ফ্লুজি #অনুপ্রভা_মেহেরিন [পর্ব ১৪ বাকি অংশ]

0
188

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৪ বাকি অংশ]

সাত সকালে হসপিটালে এসে উপস্থিত খুশবু।তার ভীত চাহনিতে দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাকিয়ে আছে মায়া।অপরাধীর চোখে আড় তাকাচ্ছে রিয়া।তার বুদ্ধিতেই তো আজ এত অঘটন ঘটলো।রিদ হসপিটালে ভর্তি।গত রাতে বাসায় ফেরার পথে তাকে নাকি ছিনতাইকারীরা আক্রমণ করে একটা পর্যায়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় অচেনা এক গুদাম ঘরে।সেই ছিনতাইকারীরা ছিল অদ্ভুত তাদের টাকাও চাই না মোবাইলও চাই না তাদের আসলে কী চাই তারা হয়তো নিজেরাও জানে না।

রিদ প্রথম প্রথম ভীষণ ভয় পেল।সিমসাম গড়নের একটি ছেলে তাকে জানায় ভোর ভোর তাকে বাসার সামনে নামিয়ে দেওয়া হবে তবে এই দীর্ঘরাত তাকে ফুসকা এবং ঝাল মুড়ি খেতে হবে।এক মুহূর্তের জন্যেও থামা যাবে না তাকে আনলিমিটেড খেতে হবে।রিদের বুঝতে আর বাকি নেই এসব কার চাল।
মায়ার কথা মতো কাজ করে সে বিশ্রি ভাবে ফেঁসে গেছে আরশাদ ইহসান যে তার আজ আত্মার মাগফেরাত কামনা করিয়ে ছাড়বেন বলে মনে হচ্ছে।

রিদ প্রথমে রাজি না হলে রড তুলে মারতে যায় ছিনতাইকারীদের দলের একজন।ছেলেটা ভয়ে কুঁকড়ে যায় মার খাওয়ার চেয়েও ফুসকা খাওয়া অনেক ভালো।ফুসকা এবং ঝালমুড়ি খেতে গিয়ে বাঁধে আরেক বিপত্তি, উভয়তে নাগা মরিচ দেওয়া।রিদ ঝাল খোর,ঝাল খাওয়া নিয়ে বন্ধুদের মাঝে কম্পিটিশন হলে প্রতিবারি সে জিতে।তাই ব্যপারটা এত গায়ে লাগলো না তার।প্রথম ধাপ গুলো সহজ হলেও ক্রমশ তার অবস্থা খারাপের দিকে যায়।পরবর্তীতে নাগা মরিচ ছাড়াই তাকে ভোর পর্যন্ত ফুসকা আর ঝালমুড়ি খেতে হয়েছে।

এর মাঝে বেশ কয়েকবার উগড়ে দিয়েছে সবকিছু।এত বিশ্রি একটা রাত তার জীবনে আগে কখনো আসেনি।

সকালে বাড়ি ফিরতে তার ডায়রিয়া শুরু হলো সেই সাথে বুমি।কাউকে কিছু বলতে চেয়েও পারলো না সে।বললেই তো বিপদ পরের বার নাগামরিচ কাচামরিচ উভয় থেরাপি দিয়ে ছাড়বে।রিদের এই হালচালের অবস্থা কে করেছে মায়া বুঝতে পারে তাই তো দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাকিয়ে আছে সে।মায়া ক্ষুব্ধ হয়ে বলে,

” ছেলেটা বেড টু টয়লেট,টয়লেট টু বেড।তোদেরকে কাঁচা চিবিয়ে খেতে মন চাইছে।”

মায়ার ধমকে রিয়া কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,

” ওর পুক্কি জ্বলে যাচ্ছে তাই না দোস্ত?”

