#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-২৫
#লেখনীতো-আসমিতা আক্তার ( পাখি )
রুদ্ধের বুকে থুতনি ঠেকিয়ে চোখে জল নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে হুর। অপেক্ষা রুদ্ধের উত্তরের।রুদ্ধ কোন কথা বলছে না ।এক মনে হুরকে দেখে যাচ্ছে। হুর ও রুদ্ধের শুকিয়ে যাওয়া ওষ্ঠের দিকে তাকিয়ে আছে।হুরের দিকে তাকিয়ে আকস্মিক রুদ্ধ বলে,
“পিপাসা পেয়েছে হুরপাখি..
সাথে সাথে রুদ্ধের ওষ্ঠ থেকে চোখ সরিয়ে নেয় হুর।আশেপাশে তালাশ করে পানির। কিন্তু কোন জায়গায় দেখা মিলে না। তাই সে নিজেকে রুদ্ধের বাহুডোর থেকে ছাড়াতে চায়। রুদ্ধ তাকে ছাড়ে না দেখে হুর বলে,
“ছাড়ুন.. আমি বাহির থেকে পানি নিয়ে আসছি।
“আমার পানির পিপাসা পায়নি।
ভ্রু কুচকে রুদ্ধের দিকে তাকালো হুর।মিলাতে চেষ্টা করল রুদ্ধের কথা। প্রথমে বলল পিপাসা পেয়েছে। পানি দিতে চাইলে বলছে পানির পিপাসা পায়নি। পানির পিপাসা ছাড়া তাহলে কিসের পিপাসা লাগে মানুষের?বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল,
“পানির পিপাসা পায়নি মানে?তাহলে কিসের পিপাসা পেয়েছে?
রুদ্ধের নজর এখনো হুরের ওষ্ঠের দিকে।রুদ্ধ ইশারা দিয়ে বুঝালো তার কিসের তৃষ্ণা পেয়েছে।হুর বুঝে আমতা আমতা করে বলল,
“দেখুন, আপনার অবস্থান এখন হাজতে। আপনার শরীরও ভীষণ দুর্বল।তাই এখন এ-সব…
হুরকে শেষ করতে না দিয়ে রুদ্ধ বলে,
” কিস দিলে দুর্বলতা কমে আসবে।গ্লুকোজ এর মতো কাজ করবে।
হতভম্ব হুর।মানুষ হাজতে থেকে যে এমন অশ্লীল কথা বলতে পারে তা জানা ছিল না। কিস নাকি গ্লুকোজ এর মতো কাজ করে!এটা কোনো কথা হলো!হুরের নিজেরও এতক্ষন ইচ্ছে জাগছিল রুদ্ধের নীরস ওষ্ঠে নিজ ওষ্ঠ দ্বারা ভিজিয়ে দিতে।কিন্তু রুদ্ধ কি ভাববে তা নিয়ে আর আগ্রহ পোষণ করেনি সে।এখন যেহেতু রুদ্ধ নিজেই আগ্রহ পোষণ করছে সে ক্ষেত্রে হুর ও আর সময় ব্যয় করেনি।দু পায়ের পাতায় ভর করে উঁচু হওয়ার চেষ্টা করল। একটু হয়েও গেল। কোমর আঁকড়ে ধরে হুরকে সাহায্য করলো রুদ্ধ।রুদ্ধের দু কাঁধের পিছনে হাত রাখল।কাঁপা ওষ্ঠ নিয়ে রুদ্ধের ওষ্ঠের দিকে এগিয়ে দিল।চোখ বন্ধ করে আছে। খুব লজ্জা লাগছে তার। তাইতো রুদ্ধের ওষ্ঠের সাথে নিজের ওষ্ঠ মেলাতে সাহস পাচ্ছে না। তা বুঝে রুদ্ধ নিজেই হুরের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করল।
কিছুক্ষণ পর হুরের ওষ্ঠ থেকে নিজের ওষ্ঠ সরাল রুদ্ধ।হুরের উসকো খুসকো চুল ঠিক করতে করতে বলল।
“ইমতিয়াজকে বলো বেইল করাতে!
