#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-১৭
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )
আজ সপ্তাহখানেক হলো হুর রুদ্ধ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সকালে রুদ্ধ ওঠার আগেই নাস্তা সেরে চলে যায় কলেজে। এবং কি লাঞ্চের সময়ও দ্রুত নিজের লাঞ্চ সেড়ে ঘাপটি মেরে রুমে বসে থাকে।সকাল এখন নয় টা বাজে।হুর ফ্রেশ হয়ে কলেজ ড্রেস পড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল আঁচড়াচ্ছে। হাতের গতি বাড়িয়ে নিজ কাজ করছে।উদ্দেশ্য আজও রুদ্ধের ঘুম থেকে ওঠার আগে কলেজে যাওয়া।যেই না রেডি হয়ে দরজা অতিক্রম করে বের হবে সেই মুহূর্তে রুদ্ধ হুরের রুমে প্রবেশ করে।রুদ্ধের চোখ লাল হয়ে আছে।দেখে বোঝা যাচ্ছে কয়েকটা রাত সে নির্ঘুম কাটিয়েছে।আকস্মিক রুদ্ধকে তার রুমে দেখতে পেয়ে চমকে উঠে হুর।চোখ বড়বড় করে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে রয়।রুদ্ধ ক্ষীপ্ত মেজাজ নিয়ে হুরের রুমে এসেছে।হুরের দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে দরজা ঠা’স করে আওয়াজ তুলে বন্ধ করে দেয়।দরজা লাগানোর শব্দে কেঁপে উঠে হুর৷ মন বলছে ভয়ংকর কিছু ঘটবে।রুদ্ধর ভয়ে কয় কদম পিছিয়ে এলো হুর। রুদ্ধ কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হুরের দিকে ।যেন পারলে এই মুহূর্তে তাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারে।হুর শুধু রুদ্ধের মুখ আর উদোম বুক দেখতে পাচ্ছে। ভয়ে ভয়ে চোখ নিচে নামাচ্ছেনা।হুর যেদিন রুদ্ধকে আন্ডা/র/ওয়্যার পড়ে ঘুমাতে দেখেছিল সেদিন ধরে নিয়েছিল যে রুদ্ধ আন্ডা/র/ওয়্যার পড়ে ঘুমায়। তাই বুক থেকে নিচ অব্দি চোখ যাচ্ছে না।তার ধারনা এখনো রুদ্ধ আন্ডা/র/ওয়্যার পড়ে এসেছে।রুদ্ধের মুখশ্রী কঠিন হলেও গলার স্বর নিচু রেখে হুরকে প্রশ্ন করল।
“আমার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানোর কারণ কি?
আকাশ থেকে গড়াগড়ি করে পড়ল যেন হুর।রুদ্ধ তাকে জিজ্ঞেস করছে তার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানোর কারণ কি? ব্যাপার খানি একটু হাস্যকর হয়ে গেল না?সেকি আদৌ বুঝতে পারছে না যে হুর তার কাছ থেকে কেন পালিয়ে বেড়াচ্ছে?একটা ৫ বছরের বাচ্চা হলেও তো বুঝে যেত। কিন্তু এই ধামরা লোকটা বুঝতে পারছে না?
মনে মনে বিস্মিত হলেও চোখে মুখে তা প্রকাশ করলো না।ফট করে মাথা নিচু করে নিল। গায়ের সাদা জামা দু হাতের মুঠোয় নিয়ে খামচে ধরলো। নিজের প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে অসন্তুষ্ট হল রুদ্ধ।হুরের সামনে এগোতে এগোতে দাঁতে দাঁত চিবিয়ে ধমকে বলল,
“হেই কথার উত্তর দিচ্ছ না কেন?
চমকে গেল হুর।মাথা নিচু করেই আমতা আমতা করতে লাগলো। হুরকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে রুদ্ধ আরো রাগান্বিত হলো।মাথার চুল পিছে ঠেলে দিয়ে শান্ত গলায় বললো,
“লিফট ইয়র হেড আপ!