সিরিয়াস মুহূর্তে ফিক করে হেসে ফেললো খুশবু।তার হাসিতে বাকিরাও চুপ থাকতে পারেনি।খুশবু রিয়ার মাথায় গাট্টা দিয়ে বলে,

” রিয়া এসব বুদ্ধি যে তোর আরশাদ যদি একবার জানে তবে তোর অবস্থা যে কি হবে।”

” বলিস না দোস্ত বলিস না।তোর দাম্পত্য জীবনের কোন প্রবলেম আর সলভ করবো না প্রমিস।আমি ভেবেছিলাম আমার ওষুধের পার্শপ্রতিক্রিয়া তোর হবে এখন যে রিদের হবে কে জানতো।”

মায়ার মা এগিয়ে এসে দাঁড়ালেন।উনার চিন্তিত মুখখানী দেখে রিয়া বলে,

” আন্টি আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না ডাক্তার তো বলেছে ঠিক হয়ে যাবে।”

” মায়ার বাবা দেশের বাইরে আমি কি এই বয়সে একা সব সামলাতে পারি?ছেলেটা ভালোয় ভালোয় সুস্থ হয়ে যাক।আমার যে কতটা টেনশন হচ্ছে বলে বোঝাতে পারবো না।”

খুশবু বাড়ি ফিরলো দুপুরে।রিদের জন্য তার ভীষণ খারাপ লাগছে এতটা অমানুষিক কাজ কেউ করতে পারে?খুশবু ফোন করলো আরশাদকে।আরশাদ তখন বন্ধুদের সাথে আড্ডায় ছিল খুশবুর ফোন পেয়ে আড়ালে আসলো সে,

” জান আজ হঠাৎ নিজে থেকে ফোন করলে?”

” রিদের সাথে কাজটা আপনি ভালো করলেন না।আপনি নিশ্চয়ই জানতেন রিদ আমার জুনিয়র তারপরেও…”

” খাইয়ে দিয়েছে তো।আবার পাশাপাশিও হেটেছে আমি এসব কি করে সহ্য করবো বলো?”

” আপনি মানসিক রোগী নাকি?স্বাভাবিককে অস্বাভাবিক করে তুলছেন।”

” আরেহ তুমি জানতে না?গতকাল ডাক্তারের চেকাপ ছিল।রোগী বানিয়েছে কে?তুমিই তো বানালে।”

আরশাদের সাথে কথায় পেরে উঠে না খুশবু।এই ছেলেটা হাড় মাংস সব জ্বালিয়ে খাচ্ছে।আরশাদের হঠাৎ কি যেন হলো।গম্ভীর স্বরে খুশবুকে বলে,

” তুমি আমার ভালোবাসা বুঝ না।তোমার মতো মেয়ের সাথে টেকা যায় না।”

” এখন তো এসব বলবেন কারন বিয়ে করা তো শেষ যখনি আপনার আদর আদর কথায় আমি ফেসেছি তখনি তো পালটি নিয়েছেন।”

” সে যাই হোক।আমার আর এসব ভালো লাগছে না।ফোন রাখছি।”

আরশাদ ফোন কেটে দিল।
সেদিনের পর আর খুশবুকে ফোন করেনি আরশাদ।খুশবু অবাক হয় ভীষণ অবাক হয় যেই ছেলের ফ্লুজি ফ্লুজি করে শ্বাস আটকে আসতো সেই ছেলে কি না তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে।
এসব মানতে পারে না খুশবুর সরল মন।আজ দুইদিন হয়ে গেল আরশাদের সাথে তার যোগাযোগ নেই।মূলত আরশাদ যোগাযোগ করেনি তার সাথে।কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটার বেহাল দশা।অনিমা সবটাই দেখছেন বুঝতেও পারেন কিন্তু কিছুই বলার নেই তার।বাহারুল হক প্রতিদিন ঘরে অশান্তি করে যাচ্ছেন।মেয়ের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা তিনি কিছুতেই মানবেন না।

সকাল ছয়টায় বাহারুল হক হাটতে বেরিয়েছেন।অনিমা নিজের দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে ছুটে গেলেন দরজার কাছে।আরশাদ এসেছে একটি ট্রলি হাতে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা।অনিমাকে দেখে খুশিতে আধখানা হয়ে আলগোছে জড়িয়ে ধরেছে ছেলেটা।খুশিতে অনিমার চোখে পানি এসে গেছে।

” আম্মু ভালো আছেন?”

