চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয় #মিমি_মুসকান #পর্ব_৯

0
254

#চৈত্রের_রাঙায়_রচিত_প্রণয়
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৯

“কি করবো? দেখছিস না পায়েস খাচ্ছি!”

চেয়ার টেনে বসে পড়ল সারফারাজ। অর্নিলার ঠোঁটের কোণে চাপাহাসি ফুটে উঠল। গ্লাসে পানি ঢেলে টেবিলের সামনে এসে রাখল। সারফারাজ গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল, “হঠাৎ করেই এতো ক্ষিদে লাগল, দেখছিলাম ফ্রিজে কি আছে? পায়েসের বাটিটাই চোখে পড়ল। তুই এতো রাতে এখানে কি করছিস?”

অর্নিলা জবাব দিল না। চেয়ার টেনে বসে পড়ল। গালে হাত রাখল, দৃষ্টি মেলল ফারাজ ভাইয়ের দিকে। শুধালো “পায়েস কেমন হলো ফারাজ ভাই?”

“কেমন আর হবে? যেমন হয় তেমনি হয়েছে।”

”আমি রাঁধলাম যে।”

“তো? মানুষ তো তুই। রান্না তো ভালোই হবে।”

গাল থেকে হাত সরিয়ে ফেলল। চোখ রাখল হাতের আঙ্গুলের উপর। চাপাস্বরে বলে উঠল, ”কিন্তু সবার হাতের রান্না তো এক হয়না ফারাজ ভাই।”

”কি জানি অনি? আমার কাছে তো একই লাগে। দেখলি না, আজ তোর রান্না করা খাবার খেয়ে বলছিলাম মা রেঁধেছে। এতো সূক্ষ্ম পরীক্ষা আমি পারি না।”

”কিন্তু ফারাজ ভাই, তোমার কাজ তো এর চেয়েও সূক্ষ্ম। সেটা করবে কি করে?”

ফারাজ জবাব দেয় না। পায়েস ফুরিয়ে এসেছে। অর্নিলা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ”আরেকটু দিবো।”

সারফারাজ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। থমকে বলল, ”না।”

”এই যে বললে খিদে পেয়েছে।

”মিটে গেছে। খেলাম তো।

“ওতো টুকুতে পেট ভরে গেল ফারাজ ভাই।

সারফারাজ আবারো জবাব দেয় না। দুজনের সম্পর্কের মাঝে ভাঙ’ন যেন সেই আগেই ধরেছিল। তার প্রভাব এখন মিলছে।‌ সারফারাজ উল্টো পথে হাটা ধরে। অর্নিলা চট করে বলে উঠলো, ”আমি না এলে, তুমি আরেকটু পায়েস খেতে তাই না ফারাজ ভাই।

“বোধহয় খেতাম।” কথাটুকু বলেই ফারাজ বের হয়ে গেল। চেয়ার টাকে শক্ত হাতে ধরে নিশ্চুপ হয়ে গেল। তার চোখের পাতা কাঁপছে। টিপ টিপ করে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ল। ফারাজ ভাই ওভাবে না বললেও পারত। না হয় মিথ্যেই বলে দিত। এতো সত্য বলার কি ছিল? ফারাজ কি ইচ্ছে করেই তাকে কষ্ট দিচ্ছে। কেন দিচ্ছে এই কষ্ট? কি অপরাধ তার। “তুমি মনে রেখো ফারাজ ভাই, আমি তোমার সাথে আর কথা বলব না। যে এভাবে বার বার আমায় কষ্ট দেয় তার সাথে আমি কথা বলি না। তোমার সাথেও বলব না, দেখে রেখো তুমি!” চোখের পানি মুছে ছুটে চলে গেল ঘরের দিকে। আড়াল হয়ে দাঁড়াল কেউ। সূক্ষ্ম চোখে পরখ করে যাচ্ছে। আশপাশ কেউ দেখেনি তো আবার। দুই পা পিছিয়ে গেল। ফারাজ ভাই আর অনির মধ্যে কি হয়েছে? তার সম্পর্ক ভালো চলছে না। চলার মতোও না। যখন তাদের সম্পর্ক গড়েছিল তখন অর্নিলা বুঝত না সম্পর্কের মানে। এখন যখন বুঝতে পারছে তখন মনে হচ্ছে ফারাজ ভাই পিছিয়ে যাচ্ছে! কি অদ্ভুত কাণ্ড! এই মানুষগুলো এমন কেন?
.
পরদিন সকাল বেলা। সকাল সকাল হাঁটতে বেরিয়ে গেল সারফারাজ। ফিরতে ফিরতে সাড়ে ৮ টা বাজল। ঘরে ঢুকেই ভ্রু কুঁচকে ফেলল। বিছানা গোছানো। গোসল সেরে কোন জামাটা পরবে সেটাও ইস্ত্রি করে বিছানার উপর রাখা। এতোকিছু কে করেছে? মা! না, মনে হচ্ছে অর্নিলা। একটা চিরকুট রয়েছে পাশে। সারফারাজ সেটা তুলে নিল। স্পষ্ট হাতের লেখা। চেনা চেনা লাগছে। অনি লিখেছে।
‌“ফারাজ ভাই, জলদি তৈরি হয়ে নিচে আসুন। আপনার জন্য গরম গরম পরটার সাথে হাঁসের মাংস রান্না করেছি। ভালো করে গোসল সেরে আসবেন। আর হ্যাঁ, আজ সেভ করবেন। পুরো মুখ আপনার গোছা গোছা দাঁড়িতে ভরে গেছে। বিশ্রী লাগছে। আপনি তো সুদর্শন ফারাজ ভাই। তাহলে চলাফেরা এমন বিশ্রী কেন? আগে তো এমন ছিলেন না। বড্ড বদলে গেছেন…”

