#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৫৫(বোনাস পার্ট)
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
শেখ শাহনাওয়াজ এর মুখে সব শুনে শাহরিয়ার পরিবারের সবাই অবাক। সকলে আছিয়া খাতুন এর দিকে তাকালেন। কারন মেহবিনের পরিবার নেই বলে তিনি তার আর মুখরের ওপর শর্তারোপ করেছিলেন। তার রেশ ধরেই মুখর আর মেহবিনের এই বিচ্ছেদ। শেখ শাহনাওয়াজ আর মেহরব চৌধুরী নিজেদের মধ্যে সবকিছু মিটিয়ে নিলেন। আছিয়া খাতুন স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন। তখন মুখর ফোন করে বলল সে মেহবিনের সাথে আছে। তারা যেন বাড়ি চলে যায়। শাহরিয়ার পরিবার চলে গেল। তখন মিশু আরবাজ কে মারতে লাগলো। তা দেখে আরবাজ বলল,,
“আরে মিশু মারছিস কেন?”
“কান কাটা জ্বীন বাজপাখি তুই আগেই ফুলের সম্পর্কে জানতি কিন্তু আমায় বলিস নি। আমি তো ফুলকে চিনতাম মুখরের বউ হিসেবে আর তুই আমাকে কিছুই বলিস নি।”
“আরে কি করবো বল? ফুলই তো আমার ওপর এক হাজার ধারা জারি করেছিল আমি ওর সম্পর্কে তোকে বা বাড়ির কাউকে বললে ও আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেবে। আর ও কোথাও চলে যাবে কেউ জানবে না।”
“হুম তোরা সবাই পচা!”
‘তা ঠিক হওয়ার পর তোকে কে বলল সে ডক্টর মেহবিন মুসকান তোর বোন।”
“প্রথমে আমিই বুঝেছিলাম মায়ের চোখের মতো চোখ। যখন পাগল ছিলাম ও আমায় বলেছিল আমি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম। ও ভেবেছিল আমি ঘুমিয়ে পরেছি পরে ও মায়ের, আমার আর ওর কথা কিছু বলছিল। আর আমাকে ভালো হতে বলছিল। তারপর ফুলের এক্সিডেন্ট হলো তখন তো সব ফিরেই পেলাম। ফুল সুস্থ হয়ে ফিরে এলে ওর সন্দেহ হলো আমি ঠিক হয়ে গেছি। আমাকে চেপে ধরতেই সেদিন ফুলকে সব বললাম আর ও বলেদিলো ও আমার বোন। আর ও বললো অনুভবের ব্যাপারে ওকে সব নির্দ্বিধায় বলতে।”
“ওহ আচ্ছা! আমি তোকে ফুলের কথা বলিনি আর তুই আমাকে তোর ঠিক হওয়ার কথা বলিশ নি শোধবোধ।”
‘মোটেই দু’টো এক নয়।”
বলেই মিশু মেহরব চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলল,,
“এই যে মামা শুনো আমি তোমার বিধবা ছেলে মিহিরকে বিয়ে করতে চাই। এখন তুমি বলো রাজি কি না?”
হুট করে মিশুর কথা শুনে সবাই চমকে উঠলো। এদিকে বাড়িতে শোক চলছে আর ও বিয়ের কথা বলছে। তাও এমনভাবে প্রপোজাল রাখলো যেন বিয়ে করা কোন ব্যাপারই না। এদিকে মিহির হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তখন আরবাজ বলল,,
‘এই মিশু একটু রয়ে সয়ে আর এটা কি হলো?”
‘আদর রাজি আমাকে মা করতে এখন মিহির আর মিহিরের বাপ রাজি থাকলেই হলো।”
মেহরব চৌধুরী বললেন,,
‘মিশু এটা কি ধরনের কথা। এভাবে হুট করে বিয়ে মানে এসব কি করে? শাহনাওয়াজ তুমি কিছু বলো?”
শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
‘ঠিকই তো মিশু এটা কি ধরনের কথা হলো।”
মিশু এবার শান্ত চোখে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“বাবা ও মিহির নয় ও আমার অনু। মানে অনুভব।”
এ কথা শুনে মনে হলো একটা বজ্রপাত হলো। শেখ শাহনাওয়াজ আর আরবাজ বলল,,
“কি বলছো এসব?”
তখন মিশু মিহিরের সামনে গিয়ে বলল,,
“আজ ও কি সবাইকে সত্যিটা বলবে না অনু? এবার যদি তুমি স্বীকার না করো তাহলে বলে দিচ্ছি সারাজীবনের জন্য তুমি তোমার মিশুমনি কে হারাবে। আর এমনভাবে হারাবে তুমি চাইলেও মিশুমনিকে ছুঁতে পারবে না।”
মিহির মেহরব চৌধুরীর দিকে তাকালো। মেহরব চৌধুরী বুঝতে পারলেন বিষয়টা তিনি বললেন,,
“তোমার স্মৃতি ফিরে এসেছে এটা বলোনি কেন আমাদের?”
তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“এখানে কি হচ্ছে কেউ বলবে প্লিজ?”
মেহরব চৌধুরী বললেন,,
“চার বছর আগে আমার ছেলে মিহির মারা গেছে।ও নিজেও রাজনীতি করতো। আমার ডান হাত ছিল মিহির। ও মাফিয়া টাইপ ছিল কিছুটা ওকে সবাই ভয় পেত। মিহিরের একটা কাজ থেকে ফেরার রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় একটা এক্সিডেন্ট করা গাড়ি দেখতে পায়। আর সেটা কে আমরা জানি না। ছেলেটার জ্ঞান ছিল ও আস্তে আস্তে অস্ফুট স্বরে বলছিল মিশুকে ছেড়ে দিতে। আমরা তো মিশুকেও চিনতাম না এই মিশুই যে সেই মিশু হবে আমরা বুঝতে পারিনি। এটা মিহির বুঝতে পারে যে কেউ ইচ্ছে করে এটা ঘটিয়েছে। তবে ছেলেটার মুখটা থেঁতলে যায়। ও তাড়াতাড়ি করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। তখন ওর একটা ইমার্জেন্সি কল আসে ও পার্টি অফিসের দিকে যাচ্ছিল তখন ভোটের সময় ছিল বিরোধী দলের নেতা আমাকে দূর্বল করার জন্য মিহিরের ওপর এটাক করে। ও কোন রকমে ওখান থেকে পালিয়ে যায় সবাই ওর পিছু ধাওয়া করে। ও দৌড়াতে দৌড়াতে ও আমায় ফোন দেয়। আমি ফোনে কথা বলবো তার আগে ও বলল,,
“বাবা আমার কথা শুনো তোমার বিরোধী দলের নেতা আমাকে মারার জন্য গুন্ডা পাঠিয়েছে। আমি বোধহয় বাঁচবো না তবে হ্যা তোমরা মিহিরকে মরতে দিও না। মিহিরকে মরতে দিলে ওরা তোমায় আঘাত করার সুযোগ পেয়ে বসবে। মিহিরকে একদল ভিশন ভয় পায় বাবা। মিহির যেই হোক না কেন ওর বেঁচে থাকাটা এই সবার জন্য জরুরি।”
“এসব কি বলছিস মিহির?”
