#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-১২
#লেখনীতে- আসমিতা আক্তার ( পাখি )
শক্তপোক্ত হাতে থাপ্পড় খেয়ে ফ্লোরে আধ শোয়া হয়ে শুয়ে থেকে কান্না করছে হুর। এক থাপ্পড়ে পুরো দুনিয়া ঘুরে যাওয়ার উপক্রম। কে বলেছে টাকা দিয়ে দুনিয়া ঘোরা যায়? ঘুরতে হলে শুধুমাত্র একটাই থাপ্পর যথেষ্ট। তাতেই দিন রাত সবকিছুই টের পাওয়া যায়।শব্দ করে কান্না করছে সে। দুহাত তার দু গালে। থাপড় একগালেই খেয়েছিল কিন্তু ভয়ে অপর গালে ও হাত দিয়েছে। যদি আবার রুদ্ধ তাকে শক্তপোক্ত হাতের থাপ্পর উপহার দেয় সেই ভয়ে।মরা কান্না সহ্য করতে পারল না রুদ্ধ। তাই হাঁটু গেড়ে বসে হুরের কবজি ধরে সোজা ভাবে বসিয়ে দিল। রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“একদম ঢং করে কাঁদবে না। এসব ঢং আমার একদম পছন্দ না।ভুল করেছো শাস্তি পেয়েছো। এতে কান্নাকাটির আমি কোন কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।
কান্না থামলো না হুরের। সে আগের গতিতেই কান্না করছে। রুদ্ধ বসা থেকে উঠে গিয়ে আশেপাশে থাকা মানুষদের দিকে তাকালো। কঠিন চাহনি। সবাই ভড়কে গেল রুদ্ধের এমন চাহনি দেখে। সুর সুর করে যে যার জায়গায় চলে গেল। এমনকি অফিসের ওনার ও চলে গেল। সবথেকে বেশি ভয় পেয়েছে ওনার ই। রুদ্ধ কে সে চিনে। তাইতো রুদ্ধ এখানে আসায় তার জান যায় যায় অবস্থা।রুদ্ধের চেহারায় এবং তার চাহনি কোনটাই সে নিতে পারে না। তাইতো দ্রুতগতিতে নিজ কেবিনে চলে গেল। অফিসের সব সদস্য রুদ্ধ এবং অফিসের ওনার কে দেখে হতবিহ্বল। কারণ অফিসের ওনার যে অপরিচিত একটা ব্যক্তিকে দেখে এভাবে ভয় পাবে তা তাদের কল্পনার বাহিরে ছিল। অবশ্য লোকটি বোধহয় উঁচু মানের কোন লোক। না, হলে তো তাদের ওনার রুদ্ধকে দেখে কখনো ভয় পাবার মানুষ না।রুদ্ধ ঝুঁকে হুরের কনুই ধরে টেনে তুলে দাড় করালো।সেভাবে টেনে তাকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে লাগলো।গাড়ির কাছে এসে ব্যাক সিটে তাকে জোর করে বসিয়ে দিল। নিজেও তার পাশে বসলো। ড্রাইভার কে বললো গাড়ি স্টার্ট দিতে। হুর নিশব্দে কাঁদছে আর টিস্যু দিয়ে বারবার নাক মুছছে।নোংরা টিস্যু জানালা দিয়ে ফেলেও দিচ্ছে। লাগাতার একই কাজ করায় রুদ্ধ এবার ধমকে উঠে,
“এই মেয়ে রাস্তা নষ্ট করছো কেন?
রাগে দুঃখে রুদ্ধের দিকে তাকালো হুর।চোখে টলমল করছে পানি তবে মুখে তার তীব্র রাগ। খ্যাপাটে বিড়াল এর ন্যায় মেজাজ দেখিয়ে বললো,
” তো কি নোংরা টিস্যু গুলো বাহিরে না ফেলে, আপনার মুখ ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করবো?
