নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ১২

0
190

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১২

আরু আজ দুপাশে বেনুনি গেঁথেছে। তাতে লাগিয়েছে গাঁদা ফুল। খয়েরি গাঁদা। সকালের নাস্তা খেয়ে চম্পার পানের ডালা থেকে পান নেওয়ার জন্য পা বাড়াল আরু। মুখে তুলে যাওয়ার সময় চম্পা পেছন থেকে ডেকে উঠল আরুকে। আরু দু বেনুনি ঘুরাতে ঘুরাতে বলে, “কী হয়েছে নানি জান, পেছন ডাকলে কেন? তুমি জানো না পেছন ডাকতে নেই।”

“তোকে আমার প্রয়োজন। পেছন না ডাকলে কি তুই আসতিস?”

“কেন?” দাঁতের আগায় চুল লেপ্টে বলে।

“দেখ না, আমার মাথার চুলগুলো পেকে গেছে। তুই বেছে বেছে পাকাগুলো তুলে দে।” আরুর হাত ধরে বাসনা নিয়ে বললেন চম্পা। খানিক বিরক্ত হলো আরু। প্রতিবার এই বাড়িতে আসলে পাকা চুল তুলে দেওয়া আরুর ধরাবাঁধা কাজ। অথচ চম্পার মাথায় হাতে‌ গোনা এক গোছা চুলও নেই কাঁচা। কোমরে হাত দিয়ে ললাট কুঁচকে বলে, “নানি জান, তোমার মাথায় পাকা চুল তুলতে গেলে নেড়ো হয়ে যাবে।”

“নেড়ো হলে আমি হবো। তুই এদিকে আয়।” আরুকে জোরজবরদস্তি করে ঘরে নিয়ে গেলেন চম্পা। ফিরি পেতে বসলেন। বিরক্তির সাথে কয়েকটা পাকা চুল তোলার পর আরুর মুখে হাসিটা গাঢ় হয়ে উঠল। পাকা চুল রেখে নানির মাথার কাঁচা চুল তুলতে আরম্ভ করল আরু।
পাকা চুল উত্তোলনের সময় আয়াশ পাওয়া যায়, কাঁচা চুলের ক্ষেতে বিপরীত। চম্পা মাথা চেপে বলে, “এখন ব্যথা পাচ্ছি কেন আরু?”

“তাড়াতাড়ি তুলছি তো তাই। ভালো না লাগলে বলো, আমি রেখে দেই।” বলতে বলতে হেসে উঠল আরু।

“না না, তুই তুলতে থাক। একটু ধীরে ধীরে তুলিস, ব্যথা যাতে না পাই।” চম্পার আদরে বলা কথায় আরুর মন গলে না। দীর্ঘ এক ঘণ্টার অধিক সময় অতিবাহিত হয়‌। নিজের কাজ সম্পন্ন করে উঠে দাঁড়ায় আরু। প্রতিবার চুল তুলতে দিলে অস্থির হয়ে উঠতো, আজ তেমন না হওয়াতে প্রসন্ন হলেন চম্পা। আরুর চিবুক স্পর্শ করে আঙুলে চুমু খেয়ে বলে, “আজকে যা, আবার কালকে তুলে দিস।”

ভাব নিয়ে বলে, “আজ তোমার সব চুলগুলো তুলে দিয়েছি।”

“কী বলিস, একটুকু সময়ে সব তুলে ফেলেছিস?” উদ্বিগ্ন হয়ে বলে।

যথাসম্ভব অনুদ্ধত রইল আরু। পাকা চুল থেকে বাছাই করে ফেলে দেওয়া কাঁচা চুলগুলো তুলে নানি জানকে দেখায়। বিদ্রুপ করে বলে, “হাঁ! হাঁ! হাঁ! তোমার মাথার সব কাঁচা চুল তুলে ফেলেছি নানি জান। এবার তুমি আবার চুল তোলার কথা বললে ট্রিমার দিয়ে পাকা চুল তুলে ফেলব সব।”

চম্পা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যায়। কিয়ৎক্ষণ নিজের চুলে তল্লাশি করেও যখন সন্ধান পেল না কালো চুলের তখনই ক্ষিপ্র হয়ে উঠল। লাঠি দিয়ে মারতে চাইল আরুকে। আরু ছুটল। বৈঠকখানায় আড্ডা দেওয়া মামার পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল। চম্পা লাঠি নিয়ে উপস্থিত হতে দেখে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে উঠল। মোতাহার আহসান বললেন, “মা তুমি লাঠি নিয়ে আরুকে তাড়া করছ কেন?”

“তুই ওকে ছাড়, আজ ওকে আমি ইচ্ছামতো পেটাবো।”‌ বলতে বলতে আরুর দিকে অগ্রসর হলেন চম্পা। আরু ছুটে অপূর্ব-র কাছে গেল। অনিতা এসে ক্ষান্ত করল চম্পাকে, “এভাবে বাচ্চা মেয়েটাকে লড়াচ্ছেন কেন মা, কী করেছে ও।”

“কী করেনি, তাই কও। ওরে আমি বললাম ‘আমার মাথার পাকাচুল তুলে দিতে।’ ও কাঁচা চুলগুলো তুলে দিল। একটা কাঁচাচুলও নেই।” সবাই নিঃশব্দে হাসল। মা-কে শান্ত করতে আরু-কে কিছু বলা উচিত, “আরু তুই মায়ের কাঁচা চুল কেন তুলেছিস?”

