বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প #পর্ব -১৮ #লেখনিতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

0
931

#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব -১৮
#লেখনিতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

আজ শুক্রবার। হুরের কলেজ এবং রুদ্ধের অফিস দুটোই ছুটি। তাই দুজন বাসায় রিল্যাক্সে আছে।প্রতিদিনের তুলনায় দুজনই আজ লেট করে ঘুম থেকে উঠেছে। রুদ্ধ ফ্রেশ হয়ে জিন্স প্যান্ট আর একটি টি-শার্ট পড়ে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে। এক হাতে ফোন এবং অন্য হাতে একটা ফাইল। সম্ভবত কিছু মেলানোর চেষ্টা করছে। হুর ঘুম থেকে সবেমাত্র উঠে ফ্রেস না হয়েই নিচে নেমে আসছে। উদ্দেশ্য তার লিলি আর জেরিনের কাছে যাওয়া।তাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে নিজের ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দেয়া। অতিরিক্ত চোখে ঘুম থাকার কারণে পুরোপুরি ভাবে চোখ মেলে তাকাতে পারছে না। গতকাল রাতে লেট করে ঘুমিয়েছে। রাতে বন্ধু-বান্ধবদের প্যারায় ঘুমাতে পারেনি।মেসেঞ্জারে গ্রুপ কলে অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়েছে। তাই ঘুমাতে প্লাস ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়েছে। এক হাত দিয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে সে।হুরের পায়ে থাকা স্লিপারের আওয়াজ শুনে সিঁড়ির দিকে তাকালো রুদ্ধ।ঢিলেঢালা প্লাজু এবং হাঁটুর উপর অব্দি গেঞ্জি পড়ে আছে সে।চুল ঢিলু করে খোপা করা। আর কপালের ছোট ছোট চুল এলোমেলো হয়ে আছে। ঘুমের কারণে চোখ ফুলে আছে।নাক চিক চিক করছে। নাক চিকচিক করার কারণ ধরতে পারল না রুদ্ধ। খেয়াল করল চোখের সাথে সাথে ঠোঁট ও কিছুটা ফুলে আছে।গলার দিকে খেয়াল করতেই দৃষ্টি নত করে নিল। কারণ হুর ওড়না বিহীন আসছে। মেয়েটা বোধহয় ঘুমের ঘোরে খেয়ালই করেনি তার গায়ে ওড়না নেই।

সিঁড়ি থেকে নেমে রান্না ঘরের দিকে অগ্রসর হলো হুর।তবে রান্নাঘরে গেল না। ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে পড়লো। টেবিলে দুই হাত ভাঁজ করে মাথা হাতের উপর ঠেকালো। ঠেলে ঠুলে আবার ঘুম আসছে। রুদ্ধ অবাক হয় হুরের এমন ঘুম দেখে। মেয়েটা বড্ড ঘুমকাতুরে।হুরের ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য রুদ্ধ গলা খাকারি দেয়।তবে হুরের মাঝে কোন হেলদোল দেখা গেল না। সে নিজের মতো করে বসে আরামের সহিত ঘুমিয়ে আছে। রুদ্ধ বুঝলো এভাবে এ মেয়েকে উঠানো যাবে না। আর এখন যদি সে হুরের সামনে যায় তাহলে ঘটে যাবে আরেক বিপত্তি। তাই চেয়েও হুরের কাছে যেতে পারছে না সে।হুরের দিকে আর চেয়ে রইল না সে। নিজ কাজ করতে লাগলো। একটু পর জেরিন রান্নাঘর থেকে ডাইনিং এ আসতেই দেখল হুর বসে বসে ঘুমাচ্ছে।তাই তার কাছে গিয়ে ডাক দিল। ঘুম ভাঙলো না হুরের। তবে একটু নড়ে চড়ে আবার ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল। শরীরে ঝাঁকুনি দিয়ে ডাকতে লাগলো জেরিন। এক সময় সে উঠেও গেল।হুরকে চেয়ার থেকে টেনেটুনে তার রুমে পাঠালো। বাধ্য হয়ে হুরকেও তার রুমে যেতে হল।

