বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প #পর্ব-৪১ #লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

0
863

#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-৪১
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

আজকাল বড্ড উদাসীনতার সাথে হুরের দিন কাটছে ।সময় পেলেই বিরতিহীন হয়ে চোখের পানি ভাসিয়ে দেয়।নেত্রকোনা দিয়ে পানি পড়তে পড়তে একসময় পানি শুকিয়ে আসে। তারপরও হুরের উদাসীনতা কমেনা।এ বিষয়ে রুদ্ধ হুর কে জিজ্ঞেস করলে হুর তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।বা ডুকরে কেঁদে রুদ্ধকে জড়িয়ে ধরে তার বু/কের সাথে লেপ্টে থাকে।আগের মত বউটা তার সাথে কথা বলে না। মন খুলে হাসে না। তখন পীড়া হয় রুদ্ধর বক্ষস্থলে। বউকে হাজার জিজ্ঞেস করার পরও যখন তার কাছ থেকে কোন জবাব মিলে না তখন নিজেকে অনেক অসহায় মনে হয়।কিছু না বলাই একদিন ভীষণভাবে রেগে গিয়েছিল রুদ্ধ।দিন গড়িয়ে রাতে বউয়ের বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে আর এ বিষয় নিয়ে রাগারাগি করেনি সে।

রুমের মাঝে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে হুর। তার পিছে রুদ্ধ। হাতে তার চিরুনি। আপাতত সে সব কাজ বাদ দিয়ে সযত্নে মনোযোগ সহকারে বউয়ের চুল আঁচড়ে দিচ্ছে।হুর প্রথমে মানা করেছিল। পরে রুদ্ধর রাম ধমকে দ্বিতীয়বার আর কথা বলার সাহস দেখায়নি।চুল আঁচড়ে দিতে বেগ পেতে হচ্ছে রুদ্ধর।একটু একটু আঁচড়িয়ে বড় বড় নিশ্বাস ফেলে আবার কাজে লেগে পড়ছে।ড্রেসিং টেবিলের আয়না দিয়ে রুদ্ধ কে দেখছে হুর। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে যত্ন সহকারে বউয়ের চুলের সেবা করছে সে।

চুল আঁচড়ানো শেষ হলে রুদ্ধ হুরকে সামনে ঘোরায়।মলিন মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে অধর ছোঁয়ায় ললাটে।এক হাত গালে রেখে বলে,

“কেন তোমার মন এত খারাপ?আমি কি কিছু করেছি?কেন আগের মত কথা বলো না আমার সাথে?কেন আজকাল তোমার হাসি চোখ জুড়িয়ে দেখতে পাই না?

গ্রাহ্য দিল না রুদ্ধর কথা।নিজের কথা রাখল,

” অফিসে যাবেন না?

দীর্ঘশ্বাস পেলে হুরের কাছ থেকে সরে আসলো রুদ্ধ।বলল,

“হ্যাঁ, ইম্পরট্যান্ট কয়েকটা মিটিং আছে। অ্যাটেন্ড করতে হবে।রাতে লেট করে ফিরতে পারি।বেশি ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পড়ো।

দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেল রুদ্ধ। হুর কি মনে করে রুদ্ধর পিছু যেতে লাগলো। পায়ের গতি তার কচ্ছপের ন্যায়। রুম থেকে বেরিয়ে দেখল রুদ্ধ অর্ধেক সিঁড়ি প্রায় নেমে গেছে। তবুও তাড়াহুড়া করল না সে। আলসেমি ভঙ্গিতে এগিয়ে যেতে লাগলো। সামনে এগুতে এগোতে হঠাৎই পা জোড়া স্থির হয়ে গেল। চোখও হলো বটে। হলরুমে রিফার সাথে রুদ্ধ দাঁড়িয়ে কথা বলছে। রুদ্ধ কথা বলছে তা ভুল। এখন রিফার মুখ চলছে। রিফার অধর এক সময় থেমে গিয়ে পরস্পর দু অধর মিলিত হল। তখনই চোখে পড়লো রুদ্ধর ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি।চিলিক দিয়ে উঠলো হুরের বু/ক।রুদ্ধ তার ঠোঁট প্রসারিত করে কিছু বলে সেখান থেকে চলে গেল। এক সময়ে রিফা ও চলে গেল। তবে যেতে পারলো না হুর।সদর দরজার পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল।

