অপ্রিয়_শহরে_আপনিটাই_প্রিয় #লাবিবা_আল_তাসফি ১৩.

0
217

#অপ্রিয়_শহরে_আপনিটাই_প্রিয়
#লাবিবা_আল_তাসফি

১৩.

‘তুমি অবিবাহিত মেয়ে। তোমার ঘরে একটা ছেলে কি করছে?’

প্রিয়তা দরজা ছেড়ে দাঁড়ালো। একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,

‘দাদু ভেতরে আসুন না! ভেতরে এসে কথা বলি।’

বৃদ্ধ গোমড়ামুখি বাড়িওয়ালা নড়লো না। ধারালো দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এর মাঝে রুম থেকে আয়াজ বের হয়ে এলো। প্রিয়তার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সুন্দর করে সালাম দিল বৃদ্ধকে উদ্দেশ্য করে।

‘আপনি আমার বউকে ধমকাচ্ছেন এটা কিন্তু মোটেই ভালো কাজ নয় দাদু।’

লোকটা বিষ্ময় নিয়ে প্রিয়তার দিকে তাকালো।

‘মেয়ে তুমি বিয়ে করলে কবে?’

প্রিয়তা উত্তর দেওয়ার আগেই আয়াজ উত্তর দিলো,

‘এইতো আজ। দুপুর বারোটা পয়ত্রিশ মিনিটে।’

লোকটার দুভ্রুর মাঝে ভাঁজ পড়লো। সে হয়তো আয়াজের কথাকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তাই সে সন্দিহান গলায় প্রিয়তাকে বলল,

‘এই ছেলেকি তোমার স্বামী? নাকি ফাঁকি দিতে চাইছ আমাকে?’

আয়াজ কথা বলতে নিলে প্রিয়তা থামিয়ে দিলো তাকে। মুখে হাসি এনে বলল,

‘সত্যিই আমরা বিবাহিত দাদু। বিশ্বাস না হলে আসুন কাগজ পত্র দেখাচ্ছি আপনাকে।’

বৃদ্ধ এবার মাথা নাড়ালো। চলে যেতে নিয়ে আড়চোখে একবখর আয়খজের দিকে তাকালো। আয়াজ তার দিকে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে। বৃদ্ধ নাক কুঁচকাল। বিরবির করল,

‘বিচ্চু ছেলে।’

___________

রাতের রান্নাটা প্রিয়তা নিজ হাতেই করলো। খুব যত্ন নিয়ে সে আয়াজের জন্য রুই মাছ ভুনা করেছে সাথে বেগুন ভাজি। এ দুটো খাবার আয়াজের পছন্দের। ফ্রিজে মাংস নেই। তাই এ দিয়েই আজ চালাতে হবে। প্রিয়তা রান্নার ফাঁকে বেশ অয়েকবার উঁকি দিলো। আয়াজ ঘুমাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ হয়েছে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। বেডে হেলান দেয়া অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পড়েছে ছেলেটা। ঘাড় ব্যাথা করবে তো! প্রিয়তা ভাবলো একবার ডেকে দিবে। কিন্তু পরক্ষণেই আয়াজের ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছা হলো না তার। প্রিয়তা ঘুমন্ত আয়াজকে অবলোকন করল। সুঠামদেহী প্রিয় পুরুষটার ঘুমন্ত রূপ ভয়ংকর। এত কেন সুন্দর! আয়াজের ঘুমন্ত সরল মুখ দেখে প্রিয়তার মনে কিছু অবাধ্য ইচ্ছা ছুটাছুটি করতে লাগলো। সে কি একটু ছুঁয়ে দিবে? পরক্ষণেই লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে তার গাল। বিয়ে করতে না করতেই তার ভিতর এমন লুচু স্বভাব চলে এসেছে। নট ফেয়ার! প্রিয়তা জোরে নিঃশ্বাস নিলো। প্রিয়তা নিজেই আয়াজকে বিছানায় শুয়ে দিতে চাইলো।

‘আপনার এই চুনোপুঁটির শরীর এতবড় আমাকে নাড়াতে পারবে না।’

প্রিয়তা চোখ পিটপিট করে তাকালো। রাগি কন্ঠে জবাব দিলো,

‘ঘুমাওনি যখন ভান ধরে ছিলে কেন?’

