প্রেমকুঞ্জ 💓 #মিমি_মুসকান ( লেখনিতে ) | সপ্তম পর্ব

0
74

#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
| সপ্তম পর্ব |

ইরা ঘন্টা খানিক ধরে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার এপারে। পরনে শাড়ি টা কে ঠিক করছে বার বার। আকাশের কাঠফাটা রোদ কমে গিয়ে এখন একটু ছায়ার দেখা পাওয়া যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আকাশ মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। ইরা’র হচ্ছে করছে নদীর ঘাটে গিয়ে খানিকক্ষণ বসে থাকতে। তিতির কে আজ বলবে, আমাকে নিয়ে একটু নদীর ঘাটে চলো না। দু’জনে মিলে নদীর জলে পা চুবাবো। যদি নৌকা থাকে তাহলে বেশ হবে। দু’জনে মিলে একটু নৌকাতেও চড়া যাবে! কিন্তু এসব তার শুধুই কল্পনা। তিতির কখনোই তার সাথে যেতে রাজি হবে না। কেন জানি সবসময় এড়িয়ে যেতে চায় সে! চাঁপা শ্বাস ফেলে সামনে তাকাল ইরা! তিতির আসছে! ইরা চোখ ছোট ছোট করে তাকাল। তিতির আজ পাঞ্জাবি পড়েছে। বাদামী রঙের একটা পাঞ্জাবি যদিও তিতির কে কখনো পাঞ্জাবি পড়া দেখে নি সে। খানিকটা অবাক হলো। পাঞ্জাবি পড়ার বিশেষ কোন কারণ কি ছিল আজ? কি হতে পারে সেটা? কোন মেয়ে! যদি মেয়ে হয় তাহলে সেটা ইরা না এটাতে সে শতভাগ নিশ্চিত। কারণ তিতির জানে না ইরা আজ এখানে আসবে কিন্তু ইরা জানত তিতির এখানে আসবে। তার মন বলছিল তিতির আসবে। তাই তাড়াহুড়ো করে শাড়ি পড়ে ছুটে এসেছে সে!
ইরা কে দেখে মুচকি হাসল তিতির। ইরার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল‌। তিতির কাছে এসে বলল,

“তুই এখানে?

“এভাবেই এলাম কিন্তু তুই?

“একটা কাজে এসেছি!

“পাঞ্জাবি পড়েছিস, বিশেষ কোন দিন আজ!

“না বিশেষ কোন দিন না। মা আমার সব শার্ট গুলো একসাথে ধুয়ে দিয়েছে তাই বাধ্য হয়ে পাঞ্জাবি পড়েছি। কেন খারাপ লাগছে খুব!

“না বেশ মানিয়েছে!

“তোকেও সুন্দর লাগছে!

ইরা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। মনে হলো তার এখানে আসা সার্থক হয়েছে। তিতির বলে উঠল, আচ্ছা আমি যাই কেমন?

“কোথায় যাবি?

“এই একটু নদীর ধারে, কেন?

“আমিও যাবো!

“তুই যাবি কেন?

“এমনেই!

“এমনেই কেউ যায়?

“তাহলে তুই কেন যাচ্ছিস, কোন কাজ আছে নাকি তার!

“না কোন কাজ নেই, ইচ্ছে করছে শুধু একটু গিয়ে নদীর ধারে বসে থাকতে।

“আমারও ইচ্ছে করছে চল!

তিতিরের হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে ইরা। মনটা হঠাৎ করেই বেশ ফুরফুরে হয়ে গেল মনে হলো। তার প্রতিটি ইচ্ছা পূরণ করছে। ইশ! যদি আজ অন্য কিছু চাইতো তাহলে বোধহয় সেটাই পেতো! আফসোস হচ্ছে এখন..

——–

প্রতিদিন একবার করে গোলাপ ফুলটা দেখে শ্রেয়া। ফুলটা সে কেন এখানে রেখেছে জানে না কিন্তু তার কাছে ফুলটা খুব ভালো লেগেছে। বিশেষ ভাবে ভালো লাগার কারণ ছিল এই প্রথম তাকে কেউ ফুল দিলো এটা ভেবেই। কখনো ভাবতে পারে নি কোন ছেলে তাকে ফুল দিবে। ফুলটার প্রতি খুব সাবধানতা অবলম্বন করছে শ্রেয়া। কেউ যাতে ফুল দেখে না ফেলে সেই ব্যাপারে বিশেষ সর্তক সে। সেদিন তো তিতির ভাই দেখেই ফেলেছিল। ভারি ভারি গলায় জিজ্ঞেস করল, ফুলটা কোথায় পেলি শ্রেয়া!

শ্রেয়ার তো মনে হলো শ্বাস বুঝি এবার বন্ধ হয়ে যাবে। কথা বলতে গিয়েও তোতলাতে লাগলো। তবুও ভয়ে ভয়ে বলল, রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছি ভাইয়া!