ঠোঁট চওড়া করে হাসলো হুর।ভীষণ আনন্দ লাগছে তার।রুদ্ধর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ছুট লাগালো বাহিরে।উল্লাসিত হয় ইমতিয়াজের কথাটা জানাতেই ইমতিয়াজ ও আনন্দিত হল। সে আসার পথেই উকিল কে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল পুলিশ স্টেশনে আসার জন্য।কারণ সে জানত হুর রুদ্ধের সাথে দেখা করার পর আর হাজতে থাকতে চাইবে না। তাই সব ব্যবস্থা আগে করে রেখেছিল।উকিল সব পেপার’স দেখিয়ে রুদ্ধকে ছাড়িয়ে নিল।গাড়ির পিছন সিটে রুদ্ধ আর হুর বসে আছে।রুদ্ধের মুখভঙ্গি দুর্বল থাকলেও হুরের করুন হয়ে আছে।বারবার আড়চোখে রুদ্ধের দিকে তাকাচ্ছে।রুদ্ধর চোখ বন্ধ। তবুও সে টের পাচ্ছে যে,হুর তার দিকে তাকিয়ে আছে।ফ্রন্ট সিটে ড্রাইভার আর ইমতিয়াজ বসে আছে।ইমতিয়াজ পিছন ঘুরে এক পলক রুদ্ধের দিকে তাকালো।ড্রাইভার কে বললো,
” গাড়ি হসপিটালে ঘুরান।
সাথে সাথে রুদ্ধ বলে,
“হসপিটালে না,কাজী অফিসের দিকে নিয়ে যান।
চকিত হয়ে ইমতিয়াজ আর হুর রুদ্ধের দিকে তাকায়৷ইমতিয়াজ, হুর চকিত হয়ে একত্রে প্রশ্ন করে,
“কাজী অফিসে কেন?
রুদ্ধের স্বাভাবিক উত্তর,
“বিয়ে করতে।
ইমতিয়াজ আর হুর একে অপরের দিকে তাকালো।ইমতিয়াজ জিজ্ঞেস করলো,
” বিয়ে করতে মানে?কাকে বিয়ে করবে?
স্বাভাবিক রুদ্ধ তীক্ষ্ণ চোখে তাকায়।দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
“তোর ভাবিকে।
ব্যস,মুখ বন্ধ হয়ে যায় ইমতিয়াজ এর।তবে হুর বিস্ময় নিয়ে তাকায় রুদ্ধের দিকে।ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলে,
“ইমতিয়াজ ভাইয়ার ভাবিকে করবেন মানে?মানে আমাকে?
হুরের কথার উওর দেয় না রুদ্ধ। ইমতিয়াজ এর উদ্দেশ্যে বলে,
“সব পেপার’স রেডি করে রেখো!
ইন কাজী অফিস…
কাজীর মুখোমুখি হয়ে বসে আছে হুর আর রুদ্ধ।কাজী ইতিমধ্যে বিয়ে পড়ানোও শুরু করে দিয়েছে।হুর ভ্যাবলার মতো শুধু তাকিয়ে আছে।রুদ্ধের মাথায় হঠাৎ বিয়ের ভূত কিভাবে চেপে বসেছে তাই ভাবছে।দেখতে দেখতে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেল।ঘোরের মধ্যে আছে হুর। ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছে না।
সন্ধ্যা শেষে রাতের আগমন। গাড়ি এসে থামল রুদ্ধ ম্যানশনে। প্রতিবারের মতো এবারও গার্ড গাড়ির দরজা খুলে দিল।নেমে পড়ল সবাই। রুদ্ধ আর হুরের সাথে ইমতিয়াজ ও এসেছে।মেইন ডোর অতিক্রম করে ড্রইংরুমে আসতে দেখলো লিলি আর জেরিন সোফায় বসে আছে।হুর কে দেখে তড়িৎ গতিতে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। দৌড়ে হুরের কাছে আসলো।জেরিন উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলল,
“তুমি এসেছ হুর?জানো কত মিস করেছি?কোথায় ছিলে এতদিন?
জেরিনের প্রশ্ন শেষ হতে না হতে লিলি প্রশ্ন করে।
“এতদিনে একটা কলও অব্দি দাওনি। এতদিন কই ছিলে বলতো? একটিবারও কি আমাদের কথা মনে পড়েনি?
