প্রেমকুঞ্জ 💓 #মিমি_মুসকান ( লেখনিতে ) | অষ্টম পর্ব

0
141

#প্রেমকুঞ্জ 💓
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
| অষ্টম পর্ব |

“আমি তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই তিতির!

তিতির মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। বুড়িগঙ্গা নদীর ধারে বসে আছে ইরা আর তিতির! নদীর পানি বয়ে যাচ্ছে বাতাসের সাথে সাথে! এই নিয়ে পর পর তিন দিন দুজনে একসাথে এলো এখানে। বাতাসের শো শো শোনা যাচ্ছে। ইরা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিতিরের দিকে। তিতির আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ইরাও তিতিরের সাথে তাল মিলিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। পরিষ্কার নীল আকাশ, না আছে রোদ্দুর আর না মেঘ। নীল এই আকাশ দেখলে তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে। আজ দু’জনেই কলেজে না গিয়ে এখানে এসেছে। আগে থেকে কোন চিন্তা ভাবনা ছিল না‌। তিতির যেই রাস্তা দিয়ে কলেজ যাবার কথা ইরা আগে থেকেই সেখানে বসা ছিল। অতঃপর ইরা একবার জিজ্ঞেস করতেই তিতির চলে এলো। না করল না, ঘন্টার পর ঘন্টার এখানে বসে থাকতেও বিরক্ত লাগে না তার!

অনেকক্ষণ পরেও ইরার কোন কথা শুনতে না পেয়ে তিতির ফিরল ইরার দিকে। চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে মুখ করে আছে ইরা। তিতির হালকা কেশে বলল, “কি জানি বলবি বলছিলি!

“হুহ!

“তো বল?

ইরা হাসল! তিতিরের দিকে মুখ ফিরে বলল, নিউ মার্কেট যাবি আমার সাথে!

“কেন?

“মার্কেটে কেন যায় মানুষ!

“তোরা মেয়ে মানুষ এতো সব কি কিনিস বল তো।

“তোরা ছেলে মানুষ, শুধু কিনিস তো নিজের জন্য। মাঝে মধ্যে সেটাও কিনিস না। সব কিছুতেই তোদের আলসেমি আর আমরা মেয়েরা! আমরা সবার কথা ভাবি! সবার জন্য আমাদের কিনতে হয়। মা, বাবা, ভাই আর..

“আর!

“প্রিয় মানুষ!

তিতির শব্দ করল হাসল। হাত দুটো মাটিতে রেখে ইরার দিকে ফিরে বলল, ভালোই বললি। সবকিছু তোরা কিনিস, সবার জন্য ভাবিস কিন্তু কেনার জন্য যেই টাকার দরকার তা জোগাড় করিস কোথা থেকে!

ইরা হাসল। জবাব দিল না। তিতির উঠে দাঁড়িয়ে বলল, চল! দুপুর গড়িয়ে গেছে। তোর আবার তো মার্কেটে যেতে হবে। এরপর না হলে দেরি হয়ে যাবে।

ইরা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, নে উঠা আমাকে!

“নিজে উঠ!

“তিতির মানুষ আমি, মেয়ে মানুষ। আমাকে ধরলে পুড়ে যাবি না বরং.. ( বলেই মিটিমিটি হাসতে লাগলো )

তিতির ভ্রু কুঁচকালো। “হাসছিস কেন?

“আমার হাসি অনেক সুন্দর তাই তোকে দেখাচ্ছি, দেখ আমার হাসি!

অতঃপর খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো। তিতির সত্যি ইরার হাসির দিকে তাকিয়ে রইল। হাসির শব্দটা কানে বাজছে। ভালো লাগছে তিতিরের। কিন্তু এই ভালো লাগা ক্ষণিকের জন্য। মুহুর্তে ইরার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বলল, নে উঠিয়ে দিলাম!

“আহ আস্তে, মেরে ফেলবি নাকি।

“যা বাবা, হাত ধরলেও দোষ না ধরলেও দোষ।

“ঠিক বলেছিস, মেয়েদের হাত এমন একটা জিনিস যা ধরলে সারাজীবন ছেলেদের পস্তাতে হবে আর না ধরলেও পস্তাতে হবে, হি হি!

“রাখ তো বচন!

“আরে বচন না সত্যি!

“আচ্ছা তখন আর্ধেক কথা বলে থেমে গেলি কেন?

“কখন?

“ওই যে কথা বলে মিটি মিটি হাসতে লাগলি!