রুদ্ধের শান্ত গলার স্বর শুনে দ্রুত বেগে মাথা উঁচু করলো হুর।রুদ্ধের চোখে চোখ রাখলো সে।শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুদ্ধ। রুদ্ধের লালচে এবং শীতল দৃষ্টি দেখে হুরের জানতে ইচ্ছে হলো “কয়টি রাত আপনি নির্ঘুম কাটিয়েছেন”তবে পারলো না।রুদ্ধ হুরের চোখে চোখ রাখা অবস্থাতেই ঠান্ডা মস্তিষ্কে এবং ঠান্ডা স্বরে পুনরায় জিজ্ঞেস করল,
“পালিয়ে বেড়াচ্ছিলে কেন?
এ প্রশ্নের জবাব হুরের কাছে নেই। তাই নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।রুদ্ধের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিল। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না রুদ্ধের চোখের দিকে। রুদ্ধের চোখ থেকে চোখ নিচে নামানোর সময় খেয়াল করলো রুদ্ধ থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ে আছে। হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এবং মনে মনে দোয়াও করে নিল সেদিনের মতো বিব্রত পরিস্থিতির শিকার যেন দ্বিতীয়বার আর না হতে হয় তাকে।রুদ্ধের দৃষ্টি এখনও শীতল। পণ করে এসেছে যতক্ষণ না পর্যন্ত হুর তার প্রশ্নের উত্তর দিবে ততক্ষণ পর্যন্ত এক পাও নড়বে না। হুর যখন বুঝলো জবাব ব্যতীত রুদ্ধ যাবে না তখন আমতা আমতা করে বলতে লাগলো।
“আমি… আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম না।
রুদ্ধের কঠিন জবাব,
“মিথ্যা।
কাচু মাচু করতে দেখা গেল হুরকে।নীরবতা ছেয়ে গেল কিছু সময়।খাপছাড়া ভাবে রুদ্ধ বলল,
“দেখো সে দিনের ঘটনার জন্য আমি মোটেও সর্যি নই। কজ সেদিন তুমি নিজেই আমায় হেল্প করতে চেয়েছিলে।আই ওয়াজ আস্ক ইউ দ্যাট তুমি আমায় হেল্প করবে কিনা!ইউ সেইড ইয়েস!দ্যাটস হুয়াই আমি নিজ থেকে হেল্প নিয়ে নিয়েছি।
থেমে গেল কয়েক সেকেন্ড, আবার বলল
“গত এক সপ্তাহ ধরে তুমি যে ঢং করছো সেই ঢং আমি আর দেখতে চাচ্ছি না। তাই ভালোয় ভালোয় বলছি আগে যেভাবে নরমালি চলাফেরা করতে সেভাবেই করবে।আর আজ কলেজে যাবে না। বিকেলের সময় এক জায়গায় বের হব। রেডি হয়ে থাকবে। আর আরেকটা কথা!হোয়ার ইজ ইয়র ফোন?
হুরের ও টনক নড়লো।সে ও জানে না তার ফোন কোথায়।তাই চোখ বিছানার ওপর রেখে ফোন খুঁজতে লাগলো। তবে দেখল না। হাত পা ব্যবহার করলে বোধ হয় ফোনটা বিছানাতেই পাওয়া যাবে।তাই সময় অপচয় না করে বিছানায় উঠে ফোন খুঁজতে লাগলো। কোণে থাকা বালিশের নিচে পাওয়া গেল। বিছানা থেকে নেমে রুদ্ধের মুখোমুখি আবার দাঁড়া হল। রুদ্ধ হাত বাড়িয়ে ফোন চাইলো। বিনা বাক্যে রুদ্ধের হাতে ফোন দিল হুর। সাথে সাথে রুদ্ধ ফোন আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলল।হতবিহ্বল হয়ে গেল হুর।দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল। চোখ বড় বড় করে রুদ্ধের দিকে তাকালো। তার কি এমন দোষে যে তার ফোনকে মৃত্যুদণ্ডর দিলতা জানতে ইচ্ছে হলো।সাধের ফোন নিজের চোখের সামনে চুরমার হতে দেখে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল তার কোমল হৃদয়।নেত্রকোনায় পানি জমে আসলো।সাদা টাইলসে চুরমার হয়ে যাওয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে জিজ্ঞেস করল।
“আপনি আমার ফোন কেন ভাঙলেন?