“এখনি**** হাসপাতালে যাও ওখানে একটা ছেলে আছে। আমি কিছুক্ষণ আগে ওকে ভর্তি করেছি। ওর মুখটা বাজে ভাবে থেতলে গেছে তবে ডক্টর বলেছে ও বাঁচবে। ওকে বাঁচাও আর মিহিরকে গড়ে তুলো। বাবা আদরকে পিতৃহারা হতে দিও না। এমনিতেই ছেলেটার আমার মা নেই। যদি বাবাও না থাকে তাহলে ও এতিম হয়ে যাবে। আমি জানি তোমরা ওকে কখনো ফেলে দেবে না। তবে আমি চাই ওর বাবা হয়ে কেউ থাকুক। প্লিজ বাবা মিহিরকে মরতে দিও না।”
তারপরেই আমার ছেলেটা আর্তনাদ করে উঠে আর আমি চুপচাপ আমার ছেলের আর্তনাদ শুনতে থাকি। ছেলেটার বুকে ওরা ছুরি বসিয়েছিল আর পা দিয়ে পিষে ধরেছিল গলাটা। নিজেকে কতটা অসহায় মনে হচ্ছিল তা কেউ বুঝতে পারবে না। তারপর আমরা তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে যাই আর অনুভবকেই মিহির হিসেবে তৈরি করি। সেই মিহিরের স্মৃতি ছিল না। যা আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। তবুও আমার কানে তো শুধু মিহিরের কথাগুলো বাজছিল কতোটা অসহায় ছিল আমার ছেলেটা।
সব শুনে শেখ শাহনাওয়াজ মেহরব চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরলেন। মিহির যে মারা গেছে এটা চৌধুরী পরিবার জানে। তাই তেমন রিয়াক্ট করলো না। কিন্তু ছেলের কথা ভেবে মিসেস মেহরবের চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। তা দেখে মিহির মানে অনুভব তার হাত ধরে বলল,,
“একদম কাঁদবে না মা? আমি তো তোমার ছেলে বলো। ছোটবেলা থেকে মা বাবাকে পাইনি। অনুভব থেকে মিহির হওয়ার পর সেটা পেয়েছি। আর আমি কোনোকিছুর মূল্যে আমি তাদের হারাতে চাই না। আমার মন্ত্রীর ছেলে নাম ষশ টাকা পয়সা কিচ্ছু চাইনা। আমার শুধু একটা পরিবার চাই আমার মা বাবাকে চাই।”
মেহরব চৌধুরী মিহিরকে জড়িয়ে ধরলো আর বলল,,
“আমাদের ও শুধু আমাদের ছেলেকে চাই আর কাউকে চাইনা।তুমি নিঃসন্দেহে একজন আদর্শ ছেলে মিহির। এতো দিন ধরে আছো আমাদের সাথে কখনো মিহিরের অভাব বুঝতে দাও নি। ও যেভাবে আমাদের খেয়াল রাখতো তুমিও তার থেকে কম নয় বরং বেশি করো। ”
তখন মাইশা কাশি দিয়ে বলল,,
“মেলোড্রামা পড়ে কোরো মিহির ভাইয়া কোথাও যাচ্ছে না। আমি তো অন্তত যেতে দিচ্ছি না। মন্ত্রী আর মন্ত্রীর বউয়ের কথা জানি না। ”
মিহির মাইশার কান মলে বলল,,
“তবে রে তোকে বাবা মা কিছু বলে না দেখে পেকে গেছিস।”
‘আহ ভাইয়া ছাড়ো এখন বলো তোমার স্মৃতি এলো কবে?”
“আমি তো নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছিলাম ছয়মাস আগে হুট ছোট একটা এক্সিডেন্ট হলো আমি মাথায় আঘাত পেলাম তখন মনে পরেছে।”
তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“কিন্তু আমরা তো অনুভবের বডি পেয়েছিলাম সেটা?”
তখন অনুভব বলল,,
‘শেখ আমজাদ আর আরিফ জামান আমাকে পায়নি দেখে মনে করে হয়তো কেউ আমাকে নিয়ে গেছে। তাই একটা বডি রেখে দেয় যাতে আপনারা বিশ্বাস করে নেন আমি এই পৃথিবীতে নেই। তবে এটা নিয়ে তারা ভয়েই থাকতেন যে অনুভব না আবার কখনো ফিরে আসে।”
“তোমাকে এসব বললো কে?”
