নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ১১

0
227

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১১

“তাহলে আরেকটু দাও।” মোতাহার আহসান আরুর দিকে তাকিয়ে বললেন। অনিতা জড়তা নিয়ে বলেন, “কেজি দুই এনেছিলাম। আর একটু আছে। বাকি ছেলে-মেয়েদেরও তো দিতে হবে।”

“তাহলে আমাদের কেন দিলে? নামেই মেয়েটাকে খাওয়ালে। কুদ্দুসকে (রাখাল) বলে দিচ্ছি, শহর থেকে কেজি পাঁচ আনতে। আনলে রাতে রান্না করো।” এঁটো প্লেটে হাত ধুয়ে টেবিল ত্যাগ করলেন না মোতাহার আহসান। ইদানীং বুকে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। ছেলেমেয়েরা খেতে বসল। অনিতা খাবার পরিবেশন করছেন। আরু খেতে খেতে বলে, “তোমার হাতে সেই স্বাদ পাচ্ছিনা মামি। সব তেতো লাগছে।”

“মা বেছে বেছে তেতোগুলো তোকে দিয়েছে। আমার গুলো খেয়ে দেখ।” অপূর্ব যেন সুযোগ পেল। তার পাতের মাংসগুলো সন্তর্পনে আরুর পাতে তুলে দিল। আরু খাওয়া থামিয়ে অপূর্ব-র পানে দৃষ্টি মেলাল। অপূর্ব নিবৃত্ত কণ্ঠে বলে, “আমার দিকে না তাকিয়ে চুপচাপ খেয়ে উঠ।”

উপস্থিত সবাই মৃদু হাসছে।
ভদ্রতা বজায় রেখে আরু নিজের খাবার খেয়ে হাত ধোয়ার পূর্ব মুহূর্তে পুনরায় অপূর্ব-র পাতে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। ছ্যাত করে বলে, “আমি কারো দেওয়া খাবার খাই না। আমার তেতোই ভালো।”

অপূর্ব পানি পান করতে করতে আরুর গমন পথের দিকে চেয়ে রইল অপলক। মেয়েটা কি তার উপর রেগে আছে? বোধহয় আছে। নাহলে যে মেয়েটা অপূর্ব ভাই বলতে উন্মাদ, সে আলগোছে তাকে উপেক্ষা করবে কেন?”
মোতাহার আহসান অপূর্ব-কে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তুই তো মেয়ে দেখতে গেলি না। বিয়ে টিয়ে কি করবি না? সব যোগাড় করে পাত্রীপক্ষ কত রে/গে গেছিল, ধারণা আছে?”

অপূর্ব খাওয়া থামিয়ে বাবার দিকে এক নজর তাকায়। আরুর দিকে তাকালে অন্য মেয়েদের যে বিষাক্ত লাগে, মোতাহার আহসান কি তা জানে? অতঃপর বলে, “হ্যাঁ যাবো। সেদিন ফুফুর জন্য যাইনি।”

“ঠিক আছে। আরেকটা কথা, তিস্তার জন্য একটা সমন্ধ এসেছে। মেয়ের বয়স বাড়ছে। অপূর্ব-র জন্য তো ফেলে রাখতে পারি না। দুদিনের ভেতরে ওরা মেয়ে দেখতে আসবে। সব যোগাড় করে রেখো।” বলেই মোতাহার আহসান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। তিস্তা খাবার মুখে তুলতে পারলে না। আলগোছে খাওয়া ছেড়ে প্রস্থান করল। তার মনে উথালপাথাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে। সুজন একটা ভালো চাকুরি না পাওয়া অবধি কাউকে এই সম্পর্কের কথা জানাবে না। ভয় হয় যদি মেনে না নেয়। প্রয়াসের কথা ভেবেই তুরের গলায় খাবার আটকে গেল। মস্তকে উঠল।
_
মেহেরজান সিনেমা চলছে সাদাকালো টিভির পর্দায়। সবাই মনোযোগ সহকারে উপভোগ করলেও অপূর্ব তার ব্যতিক্রম। সে দেখার পাশাপাশি ব্যায়াম করেছ। শরীরের ঘাম ঝরিয়ে ঠান্ডা দূর করে প্রচেষ্টায় মগ্ন। হ্যান্ড গ্রিপারের সাহায্য হাতের ব্যায়াম করার সময় লক্ষ্য করে অপূর্ব, তিনটা ইঁদুর মুখ ভর্তি করে ধান নিয়ে ছুটছে। যাত্রাপথে ব্যাপক ধান পড়ে আছে। কালো রঙে বিশাল ইঁদুর দেখে অপূর্ব ভীত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক চেষ্টা করেও মাকে ডাকার শক্তি তার গলায় অবশিষ্ট নেই।

গর্তে ধান সঞ্চয় করে ফিরত এলো ইঁদুর ছানা। বক্ষে ভয় সঞ্চিত হলেও বাইরে নির্ভীক থাকার নামই পুরুষ জাতি। হ্যান্ড গ্রিপার দিয়ে ইঁদুরের গতিপথ পরিবর্তন করে দিতেই তিনটি ইঁদুর দিশেহারা হলো। মাটি ছেড়ে বাঁশের খুঁটি দিয়ে পালানোর প্রচেষ্টা আরম্ভ করল। তা বেশিক্ষণ স্থির হলো না। হ্যান্ড গ্রিপার দ্বারা একবার ধাক্কা দিতেই ভারসাম্যহীন হয়ে অপূর্ব-র শরীরে পড়ল, অবিলম্বে মুখরিত হলো অপূর্ব চিৎকারে। ইঁদুর তখন অপূর্বর টি-শার্টের ভেতরে তাণ্ডব আরম্ভ করেছে।

বাড়িতে অবস্থানরত সবাই ছুটে এসেছে অপূর্ব-র চিৎকারে। লম্ফঝম্প করা অপূর্বকে অনবরত শুধিয়ে চলেছে, “কী হয়েছে অপূর্ব, এভাবে লাফালাফি করছিস কেন?”