——————————
হুর যা ভেবেছিল তাই-ই হল।পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পায়নি সে।তাই এখন কোন এক প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে।হুরের সাথে মুক্তা ও চান্স পায়নি।এ দু বান্ধবী ব্যতীত সবাইই পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে।মুক্তা আর হুর ভেবেছে দুজন একত্রে একই ভার্সিটিতে ভর্তি হবে।পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স না হওয়ায় মন খারাপ করে বসে আছে হুর।তা দেখে রুদ্ধ বলল,

“মন খারাপ করার কি আছে? পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স হয়নি তাই বলে কি তোমার পড়াশোনা থেমে থাকবে নাকি?তোমায় আমি একটা ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি করাবো।এখন মুখ লটকিয়ে না রেখে হাসো।

হাসলো না মেয়েটা।মলিন মুখ নিয়ে রুদ্ধর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিল।বিরক্ত হলো রুদ্ধ। আরে বাবা এত মন খারাপ করার কি আছে।সারাক্ষণ মেয়েটা খারাপ করে বসে থাকে।এতে বিরক্ত হলেও কিছু বলতে পারে না রুদ্ধ। মুখ বুঝে সব কিছু দেখে যায়, সহ্য করে যায়।আর কিছু জিজ্ঞেস করলে তো চোখ দিয়ে ঝরনা বেয়ে পড়ে।হুরের উদাসীন ভাব কমে নি দেখে রুদ্ধ বিরক্ত হয়ে চলে গেল অফিসে।মেয়েটাকে আর কিছুক্ষণ এভাবে দেখলে বু/কের মাঝে ঝড় বেয়ে যাবে। তাই আর রুমের মধ্যে থাকতে ইচ্ছে করছে না। মেয়েটা কখনো বুঝতে চায় না তাকে। তার অনুভূতি বুঝতে পারে না। হয়তো বোঝার চেষ্টা করেনা। না, হলে চোখের ভাষা পড়তে পারেনা।তাইতো সব সময় মুখ গোমড়া করে রাখে।

আগের মত ফায়াজের সাথে দুষ্টামিতে মেতে ওঠেনা হুর। মাঝে মাঝে ফায়াজনিজ থেকে হুরকে হাসানোর চেষ্টা করে। হুর হাসি ঠিকই কিন্তু প্রানোচ্ছন্ন হয়ে হাসে না।খিল খিল করে হাসির শব্দ কেউর কানে গুজেনা।নীরবতার সহিত সবাই একসাথে খাবার খাচ্ছে।কেউর মুখে টু শব্দ নেই।কুজো হয়ে হুর খাবার খাচ্ছে।রুদ্ধ নিজের খাবার খাচ্ছে,তবে চোখ স্থির আছে তার বউয়ের উপর। বউটার ইদানিং খাবার রুচি বোধহয় কমে গেছে। আগের মত ভাত খেতে দেখে না তাকে।খাবার শেষ করে সবাই চলে গেল যে যার রুমে।হুরের একটু পর রুদ্ধ রুমে আসলো। রুমে এসে কোথাও হুর কে খুঁজে পেল না। মনে করলো ওয়াশরুমে আছে। ওয়াশরুমের বাতি নেভানো দেখে ঠাহর হল সে ওয়াশরুমে নেই। ধীরপায়ে চলে গেল ব্যালকনিতে। ব্যালকনিতে এসে ভ্রু কিছুটা কুঁচকে এলো। মেয়েটা এখানেও নেই। সেখান থেকে পুনরায় রুমে আসলো। মস্তিষ্কে আসলো ছাদের কথা। রুদ্ধ অপেক্ষা না করে চলে গেল ছাদে। যা ভেবেছিল তাই। হুর ছাদে আছে। ছাদের কিনারা ঘেঁষে আকাশ পানে মুখ করে চেয়ে আছে।রেলিং এর ওপর দুই হাতে মুঠো করে ধরা।ঈষৎ চিন্তা হল।এগিয়ে গেল হুরের কাছে।শব্দ বিহীন পায়ে হেঁটে পিছন থেকে হুরকে জড়িয়ে ধরল।অকস্মাৎ কেঁপে উঠল হুর।টের পেল রুদ্ধ। ঘাড়ে মুখ গুঁজে উষ্ণ নিঃশ্বাস ছেড়ে মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করল।

“এত রাতে ছাদে কি করছো?

