বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প #পর্ব-৪৫ #লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

0
930

#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-৪৫
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

প্রেগনেন্সির নয় মাস প্রায় শেষ হতে চলল। পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছু।শান্তশিষ্ট দুষ্ট হুর এখন হয়ে গেছে বদমেজাজি ।খিটখিটে ভাব সর্বক্ষণ থাকে। কোন কিছু মন মতো না হলে চিল্লিয়ে বাড়ি মাথা তুলে নেয়।হুরের খিটখিটে বদমেজাজি ভাব মাঝে মাঝে রুদ্ধ সইতে না পেরে বকাঝকা করে। রাগ করে ধমক দেয়। তখন হুর কান্নাকাটি করে নিজের বুক ভাষায়। দিন পার হয়ে যায় তবুও রুদ্ধর সাথে কথা বলে না। তাই একসময় বাধ্য হয়ে রুদ্ধ সিদ্ধান্ত নিল বাচ্চা হওয়ার আগ অব্দি কোন রাগারাগি করবে না। অতিরিক্ত খিটখিটে স্বভাব হয়ে যাওয়ার কারণে প্রথমে রুদ্ধ খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল।সে এক মুহূর্তের জন্য ভেবে নিয়েছিল সারাটা জীবন হুর কে এভাবে সহ্য করে যেতে হবে।তবে ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পারে প্রেগনেন্সির সময় মুড সুইং হয়।এটা একটি নরমাল বিষয়।তাই ডক্টর সোনালী রুদ্ধকে স্ট্রেস নিতে বারণ করেন।স্ট্রেস না নিতে বললেই কি স্ট্রেস কমে যায় নাকি?বউকে নিয়ে হয়েছে যত ঝামেলা।বউয়ের চক্করে পড়ে এখন দিনরাত তাকে বাসাতে বসে থাকতে হচ্ছে। যদিও এতে তার বিন্দুমাত্র খারাপ লাগছে না। কয়েক দিন ধরে ঠিকমতো অফিসে যাচ্ছে না।কারণ হুর তাকে যেতে দিচ্ছে না।তার নাকি ইচ্ছে করে গল্প করতে।তাই রুদ্ধকে সামনে বসিয়ে গল্পে মেতে উঠে ।

রুদ্ধ ও হুরকে নিজের চোখে চোখে রাখছে।কখন কি প্রয়োজন হবে তা লক্ষ্য রাখছে।।হুরের উঁচু পেট যখন দেখে তখনই সুখের দোল খেয়ে যায় মনে। ভেতরের এক কোণে আনন্দিত হলেও মুখে তা প্রকাশ করতে পারেনা। হয়তো জড়তা।একসময় রুদ্ধ হুরের সাথে কঠিন ভাবে ব্যবহার করত।তবে প্রেগনেন্সির সময় যত যাচ্ছে ততই তার সাথে নরম হয়ে যাচ্ছে।তাও ঘটেছে একটা ঘটনার কারণে।তখন সময়টা ছিল হুরের প্রেগনেন্সির ছয় মাস।ক্লান্ত শরীর নিয়ে সবেমাত্র রুমে প্রবেশ করেছিল রুদ্ধ।রুমে ঢুকেই হুর কে বিছানায় বসে থাকতে দেখা গেল।বউকে পেট খোলা অবস্থায় দেখতে পেল।মাথা ঝুকিয়ে এক ধ্যানে পেট দেখছে।এক হাত তলপেটে।কোনো কিছু বুঝতে না পেরে রুদ্ধ এগিয়ে হুরকে জিজ্ঞেস করে,

“কি হয়েছে পেট বের করে কি দেখছো?

হুরের আনন্দ যেন আরো বাড়লো।উল্লাস নিয়ে রুদ্ধর হাত টেনে তার সামনে বসালো।গদগদ হয়ে বলল,

“বাবু আমায় লাথি মেরেছে। আমি স্পষ্ট ভাবে অনুভব করেছি।

রুদ্ধ তাকিয়ে রইল উঁচু পেটটার দিকে।ফর্সা পেট আরো ফর্সা মনে হল।আরো খেয়াল করল হুরের মুখে আগের চেয়ে নতুন এক লাবণ্য ধরা দিল।আগের চেয়ে অনেকটা গুলুমুলু হয়েছে। চিকন মেয়েটার স্বাস্থ্য এবং পেট বাড়ায় খারাপ দেখাল না।বরং আদুরে দেখাচ্ছে।আদুরে লাগার কারণে আ/দর ও পায় রুদ্ধর।তবে ইচ্ছেকে মাটি চাপা দিতে হয় তার। হাতে টান লাগায় ধ্যান ভাঙ্গে তার। হুর রুদ্ধর হাত নিজের পেটের উপর রাখে। বলে,

