ভালোবাসার_অন্যরুপ 🌸❤ #পর্ব_13 #Aye_Sha

0
181

#ভালোবাসার_অন্যরুপ 🌸❤
#পর্ব_13
#Aye_Sha

🌸
🌸

হোল কলেজ ক্যাম্পাসের মাঝে সজোরে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো ইসমি, অর্নিলের গালে। অর্নিল গালে বাম হাত দিয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে আছে, আর ইসমি অর্নিলের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসছে, শরীর জানো থর থর করে কাঁপছে ইসমির রাগে আর কষ্টে। অর্নিল ইসমির দিকে গালে হাত রেখেই তাকালো আর ইসমি এক ঝটকায় অর্নিলের কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বললো।

ইসমি– আর কোনদিন ও আমার চোখের সামনে আসার ভুল করবেন না মিস্টার অর্নিল খান। পরিণতি খুব ভয়ংকর হবে তাতে। আপনার মতো একটা ফ্রড ক্যারেক্টার লেস ছেলে কে বিশ্বাস করে একবার যেই ভুল টা করেছি তা আর দ্বিতীয় বার করবে না এই ইসমি। নিজের এই স্যরি চাওয়ার ন্যাকামি নিজের কাছে রাখুন। গুড বায়।

কথাগুলো বলে অর্নিলের কলার ঝাড়া মেরে ছেড়ে অর্নিলের বন্ধুদের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ইসমি ওখান থেকে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে গেলো। অর্নিল একদৃষ্টে ইসমির যাওয়ার দিকে চেয়ে রয়েছে, চোখ থেকে অনবরত পানি পরছে, ক্যাম্পাসের সবাই অর্নিলের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে এই ভেবে যে একটা মেয়ে সবার সামনে অর্নিল কে থাপ্পড় মারলো আর অর্নিল টু শব্দ টাও করলো না। যেই মেয়ের পিছনে ১ টা মাস অর্নিল ঘুরেছে সে এইভাবে অর্নিল কে রিজেক্ট করল? সবার মনে এই একটাই প্রশ্ন।

অর্নিল একভাবে দাঁড়িয়ে থাকায় অর্নিলের বন্ধু নিলয় অর্নিলের কাঁধে হাত রেখে বললো।

নিলয়– তুই এভাবে মেয়েটাকে যেতে দিলি কেনো? তোর গায়ে হাত তুললো আর তুই ছেড়ে দিলি? প্রথমে ওর বোন মীরা তোর ভাইয়ার গায়ে হাত তুললো আর আজ ও তোর গায়ে। আমি তোর জায়গায় হলে তো মেয়েটাক….

নিলয় আর কিছু বলার আগেই একটা ঘুসি খেয়ে ছিটকে মাটিতে পরলো, মাটিতে পরে নিজের ঠোঁটের কোণে আঙুল দিয়ে চোখের সামনে আনতেই দেখলো রক্ত বের হয়ে গেছে, রেগে সামনে তাকাতেই দেখলো অর্নিল নিজের হাত মুঠো করে রাগে ফুঁসছে। নিলয় কিছু বকতে যাওয়ার আগেই অর্নিল ওর শার্টের কলার ধরে টেনে তুলে চিৎকার করে বললো।

অর্নিল– ইসমির ব্যাপারে একটা বাজে কথা বলার আগে হাজার বার ভাববি। ওর ব্যাপারে কথা বলা তো দুর, চিন্তা ভাবনা ও করবি না ওকে নিয়ে। ভালোবাসিইইইই ইসমি কে আমিইইইই!! (চিৎকার করে)

নিলয়– তাই নাকি? তাহলে অভিনয় করতে করতে ভালোবেসেই ফেললি। মানতে হলো তো আমার কথা?

নিলয়ের কথা শুনে অর্নিলের হাত আলগা হয়ে গেলো, অর্নিল একবার ইসমির যাওয়ার পথের দিকে তাকালো আর চোখ বন্ধ করে ইসমির শেষ কথা গুলো মনে করলো, চোখ খুলতেই পানি গড়িয়ে পরলো, অর্নিল সেটা কে আড়াল করে ওখান থেকে চলে গেলো ভার্সিটির ভিতর। নিলয় আর অর্নিলের বাকি বন্ধুরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। তারপর ওরাও চলে গেলো।

🌸

আমি নীতার ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তখনই শুনতে পেলাম নীতা কাওর সাথে কথা বলছে। আগের দিনও আমি শুনতে পেয়েছিলাম কিন্তু কোনো প্রমাণ রাখতে পারিনি। আজ সেই ভুল করবো না আমি, প্রমাণ পেলে সেটা আমান কে দেখাতে হবে আমায়।

নীতা– তুমি জানো কাল কি হয়েছে?

