বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প #পর্ব-শেষ #লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

1
420

#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-শেষ
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

বছর তিনেক ঘুরতে না ঘুরতে আবারও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে গেল হুর।বিছানায় বসে রুদ্ধ মাথা চাপড়াচ্ছে।এত জলদি আবার বাচ্চা!দুইটা তো ছিল।আবার নেয়ার কি প্রয়োজন হল?দুইটা ছেলেই তো তাকে দেখতে না পেলে পাগল হয়ে যায়।কাজে গেলে ফোন করে আধো আধো বুলি আওড়িয়ে বাসায় আসতে বলে।কাজের তাগিদে থাকায় সব সময় তাদের কথা অনুযায়ী বাসায় আসতে পারে না। রুদ্ধ যে কি কারণে বাসায় আসে না তা ঢের বুঝতে পারে হুর।রুদ্ধ যখনই রাত্রি করে বাসা থেকে বের হয় তখন হুর বুঝে যায় সে মারপিট করতে যাচ্ছে। তাই তো বুদ্ধি বের করে ছেলেদের হাতে ফোন দিয়ে রুদ্ধকে আসতে বলে।তবে ছেলেদের এটা ওটা বলে তাদের শান্ত করিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে রুদ্ধ।হুর বুঝেছিল বাচ্চা হলে রুদ্ধ আর মারপিট করবে না। সব ছেড়ে দিবে। কিন্তু এমন কিছুই হল না।রুদ্ধর চিন্তা করতে করতে এক সময় ডিপ্রেশনে চলে যায় সে। ভাবতে পারে না কি করবে! বহু চিন্তা করে আইডিয়া বের করতে পারে।ছেলেদের কথা না মানলে তার মেয়ে হলে ঠিকই তার কথা মানবে।তাই তখন থেকে পুরো দমে এই উদ্যোগে নেমে যায় সে।

বহুবার ট্রাই করার পরও সফল হয় না। কারণ সব সময় রুদ্ধ তাকে পিল খাইয়ে রাখত। তার আড়ালে কয়েকবার পিল না খেলেও রেসপন্স পায়নি।সবুরে মেওয়া।সবুরের ফল এক না একদিন মিষ্টি আকারে বের হয়ে আসে। হল ও তাই। বহু চেষ্টার পর সে অন্তঃসত্ত্বা হতে পেরেছে। এতে হুর সহ সবাই খুশি।হুর এবার আশা নিয়ে বসে আছে এবার তার মেয়ে হবে। তাইতো সে তার খুশি ধরে রাখতে পারছে না। এবার মেয়েকে দিয়ে সে রুদ্ধকে জব্দ করবে। তার কথায় নাচাবে।

আগেরবারের মতো এবারও নরমালেই বেবি হবে তার। কোন ধরনের কম্প্লিকেশন নেই। বেবি ও সুস্থ আছে। হুর তার এক্সাইটেড ধরতে না পেরে ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করেছিল তার কি বাবু হবে।বিপরীতে ডাক্তার তাকে বলেছে তার এবারও ছেলে বাবু হবে।স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল তার। কত আশা করে একটি মেয়ে বাবু চেয়েছিল।রুদ্ধকে কাবু করতে চেয়েছিল। চেয়েছিল মেয়ের দ্বারা রুদ্ধকে তার গ্যাংস্টার লাইফ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসতে। তবে তা আর হলো কই!কিন্তু এবারও হাল ছাড়লো না হুর। প্রয়োজন হলে আবারও বেবি নিবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত মেয়ে বাবু হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে বেবি নিবে।তারপরও মেয়ে নিয়েই ছাড়বে।আরো একবার ফুটফুটে পুত্র সন্তানের মা হল হুর।দুটো ছেলের মত এ ছেলেটাও তাদেরই গায়ের রং পেয়েছে।মনে মনে একটু বিরক্ত হলো হুর। সবাই মুলার মতো সাদা। এত সাদা মানুষও আবার ভালো লাগেনা দেখতে। রংটা একটু চাপা হয়ে কি হতো?হুর হয়ে উঠল একজন সংসারিক গৃহিণী।পড়াশোনা বাচ্চা সামলানোর সবই দেখতে হয় তাকে।বাচ্চা নেয়ার কারণে পড়াশোনায় একটু পিছিয়ে গিয়েছি সে।তবে সে তার সিদ্ধান্তে অনড়।গাদা গাদা বাচ্চা নিবে তার সাথে ডাক্তার ও হবে।সময় বেশি লাগলে সমস্যা নেই। এক না একদিন সে ডাক্তার হয়েই ছাড়বে। তৃতীয় পুত্রের নাম রাখা হলো হায়াত। তিন পুত্রের নাম মায়ের সাথে মিলিয়ে রাখা হয়েছে।বাচ্চাগুলো যেমন বাবার পাগল তেমনি মায়ের ও পাগল।সব সময় তাদের সান্নিধ্য পেতে চায়।

