বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প #পর্ব-৯ #লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

0
900

#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-৯
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

লাস্ট ক্লাস চলছে। কয়েক মিনিট পর ই কলেজ ছুটি হয়ে যাবে।গুটিসুটি মেরে বেঞ্চের কোনায় দেয়ালের সাথে সেটে বসে আছে হুর। চোখ বোর্ডের মধ্যে থাকলেও মনোযোগ দিতে পারছে না। শঙ্কা নিয়ে বসে আছে। ক্লাস করিয়ে স্যার চলে গেছে। স্টুডেন্টরাও নিজ ব্যাগ পত্র গুছিয়ে বের হতে লাগলো। এমনকি স্নেহা, মিম, মুক্তা তারাও ব্যাগ বুঝিয়ে বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ালো। হুরকে বসে থাকতে দেখে মিম প্রশ্ন করল।
“কি হলো? বসে আছো কেন? বাসায় যাবে না নাকি?

মাথা নিচু করে ভীত হয়ে হাত কচলাতে লাগলো হুর।আচানক হুরকে ভয় পেতে এবং হাত কচলাতে দেখে তিনজনেরই ভ্রু কুঁচকে যায়। বুঝতে পারেনা হুরের এমন করার কারণ। স্নেহা জিজ্ঞেস করে,
“কিছু হয়েছে হুর?এনিথিং রং?
মাথা তুলে তিনজনকে একবার দেখল। ক্লাসেও একবার চোখ বুলালো। অর্ধেকের বেশি স্টুডেন্ট প্রায় চলে গিয়েছে।স্নেহার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে না জানালো।ভ্রু খানিকটা আরো কুঁচকে এল স্নেহার। যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে মেয়েটা এভাবে বসে আছে কেন সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না তাদের। মুক্তা বলে,

“কিন্তু তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে না তুই ঠিক আছিস। যেভাবে জড়সড় হয়ে বসে আছিস মনে হচ্ছে খুবই ভয় পেয়েছিস।কি কারনে ভয় পাচ্ছিস বলতো? কেউ কি তোকে কিছু বলেছে?
চোখ জোড়া ছলছল হয়ে উঠলো হুরের।ভড়কে গেল তিনজন।কান্না করার মতো কোনো কারন খুজে পেল না তারা।কিছুটা বিচলিত ও হলো।স্নেহা আরো কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বে এমন সময় আকাশ উপস্থিত হল তাদের মাঝে।হুরের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে স্নেহা কে প্রশ্ন করে,
” কি হয়েছে ও এভাবে বসে আছে কেন?

স্নেহা চিন্তিত হয়ে বলে,
“কি জানি!সে কখন থেকে জিজ্ঞেস করছি কি হয়েছে,কিন্তু কোনো কিছু বলছে না।
আকাশ এবার হুরের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে।কিন্তু ব্যর্থ হয়।তাই সহসা হুরকে জিজ্ঞেস করে,
” হুর তোমার কি শরীর খারাপ করছে?

হুর এবার মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকালো।করুন স্বরে বললো,
“তুমি প্লিজ চলে যাও।আমি ওদের সাথে আসছি।আর আমার শরীর খারাপ করছে না।

চিন্তামুক্ত হলো সবাই।হুরের কথা মান্য করে চলে গেল আকাশ।ক্লাস ফাঁকা হয়ে গেল স্নেহা,মিম,মুক্তা ঘিরে ধরলো হুরকে।মুক্তা বলে,
” হুর প্লিজ বল কি হয়েছে?এভাবে কান্না করছিস কেন?দেখ বাসায় যেতে লেট হচ্ছে তো আমাদের।ভনিতা না করে,কান্না কেন করছিস তা বল!

