বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প #পর্ব-বোনাস #লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

0
891

#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-বোনাস
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

“নিয়ম অনুসারে আজ আমাদের বাসর রাত। তাই না?

কারেন্ট বয়ে গেল হুরের শরীরে।বাসর রাতের কথা তার মস্তিষ্কেই আসেনি।বিয়ে এমন একটা পরিস্থিতিতে হয়েছে যে হুর বিশ্বাস করতে পারছে না রুদ্ধের সাথে তার বিয়ে হয়েছে। আর সেখানে রুদ্ধ কত সাবলীল ভাবে বাসর রাতের কথা বলছে!হুর এখন ভয় পাচ্ছে। রুদ্ধ যদি সত্যি তার উপর অধিকার খাটায় তখন হুর কি করবে!ভয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে এলো।ভীত কন্ঠে বললো,

” দেখুন,আপনি এখন খুব দুর্বল…

“ওহ্ হুরপাখি…বারবার দুর্বল বলে কি আমায় উষ্কে দিচ্ছো নাকি যে, আমি তোমার সাথে বাসর করতে পারবো না?বাসর করার মতো শক্তি আমার মধ্যে আছে। যতটা দুর্বল বলে আমায় উষ্কে দিচ্ছো অতটাও দুর্বল আমি নই।

হুর হতভম্ব হয়ে রুদ্ধের দিকে তাকালো।চোখে পড়ল রুদ্ধের কালো লম্বা কেশ এ।লোকটার চুল আগে থেকেই স্বাভাবিক এর চেয়ে বড়।এখন আরো বড় হয়ে গেছে। শুধু চুল নয় দাড়ি ও বড় হয়ে গেছে।রুদ্ধের কথার জালে এক প্রকার ফেসে গেছে হুর। সে তো এমন কিছুই মিন করেনি।হুরের শরীর কেঁপে উঠতেই রুদ্ধ আবার বলে।

“এভাবে বারবার কেঁপে উঠে গিয়ে আমায় বিভ্রান্ত করতে যাচ্ছ নাকি? ওহ্ তুমি তো দেখতে চাচ্ছ আমি দুর্বল কিনা তাই না?

তড়িৎ গতিতে নিজের মাথা দুপাশে নাড়াতে লাগল হুর।যার অর্থ সে দেখতে চায় না রুদ্ধ দুর্বল কিনা!ডান বামে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলে,

“একদমই না!আপনাকে দেখে কেউই দুর্বল মনে করতে পারবে না। আপনি স্ট্রং!আপনাকে দেখতে খুবই স্ট্রং মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে ৫০ কেজির বস্তা নিয়ে দৌড় মারতে পারবেন।

হুরের গলা থেকে মুখ সরিয়ে হুরের চোখে চোখ রাখে। কপাল থেকে ধরে থুতিনি অব্দি চোখ বুলায়। গাম্ভীর্য মুখ নিয়ে বলে,

“বাই এনি চান্স,তুমি নিজেকে নিয়ে দৌড় মারতে বলোনি তো?

বারবার চোখের পলকে ঝাপটা মারছে হুর। সে নিজেকে নিয়ে দৌড় মারতে বলবে কেন তাই ভাবছে।তবে রুদ্ধের গাম্ভীর্য মুখ দেখে কিছুটা ভীত হলো। ভুল কিছু বলে ফেললো নাকি তা মস্তিষ্কে আওড়ালো। এমন কোন কিছুই খুঁজে পেল না। তাই সরল ভাবে উত্তর দিল,

” না

বলার সাথে সাথে মিথ্যা হামি দিল। ভাবনা এমন যে সে ঘুমের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে।হা করে বড় এক হামি দিয়ে হাত মুখে রেখে ঘুম কন্ঠে বলে,

“আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আপনার সাথে কাল কথা হবে।গুড নাইট..

চোখ বুজে ফেললো হুর।তৎক্ষনাৎ মনে হলো কেউ তার পায়ে স্লাইড করছে।কেঁপে ওঠার সাথে সাথে ভীষণ সুড়সুড়ি পেল তার।খিলখিল করে হাসতে লাগলো।পা সরাতে চাইলে আরো সুড়সুড়ি দিতে থাকে রুদ্ধ।হুর এক সময় সুড়সুড়ি কন্ট্রোল করতে না পেরে রুদ্ধের পায়ে বারি দিতে থাকে। দুজনের পা দিয়ে যুদ্ধ চলছে। ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেছে।হাসতে হাসতে যখন হুরের নিশ্বাস আটকে যাওয়ার উপক্রম তখন রুদ্ধ সুড়সুড়ি দেয়া বন্ধ করে দেয়৷ অতিরিক্ত হাসার ফলে হুরের চোখে পানি টইটম্বুর হয়ে আছে।রুদ্ধ মাথা উঁচু করে তা দেখল।হুর ক্রুদ্ধ নয়য়ে বললো,

” এই সত্যি করে বলুন তো,আপনাকে কি আসলেই রিমান্ডে রাখা হয়েছিল?নাকি আমাকে সব মিথ্যা বলা হয়েছে আর দেখানো হয়েছে?

রুদ্ধের চাহনি তীক্ষ্ণ হলো,বললো
“আমাকে দেখে কি তোমার সব মিথ্যা বলে মনে হচ্ছে?

