বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প #পর্ব-( এক্সট্রা ) #লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

0
456

#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-( এক্সট্রা )
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

বদ্ধ ঘরে ফুপিয়ে কান্না করে যাচ্ছে হুর। তার কান্না শোনার মত মানুষ আছে কিনা তাও জানেনা। আছে! অনেক মানুষ আছে। তার আর্তনাদ শুনছে তার কান্না শুনছে। কিন্তু কেউ তার কাছে এগিয়ে আসছে না। সাহায্যের দুটো হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে না। কারণ সবাই গোলাম। তারা তাদের গোলামী করছে। হুরকে খাবার দেয়া হলে হুর খাবার খায় না। মনে ভয় ঢুকে যায় যদি খাবারের সাথে কোন কিছু মিশিয়ে তার বাচ্চাকে মেরে ফেলা হয়!সে ভয় হুর খাবার খাচ্ছে না।আকুতি মিনতি তো কম করলো না লোকটির কাছে। তাও লোকটির মায়া হলোনা।বিছানায় কান্না করতে করতে হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি এলো পালিয়ে যাওয়ার। ঝট করে বিছানায থেকে উঠে চোখের পানি মুছল। মনের ভেতর সাহস সঞ্চার করলো। প্রথমে দরজার কাছে গেল। যদিও সে জানে দরজা বন্ধ। তাও আশা নিয়ে গেল যদি দরজা খোলা থাকে। ভুল প্রমাণিত হলো। দরজা বন্ধ। হাল ছেড়ে দিলো না হুর। আশেপাশে কিছু খুঁজতে লাগলো। লম্বা, মোটা লাঠি পেল। হাতে নিয়ে দেখল তা লোহার।তা দিয়ে দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করল। কয়েকবার বারি দিয়েই হাফিয়ে উঠলো।শরীরে নেই এক বিন্দু শক্তি।

তাও এখান থেকে পালানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলো।আরো কয়েকবার আঘাত করতেই দরজা খুলে গেল।হুর মনে করেছিল তার ধাক্কা দেয়ার কারণে দরজা খুলেছে। পরবর্তীতে যখন দেখল দরজা ঠেলে দুজন মানুষকে ভেতরে প্রবেশ করতে তখন চোখ বড় বড় করে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। হাত থেকে লোহার লাঠিটা তৎক্ষণাৎ পড়ে গেল। লোহার লাঠি ফ্লোরে পড়ার সাথে সাথে ঝংকার তুলল,বিকট শব্দ আসলো সবার কানে।বিকট শব্দে আরেক দফা ভয় পেল হুর। চমকে উঠল। ভয়ার্ত মুখ নিয়ে লোকদের দিকে তাকালো।স্বাভাবিকভাবে দুটি লোক হুরের দিকে তাকিয়ে আছে।একটি লোক বলল,

“এত বাইয়া বাইরি কইরা কোনো লাভ নাই। আপনি এখান থেকে যাইতে পারবেন না। দরজার বাইরে আমরা আপনার পাহারা দিতাছি। ভুলেও পালানোর চেষ্টা করবেন না। নাইলে আমাগো সাথে সাথে স্যার আপনারও জা’ন নিয়ে নিব।

হুরের উত্তরের কোন অপেক্ষা না করে দুটি লোক দরজা আটকে আবার বাহিরে দাঁড়িয়ে রইলো।দিশেহারা হয়ে পড়ল হুর। মুঠ করে ধরল চুল। কি করবে না করবে ছোট মগজে প্রেসার দিয়েও বুদ্ধি বের করতে পারল না। দুর্বল শরীর কোনরকমে টেনেটুনে বিছানার কাছে যাওয়া ধরল।রুমের মধ্যখানে আসতেই চোখ গেল জানালার দিকে।ঠোঁটে চওড়া হাসি আসলো। পায়ের বেগ বাড়িয়ে চলে গেল জানালার দিকে। পর্দা সরিয়ে জানালার খোলার চেষ্টায় লেগে গেল।শক্তি দ্বিগুণ বাড়িয়েও খুলতে পারছে না। মনে হয় জং ধরে গেছে। চেষ্টা করতে করতে একসময় খুলতে পারল। সুপ্রসন্ন ভাগ্য তার সাথেই ছিল বোধহয় ছিল।হাসিমুখে জানালা খুলে নিচের দিকে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে গেল।সে ভুলে গিয়েছিল যে তাকে দ্বিতীয় তলায় বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এখন যদি জানালা দিয়ে লাফ মারতে যায় তাহলে নির্ঘাত বাচ্চাদের প্রাণ হারাবে। নিজে বাঁচতে পারবে কিনা তারও গ্যারান্টি দিতে পারল না।এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে ভেঙ্গে পড়ল হুর। দেয়াল ঘেঁষে বসে পড়লো। দুই পা ছড়িয়ে হাত দুটো রাখল উঁচু পেটে। অনবরত কান্না করতে করতে পেটে হাত বোলাতে বোলাতে বিড়বিড় করে বলল।