“মেয়ে মানুষের হাত ধরলে পুড়ি যাবি না বরং, এইটা!

“হুম , এই বরং এর পর কি?

ইরা আবারো মুখ টিপে হাসলো। তিতিরের কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলল, বরং প্রেমে পড়ে যাবি!

তিতির চোখ বাকিয়ে তাকাল। ইরা নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বলল, এর মানে হলো আর বেশি সময় নেই। তুইও আমার প্রেমে পড়বি বুঝলি তিতির!

তিতির ইরার কথার পাত্তা দিল না। হন হন করে হেঁটে চলে গেল। ইরা কাঁধের ব্যাগ শক্ত করে ধরে তিতিরের পিছন দৌড়াতে দৌড়াতে বলল, থাম তিতির, আর থাম না!

তিতির থামে না, নিজের মতো করে হেঁটে চলে যেতে থাকে। হঠাৎ করেই ইরা এসে তিতিরের হাত শক্ত করে ধরে। তিতির চমকে উঠে হাত সরিয়ে নিতে চায়। ইরা তখন শক্ত করে ধরে বলে, আরে ভয় পাস না। আমি তখন তোর সাথে মজা করেছিলাম। হাত ধরলেই বুঝি প্রেম হয়ে যায়। এসব কথা বিশ্বাস করিস নাকি তুই। তিতির তুই কিন্তু খুব ভিতু! এই ভয়ে আমার হাত ধরতে চাইছিস না।

“তোর পাগলামি বন্ধ করবি!

“আচ্ছা যা বন্ধ করলাম। কিন্তু তুই বল প্রেমে পড়া কি এতো সহজ নাকি। এই যে আমি তোর হাত ধরলাম তোর মনে কি অস্থিরতা চলছে বল!

“মানে..

“আমি জানতাম তুই বুঝবি না, এসব প্রেম ভালোবাসা তোকে নিয়ে হবে না। প্রেমে পড়া এতো সহজ না বুঝলি। যার প্রেমে পড়বি সারাক্ষণ শুধু তাকে নিয়েই ভাববি। সে থাকবে তোর স্বপ্নে। তোর পুরো মস্তিষ্ক ভর করে থাকবে পুরো পেত্নির মতো! তবুও তোর বার বার মন চাইবে এই পেত্নির সাথে থাকতে।

অতঃপর শব্দ করে হেসে হাত সরিয়ে ফেলে ইরা। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বলে, চল দেরি হয়ে যাচ্ছে। কেনাকাটা করতে হবে আমাদের।

পা বাড়িয়ে এগিয়ে যায় ইরা। তিতির সেখানে দাঁড়িয়ে নিজের হাতের দিকে তাকায়। এখনো ইরার হাতের অনুভূতি হচ্ছে তার। ইরা তার পাশাপাশি থাকলেই অস্থিরতা অনুভব করে সে। একা থাকলেই ইরার কথা মনে পড়ে। কিন্তু এসব কথা ইরা কে বলবে না সে কখনো না!

ইরার মন খারাপ, আজও সেই কথাটা বলতে পারল না তিতির কে। প্রতিদিন বাসা থেকে বের হবার আগে ভেবে আসে আজ বলবে আজ বলবে কিন্তু এই আজ আজ করতে করতেই দিন পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কথাটা বলা হচ্ছে না। আদৌও কি বলতে পারবে কি না জানে না। আচ্ছা তিতির’র কি তার মনের কথা কখনো বুঝবে না। বোধহয় না কারণ মনের কথা বুঝতে হলে মনের মাঝে তাকে রাখতে হয়। আর তিতিরের মনের মাঝে হাজারো চিন্তা, এসবের এক কোনে তার ঠাঁই হবে বলে মনে হচ্ছে না!

——

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল। এতোক্ষণে বোধহয় ঘর গোছানো শেষ। শেষ হবার’ই কথা, সাথে এতোজন বন্ধু আনলো সবাই মিলে হাতে হাতে কাজ করলে তো কাজ শেষ হয়েই যাবে! মা আমার দরজায় কড়া নেড়ে বলল, নিলু আছিস!

“হুম বলো!

