বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প #পর্ব-৮ #লেখনিতে- আসমিতা আক্তার পাখি।

0
927

#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-৮
#লেখনিতে- আসমিতা আক্তার পাখি।

একে একে করে ক্যান্টিনে সব স্টুডেন্টদের কোলাহল তৈরি হলো। বাদ পড়েনি হুর ও। হুরও আজকে ক্যান্টিনে এসেছে খাবার খাওয়ার জন্য। রুদ্ধের দেওয়া ২০০০ টাকা দিয়ে সে আজকের টিফিন খাবে।দুই হাজার টাকার উদ্বোধন ঘটাবে নিজ পছন্দের কিছু খাবার খেয়ে।ফ্যাল ফ্যাল করে পুরো ক্যান্টিন টা চোখ বোলাচ্ছে হুর।অনেকটা বড়সড় ক্যান্টিন। হুরের ফ্যালফ্যাল করে তাকানোর মাঝে ব্যাঘাত ঘটায় স্নেহা। বলে,
“এখন কিভাবে তাকিয়ে থাকবে নাকি খাবারও খাবে?ক্ষুধায় আমার পেট জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।প্রথমে খাবার খেয়ে নেই তারপর যদি তুমি চাও ক্যান্টিন বা ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে তাহলে না হয় তোমায় আমরা ঘুরিয়ে দেখাবো।কিন্তু তার আগে প্লিজ চলো খাবার খেয়ে নেই।

বলেই হুরকে টানতে টানতে একটি চেয়ারের মাঝে বসিয়ে দিল।একটি টেবিলে ৬ জনের মত বসার ব্যবস্থা আছে। চার বান্ধবী ঘাপটি মেরে চেয়ারে বসার পরও দুটি চেয়ার ফাঁকা রয়ে গেছে।মিম, মুক্তার, স্নেহা ডিসাইড করে নিলো, আজ তারা কি খাবে।হুর শুধু তাদের কথোপকথন শুনছে।তিনজন এক প্রকার ঝগড়ায় মেতে উঠেছে খাবার নিয়ে।কে কোনটা খাবে বা কি অর্ডার করা হবে তা নিয়েই তর্কাতর্কি তাদের মাঝে লেগে আছে। তাদের তর্কাতর্কির এক সময় শেষ হয়ে গেলে তিন জনের সম্ভিত ফিরে।তিনজন ভুলেই গিয়েছিল যে নতুন করে তাদের একটা বান্ধবী হয়েছে। হুরের কথা মনে পড়তেই তিনজন হুরের দিকে তাকালো।স্নেহা বো’কাদের মত হেসে মাথা চুলকে বলে,
“সরি হুর আমরা ভুলে গিয়েছিলাম যে তুমিও আমাদের সাথে আছো।এতদিন আমরা তিনজন একসাথে ক্যান্টিনে এসেছি।তাই আগের অভ্যাসটা রয়ে গেছে। ক্ষণিকের জন্য ভুলে গিয়েছিলাম তুমি ও আমাদের সাথে আছো। তুমি মন খারাপ করো না কেমন?এখন ঝটপট বলতো তুমি কি খাবে?

হুর তিনজনের দিকে তাকিয়ে এক ভুবন ভুলানো হাসি দেয়।বেশ উৎসাহ নিয়ে বলে,
“আমি আমার পছন্দের ফুচকা খাব। আর সাথে একটু নুডলস।