” দেখবেন আবারও লাথি মারবে।

কিছু বলে না রুদ্ধ। তাকিয়ে রয় বউয়ের দিকে। রাগ করতে চাইলেও পারে না।মনোযোগ দেয় পেটের উপর। তৎক্ষনাৎ অনুভব হয় বাচ্চা লাথি মেরেছে। চমকে উঠে রুদ্ধ। চমকিত হয়ে হুরের দিকে তাকায়।হুরের ঠোঁটে হাসি। হাসির রেখা ফুটলো তার ঠোঁটেও।চোখ স্থির করে রাখলো পেটের উপর।বুকের মাঝে আশা ভর করল।যদি আবার লাথি মারে!তবে এমন কিছুই হল না।অনেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর হুর নিজেই রুদ্ধত হাত পেট থেকে সরিয়ে দেয়।

ঘুমের ঘোরে পেটে হাত দিয়ে উঠ বসে হুর।আস্তে আস্তে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়।পেট তুলনায় অনেক বড় হয়েছে। মাঝে মাঝে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।বেশিক্ষন বসে থাকতে কষ্ট হয়।উঁচু পেট নিয়ে হাটতেও কষ্ট হয়।পায়ে পানি জমেছে বেশ,ফুলে উঠেছে।হাত রুদ্ধর বু/কে রেখে ধাক্কা দিয়ে উঠাতে লাগল তাকে।দুই বার ধাক্কানোর পর মুখে আওয়াজ তুলল,

“এই শুনছেন!

ধড়ফড়িয়ে উঠে রুদ্ধ।হুরের পেটে হাত দিয়ে বলে,

” কি হয়েছে?ব্যাথা পাচ্ছো?কষ্ট হচ্ছে?

রুদ্ধের বিচলিত কন্ঠ তিক্ত মনে হলো হুরের কাছে। নিমিষেই রাগ হলো। দাউ দাউ করে জ্বলতে লাগলো মস্তিষ্ক। নিজের রাগ সংবরণ করল না। বিরক্তি নিয়ে বললো,

“কোন কিছুই হচ্ছে না। তবে ক্ষুধা পেয়েছে অনেক।

শান্তির এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো রুদ্ধর।হুর কে কোন কিছু না বলে টেবিলের ওপর থেকে কয়েকটা প্লেট হুরের সামনে এগিয়ে দিল।হুর বলল,

“একটু ফ্রেশ হওয়া দরকার ছিল।

অপেক্ষা করলো না রুদ্ধ।হুরকে ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল। পুনরায় ওয়াশরুম থেকে বিছানায় বসিয়ে দিল। বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে দুই পা ছড়িয়ে পেটের ওপর একটি প্লেট দিয়ে আপেলের টুকরো মুখে দিচ্ছে।ঘুম চোখে তা দেখছে রুদ্ধ। এসব সচরাচর হয় ।মধ্যরাতে হুর ঘুম থেকে উঠলেই তার ক্ষুধা পায়। এবং যতক্ষণ না অব্দি হুর খাবার শেষ করবে ততক্ষণ অব্দি রুদ্ধর ঘুমানো বারণ।ঢুলে ঢালা একটি লাল মেক্সি হুরের পরনে।সুন্দরী বউ ক্ষনে ক্ষণে আরো সুন্দরী হচ্ছে। যা বুকের মাঝে পীড়া দিচ্ছে রুদ্ধর।বউকে ইদানিং জড়িয়ে ধরে ও ঘুমাতে পারে না। উচু পেট। আবার এখন নাকি হুরের শরীরে হাত দিলে তার দম বন্ধ লাগে। তাই রুদ্ধকে নিজের কাছেও ঘেষতে দেয় না। মাঝে মাঝে নিজেকে অসহায় মনে হয় রুদ্ধর।মনে হয় বউয়ের ভালোবাসা দিন দিন কমে যাচ্ছে।তাইতো কাছে ঘেষতে দেয় না।কয়েকদিন পরেই হুরের ডেলিভারি।ডাক্তার বলেছে সবকিছুই নরমাল আছে।তাই ডেলিভারিও নরমালে হওয়ার সম্ভাবনা আছে।হুর নিজের খাবার শেষ করে শুয়ে পড়ে নিজের জায়গায়।রুদ্ধ ও শোয়।অনুভূত হয় বউতা আর অতি নিকটে। বুকে মাথা রেখে অন্য হাতে দিয়ে পেটে জড়িয়ে ধরে।

