#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-২৬
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )
বেলা প্রায় বারোটা বাজে। তবে ঘুম থেকে উঠার নাম নেই রুদ্ধ আর হুরের। তারা আরামে ঘুম বিলাস করছে।নির্ঘুম কয়েক রাতের ঘুম একত্রে ঘুমাচ্ছে।রুদ্ধ পড়ে আছে হুরের শরীরের ওপর। নড়াচড়া বিহীন আরামে হুরের শরীরের উপর লেপটে আছে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। রুদ্ধ একটু নড়েচড়ে উঠলো। হুরের বুক থেকে নিজের মাথা উঠিয়ে ডানপাশ থেকে মুখ ঘুরিয়ে বাম পাশে রাখলো। তারপর হুরের বুকে আবার পড়ে রইল।রুদ্ধের এমন করাতে রুদ্ধের দাড়ি দ্বারা হুরের সুড়সুড়ি লাগলো। মেয়েটার বড্ড সুড়সুড়ি আছে। তাইতো শরীরে হালকা সুড়সুড়ি অনুভব করার সাথে সাথে ঘুম উবে গেল তার। চোখ খুলে নিজের উপর রুদ্ধকে দেখতে পেল। মুখশ্রী করুন হয়ে আসলো। এখন রুদ্ধের সাথে কতক্ষণ যুদ্ধ লড়তে হবে তাই ভাবতে লাগলো। কারণ রুদ্ধকে ঘুম থেকে ওঠানো মানেই যুদ্ধের খাতায় নিজের নাম লেখা। তার ওপর তার বিশাল ভারী শরীরের ভারে সে পিষে যাচ্ছে। সে খবর কি রুদ্ধ রাখছে? একদমই না। রুদ্ধ কেন এসব ভাবতে যাবে? সে তো হচ্ছে একজন স্বার্থপর পুরুষ। স্বার্থপর পুরুষরা কখনো অন্য মানুষের কথা ভাবে না। তারা শুধু নিজের কথাই ভেবে যায়।
রুমের চারপাশে চোখ বুলালো হুর।সূর্যের আবছা আলো রুমে আসছে।চারদিকের জানালার পর্দা নামিয়ে রাখার কারণে তেমন আলো প্রবেশ করতে পারছে না। মনে হচ্ছে এখন সন্ধ্যা বেলা। হুর রুদ্ধের পিঠ খেয়াল করলো। গতকালকের চেয়ে দাগগুলো একটু হালকা হয়ে এসেছে।
বড় একটা হামি দিল হুর। হঠাৎ পেট থেকে শব্দ আসলো। গুড় গুড় শব্দ। পেট তাকে জানান দিয়েছে যে ,তার এখন খাবার খাওয়া উচিত। গতকাল রাতেও পেট পুরে খেতে পারেনি। হুর রুদ্ধের চুলে হাত বুলালো কিছুক্ষণ। তারপর নিম্ন স্বরে ডাকতে লাগলো।
“এই শুনছেন!
সেকেন্ড খানিক পর রুদ্ধের উত্তর।
” হুম।
হুর ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি জেগে ছিলেন?
রুদ্ধ ঘুমকন্ঠে বলে,
“হুম
তেজ নিয়ে হুর বলে,
” তাহলে আমাকে ছাড়েন নি কেন?আপনার ভারে আমি পিষে যাচ্ছি।
নিজের জায়গা থেকে সরলো না রুদ্ধ৷বললো,
“ভার নিতে শিখো,কাজে আসতে পারে৷ আর প্রতিদিন তোমায় আমার ভার নিতে হবে। পিষে গেলে যাবে৷ তাও আমার ভার নিতে হবে।
” আপনার ওজন কত?
“মাত্র ৮১ কেজি।
চোখ বড়বড় করে তাকালো হুর। ৮১ কেজি!এটাকে আবার মাত্র বলছে!কঠিন থেকে কঠিন রাগ লাগছে হুরের।নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে বলে,
” ৮১ কেজি আপনার কাছে মাত্র হলো?এত ওজন দার এক ব্যক্তি আমার উপর সারা রাত শুয়ে থাকলে আমি ২ দিনের মাথায় চ্যাপ্টা হয়ে যাব৷
“চ্যাপ্টা হয়ে গেলে সমস্যা নেই। আমি খাবার খাইয়ে আবার ঠিক করে নিব। আর ৮১ কেজি তোমার কাছে অনেক হলো?আগে তো ৮৭ কেজি ছিলাম।আগের মতো যদি এখন থাকতাম তাহলে না জানি কি বলতে!
চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।এটা কি শোনালো রুদ্ধ তাকে?৮৭ কেজি!মাথা ভনভন করছে হুরের।বিস্ময় নিয়ে টেনেটেনে জিজ্ঞেস করে,
“৮৭ কেজি!এত মোটা ছিলেন আপনি?
রুদ্ধ ধমকে উঠে,
” এই মেয়ে মোটা বলছ কেন?আমি কখনই মোটা ছিলাম না৷ তবে এখনের চেয়ে আগের স্বাস্থ্য একটু ভালো ছিল৷দিন দিন খাবারের প্রতি অনিহায় শুকিয়ে গেছি।
হুর প্রশান্তির দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায়,
“আলহামদুলিল্লাহ।
শুনে ফেলে রুদ্ধ,ক্রোধ নিয়ে বলে,
” তোমার স্বামী দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছে আর তুমি শুকরিয়া আদায় করছো?
আনমনে হুর বলে,
“এমন মটকু স্বামী থাকলে, শুকিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন আমি শুকরিয়া আদায় করবো।
সাথে সাথে গলায় কামড়ের অস্তিত্ব টের পায় হুর। চিল্লিয়ে উঠে। ছেড়ে দেয় রুদ্ধ। হুরের উপর থেকে উঠে বসে। চোখ ডোলে বলে,
“ওজন বাড়ানোর উদ্যোগে নেমেছি আমি। দেখি কে আটকাতে পারে!
————————————
ফ্রেশ হয়ে রুদ্ধ আর হুর একত্রে নিচে নেমে আসে। ডাইনিং টেবিলে এসে রুদ্ধ তার চেয়ারে বসে। হুর রুদ্ধের মুখোমুখি হয়ে বসতে নিলে রুদ্ধ আদেশ করে বলে,
” আমার পাশে বসো!
হুর মুখ ফুলিয়ে রুদ্ধের পাশের চেয়ারে বসে।লিলি আর জেরিন দুজন খাবার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত হয়।টেবিলে খাবার রাখে।দুজনের চোখ যায় রুদ্ধ আর হুরের দিকে। তবে হুরের দিকে চোখ গেলেই তাদের চোখ আটকে যায়।গলায় স্পষ্ট দাঁতের চিহ্ন।লাল টকটকে হয়ে আছে। হুর নিচে নামার পূর্বে ওড়না ভালোভাবে গলায় জড়িয়েই নেমেছিল। কিন্তু বেখেয়ালি ভাবে বসার সময় সরে গেছে।
লিলি জেরিনের দিকে তাকালো। চোখের ইশারায় কিছু বুঝিয়ে দুজনই চুপ রইলো।চলে গেল তাদের কাজে। হুর নিজের প্লেটে খাবার বেড়ে যেই না খাবারে হাত দিবে অমনি রুদ্ধ বলে,
“খাবার সার্ভ করো!
আড়চোখে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে নিজের প্লেটের দিকে তাকালো হুর। প্লেটের খাবার দেখে করুণা হচ্ছে।নিজের প্রতিও হচ্ছে।হুর উঠে রুদ্ধকে খাবার সার্ভ করে দিল।খাবার সার্ভ করে দেয়ার পর নিজে খাবার খেতে লাগলো।আজ ভরপুর খাবার খাচ্ছে সে। অনেক দিন ধরে তৃপ্তি সহকারে খেতে পারেনি।রুদ্ধ হুরের খাওয়া দেখছে আর একটু একটু করে খাচ্ছে। খাওয়া শেষ করে হুর রুদ্ধকে ঔষধ খাইয়ে দেয়।
নিজের রুমে আরাম করছে রুদ্ধ। হাতে ফোন। কিছু ডকুমেন্টস চেক করছে। অনেক দিন হলো অফিসের খবরাখবর নেয়া হয় না। অফিসে যাওয়া হয় না।হুর নিজের রুমে আলমারি থেকে কাপড় বের করছে। সে মুহূর্তে রুমে প্রবেশ করে লিলি আর জেরিন৷
হন্তদন্ত হয়ে তারা আসে। হুর প্রথমে হকচকিয়ে যায়।পরমুহূর্তে লিলি আর জেরিন কে দেখে শান্ত হয়। তাদের দেখে লম্বা এক হাসি দেয়৷ লিলি আর জেরিন দুজন মিলে হুরের হাত ধরে বিছানায় টেনে বসায়।দুজনের এমন করনীয়তে চকিত নয়নে হুর তাদের দিকে তাকায়। সে সবে তোয়াক্কা করে না লিলি আর জেরিন। দুজন মিলে হুরকে জেরা করতে থাকে।
“সত্যি করে বলতো হুর তোমার আর রুদ্ধ স্যারের মাঝে কিছু চলছে?