মুক্তা বলে,
“আচ্ছা, ঠিক আছে তোরা বস আমি গিয়ে অর্ডার দিয়ে আসি।
মুক্তা চেয়ার ছেড়ে যেতেই মিম আর স্নেহা হুরের সাথে গল্পে মেতে উঠলো।কিছুক্ষণ পর মুক্তা ও চলে আসলো। চারজন কথা বলায় মগ্ন হয়ে গেল। ধ্যান ভাঙ্গে তাদের কেউর গলা খারির শব্দ শুনে।চারজনই এক সময় ঘাড় বেঁকিয়ে পাশে তাকালো।হ্যাংলা আকাশ কে তাদের নজরে পড়ল। আকাশকে দেখে হুর ঠোঁট কামড়ে ধরলো।কপালে দুটি ভাঁজ পড়েছে।চেহারায় চিন্তার রেশ স্পষ্ট। আকাশ এখানে কেন এসেছে তাই ভাবছে সে।সে এখানে কেন এসেছে তা নিয়ে প্রশ্ন করতে চাইল হুর। তবে দ্বিধায় করল না। মিম জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে আকাশ আজ তুমি আমাদের টেবিলে? চাঁদ কি অন্য দিক দিয়ে উঠেছে নাকি? ওহ সরি চাঁদ হতে যাবে কেন! সূর্য কি অন্য দিক দিয়ে উঠেছে নাকি?

মিমের এমন প্রশ্নে হকচকিয়ে গেল আকাশ। এই প্রশ্নের কি জবাব দিবে তা মস্তিষ্কে আওড়াতে লাগলো। গুনে গুনে এই মেয়েদের সাথে দুবার কথা হয়েছে তার। তাও পড়াশোনার ব্যাপার নিয়ে। তা ব্যতীত কখনো তাদের সাথে কথা বলা এবং তাদের সাথে ওঠা চলা কখনো করা হয়নি। তাই আকস্মিক মীমের প্রশ্নে খানিকটা অপ্রস্তুত হল।বিচলিত হলো মন।এই তিনটি মেয়ে যে মাত্রাতিরিক্ত চঞ্চল তা আগেও ঠাহর করতে পেরেছিল। তাদের কথা দাঁড়ায় বোঝা যায় যে তারা আস্ত এক বদের হাড্ডি।কথা পেরে ওঠা তাদের সাথে মুশকিল।তবে মুশকিল কাজ কে
সহজ করতে হবে তাকে। তাই নিজেকে ধাবিত করে বলল।

“সূর্য প্রতিদিন যে দিক থেকে ওঠে আজও সেই দিক থেকেই উঠেছে।আর তুমি যেভাবে প্রিট্যান্ড করছো যে আমি ভিনগ্রহ থেকে এসেছি।

মিমকে এবার বলতে না দিয়ে মুক্তা বলে,
“তা না হয় বুঝলাম। তবে তোমার এখানে আসার কারণ বুঝতে পারলাম না। উদ্দেশ্যটা কি ফটাফট বলে দাও!
নিজ খেই হারালো আকাশ।মেয়েগুলোর প্রশ্ন একদম তীরের ন্যায় ধারালো।সহজ প্রশ্নগুলো কিভাবে বাঁকা ভাবে করতে হয় তাও ঢের ভালো করে তাদের জানা আছে। কিভাবে মানুষদের বিব্রত করতে হয় তাও জানে।কথার মাঝে কিভাবে মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলা যায় তারও ট্যালেন্ট তারা রাখে।হ্যাংলা পাতলা রোগা ছেলেটি বোধ হয় এখন প্রশ্নের পাহাড়ে ছিন্নবিছিন্ন হয়ে যাবে।আকাশ তিনজনকে আবার পর্যবেক্ষণ করলো। সূচালো দৃষ্টি। নিজেকে ধাতস্থ করে প্রশস্ত হাসির রেখা ঠোটে টেনে উত্তর দিল,

” তোমার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে আমি কোন চোরা উদ্দেশ্য নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছি।আমি তোমাদের ক্লাসমেট!ক্লাসমেট হওয়ার সুবাদে তোমাদের কাছে আমি আসতেই পারি।দু-চারটে কথা আমাদের মাঝে হওয়া কোন বড় ব্যাপার না।তবে হ্যাঁ,এখানে আসার উদ্দেশ্য অবশ্যই আমার আছে।তোমরা তো জানোই আমার তেমন বন্ধুবান্ধব নেই।তাই তোমাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে আসলাম।আশা করি আমায় নিরাশ করবে না।