আচানক ডুকরে কেঁদে উঠলো হুর।দু’হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে দাঁড়াল।পিছন ঘুরলো।আঁতকে উঠলো মিম,মুক্তা,স্নেহা।র’ক্তে সাদা জামা লাল টকটকে হয়ে গেছে।জামার অনেকটা অংশে র’ক্ত লেগে আছে।দেখতে খুব বিশ্রী লাগছে।হুর মুখে হাত চেপে ধরে আবার বসে পড়লো।মিম উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,
“ইয়া খোদা!এটা কখন হলো?তোর অবস্থা তো একদম শোচনীয়। এখন কি করবি?

কান্নার শব্দ কিছুটা বেড়ে গেল হুরের।ভয় প্লাস লজ্জায় ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে তার।কিভাবে সে এখন বাড়ি যাবে!কিভাবে রাস্তা দিয়ে এ অবস্থায় যাবে?এসব ভেবে আরো কান্না পাচ্ছে তার।মিম’কে এভাবে উদ্বিগ্ন হতে দেখে স্নেহা শান্ত স্বরে হুরকে প্রশ্ন কিরে,” এত চিন্তা করো না হুর।তোমার কাছে কি ন্যা’পকিন আছে?
কান্নারত অবস্থায় হুর মাথা নাড়ালো। যার মানে এমন এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার মতো তার কাছে কোনো উপায় নেই।দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো স্নেহা। হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিল।দুইটা প্রায় হতে চললো।এ’সময়ে এখানের ফার্মেসী খোলা থাকে না।বিপদ আসলে সব জায়গা দিয়েই আসে।কপাল চাপড়ালো স্নেহা।এই পরিস্থিতি থেকে বের তো হতে হবে।স্নেহা হুরকে স্বান্তনা দিয়ে বললো,
“তুমি কেঁদোনা হুর, আমি ফার্মেসী থেকে প্যা’ড নিয়ে আসছি।তুমি কিছুক্ষন অপেক্ষা করো।

মিম’কে নিয়ে বের হয়ে গেল স্নেহা।ফাঁকা রুমে হুর আর মুক্তা অবস্থান করছে।মুক্তা বারবার হুরকে এটা ওটা বলে কান্না থামাতে বলছে।কিন্তু হুরের কান্না থামবার নয়।সে একবার যেহুতু কান্না করার উদ্যোগ নিয়েছে যতক্ষন না পর্যন্ত এ বিপদের উপায় বের করতে পারবে ততক্ষন পর্যন্ত কান্না তার থামবে না।প্রায় ১০ মিনিট পর স্নেহা আর মিম আসে।শুন্য হাতে তাদের ফিরতে হয়।এ সময় যে তারা ফার্মেসি খোলা পাবে না তা আগেই ধারণা করেছিল।যদি ভাগ্য ভালো হয় তাহলে ফার্মেসী খোলা পাবে ভেবে একটু আশা নিয়ে গিয়েছিল।মিম আর স্নেহার হাত খালি এবং মুখে নিরাশতার ভাব দেখে মুক্তা বুঝে গেল কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি তারা পায় নি।চিন্তার রেশ বেড়েই চললো।সময় এখন দু’টো পার।বাসায় ও যেতে হবে তাদের।তবে এই মেয়েটাকে এভাবে একা ফেলে যাওয়া যাবে না।অনেক চিন্তা-ভাবনা করার পর মুক্তা বলে,
“মিম, স্নেহা এক কাজ করি প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে গিয়ে বলি হুরের ফ্যামিলিকে জানিয়ে দিতে যে হুর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাছাড়া আর কোনো করণীয় চোখে পড়ছে না। মেয়েটাকে এভাবে একা ফেলেও যেতে পারি না। এমনি তো , আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে। সঠিক সময় বাসায় পৌঁছাতে না পারলে আম্মুও টেনশন করবে।

মুক্তার কথায় যুক্তি আছে বলে মনে হলো মিম আর স্নেহার।সায় জানিয়ে বললো,
” হ্যাঁ এটাই করলে ভালো হবে।
ঝট করে মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিল হুর।সারা মুখশ্রীতে আতঙ্ক ছেয়ে গেল।আতঙ্কিত স্বরে বললো,
“একদম না!তোমরা প্লিজ প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে যেও না।