একটু একটু করে বড় হচ্ছে হায়াত। হামাগুড়ি দিতে শিখে গিয়েছে। হাত পা নাড়িয়ে নাড়িয়ে এটা ওটা বোঝায়। মুখ থেকে তার ভাষায় কথা বলেও অনেক কিছু বোঝায়।বড় ভাইদের সাথে হাত পা ছুড়ে খেলা করে।হায়াত এখন বসে বসে হাত নাড়াচ্ছে। দু’পাশে বসে আছে হামদ্ আর হামযাহ্।খেলনা এগিয়ে দিচ্ছে হায়াতের কাছে। তা দিয়ে হায়াত খেয়েছে আর দু ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে ফোকলা মুখে হাসিও দিচ্ছে।তা দেখে হামদ্ আর হামযাহ্ স্মিত হাসছে।এর মাঝে রুমে প্রবেশ করল হুর।জিজ্ঞেস করল,

“ফিডার খেয়েছে হায়াত?

হামদ্ বলে,

“না।মুখে তুলে দিয়েছিলাম কিন্তু খাচ্ছে না।

এক এক করে তিন ছেলের দিকে তাকালো হুর।হামদ্ আর হামযাহ্ জমজ হলেও তারা দুজন আগে পিছে হয়েছে।সবার বড় হামযাহ্।যমজ দুই ভাই হয়েছে বাবার মত।বাপের আদল পেয়েছে। ছোটটা হুরের আদল পেলেও স্বভাব পেয়েছে বাবার মত। ধরা যায় তিনো ছেলে বাবার মতই স্বভাব পেয়েছে। শান্তশিষ্ট গম্ভীর। অতিরিক্ত কোন কথা বলে না। যে কথা অপছন্দ সেটা এড়িয়ে চলে। সবচাইতে বেশি অবাক হয় এটা দেখে যে, হামদ্ আর হামযাহ্ কে কখনো তোতলিয়ে কথা বলে না।ছোট বাচ্চারা সচরাচর তোতলামি করে কথা বলে।অস্পষ্ট স্বরে কথা বলে। তবে এরা দুই ভাই কখনো তোতলিয়ে বা অস্পষ্ট করে কথা বলেনি। তবে যখন বেশি কথা বলে হাপিয়ে গেলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও বলা শুরু করে।তিন ছেলেকে দেখলে পরাণ জড়িয়ে যায় তার।রাজপুত্রের মতো দেখতে হয়েছে।পলকহীন ভাবে চেয়ে থাকে মাঝে মাঝে হুর। দেখার স্বাদ মেটে না।বিছানায় বসতেই হায়াত হাত আর পায়ের সাহায্যে হেঁটে হুরের কাছে আসলো। শরীর ধরে উঠে দাঁড়ালো। দুহাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরল। এক হাত দিয়ে ছেলেকে আগলে ধরল হুর। হা করে মায়ের গালে এক চুম্বন দিল। চুম্বন তো নয় যেন থুথুর দলা মাখিয়ে দিল।মুছলো না হুর। এক হাতে হায়াতকে জড়িয়ে ধরে প্রশ্ন ছুড়ে দিল বড় দুই সন্তানদের দিকে।

“বাবাকে ফোন দিয়েছিলে?

হামযাহ্ বলে,
“হ্যাঁ।আসছে।

“খাবার খেয়েছ তোমরা?

“না, বাবা আসলে একসাথে খাব।

“আচ্ছা, ঠিক আছে তোমরা হায়াতের সাথে খেলা করো আমি খাবারের দিকটা দেখছি।

দুজনই মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। হায়াতকে নিজের কাছ থেকে ছাড়াতে চাইলে হায়াত তাকে ছাড়ে না। আরো জোরে আঁকড়ে ধরে। তা দেখে হুর বলে,

“হায়াত, বাবা একটু বসো আমি এখনই আসছি।

চেহারায় স্পষ্ট জেদ দেখিয়ে হুরকে জাপ্টে ধরে সে।সে তার মাকে ছাড়বে না মানে ছাড়বে না।ছেলে কে ছেড়ে উঠল না সে।হায়াত কে ধরে হামদ্ আর হামযাহ্ এর উদ্দেশ্যে বলল,

“তোমরা বই নিয়ে বসো।সব ফ্রুটস এর নাম মনে করো।তোমাদের ঘুমানোর আগে আমি পড়া ধরবো।

বাজে ছেলেরা মায়ের কথা পালন করলো। দুজন বই নিয়ে বসে পড়ল। হায়াত হুরের গাল ছাড়ছেনা। ইতিমধ্যে লালা দিয়ে পুরো গাল ভরে গেছে।ঘরে আসলো রুদ্ধ। হাতে থাকা ফোন আর ব্যাগ টেবিলের ওপর রাখল।হায়াত বাবাকে দেখে হুরের গলা ছেড়ে হাত নাড়িয়ে রুদ্ধকে জানালো তাকে কোলে নিতে।গা থেকে কোট খুলে রুদ্ধ হায়াতের দিকে তাকিয়ে বলে।

