নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ১০

0
254

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১০

“মেয়েটার শরীরে জ্বর। ছেলেটাকে বলতে পারো না?” বিরাগী হয়ে বলে মিহির। অপূর্ব এক ধ্যানে চেয়ে আছে আরুর দিকে। শেষ দেখা আর বর্তমানের মধ্যে কত ফারাক। লালচে আভা জমেছে মুখমণ্ডলে। মলিন মুখমণ্ডল। অপূর্ব আরুর ললাট স্পর্শ করে জ্বরের মাত্রা পরীক্ষা করে বলে, “গাঁ পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। কখন জ্বর এসেছে, ওষুধ খেয়েছিস?”

অপূর্ব-র প্রশ্নের প্রত্যুত্তর না করে ফিরতি প্রশ্ন করে, “একটু অপেক্ষা করবেন? আমি চেয়ার নিয়ে আসছি।”

অপূর্ব আরুকে যেতে দিল না। নিজে গেল দাদা জানের জন্য চেয়ার আনতে। ইতোমধ্যে ব্যাপারটা খোলসা করেছে মিহির। অপূর্ব-র দাদা জান বা আরুর নানা জান বললেন, “পারুল, আমি আরুকে নিতে এসেছি। ঐ বাড়ির সবাই চাইছে আরু ঐবাড়িতে থাকুক।”

আরু-কে একদণ্ড সহ্য করতে পারেনা পারুল, মেয়ে তার কাছে থাকবে না ভাবলেই উদাসীন হয়ে উঠেন তিনি। এক কাজ কীভাবে সামলে উঠবেন আরু ব্যতিত। দৃঢ় গলায় বলেন, “না, আমার মেয়ে কেন অন্যের বাড়িতে থাকবে? তাছাড়া ওর বাবা ওকে যেতে দিবে না।”

অপূর্ব চেয়ার এনে দিতে দাদা জান আয়েশ করে গ্ৰহণ করলেন। থমথমে গলায় বলেন, “মা যদি মায়ের মতো না-হয়। মায়ের চেয়ে যদি মাসি আপন হয়। তাহলে নিজ গৃহের চেয়ে অন্যের গৃহ নিরাপদ। আমি ইমদাদের সাথে কথা বলেছি। আমার উপরে ওর কোনো কথা থাকতে পারেনা নিশ্চয়ই। (জ্বরে‌ আড়ষ্ট থাকা আরুর পানে চেয়ে স্নেহ করে বলেন) আরু যা, তোর যা যা লাগবে নিয়ে তৈরি হ। আমি ভ্যান নিয়ে এসেছি। তোকে আর খাল সাঁতরে যেতে হবেনা।”

পারুলের চোখমুখে বিরক্তির ছাপ। শরীর রোষে কাঁপছে অনবরত। রুষ্টের সাথে বলে, “যা, দেখি মায়ের চেয়ে মামির দরদ কতদিন থাকে।”

মা-কে ছেড়ে থাকার কথা আরু দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনা। অব্যক্ত স্বরে বলে, “আমি যাবো না। কোথাও যাবো না।”

অপূর্ব নাকের ডগায় রাগ জমে উঠল। তেজ নিয়ে বলে, “তোর ঢং দেখার জন্য আমরা আসিনি। বাড়িতে গিয়ে যত পারিস ঢং করিস। (বিরতি দিয়ে পুনরায় বলে) তোকে যেতে হবে না। আমি আনছি।”

হনহন করে ঘরে ঢুকল। নিজের পছন্দমাফিক জিনিসপত্র নিয়ে এক শাড়ির উপরে রেখে‌ গিট দিয়ে জোলা বানালো। বইখাতাও নিয়েছে কতেক। অতঃপর ফিরে এলো। উঠানে সেকেন্ড খানেক সময় থামল না। বাড়ির পথে হাঁটা দিল। ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে যে। ময়না পাখিটা আরুর দিকে তাকিয়ে তিনবার ডাকল, “আরুপাখি! আরুপাখি! আরুপাখি।”

আরু ফিরে চাইলো। বুকে ছ্যাঁকা লেগেছে। অপূর্ব সংশয় নিয়ে বলে, “তোর ময়না বুঝি?”