আলতো করে বাম হাতে হুরের মাথায় রাখে রুদ্ধ। সযত্নে বুলিয়ে দিতে থাকে।হুর রুদ্ধকে জড়িয়ে ধরতে পারলে ও রুদ্ধর জড়িয়ে ধরার পারমিশন নেই।ফাপড় লাগে হুরের। তাই রুদ্ধ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

———————————
দশ মাস অতিক্রম করে ১২ দিন হলো।ডেলিভারির তারিখ ছিল আরো চার দিন আগে।তবে হুরের প্রসব বেদনা উঠেনি। ভয় পেয়ে গিয়েছিল রুদ্ধ এবং হুর উভয়ই।এই প্রথম তারা মা বাবা হচ্ছে।বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে তাদের কোন এক্সপিরিয়েন্স নেই।তাই ভয়ের মাত্রা বাড়ছিল। তবে ডাক্তার তাদের নিশ্চিত থাকতে বলেছেন। প্রেগনেন্সির সময়,অনেকের আগে ডেলিভারি হয়ে যায় তো অনেকের সময় লাগে।আর হুরের সব কিছু নরমাল।তাই চিন্তার বিষয় নেই।

সন্ধ্যায় হুর সোফায় বসে বই পড়ছে।রুদ্ধ বাড়িতেই আছে তবে রুমে নেই।পড়তে পড়তে হঠাৎ হুরের পেটে চিনচিন ব্যথা উঠে।তেমন একটা ধ্যান দেয় না।এক সময় ব্যথা বাড়তে থাকে।অনুভূত হয় ওয়াটার ব্রেক হচ্ছে। ব্যথায় চিৎকার দিয়ে উঠে।হুরের চিৎকার শুনে সবাই তার রুমে আসে। হুরকে কাতরাতে দেখে সবাই ঘাবড়ে যায়। রুদ্ধ দৌড়ে হুরের কাছে এসে কোলে তুলে ছুট লাগাল।হুরকে হাসপাতালে আনতেই তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো।চিৎকার দিয়ে আর্তনাদ করে যাচ্ছে হুর।অশান্ত হচ্ছে রুদ্ধর বক্ষস্থল । ওটির বাহিরে পায়চারি করছে। বাড়ির সব সদস্য এসেছে। সবার মুখে লেগে আছে চিন্তার রেশ।চিন্তার মাঝে বাচ্চার কান্না সবার কর্ণকুহরে পৌঁছায়।সবাই একত্রে ওটির দরজার কাছে আসল।মনে করল এই বুঝি বাচ্চা নিয়ে কেউ আসবে।সবাই এগিয়ে আসলেও রুদ্ধ আসে না। সবাই পিছে দাঁড়িয়ে রয়।হুর এখনও আর্তনাদ করছে। ২০ মিনিট পর আরেকটি বাচ্চার শব্দ কানে ভাসে।সবার মুখে হাসি। অপেক্ষা করতে পারছে না বাচ্চাদের কোলে নেয়ার।আরো কিছু সময় পর দুইটা নার্স বের হয়ে আসল।দুজনের হাতে সাদা তোয়ালের মাঝে সাদা ফুটফুটে দুটি সন্তান।

একটি নার্স সবার উদ্দেশ্যে বলে,

“সন্তানদের বাবা কে?

সবাই পিছন ফিরে রুদ্ধর দিকে চাইলো।রুদ্ধ চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তোয়ালে মোড়ানো থাকা বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন অনুভূত হচ্ছে তাও বুঝতে পারছে না।ফায়াজ রুদ্ধর মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখতে পেয়ে নিজেই রুদ্ধর কাছে গিয়ে রুদ্ধর হাত টেনে সামনে আনলো। নার্স রুদ্ধর দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের কোলে নেয়ার জন্য বাড়িয়ে দেয়। বলে,

” আপনার ওয়াইফ বলেছে বাচ্চাদের যেন সর্বপ্রথম আপনার কোলে দেয়া হয়।

অনুভূতিহীন হয়ে রুদ্ধ সবটা শুনল।আনমনেই রুদ্ধ হাত বাড়ায়।কোনো মতে একটা বাচ্চাকে কোলে নিল। অপর বাচ্চা ও নার্স এগিয়ে দিল।শক্ত হাতে বাচ্চাদের কোলে নেয় রুদ্ধ।ফ্যালফ্যাল করে তাদের দিকে তাকায়। গায়ের রং তাদের ই মতো দুধ সাদা।আদল দেখে বুঝতে পারল না ঠিক কার মত হয়েছে।ফায়াজ উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে,

“কি বেবি হয়েছে?

