#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-৪
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )
খাবার শেষ করে জেরিনের সাহায্যে রুমে আসে হুর।জেরিন ঔষধ বের করে হুরের হাতে দিতে সেটা নাক মুখ কুঁচকে খেয়ে নেয়।ঔষধ এর সাথে তার চরম দুশমনি।খাদ্যনানীতে ঔষধ প্রবেশ করতেই গা গুলিয়ে আসে তার। কিন্তু প্রতিবন্ধী থেকে সুস্থ সবল মানুষ হতে গেলে তাকে সুস্থ হতে হবে। যা একমাত্র ওষুধই তাকে সুস্থ করতে পারবে। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে ঔষধ সেবন করতে হচ্ছে। জেরিন হুরকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে বলল ঘুমিয়ে পড়তে। কিন্তু হুরের তো এখন ঘুম আসছে না। বিকেলের সময় বেশি ঘুমানোর কারণে এখন জলদি চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না।হুর জেরিনের দিকে অসহায় চোখে বলল।
“আমার ঘুম আসছে না আপু।একা একা খুবই বোরিং লাগছে আমার।তুমি আমার পাশে বসো আমার সাথে একটু গল্প করো।এভাবে পঙ্গু হয়ে থাকতে আমার আর ভালো লাগছে না।
কাঁদো কাঁদো হয়ে আসলো হুরের মুখশ্রী।হুরের এমন চেহারা দেখে মনে মনে ভীষণ হাসলো জেরিন।মেয়েটার কথাবার্তা শুনে মনে হয় মেয়েটা আসলে খুবই চঞ্চল। কিন্তু কষ্টের মাঝে চঞ্চলতা দেবে গেছে।জেরিন মুচকি হেসে খাটের এক কোনায় বসে হুরের সাথে গল্প জুড়ে দিল।হুরও নিজের চঞ্চলতাকে দমিয়ে রাখতে না পেরে ননস্টপ কথা বলে যাচ্ছে।বিস্মিত হয়ে হুরের দিকে তাকিয়ে আছে জেরিন। মেয়েটাকে যতই দেখে জেরিনের ততই ভালো লাগে।প্রানচ্ছন্দ হয়ে কথা বলছে মেয়েটা।ছোটকালে করা দুষ্টামি,বান্ধবীদের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু স্মৃতি,এবং কি মা-বাবার সাথে তার সম্পর্কটা ঠিক কেমন ছিল সবকিছু উল্লেখ করে করে জেরিনকে এসব বলছে।হুরের এমন চঞ্চলতা স্বভাব দেখে জেরিনের হুরের প্রতি ভালো লাগা আরেক ধাপ এগিয়ে গেল।হেসে হেসে কথা বলার সময় হুরের এক গালে টোল পরে।তবে বেশি না সামান্য।হেসে কথা বললে এবং হাসলে শুধু টোল নজর পড়ে। তাছাড়া স্বাভাবিকভাবে কথা বললে নজরে আসে না।হুরের হাসি দেখে জেরিনেরও হাসি পাচ্ছে।মূলত তার কথা বলার স্টাইল এবং ঘটে যাওয়া সব কথা শুনেই তার হাসি পাচ্ছে।কথা বলার মাঝে হুর জেরিনকে জিজ্ঞেস করে।
“তোমার পরিবারে কে কে আছে আপু ?
বিষন্নতায় ছেয়ে গেল জেরিনের সারা মুখ।বুকের মাঝে হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা হানা দিল।ব্যথাতুর নয়নে হুরের দিকে তাকিয়ে নিম্ন স্বরে বলল।
“আমি আর আমার মা।
কথার মাঝেও যেন ব্যাথা লুকিয়ে ছিল জেরিনের।হুর জেরিনের ব্যথা কিছুটা আঁচ করতে পারল।কিন্তু মা ছাড়া কি এই পৃথিবীতে তার আর কেউ নেই জিজ্ঞেস করতে ভীষণ ইচ্ছে করছে হুরের।ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিলে হুর। জিজ্ঞেস করল,
“আর কেউ নেই ?