‘আম্মু’ শব্দটা আরশাদের কাছে বেশ কঠিন।তবুও আদর মেখে ডাকছে সে।

” ভালো বাবা।খুব ভালো।কখন এলে?”

” এই তো দুই ঘন্টা আগে।মম ড্যাডকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে সব বুঝিয়ে আমি এদিকে আসলাম।এখনো ফ্রেশ হয়নি।”

” তুমি মেয়েটার সাথে কি শুরু করেছো বলতো।গত দুইদিন থেকে তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ। তুমি আসবে আমি সব জেনেও চুপচাপ হজম করছি।”

” আমি আসবো বলেই তো তার সাথে এমন একটা নাটক করলাম।ব্যপারটা সারপ্রাইজ।”

” যাও বাবা ফ্রেশ হও আমি খুশবুকে ডেকে পাঠাচ্ছি।”

” না না আমি এখন ঘুমাবো।আমি যাচ্ছি তার রুমে এই ট্রলিটা রাখুন এখানে যা যা আছে সব আপনাদের।”

অনিমাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আরশাদ চলে গেল তার ফ্লুজির রুমে।মেয়েটা হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে সারা বিছানা জুড়ে ঘুমিয়ে আছে।আরশাদ বসলো তার ফ্লুজির মুখোমুখি।কত মাস পর,কত মুহূর্ত পর আবার দেখা,আবার ছুঁইয়ে দেওয়ার লোভ পূরণ হতে চলেছে।

আরশাদ হাতের ঘড়ি খুলে টেবিলে রাখলো।পকেট থেকে একে একে দরকারি সব বের করে ওয়ারুমে গিয়ে ফ্রেশ হলো।আয়নায় নিজেকে দেখে নিল একবার ক্লান্ত হলেও আজ তাকে ক্লান্ত লাগছে না।ফুরফুরে মেজাজে শুয়ে পড়লো তার ফ্লুজির পাশে।আরশাদের মনে কোন দ্বিধা নেই সন্দিহান নেই।ক্লান্ত দু’চোখ নিয়ে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইল তার ফ্লুজির পানে।ফ্লজিকে বুকে টেনে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল সে।একটা সুন্দর স্মৃতি,উষ্ণ মুহূর্তে কেটে গেল দুজনের মাঝে অথচ তাদের কারো হুশ জ্ঞান নেই।আরশাদের ক্লান্ত শরীর ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছে অপরদিকে খুশবু উষ্ণতা পেয়ে নিজেকে আরো গুটিয়ে ঘুমকে সঙ্গ দিয়েছে।

বেলা বারোটায় আচমকা খুশবুর ঘুম ভাঙলো।শরীরে প্যাচানো ভারী বস্তুটার ওজন তার ছোট্ট দেহখানী নিতে ব্যর্থ।ঘুমের ঘোর থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে খুশবু।ড্যাবড্যাব চোখে তাকাতে বুঝতে পারে আরশাদ!আরশাদ তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
এই সময়ে আরশাদ কোথা থেকে আসবে?তাও তার বিছানায়!এলোমেলো হয়ে যায় মেয়েটার ভাবনা চিন্তা থরথর করে কাঁপতে থাকে দেহখানী।খুশবু ফুঁপিয়ে উঠতে আরশাদের ঘুম ভেঙে যায়।ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে উত্তেজিত হয়ে বলে,

” কি হয়েছে জান কাঁদছো কেন?”

আরশাদ অস্থির হয়।নিজে কোন ভুল করেছে কি না ভেবে পাচ্ছে না সে।

” ফ্লুজি কাঁদছো কেন?”