__কি হয়েছে?

নীতা– কালকে আমি তোমার কথামতো মীরার ঘরে গিয়ে আমান কে হাগ করেছিলাম, আমান সঙ্গে সঙ্গে আমায় দুরে সরিয়ে মুখ করলো, বললো অসুস্থ ছিলাম তাই এতদিন কিছু বলেনি, এখন থেকে জানো আর কাছে না যাই। (ন্যাকা কান্না করে)

__কি বলছিস এসব?

নীতা– এরপর আমি মীরা কে অপমান করি আর মীরা ঘর থেকে বেরিয়ে যায় তারপর আমান…(থেমে গেলো)

__কি করেছে?

নীতা– কিছু করেনি ঐ তো অপমান করেছে। বললাম তো। (আমতা আমতা করে)

__তুই যে বললি তোর কপাল কেটে গেছে? সেটা কি করে হলো?

নীতা– ও..ওটা ত..তো আমি র..রাগের চোটে হাঁটছিলাম তাই পরে গেছি।

__ওহ আচ্ছা। দেখে শুনে চল।

নীতা– (মনে মনে– এখন যদি আমি বলি যে আমান আমার সাথে অরম ব্যবহার করেছে তাহলে প্রেস্টিজের বারো ভাজা হয়ে যাবে আমার। কিন্তু আমানের ঐ রুপ, ঐ হিংস্রতা মনে করলে এখনও গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যায়।)

__কি রে নীতা শুনছিস?

নীতা– হ..হ্যাঁ হ..হ্যাঁ শুনছি। বলো।

__তুই এক কাজ কর আবারও অসুস্থতার নাটক করে আমান কে বাগে নিয়ে আয়। আমানের মনে আস্তে আস্তে মীরার নামে বিষ ঢেলে দে।

নীতা– জানি জানি। আমানের মনে মীরার নামে বিষ ঢেলে দিলে ও মীরা কে এই বাসা থেকে দুর করে দেবে আর আমাকে বিয়ে করবে। আমাকে বিয়ে করলেই ওকে দিয়ে কায়দা করে সম্পত্তির কাগজে সাইন করিয়ে নেবো আর তারপর মজাই মজাআআআআ (চিৎকার করে)

__এতো জোরে চিৎকার দিস না কেউ শুনে ফেললে সমস্যায় পরে যাবি।

নীতা– ওহ স্যরি স্যরি। আসলে এতদিন ধরে চেষ্টা করছি ঐ মীরা টাকে বাসা থেকে বের করার, আমানের মন থেকে বের করার কিছুতেই পারছি না। এট লাস্ট সাকসেস পাবো।

__এখন ও কিন্তু সাকসেস পাসনি তাই আগে থেকে লাফাস না। যা গিয়ে কাজ কর। আর শোন তুই কি আমান কে সত্যি ভালোবাসিস না?

নীতা– অফকোর্স নট বেইবি। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি। আমি তো শুধু তোমার জন্য ওর সাথে নাটক করছি সম্পত্তি নেওয়ার জন্য। ইউ ডু লাভ মি নাহ?

__ইয়েস আই ডু! ওকে আমি রাখছি।

নীতা– হমম বায়।

মীরা– (মনে মনে– নীতা অন্য কাওকে ভালোবাসে? শুধুমাত্র সম্পত্তি নেওয়ার জন্য এমন করছে কিন্তু ও যে বললো ওর লাভারের কথায় এমন করছে। কে ওর লাভার? এটা নিয়ে না হয় আমান ভাববে, আমাকে এই ভিডিও টা আমান কে দেখাতে হবে।)

আমি চুপচাপ নীতার ঘরের সামনে থেকে এসে পরলাম নিজের ঘরে, ভিডিও টা সেভ করে নিলাম ফোনে, আমি ভিডিও টা আমান কে পাঠাতে যাবো ঠিক সে সময় আম্মু ডাকলো, ভাবলাম ফোন টা নিয়ে যাই, আমান হয়তো ড্রয়িং রূমেই আছে।

