এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️ #লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️ — পর্বঃ৩৭

0
268

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৭

নিকষকালো অন্ধকারে ঘেরা চারপাশ। শাঁ শাঁ করে ঢেউদের শব্দ শোনা যাচ্ছে ব্রিজের নিচ বেয়ে। তুমুল বাতাস আর শীতের আভাস বইছে দারুণ। জানুয়ারি মাসের চার তারিখ পেরিয়ে পাঁচ তারিখকে বহু আগেই ছুঁয়ে ফেলেছে সময়। আদ্রিতা আর ফারিশ ঠায় দাঁড়িয়ে রাস্তার কর্নারে। কারো মুখেই কথা নেই। ফারিশের প্রতিটা কথার ধাঁজ এতটাই ধারালো যে আদ্রিতা চেয়েও আর কিছু বলতে পারছে না। ফারিশের কথার পিঠে কথা বলার মতো কোনো শব্দই খুঁজে পাচ্ছে না যেন। আর শেষ কথাটার “তুমি” সম্মোধনটা। আদ্রিতার বুকে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। ফারিশ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কপাল চুলকে বললো,“রাত কিন্তু অনেক হয়েছে দাঁড়িয়ে না থেকে বাড়ি যান।”

আদ্রিতা ছলছল দৃষ্টি নিয়ে তাকালো ফারিশের দিকে। নরম গলায় প্রশ্ন করলো,“আমার কথা কি একটুও শোনা যায় না ফারিশ?”

তড়িৎ উত্তর এলো ফারিশের,
“আগে হলে যেত এখন যায় না।”
“মানুষ মাত্রই তো ভুল করে।”
“আপনি তো ভুল নয়,
“জানি অন্যায় করেছি।”
“জানেনই যখন তখন বলছেন কেন?”
“আমি একটু সময় নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।”

মিনতির স্বরে শুধায় আদ্রিতা। ফারিশ শোনে না। গম্ভীর এক আওয়াজে বলে,
“আমার মনে হয় না আমাদের আর কোনো বলার মতো কথা থাকতে পারে।”
“আমার তো কিছু বলার আছে।”
“কিন্তু আমার কিছু শোনার নেই।”
“এত ঘৃণা,

মলিন হাসে ফারিশ। বলে,
“ফারিশ মানুষটাই ঘৃণার।”
“না।”

হেঁসে ফেলে ফারিশ। এবারের হাসিটায় খানিকটা শব্দও হয় বটে। ফারিশ বলে,“ফারিশকে ঠকানো যায়,তার সাথে মিথ্যে অভিনয় করা যায়,কিন্তু ভালোবাসা যায় না।”

আদ্রিতা আবারও চুপ হয়ে গেল। ফারিশ চায় তার পানে। মৃদুস্বরে আওয়াড়,,“আপনার কি মনে আছে ডাক্তার ম্যাডাম আপনাকে একদিন হসপিটাল বসে আমি একটা প্রশ্ন করেছিলাম?”

চকিত চাইলো আদ্রিতা। চাইলো ফারিশের চোখের দিকে। কি নিদারুণ বিষণ্ণ মাখা সেই চোখ জোড়ায়। আদ্রিতা প্রশ্ন করে,“কোন কথা?”

ফারিশ সময় নেয় না। শান্তস্বরে বলে,“আপনায় জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমাকে কি ভালোবাসা যায় ডাক্তার ম্যাডাম?”

থমথমে মুখটা তড়িৎ কেঁপে উঠলো আদ্রিতার। বিস্মিত নজরে চোখের পলক ফেললো বার কয়েক। হাত কচলালো মুহুর্তে। ফারিশ দেখলো। বললো,“সেদিন আপনার উত্তর কি ছিল তা কি আপনার মনে পড়ে।”

আদ্রিতা মাথা নুইয়ে ফেলে আবার। যার অর্থ ‘তার মনে আছে’। ফারিশ বলে ওঠে তক্ষৎনাৎ,“আপনি উত্তরে বলেছিলেন ‘পৃথিবীর সব মানুষকেই ভালোবাসা যায় শুধু সেই মানুষটাকে ভালোবাসার মর্মতা বুঝতে হয়।’ এখন প্রশ্ন হলো আমি কি মর্মতা বুঝে নি?”

আদ্রিতা কিছু বলে না। ফারিশ চুপ থাকে না আবার বলে,“আজ আপনি সত্যি সত্যিই প্রমাণ করে দিলেন ফারিশকে ভালোবাসা যায় না। ফারিশরা কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই নই বোধহয়।”

করুন শোনালো ফারিশের শেষ কণ্ঠস্বর। তার কথা বোধহয় আবার আটকে আসছে। আদ্রিতা এবার মুখ খোলে। লজ্জিত স্বরে বলে,
“আপনি ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য ফারিশ।”

ফারিশ নিজেকে সামলে বলে,
“তাহলে কি করে ঠকালেন বলুন তো?”
“আমায় কি একবার ক্ষ..

পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই ফারিশ হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয় তাকে। বলে,“ক্ষমা শব্দটা ব্যবহার করবেন না ওটা শুনতে ইচ্ছে করছে না। আপনি বাড়ি যান।”

আদ্রিতা গেল না। আদিবের গাড়ি আসলো তখন। ফারিশ তাদের গাড়িটা দেখতে পেয়েই ছুটে গেল সেদিকে। আদ্রিতা তার পানে চেয়ে। অতঃপর আর কোনো কথা না বাড়িয়েই চলে গেল ফারিশ আর আদিব। আদিব আদ্রিতাকে দেখলেও কিছু বললো না। চুপচাপ চলে গেল।’

আদ্রিতা বিস্মিত মন ভাঙা মন নিয়ে দাঁড়িয়ে। চোখ বেয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো নিচে।’

আজ মৃদুলের বিয়ে! তুমুল হইচই আর গানবাজনা হচ্ছে বাড়ির ভিতর। বড় বড় বাস ভাড়া করা হয়েছে বরযাত্রীদের যাওয়ার জন্য। মৃদুলদের জন্য স্পেশাল ফুল সাজানো গাড়ি। সেই গাড়ি করে যাবে আদ্রিতা,মুনমুন, রনি,আশরাফ, মৃদুল আর চাঁদনী। গাড়িটা বড়সড়। আদ্রিতা ভাড়ি একটা লেহেঙ্গা পড়েছে। চুলগুলো খোলা। মুখে মলিন হাসি ঝুলছে। বাকিরাও সেজেছে খুব। মৃদুলের কাজিনকুজিনও আসছে পিছনের গাড়ি করে। মৃদুল ওরা গাড়িতে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করলো। মৃদুল টিস্যু দিয়ে নিজের মুখটা মুছতে মুছতে বললো,“দোস্তরা আমার না খুব নার্ভাস লাগছে! গাড়ি থাইক্যা নাইম্যা যামু নি।”

আশরাফ চোখ কুঁচকে ফেললো। সে গাড়ি চালাচ্ছে। আশরাফ লুকিং গ্লাস দিয়ে এক পলক মৃদুলকে দেখে বললো,“মৃদুলের বাচ্চা সেদিনের মতো যদি আজকেও অজ্ঞান-টজ্ঞান হোস তো দেখিস। বাড়ি এসে তুমুল পিডামু।”

আশরাফের কথা শুনে গাড়ি কাঁপিয়ে হাসলো সবাই। আদ্রিতাও হাসলো খানিকটা। মৃদুল কাচুমাচু হয়ে বললো,“ওইদিন কি আমি ইচ্ছা কইরা অজ্ঞান হইছিলাম নি। ওটা তো জাস্ট এক্সিডেন্ট ছিল।”

“ওই এক্সিডেন্টই আজ যেন না ঘটে চান্দু”–রনির গম্ভীর আওয়াজ।”

“এই তোরা থামবি বেচারা বিয়ে করতে যাচ্ছে এত শাসন না করলেও চলবে।” –চাঁদনী কথাটা বলে মৃদুলের কাঁধে হাত দিলো।’ মৃদুল মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে তার পানে চেয়ে রইলো। যেন এই মুহূর্তে তার সবচেয়ে বন্ধুই হচ্ছে চাঁদনী।”

প্রচুর হুল্লোড় আর হাসি তামাশা নিয়ে গাড়ি ছুটে চললো মৃদুলের শশুর বাড়ি। আদ্রিতাও নিজেকে তাদের মধ্যে জড়িয়ে নিল।’

পাক্কা দু’ঘন্টা পর গাড়ি এসে থামলো আহসান মঞ্জিলের সামনের। আহসান নীলিমার বাবার নাম। মৃদুলদের গাড়ি দেখেই কেউ একজন ছুটে গেল ভিতরে চিল্লাতে চিল্লাতে বললো,“বর আইছে, বর আইছে।”

মৃদুলের বুকটা কেঁপে উঠলো আচমকা। সে বুকে হাত দিয়ে বললো,“আমার কইলজা কাফে ভাই।”
আদ্রিতা মাথায় চাটি মারলো তার। বললো,“এত নাটক করিস না। ভাবি বইসা আছে।”

ভাবির কথা শুনতেই মৃদুলের মাঝে সাহস চলে আসলো। বেশ ভাব নিয়ে বললো মৃদুল,“প্রথমবার বিয়ে করছি না একটু নাটক না করলে চলে।”

