অলিখিত_অধ্যায় #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ১৬।

0
291

#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
১৬।

বাইকে বসে থাকা অবস্থাতে ঘুম চলে আসাটা সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার। প্রিয়তার সাথে এই মুহূর্তে এই ভয়ানক ব্যাপারটাই হচ্ছে। অযথাই মারাত্মক ঘুম পাচ্ছে তার। এই অসময়ে ঘুম পাবার কারণ অধিক বিশ্লেষণ করেও বের করতে পারল না সে। সে রীতিমতো ঢুলছে বসে বসে। পূর্বের ন্যায় বসেছেও ফারজাদ থেকে দূরত্ব রেখে বেশ।

লুকিং গ্লাসে আচমকা প্রিয়তার ঢুলু ঢুলু অবস্থা থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে ফারজাদ। বাইক থামায় চট করে। বাইক থামাতেই টনক নড়ে প্রিয়তার। ফারজাদ ঘাড় কাত করে চেয়ে বলল,

‘আপনার কি ঘুম পাচ্ছে?’

প্রিয়তা অস্বস্তি নিয়ে “না” সূচক মাথা নাড়াল। ফারজাদ বলল,

‘আমি দেখলাম, আপনি ঢুলছিলেন। এমন করলে তো পড়ে গিয়ে বিপদ বাঁধাবেন।’

এতকিছুর মাঝে এই সামান্য ঘুম আবার ফারজাদকে উদ্বিগ্ন করছে বলে প্রিয়তার অস্বস্তি হচ্ছে ভীষণ। সে মাথা নুইয়ে বলল,

‘সমস্যা নেই, আমি যেতে পারব।’

ফারজাদ বলল,

‘নামুন।’

প্রিয়তা নেমে দাঁড়াল। ফারজাদও নামল। বলল,

‘দাঁড়ান, আমি ঐপাশ থেকে চা নিয়ে আসছি। চা খেলে ঘুমটা কেটে যাবে।’

‘না না, এতকিছু লাগবে না; যেতে পারব আমি।’

ফারজাদ ক্ষীণ সুরে বলল,

‘আপনি যতদিন পর্যন্ত আমাদের কাছে আছেন, ততদিন পর্যন্ত আপনাকে সেইফ রাখা আমাদের কর্তব্য। এভাবে আপনাকে নিয়ে বাইকে যাওয়াটা রিস্ক হয়ে যাবে। দাঁড়ান আপনি, আমি আসছি।’

ফারজাদ রাস্তা পার হয়ে ওপাশে গেল। প্রিয়তা চেয়ে রইল নিষ্পলক। ততক্ষণাৎ মনে মনে আওড়াল, মানুষটাকে যে জীবন সঙ্গী হিসেবে পাবে তার থেকে ভাগ্যবতী বুঝি পৃথিবীতে আর দুজন হবে না।

ওয়ান টাইম গ্লাসে দুটো চায়ের কাপ নিয়ে পদার্পণ করল ফারজাদ। একটা কাপ প্রিয়তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

‘নিন।’

প্রিয়তা অপ্রস্তুত হেসে নিল। ফারজাদ আনমনে সামনে চেয়ে চুমুক বসাল চায়ের কাপে। দারুণ মনে হলো তার। প্রিয়তারও ভীষণ ভালো লাগল। রাস্তার এক পাশে বাইকটা দাঁড়ান। ফারজাদ তাতেই হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে। প্রিয়তা অল্প দূরে। হাতে চায়ের কাপ নিয়ে আনমনে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। রাস্তায় সোডিয়ামের আলো। গাড়িগুলো ছুটে চলছে সাঁ সাঁ করে। পার্থিব কোনো শব্দ’ই যেন প্রিয়তার কানে যাচ্ছে না এখন। সে কিছু ভাবছে। হয়তো নিজেকে নিয়ে, হয়তো ওয়াদিকে নিয়ে। যতবার’ই সে এই ভাবনার মধ্যখানে নিবদ্ধ হয়েছে, ততবারই কোটর ভরে এসেছে তার। এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটল না। তবে কোটর ছাড়িয়ে বৃষ্টি পতিত হবার পূর্বেই তা আঁড়াল করে নিল প্রিয়তা। পাছে না পাশের মানুষটা দেখে ফেলে এই ভয়ে।

তবে ফারজাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। চোখ ঘুরিয়ে না চেয়েও বুঝতে পারল সবটা। জিজ্ঞেস করল,

‘ছেলেটার প্রতি কি কখনো একটুও সন্দেহ জাগেনি? মনে হয়নি, ও আমাকে ঠকাতে পারে?’