আমি নীচে এসে দেখলাম আমান আর নীতা ডাইনিং টেবিলে বসে আছে, আমি সেদিকে এগোতেই হঠাৎ নীতার অস্থিরতা বেড়ে গেলো।

নীতা– আ..আ..আমান, আমান আ..আ..আমার মাথাটা ভ..ভী..ভীষণ ঘুরছে।

আমান– হোয়াট? কি হয়েছে? পানি খাও। (পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে)

নীতা পানি খেয়ে আমানের বুকে ঢলে পরলো আর বললো।

নীতা– এখন একটু ঠিক লাগছে। মে বি প্রেসার লো হয়ে গেছিল, কালকে থেকে কিছু খাইনি তো তাই।

আমান– কেনো খাওনি?

নীতা– তোমার ব্যবহার টা মেনে নিতে পারিনি আমান। (ন্যাকা কান্না করে)

আমান– ওহ! আমিও স্যরি নীতা। জানি না কালকে কি হয়ে গেছিলো আমার, নিজের অজান্তেই তোমার সাথে অমন ব্যবহার করে ফেলেছি মীরার জন্য। পরে নিজেরই ভীষণ রাগ উঠছিল।

নীতা– (মনে মনে– আরিব্বাস! আমান তার মানে গিল্ট ফীল করছে? দেট’স গ্রেট! ইট’স মিন আমান এখন ও আমার বাগে আছে। এই সুযোগ টা ছাড়া যাবে না।) তাহলে তুমি এলে না কেনো রাতে আমার কাছে?

আমান– তুমি ঘুমিয়ে পরেছিলে বেইবি। আমি চেয়েছিলাম তোমার কাছে যেতে বাট তোমাকে ঘুমোতে দেখে আর ডিস্টার্ব করতে ইচ্ছে করলো না।

নীতা– (মনে মনে– নীতা তুই একটা আস্ত ইডিয়ট! কে বলেছিল কাল রাতে এতো তারাতাড়ি ঘুমোতে? কাল রাতে না ঘুমোলে আমান কে প্রভোক করে ঠিক নিজের করে নিতাম, এতে আমান কে পাওয়াও হতো আর ব্ল্যাকমেল ও করা যেতো যে আমাকে বিয়ে করতেই হবে। তারপর না হয় আমি আমার বেইবি কে বুঝিয়ে নিতাম। মীরা তো আমানকে নিজের কাছে আসতেই দেয় না, তাই আমান ও রাজি হয়ে যেতো খুব সহজে। শিট! চান্স টা মিস হয়ে গেলো, ইস এই মীরা টা যে কি করে আমান কে নিজের থেকে দুরে সরিয়ে রেখেছে কে জানে? গাধী একটা।)

আমান– কি হলো বেইবি? শরীর খারাপ লাগছে?

নীতা– একটু কফি খাবো, মাথাটা ব্যাথা করছে।

আমান– ওহ ওকেই। আব, মীরা তুমি ওখানে কেনো দাঁড়িয়ে আছো? নীতার জন্য স্ট্রং কফি নিয়ে আসো প্লিজ।

আমি আমান আর নীতার কথা বার্তা শুনে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল, আমান কি করে এক রাতের মধ্যে এতটা পরিবর্তন হয়ে গেলেন? গতকাল রাতেই তো আমাকে কতো ভালো ভাবে বোঝালেন, আমার সাথে সময় কাটালেন আর আজ অন্য কথা বলছেন? নীতা কে গতকাল যা বলেছিলেন তা কোনটাই সত্য নয়? মন থেকে নয়? আমি আর পারছি না এসব সহ্য করতে। পারছি না আমান কে নীতার এতটা কাছাকাছি মেনে নিতে। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের ভিতর।

আমান– মীরা তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছো টা কি আমি বললাম না নীতার জন্য স্ট্রং কফি নিয়ে আসো? হারি আপ!!