“আপনার মেয়ে মেহবিন মুসকান বলেছে। ও সব জানে আমার ব্যাপারে। মিশুর প্রতি তাকিয়ে থাকা ওর প্রতি কেয়ারিং দেখে আর মিশুর চোখের ভাষা দেখে ওর সন্দেহ হয় এরপর আমাকে চেপে ধরে আমিও বলে দিই সব।”
‘ওর তীক্ষ দৃষ্টির জন্যই ওকে কেউ হারাতে পারে না।”
তখন আরবাজ বলল,,
“আচ্ছা তবে মিশু জানলো কিভাবে এটাই অনুভব। ফুল বলেছে?”
তখন মিশু বলল,,
‘না ফুল বলেনি। চোখ দেখেই সন্দেহ হয়েছিল কয়েকদিন আগে মামা বাড়ি গেলাম। তখন উনি আমার বিরহে আমার হাত ধরে কাঁদছিলেন। আমি ওনার জন্য পাগল হয়েছি সেই জন্য। আমার তো বেশি ঘুম আসে না ঘুম আসার ভান ধরে পরে থাকি যাতে ঘুম আসে সেদিন ও তাই হয়েছিল।”
তখন আরবাজ বলল,,
‘বাপরে মিশু তোর ঘুম তো দেখি সেই ডিটেক্টটিভ তুই তোর ঘুমের মধ্যেই সব জানতে পারিস।”
“সব বাদ এহন কও আমার বিয়া কবে দিবা? এই বিধবা মিহিরের সাথে। রেডিমেট বাচ্চাও পাইছি এইবার। পোলাডাও আমার মেলা কিউট। আমার সাথে খুব ভাব। নামটাও আদর দেখলে খালি আদরই করতে মন চায়।”
মিশুর কথা শুনে সবাই হেঁসে ফেললো। মিশু নিজেও হাসলো। এ কয়েকদিন পাগলের একটিং করে এখন পাগলামো তার শরীরে মিশে গেছে। অতঃপর শেখ শাহনাওয়াজ ভাবলেন তিন ছেলে মেয়ের বিয়ে একসাথেই দেবেন তিনি। দুই মেয়ের বিয়ে তো আগে থেকেই হওয়া এখন নতুন করে আবার একটু তাই।
_____________
“এই যে নেত্রী দেখো পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা আইসা পরছে ?”
তাজেল হুইলচেয়ার বসে ছিল মুখরের কথায় ওর দিকে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না। ওর এক হাতে আর পায়ে ব্যান্ডেজ। মাথার ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে গতকাল এখন নেই। নেত্রীর ভাব দেখে মুখর একটু দমলো। মেহবিন তাজেলের সামনে গিয়ে বলল,,
‘নেত্রী ঘুরতে যাবা আজ!”
তখন মুখর বলল,,
“এই আমিও যাবো।”
‘নেত্রী বললে আপনাকে নেব না হলে নেব না।”
“এই নেত্রী তুমি নেবে আমায়?”
তাজেল এবারও মুখরের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো কিছু বললো না। তা দেখে মুখর বলল,,
“নিরবতা সম্মতির লক্ষণ তাহলে আমি যাবো । তবে ভাবছি আমি আর ডাক্তার যাবো নেত্রীকে নেব না।”
বলেই মুখর ভয়ে ভয়ে তাজেলের দিকে তাকালো তাজেল রাগে ফুঁসছে। তা দেখে মুখর দাঁত কেলিয়ে বলল,,
“সত্যিই নেত্রীকে রেখে যাবো?”
তখন তাজেল চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,,
‘ডাক্তার পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালারে কইয়া দাও আমি হেতিরে নিমু না। ডাক্তার আমার লগে যাইবো খালি।”
তাজেলের রাগ দেখে মুখর আর মেহবিনের হাঁসি পাচ্ছে তবে এখন হাসির সময় না। মুখর অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল,,
“কেন কেন? আমায় নিবে না কেন?”