নির্বিকারভাবে উত্তর দিল রুদ্ধ।
“যে ফোনে আমার কল রিসিভ হবে না সে ফোন আমি আস্ত রাখবো না। একবার নয় দুইবার নয় বার বার আমি তোমায় কল করেছি,মেসেজ করেছি।কিন্তু তুমি!তুমি কি করলে? আমার কল রিসিভ করলে না আমার মেসেজের রিপ্লাই দিলে না।তাই আমিও ফোনকে জীবিত রাখলাম না।
ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিল হুর। ফোনটা তার ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠেছিল এই কয়দিনের মাঝে। আর এই ফোনটাই রুদ্ধ তার কাছ থেকে আলাদা করে দিল।কান্না থামার নাম নিচ্ছে না হুর।কান্না করতে করতে ফ্লোরে থাকা ফোনের কাছে গেল।ফ্লোর থেকে ফোনের টুকরো হাতে নিয়ে শব্দের তেজ ডুকরে উঠলো।কাঁদতে কাঁদতে বললো,
” কেন করলেন আপনি এমন?
উত্তর দিল না রুদ্ধ।ভাবলেশহীন ভাবে হুরের দিকে তাকিয়ে নিজ বক্তব্য দিল।
“রেডি থাকবে বিকেলে। এখন আমি ঘুমোতে যাচ্ছি, খুব ঘুম পাচ্ছে আমার।
রুম ত্যাগ করলো রুদ্ধ। এদিকে হুর ফ্লোরে বসে ফোনের টুকরো হাতে নিয়ে কাঁদতে লাগল। থামাথামির নাম নেই। হাজার কান্না করেও যে সে এখন তার প্রাণপ্রিয় ফোন পাবে না তা ভালো করে বুঝতে পারল।কিন্তু কান্না থামাচ্ছে না সে। থামাতে ইচ্ছে করছে না। ধারণা এই যে কান্না করলে মনের দুঃখ কেটে যাবে। তাইতো মূল্যবান অশ্রুকণা বিসর্জন দিচ্ছে সে। কান্না করতে করতে চোখ ব্যথা হয়ে গেছে। তারপরও কান্না থামছে না।কান্নারত অবস্থায় ফ্লোর থেকে উঠে বিছানায় বসলো। হাতের তালু দিয়ে বারবার গাল ঘষা দিচ্ছে।চোখের পানি মোছার বৃথা চেষ্টা। কারণ গালের পানি মোছার সাথে সাথে চোখ দিয়ে অনবরত আবার পানি পড়ছে।
বিকেলে…
স্কার্ট এর সাথে কুর্তি পড়েছে হুর। গলায় পেচিয়ে রেখেছে স্কার্ফ।সে এখন ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে।চেহারায় মলিনতার ছোঁয়া। কিছুক্ষণ আগে লিলি তাকে বলেছে রুদ্ধ তাকে রেডি হয়ে ড্রয়িং রুমে অপেক্ষা থাকতে। কথা অনুযায়ী সেও রেডি হয়ে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে। জেরিন বাটিতে করে হুরের জন্য দই নিয়ে এসেছে।দইয়ের বাটি টি টেবিলের ওপর রাখার পর দেখে হুর অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে। তাই জেরিন জিজ্ঞেস করে,
“কি হল তোমার মুখ লটকে আছে কেন?
মন খারাপের জগত থেকে বেরিয়ে আসলো হুর।জেরিনের মুখ লটকানো কথা শুনে ভীষণ রাগ হল। মুখ লটকানো তার দ্বারা সম্ভব না। এটা শুধু রুদ্ধই করতে পারে। তাই সে প্রতিবাদী স্বরে বলল,
“মুখ লটকিয়ে আমি থাকি না। মুখ লটকিয়ে থাকে তোমার ওই রুদ্ধ স্যার।
কিঞ্চিৎ হাসলো জেরিন।ফিসফিস করে বলল,
“আস্তে বল রুদ্ধ স্যার শুনতে পেলে তোমায় আস্ত রাখবে না।
তীক্ষ্ণ চোখে জেরিনের দিকে তাকায় হুর। বলে,
“শুনলে শুনবে!আমি কি ভয় পাই নাকি তাকে?