দুপুর গড়িয়ে বিকেলের আগমন।হুর নিজেকে পুরো কালো রঙে আবৃত করেছে। কেন জানি আজ সবকিছুই তার কালো পড়তে ইচ্ছে করছে।তাই কালো জিন্স এবং কালো লং জামা পড়েছে। সাথে ম্যাচিং ওড়না।পড়ার টেবিলে মনোযোগ সহকারে পড়ছে সে। অনেকক্ষণ ধরেই পড়ছে ।আর কিছুক্ষণ পড়লেই পড়া কমপ্লিট হয়ে যাবে। পড়া কমপ্লিট করে নিচে নেমে আসছে সে। জেরিনকে বলবে নুডলস রান্না করতে। এই মুহূর্তে তার নুডলস খেতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। রান্নাঘরের দিকে যাওয়ার সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। পা জোড়া থেমে গেল হুরের। এই মুহূর্তে কে আসতে পারে সঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। এ বাড়িতে মানুষের আনাগোনা খুবই কম।রুদ্ধের আত্মীয় স্বজনদের ও কখনো চোখে পড়েনি। আর রুদ্ধ তো বাসাতেই আছে। তাহলে কে হতে পারে এ সময়? এসব ভাবতে ভাবতেই চলে গেল মেইন দরজার কাছে। যেই না দরজা খুলতে যাবে ওমনি দুটো হাত তার কোমর চেপে ধরল।শুধু কোমর চেপে ধরল না সাথে, নিজের সাথে মিশিয়েও নিল। ব্যক্তিটির দিকে না তাকিয়ে হুর বুঝতে পারল এটা রুদ্ধ ছাড়া আর কেউ না।কারণ হাতের স্পর্শটা নরম নয়। শক্ত ।আর শক্ত হাতের ছোঁয়া কেবলই রুদ্ধ তাকে দেয়।তবে হুর বুঝতে পারল না রুদ্ধ তাকে এভাবে কেন ধরেছে।দ্রুত গতিতে পিছন ফিরে তাকালো সে। রুদ্ধের ক্রোধিত নয়ন । এই একটা জিনিস বুঝতে পারে না হুর। বিনা কারণে তার কঠিন মুখশ্রী কেন তার দর্শন হয় তা কখনো মিলাতে পারে না। লোকটা চাইলে তো একটু হাসতে পারে। কিন্তু না। উনি হাসলে তো ওনার ব্যাংক ব্যালেন্সের সব টাকা কমে যাবে। তাই সে চেয়েও হাসেনা।

রুদ্ধ সর্বপ্রথম হুরের খোলা চুলের দিকে তাকালো। কঠিন স্বরে বলল,
“তোমাকে না বলেছি খোলা চুলে কেউর সামনে যাবেনা।

অবাক হয়ে হুর জিজ্ঞেস করল,
“আমি আবার কোথায় কার সামনে গেলাম?
রুদ্ধ দরজার দিকে ইশারা করে বলল,
” এখনই তো যাচ্ছিলে।
আড়ালে ভেংচি কাটলো সে।কিছুটা রেগে বলল,
“আমি কি ইচ্ছে করে যাচ্ছিলাম নাকি? কলিং বেল বাজছিল তাই আমি দেখতে যাচ্ছিলাম কে এসেছে!আর এখন তো আমি বাড়ির ভেতরেই আছি। চুল খোলা থাকুক বা বাঁধা থাকুক তাতে কি?

রুদ্ধ আবার চোখের ইশারায় দরজার দিকে তাকাতে বলল। হুর পিছন ফিরে দরজার দিকে তাকালো। সেই মুহূর্তে অনুভব করলো রুদ্ধ তার ডান হাত তার পেট স্পর্শ করেছে।আর বাম হাত দিয়ে হুরের বাম হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়েছে।খোলা চুলে নাক মুখ ডুবিয়ে লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে চুলের সুবাস নিচ্ছে।হুর কেঁপে উঠলো। ডান হাত চলে গেল নিজ পেটের ওপর থাকা রুদ্ধের ডান হাতের ওপর। রুদ্ধের ডান হাত খামচে ধরলো। রুদ্ধ হুরের বাম হাত ছেড়ে দিল। ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে মাথা নিচু করে ঘাড়ে নাক ছোয়ালো। হুর কেঁপে উঠে এক কদম পিছিয়ে গেল।পিঠ ঠেকলো রুদ্ধের বুকের সাথে।হুরকে কাঁপতে দেখে হুরের পেটে হাতে দিয়ে আরো চাপ প্রয়োগ করল।ঘাড়ে নাক দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো। নাক, মুখের গরম নিঃশ্বাস ঘাড়ে আচড়ে পড়ছে। উত্তেজনা কাজ করছে। রুদ্ধ হুরের ঘাড়ে নাক দিয়ে স্লাইড করতে করতে স্লো ভয়েজে বলল।