হুর দেখলো জেরিন আর লিলি উৎসুক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে তবে জেরিনের প্রশ্ন সে কিছুটা ভড়কালো।তাদের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল।
“মানে কি বলতে চাইছো আপু?
লিলি বলে,
“দেখা হুর একদম ঢং করবে না। আমরা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছি। রুদ্ধ স্যার আর তোমার মাঝে কিছু চলছে। তোমার গলায় লাভ বাইট ও আমাদের চোখে পড়েছে। এ বাড়িতে লাভ বাইট দেয়ার মত পুরুষ একজনই আছে। তা হল রুদ্ধ স্যার।আর গতকাল রাতে যে তুমি তোমার রুমে ছিলে না তাও আমরা লক্ষ্য করেছি। ঘুম থেকে তুমি আর রুদ্ধ স্যার একত্রেই উঠেছ। এবং কি নাস্তা ও একত্র করতে এসেছ। এটা তো কোন কনসিডেন্স হতে পারে না তাই না?
হুরের চেহেরা আরও ভীত দেখা গেল। সব সময় তাকেই জব্দ হতে হয়। কিছু না করেও সেই ফাসে।অসস্তিতে জেরিন আর লিলির দিকে তাকাতে পারছে না সে। মাথা নিচু করে হাত কচলাচ্ছে। আধো আধো গলায় বলে,
“আমরা, আমরা বিবাহিত।
নিমিষেই লিলি আর জেরিনের ফেইস রিঅ্যাকশন চেঞ্জ হল। ফ্যালফ্যাল করে হুরের দিকে তাকিয়ে রইল। আচানক দুজন একসাথে চিল্লিয়ে উঠলো।
“কি তোমরা বিবাহিত? তারমানে রুদ্ধ স্যার তোমাকে বিয়ে করেছে?কবে? কোথায়? কিভাবে? আমাদের কেন জানাওনি? এত বড় একটি সত্য কথা আমাদের কাছে লুকিয়ে রাখতে পারলে?
ঘাবড়ালো হুর। বো’কা হেসে বলল,
“গতকাল রাতেই আমাদের বিয়ে হয়েছে।আমি চেয়েছিলাম তোমাদেরকে বলতে। কিন্তু কাল উনার শরীর তেমন ভালো ছিল না দেখে তোমাদের বলিনি।
ঠাস করে দুজন হুরের দুপাশে বসে পড়লো। রুদ্ধ যে হুরকে বিয়ে করেছে এটা যেন অবিশ্বাস্য এক কথা।এমন রাগী গম্ভীর একজন ব্যক্তি সহজ সরল হুর কে বিয়ে করেছে। এটা ভাবতেই যেন হুরের জন্য কান্না চলে আসছে তাদের। হুর সহজ সরল হলেও অনেকটা দুষ্ট। কথায় কথায় এ কথা ও কথা বলার স্বভাব তার। কোন সময় যদি রুদ্ধ দূরের কথা শুনে রেগে ঠা’স ঠা’স করে তার গালে চর লাগিয়ে দেয় তখন কি হবে? রেগে না আবার হুরকে শেষ করে দেয় সে। বড্ড মায়া লাগছে হুরের জন্য তাদের। মায়া ত্যাগ করে জেরির বলে,
“আচ্ছা, সেসব কথা ছাড়ো। এখন এটা বলো এতদিন যাবত তুমি কোথায় ছিলে? রুদ্ধ স্যারকে তো পুলিশের গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল। টিভি মিডিয়াতে ছড়াছড়ি হয়ে গিয়েছিল এই খবর। যে মানুষ জেলে এক ঘণ্টাও থাকে না সেই মানুষ গোটা ২৩ দিন জেলে ছিল। তাও শুনেছিলাম রুদ্ধ স্যার ইচ্ছে করে জেলে ছিল।কি এমন কারণে রুদ্ধ স্যার ইচ্ছাকৃতভাবে জেলে ছিল বলতো?