‘দেখছিলাম। একা পেয়ে আমার সুযোগ লোটার চেষ্টা করেন কিনা।’

আয়াজ কথাটা বলে চোখ টিপল। প্রিয়তা লজ্জা পেলেও তা প্রকাশ করলো না। এই ছেলে যদি একবার বুঝতে পারে প্রিয়তা লজ্জা পেয়েছে তবে সময়ে সময়ে সে প্রিয়তাকে লজ্জায় ফেলবে। সে আয়াজকে চোখ গরম দেখিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। এমন বিচ্চু ছেলের সাথে সংসার কিভাবে করবে সে?

______________

রাতের আকাশ ভিষণ সুন্দর। শিরশির বাতাসে শীতশীত লাগছে। আজ আবহাওয়া বেজায় ঠান্ডা। প্রিয়তা গায়ের ওড়নাটা চাদরের মতো করে গায়ে পেঁচিয়ে নিল। প্রায় রাতে সে এভাবে ছাদে এসে দাঁড়ায়। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়। মনের সকল অসুখ যেন এভাবেই বের করে ফেলে সে। প্রিয়তার ফোনে টুংটাং শব্দ হয়।

‘লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন? রুমে আসুন। অনেক রাত হয়েছে।’

প্রিয়তা ম্যাসেজটা দেখে ফোন পাশে রেখে দিল। তার ভিষণ রকম লজ্জা অনুভব হচ্ছে। এটা তাদের প্রথম রাত। লজ্জাটা স্বাভাবিক। প্রিয়তা দাড়িয়ে থাকে আরো কিছুক্ষণ। দুরুদুরু মন নিয়ে ছাদ থেকে নিচে নামল। ফ্লাটের দরজাটা চাপানোই আছে। পুরো ফ্লাট ঘুটঘুটে অন্ধকার। প্রিয়তা আলগোছে দরজা বন্ধ করে অন্ধকার হাতড়ে রুমে প্রবেশ করে। আবছা আলোয় সে দেখতে পায় আয়াজ বেডে অন্যপাশ ঘুরে শুয়ে আছে। প্রিয়তা ঢোক গিলে এগিয়ে যায়। কোনো শব্দ ছাড়া একপাশে চুপটি করে শুয়ে পড়ে। বিরবির করে,রাতটা যেন দ্রুত কেটে যায়। খিচে চোখ বন্ধ করে রাখতেই অনুভব হয় একটা হাত তাকে আঁকড়ে ধরেছে। তার খোঁপা করা চুলরাশি মেলে দিয়ে মুখ গুঁজেছে তার উন্মুক্ত ঘাড়ে। প্রিয়তা জমে যায়। নড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে যেন। তার মনের সাথে সাথে দেহ ও যেন শত্রুতা শুরু করেছে তার সাথে। আয়াজ কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

‘এবার পালান!’

প্রিয়তা উত্তর দিতে পারলো না। কেবল নিজেকে শুধাল,’আমার দেহ,আমার মন আজ আমার-ই বিরুদ্ধে রুখেছে।’
_____________

সকালে প্রিয়তার ঘুম ভেঙেছে বেশ বেলা করে। ঘুম থেকে উঠে সে আয়াজকে পেল না। চুল হাতখোপা করে বিছানা থেকে নামতেই ব্যাথায় টনটন করে উঠলো শরীর। বিছানার একপাশে আয়াজের শার্ট পড়ে আছে। প্রিয়তা শার্টটা স্বযত্নে তুলে নিলো। শার্ট থেকে পরিচিত সিন্ধ একটা সুবাস এসে ধাক্কা লাগলো নাকে। প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে সুবাস নিলো। কেমন একটা আয়াজ আয়াজ ঘ্রাণ।

আয়াজ মার্কেটে এসেছে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনতে। প্রিয়তার বাসায় শোবার খাট, টেবিল আর টোট্ট একটা কাপর রাখার র ্যাক ব্যতীত কিছুই নেই। সামনের রুমটা পুরোটাই ফাঁকা পড়ে আছে। কাল থেকেই আয়াজ চাকরির খোঁজ করতে নামবে। চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত এই ছোট ফ্লাটেই মানিয়ে নিতে হবে। আয়াজের ফোন বেজে উঠলো। শাকিলা বেগম কল করেছেন। আয়াজ কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শাকিলা বেগম কেঁদে ফেললেন।

‘কেমন আছ বাবা?’