মুক্তা রাগান্বিত হয়ে বলে,
” একদম কথা বলবি না তুই।এখন যদি তোর বাড়িতে খবর না দেই তাহলে তুই কিভাবে বাসায় যাবি?এভাবে যেতে চাস বাড়িতে?রাস্তার কু’কুরদের নিজের বিধ্বস্ত অবস্থা দেখাতে চাস?যদি চাস তাহলে চল! তোকে এভাবেই সারা রাস্তা হাটিয়ে নিয়ে যাব।

দমে গেল হুর।সে যে এভাবে বাড়ি যেতে পারবে না।কিন্তু বাড়িতে জানাবে মানে কাকে জানাবে?তার যে আপন মানুষ নেই তা তো তার বন্ধু’রা জানে না।আবারও কান্নায় ভেঙে পড়লো হুর।কান্না যেন তার আপন জন।পরম আত্মীয়। মিম,মুক্তা মিলে চলে গেল প্রিন্সিপালের কাছে।প্রিন্সিপাল’কে জানালো হুর অসুস্থ।সে যেন তার পরিবারকে জানিয়ে দেয়।প্রিন্সিপাল ভয় পেয়ে যায় হুরের অসুস্থতার কথা শুনে।জীবনে এই প্রথম বার হয়তো তিনি এতটা ভয় পেয়েছেন অপরিচিত একটা মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে। কারণটা অবশ্য রুদ্ধের জন্য। মেয়েটার সাথে রুদ্ধের সম্পর্ক জড়িত আছে। রুদ্ধের কাজিন সে। এখন যদি কোনক্রমে মেয়েটির কোন কিছু হয়ে যায় এবং রুদ্ধ তান্ডব লাগিয়ে দেয় তাহলে কলেজের আশেপাশেও প্রিন্সিপালের নাম থাকবে না।কপালে ঘামের খেলা চলছে। তবে মোছার প্রয়োজন মনে করছেন না সে। টেবিল থেকে ফোন হাতে নিয়ে দ্রুত ও রুদ্ধকে ফোন লাগায়। কাপা কাঁপা সরে জানিয়ে দেয় তার কাজিন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হুরের অসুস্থতার কথা শুনে রুদ্ধ ও শান্ত সুরে বলল “আসছি”। রুদ্ধের শান্ত স্যারের কথা শুনে ভীত ভাব কমলো না প্রিন্সিপালের। মেয়েটির অবস্থা কেমন জানার জন্য মনটা আকুবাকু করছে। প্রিন্সিপাল সামনে থাকা দাঁড়িয়ে দুটো মেয়ের উদ্দেশ্যে বলল।

“হুর মামনি কোথায় এখন? বেশি কি অসুস্থ হয়ে পড়েছে? আমায় নিয়ে চলো তার কাছে।
প্রিন্সিপালের কথা শুনে কিছুটা ঘাবড়ে গেল মিম আর মুক্তা। প্রিন্সিপালকে আটকে দিয়ে বলল।
“স্যার আপনি চিন্তা করবেন না আমরা হুরের সাথে আছি।হুরের পরিবার থেকে কেউ আসলে দয়া করে আপনি আমাদের জানাবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা হুরের কাছে আছি।