“ওয়েট ডিয়ার বাবা ফ্রেশ হয়ে আসছি।

বাবার কথা শুনলো কই!সে এক প্রকার লাফিয়ে যাচ্ছে। হাত নাড়াতে নাড়াতে শরীরের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে ধপাশ করে বিছানায় পড়ে গেল।বাবা তাকে কোলে নিয়েছে না দেখে নেত্রকোনায় জলে টইটুম্বর অবস্থা। গড়িয়ে পড়বে পড়বে ভাব। বিছানাতে বসেই ঠোঁট উল্টে বাবার দিকে তাকালো।বাচ্চার করুন মুখ পানে আর তাকিয়ে থাকতে পারল না রুদ্ধ। শার্টের হাতা ফোল্ড করে বিছানার কাছে এগিয়ে গেল।হায়াত কে কোলে নিতেই হায়াত রুদ্ধের গালে মাড়ি দিয়ে কামড় দিতে লাগল।তার গাল ও ভরে আসল লালা দিয়ে।সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে হামদ্ আর হামযাহ্ কে বলল,

“কেমন আছে আমার বড় বাবারা?

এতক্ষণ দুই ভাই রুদ্ধর দিকেই তাকিয়ে ছিল। জানত রুদ্ধ তাদের এই প্রশ্ন করবে।তাই একসাথে উত্তর দিল।

“আমরা ভালো আছি।

বিছানা থেকে উঠে রুদ্ধর কাছে এসে হাফ ছেড়ে হুর বলে,

“আপনি সামলান আপনার বাচ্চাদেরকে।আমি গিয়ে দেখিয়ে দেখি খাবার হয়েছে কিনা।জ্বালিয়ে মারছে ইদানিং ছোটটা আমায়। আজকাল কোন কথা বললে শুনেনা। সারাক্ষণ কোলের মধ্যে থাকতে চায়। আর শিখেছে একটাই গাল চাবানো। থুথু দিয়ে গালটার অবস্থা করে কি!

গালে লালা নিজের হাত দিয়ে মুছে দেয় রুদ্ধ।আলতো স্বরে বলে,

“হয়তো মাড়ি শিরশির করছে।তাই এমন করছে।তুমি যাও ওদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করো। আমি ফ্রেশ হয়ে তাদের নিয়ে আসছি।

চলে যায় হুর।হায়াত কে নিয়ে বিছানায় বসে রুদ্ধ।ফ্রেশ হওয়া দরকার। তবে রুদ্ধকে সে ছাড়ছেই না।বড় দুই ভাই পড়ছে আর ছোট টা বাবার সাথে কোস্তাকুস্তি করছে।রুদ্ধ কোনো মতে গায়ের শার্ট খুলল। ভীষণ গরম পড়েছে।এসি বন্ধ করে রাখা।কারণ হায়াতের কিছুদিন আগে অনেক ঠান্ডা লেগেছিল।কফ্ জমে গিয়েছিল বুকে। তার পর থেকে এসির মধ্যে খুব কমই রাখা হয় তাকে।রুদ্ধর উন্মুক্ত গা পেয়ে ছোট ছোট আঙ্গুল দিয়ে চিমটি কাটছে হায়াত। এ কাজটি তার অতিরিক্ত পছন্দের।মাঝে মাঝে মায়ের মতো ফোলা বু/কেও স্লাইড করবে। ট্যাটু গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকবে স্থির ভাবে।আবার চিমটি দিয়ে ওঠানোরও চেষ্টা করবে।

খাবারের জন্য ডাক পড়ল সবার।রুদ্ধ ভাবল হায়াত কে হুরের কাছে দিয়ে ফ্রেশ হবে।তার আগেই হামযাহ্ বলে,

” ড্যাড তুমি ফ্রেশ হতে যাও। আমি বাবু কে দেখছি।

হায়াতের দিকে দু হাত মেলে দিল। হায়াত কিছুক্ষন রুদ্ধর দিকে তাকিয়ে চলে আসল তার কাছে।তবে ভালো করে ধরতে পারল না। রুদ্ধ দু ভাইয়ের মাঝে হায়াত কে আরামে বসালো। দ্রুত চলে গেল ওয়াশরুমে।চটাচট ফ্রেশ হয়ে বের হল। একটি টি-শার্ট গায়ে জড়িয়ে হায়াত কে কোলে নিল।হামদ্,হামযাহ্ তারাও নেমে দাঁড়াল।আগমন ঘটলো ফায়াজের।বাচ্চাদের দেখে ঠোঁটে চওড়া হাসি দিল। বলল,

“কেমন আছে আমার চাচ্চুরা?

” আমরা ভালো আছি। তুমি কেমন আছেন?

“আমিও ভালো আছি।

ফায়াজ রুদ্ধর কাছে এসে হায়াতের নাক টানল। তা দেখে হায়াত মুখ কুঁচকে ফেলল। নাক টানা তার একদমই পছন্দ না।তারপরও ফায়াজ তার নাক ধরে টানে।

“আমার ছোট চাচ্চু কেমন আছে?