“যা রাস্তায় পাবি তাই’কি আনতে হবে নাকি। আর এনে রাখলি তো কোথায় বইয়ের ভেতর। বলি তোর কি কান্ডজ্ঞান জীবনে হবে না।

“ফুলটা সুন্দর ছিল বলে..

“কোন ফুল অসুন্দর বল তো! এসব ঢং রেখে এবার পড়তে বস। পরিক্ষায় এবার খারাপ করলে পা ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখবো ‌

শ্রেয়া মাথা নেড়ে পড়তে বসল। কিন্তু হঠাৎ মনে হলো সে ভুলেই গেছে কিভাবে পড়তে হয়!

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বইয়ের পাতা বন্ধ করে দিল শ্রেয়া। মাথা রাখল টেবিলের উপর। তার মনে হচ্ছে তার দ্বারা আর পড়ালেখা হবে। কোন কিছুতেই মন নেই তার! পড়ালেখায় তার মন না বসলে এখানে তার দোষ কি? স্কুলের স্যার ম্যামরা খুব কথা শোনায় যখন পড়া না পারে। অতঃপর কিছুক্ষণ পর বলে, হ্যাঁ তাই তো পড়ালেখা শিখে কি হবে। শেষ তো রান্না ঘরে গিয়ে বাসন’ই মাজতে হবে। তা সেটা কি এখন থেকেই শিখে রেখেছ নাকি!

সবাই তখন জোরে হাসাহাসি করে তাকে নিয়ে। শ্রেয়ার খুব লজ্জা করতো। মাথা নিচু করে কলম আঁকড়ে ধরতো সে। খুব কান্না পেতে। ইচ্ছে করতো জোরে জোরে কাঁদতে। কিন্তু তাও করতে পারতো না সে। মাথা নিচু করেই বসে থাকতো পুরো ক্লাসে!

মামুন কে আজও দেখতে পেয়েছে সে। কি কুৎসিত ভাবে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিল সে। সিগারেটের গন্ধ সহ্য হয় না শ্রেয়ার। তবুও দূর থেকে দাঁড়িয়ে মামুন কে দেখে যাচ্ছিল সে। মামুন তার দিকে ফিরতেই তড়িখড়ি করে হেঁটে চলে এলো সে। গলির ভেতর ঢুকে গিয়ে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। তার বুক ধক ধক করছে। কিন্তু কেন ভয়ে নাকি খুব জোরে হেঁটে এসেছে তাই। শ্রেয়া উঁকি মারলো সেই রাস্তা দিয়ে। মামুন তার পিছনে পিছনে আসছে কি না সেটাই দেখছে সে। না আসে নি। কারণ কি? এখন আর আগের মতো ছেলেরা তাকে বাজে কথা বলে না। তাকে দেখলেই মাথা নিচু করে নেয়। কারণটা এখনো অজানা শ্রেয়ার কাছে। তবে তারা সবাই ভালো হয়ে গেছে!

——-

আমার মা এবার অসাধ্য সাধন করেছে এটা বলা যেতেই পারে। হুম সে এবার আমাদের নিচ তলা ভাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে। তাও কোন পরিবার কে না একটা ব্যাচেলর ছেলেকে। এটা শুনেই যেন আমার চক্ষু চড়কগাছ! কিভাবে করল মা এ কাজ! শুধু আমি অবাক না, বাবা, তিতির,শ্রেয়া এমনকি ঊষা অবদি অবাক। রান্না ঘর থেকে উঁকি মেরে তাকিয়ে কথা শুনছিল সে। মা এক ধমক দিতেই দৌড়ে গেল রান্না ঘরে। বাবা শান্ত গলায় বলল, কাজটা কি ঠিক হলো?

“ভালো খারাপের তুমি কি বুঝ!

“না তা বলছি না, বাইরের লোকে কি বলবে!

“লোকে আবার কি বলবে? একদিন না খেয়ে থাকলে কি ওরা এসে ভাত দিয়ে যাবে।কই তা তো দেবে না। এখন যদি ভাতের বদলে দু একটা কথা শোনায় তাহলে তা শুনে হজম করে নিয়ে।

“ব্যাচেলর ছেলে, ভাড়া ঠিক মতো পাবে।

“সেটা নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। তিন মাসের ভাড়া এডভান্স নিয়ে রেখেছি!

“ওহ আচ্ছা ভালো করেছ!

মা চোখ রাঙিয়ে তাকালেন।

তিতির হেসে বলল, একদম ঠিক বলেছ মা। ভালোই করেছো এখন আমিও একটা মানুষ পাবো যার কাছে কথা বলে খানিকটা সময় পার করা যাবে!

মা শ্রেয়ার মুখের দিকে তাকালেন। শ্রেয়া মাথা নিচু করে নিল। মা কর্কশ গলায় বললেন, পড়তে বসেছিলি!