নেত্রকোনায় পানি ভরাট হয়ে আসলো জেরিনের।শুষ্ক এক ঢোক গিলে বলতে লাগলো।
“বাবা, মা, ভাই এবং আমি নিয়ে ছোট্ট একটি পরিবার ছিল আমাদের।ভাইয়া ছিল আমার থেকে বড়।তিন বছর আগে তার বিয়ে হয়। প্রেমের বিয়ে!প্রথম প্রথম ভাবি আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করলেও বিয়ের কয়েক মাস পর আমাদের সাথে রুডলি ব্যবহার করতে থাকে।বাসার কাজ নিজে কিছু করত না কিন্তু আমার মাকে খাটিয়ে খাটিয়ে সব কাজ করাতো।আমার বাবা ছিলেন তখন প্যারালাইজড রোগী।বিছানায় ই তার সকাল, বিকেল, রাত কাটতো।আমি চলে যেতাম ভার্সিটিতে আর ভাইয়া থাকতো অফিসে।তাই এই সুযোগে আমার মাকে ইচ্ছেমতো খাটাতো।তার ধারণা তার স্বামীর টাকাতে আমরা খাচ্ছি পড়ছি ।তাই সে ফ্রিতে আমাদের খাওয়াবে না।সে কারণেই মাকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করায়।মাও আমার ছিল খুবই সরল সহজ। তাইতো কোন কিছুর প্রতিবাদ না করে দিনের পর দিন ছেলের বউয়ের কথা মান্য করত।মায়ের কাজ করার মাঝেও একটা স্বার্থ ছিল।সেটা ছিল বাবার ঔষুধের টাকা। ভাবি সাফ সাফ বলে দিয়েছিলেন সে যদি বাড়ির কাজ না করে তাহলে বাবার ঔষুধের টাকা সে দিবে না। এমন কোন কিছু করবে যেন সংসারে অশান্তি আসে আর বাবার ওষুধের টাকা দেয়া বন্ধ করে দিবে।ভাবীর এরূপ কথা শুনে মা খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তাই বিনা বাক্যে ভাবী যা বলতো তাই করতো।একদিন বাবা কিভাবে যেন বুঝে গিয়েছিল ভাবি মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করে।আর কাজের অত্যাচার করে।সেদিন বাবা, ভাবিকে অনেক কথা শুনিয়ে দিয়েছিল।কিন্তু ভাবি বাবার সামনে কোন কথা না বললেও রাতে যখন ভাই অফিস থেকে বাসায় আসে তখন মা আর বাবার নামে অনেক মিথ্যা কথা বলে।এটাও বলে যে মা নাকি তাকে সারাদিন কাজ করায়। ভালোভাবে কাজ না করতে পারলে তাকে মারে ও।এসব কথা ভাই প্রথমে বিশ্বাস করত না। ভাবিকে উল্টো বুঝাতো।কিন্তু কয়েকদিন পর ভাইয়ের ব্যবহারের ও পরিবর্তন দেখা দিচ্ছিল। সেও আমাদের সাথে চ্যাচামেচি করতো।নেমে আসে আমাদের ছোট সংসারে অশান্তি।মা বাবার জন্য ভাইয়ের কাছ থেকে ওষুধের টাকা চাইতে গেলেও ভাবি অনেক কথা শুনিয়ে দিতেন।আর এমন ভাবে বলতেন যে বাবা ও শুনতে পেত।বাবা এসব সহ্য করতে না পেরে একদিন হার্ট অ্যাটাক করেন। সেদিনও ভাবির মন নরম হয়নি।মা সেদিন অনেক ভাবীর কাছে আকতি-মিনতি করেছিলেন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য।কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে গেলে টাকা খরচ হবে দেখে ভাবি হাসপাতালে নিয়ে যাননি। বলেছিলেন একটু ব্যথা আছে কিছুক্ষণ পরেই ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু বাবা আমার সেই ব্যথা সহ্য করতে না পেরে আমাদের ছেড়ে চলে যান।সেদিন মা প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলেন বাবার জন্য।এক ঘন্টা পর আমি জানতে পারি বাবা ইন্তেকাল করেছেন।মায়ের সাথে সাথে আমিও ভেঙ্গে পড়েছিলাম।তবে অনুশোচনা ছিল না ভাবির।