খুশবু আরশাদের বুকে ঢলে পড়ে।বড় বড় নখের সাহায্যে খামছে দেয় আরশাদের বুক গলা।আরশাদ কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারে না কান্নার সাথে সাথে যে খুশবু রাগ ঝারছে তার আর বুঝতে বাকি নেই।

” এবার তো থামো।”

” আর কতটা অনিশ্চয়তায় রাখবেন আমায়?আই হেট ইউ আরশাদ।আই হেট ইউ।”

” বাট আই লাভ ইউ।”

” এসব কথা বলবেন না খবরদার মে রে মুখ ভেঙে ফেলবো।আমায় কেন কষ্ট দিচ্ছেন আপনি?আমি কি দোষ করেছিলাম।জানেন বাবা মায়ের সাথে কতটা রাগারাগি করেছে, আমার সাথে মন খুলে কথাও বলে না।”

” সব ঠিক হয়ে যাবে আমি এসেছি তো।”

খুশবু সরে বসলো।গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে রইল অন্য দিকে।আরশাদ কিঞ্চিৎ হেসে খুশবুর হাত টেনে বলে,

” তুমি দেখতে পারছো?”

” কি?”

” আমার তৃষ্ণার্ত দু’ঠোঁট।”

আরশার খুশবুর চুলে হাত বুলায়।রৌদ্রময় দুপুরে খা খা করছে তখন দু’টি হৃদয়।দু’ঠোটের মাঝে অচিরেই যেন খরার সৃষ্টি হয়েছে।প্রেমের বর্ষণ নামানো যে দায়, আরশাদ খুশবুকে বাঁধ্য করতে চায় না অপরদিকে খুশবু লজ্জায় কাছে আসেনা।খুশবুর ফোলা গাল চেপে ধরে আরশাদ,ভদ্রতার মুখোশ ছাড়িয়ে প্রেমের জোয়ারে ভেসে যায় উদ্দেশ্যহীন।খুশবু বাঁধা দেয় না।আরশাদের প্রতিটা ছোয়া তার খরা হৃদয়ের প্রাণ ফেরায়।আরশাদ ক্রমশ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে।ভালোবাসার প্রতিটা স্পর্শ ব্যথার সঞ্চার করতে কুঁকড়ে উঠে ফ্লুজি।

ফ্লুজির ছটফটে ভাব দেখে আরশাদ ছেড়ে দেয় তাকে।বুকের কোণে আগলে ধরে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,

” সরি জান সরি। আমি একটু বেশি এগ্রোসিভ হয়ে পড়েছি।”

খুশবু চোখে জল এসে যায়।তিরতির করে কাঁপছে তার ঠোঁট,

” আমি বোধহয় আপনার হাতেই ম রবো।”

আরশাদ হাসে খুশবুর রক্তিম ঠোঁটে হাত বুলায়।খুশবুকে আরো কাছে টেনে বলে,

” মা রতে মা রতে বাঁচিয়ে দেব অভ্যস হয়ে যাবে।”

” না না লাগবে না আমার অভ্যস।আমার ঠোঁট… ”

আরশাদ খুশবুর ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে।ফু দিয়ে উড়িয়ে দেয় গালে এলিয়ে থাকা চুল।

” এবার তোমাকে মা র তেই এসেছি।আরশাদের প্রতিটি স্পর্শে জেগে উঠার আগেই লুটিয়ে পড়বে বক্ষে।”

চলবে…..

যারা গল্প পড়ে চলে যান লাইক কমেন্ট করেন না আপনাদের কারনে নিয়মিত গল্প দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।এত কষ্ট করে লিখে যখন পর্যপ্ত সাড়া না পাই ভালো লাগে না।এত কৃপণতা কেন করেন বলুন তো🥹

আসসালামু আলাইকুম পাঠক।গল্পের ছোট্ট গ্রুপে আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ..
🔺গ্রুপ লিংক-https://facebook.com/groups/764407025608497/
🔺আইডির লিংক-https://www.facebook.com/profile.php?id=61555546431041

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here