“আমি কিছু কইতাছি না দেইহা ডাক্তার আমারে নিয়া ঘুরতে যাইতে চাইছে। আর তুমি আমারে বাদ দিয়াই ঘুরবার যাইতে চাইতেছো? যাও তুমারেই নিমু না। আমি আগে ভাবছিলাম তুমি ভালা তা দেহি তুমি ভালা না।”
“আরে ওমন করো কেন আমি তো মজা করছিলাম তোমার সাথে? নাও না একটু?
“না নিমু না তুমি আমারে রাইখা যাইতে চাইছো তুমারেই নিমু না।”
“আরে নেত্রী আমি তো পুরোনো নেত্রীরে আনার জন্য এসব বলছি। মনে মনে আমি ওসব কইনাই বিশ্বাস করো।”
‘যতোই ঢপ মারো আইজ এনে চিরা ভিজবো না।”
“এখন তোমার ডাক্তারকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেও তুমি কিছু করতে পারবা না। তুমি তো চেয়ারেই থাকবা।”
“ডাক্তার ভালো হইবো না কইলাম। কুন সময় জানি হেতির মাথা পেইছা আমি বাড়ি মারুম। ”
‘লাঠি কোথায় পাবা? যে বাড়ি মারবা? তুমি তো উঠতেও পারবা না।
মুখরের কথা শুনে মেহবিন ওর দিকে তাকিয়ে রইল। আর তাজেল রেগে বলল,,
‘আমি খালি ঠিক হই পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা আমার হাত থেইকা তোমারে ডাক্তার ও বাচাইতে পারবো না। আমি উঠবার পারতেছি না দেইহা তোমার আনন্দ লাগতাছে তাই না।”
এইবার মুখর সিরিয়াস হয়ে গেল। ও তাজেলের সামনে গিয়ে ওর হাত ধরে বলল,,
“বিশ্বাস করো নেত্রী তোমাকে এইভাবে দেখতে আমার একটুও আনন্দ লাগছে না। কিন্তু কষ্ট লাগছে আমি তো ছি নেত্রীকে কখনো দেখিনি । আমি তো সেই নেত্রীকে দেখেছি যে সবসময় লাফালাফি করে। তার ডাক্তারের জন্য আমার সাথে ঝগড়া করে। ডাক্তারের সবসময় খেয়াল রাখে। আমি এই নেত্রী কে দেখে একটুও আনন্দ পাই না। আমি তো আগের নেত্রীকে দেখে আনন্দ পেতাম। আমি আমার পুরোনো নেত্রীকে চাই যে আমার সাথে ঝগড়া করবে তার ডাক্তারের জন্য।
সব শুনে তাজেল ওর দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে রইল তারপর বলল,,
“আমার দিকে ওরমভাবে তাকাই রইছো ক্যা? আর হাত ছাড়ো পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা আমার শরম করে।”
কথাটা শুনে মুখর হা হা করে হাসতে লাগলো। মেহবিন মুচকি হাসলো। মুখর বলল,,
‘তুমি জানো এই কথাটাই আমি সবথেকে বেশি মিস করেছি পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা আমার শরম করে।”
তাজেল হেঁসে ফেলল তারপর বলল,,
“আইজ মাস্ক পড় নাই ক্যা?”
‘এখন থেকে আর পরতে হবে না নেত্রী এখন সবাই জানে আমি তোমার ডাক্তারের জামাই।”
তাজেল হাসলো।তখন মেহবিন তাজেলের গালে হাত দিয়ে বলল,,
“এভাবেই সবসময় হাসিখুশি থেকো নেত্রী। তোমার যেমন তোমার ডাক্তারের হাঁসি মুখটা পছন্দ।আমার ও তেমন আমার নেত্রীর হাঁসি মুখটা পছন্দ। তোমাকে চঞ্চলতায় মানায় নিরবতায় না। যা হয়েছে সব ভুলে যাও শুধু মনে রেখো তোমার ডাক্তার আছে তোমার সাথে আর সবসময় থাকবে। তোমাকে নিজের আকাশ তৈরি করতে সাহায্য করবে। সবশেষে আমার নেত্রী সবসময় আমার সাথে আর হাসিখুশি ভাবে থাকবে।”
তাজেল হেঁসে বলল,
“তোমার শ্বশুরবাড়ি ও আমারে নিয়া যাইবা নাকি?”