কম্পন শরীর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসে।ঠায় আকাশ পানে চেয়ে থেকে বিরস কন্ঠে উত্তর দেয়,

“ভালো লাগছিলো না, তাই ভাবলাম ছাদ চলে আসি।রাতের পরিবেশটা উপভোগ করতে চাচ্ছিলাম।

হুরের ঘাড়ে গভীর এক চুম্বন দিয়ে কোলে তুলে নিল।ছাদ থেকে নিচে নামা অবস্থাতে বলল,

“এখন আর রাতের পরিবেশ উপভোগ করার প্রয়োজন নেই।এখন স্বামীর আ/দর উপভোগ করো।

রাত দুইটার কাছাকাছি। উন্মুক্ত বু/কে মাথায় এলিয়ে শুয়ে আছে হুর।পরনে তার রুদ্ধর শার্ট ।চোখ বন্ধ। বেশ কিছুক্ষণ ধরে রুদ্ধ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আ/দর বোধহয় একটু বেশি আজকে হয়ে গেছে।যা বউয়ের দুর্বলতায় প্রকাশ পাচ্ছে।যেই না হুরের মাথায় অধর ছওয়াবে সেই মুহূর্তে ফোনের মেসেজ রিংটোন এর শব্দ কানে ভাসে।বউকে চু/মু না দিয়ে হাত বাড়িয়ে টেবিলের উপর থেকে ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ চেক করে।ফোন বিছানায় ছুড়ে আলতো হাতে হুরকে নিজের বু/ক থেকে সরিয়ে বালিশে ভালোভাবে শুইয়ে দিল।গায়ে কাপড় জড়িয়ে রুম ত্যাগ করল ।ফট করে চোখ মেলে তাকালো হুর। ক্লান্ত হয়ে রুদ্ধের বু/কে শুয়ে থাকলেও তার চোখে ঘুম ধরা দেয় নি।সারা রুমে চোখ বুলিয়ে যখন রুদ্ধকে পেল না তখন নিশ্চিত হল রুদ্ধ রুমের বাহিরে গিয়েছে।মিনিটের মধ্যে নিজের কাপড় চেঞ্জ করে নিল সে।রুদ্ধর শার্ট এর উপর দিয়েই কাপড় পড়েছে। তাই বেশি সময় লাগলো না কাপড় পরিধান করতে।

রুম থেকে বের হয়ে আশপাশে কোথাও রুদ্ধকে দেখল না সে। সন্দেহ হয় হয়তো রিফা রুমে গেছে। তাই তারা চালিয়ে দ্রুত রিফার রুমের কাছে আসলো। প্রথমে জানালা দিয়ে উঁকি দিল।তবে রুমের মধ্যে না আছে রিফা আর না আছে রুদ্ধ। তাই সেখান থেকে নিরাশ হয়ে সামনের দিকে এগোতে লাগলো।রান্নাঘরের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আশেপাশে আবার খুঁজলো। কিন্তু কোথাও কাউকে পেল না। ড্রয়িং রুমের একটা বাতি জ্বলছে। তাই সব কিছু আবছা আলো দেখা যাচ্ছে।আরেকটু সামনে এগিয়ে যেই না রান্না ঘরের ভেতর প্রবেশ করবে তখনই কর্নপাতে ভেসে আসে রুদ্ধার বলা কথা।

“হুর কে এসবের বিষয়ে কোনো কথা তুমি বলবে না।বাই এনে চান্স যদি হুর জানে তাহলে তোমাকে পৃথিবী থেকে গায়েব করতে এক সেকেন্ডও সময় লাগবে না আমার।তাই যা করবে ভেবেচিন্তে করবে।

রিফার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে রুদ্ধর কথা সে আমলে নেয়নি। গা ছাড়া ভাব নিয়ে রুদ্ধর কাছে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরবে তার আগেই রুদ্ধ রিফার হাত মুছড়ে ধরে।ব্যথা পেয়ে আর্তনাদ করার সাথে সাথে হাসে রিফা।কন্ঠে ব্যথা মিশিয়ে আবেদনময়ী ভঙ্গিতে বলে,