বিনিময়ে কোনো উত্তর পায় না ফায়াজ।যে কথা বলতে পারে না তার কাছ থেকে কোনো উত্তর পাওয়াও বো/কামি।রুদ্ধ জিজ্ঞেস করে,

” কখন আসলে?

“মাত্রই আসলাম।

রুদ্ধ বুঝল ফায়াজ সর্বপ্রথম বাচ্চাদের সাথে দেখা করতে এসেছে।আবার বলে,

“ডিল এর কি খবর?

” কনফার্ম।

“ফ্রেশ হয়ে আসো।নিচে খাবারের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।

” চলো আগে বাচ্চাদের নিচে দিয়ে আসি। সবার সাথে দেখা করে ফ্রেশ হব।

হামদ্ আর হামযাহ্ কে কোলে নিতে চাইল হামযাহ্ বলে,

“হামদ্ কে কোলে নাও। আমি হেটে যাব।

হামদ্ কে কোলে করে নিচে নামে ফায়াজ।রুদ্ধর এক হাতে হায়াত কোলে অন্যহাতে হামযাহ্ কে ধরে নিচে নামছে।ফায়াজ কে সবাই দেখে চমকে উঠল। কারন কেউ ফায়াজ কে ভেতরে আসতে দেখেনি।গত এক সপ্তাহ ধরে সে বাড়িতে নেই।একটা ডিল ফাইনাল করতে সিঙ্গাপুরে যেতে হয়েছিল। এখন সে রুদ্ধর সাথে তার ব্যবসা সামলায়।সম্পর্ক খুব একটা ভালো বলা না গেলেও খারাপ না।এতেই ফায়াজের হয়ে যায়। অনেক সময় রুদ্ধকে খুচিয়ে খুচিয়ে কথা বলে।রুদ্ধ তা ইগনোর করে।সবার সাথে টুকটাক কথা বলে সে ফ্রেশ হতে চলে যায়।হায়াত কে কোলে নিয়ে চেয়ারে বসেছে সে৷হুর সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে।হায়াতের জন্য সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না হয়েছে। তা বাটিতে বেড়ে রুদ্ধকে দিল খাওয়াতে। নিজে একটা প্লেটে ভাত, সবজি আর মাছ নিল হামদ্ হামযাহ্ কে খাওয়াতে।এভাবেই প্রতিদিন তাদের বাচ্চাদের খাওয়াতে হয়।খরুচ বাচ্চারা তাদের হাত ছাড়া অন্যদের হাতেও খেতে চায় না। কতই না সোহেল শেখ তাদের বলেন নিজ হাতে খাইয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু একটাও খেয়ে চায় না।

রাত ৯ টা।বিছানায় আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে আছে রুদ্ধ।বু/কের উপর ছোট হায়াত ঘুমিয়ে আছে। গাল লেগে আছে রুদ্ধের ফোলা বু/কের উপর।মাংসে চাপ প্রয়োগ হওয়ার দরুন দু ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে আছে।পাশে হামদ্ আর হামযাহ্ ঘুমিয়ে আছে।হায়াত কে নিজের উপর থেকে সরিয়ে বিছানায় শোয়ালো।বিছানা থেকে উঠতে যাবে তখনই ফোন বেজে উঠে।পরিচিত নাম্বার দেখে ফোন রিসিভ করে কানে ধরে।কয়েক সেকেন্ড হয়ে যায়।অপর পাশের কথা শুনে রুদ্ধ শক্ত গলায় আদেশ করে।

“ওদের ঠিকানায় নিয়ে যাও।ভালোভাবে খাতির যত্ন করো।না,যেভাবে বলছি তাই করো।একটাকেও বাদ রাখবে না।বাকিটা আমি কাল দেখছি।

ফোন কেটে বিছানায় রাখলো।ঘুমন্ত বাচ্চাদের কপালে একটি করে চম্বন দিল।রুমে আসল হুর।রুদ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু মেলানোর চেষ্টা করছে। লোকটা মারপিট ছাড়বে না। শত বলেও লাভ হচ্ছে না। কতই না নামাজ পড়ে দোয়া করে রুদ্ধ যেন ভালো হয়ে যায়। সৎ পথে চলে আসে। রুদ্ধকে ব্যস্ত রাখার জন্য তিনটা বাচ্চাও নিয়ে নিল। তারপরও রুদ্ধকে ঠেকাতে পারল না। বাচ্চাগুলো হয়েছেও তার মতো। রুদ্ধ যেভাবে যা বলবে তাই মেনে নেয়।কখনও জিদ ধরে না।তাই হয়তো রুদ্ধ আরো প্রশ্রয় পায়।রুদ্ধ কে সৎ পথে আনার চক্করে গাদা গাদা বাচ্চাও নিয়ে নিল তাও তার স্বামী ঠিক হলো না। এত দুঃখ আর ভালো লাগছে না হুরের। আবারও কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে মেয়ে হওয়ানোর জন্য।হায়াত ছোট। এ সময় আরেকটা নিলে ফ্যাসাদে পড়া ছাড়া আর কিছুই চোখের পড়ল না হুরের। আর রুদ্ধ হায়াত হওয়ার পর তাকে কঠিন ভাবে বলেছিল আর বাচ্চা নিবে না। তিনটাই এনাফ্।বাধ্য বউ এর মতো রুদ্ধর সব কথা শুনেছে হুর। পরক্ষণে অপর কান দিয়ে বের করে দিয়েছে।যতক্ষণ না অব্দি মেয়ে বেবি হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সে একাধারে বাচ্চা নিতেই থাকবে।