সারফারাজ চিরকুট টা পকেটে ঢুকিয়ে ফেলল। ধীর স্বরে বলল, “আমি বদলায়নি অনি। তুমিই বদলে গেছো!”

জামাকাপড় হাতে নিয়ে চলে গেল বাথরুমের দিকে। এদিকে অর্নিলা আজ মহাব্যস্ত। তার কাজকর্ম যেন শেষ হচ্ছেই না। এতো ভরে উঠে মেয়েটা কতো কাজ করে ফেলল। বিস্মিত হয়ে চেয়ে আছে আরিফ হাসান। এক হাতে সব কাজ সামাল দিচ্ছে মেয়েটা। তার ছোট মেয়েটা বড় হয়ে গেছে। সারফারাজ ফ্রেস হয়ে নিচে নামল। দুটো চায়ের কাপ রেখে গেল সিধু। সারফারাজ চায়ের কাপে চুমুক দিল। আরিফ হাসান চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, “মা চা টা খুব ভালো হয়েছে।”

সারফারাজ কপাল কুঁচকালো। চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে চুমুক দিল। না এই চা তো অর্নিলা বানায় নি। কেমন সন্দেহ হচ্ছিল। অর্নিলা হেসে জবাব দিল, “আমি চা বানায় নি মামা।”
সারফারাজের মুখের উপর থেকে বিচলিত ভাবটা চলে গেল। ঠোঁটের কোনায় বোধহয় হাসির চিহ্ন দেখা গেল। সত্যিই কি তাই। আরাফাত এসে হাজির হলো। শাহিনুর বেগম ও হাতে হাতে কাজ করতে লাগলেন অর্নিলার সাথে। সকাল বেলা তিনি গিয়েছিলেন গাছে পানি দিতে। ছাদের এক পাশে হঠাৎ করেই বাগান করার শখ উঠেছে তার। এই শখ কতোদিন থাকে সেটাই দেখার বিষয়।

অর্নিলার হাতের রান্না খেয়ে সকলে প্রশংসা করছে। একমাত্র সারফারাজ নিশ্চুপে খেয়ে যাচ্ছে। অর্নিলার উৎসুক আঁখি দুটি খুব অস্থির হয়ে উঠেছে। সারফারাজ তার মুখের দিকে ফিরে তাকালো না অবধি। হঠাৎ আরাফাত বলে উঠল, “ভাইয়া , আজ তোমায় দেখতে খুব ফ্রেস লাগছে। মনে হচ্ছে বয়স কমে গেছে!“

শাহিনুর বেগম অস্থির হয়ে উঠলেন। বললেন, ”এ কি কথা? ওর বয়স বেশি ছিল কবে?” কু সংস্কারী তার মন। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। অনির চোখে এতোক্ষণে পড়ল। সত্যিই তো তাই। ফারাজ ভাই দাড়ি কামিয়েছে। তাকে এখন ঠিক আগের ফারাজ ভাইয়ের মতোই লাগছে। শুধু মুখটা আগের চেয়েও গম্ভীর সাথে চোখ দুটোও। নাহলে সব ঠিক আছে। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল। কেউ এলো নাকি? সিধু দরজা খুলল। ফরহাত কে দেখা গেল। সারফারাজ খাবার ছেড়ে উঠে গেল। জড়িয়ে ধরল ফরহাত কে। তার পিঠ চাপড়ে ফরহাত বলে উঠল, ”আরে আমাদের ডাক্তার সাহেব চলে এসেছে। এমবিবিএস পাশ করা ডাক্তার!”