“তোদের কিছু হবে না সো/না।তোদের বাবা আমাদের সবাইকে বাঁচাবে। কিছু হবে না আমাদের।

ক্ষুধায় পেট জ্বলছে।সহ্য ক্ষমতা হারাচ্ছে।নিজের কথা না ভাবলেও এখন বাচ্চাদের কথা তাকে ভাবতে হবে। এতটা পাষণ্ড হলে চলবে না। ভারী শরীর নিয়ে বসা থেকে উঠে টেবিলের উপর থেকে খাবার নিয়ে বিছানায় বসে পড়ল। ফুপিয়ে কান্নার সাথে খাবার খেতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তাও পানির সাহায্যে গিলে ফেলল। প্রথমে ভয় লাগছিল খাবার খেতে। কিন্তু কয়েক লোকমা ভাত মুখে দেয়ার পর বুঝতে পারল খাবারে কোন ভেজাল নেই।তাই সাহস নিয়ে আরও কিছুটা খেলো।পুরনো আমলের দরজা আবার খুলে গেল। সেই দিকে চকিত নয়নে তাকিয়ে আছে হুর। ভেতরে প্রবেশ করলো একটি মেয়ে আর পেছনে সেই লোকটি।মেয়েটির হাতে কয়েকটা শপিং ব্যাগ।লোকটি ভোরকে দেখিয়ে বলল,

“উনাকে আধ ঘন্টার মধ্যে রেডি করিয়ে দিন।রেডি করানো হয়ে গেলে আমায় কল করবেন।

চলে যায় লোকটি।শপিং ব্যাগ গুলো বিছানার উপর রেখে মেয়েটি বলে,

“আসুন ম্যাম আমি আপনি রেডি করে দিয়েছি। হাতে খুব কম সময়।

“রেডি করিয়ে দিবেন মানে?আমি রেডি কেন হব?আর কে আপনি?

“আমি একজন মেকআপ আর্টিস্ট।আমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে আপনাকে সাজিয়ে দেয়ার জন্য।সিম্পলি একটা ব্রাইডাল লুক দিতে বলেছেন স্যার।

উত্তেজিত হয়ে যায় হুর।বলে,

“আমি সাজবোনা। সাজবোনা আমি। আপনি,আপনি চলে যান।

মেয়েটি হালকা হেসে বলে,

” উত্তেজিত হবে না ম্যাম। আমাকে এখানে রুদ্ধ স্যার পাঠিয়েছেন।বলেছেন খোকন যেভাবে যা বলছে তা করতে।বিয়ের আগেই স্যার এখানে চলে আসবেন।নিশ্চিন্তায় থাকতে বলেছেন আপনাকে।

রুদ্ধর কথা শুনে শান্ত হল হুর।মেকআপ আর্টিস্ট যেভাবে বলছে সেভাবেই হুর করছে।হালকাভাবে তাকে সাজানো হলো। সাজানো শেষ হলে মেকআপ আর্টিস্ট লোকটাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় হুর রেডি হয়ে গেছে।মিনিট খানিকের মধ্যে লোকটি চলে আসলো হুরের কাছে। হুর কে দেখে থমকে যায় তার হৃদয়। স্থির হয়ে যায় তার চোখ।”Bluish Ash” কালার লেহেঙ্গাতে হুরকে দেখতে অতুলনীয় লাগছে। সাজটাও মানিয়েছে লেহেঙ্গার সাথে। আরো বেশি আকর্ষিত লাগছে হুরের উঁচু পেট। সবে মিলিয়ে অপ্সরী লাগছে তাকে দেখতে।ঘোরের মাঝে হুরের একদম সামনে এসে পড়লো। হাত উঠিয়ে একটু স্পর্শ করার চেষ্টা। তার আগেই হুর পিছিয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ ঘোর ভেঙ্গে গেল লোকটির। আমতা আমতা করে বলল,