সে স্বাভাবিকভাবে সবটা দেখে গিয়েছেন। তার ভাষ্যমতে যে মরার সে মরে যাবে যে মরে গিয়েছে তার জন্য কান্নাকাটি করে কোন লাভ নেই।সেদিন ভাইয়াও অনেক কেঁদেছিলেন।এক সময় বাবাকে দাফন করা হয়।বাবার মৃত্যুতে একদম শান্ত হয়ে গিয়েছিলেন আমার মা।প্রায় রুমের মধ্যে বসে কাটিয়ে দিতেন সময়। কিন্তু তা ভাবির সহ্য হচ্ছিল না।কারণ মাকে দিয়ে কাজ করাতে পারছিল না।আবারো শুরু হয় ভাবির মিথ্যা অপবাদ।ভাবি আবারও ভাইয়ের কাছে মায়ের বিরুদ্ধে নালিশ করতে থাকেন।একদিন আমি প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলাম কিন্তু বিনিময়ে আমি থাপ্পড় ছাড়া আর কিছুই পাইনি।ভাইয়া প্রতিদিন অশান্তি সহ্য করতে না পেরে একদিন বলে দিয়েছিলেন আমরা যেন এই ঘর থেকে বের হয়ে যাই।তিনি আমাদের ভরণপোষণ চালাতে পারবেন না।সেদিন মা ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করেছিলেন। বলেছিলেন আমাদেরকে যেন ঘর থেকে বের করে না দেয়।কারণ আশ্রয় নেয়ার মত আমাদের কোন জায়গা ছিল না।ভাইয়ার মন গলে নি।আমাদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে সে শান্তি পেয়েছিল।সেদিন মাকে নিয়ে আমি অনেক অসহায় হয়ে পড়েছিলাম।আত্মীয়দের কাছে অনেক আশ্রয়ও চেয়েছিলাম।কিন্তু সবাই কোনো না কোনো এক বাহানা দিয়ে আমাদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছেন।রাতের অন্ধকারে মাকে নিয়ে রাস্তা রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছিলাম।নির্দিষ্ট কোন আশ্রয়ের জন্য।কিন্তু ভাগ্য সেদিন আমাদের সহায় হয়নি।আশ্রয়ের জন্য কোন জায়গা পাইনি।এক সময় হাল ছেড়ে মা মেয়ে মিলে রাস্তার ফুটপাতে বসে ছিলাম।দুজনই কান্না করছিলাম।কান্না থেমেছিল স্যার কে দেখে।আমরা এখানে বসে কান্না কেন করছিলাম জিজ্ঞেস করতেই স্যারকে আমি সব কথা খুলে বলি।আমার সব কথা শুনে স্যার সেদিন আমাদের নিজের ফ্ল্যাটে থাকার জন্য আশ্রয় দেন।সেদিন স্যার কে ফেরেস্তা বলা ছাড়া আর কোন কিছু মাথায় আসছিল না আমার।ফেরেশতার মতো আমাদের জীবনে এসে আমাদের জীবনটাকে রঙিন করে দিয়েছিলেন।তারপর আমাকে এখানে কাজের জন্য অফার করলে আমি আর দ্বিমত করি না। কারণ কাজ আমারও প্রয়োজন ছিল।নিজের পড়াশোনাটা আর কাজ দুটোই চালিয়ে যেতে থাকি।
থেমে গেল জেরিন। জেরিন এর কথা শুনে হুরের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। কেউর কষ্ট তার সহ্য হয় না। এ দুদিন ধরে নিজের কষ্টের কথা ভাবতে তার খুব কান্না পাচ্ছিল। এবং কি সে কান্নাও করেছে।কিন্তু এখন জেরিনের কথা শুনে আরো বেশি কান্না পাচ্ছে।হুরকে এভাবে কান্না করতে দেখে হাসলো জেরিন।নিজের নেত্রকোনায় জমে থাকা জল মুছে বলল।
“হয়েছে আর কেঁদোনা।অতীতে কি হয়েছে তা বর্তমানে ভাবলে কখনো তুমি ভবিষ্যৎ বানাতে পারবেনা।আমি যদি অতীতকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতাম তাহলে কখনো এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। নিজেকে এবং নিজের মাকে জীবিত রাখতে পারতাম না।তাই আমি তোমায় এটাই সাজেস্ট করব অতীতে যা হয়েছে ভুলে যাও।তুমি শত কান্নাকাটি করলেও তোমার বাবা-মা ফিরে পাবে না। ফিরে পাবে না তার আদর ভালোবাসা।কিন্তু এখন যদি অতীতের কথা ভুলে বর্তমানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারো তাহলে ভবিষ্যৎ তোমার সুখময় হবে।তুমি এখনো অনেক ছোট।দুনিয়ার অনেক কিছু দেখা বাকি আছে তোমার।তোমাকে অনেক বড় হতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।তাই অতীতকে আঁকড়ে না ধরে ভবিষ্যতের কথা ভাবো।