হুর এবার গলার স্বর উঁচু করে বলে,
“আপনাকে দেখে মিথ্যা বলে মনে হয় না। কিন্তু আপনার আচরণে ঠিকই মনে হয়, আপনি মিথ্যা বলছেন। একজন রিমান্ডে থাকা মানুষ কিভাবে এত বারাবাড়ি করতে পারে!কিভাবে ঝগড়া করতে পারে?

” আমি ঝগড়া করছি?

“না, আপনি বাসর করতে চাইছেন।

মনে হওয়ার ভান করে রুদ্ধ বলে,
” ওহ্ হ্যাঁ, আমি তো ভুলেই গেছিলাম আজ আমাদের বাসর রাত।মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

হুরের চোখ বড়বড় হয়ে গেল। না চাইতেও আবার ফেসে গেল। এই হুটহাট কথা বলে যে, সে সর্বদা ফাসে তা ভুলেই বসেছিল৷আচানক ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে লাগলো হুর। রুদ্ধ বুঝলো এটা তার ঢঙ্গীলা কান্না।তাই অপেক্ষা করতে লাগলো হুরের কিছু বলার।হুর যখন দেখল কান্না করার পরও রুদ্ধ তাকে কোনো কিছু বলছে না, তখন সে নিজেই শুরু করে,

“আমি আর কখনও কোনো কিছু আপনাকে মনে করিয়ে দিব না। প্রমিজ! তাও প্লিজ আপনি আমার সাথে বাসর করবেন না।

” তাহলে কার সাথে করবো?

গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্ধ।কয়েক মুহুর্ত ন্যাকা কান্না বন্ধ করে হুর৷তারপর আবার শুরু হয়ে যায়।এটা কোন প্রশ্ন হল!কার সাথে বাসর করবে মানে?অবশ্যই তার সাথে করবে।বউয়ের সাথে বাসর না করলে কি,পরনারীর সাথে করবে নাকি?কিন্তু বাসর করার জন্য সে এখন মানসিক ভাবে প্রস্তুত না।তা বুঝতে পারছে না রুদ্ধ।এসব ভেবেই কান্না পাচ্ছে তার।

হুরের কান্না থামছে না। তবুও রুদ্ধ কান্না থামানোর চেষ্টা করছে না। শব্দ করে কান্না থামিয়ে গুনগুন করে কাঁদতে লাগলো সে। তবুও কোনো স্বান্তনা বাণী কানে আসলো না। এতে রুদ্ধের উপর অভিমান জমলো হুরের।যে স্বামী বউয়ের কান্না থামায় না সে আবার কেমন স্বামী!বিয়ের প্রথম দিনই এই অবস্থা, না জানি ভবিষ্যতে হুরের কি হাল হয়!কেঁদে কেটে মরে গেলেও মনে হয় স্বামী তাকে গুরুত্ব দিবে না।

গুনগুন করে শব্দ তোলা কান্নাও থেমে গেল হুরের।হুরের কান্না পুরোপুরি ভাবে শেষ হলে রুদ্ধ অনুরোধ করে।

“হুরপাখি… চুলগুলো টেনে দাও তো একটু। মাথা টা টনটন করছে খুব।

পূর্বের অভিমান গাঢ় হল। এতক্ষন বউ কেঁদে কেটে সাগর বানিয়ে ফেলছিল তার বেলার গুরুত্ব ছিল না। যেই না কান্না থেমে গেল অমনি হুকুম শুরু হয়ে গেল।স্বার্থপর পুরুষ। যে শুধু নিজের টা বুঝে।বউয়ের জন্য কোনো দরদ নেই। অবশ্য দরদ হবেও বা কি করে!বছর বছরান্তের তো সে তার বউ ছিল না। সে তো মাত্র কয়েক ঘন্টা আগের বউ৷ তাই গুরুত্ব পাচ্ছে না।

প্রগাঢ় অভিমান নিয়ে রুদ্ধের চুলে হাত রাখে সে। হালকা শক্তি দিয়ে টানতে থাকে।চুলের লম্বাটে আঁচ করলো।পাঁচ কি ছয় ইঞ্চ হবে৷খুব ধীর গতিতে হাত চালাতে লাগলো।মাঝে মাঝে টিপেও দিচ্ছে।হুরের চোখে ঘুম আবার ধরা দিচ্ছে। আধো আধো হয়ে আসছে চোখ।হাতের গতিও কমে যাচ্ছে।চোখ প্রায় যখন লেগে এসেছিল তখন রুদ্ধ হুরের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,

“রুদ্ধময় জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আপনার স্বাগতম।আপনার অভিমানের সংখ্যা পরিমাপ করবো আমি।আপনার হাসিতে নিজের সুখ খুজে নিব। আপনার কান্নায় নিজের মনে প্রশান্তির ঢেউ খেলাবো৷আপনার অভিমানে নিজের জন্য ভালোবাসা খুজে নিব৷ছেড়ে যাওয়ার নাম নিলে শিকলে বেঁধে রাখবো৷নিজেকে আমার কাছ থেকে দূরে রাখলে সব কিছু ছারখার করে দিব।বুঝতে তো পেরেছেন,আমি খুব স্বার্থপর। নিজের স্বার্থের জন্য সব করতে পারি আমি।সবাইকে ভাঙতে পারি,নিজেকেও ভেঙে দিতে পারি।

( যেহুতু বোনাস পর্ব তাই ছোট করে লিখলাম। পরবর্তী পর্ব বড় করে লিখবো। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here