আশরাফ হেঁসে বললো,“বুঝচ্ছি। এবার চল হাঁদা।”
গেটের কাছে আসতেই বাঁধায় এসে দাড়ালো নয়নতারাসহ আরো কিছু মেয়েপক্ষরা। তাদের একটাই কথা বিশ হাজার টাকা না দিলে জামাইকে ভিতরে ঢুকতে দিবে না। তা নিয়ে বেশ তর্কাতর্কি হচ্ছে আশরাফ আর নয়নতারা মধ্যে। আর বাকিরা মজা নিচ্ছে।’

রুম জুড়ে আধার। ঘুটঘুটে অন্ধকার বলে যাকে। অথচ বাহিরে তীব্র রোদ। বদ্ধ একখানা রুম। চেয়ারে বসে আছে কেউ, হাতে খালি মদের গ্লাস। গায়ের জড়ানো ধূসর রঙের পাঞ্জাবি। মুখ ভর্তি দাঁড়ি, কুচকুচে কালো চোখ, গায়ের রঙ ফর্সা, সুঠাম দেহের অধিকারী এক সুদর্শন পুরুষ বলা যায়। তীব্র সেই অন্ধকারে বসে আছে লোকটি। রকিং চেয়ারে দুলছে। হঠাৎ মোবাইল বাজলো তার। চেয়ারের পাশে থাকা ছোট্ট টি-টেবিলটার ওপরে ফোনটার লাইট জ্বলছে। লোকটা বিরক্ত হলো। নীরবতার ভিড়ে হঠাৎ ঝনঝাল তার পছন্দ হয় নি। লোকটা ফোনটা তুললো না। সেকেন্ড টাইম বাজতেই একরাশ বিরক্ত নিয়ে ফোনটা তুললো। কিছু বলার পূর্বেই অপরপাশে থাকা লোকটা আতঙ্কিত কণ্ঠে বললো,“বস দেড়শো মেয়ের মধ্যে একটা মাইয়া কম পড়ছে।”

মুহুর্তের মধ্যে মেজাজ তুঙ্গে উঠলো তার। তীব্র রাগ নিয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে আওড়ালো,“কি করে কমলো?”

অপরপাশের মানুষটি ভয়ে ভয়ে বললো,“বস গলায় চাকু দিয়া পোঁচ দিছে নিজে নিজেই।”

লোকটি কিছু বললো না। চুপ থাকলো অনেকক্ষণ। এরপর শান্ত গলায় বললো,“কালকের মধ্যে নতুন মেয়ে চাই আমার। বুঝেছো লতিফ!”

লতিফ মাথা নাড়িয়ে বললো,“দেখতাছি বস, দেখতাছি।”

ফোন কেটে গেল। পাঁচ মিনিট সব চুপ। এরপরই ড্রয়ার থেকে ম্যাচের কাটি বের করলো লোকটি। একটা জ্বালিয়ে কাছের মোমবাতিটি জ্বালালো। বিশ্রী এক হাসি দিয়ে বললো,“ফারিশ, আমি যে ফিরে এসেছি এবার তোর কি হবে? প্রতিশোধের আগুন যে এবার দাউদাউ করে জ্বলবে।”

কথাটা বলেই হাসতে লাগলো লোকটি। ঘর কাঁপানো এক ভয়ংকর হাসি।’
—-
তখন নিরিবিলি বিকেল। ফারিশ বসে আছে তার সিঙ্গেল সোফায়। চোখে মুখে বিষণ্ণ ভাব। আদিব আসলো তখন। পাশে বসে বললো,“ভাই একটা খবর আছে?”

ফারিশ তাকালো আদিবের দিকে। বললো,
“কি খবর?”
“আরশাদ জেল থেকে পালিয়েছে।”

ফারিশ অবাক হলো না মোটেও। এ খবর সে আরো দু’মাস আগে জেনেছে। অথচ আদিব জানছে আজকে। ফারিশ শান্ত স্বরে বললো,“জানি আমি।”

আদিব ভয়ার্ত কণ্ঠে বললো,“এবার কি করবেন ভাই?”

ফারিশের তড়িৎ উত্তর,
“যেখান থেকে পালিয়েছে সেখানেই পাঠাবো।”
“আপনার ক্ষতি করতে চাইলে,
“ভয় পেও না কিছু হবে না।”

হঠাৎই প্রসঙ্গ পাল্টে ফারিশ বললো,
“তুমি কি চাঁদনীর সাথে যোগাযোগ রাখছো না আদিব?”

আদিব একটু ভড়কায়। পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে তড়িৎ জবাব দেয়,“না।”

#চলবে…

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। গল্প খুব শীঘ্রই শেষের পথে হাঁটবে। সবাই অপেক্ষায় থেকো।]

#TanjiL_Mim♥️.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here