“উফ্ রুদ্ধ ছাড়ো।আমি…

ছেড়ে দেয় রুদ্ধ। মেয়েটাকে স্পর্শ করেছে ভেবে নিজের প্রতি ই রাগ হচ্ছে। তর্জনী আঙ্গুল উঁচু করে রিফার উদ্দেশ্যে কিছু বলার জন্য প্রস্তুতি নিলো।ক্ষিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলতে গিয়েও থেমে গেল।থেমে যাওয়ার কারণ হচ্ছে রান্নাঘরের বাহিরে থাকা ফুলদানিতে হুরের অশ্রুসিক্ত মুখ দৃষ্টিগোচরে আসলো। থমকে গেল রুদ্ধ।দ্রুত পিছন ঘুরে চাইল। হুট ঠায় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে পানি বিসর্জন দিচ্ছে। রিফার কথা ভুলে হুরের কাছে যেতে লাগলো। হুর আর সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসলো। হুরের পেছন দৌড় মারলো রুদ্ধ ও।হুর সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল।একটুর জন্য হুরকে ধরতে পারল না রুদ্ধ।দরজায় টোকা দিতে লাগল।তবে সে দিকে খেয়াল কি হুরের আছে!সে তো ঝর্নার নিচে নিজের অশ্রু ঝরাচ্ছে।এক সময় চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।টোকা দেয়ার মাত্রা বেড়ে গেল। উদ্বিগ্ন হয়ে রুদ্ধ বলে,

” হুর…ওপেন দ্যা ডোর!প্লিজ বেরিয়ে আসো।

রুদ্ধর আদেশ শুনল না হুর। সে ফ্লোরে বসে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।অচল হয়ে গেছে মস্তিষ্ক।কোনো কিছুই কানে আসছে না। বারবার রিফা আর রুদ্ধর প্রতিচ্ছবি চোখে ভেসে আসছে।কানে বারি খাচ্ছে “উফ্ রুদ্ধ ছাড়ো” জোরে চিল্লিয়ে ফ্লোরে শুয়ে কান্না করছে হুর।দুর্বল কন্ঠে বলে,

“আপনি আমার না রুদ্ধ।

ডাকের সাথে লাগাতার দরজা টোকা দিয়েও কান্না ব্যতীত কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না। রুদ্ধ আর না পেরে দরজা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিল।বলিষ্ঠ শরীর দিয়ে কয়েকবার ঢাক্কা দিতেই দরজার ছিটকিনি ভেঙে গেল।হুড়মুড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে থমকে গেল।অত্যান্ত প্রিয় মানুষটাকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে নিশ্বাস আটকে আসতে চাইল।মেয়েটার চোখ নিভুনিভু হয়ে এসেছে। মনে হচ্ছে যে কোনো সময় জ্ঞান হারাবে।রুদ্ধ হাঁটু গেড়ে ভেজা ফ্লোরে বসে পড়ল।হুরের দিকে পলকবিহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।হুরকে কাপতে দেখে টনক নড়ল।হুরের কাছে যেয়ে কোলে তুলে নিল। ভিজে চুপচুপে অবস্থা। টুপটুপ করে পানি পড়ছে কাপড় থেকে।ভেজা হুর কে বিছানায় বসালো সে।জড়িয়ে ধরে এক হাত নিতে রেখে মুখ উঁচু করে উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো।