বিপাকে পড়ে গেল হুর। এসব প্রশ্নের জবাব তার কাছে থাকলেও দিতে মন চাইছে না। কারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলেই আবারো নিজেকে দোষী মনে করতে হবে।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ইমতিয়াজ বলে।
“এসব কথা তোমরা পরে বলবে। এখন দুজনকে রেস্ট নিতে দাও।রুদ্ধ ভাইয়া অনেক ক্লান্ত আছেন।কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার আসবেন। তাকে রুদ্ধ ভাইয়ের রুমে পাঠিয়ে দিবে।
দুর্বল শরীর টেনে টেনে রুদ্ধ নিজের রুমে আসলো। ইমতিয়াজ তাকে ধরতে চেয়েছিল।কিন্তু রুদ্ধ ধরতে দেয়নি।সে নাকি একাই যেতে পারবে। তাই ইমতিয়াজ আর তাকে ধরেনি। রুদ্ধের ক্লান্ত,দুর্বল শরীর দেখে হুরের বুকে চিনচিন ব্যথা উঠছে। আজ তার জন্য রুদ্ধের এই পরিস্থিতি। রুদ্ধের এই অবস্থা যতই দেখছে ততই নিজেকে দোষারোপ করছে। চোখের কোনে আবারও পানি জড়ো হলো। চোখে পানি নিয়েই রুদ্ধের দিকে এগিয়ে গেল। রুদ্ধের এক হাত নিজের কাঁধে রাখলো। হুর তার এক হাতের রুদ্ধের পিঠে এবং এক হাত কোমড়ে ঠেকালো।
রুদ্ধের পা জোড়া থেমে গেল। হুরের দিকে তাকালো। মাথা নিচু করে আছে হুর। যেন বড় মাপের এক অপরাধ করেছে। আসলেই তো সে অপরাধ করেছে। অপরাধ না করলে তো আর এভাবে মাথা নিচু করে থাকত না।রুদ্ধকে থেমে যেতে দেখে হুর মাথা নিচু করে কাঁপা স্বরে বলল।
“চলুন!
কথা না বাড়িয়ে হুরের সাহায্যে নিজের রুমে আসলো সে। সাথে সাথে রুমের মধ্যে ডাক্তার হাজির। পিছনে এসেছে ইমতিয়াজ ও। বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে রুদ্ধ। ডাক্তার প্রথমের রুদ্ধকে স্ক্যান করল। তারপর শরীর থেকে টি শার্ট খুলে ফেলতে বলল। টি-শার্ট নামিয়ে দিল রুদ্ধ। ডাক্তার তুলোতে সেভলন মাখিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে দিল। চিকিৎসা সম্পূর্ণ করে কাগজে কয়েকটি ওষুধের নাম লিখে ইমতিয়াজের হাতে দিল। বলল,
“টাইম টু টাইম এইসব ওষুধ খাওয়াবেন। দুদিনের মধ্যেই ব্যথা কমে যাবে। আর মলম প্রতিনিয়ত লাগাবেন। তাহলে শরীরের কালশিটে দাগ চলে যাবে।
ডাক্তারের সাথে ইমতিয়াজও বের হয়ে গেল। মূলত সে ওষুধ আনতে গিয়েছে।রুদ্ধের পায়ের কাছে বসে নিঃশব্দে কান্না করছে হুর। রুদ্ধের উদম গায়ে মোটা লাঠির দাগ স্পষ্ট ভাবে কালচে রং ধারণ করেছে। সাদা ফর্সা শরীরে দাগ গুলো দেখতে বড্ড বেমানান লাগছে। নিষ্পলক ভাবে হুরের কান্না দেখছে রুদ্ধ। মেয়েটাকে কান্না করতে দেখলে যেমন তার মনপুড়ে, সেভাবে হুরের কান্নারত চেহারা তাকে আরও বেশি আকৃষ্ট করে। এই যেমন এখন করছে!হুরকে দেখছে আর অবাক হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে তার বিয়ে হয়েছে। সদ্য বিবাহিত পুরুষ সে। এবং তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী তার পায়ের কাছে বসে বসে কান্না করছে। যদিও জানে সে তারই কষ্টে কান্না পাচ্ছে।