প্রিন্সিপাল কোন কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না।মিম, মুক্তা চলে আসলো তাদের ক্লাসে। মেয়েটা এক কোণে গুটি ছুটি হয়ে বসে এখনো কাঁদছে।এত কাঁদার মত কোন কিছু দেখতে পারলো না কেউই। বিষয়টা খুবই নরমাল। তবে হ্যাঁ পরিস্থিতিটা খুবই বিব্রতকর। তাই হয়তো মেয়েটা এভাবে ফ্যাচফ্যাচ করে কান্না করছে। মিনিট পাঁচেক যেতে না যেতেই ধপধপ পা ফেলে ক্লাসে প্রবেশ করে রুদ্ধ। তার পেছনে প্রিন্সিপাল স্যার। ভয়ে তার চোখ মুখ শুকিয়ে এসে ছোট হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের মতো রুদ্ধকে ক্লাসে প্রবেশ করতে দেখে সকলের নজর তার দিকে গেল। এমনকি কান্নারত হুর ও রুদ্ধের দিকে তাকালো। কয়েক সেকেন্ডের জন্য ভয় পেয়ে গিয়েছিল সে।রুদ্ধকে এই মুহূর্তে তার কলেজে দেখে বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল হুরের মুখ। সে কল্পনাও করতে পায়েনি রুদ্ধ তার অসুস্থতার কথা শুনে এখানে আসবে। সে মনে করেছিল জেরিন বা লিলিকে পাঠাবে তাকে নিয়ে আসার জন্য।রুদ্ধ চোখ হুরের দিকে রেখে সামনে এগিয়ে এসে বেঞ্চের পাশে দাঁড়ালো।অতিরিক্ত কান্নার ফলে পুরো মুখ লাল হয়ে এসেছে। বিশেষ করে চোখ আর দুটি গাল।রুদ্ধ ঘাড় বেঁকিয়ে পিছনে তাকিয়ে প্রিন্সিপালের দিকে চোখ রাখল। শান্ত কন্ঠে বলল,
“আপনি এখন আসতে পারেন।

থর থর করে কাঁপতে থাকা পা নিয়ে রুম ত্যাগ করল প্রিন্সিপাল।চোখ পুনরায় হুরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।
“কি হয়েছে তোমার?
হুরের মুখ থেকে কোন জবাব আসলো না।উল্টো বিস্ময় নিয়ে তার দিকে এই তাকিয়ে রইল।চোখে তার পানির বিল জমে গেছে।হুরের কাছ থেকে কোন জবাব না পেয়ে রুদ্ধ আর একটু সামনে এগিয়ে এসে হুরের দিকে ঝুকে তার কপাল স্পর্শ করল।তাপমাত্রা স্বাভাবিকই মনে হল।শরীর সোজা করে পুনরায় দাঁড়ালো। একই ভঙ্গিতে আবার প্রশ্ন করল,
“কি হলো বলছো না কেন কি হয়েছে? জ্বর তো হয়নি তাপমাত্রা তো ঠিকই মনে হল।

রুদ্ধকে কি জবাব দেবে ভেবে পাচ্ছে না হুর।কিভাবে বলবে তার মেয়েলি সমস্যার কথা!অসহায়ত্ব চোখ নিয়ে তিন বান্ধবীর দিকে নজর রাখল। তাদের মুখ ও করুণ দেখালো। তারাও ভাবতে পারিনি যে কোন পুরুষ হুরকে নিতে আসবে। তবে তিন বান্ধবী রুদ্ধকে দেখে ফিট হয়ে ফিদা হয়ে গেছে। রুদ্ধের দিক থেকে চোখ সরাতেই তাদের মন চাচ্ছে না।হুর বান্ধবীদের থেকে চোখ সরিয়ে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলতে লাগলো।
” আআআমি… আমি..

ভ্রু কুঁচকে আসলো রুদ্ধের।গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল।
“আমতা আমতা না করে ভালোভাবে বলো।
এবারও বলতে পারলো না হুর। ভীষণ অস্বস্তি হতে লাগলো।হাত কচলানোর মাত্রা আরো বেড়ে গেল। ভীষণ রাগ লাগল রুদ্ধের। রাগের চোটে শিরা-উপশিরায় রক্ত দ্রুত গতিতে চলাচল করা শুরু করল। নিজের রাগ দমন করতে না পেরে কয় কদম এগিয়ে এসে হুরের বাহুধরে দাঁড় করালো। নিজের নিকটে নিয়ে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো।
“এই মেয়ে কথা কানে যাচ্ছে না? সে কখন থেকে প্রশ্ন করে যাচ্ছি?আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করে এখানে এসেছি এর গুরুত্ব কি নেই তোমার কাছে?আর একবার যদি আমার প্রশ্ন করতে হয় তাহলে থাপড়িয়ে গাল..