মুক্তা,মিম আর স্নেহা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।আকাশ তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে এসেছে,এটা বিশ্বাস করতে তাদের বিবেক নারাজ।দেড় বছর হতে চললো এই ছেলেটার সাথে একই ক্লাসে তারা পড়ছে। কিন্তু আজ অবধি আখ বাড়িয়ে কখনো তাদের সাথে কথা বলতে আসেনি। হঠাৎ করে বন্ধুত্বের প্রস্তাব তাদের সন্দেহজনক মনে হল।তাদের সাথে বন্ধুত্ব করলে এতে অবশ্যই আকাশের লাভ আছে। এমন ভাবনা তিন বান্ধবীর।হুর চুপচাপ বসে নিজের খাবার খাচ্ছে আর মাঝে মাঝে সবার দিকে তাকাচ্ছে। তবে সবার কথায় তার কর্ণ কুহুরে প্রবেশ করছে। এই মুহূর্তে তার খাওয়া ছাড়া অন্য কোন বড় কাজ নেই। ভীষণ খাদক ব্যক্তি হলে যা হয় আর কি!মিম, মুক্তা, স্নেহা তিন জন আবার ও আকাশের দিকে মনোযোগ দিল। মাথা থেকে পা অবধি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলো। কোন কিছু গোলমাল আছে কিনা তা দেখার প্রচেষ্টা। কিন্তু না প্রতিদিনের মতো আজও তাকে একই রকম লাগছে। তাহলে কথার সুর কেন চেঞ্জ লাগছে। ভেবে পাচ্ছে না কেউই। এবার আর মুক্তা আর মিমকে কথা বলতে না দিয়ে স্নেহা নিজেই কাঠ কাঠ গলায় প্রশ্ন করে,

“তা এটিটিউট এর মাস্টার আমাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে চাচ্ছে বিষয়টা মাথায় আসছে না।এই আকাশ বলতো তোমার পরিকল্পনাটা কি?তুমি তো কোন মেয়ের সাথে কথা বলোনা। এমনকি তোমার কোন মেয়ে বান্ধবী ও নেই। তাহলে হঠাৎ করে আমাদের সাথে বন্ধুত্ব করার কারণটা সঠিক মিলাতে পারছি না।মনে প্যাচ গোচ নিয়ে আবার আমাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে আসলে না তো?

মন চূর্ণ হল আকাশের। সামান্য বন্ধুত্ব করতে আসায় যে এত ভোগান্তি পোহাতে হবে, তা কুলক্ষণে ও টের পাইনি সে। আর পেলেও বা কি করত? আজ না হয় কাল সে বন্ধুত্ব করতেই আসতো।অস্বাভাবিক মনকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল আকাশ।নিম্ন স্বরে বলল,
“আমার মাঝে কোন প্যাচ গোচ নেই।কোন বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে আমি তোমাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে আসিনি।বরাবরই আমার বন্ধু-বান্ধব কম।ক্লাসে কয়েকটা ছেলে বন্ধু থাকলেও মেয়েদের সাথে আমি বন্ধুত্ব রাখিনি।সর্বদা আমি শান্তশিষ্ট প্রকৃতির ছেলে।মজ মাস্তি হাসি-ঠাট্টা এসব আমার করা হয় না। তোমাদের প্রায়ই দেখি অনেক হাসাহাসি করতে কথা বলতে, মজা করতে।তোমাদের দেখে লোভ লেগেছিল আমার। ইচ্ছে করছিল একটু হাসার। সাদাসিদে ভাবে জীবনটাকে এগিয়ে যেতে আর ভালো লাগছে না। রংহীন জীবনের কিছুটা রং আনার প্রচেষ্টায় তোমাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে আসা।মিম এবার নিজের মুখ খুলল। ভাবের সহিত বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে এখন থেকে তুমি আমাদের বন্ধু।তবে আমাদের মতো করেই আমাদের সাথে থাকতে হবে। আমাদের সাথে যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ প্রানোচ্ছন্ন হয়ে থাকবে।নিজে হাসবে এবং আমাদেরকেও হাসাবে। আর হ্যাঁ বেশি বেশি করে পড়বে যেন পরীক্ষায় তোমার কাছ থেকে আমরা হেল্প নিতে পারি।