রুদ্ধ ভাবে নি হুরকে সে আজ বিয়ে করবে। কিন্তু মন মানে নি। মন বলেছে এখন বিয়ে করতে না পারলে সামনে আরো সংকটে পড়তে হবে। তাই সে এখনই শ্রেয় মনে করেছে বিয়ে করে নেয়াটা।
হুরের কান্না বন্ধ করার জন্য কিছু বলার পূর্বে রুমে আগমন ঘটে জেরিনের।পিছনে আসছে লিলিও।দুজনের হাতে খাবারের ট্রে। সোফার সামনে থাকা সেন্টার টেবিলে দুজন খাবারের ট্রে রাখল।লিলি এবং জেরিন দুজনের মধ্যে একজন চোখ তুলে রুদ্ধের দিকে তাকায়নি। রুদ্ধ সেই সুযোগে নিজের গায়ে পাতলা চাদর জড়িয়ে নেয়।জেরিন রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে নিম্ন স্বরে বলে,
“স্যার আপনার জন্য হালকা কিছু খাবার এনেছি। খাবারের পর আপনাকে ঔষধও খেতে হবে। তাই ইমতিয়াজ স্যার বলেছেন তিনি আসার পূর্বেই যেন আপনি খাবার খেয়ে নেন।
রুদ্ধ তার মুখ থেকে শুধু একটা শব্দই বের করল।
” গো!
জেরিন আর লিলি যেতেই হুর বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সেন্টার টেবিলে থাকা খাবারের ট্রে বিছানায় রাখে।বাটির উপর থেকে ঢাকনা সরায়। ভেজিটেবল স্যুপ। ট্রে থেকে চামচ নিয়ে স্যুপ ভালোভাবে নেড়ে নেয়। ধোঁয়া ওঠা গরম সুপ। চামচে একটু স্যুপ নিয়ে ফু দিতে থাকে হুর। যখন মনে হলো খুব ঠান্ডা হয়েছে তখন রুদ্ধের মুখে সামনে ধরে।রুদ্ধ এখনো হুরের দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেভাবে তাকিয়ে থেকেই মুখে স্যুপ নেয়।অতিরিক্ত কান্না করার ফলে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে হুরের। দেখতে বড্ড লোভনীয় লাগছে। রুদ্ধ হুরের লাল হয়ে যাওয়া গাল এবং নাক দেখছে। চোখ গেল ঠোঁটেও। বারবার দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরার কারনে কিছুটা ফুলে উঠেছে।রুদ্ধ সেদিকেই তাকিয়ে আছে। হুর নাক টেনে টেনে রুদ্ধকে খাওয়াচ্ছে।
স্যুপ খাওয়ানো শেষ হয়ে গেলে হুর ট্রে থেকে ফ্রুটস নেয়।তবে রুদ্ধ খায় না।খিচুড়ি ও আনা হয়েছে। রুদ্ধ হুরকে খিচুড়ি খেতে বলে।হুর খেতে না চাইলে রুদ্ধ তার কঠিন বাণী বলে,
“আমার কাছে থাকতে হলে এক্ষুনি খাবার খাও।না,হলে রুম থেকে বের করে দিব।
মুখ ফোলালো হুর। ভেংচি ও কাটলো। রুদ্ধ দেখেও দেখলো না।হুর খিচুড়ি খেয়ে নিল। পুরো খেল না। খিচুড়ি তার প্রিয় খাবারের তালিকায় পড়ে না। তাই অল্প খেল।
ইমতিয়াজ ঔষধ নিয়ে হাজির হলো। হুরকে বুঝিয়ে বলল, কখন কোনটা খেতে হবে। মনোযোগী হয়ে হুর মাথায় গেথে নিল।ইমতিয়াজ একবার রুদ্ধকে পর্যবেক্ষণ করে চলে গেল।হুর প্যাকেট থেকে মেডিসিন বের করে প্রেসক্রিপশন দেখতে লাগল।তিনটা ঔষধ এর পাতা থেকে তিনটি ট্যাবলেট নিয়ে রুদ্ধের হাতে দিল। রুদ্ধও খেয়ে নিল।
“আপনার শরীর অনেক দুর্বল। এখন আপনার ঘুমানো উচিত। জলদি ঘুমিয়ে পড়ুন!