‘হ্যা তো! না হলে আমি শ্বশুরবাড়ি যাবোই না।”
‘কেউ কিছু কইবো না। তুমি জানো ঐ বাড়ির কাকি তার বইনেরে আইনা রাখছিল এক বছর পরে কাকা আর দাদি অনেক কিছু কইছে পরে ঐ খালা চইলা গেছে।”
তখন মুখর বলল,,
“যেখানে নেত্রীর ডাক্তার আর নেত্রীর পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা আছে সেখানে কে কি বলবে। তাছাড়া জানো আমার বাড়ির হোম মিনিস্টার বলেছে তোমাকে নিয়ে যেতে।”
তাজেল একটু রাজি না বুঝতে পেরে মেহবিন আর মুখর অনেক ভাবে বোঝালো। পরে সে মানলো তারপর বলল,,
‘ডাক্তার যেনে আমিও হেনে থাকুম।”
এটা শুনে মেহবিন আর মুখরের মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। বিকেলটা ওরা সারা গ্ৰাম চক্কর দিল। রাতে মুখর তাজেলের খুশির জন্য কাচ্চি নিয়ে এলো। মেহবিন খায়িয়ে দিল। তিনজনেই একসাথে খেল। মেহবিন তাজেলকে ঘুম পারিয়ে দিল। তাজেল ও টেডিবিয়ার ধরে ঘুমিয়ে পড়লো। রাত নয়টা মুখর মেহবিনকে পেছনের বারান্দায় ডাক দিল। মেহবিন গেল সেখানে। মুখর ওর হাত ধরে ওর পাশে বসিয়ে দিল আর বলল,,
“আমি কিন্তু তোমার কাজে জয়ী হয়েছি আমার পুরস্কার এর জন্য প্রস্তুত হও।”
তোমার চোখে এই নগরীর ঘুমন্ত রাত,
আধারগুলির মৃত্যু ঘটে রাঙা প্রভাত!
গন্ধে তোমার ছুটছে কুমার তোমার বাড়ি
হাত বাড়ালে ধরছি তোমার প্রেমের শাড়ি।
তোমার প্রেমে সিক্ত মনের শহরতলি,
সেই শহরে মুচড়ে নিলাম বিষাদথলি!
এই সেই শাখা আমি তুলসীপাতা,
আমার নামে গেথে নিলাম আবার নকশিকাঁথা
~রোজ (কাব্যের বিহঙ্গিনীর পাঠক বিহঙ্গিনীর জন্য লিখে পাঠিয়েছেন।
মেহবিন কবিতা শুনে মুচকি হেঁসে বলল,
“আপনার পুরস্কার প্রস্তুত কাব্য! কারন আজ আপনার বিহঙ্গিনী হয়তো খুব খুশি।
মুখর মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘ চলো না বিহঙ্গিনী একটু নির্জনে হেঁটে আসি। অনেকদিন হলো তোমার হাত ধরে হাঁটা হয় না। নির্জনে হাঁটা সুন্নত চলো আজ না হয় একটু সুন্নত পালন করি। নেত্রী ঘুমিয়ে পরেছে সমস্যা নেই।”
‘চলুন!”
মেহবিন আর মুখর সাবধানে বের হলো সব আটকিয়ে। আজকে পুরো চাঁদ আছে। রাস্তাঘাট পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। ওরা কিছুক্ষণ হাত ধরে হাটলো। হাঁটতে হাঁটতে ওরা একটা মাঠের কাছে এসে পরেছে । আর ওখানেই মুখরের গাড়ি রাখা। মুখর মেহবিন কে বলল,,
“একটু চন্দ্রবিলাশ করা যাক গাড়ির ওপর বসে?”