“হম।” সংক্ষিপ্ত জবাব।

“নিবি?”

“না, ও ডিম দিয়েছে। ডিমে তা দিচ্ছে। বাচ্চা ফুটবে কয়েকদিন পর। আমার সাথে গেলে ডিমগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।”

আরুদের রওনা হওয়ার পর মুহুর্তে আরুর বড়ো চাচি নয়না এলো। চ্যাঁচামেচি শুনে ক্ষান্ত থাকতে পারেনি। উত্তেজিত হয়ে বলেন, “কী হয়েছে পারুল? এখানে এত চ্যাঁচামেচি কীসের?”

ক্রুদ্ধ হয়ে বলে, “আমি না-কি আরু-কে শুধু মা/রি। এমনে মা/রলে না-কি ও ম/রে যাবে। তাই নিতে এসেছে। মেয়েটাকে এত ভালোবাসি তবুও তার অভিযোগের শেষ নেই। ইচ্ছে করে মেয়েটাকে গলা চে/পে মে/রে ফেলি।”

“পারুল মুখ সামলে কথা বল। ও তোর মেয়ে। তুই উ/ন্মা/দ হয়ে যাচ্ছিস। আরুকে তাদের কাছে নিয়ে রাখার ভাবনাটা খা/রা/প না। ইদানীং তুই বদলে গেছিস। মেয়েটাকে মেয়ে মানিস না। গরুর মতো মা/রি/স। সেদিন সাধারণ একটা বিষয় নিয়ে উঠানে বেঁধে মারলি, জ্বরের ভেতরে মেয়েটাকে আবার মা/র/লি।” নয়নার বলা প্রতিটা শব্দ পারুল তার মস্তিষ্কে আওড়াল। কিছু ভুল বলছে না। ইদানীং আরুকে সহ্য হয়না পারুলের। দেখলেই শরীর জ্বলে। মন চায় শুধু মা/রি। কোঁকড়ানো চুলগুলো টেনে মাটিতে বসে পড়ে পারুল। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে, “বিশ্বাস করো ভাবী, আমি ইচ্ছে করে আরুকে মা/রি না। আরু-কে দেখলেই আমার রক্ত মাথায় উঠে যায়। শরীর জ্বলে যায়। মনে হয় ওকে শেষ করে ফেলি।”

অদূরে দাঁড়িয়ে মায়ের সব কথা শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়ে অয়ন। পরিবারের বড় মেয়ে বলে আদর ভালোবাসা সব তার জন্য বরাদ্দ। নয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলে, “চাচি, সাবিত কোথায়?”

“ও ঘরে আছে। সকালের নাস্তা খাচ্ছে।” নয়না আরও কিছু বলেছে, তা শ্রবণ না করে অয়ন ছুটে গেল বড়ো চাচার ঘরে। আরুর দাদা নেই, দাদি বড়ো ছেলের সংসারে থাকে। রোয়াকে বসে পান বানাচ্ছেন তিনি। অয়নকে দেখে প্রসন্ন হলেন বটে। বলেন, “কী হয়েছে দাদুভাই, মুখ এমন করে আছো কেন?”

“তুমি ঠিকই বলেছ দাদি জান, বাবা-মা কেউ আমাকে ভালোবাসে না। সবাই আরুকে ভালোবাসা শুধু।” ক্রোধে ফোঁস করে বলে অয়ন। দাদি পান রেখে অয়নকে কোলে বসালেন। পাশে টেবিলের উপর দুটো পেয়ারা রাখা। নাতির অভিমান ভাঙাতে একটা অয়নের হাতে দিয়ে আদুরে গলায় বলেন, “কী হয়েছে আমার নাতিটার?”

অয়ন পেয়ারায় কামড় বসিয়ে আধো গলায় তার অভিযোগ জানায়, “নানা জান এসেছে, সাথে এসেছে অপূর্ব ভাই। ওরা বুবুকে নিয়ে গেছে। এবার মা আমাকে ভালো না বেসে বুবুর জন্য শুধু কাঁদছে। বুবুকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য এতকিছু করলাম।”

“আরে পা/গ/ল। আরুকে বাড়ি থেকে বের করে দিলে তোর কষ্ট হবে। কে তোকে পানি টেনে দিবে গোসলের? কে খাবার পরিবেশন করে দিবে?‌ আর সবচেয়ে বড় কথা কী জানিস?” পেয়ারা খেতে খেতে অয়ন দাদির কথাগুলো নিভৃতে আওড়াল। ভুল কিছু বলে বলেনি। অতঃপর বলে, “আর কী?”