“চলো জা’ন কাজী চলে এসেছে।একটু পরেই তুমি আমার পার্মানেন্টলি আমার হয়ে যাবে। কোন শক্তি থাকবে না তোমায় আমার কাছ থেকে আলাদা করার।

“আপনি কি জানেন না,আইনে ডিভোর্স না হওয়া অবদি দ্বিতীয় বিয়ে করা অন্যায়?আপনি আমাকে বিয়ে করলেও সেই বিয়ে বৈধ হবে না।

“বৈধ-অবৈধর পরোয়া আমি এখন করছি না। আমি শুধু জানি এই মুহূর্তে তোমায় আমি বিয়ে করবো।বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর রুদ্ধ তোমায় নিজ থেকেই ডিভোর্স দিবে। তাই ডিভোর্সের চিন্তা এখন মাথায় আনছি না।

“আমি আপনাকে বিয়ে করব না।

“সেটা সময় বলে দিবে।

অনিচ্ছা সত্ত্বে হুরের হাত ধরল লোকটি। টেনে নিয়ে যেতে লাগল নিচে।হুর হাত মুচরা মুচরি করতে লাগলো। বারবার ছেড়ে দিতে বলল। তাও ছাড়ছে না লোকটি।শক্ত হাতে হুরের হাত চেপে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসলো। এখানে উপস্থিত আছেন একজন বৃদ্ধ লোক। তার হুলিয়া দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি কাজী। হুরকে সোফায় বসিয়ে লোকটি কাজী সাহেবের উদ্দেশ্যে বলল।

“বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।

কাজী সাহেব নিজের কাজে চালিয়ে যেতে লাগলেন।লেখালেখি শেষ করে বিয়ে আরম্ভ করলেন।হুর কে “কবুল” বলতে বলা হলে হুর চুপ করে রয়। অশ্রু শিক্ত নয়নে মায়া যেন উপচে পড়ছে। কিন্তু এই মায়া কেউর চোখে পড়ছে না।এই পরিবেশ, এই মানুষগুলো বিষাদ মনে হচ্ছে হুরের কাছে। হুরের কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে দ্বিতীয়বার আবারও “কবুল” বলতে বললেন হুরকে। তাও হুর মৌন রইলো।মেকআপ আর্টিস্ট এর দিকে তাকিয়ে ভেজা গলায় বলল।

“আপু আপনি না বলেছিলেন বিয়ে হওয়ার আগে রুদ্ধ চলে আসবে?তাহলে সে এখনো আসছে না কেন?এত দেরি কেন হচ্ছে আসতে?

লোকটি ঘর কাঁপিয়ে হাসা শুরু করলেন। হঠাৎ আর হাসির কারণ ধরতে পারল না হুর। হাসতে হাসতে লোকটি বললেন,

“বো/কা মেয়ে। তোমার কি মনে হয় আমার মহলে রুদ্ধ প্রবেশ করতে পারবে? কখনো সম্ভব না। মেকআপ আর্টিস্ট কে আমিই সব শিখিয়ে দিয়েছি। যেন তুমি কোনো রূপ ঝামেলা না কর। হলো ও তাই। রুদ্ধর কথা শুনতেই তুমি শান্ত হয়ে গেলে। তুমি মনে করেছিলে তোমার হিরো উরফে তোমার স্বামী তোমায় বাঁচাবে।তবে তার সম্ভব না জা’ন।তুমি এখন আমার খাঁচায় বন্দি। এ খাঁচা থেকে কেউ তোমায় ছাড়াতে পারবেনা।

স্তম্ভিত হয়ে গেল হুর।নাকে ডগা দিয়ে এত বড় এক ছলনা হলো তার সাথে আর সে আঁচ করতে পারল না।দুঃখ যেন শেষ হচ্ছে না। এখন কিভাবে বাঁচবে এ বিয়ে থেকে। কিভাবে পালাবে এই লোকটির কাছ থেকে?পুরো মাথা হ্যাং হয়ে গেছে।

” কবুল বলো।

“একদমই না।

“নিজের ভালো এবং বাচ্চাদের ভালো চাইলে কবুল বল।

“বললাম তো আমি বলবো না।

“তুমি কি চাইছো তোমার বাচ্চাদের আমি মেরে দেই?