নিজের কথা শেষ করতেই পিছন থেকে শক্ত কণ্ঠ ভেসে আসে।
“ওহ রিয়েলি আমায় ভয় পাও না?
ধক করে উঠলো হুরের মন।মনে হয় কেউ কামড়ে ধরেছে। হঠাৎ ই ভীষণ ভয় হতে লাগলো। কিছু সেকেন্ড পূর্বের বলা কথা বিপরীতে পরিণত হচ্ছে। ভয় তাকে জেকে ধরেছে।ভয় ভয় মুখশ্রী নিয়ে পিছন ফিরে চাইলো সে।আখি পল্লবে ভেসে আসলো রুদ্ধের কঠিন চাহনি।হকচকিয়ে গেল হুর। বো’কা বো’কা হাসি দিয়ে বললো,
“আরে আপনি কখন এলেন?
শক্ত কণ্ঠস্বর রুদ্ধের,
“যখন তুমি আমার নামে গীবত গাইছিলে।
আমতা আমতা করতে লাগলো হুর।আড় চোখে জেরিনের দিকে তাকালো।ঠোঁট টিপে সে হাসছে।এতক্ষণের বাহাদুরি তার নিমিষেই শেষ হয়ে গেল।রুদ্ধকে ভয় পায় না বলে এখন সে ভেজা বিড়াল হয়ে গেল। বিষয়টা আসলেই লজ্জাজনক। সাফাই দেয়ার জন্য কোন কিছু বলার পূর্বেই রুদ্ধ আবার বলে।
“কাম উইথ মি!
হেঁটে সামনে যেতে লাগল রুদ্ধ। কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে হুর জরিনের দিকে তাকালো। নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে। হুরকে অসহায় অবস্থায় দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসলো জেরিন।উপহাস করে বলল,
“বিড়াল কখনো বাঘ হতে পারে না।
রাগে জেরিনের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে হুরের।
তবে এই মুহূর্তে জেরিনের চুল ছিঁড়তে গেলে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যাবে। আর এখন রুদ্ধের পিছে না গেলে রুদ্ধ তাকে চিবিয়ে খাবে।তাই চুল ছেড়ার প্ল্যানটা স্কিপ করল। রাগে জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে ফ্লোরে শব্দ করে বাহিরে চলে গেল।
রুদ্ধের গাড়ি থামল এক রেস্টুরেন্টের সামনে।রেস্টুরেন্টের বাহিরে গাড়ি থামতেই হুর প্রশ্নপত্র নিয়ে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে রইল। রুদ্ধ বুঝলেও হুরের প্রশ্নের উত্তর দিল না। দেয়া প্রয়োজন মনে করল না। বাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো দুজন। রেস্টুরেন্ট এর ভেতর এগিয়ে যেতে লাগলো রুদ্ধ ।পেছন পেছন গেল হুর ও। এবং প্রতিবারের মতো এবারও তাদের পিছে আসতে লাগলো গার্ড’স। হুর বুঝে উঠতে পারে না রুদ্ধ সবসময় গার্ড নিয়ে কেন থাকে। হয়তো নিজের টাকা ওয়েস্ট করার মতো কোনো উপায় পায় না। তাই গার্ডদের রেখে তার একাউন্টের টাকা কমায়। এমনটাই চিন্তাভাবনা হুরের। একটা টেবিলের সামনে আসতেই দেখল একটা ছেলে এবং একটা মেয়ে বসে আছে।মেয়েটির পাশে বসা ছেলেটিকে দেখে রুদ্ধের কুঁচকে এলো।গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করল,
“উনি কে? আর এখানে কি করছে?
মেয়েটি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে উত্তর দিল।
“হি ইজ মাই ইয়ঙ্গার ব্রাদার।
“এখানে আপনার একার আসার কথা ছিল!
