গাছে গাছে নতুন ফুলের আগমন ঘটে।অপরাহ্নের পরপরই এই ব্যাস্ত শহর আরো ব্যাস্ততায় ভরে ওঠে,বেশি ব্যাস্ত করে তোলে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা।সকলে সকলের কাজে ব্যাস্ত।

হসপিটাল থেকে বেরিয়ে বা হাতে অ্যাপ্রোন জুলিয়ে ফুটপাত দিয়ে আনমনেই হেঁটে যাচ্ছে মুগ্ধতা।হঠাৎ সে তার হাঁটার গতি কমিয়ে দিল ,মুগ্ধতার ঠিক কিছুটা সামনে একটি ছেলে দৌড়াচ্ছে তার পিছনে আরেকটি ছেলে।একজনের গায়ে কালো ফরমাল ড্রেস আপ তার ঠোঁটের কোণে এক প্রসন্ন হাসি আরেকজনের গায়ে সাদা রঙের ফরমাল ড্রেস আপ তার মুখে রাগী ভাব।অনবরত একজন আরেকজনের পিছনে দৌড়াচ্ছে।সামনের ছেলেটি থেমে ঠোঁটের কোণে হাসি বজায় রেখে বলে,

“ভাই তুই থাম এটা রাস্তা আমরা এমন পাকরাম পাকরাই কেনো খেলতেছি। আহনাভ ভাই থাম তুই থাম।”

আহনাভ দৌড়ে কাছে এসে বলে,” তো আহির তুই এইটা কী করছিলি!”

দূরে দাড়িয়ে থাকা মুগ্ধতা অবাক হয়ে আহিরের দিকে তাকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে,’আহির’। আহির,আহনাভ এর কথা মুগ্ধতা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে।

আহির আহনাভের কাছে আরো এগিয়ে এসে হেসে বলে,”আমি আবার কী করলাম?এই আফরান আবরাহার আহির কিছু করতে পারি নাকি।শুন আমি অনেক ভদ্র আমার দ্বারা কোনো উল্টা পাল্টা কাজ কখনোই হয় না।শুধু শুধু আমার মত নিশ্পাপ এর দিকে আঙ্গুল তুলছিশ।” আহনাভের কাঁধে হাত রেখে বলে,”এইভাবে খাম্বার মত দাড়িয়ে না থেকে চল।”

আহনাভ খিঁচে আহিরের পিঠে কিল বসিয়ে দিল।আহির এক ঝটকায় দূরে সরে গিয়ে পিঠে হাত দিয়ে মুখটা কাচুমাচু করে বলে,আহহহহ মিস্টার জায়ান আবরাহার আহনাভ আপনি আমাকে এভাবে মারতে পারেন না!” আহনাভ চোখ রঙালে আহির বলে উঠে,”আচ্ছা আচ্ছা আর করবোনা এমন।মাফ কর প্লিজ ভাই।”

মুগ্ধতা দুই হাত বুকে ভাঁজ করে ভ্রু কুচকে নিজেই আওড়ালো,”কী এমন যে,এমন করে মাফ চাইছে।মাফ করে দিলেও তো হয়।”

আহনাভ কণ্ঠের খাদ বাড়িয়ে বলে,”মন তো চাইছে তোকে আরো কয়েকটা কিল বসিয়ে দি।শ’য়’তা’নের কারখানা তুই একটা।এক তুই অফিসে আজ আমার ইম্পর্টেন্ট ফাইলে জুস ফেলসস দ্বিতীয়ত আজকের মিটিং টাইমে ঘুমিয়ে মিটিং নষ্ট করেছিস তৃতীয়ত এখন তুই এইটা কী করলি আইস ক্রিম খেতে গিয়ে আমার শার্টে এত্তোগুলো আইস ক্রিম ফেললি,আরেহ আইসক্রিম যখন খাবি না আমার শার্ট কে খাওয়ানোর কী দরকার ছিল।”

মুগ্ধতা সেই একই ভাবে দাড়িয়ে আহনাভের কথা শুনে আহনাভের শার্ট এর দিকে দৃষ্টিপাত করলো আইসক্রিম শার্টে পরায় আসলেই অনেকটা নোংরা হয়ে গিয়েছে।

আহনাভ,আহিরের পাশ দিয়েই একটি ছেলে হাতে কোল্ড ড্রিঙ্ক নিয়ে যাচ্ছিল আহির ছেলেটির হাত থেকে খপ করে কোল্ড ড্রিঙ্ক নিয়ে আহনাভের মাথায় ঢেলে দেয়,আচমকা এমন হওয়ার ছেলেটি সহ আহনাভ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আহিরের দিকে।আহির শুকনো ঢোক গিলে বলে,”আহনাভ মাই ডিয়ার ব্রাদার মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয় এমন হট কেন হয়ে জাস তুই মাথা ঠাণ্ডা কর আমি যাই।” বলেই এক ভো দৌড়।আহনাভ চোখ বন্ধ করে বড় এক শ্বাস নিয়ে বিরবির করে বলে,”আহির শ’য়’তানের কারখানা শা’লা তুই আজকে শেষ।”

আহনাভ চোখ খুলে দেখে পাশে ছেলেটি বোকার মত মুখ করে দাঁড়িয়ে বুঝার চেষ্টা করছে তার সাথে কী হলো।আহনাভ পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে ছেলেটির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,”ভাই সরি আপনার কোল্ড ড্রিংকস ওই শ’য়’তানের কারখানার জন্য নষ্ট হয়ে গেলো প্লিজ কষ্ট করে একটা কিনে নিবেন আবার।” বলেই আহনাভ দৌড়।ছেলেটি এখনও স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে।

এইদিকে মুগ্ধতা হাসতে হাসতে পারছে না মাটিতে লুটিয়ে পড়তে।আহির আহনাভের মাথার উপর কোল্ড ড্রিংকস ঢালার পর মুগ্ধতা চোখ বড় বড় করে তাকিয়েই ফিক করে হেসে দিয়েছিল।এখন সে ভুবন ভুলানো হাসিতে মত্ত।

“বনুইইইইই!”,পিছন থেকে চেনা কণ্ঠস্বর মুগ্ধতার কানে আসতেই মুগ্ধতা হাসি কোনমতে থামিয়ে পিছন ফিরে অবাক হয়ে একবার হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার সামনের মানুষটির দিকে তাকিয়ে বলে,”লায়ানা তুই এইখানে তাও এখন এই টাইমে!”

মেয়েটি এগিয়ে এসে মুগ্ধতার সামনে দাড়িয়ে চরম বিস্ময় নিয়ে বলে,”হায়াতি আহমেদ লায়ানার বোন মিস মুগ্ধতা আহমেদ আয়ানা কিনা ব্লাসিং করছে ব্ল্যাক কালার ফর্মাল ড্রেস পরা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে, ভুবন ভুলানো হাসি দিচ্ছে মনে হচ্ছে আমি মাত্র পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য হলাম!আমি তো ভাবতে পারিনি আমি এমন দিনটি দেখতে পারবো!আহহ কে ওই ছেলেটা টেল মি প্লিজ বনু।”

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here