রুদ্ধ একধ্যানে হুরের দিকে তাকিয়ে আছে ।সেভাবে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি ঘুমাবেনা?
হুর ড্রয়ের ভেতরে মেডিসিন রাস্তায় রাখতে রাখতে বলল,
“হ্যাঁ, আমিও ঘুমাতে যাচ্ছি।
“কোথায়?
হুর এবার ভ্রু কুচকে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে বলল।
“কোথায় মানে আবার কি? অবশ্যই আমার রুমে।
বিছানায় গা এলিয়ে দিল রুদ্ধ ।স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল,
“বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীরা এক রুমে থাকে। নিয়মমাফিক দু ঘন্টা পূর্বে তোমায় শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে করেছি। এখন তুমি আমার বউ। তাই এখন থেকে আমার রুমেই থাকবে। আমার বিছানায় ঘুমাবে।
হকচকাল হুর। কয়েক মুহূর্তের জন্য সে ভুলে গিয়েছিল যে কিছুক্ষণ আগেই তার এবং রুদ্ধের বিয়ে হয়েছিল। যদিও বিয়ের সময় রুদ্ধ হুরের কাছ থেকে মতামত নেয়নি। হয়তো প্রয়োজন মনে করেনি। তবে হুর যে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছে এমনটাও না। রুদ্ধের এহেন কথায় হুরের সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল।নিম্ন স্বরে কিছু বলতে চাইলো। তার পূর্বেই রুদ্ধ বলল,
“এক্সকিউজ দিতে হলে লজিক দিয়ে বলবে। আর এমন তো না যে তুমি এই প্রথম আমার সাথে শুইবে। বিয়ের আগেও তুমি আমার সাথে রাত কাটিয়েছ। আই মিন এক বিছানায় ঘুমিয়েছো। যদিও বিয়ের আগের এবং পরের ব্যাপারটা খুবই ভিন্ন।তখন কিছু হলেও অনেক কিছু হয়নি। পরবর্তীতে যে কিছু হবে না তার গ্যারান্টি দিতে পারছি না।
তব্দা মেরে দাঁড়িয়ে রইলো হুর। কণ্ঠনালী শূন্য হয়ে গেল।শুকিয়ে যাওয়া কণ্ঠে বললো,
“আমার ফ্রেশ হওয়া জরুরী।
“তোমার রুম থেকে কাপড় নিয়ে এখানে ফ্রেশ হও। আর কাল জেরিনকে বলে দিবে তোমার রুমের প্রয়োজনীয় জিনিস আমার রুমে শিফট করতে।
অস্পষ্ট স্বরে হুর বলে,
” আচ্ছা।
নিজের রুমে চলে যায় হুর। সেখান থেকে একটি লম্বা টি-শার্ট আর প্লাজো নিয়ে আসে। রুদ্ধের ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়। কয়েকবার রুদ্ধের রুমে আসলেও তার ওয়াশরুমে কখনো আসা হয়নি তার। তবে ধারণা করেছিল ওয়াশরুমটা বেশ সুন্দর হবে। ধারণা সত্যি হলো। কল্পনায় যেমনটা কল্পিত করেছিল তার থেকে দ্বিগুণ সুন্দর এই ওয়াশরুম। এমন ওয়াশরুম দেখলে যে কেউই এই ওয়াশরুমের মধ্যে দিনরাত কাটিয়ে দিতে পারবে।ওয়াশ রুমের মধ্যে প্রবেশ করতেই প্রথমে নজর এলো ডান পাশে থাকা বড় আয়নাদের দিকে।ড্রেসিং টেবিলে যেমন আয়না থাকে এবং সামনে তাক সিস্টেম থাকে এটাও সেভাবে বানানো।প্রয়োজনীয় শেম্পু, সাবান, তেল আরো কিছু জিনিস রাখা আছে ।যা হুর আইডিয়া করতে পারছে না। ওয়াশরুমটি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত করা।এক পাশে কমোড বসানো।আরেক পাশে শাওয়ার এর ব্যবস্থা। মাঝে কাচের দেয়াল। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো কোনটার মধ্যেই দরজা নেই। তবে পর্দা ঘেরা।