কটমট করে তাকালো হুরের দিকে। তা দেখে হুর নিজের বলা কথা মস্তিষ্কে রিপিট করলো।ঝটকা খেল বুঝি!বুঝতে পারলো ভুল কথা বললো। নিজের ভুল ঢাকার জন্য আওয়াজ করে কেঁদে দিল।হুরের এমন মুড সুইং এ তপ্ত এক নিশ্বাস ছাড়লো রুদ্ধ।ডান হাতের দু আঙুল দিয়ে কপাল ঘষতে লাগলো। শান্ত স্বরে বললো,
” কান্না বন্ধ করো,নাহলে কিছুক্ষন পূর্বের প্রসাদ আবার নসিব হবে।
শান্ত হয়ে গেল হুর।কান্না করতে করতে অবস্থা তার বেগতিক।লাল হয়ে গেছে চোখ,নাক,মুখ এবং কি ঠোঁট ও।কান্না আটকানোর জন্য ঠোঁট কামড়ে বারবার চেপে ধরার কারণে ঠোঁট ও শাস্তি পেল।বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই দুজন বডিগার্ড এসে গাড়ির দরজা খুলে দিল। রুদ্ধ গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো।কিছু সময় গাড়ির ভেতর বসে থেকে বেশ সময় নিয়ে গাড়ি থেকে বের হল হুর। তীক্ষ্ণ চোখে হুরের দিকে তাকিয়ে আছে রুদ্ধ। ঘাবড়ানো দৃষ্টিতে বারবার আড় চোখে রুদ্ধকে দেখছে হুর।রুদ্ধ পরিধান করা কোটের গলায় হাত দিয়ে ভালোভাবে টানটান করে নিল। স্ট্রং হয়ে সামনের দিকে এগোতে লাগলো। তবে হুর তার জায়গা থেকে নড়ছে না। হুরকে নড়তে না দেখে একজন বডিগার্ড এসে মাথা নিচু করে হাত সামনের দিকে মেলে নিচু স্বরে বলল।
“ম্যাম প্লিজ চলুন।
লম্বা চওড়া বডিগার্ডের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সামনের দিকে পআ বাড়ালো হুর। চোখ তার এখনো ছলছল। থাপ্পড় খাওয়ার কারণটা এখনো ঠিক মনোনিবেশ করতে পারেনি। জীবনে প্রথমবার থাপ্পর খেল। তাও বিনা কারণে। অন্তত থাপ্পর খাওয়ার কারণটা তো জানানো উচিত। বিনা কারণে ফ্রি’র থাপ্পড় খেতে নারাজ হুর। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও তাকে জানতেই হবে তার কোমল তুলতুলে গালে থাপ্পর পড়ার কারণ।ড্রয়িং রুমের সোফায় আয়েশ করে বসে হুংকার ছেড়ে জেরিনকে ডাক দিল রুদ্ধ। তাড়াহুড়া করে ড্রয়িং রুমে জেরিন আসতেই রুদ্ধ তাকে আদেশ করলো।
“ঠান্ডা পানি নিয়ে আসো।
তড়িঘড়ি করে রান্না ঘরে চলে গেল জেরিন। আকস্মিক রুদ্ধের করা হুংকারে কিছুটা ভয় পেয়ে গেছে সে। ক্ষণে ক্ষণে হাত কেপে উঠছে। কি কারনে রুদ্ধ এতটা রেগে আছে ঠাহর করতে পারছে না সে।নিজের দ্বারা কোন ভুল হয়েছে কিনা তা কিছুক্ষণ সময় নিয়ে স্মরণ করার চেষ্টা করল। তবে নিজের ভুল ধরতে পারল না। শিওর হয়ে গেল তার দ্বারা কোন ভুলই হয়নি। তাই নির্দ্বিধায় ঠান্ডা পানি হাতে করে নিয়ে সোফার রুমে আসলো। সোফার এক কোণে হুরকে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা গেল। রুদ্ধের হাতে পানির গ্লাস দিয়ে হুরের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারল।
“”কি হয়েছে ম্যাম আপনি ওভাবে ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি ডাইনিং এ খাবার লাগাচ্ছি।
নিচু করে রাখা মাথা ধীরে ধীরে উপর করে জেরিনের দিকে তাকালো হুর। হুরের চোখে মুখের অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে গেল জেরিন। বিস্ফোরিত নয়নে তার দিকে তাকিয়ে দ্রুত হুরের কাছে আসলো। হাত স্পর্শ করে বিচলিত স্বরে বলল।
“কি হয়েছে হুর তোমার চোখ মুখ এমন লাগছে কেন? তুমি কান্না করছিলে?কেন করছিলে? কি হয়েছে?