নার্স স্মিত হেসে বলল,
” দুটো পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছেন পেসেন্ট।

ঘোরের মাঝে দুই পুত্রের কপোলে গাঢ় চুম্বন দিল রুদ্ধ।ফায়াজ প্রফুল্ল হয়ে রুদ্ধর কাছে গিয়ে বলল,

“ভাইয়া প্লিজ বাবুদের আমাকে দাও। আমি কোলে নিব। কত কিউট বাবুরা। ইশ!আ/দর করতে মন চাচ্ছে।

ফায়াজের খুশি দেখে ঠোঁট জোড়া প্রসারিত হল রুদ্ধর।একটা বাচ্চাকে ফায়াজের হাতে দিল।সোহেল শেখ দ্বিধা নিয়ে রুদ্ধের সামনে আসে। আমতা আমতা করে কিছু বলতে চাইলেও মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না। সোহেল শেখের অনুভূতিই টের পেল রুদ্ধ। কথাবিহীন সামনে এগিয়ে দিল আরেকটি বাচ্চাকে। সোহেল শেখের মুখে হাসির জোয়ার দেখা গেল। সারা মুখে লেগে আছে আনন্দের ছাপ। অত্যন্ত খুশি হয়ে নিজের নাতি কে কোলে নিলেন।বাচ্চাদের কথা ভাবতে ভাবতে বউয়ের কথা কিছুক্ষণের জন্য ভুলে গিয়েছিল বোধ হয় রুদ্ধ।যখন মনে পড়লো তখন দুরুদুরু মন নিয়ে নার্সকে জিজ্ঞেস করল,

“আমার বউ কেমন আছে?

নার্স বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ, আপনার ওয়াইফ সুস্থ স্বাভাবিক আছে।কিছুক্ষণের মধ্যে তাকে কেবিনে দেওয়া হবে।

খুশির আমেজ বইছে করিডারে।বাচ্চাদের নিয়ে কে কি করবে, কি পড়াবে, কি দিয়ে খেলাবে তার গবেষণা হচ্ছে।রুদ্ধর সেদিকে একদমই নজর নেই। বউটাকে দেখার জন্য তার মন পুড়ছে। যতক্ষণ না অব্দি বউকে দেখতে পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তি পাবে না। তার শান্তি বোধ হয় ক্ষণিকের জন্য থাকে। না, হলে কি শান্ত হৃদয় আবার অশান্ত হত!

শয্যাশায়ী হয়ে শুয়ে আছে হুর।শরীর ছেড়ে দেওয়া। দেখেই বোঝা যাচ্ছে শরীরে এক বিন্দু পর্যন্তও শক্তি নেই। সাদা চামড়া আরও সাদা হয়ে গেছে। শুকিয়ে গেছে ঠোঁট। চোখের অবস্থা ও বেহাল। কলিজায় বোধহয় কেউ কামড়ে ধরলো রুদ্ধর। কিছুক্ষণ বউয়ের পাশে থেকেও শান্তি মিলল না।ডাক্তার বলেছে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। বিশেষ করে ফল। এখন লিকুইড জাতীয় খাবার খাওয়ার উপদেশ দিলেন ডাক্তার।ডাক্তারের উপদেশ মানছে রুদ্ধ। একগাদা ফল এনে হাজির করেছে হুরের সামনে। তাই বসে বসে নিজের চোখের সামনে হুরকে খাওয়াচ্ছে। খাওয়ার প্রতি কোনো গাফিলতি করলে অসুস্থ শরীরে সে দুইটা লাগাতে ভুলবেনা।বাচ্চা বাদ দিয়ে পূর্ণ মনোযোগ হুরের উপর রাখছে রুদ্ধ।বাচ্চার জন্য বাকি সব সদস্যরা আছে।তাই সেই দিকে তেমন একটা ধ্যান দিল না।