“ভার্সিটিতে গেলি না যে শরীর খারাপ নাকি।

“যেতে ইচ্ছে করছে না তাই যায় নি, তুমি কিছু বলবে।

“হুম, জানিস নিচে গিয়েছিলাম।

“ওহ ভালো তো।

“ছেলেটাকে দেখে ভালোই মনে হচ্ছে। বন্ধুগুলো হাতে হাত লাগিয়ে কাজ সব শেষ করে ফেলেছে।

“মা, তোমার মনে হয় না এই ছেলেটাকে বাড়ি ভাড়া দিয়ে তুমি ভুল করেছ। দেখেছ আজ কতো বন্ধু নিয়ে এসেছে। রোজ আসবে না তার গ্যারান্টি কি?

মা হেসে বলেন, না না। আমি আগে থেকেই বলে দিয়েছি বেশি ছেলেদের যেন আমার বাড়ির মধ্যে দেখতে না পাই। আর আজ তো কাজের জন্য’ই এসেছে। অকাজের কিছু নেই!

“আচ্ছা!

“যাই আমি গিয়ে রান্না ঘরে ঢুকি, ঊষা কে বলেছিলাম কাটাকুটনি গুলো করে রাখতে। মেয়েটা করেছে কি না কে জানে!

অতঃপর মা রান্না ঘরে চলে গেলেন। আমি বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে সামনে বইটা রাখলাম। মা কে মিথ্যে বলেছি, শরীর খারাপ বলে ভার্সিটিতে যায় নি। ভার্সিটিতে যায় নি ফরহাদের জন্য। উনি হঠাৎ করে আমার বাসায় ভাড়া নিতে এলেন কেন আমার জানা খুব দরকার! এই চিন্তার কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। অদ্ভুত একটা লোক বটে, আসতে না আসতেই আমাকে ঘরবন্দি করে দিল!

বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টে যাচ্ছি, পড়তে ইচ্ছে করছে না কিছুই! হঠাৎ একটা কাগজের টুকরো চোখে পড়লো আমার। কিসের কাগজ এটা? কাগজের ভাজ খুলতেই মনে পড়ল এটা আবরার জন্য লেখা! সেদিন আমি আর ফরহাদ হাঁটতে বের হয়েছিলাম। সেটাই লিখেছিলাম এই কাগজে। কিন্তু আবরার কে আর দেওয়া হয় নি। না, আমি ইচ্ছে করেই দিই নি। বেচারা কষ্ট পাবে এটা ভেবে আর দিই নি!

কি মনে করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম! জানাল দিয়ে উঁকি দিতেই দেখলাম আজকের আকাশটা অনেক সুন্দর! ভালো লাগছে এই সুন্দর আকাশ দেখতে। খোলা জানালায় বসে আকাশ দেখতে ভালো লাগে কিন্তু মাঝে মধ্যে মনে হয় খাঁচায় বন্দী পাখির মতো। তাই আমি সিঁড়ি বেয়ে উঠে ছাদে উঠলাম। পরণে শাড়ি, ভার্সিটিতে যাবো ভেবে পড়েছিলাম কিন্তু আর যাওয়া হয় নি।

গ্রিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছি। নিচে তাকাতেই দেখি শ্রেয়া আসছে। আমি ডাক দিলাম,

“শ্রেয়া!

শ্রেয়া মাথা তুলে উপরের দিকে তাকাতেই হাত দিয়ে ইশারা করলাম। শ্রেয়া হয়তো একটু অবাক হলো, অতঃপর দৌড়ে ছাদে উঠে এলো।

“আপা, তুমি আজ ভার্সিটি যাও নি!

“না যেতে ইচ্ছে করে নি।

“কেন শরীর খারাপ নাকি!

“হুম,একটু। তোর পড়াশোনা কেমন চলছে বল।

“ভালো আপা।

“মা খুব বকে না তোকে।

“শুধু মা না ভাইয়া ও বকে।

“আমি তিতির কে বলে দিবো যেন তোকে না বকে!

শ্রেয়া নিলুর দিকে তাকিয়ে রইল এক দৃষ্টিতে। নীলু হাসছে! নিলুফার কে দেখলে হিংসে হয় তার। আপা তার থেকে সুন্দর, কিন্তু কেন? সেও তো চাইলে আপার থেকে সুন্দর হতে পারত তাই নয় কি! খুব খারাপ লাগে যখন নিলু আর নিজেকে একসাথে দেখে।

শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলি, কি ভাবছিস?

“তুমি এতো সুন্দর কেন আপা!

“সুন্দর হওয়ায় শখ এতো বেশি তোর।

“যে যত বেশি সুন্দর সবাই তাকে তত বেশি ভালোবাসে।

“না রে এই কথা ভুল! যে যত বেশি সুন্দর তার কপালে দুঃখ বেশি। অভাগী সে! এটা তুই এখন বুঝবি না, যখন বড় হবি তখন বুঝবি!