“তোর নানা বাড়ির এত সম্পত্তি। এগুলো যদি সব আরুকে দিয়ে দেয় তখন?” অয়নের মুখমণ্ডলে ভয় হানা দিল। ছুটে যাওয়ার প্রয়াস করতে টেনে ধরলেন দাদি। আরও একটা পেয়ারা দিয়ে বলেন, “এটাও নিয়ে যা। আরুর জন্য রেখেছিলাম, এখন তোর মাকে দিস।”
__
বৈঠকখানায় বেতের সোফার পাশাপাশি একটা ছোটো চৌকি রাখা। আরু সেই চৌকিতে আধশোয়া। দীর্ঘ রাস্তাটুকু অপূর্ব-র বুকে ঠেস দিয়ে এসেছে মামা বাড়িতে। জ্বরের তীব্রতা বেড়েছে। অনিতা দুধের গ্লাস নিয়ে এসেছে। আরু-কে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। সে খেতে নারাজ। বিষণ্ন গলায় বলে, “মামি, জ্বরের সময় দুধ খেলে টাইফয়েড জ্বর হয়।”

জাহানারা আজ সকালে আরুর জন্য যত্ন করে তাল বড়া বানিয়েছেন। আরুর বরাবরই তার খুব প্রিয়। গুড় মিশিয়েছেন ঈষৎ। থালাটা চৌকিতে রেখে বলে, “তাল বড়া গুলো চেয়ে নে আরু।”

তালবড়াগুলো তিক্তস্বাদযুক্ত জ্বরাক্রান্ত রসনায়। মণি একগ্লাস ঝরিবুটি নিয়ে এসেছেন। অপূর্ব এনেছে তার ওষুধ। সবকিছু দেখে ব্যাকুল হয়ে উঠল আরু। আনন্দের অশ্রু চোখে ধরা দিল। কাতরচিত্তে বলে, “এত ব্যস্ত হইও না। এই সামান্য জ্বরে বাঘিনীর কিচ্ছু হবেনা।”

‘বাঘিনী’ নিঃশব্দে বেশ কয়েকবার উচ্চারণ করল অপূর্ব। মন্দ নয়, বাঘিনীই তো। অপূর্ব বলে, “তোমার এই বাঘিনী কী করেছ, জানো নানি জান? অয়নকে না-কি বালতিতে চুবিয়ে ধরেছে।”

চম্পা দৃঢ় গলায় বলেন, “বেশ করেছে। মেয়েটাকে একটু শান্তি দেয় না। মায়ের কানে সারাক্ষণ বোনের নামে কু-মন্ত্রনা ঢালতেই থাকে।”
__
দুপুর দুইটা। রোজকার নিয়ম মেনে খেতে বসেছে মধ্যবয়স্ত পুরুষেরা। তাদের খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। ছেলেমেয়ে খেতে এসেছে। জাহানারা আরুকে ধরে নিয়ে এসেছে। কাতারে এসে আরু দাঁড়াতেই মোতাহার আহসান বলেন, “আরু তুই বসে যা। এতক্ষণ তোকে বসে থাকতে হবে না।”

“এক সাথেই খাই।” আরু বলে চেয়ারে বসে। মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। কাঠের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। এখন শুধু মোতাহার আহসান ও তার বাবা বসে আছেন। বাকি তিন ভাই খাওয়া শেষ করে উঠে পড়েছেন। আরুর পছন্দের খাসির মাংস রান্না হয়েছে। অনিতা আরুর জন্য বরাদ্দকৃত বাটিটা এগিয়ে দিয়ে বলে, “আরু, বসে বসে একটুকু খা মা। আমি খাবার দিচ্ছি। (অতঃপর স্বামীর দিকে চেয়ে ইতস্তত করে বলে) আসলে মেয়েটা খাসির মাংস খেতে ভালোবাসে তাই।”

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
রেসপন্স করার অনুরোধ রইল 💚

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here