আবার শব্দ করে কেঁদে দিলো হুর। এতক্ষণ বোধহয় জেরিনের আদর মাখা কন্ঠ শোনার জন্য অপেক্ষা করছিল। তাইতো আহ্লাদে আপ্লুত হয়ে চোখ উপচে কান্না পাচ্ছে। তর্জনী আঙ্গুল সোফায় বসে থাকার রুদ্ধের দিকে তাক করে অভিযোগের স্বরে বলল।
“ওই লোকটা আমায় মেরেছে।
বলেই একটু বেঁকে গিয়ে তার ডান গাল দেখালো।আৎকে উঠল জেরিন। ভীষণভাবে লাল হয়ে গেছে গাল। চার আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। লালের পাশাপাশি নীল রঙও ধারণ করেছে ক্ষতস্থানে।হুরের দিকে নজর সরিয়ে এবার রুদ্ধের দিকে বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে রইল জেরিন। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে রুদ্ধ হুরকে থাপ্পড় মেরেছে।হুরের কথা কর্ণপাতে পৌঁছানোর সাথে সাথে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো রুদ্ধ।কয়েক কদমে এগিয়ে এসে দুহাত মুঠো করে শরীর খিচে কটমট চোখে হুরের দিকে তাকিয়ে বলল।
“তোমার সাহস দেখে ক্ষণে ক্ষণে অবাক হচ্ছি আমি। তুমি আমায় আঙ্গুল তাক করে কথা বলছ?আর মা’র কি তুমি সাধে খেয়েছ নাকি?ভুলের শাস্তি পেয়েছ তুমি। না, তুমি ওই অফিসে যেতে আর না তুমি শাস্তি পেতে। কে বলেছিল পাকনামি করে অফিসে যেতে? কাজ করার খুব শখ না তোমার?এই মেয়ে তুমি কাজ করে কি করবে?কার পারমিশন নিয়ে তুমি ওই অফিসে গিয়েছিলে? তুমি কি জানো ওই অফিসের ওনার কতটা খারাপ? না, তুমি জানবে কিভাবে?তোমার তো কাজ করার মতলব। তোমার কাজ চাই। তাইতো কোন কিছু বিবেচনা না করে মাতব্বরি করে ঢ্যাং ঢ্যাং করে চলে গেলে সেখানে। কি দরকারে তুমি চাকরি করতে গিয়েছিলে? অ্যানসার মি ড্যাম ইট!
চিল্লানোর শব্দে হুর এবং জেরিন দুজনেই কেঁপে উঠল।হুর ভয় পেয়ে জেরিনের গায়ের সাথে ঘেঁষে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়া হয়ে রইল। রুদ্ধের ধমকে অটোমেটিকলি কান্না বন্ধ হয়ে গেছে। হাত কচলাতে কচলাতে ভীত স্বরে জবাব দেয়।
” আমি নিজের জন্য জব খুঁজতে গিয়েছিলাম। নিজের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিজে নিতে চাই তাই। আমি অন্যের ওপর বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। আপনি আমার জন্য যতটুকু করেছেন তাতে..