হুর আর তাদের কাছ থেকে কোন কিছু লুকায় না। প্রথম থেকে শেষ অব্দি সব বলে। হুরের কথা শুনে জেরিন হা করে হুরের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারা কখনো টের পায়নি যে হুর একটা মিশনে এখানে এসেছিল। হুরের এসব কথা শুনে লিলির মাথায় হাত চলে গেল। এতোটুকু একটা পিচ্চি মেয়ে যার মাথায় এত বুদ্ধি দিয়ে ভরা। এবং তার মাথায় গোবরের গোডাউন। এইটুকুন মেয়ে কিভাবে পুলিশের সাথে যুক্ত হয়ে রুদ্ধকে এভাবে নাচিয়েছে ভাবতেই তার হাসি পাচ্ছে। যদিও সে জানে রুদ্ধ প্রথম থেকেই সব কিছু জানতো। তারপরেও নিজের হাসি সংযত রাখতে পারছে না। মনে মনে সে বহুত হেসেছে।
বিকেল চারটা।ড্রয়িং রুম থেকে শোরগোলের শব্দ আসছে। হুর নিজের রুমে এসেছিল বইখাতা সব রুদ্ধের রুমে শিফট করার জন্য। কারণ রুদ্ধ তাকে এটা করার জন্য আদেশ দিয়েছিল। শোর গোলের শব্দ শুনে হাতের কাজ বাদ দিয়ে ড্রইংরুমে চলে আসলো।এসে দেখল শাহেদ আর রোকসানা চিল্লাপাল্লা করছে রুদ্ধের সাথে। গতকালকে থেকে রোকসানা আর শাহেদের কথায় পুরোপুরি ভাবে ভুলে গিয়েছিল। মস্তিষ্কে শুধু বিচরণ করছিল রুদ্ধের কথা। তাইতো ভাবতে পারেনি রুদ্ধের সাথে সম্পর্কে জড়িত হলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে!
রোকসানা আর শাহেদ কে দেখে সে অনেকটা ভয় পেল। রুদ্ধ আর তার বিয়ের কথা জানলে তারা তাকে কি বলবে তাই চিন্তা করলো। শাহেদ তার তর্জনী আঙ্গুল রুদ্ধের দিকে তাক করে হুমকির স্বরে বলে।
“একবার জেলে গিয়ে তোমার শিক্ষা হয়নি?আবারো কি যেতে চাইছ নাকি? কোন সাহসে তুমি আমার শালিকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছো?গ্যাংস্টার মানুষ বলে কি তোমায় আমি ভয় পাবো নাকি?
ঠান্ডা মাথায় রুদ্ধ বলে,
“আঙ্গুল নিচে তুলে কথা বলুন।আর আপনার শালিকে আমি উঠিয়ে নিয়ে এসেছি তা আপনাকে বলল?একজন পুলিশ অফিসার হয়ে যাচাই-বাছাই না করেই মুখ উঠিয়ে অন্যের বাড়িতে আসাটা শোভনীয় না।
থেমে গিয়ে রুদ্ধ আবার বলে,
” তবে হ্যাঁ হুরের বোন দুলাভাই হয়ে যদি এখানে আসেন তাহলে আপনাদের স্বাগতম।প্রথম বোনের জামাই বাড়ি এসেছেন ,রাতের খাবারটুকু অবশ্যই খেয়ে যাবেন।
হাত নিচে নামিয়ে নেয় শাহেদ। ভ্রু কুঁচকে বলে,
“বোনের জামাই বাড়ি মানে?
“আপনার বউয়ের ক্ষেত্রে বোনের জামাই বাড়ি,আর আপনার ক্ষেত্রে শালির জামাই বাড়ি।আর আমার ক্ষেত্রে এটা আমার বউয়ের জামাই বাড়ি।
রুদ্ধের প্যাচ যুক্ত কথা বুঝে শাহেদ বিস্ফোরিত নয়নে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে রইল। সেই মুহূর্তে পিছন থেকে হুরকে আসতে দেখা গেল। শাহেদ হুরের দিকে বিস্ফোরণিত নয়নে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।
“হুর এই, এই লোকটা কি বলছে? এটা আমার শালির জামাই বাড়ি মানে?