পি/স্তল বের করে হুরের পেটের ওপর তাক করে।চোখ বড় বড় করে পি/স্তলের দিকে তাকায় হুর।ধরফর করছে বুক। এই বুঝি তার বাচ্চাগুলোর দম বের হয়ে গেল। এই বুঝি সে নেতিয়ে পড়লো। এই বুঝি অজ্ঞান হয়ে গেল।নিভু নিভু যখন চোখ হয়ে আসবে তখনই গু/লির শব্দ কর্ণপাতে আসতেই সবাই একত্রে দরজার দিকে তাকালো। রুদ্ধকে দেখে সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে এলো। রুদ্ধকে দেখা মাত্রই হুর আর সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে রুদ্ধর কাছে আসতে চাইল। তার আগেই লোকটি তার হাত ধরে নিল। খেকিয়ে উঠলো রুদ্ধ।

“এই মা/দা/রির বাচ্চা।ছাড় আমার বউকে। কোন সাহসে তুই আমার বইয়ের গায়ে হাত দিয়েছিস?ক/লিজা খুব বেশি বড় হয়ে গিয়েছে তাই না?আজকে তোর ক/লিজা আমি নিজ হাতে কেটে টুকরো টুকরো করে কুকুরদের খাওয়াবো।

হুরের কাছে এসে লোকটির হাত থেকে হুরের হাতে ছাড়িয়ে নিল।হুর ঝাঁপিয়ে পড়ল রুদ্ধর বু/কে।হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলো।বউকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরল রুদ্ধ। কান্না থামাতে বললেও কান্না থামালো না। আজ রাগারাগি করলো না রুদ্ধ। পরিস্থিতিটাই এমন যে,যেকোনো মেয়েই কান্না করবে। হুর কে নিজের কাছ থেকে ছাড়াতে পারছিল না দেখে মেকআপ আর্টিস্টকে চোখের ইশারায় হুরকে নিজের কাছ থেকে নিয়ে যেতে বলল। মেকআপ আর্টিস্ট হুরকে রুদ্ধর কাছ থেকে সরাতে নিলে হুর আরো খামচে ধরে রুদ্ধকে।বলে,

“উনি মিথ্যা কথা বলেছে জানেন।?উনি বলেছে উনি নাকি আপনার লোক।তাই আমায় জোর করে রেডি করে দিয়েছে।

“উনি আমারই লোক।আমিই পাঠিয়েছি উনাকে।

“কিন্তু ওই লোকটা তো বলল…

“শান্ত হয়ে বাসো তুমি।

হুরকে ছেড়ে লোকটির কাছে আসলো রুদ্ধ।চমৎকার এক হাসি দিয়ে বলল,

“তো কি মনে করেছিলি খোকন?আমার নাকের ডগা দিয়ে আমার বউকে উঠিয়ে নিয়ে আসবি আর আমি কোন কিছুই জানবো না?আমার বউ যে এতক্ষণ তোর কাছে ছিল এটাই তো তোর সৌভাগ্য।কিন্তু তুই তো আমার ভাবনার চেয়েও আরো একধাপ এগিয়ে গিয়েছিস। আমার বউকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলি।আচ্ছা, সে না হয় মানলাম।কিন্তু আমার বাচ্চাদের মারার হুমকিতে কিভাবে দিতে পারলি। ক’লিজা কাপলো না?বিন্দুমাত্র ও কি ভয় লাগলো না?তুই কি জানতিনা তোর সত্য আমি বের করতে পারলে তোর কি অবস্থা হবে?আমার ভয়ঙ্কর রূপটা কি ভুলে গেলি?

খোকন গলা ফাটিয়ে তার গার্ডদের ডাকলো।গার্ডরা আসতেই আবার হুংকার ছাড়ল।

“ও বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো কিভাবে? কোথায় ছিলি তোরা কু/ত্তার বাচ্চারা?আটক কর তাকে।

খোকনের কথা শুনলেও তার আদেশ মানলো না কেউই। মাথা নিচু করে সব কটা দাঁড়িয়ে রইল। তা দেখে আরেক দফা হাসলো রুদ্ধ। এবার হাসির শব্দটা বেশ জোরে ছিল। রুদ্ধ বললো,