“বাহ্-রে! প্রতিদিন আমার কাছে এসে বলে পাকাচুল তুলে দিতে। ওনার মাথায় সব পাকাচুল। মাঝে মাঝে দু-চারটা কাঁচা চুল। তাই বুদ্ধি করে কাঁচা চুলগুলো তুলে দিলাম। এরপর যদি আবার পাকাচুল তুলতে হলে, তাহলে ট্রিমার দিয়ে সব চুল তুলে ফেলব। হি! হি! হি!” অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল সবাই। আরুকে বাহবা দিয়ে বলে, “মা, তোমারই দোষ। এত পাকা চুল তুলতে গেলে তোমার মাথা টাক হয়ে যাবে।”

চম্পা লাঠি দিয়ে মাটিতে আঘাত করে ঘরের দিকে অগ্রসর হতে হতে বলেন, “যেমন মামা, তেমন ভাগ্নে।”

আরু বাইরের দিকে অগ্রসর হলো। সূর্য মাথা তখন মাথায় উপর উঠেছে। অপূর্ব কলতলায় পা রেখেছে গোসলের উদ্দেশ্যে। কল চেপে বালতি পূর্ণ করল। অতঃপর দরজার দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে এলো বিরক্তিতে। গ্ৰামে এসে এখন অবধি সে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেনি, মায়ের করে দেওয়া উষ্ণ পানিতে গোসল সেরেছে। নূপুরের সেই মাতাল হওয়া ধ্বনি শুনেই মুখ তুলে অপূর্ব, “আরু, এদিকে শোন।”

আরু এসে স্থির হওয়ার পূর্বেই অপূর্ব বলে, “রান্নাঘরে গিয়ে দেখত, পানি গরম হয়েছে কি-না? গরম হলে মা-কে নিয়ে আসতে বল।”

আরু না থেমে রান্নাঘরে গেল। অপূর্ব-র সাথে সে অভিমান করে আছে। একটুকুও কথা বলবে না।
পানি ফুটতে শুরু করেছে। তবুও পাতা পুড়িয়ে তাপ দিচ্ছে অনিতা। ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে, “মামি অপূর্ব ভাই কলতলায় বসে আছে। পানি গরম হলে আমাকে দাও। আমি দিয়ে আসছি।”

অনিতা শুকনো পাতা দেওয়া বন্ধ করে চলা কাঠটা ভুলবশত আরুর দিকে তাক করে বলে, “তোর শরীরে জ্বর। মাথা ঘুড়ে পড়ে গেলে হিতে বিপরীত হবে। আমি দিয়ে আসছি।”

আরুর কর্ণপথে পৌঁছাল না সেই কণ্ঠ। এক দৃষ্টিতে জ্বলন্ত চলা কাঠটার পাশে চেয়ে আছে। অতঃপর চিৎকার দিয়ে বলে, “নাহহ। মা মেরো না।”

উপস্থিত সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। বাক্‌শূন্য সকলে। আরু ক্রমশ পিছু হটছে। অপূর্ব এসেছে তখন। দ্রুতি কণ্ঠে‌ বলে, “মা পানি কতদূর?” আর কিছু উচ্চারণ হলো না। তার হৃৎপিণ্ডে ধাক্কা লাগল কোনো রমনীর। অতঃপর সেই রমনী দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করে নিল অপূর্ব-কে। আরুর কম্পিত শরীরটা অপূর্ব-র সংস্পর্শ এসেছে, সেই কম্পন অনুভব করছে অপূর্ব। হৃৎপিণ্ড স্বাভাবিক নেই, ধুকপুকানি গুনতে পারছে। অনিতার দিকে চেয়ে ইঙ্গিত করল অপূর্ব। অনিতা চলা কাঠটার দিকে চেয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে, “মনে হয়, কাঠটা ওর হাতে লেগেছে।”

“তাই হবে বোধহয়।” জাহানারা সায় দিলেন। আরুর পিঠে হাত রাখল অপূর্ব। আর্দ্র পল্লব মেলে অপূর্ব দিকে তাকালো। ছ্যাত করে উঠল অপূর্ব-র অন্তঃকরণ। ডানহাতটা গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে যখন ক্ষত-র সন্ধান পেল না তখন দৃষ্টি মেলালো অন্যহাতে। ক্ষত-র সন্ধান না পেয়ে আশ্চর্যান্বিত হলো অপূর্ব। মোলায়েম গলায় বলে, “কী হয়েছে আরু? কোথায় লেগেছে দেখি।”

“লাগেনি।” সুললিত কণ্ঠে বলে আরু দূরত্ব বজায় রাখল। অতঃপর ঘরের দিকে ছুটে পালাল। ঔৎসুক্য নিয়ে অপূর্ব বলে, “কী হলো বলোতো? হাতে তো কোনো ক্ষত পেলাম না।”

“আরু চারটা শব্দ উচ্চারণ করেছে। নাহহ, মা মেরো না।” ঝোঁক নিয়ে বলেন জাহানারা।

“আমার মেয়ে কিছু করেনি তো। ওকে নিয়ে কোথায় যাবো আমি। এই বাচ্চা মেয়েটাকে চলা কাঠ দিয়েও বোধহয় মে/রেছে।” বলেই হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলেন চম্পা।

জাহানারা কাঠের টুকরো টা সরিয়ে রেখে বলেন, “এই সব ঐ অয়নের বুদ্ধি। পেটে পেটে শুধু শ/য়/তা/নি বুদ্ধি। আসুক একবার এই বাড়িতে। এটা দিয়ে যদি না মে/রেছি।”

“ততক্ষণে নিভে যাবে।” অপূর্ব বলে।

“আবার আগুন দিয়ে জ্বলন্ত করে নিবো।” জাহানারা বলে।”

অপূর্ব উষ্ণ পানি বহন করে অগ্রসর হলো কলতলার উদ্দেশ্যে।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
রেসপন্স করার অনুরোধ রইল 💚

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

Page:
https://www.facebook.com/profile.php?id=100092431226303

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here