#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৪]
” আমাকে না জানিয়ে আমার মেয়ের জীবনের এত বড় সিদ্ধান্ত তুমি নিজে থেকে নিলে। না না তুমি তো একা নাওনি তোমার ভাইয়েরা মিলে নিয়েছে।এখন তারা কই?সেই ছেলে কোথায়?কোথাকার কোন ইতালির ছেলে এদের কেউ খোঁজ খবর না নিয়ে বিশ্বাস করে?এই মেয়ের ভবিষ্যৎ কি আমি জানি না।অনিমা তোমার বাড়াবাড়িতে মেয়েটার জীবন আজ ছন্ন ছাড়া হয়ে যাচ্ছে।তুমি ওর দিকে তাকাও?ওর চোখের ভাষা বুঝ তুমি?সে কি চায় সে যে চিন্তায় চিন্তায় পুড়ে মরছে বুঝতে পারছো না তুমি?”
বাহারুল হক আজ ভীষণ রেগে গেলেন।খুশবুর ভিসা এসেছে আজ ষোল তম দিন।এই ষোল দিনে অনিমার সাথে আরশাদের কথা হয়েছে যতবার তত জানতে চেয়েছে সে কবে আসবে।কিন্তু আরশাদ তালবাহানা জুড়েছে।আরশাদের ব্যপারে অনিমার পূর্ণ বিশ্বাস জমে আছে। ছেলেটা আসবে সে ঠকায়নি।কিন্তু বাহারুল হক তাকে তো মানানো যাচ্ছে না।দিনের পর দিন উঠতে বসতে প্রতিটা কথার মাঝে আরশাদকে জুড়ে দিয়ে ঝামেলা করছেন তিনি।
মা বাবার তর্কতর্কি সবটাই শুনলো খুশবু।তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে গলা ধরে আসছে বার বার।তার সাজানো গোছানো জীবনে এক পশলা প্রেমের বৃষ্টি নেমে আচমকাই সব মরুভূমি গড়ে উঠেছে।সেদিনের পর আরশাদের সাথে খুশবু আর কথা বলেনি দূরত্ব বাড়ালে হয়তো নিকটে আসা হবে ভেবে নিজের মনকে শক্ত করেছে।
ভ্যানেটি ব্যাগ কাধে তুলে চট জলদি বাসা থেকে বেরিয়ে যায় মেয়েটা।অনিমা মেয়ের যাওয়া দেখে পিছু হাটলেন সাত সকালে না খেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার মানে কি।
সারাটা রাস্তায় খুশবু কেঁদেছে কোথায় যাচ্ছে সে নিজেও জানে না।উদ্দেশ্যহীন হাটতে হাটতে মাথায় এলো ভার্সিটি যাওয়া যাক।
.
শীতল হাওয়া গায়ে মেখে আরশাদের ঘুম ভাঙে।খোলা জানলায় দাঁড়িয়ে অপরূপ প্রকৃতির প্রেমে পড়ে সে বারবার।ইতালিতে বসন্ত আসতে চলেছে।তাই তো প্রকৃতি শীতল মনোমুগ্ধকর রূপে ধরা দিতে চাইছে।রাতে বৃষ্টি হয়েছে বিধায় চারিদিকে স্বচ্ছতা বিরাজ করছে।
খালি গায়ে আরশাদ আয়নার সম্মুখে দাঁড়ালো।বাদামি চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে নিজেকে নিয়ে হাজারটা অভিযোগ জানাল।কতদিন হয়ে গেল ফ্লুজির সাথে তার কথা হচ্ছে না মেয়েটার এড়িয়ে যাওয়া যে আরশাদকে আঘাত করে মেয়েটাকি বুঝতে পারে না?বেডের পাশে ফ্লুজির ছবিটা ছুঁয়ে চুমে খেল সে।আর কতদিন!কতটা দিন অপেক্ষা করবে সে।গায়ে জামা জড়িয়ে ফ্রেশ হয়ে আরশাদ চলে গেল তার বাবার ভিলায়।আরিব কফি মগ হাতে মাত্র বের হচ্ছিল রান্না ঘর থেকে, আরশাদকে দেখে মিষ্টি হেসে বলে,
” শুভ সকাল।”
” শুভ সকাল।”
আরশাদ আরিবের হাতের কফির মগটা টেনে নিল ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,
” চুমুক দিয়েছিলে?”