বাচ্চা হওয়ার পর হুর তার চাচাতো বোন আর দুলাভাই এর সাথে যোগাযোগ করেছিল।আমন্ত্রণ করেছিল আসার জন্য। বাচ্চাদের দেখে যাওয়ার জন্য।দুবার-ই বলা হয়েছে। তবে তারা আসে নি। সাহেদ এর বারণ করার জন্য রোকসানা ও আসতে পারেনি।সাহেদ এর সাথে রুদ্ধর পারসোনাল কোনো শত্রুতামি নেই।সম্পর্ক শুধু চোর পুলিশ এর।কয়েকবার ই রুদ্ধর বিরুদ্ধে প্রমান জোগার করেছিল। এমন কি হ্যান্ডকাফ ও পড়িয়েছিল।কিন্তু জেল এ নিয়ে যাওয়ার আগে আগেই ছাড় পেয়ে যেত। ডিপার্টমেন্টে এটা নিয়ে তুফান চলছিল। সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছিল। কেউ এগিয়ে যেত না রুদ্ধ জড়িত কেসে। কারণ একটাই সে খু/ন করে।তবে পুলিশরা এটার জন্য প্রথমে ভয় পায় নি। ভয় তো পেয়েছিল তখন, যখন রুদ্ধ তাদের ফ্যামিলিদের কিডন্যাপ করিয়ে ভয় দেখাতো।তাই তারা এক প্রকার রুদ্ধ কেস থেকে দূরে থাকতেন।এটাই একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সাহেদের কাছে। বুক ফুলিয়ে হেড কে বলেছিল সে যেকোনো মূল্যে রুদ্ধকে অ্যারেস্ট করেই ছাড়বে।তবে হুরকে দিয়ে যা করতে চেয়েছিল তা হতে পারল না।ডিপার্টমেন্টে সবার কাছে নিচু হতে হয়েছিল।তাই দুজনের প্রতি একটা ক্ষোভ রয়ে গেছে।হুর যেচে কথা বললেও সাহেদ বলেনি।সম্পর্কের দূরত্ব সেভাবেই রইলো।

————————————–
হতাশ ভঙ্গিতে হুরের দিকে তাকিয়ে আছে রুদ্ধ। কেবলমাত্র তার হতাশ ভঙ্গি থাকলেও বাকি সবার মুখশ্রী হয়ে আছে হতবিহ্বলতা।সবার মাঝে মাথা নিচু করে আসামির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে হুর। দেখে মনে হচ্ছে বড় মাপের ভুল করেছে।এতক্ষণ যাবত হতাশ থাকলেও হঠাৎ রুদ্ধর প্রচন্ড রাগ লাগলো।রেগে চিল্লিয়ে উঠলো।

“এই মেয়ে আমি বলেছিলাম না আর বাচ্চা নেওয়ার দরকার নেই?তারপরও কিভাবে প্রেগন্যান্ট হলে তুমি?হায়াত এখনো বড় হয়নি। ওকে সামলাতেই তুমি হিমশিম খেয়ে যাও। তার ওপর আরেকটা। কিভাবে সামলাবে তুমি?

এবার মাথা তুলে রুদ্ধর দিকে তাকালো হুর।ক্ষিপ্ত স্বরে বললো,

“আমি কি ইচ্ছে করে প্রেগনেন্ট হয়েছি নাকি?আপনি তো এমন ভাবে আমাকে দোষারোপ করছেন যে সব…

“চুপ! একদম চুপ। মুখ থেকে কোন কথা বের করবে না। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার। বেশি কথা বললে মুখ থেকে উল্টাপাল্টা কিছু বের হয়ে যাবে।

পরিস্থিতি বেগতিক লাইনে চলে যাচ্ছে দেখে সোহেল শেখ বললেন।

“যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন চাইলেও কোন কিছু করা সম্ভব না। আর হায়াতকে যতটুকু ছোট বলছো সে ততটুকুও ছোট নয়। দুই বছর প্রায় শেষ। একটু আধটু হাটাহাটি করতে পারে। আর তাকে দেখার জন্য আমরা সবাই আছি। তাই বৌমাকে এত কথা না শুনিয়ে তার খেয়াল রাখো। জন্ম মৃত্যু সব আল্লাহর হাতে। উনি চাইছেন দেখেই ঘরে নতুন সদস্য আসছে।

আর কিছু বলতে পারল না রুদ্ধ ।আর বলবেই বা কি? এখন চাইলেও কিছু করার নেই। তবে সে একটা জিনিস মাথায় ক্যাচ্ করতে পারছে না। সে খুব সচেতন ছিল। তারপরও কিভাবে হুর প্রেগন্যান্ট হয়ে গেল সেটা মাথায় ধরছে না।