“তাতে অনেক কিছু। তুমি চাইলে আমার সামনে শুধু চুল খোলা কেন ওড়না খুলেও থাকতে পারো। তাতে আমি কিছুই বলবো না। তবে আমার জিনিস যদি অন্য কেউ দেখে তাহলে আমি শান্ত থাকবো না। যে জিনিসগুলো আমায় জ্বালাবে আমি তাকে জ্বালিয়ে ছারখার করে দিব।

ঘাড় থেকে মুখ সরিয়ে আনলো রুদ্ধ। হুরকে সামনে ঘুরালো। দুহাত তার এখনো হুরের কোমরে। হুর শুধু রুদ্ধকে দেখে যাচ্ছে আর তার স্পর্শ অনুভব করছে। হুর রুদ্ধের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ফট করে একটা প্রশ্ন করল।
“আমি তো খোলা চুলে লিলি আপু আর জেরিন আপুর সামনেও যাই। তার বেলায় তো আপনি কোন কিছুই বলেন না।

“কারণ তারা মেয়ে মানুষ তাই কোন কিছু বলি না।
রুদ্ধকে ফাঁদে ফেলার মত একটা প্রশ্ন মস্তিষ্ক আসলো। তাই বলল,
“দরজার বাহিরে কোন মহিলাও তো হতে পারে।

রুদ্ধ স্বাভাবিকভাবে উত্তর দেয়,
“দরজার বাহিরে একজন পুরুষ আছে।
হুর বুঝে গেল রুদ্ধর হয়তো মানুষ এসেছে। তাইতো এত কনফিডেন্স এর সাথে কথা বলছে। হুর কথা বলার মাঝে সে খেয়ালি করেনি যে সে রুদ্ধের অনেক কাছে।যখন বুঝলো তখন ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল। তবে রুদ্ধের শক্তপোক্ত হাতের বেড়াজাল থেকে ছুটতে পারল না। কারণ যতক্ষণ না পর্যন্ত রুদ্ধ তাকে ছাড়বে ততক্ষণ অভিহুর ছাড়া পাবে না। ছেলেমানুষ বলে কথা। হুরের থেকে তিনগুণ শক্তি রুদ্ধের মাঝে আছে। যা এখন সে ব্যবহার করছে। সুযোগে সৎ ব্যবহার। তাই কাজে লাগাচ্ছে সে। নিজেকে ছাড়ানোর যুদ্ধে নেমে পড়ল হুর। তবে রুদ্ধের বডিবিল্ডার এর মত শরীরের সামনে সে তুচ্ছ এক কচ্ছপ।তাই হাজার চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারছে না। তবে এক সময় রুদ্ধ তাকে ছেড়ে দেয়। কারণ কলিংবেল আবারো বেজে উঠেছে। সামান্য কিছু সময়ের মধ্যে কত কিছুই না ঘটে গেল! রুদ্ধের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে হুর দৌড়ে চলে গেল তার রুমে। নিচে আসাটাই বোধহয় ভুল হয়েছে। বোধহয় না!অবশ্যই তার ভুল হয়েছে।ঘুরে ফিরে এই লোকটার সাথেই কোন না কোন ঘটনা ঘটে যায়। যা সব টাই অনাকাঙ্ক্ষিত। বিব্রতকর,অস্বস্তিকর।সাথে হৃদয় কাঁপিয়ে দেয়ার মত অনুভূতি।