” না না।”
” ওকে ফাইন তাহলে আমি দিচ্ছি।”
” কেন আমি চুমুক দিলে কি খেতে না?”
” এঁটোতে মুখ দেওয়ার স্বভাব আমার নেই জানিস না।”
” ওহ, তোমার ফ্লুজি চুমুক দিলে তো হুমড়ি খেয়ে পড়তে।”
আরিবের পানে সরু চোখে তাকালো আরশাদ।ইদানীং ভাইটা কোন কথাতেই ছাড় দিচ্ছে না।
” আরিব ভালো হয়ে যা।”
” সেম টু ইয়ু ব্রো।”
” আমি ভালো হলেও আমার ফ্লুজির খারাপ হলেও আমার ফ্লুজির।তোর তো কেউ নেই,কাউকে পেতে হলে তোকে আগে ভালো হতে হবে।”
” এভাবে না বললেও পারতে ছ্যাকা লাগে।”
” তোর পরিক্ষা কবে শেষ?”
” আর দুটো দিন অপেক্ষা করো তারপর আমার এক্সাম শেষ হবে তুমিও তোমার ফ্লুজির কাছে উড়াল দিও।”
আরশাদ কফির মগ হাতে চলে গেল গ্র্যানির কক্ষে।
.
ক্লাস রুমে খুশবুর উপস্থিতি অপ্রত্যাশিত ছিল মায়া এবং রিয়ার জন্য।এই মেয়ে ভার্সিটি আসার আগে জানিয়ে আসে কিন্তু আজ হঠাৎ করে এলো যে?রিয়া খুশবুর ফোলা চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
” তোর কি হয়েছে খুশবু?কাঁদছিলি কেন?”
” কিছু হয়নি।”
” ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে?”
” ঝগড়া ছাড়া থেকেছি কবে?”
খুশবু বরাবরি চাপা স্বভাবের মেয়ে।কাউকে কিছু বলতে আগ্রহ পায় না।নিজের ঝামেলা তার নিজের কাছে। ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকে আড়ালে রাখতে সে অভ্যস্ত।কিন্তু আজ তার নিজের ধৈর্যর সীমা ভেঙে গেছে আরশাদের ব্যপারে সবটাই বন্ধুদের মাঝে সেয়ার করেছে সে।রিয়া,মায়া দুজনেই আরশাদের ব্যপারে অবগত আরশাদ খুশবুকে কতটা ভালোবাসে সেই ব্যপারেও অবগত কিন্তু আরশাদের এমন কূটকচালে মানে কী?মায়া খুশবুর গালে হাত দিয়ে বলে,
” কাঁদিস না সুন্দরী।ওই বিদেশী মালটা তোকে বাজাই দেখতে চাচ্ছে।শুধু তুই একবার বল দেশে আসো দেখবি উড়ে উড়ে আসবে।”
” এই মাল কি?আমার বর হয়।”
” ওহ সরি দুলাভাই।ধলা দুলাভাই।”
রিয়া খুশবুর হাত টেনে বলে,
” শুন তুই পালটা খেলা দেখা বিদেশী নেকড়েটাকে।তুই আজ থেকে প্রেম শুরু কর।”
” প…প্রেম কিসব বলছিস আরশাদ জানলে আমার পা ভেঙে ফেলবে।”
” আরে পা ভাঙার জন্য হলেও তো তাকে দেশে আসতে হবে।শুন আমি যা বলছি তাই করবি।আমার দেওয়া ওষুধ তোদের দাম্পত্য জীবনে সুখ বয়ে আনবে।তবে হ্যাঁ এই ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।পার্শপ্রক্রিয়া হজম করে নিলে ফলাফল নিশ্চিত পাবি।”
” তোর ভিজিট কত? ”
” ভিজিট হিসেবে আপনার দেওর আমার।”
.