আলিশান একটি ওয়াশরুম দেখে হুরের মন ভরে উঠলো। ইচ্ছে করছে ঘন্টার পর ঘন্টা এখানেই সময় কাটিয়ে দিতে। কিন্তু আজ এই ইচ্ছেকে বলিদান দিতে হবে। কারণ তার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে। তাই দ্রুত ফ্রেশ হয়ে কাপড় চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখলো রুদ্ধের চোখ বন্ধ। হুর শান্ত হয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মনে মনে আল্লাহকে শুকরিয়া জানালো যে রুদ্ধ ঘুমিয়ে গেছে।
তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে রুমের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে হুর।গভীর চিন্তায় সে মগ্ন। কোথায় ঘুমাবে তা ভেবে পাচ্ছে না।সোফার দিকে নজর পড়তেই বিশ্বজয়ের হাসি দিল। সোফার দিকে পা বাড়াতে নিলেই গম্ভীর কন্ঠ কর্নকুহরে প্রবেশ করে।
“লাইট নিভিয়ে বিছানায় আসো।
হঠাৎ রুদ্ধের কথা শুনে হকচকিয়ে গেল হুর।পিছন ঘুরে দেখে রুদ্ধের চোখ এখনো বন্ধ। হুর বুঝে গেল রুদ্ধ ঘুমানোর ভান করছে। হুরের মুখশ্রী করুন হয়ে আসলো। কাঁপুনি দিয়ে উঠলো শরীর। দাঁড়ানোর শক্তি টুকু ও পাচ্ছে না। এলোমেলো পা ফেলে সুইচ বোর্ডের কাছে গিয়ে বাতি বন্ধ করে ডিম বাতি জ্বালিয়ে দিল।হুরকে ডিম বাতি জ্বালাতে দেখে রুদ্ধ পুনরায় বলে,
“ডিম লাইট বন্ধ করে ফেইরি লাইট চালাও।
হুর যতদূর জানে রুদ্ধের রুমে কোন ফেইরি লাইট নেই। তাহলে রুদ্ধ কেন ফেইরি লাইট জ্বালাতে বলছে তাই ভাবনার বিষয়। রুদ্ধ যেহেতু বলেছে ফেইরি লাইট জ্বালাতে তাহলে অবশ্য রুমে ফেইরি লাইট লাগানো আছে। তাই এক এক করে সব সুইচ চাপতে লাগল সে। কারণ সে ফেইরি লাইটের সুইচ জানেনা। পরপর কয়েকটা সুইচ টিপার পর ফেইরি লাইট জ্বলে উঠলো।
ফেইরি লাইট জ্বালানোর সাথে সাথে ঝলমলে হয়ে গেল সারা রুম। দেখতে খুব মোহনীয় লাগছে। বড় থাই জানালার পর্দায় ফেইরি লাইট লাগানো। মাঝে কয়েকটা প্রজাপতি ডিজাইন লাইট ও আছে। হুর আর একটি জিনিস খেয়াল করল। এতদিন রুদ্ধের খাটে পর্দা ছিলনা।কিন্তু আজ আছে। পর্দা গুলো এখন মোড়ানো। তাই হয়তো সে খেয়াল করেনি। ধরা যায় চারদিক থেকেই পর্দা ঘেরানো। উপরের অংশতেও। এবং উপরের অংশেও ফেইরি লাইট লাগানো আছে। সেখানে সবগুলো ফেইরি লাইট প্রজাপতি ডিজাইনের।পর্দার রং বেগুনি কালার বিদায় সাদা কালার সব ফেইরি লাইট ও ফুটে উঠেছে। চারোদিক জ্বল জ্বল করছে।