সারফারাজ হেসে উঠলো। অর্নিলা স্পষ্ট দেখল ফারাজ ভাই হাসছে। তার হাসি অন্য রকম, একদম সতেজ দেখাচ্ছিল তাকে। মুখের মধ্যে গাম্ভীর্য ভাবটা আর নেই। অনি দেখতেই লাগল। মুগ্ধতা এসে ঘিরে ধরল তাকে। সচরাচর ফারাজ ভাইকে হাসতে দেখা যায় না। ফরহাত ভাইয়ের সাথে থাকলেই হাসতে দেখা যায়। আরো একবার হাসতে দেখেছিল খুব। তখন সে খুব ছোট। অনির বেশ মনে আছে, সেদিন একটা লাল টপস পরা ছিল সে। জান্নাত আপু কি একটা বলে খিলখিলিয়ে হাসতে লাগল। তখন হাসল ফারাজ ভাই ও। অনি অবাক হয়ে দেখতে লাগল। ফারাজ ভাই কে খুব একটা হাসতে দেখা যেত না। কেমন একগুঁয়ে থাকেন সবসময়। সেই ফারাজ ভাই হাসছে। কিন্তু তখন অনির বিরক্ত লাগতে শুরু করল। কারত জান্নাত আপুর এমন আহামরি কিছু বলেনি যে ফারাজ ভাই হাসবে। তখন তার হাসি বোকার মতো লাগল। সেই থেকেই ফারাজ ভাই তার কাছে বোকা। অনেক বোকা!

”নাস্তা করেছিস?”

“করবো বলেই তো এলাম। শুনলাম অনি নাকি হাঁসের মাংস রান্না করেছে।‌ আমায় ফোন করে বলতেই ছুটে এলাম। আমাদের অনি কিন্তু ভালো রাঁধে!”

ফরহাতের প্রশংসা শুনে মুচকি হাসল অনি। সারফারাজ তাল মিলিয়ে বলল, ”হ্যাঁ, ভালোই রাঁধে। এই বাচ্চা যে কোনদিন রেঁধে খাওয়াবে সেই ভাবনা মাথাতেই আসেনি।

আরিফ হাসান বিরক্তি স্বরে বলে উঠলেন, ”আহ এ কি কথা? আমার মা সব কাজ করতে পারে। দেখি মা অর্নিলা, ফরহাত কে নাস্তা দাও।”

“দেই মামা। ফরহাত ভাই বসেন।”

”দেখি বসেই পড়ি। না খেয়ে অনেক তাড়াহুড়োয় এসেছি। খাওয়া দাওয়া শেষে তোর সাথে জমিয়ে আড্ডা হবে।”

সারফারাজ একগাল হেসে পাশে বসে পড়ল। অর্নিলা ফরহাত কে নাস্তা দিল। সারফারাজ পরোটা প্রায় শেষের দিকে। ভাবল ফারাজ ভাই কে আরেকটা পরোটা সাধবে। আবার সবার সামনে ”না” না করে দেয়। তখন বড্ড কষ্ট পাবে সে। অনেক ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, “ফারাজ ভাই, আরেকটা পরোটা দিই?”

“দে!”

অর্নিলা হেসে উঠল। একটা না দুটো পরোটা তুলে থালায়। হাঁসের মাংস নিয়ে এলো আবারো। ফারাজ ভাই আর ফরহাত ভাই খেতে খেতে গল্প শুরু করেছে।

#চলবে….

আসসালামুয়ালাইকুম! দিন দিন বড্ড অনিয়মিত হয়ে উঠছি। সেজন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। যখনি ভাবি এখন থেকে রেগুলার হবো তখনি আমার পিছনে একরাশ ব্যস্ততা এসে হাজির হয়। গত পুরোটা সপ্তাহ কলেজের অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকায় দম ফেলার সময়টুকু হয়নি বিশ্রাম তো দূরের কথা। অনেকদিন গল্প দেয়নি তাই এতো রাত করে গল্প দিলাম। জানি পর্বটা অনেক ছোট। আশা করছি এবার কিছুটা হলেও রেগুলার হতে পারব। আমি আবারো ভীষণ ভাবে দুঃখিত!

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here