মিইয়ে গেলো তার মুচকি হাসি।
“আসলে মিটিং শেষে আমাদের দুজনকে এক জায়গায় যেতে হবে।তাই আরকি…
আর কথা বাড়ালো না রুদ্ধ। হুরকে ইশারা করল চেয়ারে বসতে। হুর বসলো। হুরের পাশের চেয়ারে রুদ্ধ বসে পড়লো। কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আছে তার গার্ড। রেস্টুরেন্টের ভেতরে চোখ বুলিয়ে নিল হুর।শেষ প্রান্তে থাকা দুটি টেবিলে মানুষ ভর্তি। বাকি পুরো রেস্টুরেন্ট ফাঁকা। মূলত রুদ্ধ এখানে মিটিংয়ে আসবে বলেই রেস্টুরেন্ট পুরো ফাঁকা হয়ে আছে।চেয়ারে বসে রুদ্ধ বললো,
“সো মিস নেহা! কি বলতে চান আপনি?
নেহা রুদ্ধের পাশে বসা হুরের দিকে এতক্ষণ তাকিয়ে ছিল। রুদ্ধের কথায় তার ঘোর ভাঙ্গে। মেয়েটা সুন্দর। অত্যাধিক সুন্দর। মেয়ে হয়েও সে চোখ ফেরাতে পারছিল না। তাহলে ছেলেদের অবস্থা কি হবে তা ভেবেই গলা শুকিয়ে আসলো। জানতে ইচ্ছে হলো মেয়েটির রুদ্ধের কে।রুদ্ধের প্রশ্নের জবাব দিল সে।
“আপনার কোম্পানির সাথে আমার কোম্পানির অফার টা মঞ্জুর করে নিলে আমি খুবই খুশি হতাম।
সিরিয়াস হয়ে আসলো রুদ্ধের মুখশ্রী। বলল,
“আপনার কোম্পানির সাথে ডিলটা হয়ে গেলে আমি তেমন লাভবান হব কিনা তা সন্দেহ। কারণ আপনার কোম্পানির অবস্থা এখন খুবই খারাপ। যেখানে আমি অন্যান্য কোম্পানি থেকে ফিফটি পার্সেন্ট পাই সে জায়গায় আপনার কাছ থেকে আমি ৩০% ও পাবোনা। জেনে শুনে নিজের ক্ষতি করার মতো লোক আমি না। তাই আমার পিছে সময় অপচয় না করে অন্য কোম্পানির সাথে কথা বলুন।
বোঝানোর মত করে নেহা বলল,
“আমি মানছি আমার কোম্পানি দ্বারা আপনি তেমন লাভবান হবেন না।কিন্তু আপনার ক্ষতিও হবে না।আমার কোম্পানি কোন পর্যায়ে ছিল তা অবশ্য আপনার অজানা নয়।শুধুমাত্র এই ডিলটায় আপনি একটু স্যাক্রিফাইস করেন।পরবর্তী থেকে আপনি যত পারসেন্ট চাইবেন ততই পাবেন।
রুদ্ধ কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“আমি ভেবে দেখব।
“তো কি খাবেন বলুন?
রুদ্ধ অগ্নি শর্মা হয়ে নেহার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ নেহার ভাই হুরের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। বিষয়টা খেয়াল করলো নেহা।ঘাবড়ে গিয়ে নিজের ভাইকে কনুইদিয়ে গুতা মারলো।হকচকিয়ে হুরের দিক থেকে নজর সরালো আদনান।রুদ্ধ শীতল গলায় বললো,
“আপনাদের বোধহয় এক জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল।আপনারা সেখানে যেতে পারেন। অন্য একদিন না হয় সময় করে কিছু খাবো।
নেহা বোঝলো রুদ্ধ তাকে এখান থেকে যেতে বলছে। তাই সেও আর অপেক্ষা করলো না। ভাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল। নেহা আর আদনান যেতেই রুদ্ধ হুরের দিকে তাকালো। হুর শুরু থেকে শেষ অবদি দেখে গিয়েছে। যতটুকু বুঝেছে রুদ্ধএখানে মিটিং করতে এসেছে। কিন্তু মিটিংয়ে তাকে নিয়ে কেন এসেছে তা বুঝতে পারল না। জিজ্ঞেসও করলো না। রুদ্ধ হুরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কি খাবে?