বিরতিহীনভাবে ছটফটানি করতে করতে অপূর্ব বলে, “মা তোমার এই ছেলেটাকে বাঁচাও। ইঁদুরের কামড়ে তোমার ছেলে আর বাঁচবে না। একমাত্র ছেলে তোমার। এখনো বিয়ে করেনি।”
চার ভাই ও বাবা মিলে আলোচনা করছিলেন, তারাও ইতোমধ্যে উপস্থিত। আরুর ছোটমামা উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, “ইঁদুর? ইঁদুর কোথায়? তোকে কামড় দিয়েছে?”

“না চাচা, এখনো দেয়নি। দিতে ফেলল বলে।”

অপূর্বকে নিবৃত্ত করে আরু বলে, “নিচ থেকে টি-শার্ট ফাঁক করে দিন। বের হয়ে যাবে।”

লম্ফঝম্প করার মাঝেও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরুর পানে চাইলো অপূর্ব। চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, “আমাকে দেখে বেশ মজা নিচ্ছিস, তাই না? টি-শার্ট ফাঁক করে দেই আর সে শর্ট-এর ভেতরে প্রবেশ করুক।”

অনেকেই চেষ্টা করল আরুর কথা মেনে টি-শার্ট ফাঁক করে দেওয়ার। কিন্তু সে অবাধ্য! দুর্বার! অনিবার্য! উপায়শূন্য হয়ে আরু এগিয়ে গেল। উপর থেকে টি-শার্ট ফাঁক করে হাত ঢুকিয়ে দিল। নারীর স্পর্শে সুড়সুড়ি লাগল অপূর্ব-র। আরুকে সরানোর চেষ্টা করেও সরাতে পারল না, আরু মাথা চেপে বের করে আনল ইঁদুর। ছুড়ে ফেলতেই খুঁটির সাথে বেঁধে মাথা ফেটে রক্ত গড়ালো। অপূর্ব ক্ষান্ত হয়েছে ততক্ষণে। আরুর হাত থেকে রক্ত গড়াচ্ছে। অনিতা তা লক্ষ্য করে বলে, “ইঁদুরের মারার আগেই তোর হাতে রক্ত। খুব জোরে চেপে ধরেছিলি, তাই না? চাপেই রক্ত বেরিয়েছে। তোর হাতে আর মনে জোর আছে বলতে হবে।”

তৎপরতার সাথে আরু জবাব দিলো দেয়, “কামড় দিয়েছে।”

কামড় দিয়েছে! রক্ত গড়াচ্ছে! অথচ আরুকে দেখে মনে হচ্ছে, মশার কামড়ে রক্ত ঝরছে। নানাজান গর্জে উঠলেন, “দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী দেখছ তোমরা? হাতটা চেপে বিষ রক্তটুকু বের করে ফেলো। মনি, উঠান থেকে কয়েকটা বন্যলতা তুলে নিয়ে আসো। মল্লিকা, পানি নিয়ে আসো।
মেয়েটাকে ইঁদুরে কামড়েছে, অথচ সবাই হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। কী তাই তো?”

অনিতা আরুর হাতের আঙুল ধরে প্রেষ করতেই গড়গড়িয়ে রক্ত বের হওয়ার পাশাপাশি আরুর চোখের বাঁধ ভাঙল। ডান চোখ থেকে একফোঁটা পানিও ঝরল। নিজের শাড়িটা আঁকড়ে ধরে সংযত করে রেখেছে। অপূর্ব যে মনোচিকিৎসক! আরুর মুখশ্রী দেখেই আরুর মনের কথা পড়ে ফেলল। পড়ে ফেলল তার যাতনার কথা। মাত্র একফোঁটা পানিও ক্ষতবিক্ষত করল অপূর্ব-র অন্তঃকরণ। অনিতা বলেন, “টি-শার্ট একটু ফাঁক করলে ইঁদুর পড়ে যেতো, কামড়াতো কীভাবে? ডাক্তাররাই যদি ইঁদুর ভয় পায়, তাহলে সাধারণ মানুষ কার কাছে যাবে?”

অপূর্ব ঘরে ছুটে গেল। বিদেশ থেকে বহন করে আনা বক্সটা নিয়ে এলো। তুলোতে মেডিসিন লাগিয়ে অন্তর্পনে আরুর হাত ড্রেসিং করে দিল। নক দিয়ে চেপে ধরে অপূর্ব-র কাঁধ। আরু মৃদু আর্তনাদ করতেই অপূর্ব চাপা গলায় বলে, “এই সামান্য ব্যথায় বাঘিনী ক্ষান্ত হয়ে গেছে?”

আরু ভ্রু কুঁচকালো। অপূর্ব-কে সেই ব্যথা অনুভব করাতে অপূর্ব-র হাতে নিজের দাঁত বসালো। অপূর্ব আর্তনাদ করল না। আরু সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাত পর্যবেক্ষণ করল। দাগ বসে রক্ত জমাট বেঁধেছে।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
রেসপন্স করার অনুরোধ রইল 💚

চার্জ নাই ফোনে, এইটুকু অনেক কষ্টে রিচেক করেছি। দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না, তবুও দিলাম। জানি ছোটো, তবুও কিছু করার নেই। 🫡

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

Page:
https://www.facebook.com/profile.php?id=100092431226303

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here