————————————
বহু চেষ্টায় এবং পরিশ্রমের পর একজন গাইনোলজিস্ট হতে পেরেছে হুর। আলাদা একটি চেম্বার আছে তার। কাজের সূত্রে মাঝে মাঝে দূরে যেতে হয় তার।দীর্ঘ দুই ঘন্টা ওটিতে কাটিয়ে একটি সার্জারি শেষ করল।বেশিক্ষন হসপিটালে না থেকে চলে আসলো বাসায়।সন্ধ্যা ভাব কেটে রাতের প্রভা।ড্রইং রুমে হামদ্, হামযাহ্ লিখছে। আর পাশে বসে হায়াত ড্রইং করছে। হুরকে দেখে হায়াত দৌড়ে তার কাছে আসল।পা জড়িয়ে ধরল। কোলে তুলল না হুর। গোসল করা প্রয়োজন। বলল,

” মাম্মা গোসল করে আসছি তারপর কোলে নিচ্ছি ওকে?

হায়াত ঠোঁট উলটে বলল,

“ওকে।

হুর যেতে যেতে বলল,

” সবাই রুমে আসো। আর রাই কোথায়?

হায়াত বলে,

“বাবু বাবার কাছে।

” তোমার বাবা চলে এসেছে?

হামযাহ্ বলে,

“হ্যাঁ,অনেক কান্না করছিল বাবু।তুমি তো হাসপাতালে ছিলে।তাই বাবাকে ফোন করি।রাই-য়ের কান্না শুনে বাবা কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসেন।

” ওহ্!

সিড়ির দিকে হাটা ধরে হুর।লুকায়িত হাসি কেউর চোখে পড়ল না।পিছে আসছে তিন ছেলে।রুমে ঢুকতেই বাবা মেয়ের হাসির শব্দ কর্নপাতে আসল।খিলখিল করে হাসছে দুজন।বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে রাই।আর রুদ্ধ পায়ে পেটে সুড়সুড়ি দিচ্ছে।তাতেই সে খিলখিল করে হাসছে। মেয়ের হাসি দেখে রুদ্ধ ও হাসছে।মেয়ে হয়েছে মায়ের মতো।শান্ত কম চটপটে বেশি।তবে সবার মত দুধ সাদা হয়নি রাই।ফর্সা তবে অতিরিক্ত নয়।মায়ের এক গালে টোল পড়লে তার দুই গালে পড়ে।মায়ের মতই চোখ বড়বড়। সারাক্ষন টইটই করে বাড়ি মাথায় তুলে রাখবে। আর কেউর কোলে উঠলে কথা না বলা ছাড়া থাকতেই পারবে না।খেলার মাঝে যদি মা বা বাবাকে মনে পড়ে যায় তাহলে গলা ফাটিয়ে কান্না করবে।তবে কান্নার সময় মা কে কাছে না পেয়ে যদি বাবাকে পায় তাহলে মায়ের কথা তার মনে থাকে না। এমনটা ধারণা হুরের। তবে মেয়ে যে তার বাপ পাগল তা ঢের জানে। এতে লাভ তার-ই হয়েছে। জামাই টা কে টকে রাখা যায়।আগের মতো এখন রাত করে বেড়িয়ে যায় না মেয়ের কাছে থাকে। একদিন রাতে রুদ্ধ বাহিরে গিয়েছিল। ঘুম থেকে উঠে বাবাকে দেখতে না পেয়ে শ্বাস আটকে কান্না করছিল রাই।সেই থেকে রুদ্ধ কখনও রাতে বের হয় না। মেয়েটা বড্ড আদুরে তার। যে দেখবে সেই কোলে নিতে চাইবে। তবে দুঃখজনক ব্যাপার কোনো বাচ্চাই তার কেউর কোলে যায় না।

হামদ্, হামযাহ্’র বয়স দশে পড়ল। হায়াতের ছয় শেষে সাতে। আর রাই এর কেবল চার। তিন ভাইয়ের চোখের মনি ছোট বোন।মাঝে মাঝে হায়াত আর রাই এর মধ্যে ঝগড়া লেগে যায়।ঝগড়ায় পরাজিত হওয়ার শেষ মুহূর্তে ঠোঁট উলটে কান্না করে দেয় রাই। তা দেখে হামযাহ্ খুব বকে হায়াত কে। হায়াত ও তার ভুল বুঝতে পারে। তখন রাই কে নিজের সব চকলেট দিয়ে কান্না থামায়।চকোলেট পেয়ে কান্না থেমেও যায় তার।

পুরনো কিছু কথা স্মরণ করতেই মনে আবার প্রশান্তি ছেয়ে গেল। হুরকে দেখতে পেরায় শোয়া থেকে উঠে লাফিয়ে চিলিয়ে উঠলো।