রুদ্ধের অ্যাসিস্ট্যান্ট এসেছে তার কাছে। জরুরী কিছু পেপারস নিয়ে। এবং তার সাথে রুদ্ধের কিছু কথা ছিল। তাই সে ঘরেই তার অ্যাসিস্ট্যান্ট কে ডাক দিয়েছে।নাম তার ইমতিয়াজ।বলাবাহুল্য সে রুদ্ধের ডান হাত। গুরুত্বপূর্ণ সব ডিটেলস ইমতিয়াজের কাছে পাওয়া যায়। কারণ রুদ্ধ নিজের গোপনীয় কথা কাউকে বলুক বা না বলুক ইমতিয়াজকে বলে। বিশ্বস্ত লোক তার। নিজের ছোট ভাইয়ের নজরে তাকে দেখে। তবে স্বভাবটা তার মতই। কঠিন মুখশ্রী। কঠিন কঠিন প্রশ্ন এবং তার উত্তর। রক্ত আলাদা হলেও স্বভাব একই রকম। যে কেউ তাদের প্রথম দেখায় বলে দেয় তারা একে অপরের ভাই। তবে এ নিয়ে কখনো প্রতিবাদ করেনি ইমতিয়াজ আর রুদ্ধ। বরং উল্টো ভালো লাগে যখন তাদের কেউ ভাই মনে করে।রুদ্ধ কখনো ইমতিয়াজকে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে দেখেনি।তাই তাদের মাঝে মান অভিমান সবই হয়।ইমতিয়াস রুদ্ধকে কয়েকটা ফাইল দিয়ে তাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিল।আরো কিছু কথা সেরে নিল।তারপর ইমতিয়াজ নিজের অ্যাটিটিউড বজায় রেখে রুদ্ধকে প্রশ্ন করল,

“তা ভাবি কোথায়?ভাবিকে ডাকো!
তীক্ষ্ণ চোখে ইমতিয়াজের দিকে তাকালো রুদ্ধ। তা দেখে ইমতিয়াজ বলল,
“ভুলেও আমায় এমন লুক দিবে না। তুমি কি মনে করেছ তুমি এভাবে তাকালে আমি ভয় পেয়ে যাব?নো মিস্টার রুদ্ধ!ভয় আপনার হবু বউ পেতে পারে কিন্তু আপনার ভাই পায় না। কল হার নাও। আমি দেখতে চাই আমার হবু ভাবীকে।

ইমতিয়াজের কথার পিঠে আর কোন কথা বলতে পারল না রুদ্ধ। ইমতিয়াজ তার অ্যাসিস্ট্যান্ট হলেও মাঝে মাঝে দেখা যায় রুদ্ধ ইমতিয়াজের কথা শুনছে। তবে কখনো এতে বিরক্ত বোধ করে না সে। স্বইচ্ছায় মেনে নেয়। এবারও মানলো। জেরিনকে দিয়ে হুরকে ডেকে পাঠালো। নিচে নেমে আসলো হুর। চুল খোপা করে এসেছে। জেরিন এর কাছ থেকে জেনে নিয়েছিল যে নিচে কেউ আছে কিনা!
হুর ছোট ছোট পা ফেলে ড্রয়িং রুমের সামনে আসলো।মুখোমুখি হয়ে দুপাশের বড় বড় সোফায় বসে আছে দুটি পুরুষ। সুদর্শন পুরুষ। দেখতে দুজনেই খুবই সুদর্শন। তবে রুদ্ধের চেয়ে ইমতিয়াজের রংটা একটু চাপা। হুর ইমতিয়াজকে দেখে সালাম দিল। সালামের উত্তর নিল সে। হুর কে বসতে বলল । হুর যেন কোন কিছু বুঝতেই পারছে না। কি করবে না করবে তাও ভেবে পাচ্ছে না।তাই রুদ্ধের দিকে তাকাল।রুদ্ধ সম্মতি দিল ।রুদ্ধ যে সোফায় বসেছে সেই সোফাতেই মাঝখানে অনেকটা দূরত্ব রেখে হুর বসেছে। কণ্ঠস্বর কঠিন রেখে ইমতিয়াজ জিজ্ঞেস করল,

“নাম কি?

ঢোক গিলল হুর।নিজেকে বড় মাপের একজন আসামি মনে হচ্ছে।যেন মুখ থেকে কোন কিছু বের করলেই তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিবে।ভীত মুখশ্রী নিয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে হুর বলে,
” হুর…উম্মে তাহিয়্যাহ্ হুর।
———————–
রাত ১২ঃ৪৫।পড়ার টেবিল থেকে সবে মাত্র উঠেছে হুর। উদ্দেশ্য এখন ঘুমানো। পড়তে ব্লসার আগেই প্লাজো আর গেঞ্জি পড়ে নিয়েছিল। কারণ টেবিল থেকে ওঠার পর চেঞ্জ করতে মন চাইবে না তাই। রুমের ডিম বাতি জ্বালিয়ে বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়লো। সাথে সাথে ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠলো।বিছানায় হাতরাতে হাতরাতে ফোন খুজছে সে। এক সময় পেয়ে গেল। ফোন চোখের সামনে এনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দ্বারা ফোনের লক খুললো।রুদ্ধ মেসেজ করেছে। মেসেজ ওপেন করলো। তাতে লেখা,