“হুর তুমি ঠিক আছো?চোখ খোলো।তাকাও আমার দিকে।তুমি শুয়ে থাকো আমি কাপড় নিয়ে আসছি।

হুরকে ছেড়ে বিছানায় শুয়ে দিল। আলমারির কাছে গিয়ে সেখান থেকে হুরের কাপড় বের করল।সযত্নে তা পরিয়ে দিল।হুরের শরীর থেকে কাপে খোলার সময় ভেতরে নিজের শার্ট দেখে চমকে গেল।তবে তা নিয়ে মাথা ঘামালো না। ইতিমধ্যে হুরের কাঁপুনি ধরে গেছে। বিছানার চাদরও ভিজে গেছে।রুদ্ধ হুরকে আবার পাঁজা কোলে তুলে সোফায় বসে বিছানার চাদর উঠিয়ে নিল।ম্যাট্রেস ওয়াটারপ্রুফ তাই চাদর ব্যতীত আর কিছু ভিজে নি। আলমারি থেকে আরেকটি চাদর বের করে কোনরকম বিছিয়ে দিল। বিছানার পর মনে হলো ভালোভাবে সে বিছাতে পারেনি। আর চেষ্টাও করলো না বিছানোর। হুরকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে তার ওপর কম্বল দিয়ে দিল।পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে এসেছে।রুদ্ধ নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো তার কাপড়ও ভিজে গেছে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেও কাপড় চেঞ্জ করে নিল।শাওয়ার ই নিত,কিন্তু হুরের শরীর ঠান্ডা হয়ে এসেছে দেখে আর এখন শাওয়ার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল না।হুরের শরীর এখন গ/রম করা উচিৎ।তাই কম্বলের ভেতর নিজেও ঢুকে গেল।উষ্ণতা পেয়ে হুর রুদ্ধের কাছে ঘেঁষে রইল।দুই হাত দিয়ে আলিঙ্গন করে আছে রুদ্ধ। হুর রুদ্ধর কাঁধে মাথা রেখে এক হাত পিঠে রাখল।চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই রুদ্ধর শরীরের ঘ্রান নাকে আসল।দুর্বল চোখ মেলে রুদ্ধর দিকে তাকালো।চোখ ভরে আসল।মুহূর্তেই মনে পড়ল রুদ্ধ তাকে ধোঁকা দিয়েছে।তৎক্ষনাৎ দুর্বল শরীর নিয়ে রুদ্ধকে নিজের কাছ থেকে সরাতে লাগল।রুদ্ধ নিজের শক্ত হাত দিয়ে হুরের দুই হাত আঁকড়ে ধরলো।হাত বদ্ধ থাকায় পা চালাতে শুরু করে হুর। সমানে রুদ্ধকে লাথি দিচ্ছে। রাগ,কষ্ট উপচে পড়ছে।দু পায়ের মাঝে হুরে দু পা শক্ত করে চেপে ধরলো।হাত,পা কোনোটাই নাড়াতে না পেরে রাগে,দুঃখে কান্না করে দিল হুর।চিল্লিয়ে বললো,

“ছাড়ুন আমায়।আপনি কখনও আমায় ছুবেন না।আপনি একটা ঠক।ঠকিয়েছেন আপনি আমায়।

মুঠো হওয়া হাতের পিঠে চু/মু দিয়ে ঠান্ডা স্বরে বলে,

” ঠকাইনি আমি তোমায়। তুমি যা দেখেছো তা সব ভুল।

তাচ্ছিল্য হাসল হুর।কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,

“চো/র’রা কখনও বলে না সে চো/র।আর যে পুরুষ নিজ স্ত্রী কে মাঝরাতে ফেলে অন্য নারীর কাছে যায় তাকে কিভাবে বিশ্বাস করি?

শক্ত কন্ঠ রুদ্ধর,
“বিশ্বাস করতেই হবে।আমি আমার বউ ব্যতীত কাউকে নিজের মনে জায়গা দেইনি।আর না কোনো নারী পাবে।

” মনে জায়গা না থাকবে বুঝি মানুষ পরকীয়া করে?

রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো রুদ্ধর।জোরে হুরের হাত চেপে ধরে।রাগে দপদপ করে বলে,

“আমি কোনো পরকীয়া করছি না। আর না তোমাকে ঠকাচ্ছি।

নিজেকে আর শক্ত রাখতে পারল না। হাউমাউ করে কান্না করে দিল। গলার স্বর উঁচু রেখে ভাঙা গলায় বলল,

” তাহলে আপনি রিফা আপুর সাথে মাঝরাতে দেখা কেন করেন?কেন সে আপনার শরীরে হাত দেয়?আপনি কি মনে করেছিলেন আমার আড়ালে পরকীয়া করবেন আর আমি তা বুঝতে পারবো না?