“মাম্মা মাম্মা।

পিছন ফিরে রুদ্ধ দেখে হুর দাঁড়িয়ে আছে।রাই কে কোলে নিয়ে হুরের কাছে এসে ঘর্মাক্ত মুখ হুরের শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে দিল।রাই এখন লাফিয়ে যাচ্ছে মায়ের কোলে যাওয়ার জন্য। তা দেখে হুর মিনতি করে বলে,

” আপনি প্লিজ ওদের একটু সামলান।আমি কিছুক্ষণের মধ্যে শাওয়ার নিয়ে আসছি।

উত্তরের অপেক্ষা করে না দ্রুত পায়ে ওয়াশরুমে।চার ভাই-বোন বিছানায় বসল।হামদ্, হামযাহ্ হোমওয়ার্ক করছে।হায়াত আবারও ড্রইং করা শুরু করে দিয়েছে।রুদ্ধর কোলে রাই বসে রংপেন্সিল নিয়ে খেলছে আর রুদ্ধকে দেখাচ্ছে।
হুর শাওয়ার নিয়ে হায়াত কে কোলে নিয়ে বসে রইলো কিছুক্ষন। কিভাবে ড্রইং করতে হয় তা শিখিয়ে দিল। ফোনের আওয়াজ পেতেই ফোন হাতে নিয়ে দেখল আকাশ কল করেছে।স্ক্রিকে তাকিয়ে রুদ্ধ ও দেখল নাম্বার।হুরের দিকে তাকালো স্বাভাবিক ভঙ্গিতে।হুর কল রিসিভ করে লাইউডে রাখল।মায়ের ইম্পর্ট্যান্ট কল আসছে বুঝে সবাই চুপ হয়ে গেল।হুর সালাম দিল।

“ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো?

“আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?

“আমিও ভাল আছি।বাবুরা কেমন আছে কি করছে?

“ভালো আছে।সবাই লেখালেখি করছে।
তোমার কি খবর? বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না নাকি ?

স্মিত হাসে আকাশ।ফোনের অপর পাশে থাকায় হুরের চোখে পরলো না।ব্যস্ত ভঙ্গিতে আকাশ বলল,

“বিয়ের জন্য এখনো অনেক সময় বাকি আছে।ক্যারিয়ার গড়লাম সবে মাত্র।লাইফটাকে আরো কিছুদিন ইনজয় করি। বিয়ের পর তো আর ইনজয় করতে পারব না। মেয়ে মানুষ বলে কথা। একবার জীবনে জড়িয়ে গেলে সবকিছুতেই তাদের নাক গলাতে লাগবে।তাই নিজের জীবনটাকে দেরিতে ধ্বংস করতে চাচ্ছি।তবে মা বাবা উঠে পড়ে লেগেছে বিয়ের জন্য।তাদের সরাসরি মানা করে দেয়ার পরও তারা মেয়ে খোঁজাখুঁজি করছে।দেখি বাকিটা কি করা যায়!

মলিন হাসলো হুর।হ্যাংলা পাতলা ছেলেটা লুকানো অনুরক্তি প্রকাশ না করলেও হুর ঠিকই তার মনোভাব বুঝতে পেরেছিল।তার কষ্টটা একটু হলেও আঁচ করতে পেরেছিল।হ্যাংলা পাতলা ছেলেটা আর আগের মত নেই।স্বাস্থ্যবান হয়ে গিয়েছে। গায়ে গোতোরে আগের বাচ্চা বাচ্চা ভাব থাকলেও এখন সুদর্শন যুবক মনে হয়।এখন সে পেশায় একজন হার্ট সার্জেন।আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দেয় হুর। বেরিয়ে আসে এক দীর্ঘশ্বাস।বন্ধু-বান্ধব রা ছোট বড় সবাই ডাক্তার হয়েছে।সবার সাথে মাঝে মাঝে কথা হয়।হুরের বিয়ের কথা প্রথম সবাই যখন শুনেছিল তখন বিস্মিত হয়।বেশি হয় আকাশ।বিশ্বাস করতে পারছিল না এত বড় সত্য কথা। মন ভাঙার বেদনা ভর করেছিল তার বক্ষে। তবে তখন কিছুই করার ছিল না। রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়। তিন ভাইয়ের জন্য একটি রুম দেয়া হয়েছে। একই সাথে ঘুমায় সবাই। রাই ঘুমায় হুর আর রুদ্ধর সাথে।ব্যালকনিতে এক হাতে কফির মগ নিয়ে সোফায় বসে অন্য হাতে একটি ফাইল দেখছে।কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর অনুভূত হয় ব্যালকনিতে কেউ এসেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে ব্যালকনির দরজার দিকে তাকাতে দেখল রুদ্ধকে।রুদ্ধ হুরের পাশে বসে পড়ল। হুরের হাত থেকে কফির মগ নিয়ে চুমুক লাগালো।আড়চোখে হুরকে একবার দেখে গলা খাঁকারি দিল। বলল,

“আজকাল কেউ মনে হয় আমায় সময় দিতে ভুলে গেছে।

মুচকি হাসল হুর।ফাইলের উপর নজর রেখে বলে,

“তার জন্য অফুরন্ত সময় আমার কাছে আছে।

“আমি তোমার কাছে একটা রিকোয়েস্ট করতে চাই।বলো প্লিজ মানবে।

রুদ্ধর আকুলতা শুনে রুদ্ধর মুখ মুখোমুখি হয়ে চাইলো হুর। রুদ্ধ হুরের দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিল। আবার বললো,

“বলো প্লিজ মানবে।

“কি এমন কথা যে আপনি এত রিকোয়েস্ট করছেন?