আমি নিজের চোখের পানি মুছে কফি করতে চলে গেলাম সেখানে আম্মু আমায় বললো।

আম্মু– তুই এসব মুখ বুজে কেনো মেনে নিচ্ছিস? তুই মেনে নিলেও আমি মেনে নেবো না।

মীরা– নাহ আম্মু! তুমি এখন কিছু বলবে না।

আম্মু– কিন্তু কেন? কিসের অপেক্ষা করছিস তুই? এই নীতা তো তোর থেকে আমানকে কেড়ে নেবে, তুই সেটা মুখ বুজে মেনে নিচ্ছিস? কি করে পারছিস মীরা? তাহলে কি সত্যি তুই আমানকে ভালোবাসিস না?

মীরা– আমি সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছি আম্মু। সঠিক সময়ে আমি প্রমাণসহ আমানের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেব নীতা কেমন। কে ওনাকে ভালোবাসে আর কে ভালোবাসে না সেটা উনি খুব শীঘ্রই বুঝতে পারবেন।

আম্মু– শেষমেষ আমার ছেলেটাকে ভালোবেসেই ফেললি তাহলে তুই। আমি জানতাম আমার ছেলের ভালোবাসার কাছে তোকে হার মানতেই হবে। তুইও একদিন না একদিন ঠিক আমানকে ভালবাস…

মীরা– কফি হয়ে গেছে। আমি দিয়ে আসছি আম্মু।

ওখান থেকে বেরিয়ে এলাম, নাহলে আম্মু মেনে নিতো আমি আমান কে ভালোবাসি। আম্মু কে এড়িয়ে যাওয়ায় হয়তো আম্মু কষ্ট পাবে কিন্তু আমার কিছু করার নেই, আম্মু যখন জানবে যে আমার জন্য ওনার ছেলের ক্ষতি হতে পারে তাই আমি চলে গেছি তখন সবটা ঠিক হয়ে যাবে। যদিও হয়তো আম্মু কোনদিন জানবে না আমি কেনো আমান কে ভালোবেসে ও মানতে পারবো না। এসব কথা ভেবে কাজ নেই, আগে আমাকে আমান কে সত্যি টা জানাতে হবে।

আমি নীতার কাছে এসে নীতার সামনে কফি রাখতে যাবো ঠিক সেই সময় নীতা হাত দিয়ে আমার হাতে ধাক্কা দিলো, আর আমি এমনি তেও একটু অন্যমনস্ক থাকায় কফি টা পরে গেলো আর নীতা চিৎকার করে উঠলো।

নীতা– আহহহহ!! আমানননন (ন্যাকা কান্না করে)

আমান– হোয়াট দ্য..!! হোয়াট ইজ দিস মীরাআআ!! একটা কাজ তুমি ঠিক করে করতে পারো নাআআ?? ওহ তুমি তো এটা ইচ্ছে করে করেছো রাইট?? আমারই ভুল হয়েছে তোমাকে বলাটা।

আমান নীতা কে নিয়ে এতটা উত্তেজিত হয়ে পরেছে যে একবারও আমার দিকে খেয়াল করেনি। কফিটার অর্ধেকটাই আমার হাতে পরেছে, কারণ নীতা সেভাবেই ধাক্কা টা মেরেছে। আমি কিছু বললাম না দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু আমানের ব্যবহার দেখছি। ঠিক সে সময় আম্মু চলে এলো।

আম্মু– আমানননন!! এসব কি হচ্ছে?? আমার বাসায় এসব চলবে না!! বার করে দাও তুমি এই মেয়েকে নাহলে আমি বেরিয়ে যাবো।

আমান– ঠিকই বলেছো আম্মু। নীতা কে আর আমি এখানে রাখবো না তোমাদের সাথে। (শান্ত ভাবে)

নীতা– এসব তুমি কি বলছো আমান??

আমান– হ্যাঁ বেইবি। (ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে সোফার দিকে এগোতে এগোতে)

নীতা– কোথায় যাবো আমি?

আমান– তোমার সঠিক জায়গায়। এখানে তোমাকে রাখলে মীরা তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করতে পারে। তাই আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না। (সোফায় বসে ফোন বার করে)

নীতা– বাট আমি একা..??

আমান– টেনশন নট বেইবি। আমি যাবো তো তোমার সাথে দেখা করতে। ডেইলি তোমার যত্ন করবো ওখানে গিয়ে। (ফোনে গেম খেলতে খেলতে)

নীতা– রিয়েলি??

আমান– ইয়েস!!

আমানের কথা শোনার পরেই নীতা দরজার দিকে তাকালো আর।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here