“পানি নিয়ে আমার রুমে আসো।
ঈষৎ ভ্রু কুঁচকে এল হুরের।এত রাতে তাকে পানি নিয়ে তার রুমে ডাকছে।মনে মনে বিরক্ত হলো হুর। আওয়াজ তুলে বলল,
“আমি কেন পানি দিতে যাবো আপনায়?আপনার কি হাতে নেই? নিজে পানি নিয়ে আসতে পারেন না?না, তা করবেন কেন? নবাবের ব্যাটা আপনি। নিজে শুয়ে থাকবেন আর মানুষদের খাটাবেন। এটাই আপনাদের মত বড়লোকদের কাজ।

নিজের কথা নিজেই শুনলো। যার নামে এত গীবত গাইল সেই শুনলো না। তবে এতে কষ্ট পেল না হুর। মনের কথা উগরে দিতে পেরেছে এটাই অনেক। তার কান অব্দি যে পৌঁছাতে হবে সেটা বড় ব্যাপার না।তার কানে এসব কথা দেয়া মানেই জেনে শুনে মার্ডার হওয়া। আর যা হুর হতে চায় না। হুর ভাবছে এখন সে কি করবে।ফোন হাতে নিল। আর মেসেজ অপশনে গিয়ে রুদ্ধের দেয়া মেসেজ আরেকবার দেখলো। রিপ্লাই দিল…

“আমি ঘুমাচ্ছি! আপনি অন্য কেউর কাছ থেকে পানি চেয়ে নিন।
মেসেজ সেন্ড করার সাথে সাথে মাথায় বাজ পড়লো। নিজের বো’কামির জন্য নিজেকেই চ’ড় মারতে ইচ্ছে হলো।আবার মেসেজ আসলো। তড়িঘড়ি করে ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ চেক করল হুর।

“৫ মিনিটের মধ্যে আমার রুমে আসো। না, হলে আমি তোমার রুমে আসলে ব্যাপারটা তোমার ভালো লাগবে না।আর আমি আসলে কি হতে পারে তা তো জানোই…

ঠা’স করে বিছানায় ফোন ছুড়ে মারল।তুলতুলে নরম বিছানা হওয়ার কারণে খু’ন হতে হতে বেঁচে গেল তার ফোন।পুরো শরীর জুড়ে তার রাগ কাজ করছে। নিচে যেতে ইচ্ছে করছে না। চোখে গেল খাটের পাশে থাকা টেবিলের দিকে। তার পানির জগে পানি ভরা আছে। তাই কষ্ট করে নিচে না যেয়ে নিজের পানির জগ নিয়ে রুদ্ধ রুমের দিকে হাটা ধরল। রুদ্ধ রুমের কাছে গিয়ে দরজায় টোকা দিল। ভেতরে আসতে বলল সে। দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল হুর। টেবিলের উপর আওয়াজ করে জগ রাখলো।রুদ্ধের দিকে তাকালো। খালি গায়ে সে। আধশোয়া হয়ে শুয়ে ফোন টিপছে। কোমর অব্দি টেনে রেখেছে সাদা কম্বল ।রেগে হুর বলল,

“নিন আপনার পানি, এখন বেশি করে পানি খান।
রুদ্ধ তার ফোনের দিকে চেয়ে বলল।
“গ্লাসে পানি ঢেলে দাও।
পায়ের রাগ মাথায় উঠে গেল। জগের সব পানি রুদ্ধের মাথায় ঢালতে ইচ্ছে হলো তার।রাগে জগ থেকে পানি গ্লাসে ঢাললো।রুদ্ধের সামনে এগিয়ে দিল।রুদ্ধ নিল,পানি খেয়ে হুরের হাতে খালি গ্লাস দিল৷আদেশ করে বললো,

” প্রতিদিন রাতে আমার রুমে পানি দিয়ে যাবে।ধরে নাও আজ থেকে এটা তোমার ডিউটি।

….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here