প্রশ্ন শুনে অবাক হলো না প্রিয়তা। সে শান্ত নিষ্প্রাণ সুরে বলল,

‘না, এক মুহুর্তের জন্যও না। বরং প্রতিবার কথা বলার পর আরো বেশি বিশ্বস্ত মনে হতো তাকে।’

ফারজাদ কপাল কুঁচকে চেয়ে বলল,

‘আপনি ভীষণ নির্বোধ। এই সময়ে এসে কেউ কখনোই এত বড়ো বোকামি করে না। বাড়ি থেকে বের হবার আগে অন্তত নিজের মা বাবার কথাটা ভাবতে পারতেন।’

প্রিয়তা চাইল। চোখ ভর্তি স্রোত না থাকলেও ভেজা দেখাল দৃষ্টি। ক্ষীণ সুরে বলল,

‘মা বাবার কথা যদি সেই মুহুর্তে ভাবনাতে আসত তাহলে কি আর এত বড়ো কাজটা করতে পারতাম।’

‘এখন যে আজীবন আফসোস করতে হবে?’

প্রিয়তা ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সংযত করে অন্যদিকে চাইল। ফারজাদ আর কথা বাড়াল না। চায়ের কাপটা পাশের ডাস্টবিনে ফেলে এসে বলল,

‘উঠে পড়ুন, এবার যেতে হবে।’

প্রিয়তাও গ্লাসটা ফেলে এসে উঠে বসল। বাকি রাস্তায় ঘুমের “ঘ” টাও এল না চোখে। বাড়িতে পৌঁছেই দিলরুবা বেগমকে সব জানিয়ে ফারজাদের কিনে দেওয়া জামাগুলো দেখাল প্রিয়তা। দিলরুবা বেগম যতটা না বেশি খুশি হয়েছেন তার থেকে বেশি অবাক হয়েছেন তিনি। তার ছেলে এই প্রথম মা আর বোন ব্যতিত তৃতীয় কোনো নারীর জন্য এতটা ভাবল। গেস্ট রুমের দিকে গেল প্রিয়তা। দিলরুবা বেগম ফারজাদের দিকে চেয়ে বললেন,

‘প্রিয়তাকে কাপড় কিনে দেওয়াতে খুব খুশি হয়েছি, বাবা।’

ফারজাদ জবাব দিল না। অযথাই তার মাথায় তখন দোকানদারের বলা কথাটা বিচরণ শুরু করল। বিরক্ত হলো সে। বলল,

‘আম্মি, আমি গিয়ে ফ্রেশ হচ্ছি।’

‘আচ্ছা, যাও।’

ফারজাদ তার ঘরের দিকে পা বাড়াল। দিলরুবা বেগম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রান্নাঘরে গেলেন রাতের খাবারের ব্যবস্থা করতে।

ফ্রেশ হয়ে এসেই ফারজাদ দেখল, ফোন বাজছে তার। অচেনা নাম্বার। ধরবে কি ধরবে না ভাবছে। পরে কী ভেবে মনে হলো, ধরা উচিত। তাই রিসিভ করল। কানে লাগিয়ে সালাম দিল। ওপাশ থেকে সালামের জবাব দিয়ে এক মেয়েলী স্বর প্রশ্ন করল,

‘চাকরিটা ছেড়ে দিলেন কেন?’

প্রথমেই কন্ঠস্বরের মালিক বা তার এহেন প্রশ্ন বুঝতে না পেরে খানিকটা বিব্রতবোধ করলেও পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলে উঠল,

‘জারা ম্যাডাম বলছেন?’

‘জি, জারা ম্যাডাম বলছি। চাকরিটা ছাড়ার কি খুব দরকার ছিল?’

ফারজাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসল বিছানায়। বলল,

‘আপনাকে বিয়ে করতে না চাওয়াই বস আমাকে চাকরি থেকে বের করে দিচ্ছিলেন, আর এটা আমার জন্য ভীষণ অপমানজনক। তাই নিজে থেকেই ছেড়ে এসেছি।’

‘আব্বুর সাথে কথা হয়েছে আমার। আব্বু শুধুমাত্র আপনাকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলেন কিন্তু, আপনি যে এত সিরিয়াস হয়ে যাবেন সেটা বুঝতে পারেননি। প্লিজ, কিছু মনে করবেন না। আব্বু ঐ রিজাইন লেটার এক্সসেপ্ট করেননি। আপনাকে কাজে আবার জয়েন করতে বলেছেন। তার সাথে বলেছেন, এই বছরেই আপনাকে প্রমোশন দেওয়া হবে।’

সব শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিল ফারজাদ। বলল,

‘এসব নিশ্চয়ই আপনি বলে করিয়েছেন?’

‘না না, ট্রাস্ট মি, আব্বু নিজ থেকে সবকিছুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি কিছুই বলিনি।’

‘আচ্ছা, বিশ্বাস করে নিলাম। তবে রিজাইন লেটার দিয়ে চলে আসার পর আবার চাকরিতে গিয়ে জয়েন করাটা দৃষ্টিকটু লাগে বেশ। আপনি বসকে বুঝিয়ে বলবেন।’

‘কিন্তু, আব্বু উনার ব্যবহারে সত্যিই অনুতপ্ত। এভাবে আপনাকে বলাটা ঠিক হয়নি, সেটা আব্বু বুঝতে পেরেছেন। আপনি আব্বুর সাথে একবার কথা বলুন।’

জারা তার বাবার কাছে ফোন ধরিয়ে দিল। ফারজাদের বস অনেকক্ষণ বোঝালেন তাকে। নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ফারজাদের মতো এমন একজন কর্মঠ কর্মী ছাড়া তার কম্পানি অচল। বসের এত এত অনুরোধ ফারজাদ আর ফেলতে পারল না। অবশেষে রাজী হতে হলো তাকে। তবে বস মুখে যত যাই বলুক না কেন, এসব যে তিনি মেয়ের কথাতেই করছেন এটাতে ফারজাদ একশো ভাগ নিশ্চিত।

_____________

ঘরে মন টিকছে না প্রিয়তার। মা বাবার কথা মারাত্মক ভাবে মনে পড়ছে যেন। ভীষণ ভাবে কথা বলতে ইচ্ছে করছে তাদের সাথে। কিন্তু সেইটুকু সাহস যোগাতে পারছে না কোনোভাবেই। অস্থির হয়ে রুম জুড়ে পায়চারি চালাচ্ছে। মৌমি পড়া শেষ করে গেস্ট রুমে এল। প্রিয়তাকে রুম জুড়ে হাঁটাহাঁটি করতে দেখে হেসে জিজ্ঞেস করল,

‘কী ব্যাপার, আপু? তুমি এমন অস্থির ভাবে হাঁটাহাঁটি করছো কেন?’

প্রিয়তা থেমে দাঁড়াল। ভাবল, মৌমিকে একবার বলে দেখবে কথাটা। তার ভাবনার মাঝেই মৌমি ফের প্রশ্ন করল,

‘তুমি কি খুব দুশ্চিন্তায় আছো?’

প্রিয়তা এগিয়ে গেল। অসহায় সুরে বলল,

‘আমার মা বাবার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু, সাহস পাচ্ছি না একদম’ই।’

মৌমি তাকে আশ্বস্ত করে বলল,

‘ভয় পেও না। মা বাবারা সন্তানের সব ভুল ক্ষমা করে দেন, তুমি একবার বুঝিয়ে বলে দেখো।’

প্রিয়তা এক পল ভেবে বলল,

‘তুমি আমার একটা হেল্প করতে পারবে?’

‘কী হেল্প, বলো?’

‘আমার ভাইয়ের সাথে তুমি একটু কথা বলবে, প্লিজ?’

চলবে….

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here