শ্রেয়া মাথা নাড়ল! মা বললেন, উদ্ধার করেছিস।

শ্রেয়া হাত পা গুটিয়ে নিল। বাবা বলে উঠেন, কি করছো তুমি? ওর উপর রাগ দেখাচ্ছ কেন?

“রাগ দেখাচ্ছি না। আমার রাগের দাম তোমরা কে দাও বলো তো। এতো করে বললাম ব্যবসা করো না। এটা তোমাকে দিয়ে হয় না। কই তবুও তো এটাই করো তুমি। আর দুদিন পর পর লোকসান হলে ঘরে বসে থাকো। তিনটে ছেলে মেয়ে আছে আমাদের। তাদের কথা কখনো ভেবেছ? খাওয়াতে পড়াতে হবে সেই চিন্তা আছে। মেয়ে বড় হচ্ছে এখন অবদি কি বিয়ের কথা বলেছে! আমার ভাই একটা সম্বন্ধ আনলো, নাকোচ করে দিলে তুমি। কি মেয়েকে সারাজীবন নিজের কাছে রেখে দেবে বলে ভেবে রেখেছ নাকি। মেয়েকে রেখে দিলে তখন কি বাইরের মানুষ কিছু বলবে না তোমায়?

“আহ চুপ করো তো!

“কেন? গায়ে ফোস্কা পড়লো নাকি।‌ সত্যি কথা হলো বলছি না এখন তো ফোস্কা পড়বেই!

মা তর্ক শুরু করে দিলেন বাবা’র সাথে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। রান্না ঘরে এসে হাত বাড়াতে থাকি ঊষা’র সাথে। ঊষা ফিসফিস করে বলে, খালার কি মাথাটা গেছে নাকি আফা!

“কেন, কি করল আবার তোর খাল!

“কি করে নাই কও? চিনে না জানে না একটা পোলারে ঘরে আইসা চা খাওয়ালো!

“তো কি হয়েছে?

“তুমি জানো ওই পোলায় তোমাগো বাড়ির নিচতলা ভাড়া নিছে।

“ওহ এতো ভালো।

“ভালো না ভালো না। আফা হুনো, পোলায় অনেক বড় একটা গাড়ি লইয়া আইছিলো। হের মানে পোলা অনেক টাকা পয়সা। এই পোলা তোমাগো এই হানে বাড়ি ভাড়া কেন নিবো। নিশ্চিত কোন ধান্দা আছে ‌, বুঝলা!

“বুঝলাম! তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস। অনেক কিছু ভাবতে লিখেছিস। কিন্তু তোর এতো কিছু নিয়ে চিন্তা করা লাগবো না।

“আরেকটা কথা তুমি জানো।

“বল শুনি!

“পোলা এক কাপ চা খাওয়ার পর আরেককাপ চাও খেতে চাইছে। বলতাছে তোমার হাতের চা অনেক ভালো।

“ভালো তো, তোর চায়ের প্রশংসা করল। সত্যিই তো তুই চা টা ভালো করিস!

“না গো আফা মতলব আছে আমি কইলাম। পোলা ধান্দা বাজ!

ঊষার কথা শুনে হেসে দিলাম। ঊষা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, তুমি হাসো!

“কই না তো! বলার পরও আবারো হেসে দিলাম। ঊষা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল!

আজ মাসের ১ তারিখ! নতুন ভাড়াটিয়া আসার কথা। সকাল বেলা গোসল করার পর ছাদে এসে কাপড় শুকাতে দিলাম। নিচ থেকে গাড়ির আওয়াজ পেলাম তখন। ছাদের গ্রিলে দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে দেখি নতুন ভাড়াটিয়া’র জিনিসপত্র! মা বলল ব্যাচেলর কিন্তু জিনিসপত্র দেখে মনে হচ্ছে একটা গোটা ফ্যামিলি থাকবে এখানে। হঠাৎ রিক্সা করে দুজন ছেলে নামল। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। একে খানিকটা ফরহাদের মতো লাগছে! লাগছে না এটা সত্যি ফরহাদ!

নিলুফারের বাড়ির সামনে এসে রিক্সা থামল। ফরহাদ বের হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সিদ্ধান্তটা ঠিক কি না জানে না তবুও মনে হচ্ছে এটাই ঠিক। মনের কোনে এক ধরণের শান্তি অনুভব করছে সে! জানে নিলুফার তাকে ভালোবাসে না তার প্রেমিক আছে তবুও তাকে এক দন্ড দেখার যে তৃষ্ণা, তা মেটাতে এখানে আসতে হলো তাকে। আজকের সকালের আকাশ টা অনেক সুন্দর! নীলুফার কি বের হয়ে গেছে নাকি! কি জানি? শরীর টাকে তরতাজা করতে বুক করে শ্বাস নিল ফরহাদ। আকাশের দিকে তাকিয়ে শ্বাস নিতেই চোখ দুটো আটকে গেল আর। ছাদের উপর থেকে নিলুর মুখখানা দেখে তৃপ্তি পেল সে!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here