বলে মিম দাঁত ক্যালালো। হেসে দিল আকাশ ।মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। যার মানে হ্যাঁ সে বেশি বেশি করে পড়বে এবং তাদের পরীক্ষায় দেখাবে।হুর সহসা, আকাশের দিকে তাকালো। আকাশ তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। চোখাচোখি হয়ে গেল দুজনের। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিল হুর।চোখ স্থির রইল এখনো আকাশের। অবাধ্য চোখ জোড়া হুরকেই দেখতে চাচ্ছে। এমন না যে সে নিজের চোখকে সংযত রাখতে চাচ্ছে। আরো কিছুক্ষন হুরের দিকে তাকিয়ে আকাশ মিম, মুক্তা,স্নেহার দিকে তাকিয়ে ইশারায় ফাঁকা চেয়ার টি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল সেখানে বসবে কিনা। তিনজনই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। চেয়ারে বসে গেল আকাশ। নতুন বন্ধুকে পেয়ে কথোপকথন শুরু করে দিল তিন বান্ধবী।মাঝে মাঝে হুরকে নিয়েও এটা ওটা বলছে। হুরকে কোন কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে সে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বা না এর মধ্যে উত্তর দিয়ে চুপ থাকে।

তিরিং বিরিং করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে হুর।চোখ তার নিচে। হঠাৎ কেউর সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেল।ঠা’স করে পড়ার শব্দ হলো। সাথে সাথে আর্তনাদ করে উঠলো সে। ব্যথা বেশি না পেলেও হঠাৎ পড়ে যাওয়ায় মুখ থেকে জোরে চিৎকার বের হয়ে এসেছে।চোখ মুখ কুঁচকে বন্ধ করে আছে সে।নিচে পড়ে থেকেই গলার স্বর কিছুটা উঁচু করে বলতে লাগলো।
“এই কোন ইতর রে।কত জোরেই না ধাক্কা দিল আমাকে!ইশ পড়ে গিয়ে মনে হয় শরীরে থাকা সমস্ত হাড্ডি নড়ে বাঁকা হয়ে গেছে।

বলা শেষে সাথে সাথে জোরে চিৎকারের শব্দ কর্ণপাত হয় হুরের। আঁখি যুগল ফট করে মেলে তাকায়।সামনে থাকা ক্রোধিত রুদ্ধকে দেখে থমকে যায়।তারমানে রুদ্ধই তাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিয়েছে।এত পাষণ্ড মানুষ কি হয়?অবশ্যই হয় ।না, হলে কি রুদ্ধ তাকে এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারতো! নিজের প্রতি সমবেদনা হচ্ছে হুরের।তবে রুদ্ধর রাগান্বিত চেহারা দেখে নিজের প্রতি সমবেদনা এক সাইডে রেখে দিল। টেনেটুনে নিজেকে দাঁড় করালো।কিছু বলার জন্য নিজেকে ধাতস্থ করার পূর্বেই রুদ্ধের হিসহিস করে বলা কথা কানে আসলো।

“এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম বড় না তুমি আমায় ইতর বলো।পড়ে গিয়ে তো শুধু হাড্ডি নড়ে গিয়ে বাঁকা হয়ে গিয়েছে।কিন্তু আমার ইচ্ছে করছে তোমার হাড্ডিগুলো শরীর থেকে আলাদা করে ব্যালেন্ডারে মিক্স করে রসুনের পরিবর্তে ব্যবহার করতে।

হতভম্ব হয়ে গেল হুর।রসুনের পরিবর্তে সে তার হাড্ডি গুঁড়ো করে খাবে নাকি।হাড্ডিগুড়ো কি মজা হবে?এটা আবার কেমন ধরনের কথা। আদৌ কি রসুনের পরিবর্তে হাড্ডিগুড়ো খেলে খাবার সুস্বাদু হবে।প্রশ্নটি মাথায় আসতে চট করে রুদ্ধের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটি করে বসে।
“রসুনের পরিবর্তে আমার হাড্ডিগুড়ো খেতে কি মজা লাগবে?