বলার মাঝে চোখ পড়ল লো বেঞ্চে থাকা লেপ্টে যাওয়া শ্বেত র’ক্তের দিকে।সাথে সাথে ভ্রু কুচকে আসে তার। কুঁচকানো ভ্রু নিয়ে আবার হুরের দিকে তাকায়। চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে সে।হুরের বাহু ধরে একটু বাঁকা করতেই পিছনের জামার কিছু অংশ চোখে পড়ে।সাথে সাথে শীতল হয়ে আসে পুরো মুখশ্রী।হুরের বাহু থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পিছে চলে যায় সে।রুদ্ধের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে হুর আবার কোনায় গুটিসুটি মেরে বসে।শক্ত গলায় হুরের উদ্দেশ্যে বলে,
“এখানে এসে দাঁড়াও।

ফ্যাল ফ্যাল করে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে রইল হুর। কি কারনে রুদ্ধ তার সামনে দাঁড়াতে বলছে তা বোধগম্য হচ্ছে না।আর এই অবস্থায় তাকে তার সামনে দাঁড়াতে বলছে ব্যাপারটা খুবই লজ্জাজনক। লোকটা সব বুঝেও তার সাথে এমন করছে।চারপাশে হাত পা ছড়িয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে কান্না করতে মন চাচ্ছে তার।হুরের কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে রুদ্ধ এবার তাকে ধমকে ওঠে।
“আসো।
সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে হুরের। এবার আর রুদ্ধের কথা অমান্য করার স্কোপ নেই। কম্পিত শরীর নিয়ে রুদ্ধের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। তবে হাত কচলানো এখনো বন্ধ হলো না। রুদ্ধ নিজের গায়ে থাকা কোট খুলে হুরের কোমরে পেঁচিয়ে দিল। তারপর হুর কে ঘুরিয়ে পিছন সাইড দেখতে লাগল। কোট দ্বারা সবকিছু কভার হয়ে গিয়েছে। র’ক্তের ছাপ বোঝা যাচ্ছে না। হুরকে কাছে টেনে এক ঝটকায় তাকে কোলে তুলে নিল। আকস্মিক নিজেকে রুদ্ধের কোলে দেখে চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলো।হৃদপিন্ডের ধুকপুকানি হঠাৎ করে বেড়ে গেল। শরীর অসার হয়ে আসলো ।তবে এতে রুদ্ধের কোন পরিবর্তন দেখা মিলল না। সে স্ট্রংলি হয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল হুরকে কোলে নিয়ে। দরজা দিয়ে বাহির হওয়ার সময় দরজার বাহিরে থাকা দুটি গার্ডকে উদ্দেশ্য করে রুদ্ধ বলে,
“ভেতরে ম্যামের ব্যাগ আছে নিয়ে এসো।

রুদ্ধের কথা মাফিক একজন গার্ড ক্লাসের ভেতর প্রবেশ করে হুরের ব্যাগ নিয়ে আসলো।হুরকে কোলে নিয়ে দোতলা থেকে নিচে নেমে আসলো। কোলে করেই তাকে পার্কিং এরিয়াতে নিয়ে গেল। গাড়ির পিছন সিটে বসিয়ে সেও বসে পড়লো। সেই মুহূর্তে একজন গার্ড রুদ্ধের হাতে হুরের ব্যাগ থামিয়ে দিল। রুদ্ধ ব্যাগ টি নিয়ে তার এবং হুরের মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় রেখে দিল। জানালার সাথে সিটি গুনগুন করে কান্না করছে হুর। কান্না করতে করতে বোধ হয় আজ সে শহীদ হয়ে যাবে। এমনটাই পণ করে বসে আছে। থামবার নাম নিচ্ছে না এই অহেতুক কান্না। রুদ্ধ এবার নিজে এর গলার স্বর গম্ভীর করে বলে।