একটা পার্কে বসে ইতস্তত মুখে হাসছে খুশবু।তার নকল হাসি অতি সহজে ধরা যাচ্ছে বলে রিয়া কিড়মিড় চোখে তাকালো মেয়েটার দিকে।খুশবুর মুখোমুখি বসে আছে একটি ছেলে।দেখতে শুনতে এই ছেলেকে কেউ বলবে না খুশবু মায়া রিয়ার জুনিয়র।ছেলেটা সবে মাত্র এইচএইচি পরিক্ষা দিয়েছে ছেলেটির নাম রিদ।ছেলেটি মায়ার কাজিন।খুশবুর টুকটাক সমস্যার কথা জানিয়ে রিদকে এখানে আনা হয়েছে।দুপুরের কড়া রোদে খুশবুর মাথা ধরে এসেছে তার উপর এসব নাটক যদি আরশাদের কানে যায় তবে যে কি কেলেঙ্কারি হবে।
রিয়া এবং মায়া গপাগপ একের পর এক ফুসকা মুখে পুরছে।এই ফুসকার বিল আজ খুশবুকেই দিতে হবে।রিদ দাঁত কেলিয়ে হেসে তাকালো খুশবুর পানে।
” নকল গার্লফ্রেন্ড আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?”
” না, আমি ভয় পাচ্ছি তোমার জন্য ছোট ভাই।”
” এত চিন্তা কিসের?আগামীকাল রাতে আমি ট্যুরে যাচ্ছি আপনার হাজবেন্ড আর আমার নাগাল পাবে না।”
রিয়া পাশ থেকে খুশবুকে ইশারা করে রিদকে ফুসকা খাইয়ে দিতে।বান্ধবীদের পাল্লায় পড়ে বেচারির যে আর কি কি করতে হবে কে জানে।কাঁপা কাঁপা হাতে খুশবু চামচের সাহায্যে রিদের মুখে ফুসকা দিতে গেলে মায়া দ্রুত তাদের ছবি তোলে।সারাটা বিকাল খুশবু আর রিদ একসাথে সময় কাটায় যদিও তারা বন্ধু বেশে ছিল কিন্তু আরশাদ কি মানবে?
.
রেস্টুরেন্টে বসে হিসাব কষছে আরশাদ।টুকটাক কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছে অনন্য কর্মচারিদের।হোয়াটসঅ্যাপে রনির মেসেজ পেয়ে মনোযোগ ভঙ্গ হলো তার এই ছেলেটা প্রয়োজন ছাড়া কখনো মেসেজ করে না।ছেলেটার মূল দায়িত্ব খুশবুর পিছনে ছায়ার মতো লেগে থাকা।রনি কিছু ছবি পাঠালো আরশাদকে যেখানে দেখা যাচ্ছে খুশবু একটি ছেলেকে ঝালমুড়ি খাইয়ে দিচ্ছে,আরেকটি ছবিতে তারা পাশাপাশি হাটছে।অন্য আরেকটি ছবিতে ছেলেটি আর খুশবু মুখোমুখি বসে তাদের দুজনের হাতে ফুসকার প্লেট।
চটজলদি আরশাদের মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো রেস্টুরেন্টের এক কোনে নিরিবিলি স্থানে বসে ফোন করলো রনিকে।ছেলেটার কাছ থেকে সব আপডেট নিয়ে নিজের মাথা আর ঠিক রাখতে পারলো না।ঠিক এই কারণেই কি ফ্লুজি এতটা দিন তাকে এড়িয়ে গেছে?
দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইল আরশাদ।তার শরীর থেকে থেকে কাঁপছে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের সঞ্চয় হয়েছে।আরশাদ নিজেও জানে না সে নিজেকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
” আবার,আবার তুমি আমায় ঠকাতে চাইছো ফ্লুজি।যা করেছো এসব ভালো হবে না।ভালো হবে না।জানে মে রে ফেলবো আমি তোমায়।যতক্ষণ আরশাদ আছে ততক্ষণ তোমার শ্বাস আছে।এই আরশাদকে বাদ দিয়ে তুমি বাঁচতে পারবে না।আমি বাঁচতে দেব না।”
আরশাদ ফ্লুজিকে ফোন করলো প্রতিবারের ন্যায় ফ্লুজি ফোন ধরলো না।সেচ্ছায় এড়িয়ে গেল আরশাদকে।
সে সবটাই বুঝে যার ফলে রাগটা আরো প্রবল ভাবে বৃদ্ধি পায়।সময় ব্যয় না করে সে দ্রুত ফোন করে অনিমাকে।আরশাদের গম্ভীর স্বরে অনিমা ভীষণ অবাক হন।এই ছেলে তো কখনো এতটা রেষ নিয়ে কথা বলে না।
অনিমা দ্রুত পায়ে ছুটে গেলেন খুশবুর কক্ষে।
” আরশাদ ফোন করেছে নে কথা বল।”
” আম্মু আমি পড়ছি এখন কথা বলতে পারবো না।”
” খুশবু বেয়াদবি করিস না।নে কথা বল।”
খুশবু না চাইতেও ভয় নিয়ে ফোন ধরলো। অনিমা চলে যেতে দরজা বন্ধ করে বসলো বিছানায়।
” বলুন।”
” কি বলবো আমি?তুমি বলো কি শুরু করেছো।”
” আমি আবার কি শুরু করলাম?”
” এই কথা ঘুরাবে না ছেলেটা কে?”
” কোন ছেলে?”
” যার হাতে হাত ধরে…. উফফ আমি ভাবতেও পারছি না।”
” আবার বয়ফ্রেন্ড সুন্দর না?”
“তোমার চো খ দুটো খুলে নিয়ে শোপিস বানিয়ে আমার কাছে রেখে দেব।এত সাহস তুমি পেলে কি করে?”
” আপনি ওইদিন কি বললেন মনে নেই আপনার?”
” কি বলেছি আমি?”
” আমার যা খুশি আমি যেন তাই করি।তাই আমার যা খুশি আমি তাই করছি।”
” যা খুশি তাই করো… হা হা হা আমার হুশিয়ারি তুমি বুঝতে পারলে না বোকা ফ্লুজি।যা খুশি তাই করো মানে তুমি একবার শুধু করে দেখ তারপর তুমি ফিনিশ।”
খুশবুর ধপ করে নিভে গেল।হাত পা গুটিয়ে বসে পড়লো বিছানায়।আরশাদের ধমকগুলো একের পর এক গিলে যাচ্ছে সে একটু পর নিশ্চয়ই বদহজম হয়ে সব উগড়ে দেবে।
খুশবুকে চুপ থাকতে দেখে আরশাদ ধমকে বলে,
” কি হলো কথা বলছো না কেন?”
” কী বলবো?”
” বলো ভালোবাসি।”
” ভালোবাসি।”
” বলো, আরশাদ জান আপনাকে আমার চাই আপনি আসুন প্লিজ।”
“আরশাদ জান আপনাকে আমার চাই আপনি আসুন প্লিজ।”
” ওকে জান আমি আসছি আরেকটু অপেক্ষা করো।এবার আসলে তোমার কপালে সুখ দুঃখ দুটোই আছে।”
খুশবু চুপসে গেল।শেষ পর্যন্ত জিত হলো আরশাদের।তাকে ধমক দিয়ে বাংলাদেশে আসার জন্য অনুরোধ করিয়ে ছাড়লো!
” জান। ”
” হুহ।”
” ইউর লিপ’স মাই লিপ’স,এপোক্যালিপ।”
” কিহ!”
” সি ইউ সুন জান।”
চলবে…..
যারা যারা এখনো গ্রুপে জয়েন হও নাই তাদের কারো বিয়ে হবে না এই বলে দিলুম😒🪓
🔺গ্রুপ লিংক-https://facebook.com/groups/764407025608497/
🔺আইডির লিংক-https://www.facebook.com/profile.php?id=61555546431041