রাগ দমিয়ে রাখতে কষ্ট হচ্ছে রুদ্ধর। তাও শান্ত হয়ে রইলো। কারণ বউ তার ভীষণভাবে ক্ষেপে আছে। যদিও ভুলভাল ভেবে ক্ষেপে গেছে, তাও বউয়ের সামনে এখন রাগারাগি করতে চাচ্ছে না। প্রথমত দুর্বল শরীর। তার ওপর না জেনে যা নয় তা বলছে।আচানক নিজের প্রতি ই চমকিত হল। সে কখনো নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে পারে না। কিন্তু বিয়ের পর থেকে এই মেয়েটার সাথে বেশি একটা রাগ করতে পারেনা। বউটাকে কখনও রাগ দেখাতে ইচ্ছে করেনা।বউ হচ্ছে ভালোবাসার জিনিস। তাকে শুধু ভালোবাসা দেয়া দরকার। কিন্তু তাই বলেছে ভালোবাসা দিতে দিতে মাথায় উঠে যাবে এমনটাও না। যখন যেটার প্রয়োজন হবে তখন সেটাই রুদ্ধ করবে। রাগ করবে ভালো ও বাসবে।রুদ্ধ হা করে বড় কয়েকটি নিঃশ্বাস ছাড়লো। নিজেকে শান্ত করার জন্যই মূলত নিঃশ্বাস ছাড়া ।তারপর অতি শান্ত স্বরে হুরকে আবার বোঝালো।

“আমি কোন পরকীয়া করছি না।রিফার কাছে যেতে হয়েছিল তার সাথে গুরুত্বপূর্ণ আমার কিছু কাজ ছিল।আর সে আমার শরীরে টাচ করেছে,আমি তো করিনি। তাহলে তার রাগ আমার উপর কেন ঝাড়ছো? তাকে কিছু না বলে সবকিছু আমার ঘাড়ে কেন চাপিয়ে দিচ্ছো?ওই মেয়ে আমার কেউ না। তুমি আমার সব।

রুদ্ধর কথা বিশ্বাস করতে অনেক ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু তারপরও মনের মধ্যে কিন্তু রয়ে আছে।হেঁচকি তুলে আবার প্রশ্ন করল,

“কি এমন কাজ তার সাথে ছিল যে মাঝরাতে আপনি তার কাছে গিয়েছিলেন?

চুপ হয়ে যায় রুদ্ধ ।সত্য কথা সে হুরকে বলতে পারছে না। তাই তো এত লুকোচুরি। তাই বউয়ের সাথে তার এত ঝামেলা। রুদ্ধকে চুপ থাকতে দেখে তাচ্ছিল্য হাসলো হুর।বিদ্রুপ করে বলল,

“হয়ে গেলো তো মুখ বন্ধ।

মাথা নিচু করে রুদ্ধ কিছু বলতে চাইলো। তার আগে হুর তাকে থামিয়ে পিছন ঘুরে শুইয়ে কন্ঠে বেদনা ঢেলে বলল।

“থাক আর মিথ্যে বলতে হবে না।বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি আমি।আপনার কথা আমার কানে কাঁটার মত বিধছে।আপনার জীবন থেকে আমি বহু দূরে চলে যাবো।তারপর আপনার যার সাথে ইচ্ছে মাঝরাতে তার কাছে যাবেন। তখন কোন বাধা থাকবে না। আমি আমার চোখের সামনে আমার স্বামীকে অন্য নারীর সাথে দেখতে পারবো না। যত দ্রুত পারেন ডিভোর্সে…

নিজের বাক্য শেষ করার পূর্বেই রুদ্ধ হুরকে হেচকা টানে উঠিয়ে বসিয়ে দিল।কর্ণ কুহুরে ঠা/স করে এক আওয়াজ আসলো। আওয়াজটা কিসের প্রথমে বোধগম্য হলো না।পরে যখন গালে জ্বালা অনুভব করল,গাল গরম হয়ে গেল তখন বুঝতে পারল শব্দের আসল উৎস।সেকেন্ডের মধ্যেই গালের ব্যথা বাড়লো।ঠোঁট ভেঙ্গে কিছু শুধাতে চাইল।তা হতে না দিয়ে রুদ্ধ হুরের হাত মুচড়ে ধরে তার কঠিন বাক্য শোনালো।