“তুই যদি আমার চামচাদের কিনতে পারিস আমি কি তোর চামচাদের কিনতে পারবো না?তুই কেবল মাত্র একটা চামচা আমার কিনেছিলি। কিন্তু তোর সব কটা চামচাকে আমি কিনে নিয়েছি। চার গুণ দামে।অনেক আগেই তোকে ধরে নিতে পারতাম। তোর কাহিনী শেষ করে ফেলতে পারতাম। কিন্তু করিনি কেন জানিস?তোকে তোর এলাকাতে এসে তোর বাড়ির ভেতরেই দাফন করার ইচ্ছে ছিল আমার।আমি বরাবরই আমার ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেই। তাই এবারও দিলাম।

ভয়ে কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে খোকনের।মুহূর্তের মাঝে তার গোলাম অন্যের গোলাম হয়ে গেল। এখন একা কিভাবে কি সামলাবে সে!ভেতরে অত্যধিক ভয় পেলেও মুখে প্রকাশ করলো না।গ্যাংস্টার মানুষদের ভয় পেতে নেই।তারা শুধু জানে ভয় দিতে। জা’ন নিতে।নিজেকে শক্ত রেখে খোকন বলে,

“তুই কাকে হুমকি দিচ্ছিস তা জানিস?

“এখানে না জানার কি আছে?আমার বউয়ের কিডন্যাপারকে হুমকি দিচ্ছি।

“ভালোয় ভালোয় বলছি রুদ্ধ চলে যায় এখান থেকে।কোন ঝামেলা করিস না।তুই আগের মত লাইফ লিড কর। প্রয়োজন হলে আমি হুর কে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাব।

খোকনের বলতে দেরি তবে রুদ্ধের গু/লি চালাতে দেরি হল না। গু/লি এসে লাগলো খোকনের বাম হাতে।খোকনের বুকে লাথি মেরে তাকে ফেলে দিল।ফ্লোরে শুয়ে কাতরাতে লাগলো খোকন।পা দিয়ে খোকনকে মারতে মারতে রুদ্ধ রেগে বলল।

“আমার বউকে আমার কাছ থেকে আলাদা করবি?বিয়ে করার খুব শখ তাই না?আবার কি বলেছিলি? ওহ্ হ্যাঁ মনে পড়েছে!আমার বাচ্চাদের নিজেদের বাচ্চার মত ভালবাসবি ।তাদের লালন পালন করবি। কেন রে হা/রামির বাচ্চা,আমার বাচ্চাদের নিয়ে তোর এত দরদ পড়ল কেন?আমার বউ বাচ্চা আমারই।তাদের লালন-পালন ভালবাসবো সব আমি করব।আমার বউ বাচ্চার জন্য আমিই এনাফ।

রুদ্ধর পা টেনে ধরে রুদ্ধকে ও ফ্লোরে ফেলে দিল খোকন। লেগে গেল দ্বন্দ্ব। ধস্তাধস্তি করতে করতে দুজনই একে অপরকে মারছে। কখনো মুখে তো কখনো পেটে। কেউ কারো থেকে কম না। যে যেভাবে পারছে সে সেভাবেই মারছে। খোকনের এক হাতটা ক্ষত থাকায় সে সতর্ক হয়ে আছে। সুযোগ বুঝে রুদ্ধ খোকনের ক্ষত হাতে দুইটা ঘুসি মারল। ব্যথা দুর্বল হয়ে পড়ল খোকন।ধস্তাধস্তির সময় রুদ্ধর হাত থেকে পি/স্তল ছিটকে দূরে পড়ে গিয়েছিল।সে পি/স্তলটি হাতে নিয়ে রুদ্ধর দিকে তাক করল খোকন।রক্তাক্ত মুখ নিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।বলল,

“এখন কি করবি? মেরে দেই তোকে? একটা গু/লিতেই খাল্লাস। বিশ্বাস কর বেশি কষ্ট হবে না। খুবই সহজ মৃত্যু দিব তোকে।

“মেরে দে।সাহস থাকলে মার।

সেকেন্ড এর সময়ও লাগালো না খোকন। ট্রিগার টিপ দিয়ে দিল। গু/লি বের হতে না দেখে ভয়ে ক/লিজা ঢিপঢিপ করতে লাগল। পি/স্তলের দিকে তাকিয়ে আবারও রুদ্ধের সামনে তাক করে গু/লি ছুড়তে চাইল। এবারও গু/লি বের হলো না। পরপর কয়েকবার ট্রিগারে চাপ দিল। বরাবরই ব্যর্থ হল। শব্দ তুলে হাসতে লাগলো রুদ্ধ। চারিপাশে দেয়ালের সাথে শব্দ ও প্রতিধ্বনিত হয়ে বারি খাচ্ছে। ডাবল আওয়াজ আসছে।