“উহু! আগে তুমি কথা দাও মানবে। তারপরই বলবো।

কিছু সময়ের উত্তর দিকে তাকিয়ে রয় হুর।বলে,

“আচ্ছা, ঠিক আছে মানবো। এখন বলুন।

রুদ্ধ বোঝানোর ভঙ্গিতে বলতে লাগলো।

“দেখো আমাদের তো এখন চারটি সন্তান।আমরা তো এখন পরিপূরক পরিবার।তিনটা ছেলে আছে একটি মেয়ে আছে।আর তো কিছু দরকার নেই।এবার চার সন্তান নিয়ে পুরো জীবন আমরা কাটিয়ে দিব। তুমি প্লিজ আর বেবি নেয়ার কথা মাথায় আনবে না। আমায় কখনো অনুরোধ করবে না বেবি নেয়ার জন্য।আমি চারটা বেবিতেই সন্তুষ্ট।আমি তো ভেবেছিলাম হামদ্ আর হামযাহ্ এর পর আর কোন বেবি নিব না।তবে আমার ভুল নাকি তোমার ভুল কোনটাই বুঝতে পারিনি।ভাগ্যক্রমে আল্লাহ আরো দুটি সন্তান আমাদের দান করলেন।তুমি আমায় আর প্রমিস করার কখনো বেবিনের নাম মুখে আনবে না।

রুদ্ধর অসহায়ত্ব কণ্ঠস্বর শুনে ফিক করে হেসে দিল হুর।অনিমেষ চেয়ে রইলো রুদ্ধর দিকে।লোকটাকে বোকা বানিয়ে কয়েকবারই প্রেগন্যান্ট হলো। চারটি সন্তানের মা হল।তারপরও রুদ্ধ তার চালাকি ধরতে পারল না।আজ নিজের প্রতি নিজেরই গর্বিত মনে হচ্ছে হুরের। অনিমেষ রুদ্ধর দিকে তাকিয়ে মনে মনে আওড়ালো।

“আপনি এবার না বললেও আমি আর বেবি নিতাম না। আমার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। বাচ্চাদের মাধ্যমে আমি আপনাকে আটকে রাখতে পেরেছি মারপিট থেকে। এটাই হচ্ছে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আপনি কখনো জানতে পারবেন না আমার এতগুলো বাচ্চা নেওয়ার কারণ।

রুদ্ধকে বললো,

“প্রমিস ।আমি আর বেবি নিব না।

রুদ্ধর বুকে পিঠ ঠেকিয়ে আরামে বসলো হুর। হুরকে জড়িয়ে ধরল রুদ্ধ।পিছন থেকে হুরের মুখ যতটুকু দেখা যায় ততটুকুই দেখছে রুদ্ধ।পুরোপুরি ভাবে দেখার সুযোগ থাকলেও দেখছে না।একাধারে কথা বলছে হুর। রুদ্ধ মাথা নিচু করে হুরের ঘাড়ে নিজের থুতনি রাখল।খোচা দাড়ি ঘাড়ে লাগতেই কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠল হুর।পরক্ষণে আবার স্বাভাবিক হয়ে বসে ফাইল দেখতে লাগলো।আধ খাওয়া কফিটা এখন রুদ্ধ খাচ্ছে।পুরোটা শেষ করল না।একটু খেয়ে কফির মগ রেখে দিল টেবিলের ওপর।হুরের পেটের উপর হাত রেখে কানের কাছে ফিসফিস করে কম্পিত কন্ঠে বললো,

“ভা-লো-বা-সি।

চমকে উঠল হুর।রুদ্ধ নামক মানুষটির মুখ থেকে এই প্রথম “ভালোবাসি” শব্দ শুনল।তাও বিয়ের ১১ টা বছর পর।কিছুদিন পরই বিয়ের ১২ বছর হবে।শব্দটা যেন স্নিগ্ধ শোনা গেল। সতেজ শোনা গেল।মুহুর্তেই আষ্টেপৃষ্টে মনের মাঝে চেপে গেল স্বামীর প্রতি ভালোবাসা।মনোমুগ্ধকর শোনা গেল রুদ্ধের কন্ঠে বাক্যটি।মিশে গেল স্বামীর বক্ষে।বিপরীতে কম্পিত ওষ্ঠ গাঢ় ভাবে চেপে ধরল ললাটে।আঁখি যুগল অনিচ্ছায় বন্ধ হয়ে আসল।কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল দুই ফোঁটা অশ্রু।

“সমাপ্ত”

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here