চোখ থেকে পানি পড়লেও জেরিনের প্রথম থেকে শেষ অব্দি সব কথাই হুর মনোযোগ দিয়ে শুনলো।জেরিন এর কথা হুরের মাঝে কিছুটা প্রভাব ফেলেছে।মনোবল অনেকটা বেড়ে গিয়েছে হুরের।আসলেই তো লাইফে অনেক কিছু তার ফেইস করা বাকি।অন্যরা তো সব সময় হুরকে সাহায্য করবে না। একদিন না একদিন হুর কে নিজে সবটা একা সামলাতে শিখতে হবে।তাই এখন থেকে এই প্রয়াস চালাতে হবে।জেরিন হুর কে ভাবুক হয়ে থাকতে দেখে বুঝল হুরের মনে কি চলছে।হুরের ধ্যান অন্যদিকে নেয়ার জন্য সে নিজের মায়ের সাথে করা ফাজলামোর কথা বলতে শুরু করল।জেরিনের কথা শুনে কান্না থামিয়ে আবারো খিল খিল করে হাসতে লাগলো হুর।কথা বলতে বলতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল সে। হুরকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে জেরিন রুমের বাতি বন্ধ করে দরজা চাপিয়ে চলে গেল।
পরদিন হুর একটু লেট করে ঘুম থেকে উঠায় রুদ্ধের দর্শন পায়নি।এতে একটু মন খারাপ হল হুরের।সে আজ রুদ্ধের সাথে জরুরী কিছু কথা বলতে চেয়েছিল।পায়ের ব্যথা অনেকটা কমে গিয়েছে। এখন একা একা হাঁটতে পারে সে।সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা এবং সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত চলে আসলো।তবে রুদ্ধের মুলাকাত পাচ্ছে না হুর।ডাইনিং টেবিলে গালে হাত দিয়ে ঠোট উল্টে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।রাত বাজে ৯:৩০।কিন্তু রুদ্ধের এখনও কোন খোঁজ খবর নেই।ক্ষুধায় পেট চুচু করছে তার।কিন্তু এই দুঃখটা বলার মত সাথী কাউকে পাচ্ছে না।ও হ্যাঁ সাথী আছে ত!।জেরিন! জেরিনই একমাত্র তার কথা বলার সাথী। জেরিনের সাথে সে সব কথা শেয়ার করে।তাই এই কথাও না হয় সে শেয়ার করলো।চোখ ঘুরিয়ে রান্নাঘরের দিকে তাকাতেই দেখল জেরিন তার কাছেই আসছে।হুর জেরিনকে দেখে ঠোঁট উল্টিয়ে বলল।
“আপু স্যার আসছে না কেন? সে কখন থেকে ওয়েট করছি ক্ষুধায় আমার পেট চুচু করছে।এখন খাবার খেতে না পারলে নির্ঘাত আমি বেহুঁশ হয়ে যাব।
হুরের কথা বলার ধরন দেখে ফিক করে হেসে দিল জেরিন।হাসি নিয়ন্ত্রণে এনে বলল।
“তোমাকে তো আমি বলেছি খেয়ে নিতে কিন্তু তুমিই তো খাচ্ছ না।স্যারের কোন সঠিক সময় নেই বাসায় আসার।তাই তার জন্য আর অপেক্ষা না করে চুপচাপ খেয়ে নাও।