ভয়ে ফাঁকা এক ঢোক গিলল হুর।শাহেদ এর প্রশ্নের উত্তর কি দিবে তা ভেবেই গলা শুকিয়ে আসছে। তবে মিথ্যা যে বলতে পারবেনা তা ঢের টের পেল। তাই শুকিয়ে যাওয়া গলায় খাকারি দিল। মাথা নিচু করে ভয় ভয় বললো,
“উনি যা বলছেন তা ঠিকই বলছেন।এটা আমার স্বামীর বাড়ি।
আশ্চর্য হয়ে শাহেদ জিজ্ঞেস করে,
“তুমি রুদ্ধকে বিয়ে করেছ?
মাথা নিচু রেখেই মাথা দুলায় হুর।সাথে সাথে রুদ্ধ ধমকে উঠে।
“এই মেয়ে মাথা নিচু করে রেখেছো কেন? দ্বিতীয়বার যদি দেখি অপরাধীদের মত মাথা নিচু করে থাকতে তাহলে মাথা কেটে হাতে ধরিয়ে দিব।
ধরফরিয়ে উঠে হুরের মন। সাথে সাথে নীচু হওয়া মাথা দ্রুত গতিতে উপরে উঠায়। দৃষ্টিগোচরে আসে শাহেদ এবং রুদ্ধের ক্রোধিত মুখশ্রী।দুইজনকেই এত রেগে থাকতে দেখে হুরের মুখ চুপসে যায়।ভয়ে ক’লিজা শুকিয়ে আসছে। হুরের চুপসানো মুখ দেখে রুদ্ধের মায়া লাগলো না। ভবিষ্যতে লাগবে কিনা তাও হুর বুঝে উঠতে পারলো না। এটা আবার কেমন স্বামী!যে স্বামী তার সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীকে গলা কেটে দেওয়ার হুমকি দেয়, সে স্বামী নিয়ে আদৌ কি হুর সংসার করতে পারবে!
থমথম মুখে শাহেদ বলে,
“কাজটা তুমি ঠিক করলে না হুর। আমার বিশ্বাস তুমি ভেঙ্গে দিয়েছো। একটা ক্রিমিনাল কে তুমি বিয়ে করেছ। একটা ক্রিমিনাল কে বিয়ে করার শাস্তি তুমি হাড়ে হাড়ে টের পাবে। তুমি কি মনে করেছ একটা গ্যাংস্টারের সাথে নিজেকে জড়িয়ে তুমি শান্তিতে বসবাস করতে পারবে?এমন একটা সময় আসবে যে তুমি নিজেই মানতে বাধ্য হবে রুদ্ধকে নিজের সাথে জড়িয়ে তুমি মস্ত বড় ভুল করেছো। এই শাস্তি তুমি ভয়াবহ ভাবে পাবে। এত সহজ না ক্রিমিনালের সাথে সংসার করা। তবে হ্যাঁ,যেকোনো পরিস্থিতিতেই থাকো না কেন আমাকে তুমি পাবে। যদি সেটা জড়িত হয় শুধু তোমাকে নিয়ে।
চলে গেল শাহেদ আর রোকসানা।হুর থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল। এ কি বলে গেল শাহেদ? সে কি তাকে বদদোয়া করে গেল? আসলেই কি একটা গ্যাংস্টারের সাথে সম্পর্ক জড়িয়ে এসে ভুল করেছে?এর মাশুল কি তাকে দিতে হবে?কেঁপে উঠল হুরের বুক। ভয় হতে লাগলো। কখনো যদি শাহেদের বদদোয়া কাজে লেগে যায় তখন তার কি হবে?এসব ভেবেই ক’লিজা তার দুমড়ে মুছড়ে যাচ্ছে। রুদ্ধ হুরের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে থম মেরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রুদ্ধ বুঝল শাহেদের কথায় হুরের মনে ইফেক্ট পড়েছে।তাই সে হুরের মন ভুলানোর জন্য বলে,
“অফিসারের কথায় উল্টাপাল্টা থট মাথায় আনবে না।কিন্তু একটা কথা তিনি ভুল বলেননি। গ্যাংস্টারদের জীবন এত সহজ সরল হয় না। কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাকে পার হতে হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে। তবে একটা জিনিস সবসময় মাথায় রাখবে। যতক্ষণ আমি তোমার পাশে আছি ততক্ষণ তুমি সুরক্ষিত থাকবে। নিশ্বাস বন্ধ হওয়া অবদি কেউ তোমার ওপর একটা আঁচড়ও দিতে পারবে না।
চলিত!