“এত ফ্যাচ ফ্যাঁচ করে কান্না করার কোন কারণই আমি দেখতে পারছি না। ইট’স আ নরমাল ম্যাটার।এমন না যে শুধু তোমার সাথেই ঘটেছে পৃথিবীতে কোটি কোটি মেয়ে আছে যারা এই সমস্যা নিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। এই প্রথম তুমি এই সমস্যার সম্মুখীন হওনি। তবে হ্যাঁ পরিস্থিতিটা হয়তো কিছুটা অন্যরকম আজকের। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন ফ্যাচফ্যাচ করে কান্না করা বন্ধ কর। আমার মাথা গরম হয়ে গেলে চলন্ত গাড়ি থেকে তোমায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিব।

ভয়ে আরষ্ট হয়ে গেল হুর। পরমুহুর্তে মনে পড়ল গাড়ি চলছে না। তাই ভয় কিছুটা কমে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখলো গাড়ির ড্রাইভার ও নেই। হুর গলায় থাকা স্কার্ফ দিয়ে নিজের চোখ মুখ মুছে নিল।বো’কাদের মত প্রশ্ন করল,
“আপনি তো আমায় চলন্ত গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ই ফেলে দিতে পারবেন না। গাড়ি তো এখন চলছে না। তাই আমায় ধাক্কাও দিতে পারবেন না।

রুদ্ধ হুরের প্রশ্নে বিরক্ত হলো নাকি খুশি হল কোনটাই বুঝতে পারল না হুর। রুদ্ধ ফোন করে ড্রাইভারকে আসতে বললে ড্রাইভার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল।কয়েক মিনিটের ব্যবধানে চলে আসলো রুদ্ধ ম্যানশনে।হুর বাড়িতে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম চলে গেল তার রুমে। দরজা কিছুটা ভিড়িয়ে গলা থেকে স্কার্ফ খুলে কলেজ ড্রেসের ক্রস বেল্ট আর কোমড় বেল্ট খুলতে লাগলো। সেই মুহূর্তে প্রবেশ করল লিলি ।হুরের সামনে একটি ব্যাগ ধরে বলল,
“এই নাও।

হুর একবার ব্যাগটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলো। বুঝতে পারল না ব্যাগের মধ্যে কি আছে। তাই নিজেকে প্রশ্ন করল,
“কি আছে ব্যাগের মধ্যে?
লিলি বলল,
“আমি জানিনা! রুদ্ধ স্যার আমাকে বলেছে এই ব্যাগ তোমাকে দিয়ে দিতে।

দুই ঠোঁট গোল করে “ও” বলল হুর।লিলির হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে বিছানার উপর রাখল। চলে গেল লিলি।হুর এবার রুমের দরজা বন্ধ করে দিল। কোমর থেকে রুদ্ধের কোট খুললো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজেকে দেখতে লাগল। জামার পিছনের সাইড বেশ ভালোভাবে রক্তের মাখামাখি।লম্বা এক দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। ওয়াস রুমের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই বিছানায় থাকা ব্যাগটির দিকে নজর পড়ে। খাটের কাছে এসে ব্যাগটি হাতে নেয়।ভেতরের থাকা জিনিস বের করতেই লজ্জায় লাল নীল হতে শুরু করে।গাল গরম হতে শুরু করে দিয়েছে।শুধু গাল নয় মনে হচ্ছে পুরো মুখ গরম হয়ে গেছে।সে কিছু মুহূর্তের জন্য ভুলেই গিয়েছিল যে এই জিনিসগুলো এখন তার খুব অত্যাবশক।তবে সে দিকে তার খেয়াল না থাকলেও রুদ্ধের ঠিকই ছিল।এটা ভাবতেই যেন আরো লজ্জার চাদর তাকে মুড়িয়ে নিচ্ছে গভীরভাবে।

( Wait for the next episode )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here