কয়েক পলক হুরের দিকে তাকিয়ে রইল রুদ্ধ।মেয়েটির মধ্যে সাধারণ বোধ আছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো।হুর নিজে প্রশ্নের জবাব না পেয়ে টুকুর টুকুর করে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে রইল।হুর কে এভাবে টুকুর টুকুর করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্ধ দাঁতের দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল।
“তোমার হাড্ডিগুড়ো যদি মজা না হয় তাহলে তোমার শরীরের সব মাংস কেটে কষা মাংস বানিয়ে খাবো।আর এমনিতেও মানুষের মাংস খেতে খুবই সুস্বাদু। তাই এই সুযোগটা আমি হাতছাড়া করবো না।চিবিয়ে চিবিয়ে খাব তোমায়।
সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল হুরের। এই মুহূর্তে রুদ্ধকে তার মানুষ বলে কম হায়েনার বলে বেশি মনে হচ্ছে।একটা মানুষ যে আরেকটি মানুষের মাংস খাওয়ার প্রবল ইচ্ছ মনের মধ্যে দমিয়ে রাখতে পারে তা রুদ্ধকে না দেখলে বুঝতেই পারত না।রুদ্ধের ভঙ্গিমা খুবই সিরিয়াস।ভয়ে হুরের মুখ ছোট হয়ে এলো।লোকটার কথা এবং সিরিয়াস রিয়েকশন দেখে বোঝা যাচ্ছে সে যা বলেছে তা সে করেই ছাড়বে।হুর জেরিন থেকে শুনেছে রুদ্ধ খুবই রাগী ব্যক্তি।অতিরিক্ত রেগে গেলে সে ভয়ঙ্কর মানুষ হয়ে ওঠে। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।তখন তার বিবেক নিয়ন্ত্রণে থাকে না। রুদ্ধের রাগের ব্যাখ্যা এতটাই শুনেছে ও যে রুদ্ধের এখন সিরিয়াস ফেসই রিয়েকশন দেখে নেত্রনালীতে জল টইটুম্বার হয়ে গেল।রুদ্ধের হুমকি তাকে ভীষণভাবে নাড়িয়ে দিল।টুপ করে দু ফোটা জল চোখ থেকে বেরিয়ে আসলো।কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,

“আমি ইচ্ছে করে আপনাকে ইতর বলিনি। ভুল করে মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে। আমি আর কখনো আপনাকে ইতর বলবো না। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমার হাড্ডিগুড়ো করে খাবেন না প্লিজ। আর হাড্ডি খেতে মজা না হলে মাংস কেটে খাবেন না প্লিজ।

নিজের ঠোঁট দাঁত দ্বারা , চেপে ধরল রুদ্ধ।হুরের ভীত মুখশ্রী দেখে তাকে কিছুটা আশ্বাস দিল।
“মনে থাকে যেন। বারবার ক্ষমা করে দেয়ার মত লোক আমি না। প্রথম ভুল করেছো তাই ক্ষমা করে দিয়েছি। তবে নিশ্চিত থাকো দ্বিতীয় বার এমন ভুল হলে তোমাকে দুনিয়ায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। এক ফোটা রক্ত ও কেউ তালাশ করতে পারবে না।নাও গেট আউট মাই সাইট।

দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেল হুর।ধড়ফড় করছে ক’লিজা।রুদ্ধ হুরের দৌড়ানো দেখতে লাগলো।অত:পর সেও ধীর পায়ে নিজ কক্ষে যেতে লাগলো।হুর নিজের কক্ষে প্রবেশ করে বড়বড় নিশ্বাস ছাড়তে লাগলো।আজ বড় বাঁচা বেচেছে।ভুলেও আজকের মতো এমন কান্ড হুর করবে না,যদি বেঁচে থাকে।বেশ ভালোই শিক্ষা হয়েছে তার।

( পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here