“আমি পরকীয়া করলেও তোর আমার সাথে থাকতে হবে। একটানা দশটা পরকিয়া করবো আমি। তাও তুই বাধ্য আমার সাথে থাকতে। দ্বিতীয় বার যদি মুখ থেকে ডিভোর্সের কথা শুনি তখনই তোর মুখ সেলাই করে রেখে দিব। অতিরিক্ত কথা বলা আমার পছন্দ না। একবার বলেছি আমি পরকীয়া করি না। তারপরও কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করছিস। অবাধ্য বউ থেকে বো/বা বউ শ্রেয় মনে করি আমি। এর পরেরবার আর ছাড় দিব না। এখন চুপচাপ ঘুমা। নইলে গালে আর কয়েকটা পড়বে ।

ছুড়ে মারলো হুরকে। হুর নিজের জায়গায় শুয়ে ফুপিয়ে কাছে। সেদিকে পাত্তা দিল না রুদ্ধ। সে নিজের জায়গায় এক হাত চোখের উপর রেখে অন্য হাত বেঁধে রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। সময় গড়াচ্ছে তার আপন গতিতে। সময়ের সাথে সাথে হুরের কান্নার গতি ও বাড়ছে। তবে তা নিঃশব্দে। বালিশ এবং বিছানার কিছু অংশ ভিজে গেছে। চোখের পানির সাথে নাকের পানি ও মিলিত হয়েছে। তবুও কান্না থামছে না তার।এ নিয়ে রুদ্ধ তাকে দুইবার থাপ্পর মারল। তবে এতে সে কষ্ট পায়নি। একটু পেয়েছিল তবে তা সয়ে গেছে। কষ্ট তো লেগেছিল এটা শুনে যে রুদ্ধ তুই করে বলেছে আর মুখ সেলাই করার হুমকি দিয়েছে। বেছে বেছে এমন স্বামী তার কপালে জুটলো। কোন কুলক্ষণে যে সেদিন বিয়ে করতে গেল কে জানে! প্রায় আধাঘন্টা পর হুর পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো রুদ্ধ ঘুমিয়ে গেছে।তার চোখে ঘুম নেই অথচ তার স্বার্থপর স্বামী শান্তির ঘুম দিচ্ছে। দুর্বল শরীর নিয়ে আর জেগে থাকতে ইচ্ছে হলো না।চোখে তার অনেক ঘুম। তবে কোন কিছু না জড়িয়ে ধরে তার সহজে ঘুম আসেনা।বিছানা থাকে তিনটা বালিশ।তার থেকে একটি হুরের মাথায় নিচে আর দুটি রুদ্ধর কাছে।ডান পাশে কোমরের নিচে দিয়ে রেখেছে অন্যটা মাথার নিচে। মুখ ফুলিয়ে একটু একটু করে রুদ্ধের কাছে এগিয়ে গেল। রুদ্ধর পেট থেকে বাম হাতে সরিয়ে মেলে তার ওপর মাথা রাখল। হাত রাখল পেটের ওপর। চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করল। মিনিট পাচেকের মধ্যে ঘুমিয়েও পড়লো। চোখের উপর থেকে হাত সরালো রুদ্ধ।হুরের মাথা হাত থেকে সরিয়ে বু/কে রাখল।এক পা নিজের উপর রেখে জড়িয়ে নিজেও নিদ্রায় ডুবে গেল।

বিঃদ্রঃকেউ বকাঝকা কইরেন না🥲।মেয়ে মানুষ বুঝে কম চিল্লায় বেশি বোঝা উচিত 😶।আর হুর যদি নিজের কানে রুদ্ধ আর রিফার কথোপকথন না শুনতো, তাহলে এত ড্রামা হতো না।আগামী পর্বে সব খোলাসা হবে।ততক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য নিয়ে থাকুন।আর আজ আপনাদের রিয়েক্ট দেখে খুশি হলো আমার মন। এভাবেই রিয়েক্ট, কমেন্ট করলে পরবর্তী পর্ব খুব দ্রুত আপলোড দিব। তাই গল্প পড়ার পর কেউ রিয়েক্ট দিতে ভুলবেন না। রিয়েক্ট এর উপর ভিত্তি করে আমি এখন থেকে পার্ট আপলোড দিব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here