“পি/স্তলে একটাই গু/লি ছিল।

নিরাশ হয়ে হাত থেকে পিস্তল ফেলে দেয় খোকন।হাতে গু/লি লেগে এবং মার খেয়ে শরীরে এক টুকরো শক্তি নেই। খোকনের দিকে এগিয়ে এসে পকেট থেকে একটি ছুরি বের করল সে। ডান হাত সুন্দর করে ধরে নিজের হাতের মুঠোয় রাখল। তারপর ছু/রির সাহায্যে কয়েকটা কোপ মারলো।চিৎকার করে খোকন। খোকনের চিৎকার পছন্দ হয় না রুদ্ধর। তাই গার্ডকে বলে খোকনের মুখ আটকে দিতে। আটকে দেয়া হয় খোকনের মুখ। রুদ্ধ সুন্দর করে চুরি চালিয়ে যাচ্ছে খোকনের হাতে। ছুরি দিয়ে কিছু একটা আঁকবাকুও করছে। বলছে,

“এই হাত দিয়েই তো আমার বউকে ধরেছিলি তাই না? খুব সুন্দর তোর হাত। তোর হাতের সাথে খেলতে আমার ভীষণ মজা লাগছে।এটাকে টুকরো টুকরো করলে কেমন হবে বলতো? দাঁড়া একটু করে দেখি!

ধারালো ছু/ড়ি দিয়ে আঙ্গুল কেটে দিলো রুদ্ধ। তিনটা কাটলো। বাকি দুটো রয়ে গেল। তিনটা আঙ্গুল নিজের হাতের মাঝে নিয়ে গম্ভীর ভাব নিয়ে দেখতে লাগলো। এক এক করে খোকনকে দেখালো। গাম্ভীর্যর ভাব নিয়ে বলল,

“রাস্তার কুকুরদের জন্য গ্রহণযোগ্য খাবার এগুলা।

লাগাতার গোঙ্গাতে লাগলো খোকন।সেদিকে ধ্যান না দিয়ে খোকনের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে কাটা ছেঁড়া করতে লাগলো রুদ্ধ।প্রয়োজনীয় জিনিস পাতি গার্ডরা এগিয়ে দিচ্ছে।স্তব্ধ হয়ে মেকআপ আর্টিস্ট আর হুর সবটা দেখছে। কি নির্মম হত্যা! যদিও এখন প্রাণ বেঁচে আছে। তবে প্রাণ নিতে কতক্ষণ! বেশি কাটাছেঁড়া করল না রুদ্ধ। দাঁড়িয়ে দুই পায়ে দুটো গু/লি করল। আধ মরা হয়ে শুয়ে আছে খোকন। ব্যথায় কেঁপে উঠছে আর গোঙ্গাচ্ছে।

হুরের কাছে এসে হুরের হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দিল রুদ্ধ।চোখের ইশারায় গার্ডদের খোকনকে এখান থেকে নিয়ে যেতে বলল। একজনকে বলল মেকআপ আর্টিস্ট কে পৌঁছে দিত্র। পুরো ড্রয়িং রুম খালি হয়ে গেল। হেঁচকি তুলে কান্না করছে হুর। চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে লেহেঙ্গার উপরের অংশ উঠিয়ে পেট উন্মুক্ত করল রুদ্ধ। উঁচু পেটে কয়েকবার হাত বোলালো। মাথা নিচু করে কয়েকটা চু/মু খেল। মোলায়েম কণ্ঠস্বরে বলল,

“কেমন আছে আমার বেবিরা?

“আপনি এত লেট করে আসলেন কেন ?যদি বাবুদের কিছু হয়ে যেত!

“কেউর কিছুই হতো না। আমি হতে দিতাম না।

“আপনি কিভাবে জানলেন যে আমি এখানে আছি?

“তোমাকে যখন অন্য রাস্তায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখনই আমি খবর পেয়ে গিয়েছিলাম।তবে খোকনকে ধরবো বলে তখন কোন পদক্ষেপ নেইনি।সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিলাম।

“গার্ডরা তো আমার পিছে ছিল না তাহলে আপনাকে কে জানালো?