“আমি এবার মেট্রিক দেবো।

“মেট্রিক দিলেই কেউ বড় হয়ে যায় না। আচ্ছা শ্রেয়া আচার খাবি।

“এখন, এই ভর দুপুরে।

“আচার যখন ইচ্ছে তখন খাওয়া যায়। তুই ঘরে গিয়ে কাপড় ছেড়ে বাটিতে করে আচার নিয়ে আয়। গত বছর না মা আমের আচার দিয়েছিল।

“ঝাল আচার খাবে।

“হুম নিয়ে আসিস যা!

শ্রেয়া দৌড়ে চলে গেল। আবার খুব তাড়াতাড়ি ফিরেও এলো। তার হাতে দুটো আচারের বাটি। একটাতে আমের মোরব্বা আর একটাতে ঝাল আচার। আমি ঝাল আচারের বাটি টা হাতে নিলাম। গ্রিলে হাত রেখে চা খাচ্ছি আর নিচে মানুষের যাওয়া আসা দেখছি!
বাড়ির নিচ থেকে খুব জোরে জোরে কথাবার্তা আসছে। ফরহাদ আর তার বন্ধুরা বের হচ্ছে। সবাই কি খেতে বার হচ্ছে নাকি। একজনের কাছে বিরিয়ানি’র কথা শুনলাম বলে মনে হলো!

হঠাৎ করেই একজন তাকাল উপরের দিকে। আমাকে দেখতে পেয়ে ফরহাদের ঘাড়ে হাত রেখে ইশারা করল। ফরহাদ উপরের দিক আমাকে দেখে অবাক হলো। বাকি সবাই শুকনো ঢোক গিলল। মুখ শুকিয়ে গেছে তাদের। মুখের হাল দেখে হাসি পাচ্ছে। এদের কে পুলিশি হাজতে পাঠিয়েছিলাম। তারা মেহমানদারি পায় নি, কিন্তু না পেয়েই এই হাল! ফরহাদ কে রেখে একে একে সবাই চলে গেল‌। ফরহাদের বোধ অনেকক্ষণ পর হলো। শ্রেয়া কে আমার পাশে দেখতে পেয়ে সোজা হেঁটে চলে গেছে। মনে হচ্ছে ভয় পেয়েছে বেচারা। শ্রেয়া উঁকি ঝুঁকি মেরে বলল, কারা এরা আপা!

“আমাদের নতুন ভাড়াটিয়া!

“মা তো বলল একজন কে ভাড়া দিয়েছে। কিন্তু এখানে তো এক দল!

“আরে বোকা, এরা জিনিসপত্র নিয়ে এসেছে।

“ওহ আচ্ছা কুলি!

“বেশ বলেছিস!

শ্রেয়া আর আমি জোরে হেসে দিলাম!

—–

কেনাকাটা শেষে রাস্তায় ফুটপাতে হাঁটছে দুজন! ইরার হাতে দুটো প্যাকেট! একটাতে তুতে রঙের ছাপার শাড়ি আরেকটাতে কালো রঙের পাঞ্জাবি! তিতির প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে বলল, তুই কি আজ তাহলে তোর প্রিয় মানুষটার জন্য কেনাকাটা করলি!

ইরা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। তিতির হেসে সামনের দিকে তাকাল। এর মানে তার ভাবনা ভুল ছিল। প্রিয় মানুষটি সে না অন্য কেউ। যাই হোক ভালোই হয়েছে! তিতির মেইন রাস্তায় এসে ইরার সাথে দাঁড়িয়ে আছে। এখান থেকে ইরা কে বাসে উঠিয়ে দিয়ে যাবে সে। প্রত্যেক বার’ই এই কাজটা করে সে!

ইরা তাকিয়ে দেখল দূর থেকে বাস আসছে। তিতিরকে ডেকে তার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বাসের কাছে দৌড়ে গেল সে। তিতির অবাক হাতে দাঁড়িয়ে রইল। বাসে চড়ে তিতিরের দিকে ফিরল সে। তিতির প্যাকেট হাতে এখনো তার দিকেই তাকিয়ে আছে। এই প্যাকটি ছিল প্রিয় মানুষটার জন্য! তবে এটা তাকে দিয়ে গেল কেন? ইরার প্রিয় মানুষটি তাহলে কে!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here