হুর আর নিজেকে সামলাতে না পেরে দ্রুত রুদ্ধের খাটে উঠে পড়ল। রুদ্ধের অপর পাশে গিয়ে বসলো। মুখ হা করে ফেইরি লাইট দেখতে লাগলো।রুদ্ধ খাটের চারদিকে ঘেরা পর্দার রশি ধরে টান মারলো। সাথে সাথে ঝর ঝর করে সিল্কি পর্দা গুলো খুলে গেল ।ঢেকে গেল পুরোটা খাট।
উপরের দিকে তাকিয়ে থেকে রুদ্ধের দিকে তাকানো হুর। দেখলো তার চোখ বন্ধ। মনে করল দুর্বলতার কারণে ঘুমিয়ে গেছে। তাই সেও মাঝে দূরত্ব রেখে খাটের কিনারা ঘেঁসে শুয়ে পড়ল। মাঝে একটা বালিশও রাখল ।কারণ তার বালিশ রেখে শোয়ার অভ্যেস। যদিও এক সাইডে বালিশ রাখেনি। কারণ রুদ্ধের রুমে তেমন বালিশ নেই। গুনে গুনে তিনটে বালিশ তার বিছানায় পাওয়া যায়।
ফেইরি লাইটের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় সেও চোখ বন্ধ করে ফেলে। প্রচুর ঘুমের কারণে চোখ মেলে রাখতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর নিজের শরীরে কারো অস্তিত্ব টের পেল। ঝাকুনি দিয়ে উঠলো সমস্ত শরীর। খানিক কেঁপে উঠলো। সাথে সাথে আখি পল্লব খুলে ফেলল। দেখল রুদ্ধ তার ওপর শুয়ে আছে। তার বুকে মুখ গুজে আছে।রুদ্ধ তার দুই হাতের হুরের পিঠ গলিয়ে হুরকে জাপটে ধরতে চাইল।হুরের নরম তুলতুলে পিঠের তলে তার শক্তপোক্ত হাতে দেবেও গেল।
হুর নিজের নিঃশ্বাস আটকে শক্ত শক্ত হয়ে শুয়ে রইল। চোখ স্থির হয়ে আছে উপরের দিকে।তখনই ভেসে আসলো রুদ্ধের মোহনীয় কন্ঠ।
“বউ…
বুক ঢিপঢিপ করছে হুরের।বউ!শব্দটি রুদ্ধের মুখে বড়ই মধুর শোনালো। কোন একদিন যে সে রুদ্ধের বউ হবে তা কি সে কখনো কল্পনা করেছিল?উহু,একদমই না।এই গম্ভীর পুরুষালী কণ্ঠের ব্যক্তিকে যে সে এত করে চাইবে তা কি কখনো কল্পনা করেছিল?সে কখনো কল্পনা করতে পারেনি যে রুদ্ধের সাথে তার এমন বন্ধন হবে। রুদ্ধের সাথে এমন একটি বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছে যে এখন এক মুহূর্ত ও রুদ্ধকে ছাড়া তার চলবে না। আটকে রাখা নিঃশ্বাস ধীরে ধীরে নিতে লাগলো। তবে বুকের ঢিপঢিপ শব্দ কমার বয় বাড়ছে। হুরের বেগতিক হৃদয়ের স্পন্দন শুনে রুদ্ধ আবার বলে।
” ও বউ…
চোখ খিচে দুহাত দিয়ে রুদ্ধের পিঠ খামচে ধরে সে।জ্বলে উঠল রুদ্ধের পিঠ । শরীরের ক্ষত এখনো বহুৎ কাঁচা। তবুও সে মুখ থেকে উ’ফ পর্যন্ত শব্দ বের করল না। হুরের বু’ক থেকে মুখ উঠিয়ে উন্মুক্ত গলায় নিজের অধর ছোঁয়ালো। নিজেও নড়লো না নিজের অধর ও সরালো না। রুদ্ধের মোহনীয় ডাকে সাড়া না দিয়ে পারল না হুর।ভেঙ্গে যাওয়া কন্ঠে বলল,
“হুম
রুদ্ধ হুরের গলায় ঠোঁট ছোঁয়া অবস্থাতে বলল,
“নিয়ম অনুসারে আজ আমাদের বাসর রাত। তাই না?
( একটু বড় করে দিলাম।ভেবেছিলাম কাল দিব। পরমুহূর্তে ভাবলাম যতটুকু লিখেছি তাই পোস্ট করে দেই।)