“হিডেন গার্ড লাগানো আছে তোমার পিছে।

আবারো পেটে আলতো করে চু/মু দিল।বারবার দিতে লাগলো। তা দেখে হুর অভিমানী স্বরে বলল,

“হয়েছে আর এদের আ/দর করতে হবে না।এদেরকে তো আপনি একদমই দেখতে পারেন না। তাহলে হঠাৎ করে এত ভালোবাসা উপচে পড়ার কারণ কি?

হাসলো রুদ্ধ, বলল,

“আমার সন্তানদের প্রতি আমার ভালোবাসা না থাকলে কার ভালোবাসা থাকবে?আমাদের গার্ড দের মধ্য একজন খোকনের সাথে হাত মিলিয়ে ছিল।আমাদের সবটা ইনফরমেশন সে খোকনকে জানাত।তাই প্রথমে তোমার সাথে বাজে বিহেভ করতে হয়েছিল আমার। বলতে পারো খোকনকে গোলক ধাঁধায় ফেলার প্ল্যান।এবং কি খোকন তোমার সামনে আসতেও চেয়েছিল।সে সর্ব্দা তোমায় লক্ষ করে।তবে ৪ মাস ধরে তোমায় দেখতে পাচ্ছে না। আমার সিকিউরিটির কারনে। তোমায় দেখতে না পেয়ে আরও উত্তেজিত হয়ে যায়।তাই সুযোগ বুঝে তুলে আনে।তুমি এত কিছু মাথায় নিও না। শুধু জেনে রাখো, আমি আমার বাচ্চাদের খুব ভালোবাসি। তাদের জন্য সব কিছু করতে পারি। নিজের অংশকে ঘৃণা করার মত মানুষ আমি না।তবে হ্যাঁ আমি বেবি এত জলদি নিতে চাইনি। তোমার পড়াশুনা শেষ হলে তখন নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্যে যেহেতু আগেই লেখা ছিল তাহলে আর কি করার!বারবার এবরশন এর কথা বললেও তা মন থেকে আমি কখনো বলিনি। মনের মাঝে লেগে থাকতো নতুন এক অনুভূতি। বাবা হওয়ার অনুভূতি।

“আমার সাথে এত বাজে ব্যবহার না করলেও পারতেন।

“মাঝে মাঝে বউকে একটু বাজিয়ে দেখতে হয়।এই যেমন আমি এবরশনের কথা বলতাম আর তুমি রাগে ফেটে পড়তে।তখন দেখতে তোমার মারাত্মক লাগতো।তবে হ্যাঁ মাঝে মাঝে ভীষণ রাগ ও লাগতো। কারণ আমার থেকে তুমি আমার বাচ্চাদের বেশি ভালোবাসো।তবে পরে বুঝলাম বাচ্চারা তো আমারই অংশ। আমাকে এত ভালবাসো দেখেই তো আমার বাচ্চাদের এত ভালবাসো।

” কিন্তু আমার সাথে খারাপ ব্যবহার এর সাথে খোকনের কি সম্পর্ক?

“তা তোমার জানার প্রয়োজন নেই। যতটুকু জেনেছ তা যথেষ্ট।এখন বলো কিছু কি খেয়েছো নাকি আমার বাচ্চাদের না খাইয়ে রেখেছে ওই মা/দারির বাচ্চা?

“খেয়েছি আমি। কিন্তু পেট ভরে নি।

হুরের কপালে গাঢ় ভাবে চুম্বন দিয়ে গালে এক হাত দিয়ে বলে,

” আচ্ছা চলো! বাসায় গিয়ে খাবে।

“হুম।আচ্ছা,একটা কথা!

” হুম।

“উনি আমায় বিয়ে করতে কেন চাচ্ছিল?আপনার কাছ থেকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য?

” না।

“তাহলে?

“সে তোমায় ভালোবাসে।যেদিন প্রথম তোমায় দেখে সেদিনই ভালো লেগে যায়।

” উনাকে এভাবে না মারলেও পারতেন।

কটমট করে রুদ্ধ বলে,

“বেশি দরদ লাগছে তার জন্য?কষ্ট হচ্ছে?

“আব..এমন কিছুই না আমি তো..

” নো মোর ওয়ার্ড’স।বাসায় চলো।অপেক্ষা করছে সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here