‘ভালো আম্মু। আপনার দোয়ায় ভালো আছি। কাঁদছেন কেন?’

আয়াজের কথা শুনে শাকিলা আরো জোরে কেঁদে ফেললেন।

‘বাবা প্রিয়তাকে নিয়ে বাসায় চলে আসো। তোমাকে ছাড়া সব ফাঁকা ফাঁকা লাগে। তোমার বাবার কথায় রাগ করো না।’

আজায় জোরে নিঃশ্বাস ফেলল। শান্ত কন্ঠে বলল,

‘প্রিয়তা আমার স্ত্রী আম্মু। তার অসম্মান আমি মেনে নিব না। আমার জন্মদাতা পিতা আমার ভালোবাসাকে একান্তই ছেলেখেলা ভেবে নিয়েছে। তিনি টাকার মাধ্যমে আমার ভালোবাসা কিনতে চেয়েছে আম্মু। এতটা অসম্মানের পর কিভাবে ফিরে আসি?’

‘আমি কি অপরাধ করেছি বাবা? শাস্তি আমাকে কেন দিচ্ছ?’

‘আপনি কোনো অপরাধ করেননি আম্মু। আপনার যখন ইচ্ছা হবে নাজিম চাচাকে বলবেন। তিনি আপনাকে আমার বাসায় পৌঁছে দিবে।’

আরো কিছু কথা বলে ফোন কেটে দিল আয়াজ। তার বাবা ভিষণ ভালো মানুষ। আয়াজ তাকে অনেক সম্মান করে। কিন্তু তবুও তিনি তার প্রিয়তাকে হেলা করেছেন। এর মাফ তখনি হবে যখন সে নিজ থেকে আয়াজকে প্রিয়তার সহিত ঘরে ফিরে আসতে বলবে।
___________

আয়াজ যখন ফিরল তখন দুপর বারোটা। প্রিয়তা গালে হাত রেখে বারান্দায় বসে ছিল। অপেক্ষা করছিল আয়াজ আসার। লজ্জার কারণে আয়াজকে কল দিতে পারেনি। ছোট একটা ট্রাক ভর্তি মালজিনিস এনে থাকম গেটের সামনে। প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। সোফা,কাবার্ড,ডায়নিং টেবিল,ড্রেসিং টেবিল। এতকিছু? এতকিছু কোথায় রাখবে? প্রিয়তা একবার ঘরে নজর বুলাল। সবকিছু ধরবে তবে একটু গাদাগাদি হবে।
গোছগাছ করতে করতে তিনটা বেজে গেল। খাওয়া দাওয়া হয়নি। রান্নাটাও করা হয়নি। ঘামে আয়াজের শার্ট ভিজে চুপচুপ করছে। প্রিয়তা রান্নাঘরে গেল। লেবু দিয়ে এক গ্লাস শরবত করল। আয়াজকে শরবত দিতেই আয়াজ বাঁকা চোখে তাকালো। মিষ্টি হেসে বলল,

‘ধন্যবাদ বউ।’

এই সামান্য কথাতেও প্রিয়তার গাল কেমন লাল হয়ে উঠলো। আয়াজের মুখে্য বউ কথাটা তার ভিষণ প্রিয়। বুকের ভেতর আলাদা রকম শান্তি লাগে।

‘আজ স্কুল ছিল না?’

আয়াজের কথায় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় প্রিয়তা। ছোট করে উত্তর দেয়।

‘ছিল। ছুটি নিয়েছি দুদিনের।’

‘বরকে সময় দিতে?’

প্রিয়তার কান গরম হয়ে গেল। ছেলেটা সবসময় তাকে লজ্জায় ফেলার চেষ্টা করে। প্রিয়তাকে লজ্জা পেতে দেখে আয়াজ প্রগাঢ় হাসলো। কথা ঘুরিয়ে বলল,

‘রান্নাতো হয়নি। ঝটপট ফ্রেশ হয়ে নিন। বাইরে থেকে খেয়ে আসবো।’

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here