মেহবিন হেঁসে সায় জানালো। অতঃপর দুজনে গাড়ির ওপরে উঠে বসলো। দুজন কিছুক্ষণের জন্য মৌন রইলো। মেহবিন চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। আর মুখর মেহবিনের দিকে। হুট করে মেহবিন মুখরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আপনি জানেন কাব্য আমার একাকীত্বের শহর আমার খুব যত্ন করে গড়া। তার দেয়াল এতটাই শক্তিশালী যে সহজে কেউ আঘাত করে ঘায়েল করতে পারে না। আমার আমিকে খুব যত্ন করে একাকীত্বের শহরে পুষি। যার দুঃখ প্রকাশ পায় না। আজ কেন যেন আমার দুঃখ প্রকাশ করতে ইচ্ছে করছে আজ ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙতে চাইছে। আমি চেয়েও আমার সহনশীলতা কে ধরে রাখতে পারছি না কাব্য। যা আমি এতোকাল ধরে করে এসেছি ধীর স্থিরতার সাথে আজ সেই হিসেবে আমি বিজয়ী।
মেহবিনের কথা শুনে মুখর বলল,,
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,,
“তোমাদের মধ্যে এমন দুটি অভ্যাস রয়েছে, যা স্বয়ং আল্লাহ্’ও পছন্দ করেন। একটি হলো ধৈর্য ও সহনশীলতা, অপরটি হলো ধীর-স্থিরতা।” [সুনানে আত-তিরমিজি, ২০১১]
সেই জন্যই তুমি আজ সফল বিহঙ্গিনী।”
মেহবিন বলল,,
“তবে আমি এতদিন ধৈর্য্য আর সহনশীল হয়ে থাকলেও। আজ ভেতরের চাঁপা কষ্ট গুলো আর চাপা থাকতে চাইছে না। ঐ দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন কি কখনও ঠিক কতোটা বিশালতা বিরাজমান? যখন রাতের নিস্তব্ধতা আর সাথে থাকে অসংখ্য তারা আর একটি মাত্র শুভ্র রাঙা জোসনা মাখা চাঁদ । কখনও কি সাগরের দিকে তাকিয়ে ভেবেছেন তার গভীরতা ঠিক কতোটা ? আমার সবাই থেকেও কেউ নেই কাব্য । কাব্য আজ কি আপনি আমার এক টুকরো চাঁদ হবেন ? যার কাধে মাথা রেখে আমি আমার সকল কষ্ট বেদনা ভুলে একটু প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেব ? একটুখানি আগলে নিবেন কি আপনার বিহঙ্গিনী কে ?
মেহবিনের কথায় মুখরের চোখ ছলছল করে উঠলো। মুখর বুঝতে পারলো চাঁদের দিকে তাকিয়ে সে এতোক্ষণ নিজের জীবনের হিসাব মিলাচ্ছিল। মুখর মেহবিনকে খুব শক্ত করে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। মেহবিন মুখরের কাঁধে মাথা রাখলো। আর বলল,,
“তোমার কাব্য সবসময় আছে তোমার সাথে বিহঙ্গিনী।
আর সারাজীবন তোমায় আগলে নেবে।”
মেহবিন পাশে তাকালো আর বলল,,
‘অনেক রাত হয়ে গেছে চলুন বাড়ি যাই কাব্য!”
বলেই মেহবিন গাড়ির ছাদ থেকে নামার জন্য এগুলো।মুখর কিছু একটা আন্দাজ করে ওকে নামতে সাহায্য করলো আর নিজেও নামলো। কিছুদূর আসতেই মুখর মেহবিন কে কোলে তুলে নিল। আর বলল,,
“এই মুখর শাহরিয়ার কাব্য কখনো তার বিহঙ্গিনীকে কষ্ট পেতে দেবে না। ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবে সর্বদা।”
~চলবে,,
বিঃদ্রঃ আজ এইটুকুই বোনাস। এর থেকে বেশি দেওয়া পসিবল না। যাই হোক পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন। তাড়াহুড়োর জন্য কিছু ভুল টাইপিং থাকতে পারে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।