হুর অসহায় ফেইস বানিয়ে পুনরায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজা থেকে রুদ্ধকে আসতে দেখল।রুদ্ধ হুর আর জেরিনকে একত্রে দেখে ভ্রু কুঁচকালো।জেরিন রুদ্ধকে দেখে চলে গেল রান্নাঘরে রুদ্রের খাবার গরম করার জন্য।রুদ্ধ কিছুটা সময় নিয়ে হুরকে দেখে।হুর ফ্যালফ্যাল নয়নে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে।মাঝারি সাইজের চোখ,চোখের পাপড়ি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ ঘন।গালের দুপাশে চাপ দাড়ির মতো ছোট ছোট দাড়ি থাকলেও থুতনিতে একটু বড়ই দাড়ি রেখেছে।কালো আর লাল মিশ্রণ একত্র করলে যে রংটা বের হয় তেমনি রং রুদ্ধের ঠোঁট। দেখতে খুবই আকর্ষণীয় লাগছে।গায়ের রংটা হুবহু হুরের মত।সাদা ফকফকা।এতদিন হুর রুদ্ধকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি।কারণ রুদ্ধের দিকে তাকাতে তার ভয় করতো। ভীষণ ভয় করত।আর আড়চোখে তাকে একটা মানুষকে কতক্ষণ পপর্যবেক্ষণ করা যায়?হুর পারেনি রুদ্ধকে ভালোভাবে দেখতে তাই এখন রুদ্ধকে দেখে সে স্তম্বিত হয়ে দেখছে।হুরের এমন চাহনি দেখে কুঁচকানো ভ্রু আরো কুঁচকে এলো।তবে হুরকে কোন কিছু না বলে দ্রুত পা ফেলে চলে গেল নিজের রুমে।ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখে ডাইনিং টেবিলে এখনো হুর গালে হাত দিয়ে বসে আছে।রুদ্ধ তার আসনে বসে একটু একটু খাবার প্লেটে নিতে লাগলো।নড়ে চড়ে বসলো হুর।অনেক কিছু বলতে চাইছে কিন্তু মুখ দিয়ে যেন কোন কথাই বের হচ্ছে না।হুরের খুব করে ইচ্ছে করছে তার কন্ঠনালী কে বকে দিতে।প্রয়োজনের সময় এই কন্ঠনালী তার সহায়তা করে না।নিজের কন্ঠনালীর সাথে অনেকক্ষণ যুদ্ধ করার পরও যখন দেখলো কণ্ঠনালী দ্বারা কোন শব্দ বের হচ্ছে না তখন চুপচাপ খাবার খেতে লাগলো। খাবার খাওয়া অবস্থাতেও ভাবতে লাগলো কিভাবে কোত্থেকে রুদ্ধের সাথে কথা বলা শুরু করবে।কষ্ট করতে হলো না হুরের। তার আগেই রুদ্ধ জিজ্ঞেস করে।
“কি বলতে চাচ্ছ?
আবারো সেই কঠিন গলার স্বর।এতক্ষণ হুর নিজেকে উৎসাহিত করছিল রুদ্ধের সাথে কথা বলার জন্য।কিন্তু রুদ্ধের বলা কথা শুনে তার উৎসাহকে মাটি চাপা দিতে হলো।মাথা উঠিয়ে রুদ্ধের দিকে টুকুর টুকুর চোখে তাকিয়ে রইল।আবারও বিরক্ত হলো রুদ্ধ।বিরক্তিতে চ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করল।এতে ভাবান্তর হলো না হুরের। সে আগের ন্যায় টুকুর টুকুর করে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে।হাত মুঠো করে টেবিলের উপরে বাড়ি মারতেই কেঁপে উঠে হুর।রুদ্ধের দিক থেকে চোখ সরিয়ে অন্য পাশে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে লম্বা এক নিঃশ্বাস ছেড়ে পুনরায় রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে বলে।
“আমি ,আমি কিছু বলতে চাই আপনাকে।
রুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হুরের দিকে।হুর সেটা বুঝে আবারো বলল।
“আমি নিজের পড়াশোনা শুরু করতে চাই। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।এমনিতেই জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি আমি।এখন আমার পুরোপুরি ফোকাস বর্তমান আর ভবিষ্যতের জন্য।আমি..
“কাল রেডি থেকো আমি তোমায় কলেজে নিয়ে ভর্তি করিয়ে আসবো।
হুরের কথা সম্পূর্ণ না হতে রুদ্ধ বলে উঠলো।রুদ্ধ আর কোন কিছু না বলে নিজের খাবারের দিকে মনোযোগ দিল ।পুরোপুরি ভাবে কথা বন্ধ হয়ে গেল হুরের।আর কি বলা উচিত ভেবে পাচ্ছে না হুর।না, বলার মত আর কিছু নেই। তাই আপাতত মুখ বন্ধ রাখাই শ্রেয় মনে করছে।