হুরের কথা শেষ হওয়ার পূর্বে আবারো তেতে উঠল রুদ্ধ।
“তোমার কি মনে হয় এসএসসি পাস করা সার্টিফিকেট দেখিয়ে তুমি চাকরি পেয়ে যাবে?যেখানে মানুষরা অনার্স, মাস্টার্স শেষ করার পরও চাকরি পাচ্ছে না সে জায়গায় এটুকুনু মেয়ে হয়ে তুমি চলে গেলে চাকরি খুঁজতে?ওহ সরি তুমি তো চাকরি খুঁজতে যাওনি। তুমি তো গিয়েছিলে চাকরি করতে।আমার ভাবতে অবাক লাগছে তুমি এতটা ডাফার কি করে হলে!এসএসসির সার্টিফিকেট নিয়ে ইন্টারভিউ না দিয়েই যে তোমার চাকরি দিয়ে দেয় তাকে কিভাবে এতটা বিশ্বাস করতে পারো? আর রইল কথা তোমার ভরণপোষণের। তোমায় কি আমি তোমার ভরণপোষণের খরচ দিচ্ছি না? তোমার যখন যা প্রয়োজন হয় বলার আগে সব আমি হাজির করে দিচ্ছি। তারপরও তোমার মাতব্বরি গেল না।লাফাতে লাফাতে চলে গেলে চাকরি করার জন্য। এখন তোমার পড়াশোনা করার বয়স। চাকরি করার নয়। তাই কনসেনট্রেট তোমার পড়ার উপরে দাও। যতদিন আমি আছি ততদিন তোমার দায়িত্ব কাউকে নিতে দিব না। তোমাকেও না। তাই এসব চাকরির কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। না, হলে আজকের মত ঘটনা পুনরায় ঘটবে।
লম্বা এক লেকচার শেষ করে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো রুদ্ধ।জেরিন আর হুর আহাম্মক দৃষ্টিতে রুদ্ধের পানে চেয়ে রইল। হুর নিজের ভুল বুঝতে পারল কিনা বোঝা গেল না। জেরিন এবার হুরের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আদূরে স্বরে বলল।
“ইশ!গাল কতটা লাল হয়ে গেছে!কেন বলতো নিজ থেকে এত কিছু করতে গেলে?ভুলেও দ্বিতীয়বার আর রুদ্ধ স্যারের কথার বাহিরে যাবে না। না, হলে পরিনাম খুবই খারাপ হবে। আজ শুধু থাপ্পর খেয়েছ। পরবর্তীতে শরীর থেকে হাড্ডি আলাদা করতেও সে দ্বিতীয়বার ভাববে না।তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হও। আমি তোমার জন্য মলম নিয়ে আসছি গালে লাগানোর জন্য।
ঠোঁট উল্টিয়ে জেরিনের দিকে তাকিয়ে উপরে চলে গেল হুর।বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।
” উহ্,বললেই হল এসএসসি সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি পাওয়া যায় না। কে বলেছে পাওয়া যায় না? চাকরি যদি নাই পাওয়া যেত তাহলে কি আমি চাকরি করতে পারতাম নাকি?শান্তি মতো একদিনও চাকরি করতে দিল না আমায়।ব্যাটা ঠাডা পড়বো তোর উপর।হুহ্!
অ্যাটেনশন প্লিজঃকয়েকদিন যাবত গল্প না দেয়ার কারণে আমি একদমই দুঃখিত নই।ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করে যখন গল্প লিখি তখন একটু রেসপন্স এর আশা নিয়ে গল্প পোস্ট করি।যেখানে পেইজ এর ফলোয়ার 1k+,সেখানে রিয়েক্ট এবং কমেন্টের সংখ্যা খুবই কম।আমি কখনো বলি না লাইক এবং কমেন্ট করতে। তাই বলে কি আপনারা রেসপন্স করতে এতটা কিপটামি করবেন?অনেকে এমনও আছেন যে ইনবক্সে আমার গল্পের প্রশংসা করেন। আমার শুনতে ভালো লাগে সেগুলো।কিন্তু প্রশংসা গুলো যদি ইনবক্সে না করে কমেন্টের মাধ্যমে জানান দেন তাহলে আরো খুবই খুশি হতে পারতাম।এই পেইজটা গল্পের পেইজ। তাই এখানে যারা আসে তারা অবশ্যই গল্প পড়তে আসে। এবং যারা ফলো লিস্টে আছে তারাও গল্পের কারণেই ফলো দিয়ে রেখেছেন।কিন্তু রিয়েক্ট আর কমেন্টের ব্যাপার মাঝে আসলে আপনারা কোন প্রতিক্রিয়া দেখান না।এত কষ্ট করার পরও যখন আপনাদের কোন প্রতিক্রিয়া দেখতে পাই না তখন ভীষণভাবে আশাহত হই আমি।এই গল্পটা 50 থেকে 60 পর্ব অবধি নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। এবং কি এখনো চাই।তবে আপনাদের জন্য নিজের প্রতি ই হতাশায় ভুগতে হচ্ছে আমায়।খুবই কার্পণ্যতা করছেন আপনারা। তাই আপনাদের উপর নির্ভর করছে এই গল্পের মেয়াদ।৩০০+ রিয়েক্ট হলে প্রতিদিন গল্প দেয়ার চেষ্টা করবো। নাহয় কয়েক পর্বের মধ্যে শেষ করে দিব।