সোহেল শেখ মিষ্টি এনে পুরো হাসপাতালে বেরিয়ে দিলেন। প্রথম দাদা হওয়ার খুশির উত্তেজনা বেশি কাজ করছে। তাও একত্রে দুটো নাতি হয়েছে। মুখ থেকে হাসি সরছেই না। ঠোঁট প্রসারিত করে এতটাই হাসছে যে দাঁত দেখা যাচ্ছে। ডিসচার্জ দেয়া হলো হুরকে।ডাক্তার বলেছিল কাল ডিসচার্জ দিবে। তবে রুদ্ধ তা মানে নি। কোন কমপ্লিকেশন না হওয়ায় বাড়িতে নিয়ে এসেছে। সাথে করে একটি নার্সও নিয়ে এসেছে।ব্যথার কারণে হাটতে পারছে না হুর। তাই তাকে তাকে কোলে করে নিয়ে এসেছে। বিছানায় আরাম করে শুইয়ে দিয়েছে।দুই পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে হুর।গায়ের ওপর পাতলা চাদর ।ব্যথায় মুখ নীল হয়ে এসেছে।বাচ্চাদের এখন অব্দি কোলে নিতে পারেনি সে। অবশ্য চেহারা দেখেছে। তবে এখন ভীষণ করে নিতে মন চাইছে তার। আদুরে বাচ্চাদের কোলে না নিতে পাড়ায় বুকটা খচখচ করছে। ইচ্ছে করছে বুকে জড়িয়ে কয়েকটা চু/মু খেতে।একটা বাচ্চা জেরিনের কোলে অপর বাচ্চা ফায়াযের কোলে। দুজনই এখন রুদ্ধর রুমে অবস্থান করছে। বাচ্চাদের নিয়ে খেলা করছে। যদিও দুইটা বাচ্চাই ঘুমরত অবস্থায়। তাও তারা ঘুমিয়ে থাকা বাচ্চাদের সাথে খেলছে। এটা ওটা বলছে আর হাত পা ধরছে ।ছোট ছোট হাত পা ধরার মজাই আলাদা।হুর ফায়াজের দিকে তাকিয়ে কাতর কণ্ঠে বললো।

“ভাইয়া প্লিজ বাবুদের আমার কাছে দিন ।আমি একটু কোলে নিব।

কোন কিছু বলে না ফায়াজ। এগিয়ে আসে হুরের কাছে। হুরের কোলে সযত্নে বাবু দেয়।সারা মুখে চুমু দেয় হুর।তৃপ্তির হাসি দেয়।মনে মনে কিছু একটা ভেবে নেয়।অপর বাচ্চাকে ও কোলে নিতে চাইল। তবে দুটো বাচ্চা একসাথে নিতে কষ্ট হচ্ছিল।তা দেখে রুদ্ধ নিজের কোলে বাবুকে নেয়।বিছানার উপর উঠে হুরের পাশে বসে হুরের আরেক হাতে বাবুকে আস্তে করে দেয়। পেটের উপর এমন ভাবে হাত রাখে যেন পেটে ব্যথা না পায়।বাচ্চা দুটো হওয়ার পর থেকেই শুধু ঘুমিয়ে যাচ্ছে। চোখ খুলেছে মাত্র দুবার। তাও কয়েক সেকেন্ডের জন্য।দুধ খাওয়ানোর সময় ও ঘুমিয়েই খেয়েছে।রুদ্ধ বুঝতে পারে না তার বাচ্চাগুলো এত ঘুমায় কেন।পরমুহূর্তে মনে করে বাচ্চা যেহেতু ছোট তাই হয়তো ঘুমাচ্ছে।

সবাই তাদের রুমে। নার্সকে দেয়া হয়েছে গেস্ট রুম। সপ্তাহখানেক এর মত নার্স থাকবে। ঘুমিয়ে আছে মা আর ছেলেরা। তাদের দিকে তাকিয়ে আছে রুদ্ধ। আরামের সহিত সবাই ঘুমাচ্ছে।খেলনা দিয়ে পুরো রুম ভরা।ছোট বড় সব ধরনের খেলনা কেনা হয়েছে।সাথে এক গাদা কাপড় ও কেনা হয়েছে। একটা বাচ্চাকে চোখে খুলতে দেখে চট জলদি বাচ্চার কাছে যায় রুদ্ধ। বাচ্চাটা রুদ্ধর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।আরেকটারও ঘুম ভেঙে যায়। রুদ্ধকে সামনে দেখতে পেয়ে দুজনেই রুদ্ধর দিকে তাকিয়ে থাকে। হামি দিয়ে একসাথে আড়মোড়া ভাঙ্গে।মুখ দিয়ে হালকা শব্দ আসে।রুদ্ধ মনে করেছিল গলা ফাটিয়ে তারা কান্না করবে। কিন্তু তা না করে দুজনেই আড়মোড়া ভেঙে আঙ্গুল নিজের মুখে ঢুকিয়ে চুষতে লাগলো। ফ্যালফ্যাল করে রুদ্ধ শুধু দেখেই যাচ্ছে। যা বুঝলো টুইন হওয়ায় দুজনই একই সাথে একই জিনিস করে।দুজনের নাকে একটি করে চুমু দিয়ে রুদ্ধ চোখ বন্ধ করে ঠোঁট নাড়িয়ে বলে,

” আমার বাচ্চা।

বিঃদ্রঃদু’দিন যাবত প্রচন্ড মাথা ব্যথা। তাই রি-চেক করতে পারি নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here