হুর রেস্টুরেন্টের চারপাশ দেখতে দেখতে বলল।
“আমি এখন কিছুই খাবো না।
রুদ্ধ নিজেই মেনু কার্ড নিয়ে ওয়েটারকে ডাক দিয়ে কিছু খাবার অর্ডার করলো।টেবিলে খাবার আসতে গার্ডকে কিছু একটা ইশারা করলো। গার্ড তা বোঝে রুদ্ধের টেবিলের সামনে আসলো। সেখান থেকে একটা খালি প্লেটে সব খাবার থেকে একটু একটু নিলো। তারপর সেই ওয়েটারকে ডাক দিয়ে তাকে খেতে বলল। ওয়েটার হতভম্ব হয়ে গেল। কারণ এর আগে কখনো তার সাথে এমন হয়নি। কেউ খাবারের অর্ডার দিয়ে সে খাবার তাকে কেউ খেতে বলেনি। তাই বিস্ময় নিয়ে বলল,
” হু?
গার্ড বললো,
“স্যার এর অর্ডার,তাই এই খাবার আপনাকে খেতে হবে।
বিস্ময় নিয়ে খাবার খেলো ওয়েটার।ওয়েটার কে ঠিকঠাক দেখে রুদ্ধ স্যান্ডউইচ আর চিকেন উইংস হুরের দিকে এগিয়ে দিল।হুর নিজেও অবাক হয়েছে এমন কান্ডে।নিজের অর্ডার দেয়া খাবার ওয়েটারকে কে খেতে দেয় ভাই?
হুরকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্ধ রাশভারি কন্ঠে বললো,
” খাও।
সতর্কতা অবলম্বন করলো রুদ্ধ।এই রেস্টুরেন্টে প্রথমবার সে এসেছে। তাও নেহা এখানে আসতে বলেছে। তাই রিস্ক নিতে চায়নি সে। এখানের কাউকেই সে চিনে না। শত্রুপক্ষ দল ছায়ার মতো লেগে থাকে তার পিছে। তাই খাবারে সে সতর্ক হয়ে গেল। এমনিতেই তার চেনা পরিচিত রেস্টুরেন্ট এন্ড কফি শপে তার চেনা পরিচিত মানুষ আছে। তাই তখন খাবার চেক করতে হয় না। যেহেতু এটা নতুন জায়গা এবং হুর সাথে আছে তাই খাবার চেক করে নেয়াটা জরুরি মনে করল।
রেস্টুরেন্টে থেকে বের হয়ে রুদ্ধ এবং চলে আসলো একটি শপিংমলে।শপিংমলে কেন এসেছে হুরের এবার জানতে ইচ্ছে হলো।তাই নিজের মনে প্রশ্ন দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করল।
“আমরা শপিং মলে কেন এসেছি?
রুদ্ধের ত্যাড়ামো জবাব,
“ঘুমাতে ।
তীক্ষ্ণ চোখের রুদ্ধের দিকে তাকাল হুর।লোকটার কাছ থেকে যে সোজা উত্তর পাবে না তা সে ভুলেই বসে ছিল। একটা মানুষ কিভাবে এত ত্যাড়ামো করতে পারে তা বুঝতে পারে না হুর।সোজা জবাবের সোজা উত্তর দিলেই তো হয়।
শপিং মলের ভেতর প্রবেশ করে সামনের দিকে হেঁটে যাচ্ছে তারা।হুর কি মনে করে যেন পেছনে তাকালো। রুদ্ধের বডিবিল্ডারদের দেখা গেল। বিরক্তি ছেড়ে গেল সারা মুখশ্রীতে। বিরক্ত স্বরে রুদ্ধকে জিজ্ঞেস করল।
“আচ্ছা, আপনি কি কোন মার্ডারার বা অবৈধ কাজে লিপ্ত আছেন?
পা জোড়া থেমে গেল রুদ্ধের।হুরের মুখের দিকে তাকালো।চোখে মুখে লেগে আছে তার আগ্রহ।তার প্রশ্নের উত্তরের আগ্রহ।কপাল কুঁচকে রুদ্ধ বলে,
” মানে?
হুর পিছনে থাকা দুটি গার্ডকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিস করে বলে,
“মানে এই যে, আপনি সবসময় আপনার পিছে চামচিকাদের ঘুরান। নরমালি কোন মানুষকে দেখেছেন গার্ড রাখতে? যেহেতু আপনি গার্ড রেখেছেন, আপনার এত সিকিউরিটি, এতেই বোঝা যায় আপনি কোন মার্ডারার বা অবৈধ কাজে লিপ্ত আছেন। তাইতো জা’নের ভয়ে বডিগার্ড পুষে রেখেছেন।
চোখ মুখ খিচে দাঁড়িয়ে পড়ল রুদ্ধ। ইচ্ছে করছে হুরকে থাপড়িয়ে গাল লাল করে দিতে। কিন্তু শপিংমল হওয়ায় এমনটা করতে পারল না। তবে যে চুপ রইলো এমনটাও না।রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“আমি না কোন মার্ডারার আর না কোন অবৈধ কাজে লিপ্ত আছি। তবে গার্ড রাখতে হয় নিজের সিকিউরিটির জন্য। বিজনেস এর দরুন আমার শত্রুদের অভাব নেই। তাই নিজেকে সবসময় সতর্ক রাখি।
ভাবুক হয়ে হুর প্রশ্ন করলো,
“সত্যিই কি তাই?
হুর কে আর নিজের রাগ দেখালো না রুদ্ধ।শান্ত স্বরে বলল,
“আর একটাও যদি প্রশ্ন করো তাহলে গুলি করে তোমার মাথার খুলি উড়িয়ে দিব।
দমে গেল হুর। কথা বাড়ালো না। সামনে এগোতে লাগল রুদ্ধ। পা থামল বড় একটি মোবাইল শপের সামনে।দরজার বাহিরে থাকা একজন লোক দরজা খুলে দিল। ভেতরে প্রবেশ করল রুদ্ধ আর হুর।রুদ্ধকে দেখে একটা সেলসম্যান রুদ্ধের বলা ফোন বের করল। রুদ্ধ এখানে আসার আগেই জানিয়ে দিয়েছিল তার কি ফোন প্রয়োজন। সেলসম্যান রুদ্ধের সামনে ফোন এগিয়ে দিতেই হুর দেখল এটা হুবহু তার আগের ফোনের মত।রুদ্ধ ওলট পালট করে ফোন দেখে সেলসম্যান এর হাতে পুনরায় ফোন দিল।ফোন প্যাক করে দিল সেলসম্যান।রুদ্ধের হাতে দিলো। রুদ্ধ নিজের কার্ড দিয়ে বিলপে করে দিল। অতঃপর হুর কে নিয়ে শপ থেকে বের হল। হুর রুদ্ধের হাতে থাকা ব্যাগটির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আর সামনে হাঁটছে। রুদ্ধর নজর সামনের দিকে। একজন লোক তাড়াহুড়ার সহিত সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। রুদ্ধ হুর এবং লোকটার দিকে তাকালো।হুরের সামনের দিকে কোন খেয়াল নেই।লোকটা সামনে আসতে আসতে প্রায় অনেকটা কাছে চলে এসেছে। হুরের সাথে ধাক্কা লাগবে এমন সময় রুদ্ধ হুরের কব্জি ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।আকস্মিক ঘটনায় চমকে উঠল হুর।সাথে ভয়ও পেয়েছে।চোখে মুখে ভয় নিয়ে রুদ্ধের দিকে তাকালো ।সেই মুহূর্তে প্রদর্শন হলো রুদ্ধের কঠিন মুখ।হুরের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
“ধ্যান কোথায় থাকে তোমার?আরেকটু হলেই তো তার সাথে ধাক্কা খেতে।
হুরকে আরেকটু কাছে এনে হিসহিসিয়ে বলে,
“কোনো পুরুষের ছোয়া যেন তোমার শরীর না লাগে। তোমাকে ছোয়ার অধিকার শুরু আমার।যে কেউ ছুতে আসবে সে নিজের জা’ন হারাবে।
চলমান!
( বুঝিনা ফেসবুক দাতার সাথে কি এমন আমার শত্রুতা আছে, যে বার বার আমারে উষ্ঠা মাইরা ফেসবুক থেইক্কা ফালায় দেয়। ওহে ফেসবুক রে! শান্তি মতো আমারে গল্প আপলোড করতে দে রে।)